দিয়েগোময় ব্যোকা, রঙিন স্যানতেলমো এবং ইকথিয়ান্ডরের নিবাস

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: সোম, ০৬/০৮/২০১২ - ৭:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

380122_10151166912850497_113817049_n

নাস্তার টেবিলে তুমুল হট্টগোল, কাড়াকাড়ি চলছে আচ্ছাসে, কিন্তু পরিবেশিত একঘেয়ে খাবার বা জুসের গ্লাস নিয়ে নয়, বুয়েন্স আইরেসের ম্যাপ নিয়ে! হ্যাঁ, একেবারে পিচ্চিকাল থেকে শুনে আসা ফুটবলের স্বর্গখ্যাত আর্জেন্টিনায় থিতু হয়েছি দিন কতকের জন্য , এই অল্প কদিনে প্লেট নদী আর নয়নাভিরাম মহানগরী ছাড়া আর কিছু দেখার সময় হবে বলে মনে হচ্ছে না। তার মধ্যে আবার এখনই ঠিক করে ফেলতে হবে কোথায় কোথায় যাওয়া যায়! সামনের দেয়ালে বিশাল বিজ্ঞাপন- মুফতে ট্যাঙ্গো নাচের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সপ্তাহে কয়েকদিন, আর্জেন্টিনা ( আসল উচ্চারণ হবে আর্হেন্তিনা) বাঙ্গালীর কাছে ফুটবল আর ভোজনরসিকদের কাছে বিশ্বের সেরা গরুর স্টেকের জন্য যতই পরিচিত হোক না কেন বিশ্ব সাংস্কৃতিক মঞ্চে আর রোমান্টিক জনগণের কাছে কিন্তু তার পরিচয় ট্যাঙ্গো নাচের দেশ বলেই, দাঁত দিতে আলতো করে অপূর্ব কায়দায় কাঁটাসহ গোলাপ অবলীলায় ধরে সঙ্গিনীর মদির চাহনির এবং চপল পায়ের তালে তাল মিলিয়ে সেই অসাধারণ নৃত্য মনে মনে করে নি এমন মানুষ দুষ্কর।

395430_10151277671930497_338766637_n

কিন্তু ছকে মিলল না, সেই দিন নাচের তালিম মিলবে না হোস্টেলে, তাই বাধ্য ছেলের মত ঝাঁকের কৈ ঝাকে মিশে চললাম বাকী সবার সাথেই পদব্রজে এই শহরের বিখ্যাত দুই মহল্লা দর্শনে, গাইড হিসেবে থাকছে ব্রাজিলের তরুণী মিয়াসুকা ( নামটাই জাপানিজ, বাকী সব ব্রাজিলিয়ান!), তার জন্যেও মনে হয় আগেও বেশ কবার এই ট্যুর করা কিছু ছোকরা খামোখায় যোগ দিল সঙ্গলাভের আশায়। অবশ্য ডেল সুর হোস্টেলে গত তিন মাস ধরে আস্তানা গাড়া ফরাসী তরুণ মিকা এবং লুই চোখ টিপে বলল, খামোখা এই রোদে হাঁটাহাঁটির দরকার নেই, আমাদের সাথেই আরামে বসে থাক, তোমাকে বুয়েন্স আইরেসের সমস্ত সুখ আমরা এনে দিচ্ছি ( ঠারে ঠারে বুঝলাম তারা গাঁজার বিশাল ভক্ত, কল্কিকে টান দিয়ে তারা ত্রিভুবন দেখে ফেলে সোফায় বসেই), রক্ষা কর বাবা, এই জিনিসে অভিজ্ঞতা বাকীই থাকল না হয়, আর এই দূর দেশে এসে গঞ্জিকার চেয়েও অনেক আকর্ষণীয় উপায় নিশ্চয়ই আছে সময় কাটাবার!

