শুকনো রোদে পোড়া দেশ আমার, সারা মহাদেশের একমাত্র ভূখণ্ড যার সাথে দুই-দুইটি মহাসাগরের সখ্য আছে কিন্তু বাস্প ভেজা শীতল হাওয়া আর পোয়াতি কালো মেঘেরা ঊষর প্রান্তর পেরিয়ে আমাদের উঠানে আসতে পারে না, তার আগে আগে ঝরে ঝরে রীতিমত হালকা অবস্থায় ফ্যাঁকাসে দর্শন দিয়ে শিমুলের তুলার মত দূর থেকেই সীমানার বাহিরে চলে যায়। চাতককে হার মানিয়ে অধিকতর আগ্রহ নিয়ে আকাশ পানের চেয়ে থাকি আমরা দিবা-রাত্রি, যদি দলহারা কোন জলভরা মেঘদূত উঁকি দিয়ে যায় দূর প্রান্তে, তার পিছু পিছুই আসবে প্রান্তরব্যপী বুনো বাইসনের দলের মত দিগন্তের প্রান্তসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত মেঘেরা, সেই সাথে সুশীতল বারিধারা।
এক অলস রোববারে উপাসনালয় থেকে ফিরবার সময় সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত অতিথির উপস্থিতির পরশ পাওয়া গেল , জল ভরা হাওয়া ছুয়ে গেল সকলের হৃদয় তার পরপরই রোদদগ্ধ ত্বক। অভিজ্ঞতার ঝুলি যাদের সমৃদ্ধ তার কেবল মরা মাছের আবেগহীন চোখের মত কেবল বলে গেল ছাদের নিচে যাও বাবারা, পাগলীর আসার সময় হল।
পরের কয়েক মুহূর্তের মাঝে বিশাল এক ধূসর জেলফিসের মত সমস্ত আকাশটাই যেন আচ্ছাদিত করে দিল জানা মহাবিশ্ব, অঝোরে বৃষ্টির অগণিত সুতীক্ষ ফোঁটা বিদ্ধ করতে থাকল শুষ্ক মাটিকে। বারান্দায় রেলিংয়ের পিছনে দাড়িয়ে ইসাবেলের পরিবার যেন আশরীর গ্রহণ করতে চাইছিল যেন স্বর্গ সুধা, তাদের সঙ্গী ছিলাম আমি এবং গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, যে কিনা তার বাদামী নোট বইতে টুকে নিচ্ছিল কিছু ঘটনা, আঁকতে চেয়েছিল কিছু অনুভূতি, হয়ত আটকে রাখতে চেয়েছিল কুমারী বৃষ্টিপাতের পরপরই পাওয়া মাটির সোঁদা গন্ধ।
সারারাত সেই জলমোষদের তালবদ্ধ ছন্দময় আগমনে কোন ছেদ না পড়ায় পরদিন শুকনো বাদামী ধুলোর পরিচিত মাঠ পরিণত হল প্যাচপ্যাচে সাবানের মত এক পিচ্ছিল হতশ্রী বস্তুতে। মনে হল এক রাতেই যথেষ্টরও বেশী বৃষ্টিপাত হয়েছে, এমন বর্ষণ নাকি তেজ কটালের জন্য ভাল, সত্যি নাকি?
চারিদিকের এত জলসমারোহের মাঝে তাল কেটে বার বার মনে এল সেই উত্তপ্ত দিনগুলোর কথা, যখন সূর্যের তাপে আমাদের শরীরে পোশাকগুলো ঘামে ভিজে লেপটে থাকত চামড়ার উপরকার এক আবরণের মত, যদিও বৃষ্টিপাতের গোলকধাঁধায় এই ভাবনাগুলোও ঝড়ে পড়া পাখির মতই নীড়হারা।
হঠাৎ ফুসে ওঠা জলের তোড়েই যেন উঠানে উদয় হল কিছু রেড ইন্ডিয়ান, বারান্দায় আশ্রয় করে নিল নিজেরা নিজেরাই, পর দিন এসে হাজির এক সবাক গরু! কাঁদামাটিতে ক্ষুর আঁটকে যেয়ে তার অকথ্য অবস্থা, এর ফাঁকে ফাঁকেই বিস্বাদ স্যুপ আর ছাতা পড়া রুটি দিয়ে পেটপূজা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা হয়েই যায়।
ধূসর আকাশ থেকে নেমে আসতেই থাকে বৃষ্টিকণারা, পৃথিবীর শুরু এবং শেষ থাকতেও পারে, কিন্তু এই অশেষ ধৈর্য নিয়ে পড়তে থাকা জলবিন্দুদের কোন শেষ নেয়। আমাদের জলের আকাঙ্ক্ষা আজ জন্ম দিয়েছে বন্যার, সেই তোড়ে ভেসে গেছে ট্রেন লাইন, আমরা বিচ্ছিন্ন সারা মহাদেশ থেকে, বিছানায় ঘুমন্ত মহিলা পানির টানে আজ নিথর উঠোনের কোণে। শোনা যাচ্ছে বানের জল মহল্লার গোরস্থানটিও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, কবর ছেড়ে বেরিয়ে এসে মৃতরা ভেসে বেড়াচ্ছে গ্রাম জুড়ে অনিশ্চিত ভাবে!