দলে বলে এক হয়ে সবাই মিসুয়াকার তোলা ঢেউ অনুসরণ করে চলা শুরু হয় দ্বিপ্রহরে, প্রথমেই গন্তব্য স্যানতেলমো মহল্লা, সেখানে নাকি বেশ কিছু প্রাচীন রঙচঙে ঘরবাড়ি আছে আদি ইমিগ্র্যান্টদের, সেগুলো দেখে যাওয়া হবে পুরনো জাহাজঘাটার পাশে বিখ্যাত ব্যোকা পাড়ায়।

425617_10151367437450497_896368263_n

429369_10151374728545497_1116564667_n

সঙ্গী দুই মেক্সিকান হুয়ান ভিদাল এবং ইয়াইয়াস সেরণা খানিক হেঁটেই রায় দিল বুয়েন্স আইরেস একেবারে মেক্সিকো সিটির হুবহু জমজ ভাই, কেবল এখানের সুন্দরী ললনারাই পার্থক্যটুকু গড়ে দিচ্ছে, সেই সাথে বলতেই হবে পোশাক এবং সানগ্লাসের দিকে থেকে এই দেশের তাবৎ রমণীকুল অত্যন্ত স্টাইলিশ!

529406_10151459005595497_140663325_n

না না, দাঁত বের করে মুমিন দমনের দরকার নেই, বলতে চাইছি অধিকাংশের পোশাক যে যৌনউদ্দীপক তা নয় কিন্তু দারুণ রকমের ফ্যাশন সচেতন। এমনকি বৃদ্ধারাও তাদের পোশাকের সাথে যে চমৎকার টুপিটি পড়ে আছেন বা হাতে ধরা কারুকার্যময় লাঠিটি তা দেখে এদের সুক্ষ সৌন্দর্যবোধের বিশাল ভক্ত বনে গেলাম কয়েক মিনিটেই। ইদানীং খবরের কাগজে প্রায়ই দেখি অমুক শহর, তমুক শহরের উদাহরণ টেনে- নারী নির্যাতন বৃদ্ধির জন্য নাকি তাদের সংক্ষিপ্ত পোশাকই বেশী দায়ী, যারা এইসব কথা লেখে তাদের গালে ঠ্যাঁটায়ে গোটা কতক পেল্লাই চড় দিয়ে ল্যাতিনের এই শহরগুলোতে ( বিশেষ করে হাভানাতে) পাঠিয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত- নারী নির্যাতন অনেক কমে যাবে যদি সমাজের নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্কের স্বাভাবিকতা থাকে, পরস্পরের প্রতি সন্মান জন্ম নেওয়ার শিক্ষার আলোকে তারা আলোকিত হয় এবং সর্বোপরি দোষী ব্যক্তি যদি শাস্তি পেয়ে থাকে। এইসব বোধ না থাকলে সৌদি আরব, ভ্যাটিকান সিটি আর আফগানিস্তানের নাগরিকদের মত উপরে উপরে কাপড়ের বস্তা পরে থাকলেও নিচে নারী ও শিশু নির্যাতন চলতেই থাকবে, যেমনটা ঐ দেশগুলোতে চলছে।

যদিও ল্যাতিন আমেরিকায় সপ্তাহ দুয়েক আগে পা দেবার পর থেকেই শুনে এসেছি আর্জেন্টাইনদের দুর্নাম, তারা নাকি জাতি হিসেবে মারাত্নক অহংকারী! কারণ, আর কিছুই নয় ল্যাতিন আমেরিকার বাকী সব দেশের সাথে তুলনা করলে আর্জেন্টিনা আসলেই শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের হাতে গড়ে ওঠা একটা দেশ, এখানে ঘাঁটি গেড়েছিল মূলত স্প্যানিশ, ইংরেজ এবং জার্মান অভিবাসীরা। আর অন্য সব দেশে যেমন স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ান এবং এক সময়ের দাস হিসেবে আগত কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীরা একসাথে জাতি এবং রাষ্ট্র গঠন করেছে কিন্তু আর্জেন্টিনা চলেছে শ্বেতাঙ্গদের নিয়েই ( তাদের ফুটবল দলের দিকে তাকালেই ব্যাপারটি এক লহমায় পরিষ্কার হয়ে যাবে, আশেপাশের সব দেশে যেখানে সব বর্ণের খেলোয়াড়, আর্জেন্টিনায় কেবল শ্বেতাঙ্গ), সেটি আপাতত আলোচ্য বিষয় নয়, কথা হচ্ছে এই উপনিবেশিক মানসিকতার কারণে দেশটির অনেকেই তাদের জাতিকে ল্যাতিনে বাকী জাতিদের তুলনায় সুপিরিয়র রেস বলে মনে করে, যার প্রকাশ পাওয়া যায় তাদের আচরণে, কথাবার্তায়। এবং এই কারণেই ল্যাতিনের বাকী দেশগুলোতে আর্জেন্টিনাকে খানিকটা হেয় করেই দেখা হয়। যদিও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতেই হবে আর্জেন্টিনার অধিকাংশ মানুষই দিলখোলা, আমুদে, বন্ধুত্বপরায়ণ, দু চারটে খিটখিটে মেজাজওয়ালা গর্দভ ছাড়া এমন ফালতু জাত্যাভিমান কারো নেই। দেখে ভাল লাগল কানে কুমন্ত্রণা দেয়া মেক্সিকান বন্ধুরাই যখন আপন করে নিল আমার আর্জেন্টিনার বন্ধুদের, ভাষা একটা কারণ তো বটেই, কিন্তু তারচেয়েই শক্তিশালী কারণ মনের মিল! সেই সাথে অবাক হয়ে দেখলাম হাজার হাজার ব্রাজিলিয়ান পর্যটক এইখানে, ( অনেকেই রীতিমত বাস করছে সংসার পেতে), আর পরে ব্রাজিলেও দেখেছি হাজার হাজার আর্জেন্টিনার ভ্রমণপিপাসু! দেশের ফুটবলের লড়াই দেখে ধারণা হয়ে ছিল এই দুই প্রতিবেশী দেশের নাগরিকরা পারত পক্ষে অন্য দেশের ছায়া মাড়ায় না, কিন্তু সেটি ছিল বিশাল ভুল ধারণা, বাস্তবে তারা পরস্পরের খুবই ভাল বন্ধু, আমাদের দেশের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকদের মত সাপেনেউলে সম্পর্ক নয় তাদের!

যাক সে কথা, রাস্তায় ফিরে আসি, স্যানতেলমোর বাড়ীর দেয়ালগুলো নানা চিত্রবিচিত্র নক্সায় ঢাকা, নির্বাচনের আগে যেমন হয় অনেকটা তেমনই রঙে রাঙানো চারিদিক, তবে কারো নাম নয়, আসলেই মডার্ন আর্ট উঁকি দিচ্ছে প্রতি রাস্তার কোন না কোন দেয়ালে।

65767_10151367437300497_303296709_n

এর মাঝে এক বিশেষ বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে জ্ঞান লাভ হল, সেই কয়েকশ বছর আগে শহর গড়ে ওঠার সময়ে খুবই ক্ষুদে পরিসরে এমন কিছু বাড়ী নির্মাণ করা হয়েছিল সীমিত আয়ের অভিবাসীদের জন্য, সর্বোচ্চ দুই কামরার, তাতেই চলত দস্তুরমত সংসার! পরে অবশ্য বাড়ীগুলো দেয়াল ভেঙ্গে আয়তন কিছুটা বাড়াতেই হয়েছিল, ছবিতে ভালমত খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন বর্ধিত অংশের অবস্থান।

395826_10151261719495497_1912164154_n

এক মোড়ের বেঞ্চিতে দেখা হল ছয় বছরের মিষ্টি মেয়ে মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ মাফালদার সাথে, আর্জেন্টিনার কার্টুনিস্ট ক্যিনোর আঁকা এই কার্টুন চরিতের মত জনপ্রিয়তা মনে হয় ল্যাতিনের আর কোন চরিত্র আজ পর্যন্ত পায় নি।

374300_10151170037315497_1046711558_n

দেশের খবরের কাগজের সবসময় পরে এসেছি বুয়েন্স আয়ার্স, কাজেই মুখ দিয়ে প্রথমে চট করে বুয়েন্স আইরেস আসছিল না, ফাজিল ইয়াইয়াস তাই উপায় বাতলাল, বুয়েনোস তারদেস ( স্প্যানিশে শুভ সন্ধ্যা) মনে কর, তাহলে বুয়েনোস আইরেস মনে আসবে! এর পরে অবশ্য আর সমস্যা হয় নি। ঘুরে ঘুরে দেখা হল বেশ কিছু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অ্যান্টিক মার্কেট যেখানে ধূসর হয়ে যাওয়া পুথি থেকে শুরু করে কলের গান সবই মেলে। তারই এক পাশে বসেছে তাজা সব্জির পসরা, অন্যদিক থেকে ভেসে আসছে ধূমায়িত কফির গন্ধ।