দিনের পর দিন পুনরাবৃত্তি ঘটে আগের দিনের, এক পর্যায়ে ঘুম ভাঙ্গার পর চারিদিকের অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতায় মনে হয় অন্য কোন ভুবনে পৌঁছে গেছি আমরা সবাই। আঁতকে উঠে ভাবলাম আমরা কি মৃত? এত নীরবতার সম্ভোগ কেবল মৃত্যুর পরেই পেতে পারে মানুষ, নতুবা ক্রান্তীয় বৃষ্টি থেমে গেলে।
মৃত্যুর মতই সেই নীরবতা, এর মাঝেও মার্কেজ লিপিবদ্ধ করেই চলেছেন ঘটনার ঘনঘটা।
( ১৯৫৫ সালে মার্কেজের লেখা মাকেন্দো গ্রামে ইসাবেলের বৃষ্টি দেখবার ধারাবর্ণনা শিরোনামের ছোট গল্পটি পড়ে অতল মুদ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে লেখা)
মন্তব্য
বাহ, অপূর্ব!
facebook
কেমন একটা আবেশ তৈরি হলো লেখাটা পড়ে...
সুযোগ পেলে গল্পটা পড়ে দেখেন
facebook
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
(বাংলায়)
facebook
বাংলায় আর কী লিখুম!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কবি মানুষকে আমি কি লিখার কথা বলব!
facebook
কবি মানুষকে কি বলব লেখার কথা!
facebook
একেই কি গদ্যকবিতা বলে?
..................................................................
#Banshibir.
ওরে বাবা, তা তো জানি না
facebook
-
facebook
বাহ!
ধন্যবাদ।
facebook
আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না এইটা আপনি লিখছেন না মার্কেজ লিখছে ।
খুবই আবেগপূর্ণ লেখা । দারুণ হইছে ।
কি বলেন
facebook
অনবদ্য একটা কবিতার মতই লাগল পড়তে
সাবেকা
অনেক অনেক ধন্যবাদ
facebook
"এত নীরবতার সম্ভোগ কেবল মৃত্যুর পরেই পেতে পারে মানুষ, নতুবা ক্রান্তীয় বৃষ্টি থেমে গেলে।"
দারুণ লাগলো পড়তে!
ইয়ে, আমার কথা কি জানি কইলেন মনে হইলো...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কি কইলাম আবার!
facebook
কী দারুণ ভাষা! বেশ লাগল।
বলছেন তবে হয়েছে কি খাসা!
facebook
ভালো লাগলো অনু দা।
facebook
দারুন !!!
[অনু'কবি হয়ে যাচ্ছ তো!! বাহ !! ]
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কেন, কবি হওয়া কি কেবল ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রাপ্তদের জন্য, কবি লিটন সরকারের মত!
facebook
ঈশ্বর কে ?? ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর নাকি ??
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নজু ভাই জানে।
facebook
"নজু ভাই জবাব চাই" !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দিতি হবি।
facebook
কাব্যসুন্দর
_____________________
Give Her Freedom!
কবির উপরে কাব্য নিয়ে আর কি বলব!
facebook
চমৎকার লাগলো। একই অঙ্গে এত রূপ! আর কত মুগ্ধতা জানাবো? ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ, আপনার লেখা পড়ছি না অনেক দিন, কি ব্যাপার?
facebook
খুব ভাল লাগলো। বর্ননা ভঙ্গিটা অনবদ্য!
আসমা খান,অটোয়া
facebook
বাহ্!
facebook
লেখার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম, অসাধারণ।
facebook
বাপস, কি লেখা! দারুণ লাগল।
অনু ভাই কোন বই পড়ে এই পিস প্রসব করলেন জানতে ইচ্ছা যায় পেলে বইখানাই পড়ে ফেলতুম।
লেখায় আছে তো !
facebook
বইয়ের নামটা ক্লিয়ার বুঝতেছিনা। প্লিজ একটু বলে দিন আলাদা করে।
লিফ স্টর্ম
facebook
নতুন মন্তব্য করুন