397875_10151261719970497_116347249_n

426381_10151316489955497_73804805_n

421841_10151359908480497_891245246_n

উপনিবেশিক আমলের কিছু প্রাচীন ভবন পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে আর আর্ট গ্যালারীতে, সেই জায়গাগুলোতে গেলে সেই প্রাচীন দিনগুলির স্মৃতিকথা বইয়ের পাতা থেকে ধীরে ধীরে যেন পেখম মেলে চোখের সামনে, মনে হল এই ভাঙ্গা জানালার গরাদ ধরেই দাঁড়িয়েছিল লাজুক কোন স্প্যানিশ রমণী যে কিনা একই সাথে ছিল দুর্বার প্রেমিকা, হয়ত রাস্তার অপর পারেই গীটার হাতে দাড়িয়ে তার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যেত কোন শ্রমিক তরুণ, এই সোঁদা গন্ধ ভরা আঙ্গিনায় নোনা ধরা দেয়াল কত অযুত মানুষের স্মৃতির সাক্ষী!

428708_10151239647095497_1203565965_n

149465_10151559036235497_365433193_n

এমন জায়গায় গেলে খুব ভাবতে ইচ্ছে করে সেই সময়ের কথা, কত কি বলার আছে হয়ত আমাদের কাছে সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর। হয়ত এমন রোদেলা দিনে আনন্দের ঢল বয়ে যেত এখানের বাসিন্দাদের মনে, হয়ত বা যুদ্ধ কেড়ে মলিন করে দিয়েছিল তাদের বসতি স্থাপনের আনন্দ, কে বলতে পারে সেই গুমরে থাকা ইতিহাসের ঝরে যাওয়া পাতার কথা।

418991_10151245321355497_485770204_n

এর পরপরই বাসে চেপে বন্দরএলাকার ব্যোকাতে নামা হল, অবাক করা ভাবে আর্জেন্টিনার এই এলাকাটির নামই সবার আগে জেনেছি জীবনে, কারণ দিয়োগো ম্যারাডোনার উত্থান ঘটেছিল এই মহল্লারই বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব ব্যোকা জুনিয়র্সে খেলে! তাই আজকেও সেখানে পা দিয়ে প্রথমেই সেই গন্তব্য ঠিক করা হল ব্যোকা ক্লাবের স্টেডিয়াম, যা কয়েক ব্লক দূরেই। গাইড যদিও পইপই করে বলে দিল, পকেটমার আর ছিনতাইকারীতে ভরে আছে সব জায়গা, কখনো যেন একা না থাকি আর খুব দরকার না হলে ক্যামেরা ব্যাগ থেকে বাহির না করি! লোকের ভিড়ে গিজগিজ করছে পুরো এলাকা, নানা পণ্যের দোকানের বিশেষ করে খাবারের দোকানের অভাবে নেই, তারই ফাঁকে ফাঁকে চলছে ট্যাঙ্গো নাচের প্রদর্শনী, ছন্দবদ্ধ প্রতিটি পদক্ষেপ।

402882_10151167931860497_234129165_n

বেশ রমরমা অবস্থা! আসলে বুয়েন্স আইরেসকে অনেক অনেক দশক ধরেই ল্যাতিন আমেরিকার সুন্দরতম নগরী হিসেবে ধরা হত, এর আবেদন নিউইয়র্ক, আমস্টারডাম, প্যারিসের চেয়ে কম ছিল না কিন্তু ক্রমাগত অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে জৌলুস হারিয়ে ফেলেছিল এই তিলোত্তমা নগরী, সেই সাথে ছিল সেনাশাসনের অন্ধকার যুগের কুফল, তবে আশার কথা রাজধানীসহ দেশটি কক্ষপথে ঘুরে দাঁড়িয়েছে গত কয়েক বছরে, আস্তে আস্তে ফিরে আসছে সুস্থির সময় এবং পর্যটকদের ঢল।

401476_10151170843095497_39200305_n

406644_10151166913355497_1183976272_n

ব্যোকার এমন কোন রাস্তা নেই যেখানের দেয়ালে আঁকা দিয়োগের ছবি নজরে আসবে না, এমন কোন রেস্তোরাঁ নেই যেখানে দিয়েগো কোন না কোন ভাবে উপস্থিত নেই। কারণটা খুব স্বাভাবিক, গোটা দেশকেই নতুন ভাবে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করেছিলেন ফুটবল ঈশ্বর। তার কারণেই তো বিশ্বের অন্যপ্রান্তের বাংলা নামের দেশের কোটি কোটি জনগণের মনে দোলা দিয়ে যায় আর্জেন্টিনা নামটি।

407395_10151173563675497_1580068049_n

423856_10151245321635497_55175439_n

কিছুক্ষণ ইতিউতি করবার পর ক্যাঁটক্যাঁটে হলদে রঙের সেই বিখ্যাত স্টেডিয়াম চোখে পড়ল, আসলে সেই রাস্তার সমস্ত বাড়ীই যেন হলুদ রঙে ডোবানো,

380890_10151171435285497_525871184_n

আর স্টেডিয়ামের সামনে আছে এখানের খেলোয়াড়দের পায়ের ছাপাঙ্কিত ফুটপাত, একদল তরুণ ফুটবলারের জটলা দেখে নিশ্চয়ই দিয়েগোর পায়ের ছাপা ভেবে যেয়ে দেখি সেটি মার্টিন প্যালেরমো ইতিহাসের অংশ! পরে অবশ্য দিয়েগোর নাম খচিত তারার সন্ধানও মিলেছিল।

397259_10151173564255497_761683398_n

রাস্তার অন্যধারের দোকানের সামনে দিয়েগো এবং প্যালেরমোর মোমের মূর্তি বসানো, সাথে ছবি তুললে নাকি ৫ পেসো করে দিতে হবে!

381509_10151172547360497_1741892025_n

এটা আবার কি ধরনের মামদোবাজি, রোদে জ্বলা মূর্তির সাথে ছবি তুলতে কিসের টাকা? এমন ব্যবসায়ী চিন্তাভাবনাকে খুব একচোট গালিগালাজ করে স্টেডিয়ামের যে অংশে ব্যোকা জুনিয়র্স ক্লাবের জাদুঘর আছে সেখানেই অল্প কিছুক্ষণ থেকে দিয়োগের ভাস্কর্যের সামনে আর কিছু না পেয়ে নিজের ব্যাগকেই বিশ্বকাপের মত তুলে ধরে সেই মুহূর্ত ফ্রেমবন্দী করে ফিরে চললাম ঘুর পথে, হাতে সময় ছিল মাত্র এক ঘণ্টা, তার পরপরই গাইড আসতা লা ভিস্তা বেবি বলে হাওয়া হয়ে যাবে, পৌঁছাতে হবে পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় তার আগেই!

166948_10151172167045497_2143850535_n

418661_10151291561080497_650367268_n

403224_10151173564620497_1975991356_n

399893_10151170043500497_332462620_n

ফেরার পথে এক জায়গায় বেশ কিছু রঙিন টিনের ঘরদোর চোখে পড়ল, জায়গাটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত, মানে সমগ্র বন্দর এলাকা! আর এই ভবনগুলো ছিল অভিবাসীদের তৈরি।

419879_10151239647225497_531137482_n

554421_10151459005500497_1030906273_n

কেমন একটা চনমনে ভাব, সামনের রঙিন ক্যাফের দোতালায় দিয়েগোর ভাস্কর্য, যে কেউ চাইলে সেখানে ছবি তুলতে যেতে পারে, স্থানটি খুবই জনপ্রিয় ঘুরতে আসা জনগোষ্ঠীর কাছে।

427353_10151291561390497_1503725127_n

এক দোকানে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বিখ্যাত পানীয় ম্যাতে চা পরিবেশনের চমৎকার সব পাত্র বিক্রি হতে দেখলাম।

401682_10151170842890497_561665543_n

তবে সবচেয়ে বেশী বিজনেস আইটেম হিসেবে লক্ষ্য করলাম একদা স্বদেশে নিষিদ্ধ বিপ্লবী চে গ্যেভারা, ফুটবলার দিয়েগোর পাশাপাশি সাবেক ফার্স্ট লেডি ইসাবেল পেরণকে, দেশের মানুষ যাকে এভিটা বলে ডাকে।

562438_10151716463890497_789339140_n

হাতে সময় আছে মিনিট পাঁচেক, বাস এসে ভোঁ দিবে, তার আগেই দেখা করতে হবে শৈশবের বন্ধুর সাথে, দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে পুরনো বন্দরের রেলিং ঘেঁষে দাড়িয়ে দুইবার তার নাম ধরে হাঁক ছাড়লাম, সেখানের লোকজন দেখি কেমন চোখে চমকে তাকাল, কারো কারো মুখ মৃদু হাসি! যে যা ইচ্ছে মনে করুক, বন্ধু তো আমার, তাকে ডাকার দায় তো আমারই! আবার হাক দিলাম।

422998_10151291561720497_1813042980_n

প্রিয় বন্ধুর সাথে পরিচয় প্রায় দুই দশকের কিন্তু মুখোমুখি কথা হয় নি কখনোই, কেবলই মনে মনে। ছবিতে যে ঘোলা জলের সাথে অপরিষ্কার বন্দর এলাকা দেখছেন তা আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের পুরনো বন্দর। রিও দে লা প্লাতা বা প্লেট নদীর তীরে। এখানেই হারিয়ে ছিল বন্ধু আমার, শুনেছি মাঝে মাঝে গভীর সমুদ্রের কোল থেকে উঠে আসে গুরুগম্ভীর শঙ্খধ্বনির মত আওয়াজ, সেই আমার বন্ধুর বেঁচে থাকার চিহ্ন, অস্তিত্বের প্রমাণ। কিন্তু সেই আওয়াজ সবার কানে পৌছাই না, সবাই পায় না, পায় অপছন্দীয়, টিউলিপ, তিথীডোর, নজরুল ইসলাম, সুহান রেজওয়ান, অম্লান মোস্তাকিম, তারেক অণু, অদিতি কবিরসহ কোটি কোটি মানুষ, যারা আমার বন্ধুর বন্ধু। তার নামটি ধরে শেষ বারের মত ডাকলাম সেই ঘোলা জলের দিকে তাকিয়ে- ইকথিয়ান্ডর ! ইকথিয়ান্ডর !

কিন্তু সমুদ্র তার রহস্য ফাঁস করে না।

( আর্জেন্টিনার একটা ছবি ব্লগ করেছিলাম বেশ আগে, এই লিঙ্কে পাবেন সেই ছবিগুলো,

এই লেখাটি টিউলিপের জন্য, যখন বুয়েন্স আইরেস প্রায় ভাজা ভাজা করে রবি ঠাকুরের নামে রাখা রাস্তাটির ছবি তুলে নেটে দিলাম, সেই মুহূর্তেও ঐ ছবি ভুলে সে প্রশ্ন করেছিল, ইকথিয়ান্ডর যেখানে ভেসে বেড়াত সেই জায়গায় ছবি কোথায়! )


মন্তব্য

টিউলিপ এর ছবি

ছবিগুলো দেখে আর শেষটা দেখে আগে ধন্যবাদ জানাতে এলাম। পরে পুরোটা পড়ে আবার মন্তব্য করছি।

আমি জীবনে একবার হলেও যেতে চাই প্লেট নদীর তীরে, যেখান থেকে আমার ইকথিয়ান্ডর হারিয়ে গেছে অজানায়।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

তারেক অণু এর ছবি

হারিয়ে যায় কি কিন্তু! এমন বন্ধু কখনো হারিয়ে যায় না--

সজল এর ছবি

"ইকথিয়ান্ডার! বাপ আমার!", "কিন্তু সমুদ্র তার রহস্য ফাঁস করে না"

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তারেক অণু এর ছবি

(গুড়) কত বার পড়া! কত পরিচিত!

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

স্যরি অণু ভাই, ইকথিয়ান্ডরের ব্যাপারটা ধরতে পারলামনা, একটু বিস্তারিত বলবেন কি?
বর্ণনা ভাল কিন্তু ছবিগুলো আরো বেশি ভাল হাততালি

তারেক অণু এর ছবি

উভচর মানব বইটা পেলেই পড়ে নিয়ে, ভালো লাগবেই।

ধন্যবাদ।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

পোস্ট বরাবরের মতই অসাধারণ।
ইকথিয়ান্ডরের কথা শুনে নস্টালজিক হয়ে গেলাম।

তারেক অণু এর ছবি

হায়, ইকথিয়ান্ডর

শোয়েব মাহমুদ সোহাগ এর ছবি

জটিল পোস্ট। ইকথিয়ান্ডর গুত্তিয়েরে........।

তারেক অণু এর ছবি

হায় গুত্তিয়েরে মন খারাপ

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফ্লাইন) এর ছবি

অসাধারণ অণুদা চলুক !!!

তারেক অণু এর ছবি
শান্ত এর ছবি

আহহহহহহহহহহ .....................

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

তারেক অণু এর ছবি
তানিম এহসান এর ছবি

শেষটায় এসে একদম চুপ হয়ে গেলাম।

তারেক অণু এর ছবি

সেই, আমারও খুব খারাপ লাগছিল

অরফিয়াস এর ছবি

চাল্লু দেঁতো হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

সানগ্লাস পড়ে হাসলেই হবে না রে ভ্রাত!

কড়িকাঠুরে এর ছবি

রমণী হতে হবে... খাইছে

তারেক অণু এর ছবি
কড়িকাঠুরে এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া

তারেক অণু এর ছবি

কী হল!

কড়িকাঠুরে এর ছবি

কমু না... মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

আরে আমরা, আমরাই তো!

স্যাম এর ছবি

পুরোটাই দারুন বরাবরের মতই!
আর স্বর্ণখচিত শব্দমালা ---

নারী নির্যাতন বৃদ্ধির জন্য নাকি তাদের সংক্ষিপ্ত পোশাকই বেশী দায়ী, যারা এইসব কথা লেখে তাদের গালে ঠ্যাঁটায়ে গোটা কতক পেল্লাই চড় দিয়ে ল্যাতিনের এই শহরগুলোতে ( বিশেষ করে হাভানাতে) পাঠিয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত- নারী নির্যাতন অনেক কমে যাবে যদি সমাজের নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্কের স্বাভাবিকতা থাকে, পরস্পরের প্রতি সন্মান জন্ম নেওয়ার শিক্ষার আলোকে তারা আলোকিত হয় এবং সর্বোপরি দোষী ব্যক্তি যদি শাস্তি পেয়ে থাকে। এইসব বোধ না থাকলে সৌদি আরব, ভ্যাটিকান সিটি আর আফগানিস্তানের নাগরিকদের মত উপরে উপরে কাপড়ের বস্তা পরে থাকলেও নিচে নারী ও শিশু নির্যাতন চলতেই থাকবে, যেমনটা ঐ দেশগুলোতে চলছে।

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

সৌরভ কবীর

তারেক অণু এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি

শিক্ষিতরা যখন মোল্লাদের মত কথা বলে তখন বিরক্তিতে কিছুই বলার মত খুজে পাওয়া যায় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইকথিয়ান্ডর আহহহহহহহহ

তারেক অণু এর ছবি
নিরবতা এর ছবি

দারুন! দারুন! দারুন! এক কথায় অসাধারন। হাততালি

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, পরে অন্য লেখা আসিতেছে

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বাইসনের স্টেক খাওয়া হয় নাই?

তারেক অণু এর ছবি

এ যাত্রা গরুর উপর দিয়েই গেছে, আসলেই বিশ্বের সেরা স্টেক। ছবি ব্লগে ছবি আছে কিন্তু!

মেঘা এর ছবি

আহা! ঘোরের মধ্যে কাটানো আমার সেই শৈশব! ইকথিয়ান্ডরের জন্য কী কান্নাকাটি! মন খারাপ

শেষের লাইন ক'টার জন্যেই এটা প্রিয় লেখা হয়ে থাকবে। চলুক

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

তারেক অণু এর ছবি

(গুড়)
খুব আপন ছিল দানো টা!

পরমাণুঅণুজীব এর ছবি

জীবনটা এই লাতিনোরাই উপভোগ করছে চুটিয়ে। ঈর্ষা তো লাগছেই, তার চেয়ে বেশী লাগছে আনন্দ। আমি না পারি ওরা তো পারছে !

তারেক অণু এর ছবি

তাদেরও অনেক অনেক সমস্যা, কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি বেশ আলাদা।

সত্যপীর এর ছবি

স্টাইলিশ রমণীকুলের ছবি একখান ক্যান? গুপন সূত্রে জানা যায় যে আপনের ভান্ডারে আরো ছবি বিরাজমান. হতাশ কইরেন না ভাইডি!

পোস্টে উত্তম জাঝা!

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

ফিসফিস করে শোনা গোপন কথা বিশ্বাস করবেন না হে পীরবাবা!

কাক্কেশ্বর কুচকুচে এর ছবি

গুল্লি গুল্লি

তারেক অণু এর ছবি
রায়হান আবীর এর ছবি

আপনে কোনোদিন গঞ্জিকা সেবন করেন নাই? যাক অন্তত একটা দিকে তো আপনার থেকে আগায় আছি খাইছে

তারেক অণু এর ছবি

দেখি কতদিন আগায়ে থাকেন খাইছে

মন মাঝি এর ছবি

গঞ্জিকা না করেন 'শুক্‌না' টা টেস কইরে দেইখেন। চোখ টিপি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

পার্থক্য কি ! খাইছে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, আমাদের যৌবনের ম্যারাডোনা।

তারেক অণু এর ছবি
সুমাদ্রী এর ছবি

হাহা। আরও একটা দেশ ঘুরে ফেললাম। আরও একটা শহর। আপনি তো জানেন না মানুষের কত টাকা বাঁচিয়ে দিচ্ছেন এভাবে ভ্রমণ কাহিনী লিখে আর ছবি দিয়ে দিয়ে। নিজের পকেটের টাকার শ্রাদ্ধ করে ভাবছেন মানুষের কাছ থেকে অন্ততঃ ঈর্ষা কামিয়ে নিচ্ছেন। হাহাহাহাহাহোহোহোহো। আমরা কি আপনার মত অত বোকা? যত ইচ্ছা ঘুরেন, আর খালি পোস্ট দেন, আমরা মুফতে ঘুরে বেড়াই। মাগনা ঘোরার মজাই আলাদা।

অঃট- আর্হেন্তিনায় স্প্যানিশদের পাশাপাশি বিশাল সংখ্যায় ইতালিয়ান অভিবাসীদের বাস বলে জানতাম। সত্যি নাকি?

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

তারেক অণু এর ছবি

সত্যি, ল্য বোকার বাড়ীগুলো মনে হয় ইতালীয়দের।

ক্রেসিডা এর ছবি

কদিন আগেই ভাবতেছিলাম যে নীড়পাতায় ৯টা পোস্ট এ আপনার টা নেই.. আপনি টের পাননি নাকি দেঁতো হাসি এনিওয়ে কিডিং।

ওয়ান্ডারফুল লেখা।

চলুক

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

তারেক অণু এর ছবি
তাসনীম এর ছবি

চলুক

তবে আর্জেন্টিনার গঞ্জিকা একটু "টেস" করা উচিত ছিল।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তারেক অণু এর ছবি

ক্যান রে ভাই, বিশেষ কিছু নাকি !

অস্বাভাবিক  এর ছবি

গুল্লি চলুক

তারেক অণু এর ছবি
বন্দনা এর ছবি

ম্যরাডোনার সাথে মোলাকাত করেন নাই ব্যোকা ক্লাব ঘুইরা আসলেন, এটা কোন কথা হল। আমি উনার পুরাই পাঙ্খা।একবার আর্জেন্টিনা হেরে বিদায় নিল বলে আমি লেপের নিচে ঢুকে সে কী কান্না দিছিলাম।
আমি ও যাইতে চাই মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

কি আর করি, সে তখন বিদেশে!

অতিথি লেখক এর ছবি

বুয়েন্স আয়ার্স ভ্রমনে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
চলুক

দূর-দ্বীপবাসিনী

তারেক অণু এর ছবি

আপনাকেও!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও ঘুরে আসলাম আর্জেন্টিনা..................ফুটবল ঈশ্বরের দেশ...........যাদুবাস্তবতার লাতিন আমেরিকা।

জুঁই মনি দাশ

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ বলেছেন।

মন মাঝি এর ছবি

চলুক
দারুন লেখা!

আর্জিন্টিনিয়ানদের মধ্যে যে কিছুটা রেইরিজম বা শভিনিজম আছে, তা ম্যারাডোনার কিছু কিছু উলটাপালটা কথাবার্তাতেও বুঝা যায়। ভারতীয়রা মাটিতে বসে ভাত খায় (অর্থাৎ 'অসভ্য' বা আনিসিভিলাইজড) আর উনারা টেবিল-চেয়ারে বসে খান (অর্থাৎ কত 'সভ্য', সিভিলাইজড আর উচ্চমার্গের প্রাণী!), এবং এ জাতীয় আরও কিছু কথাবার্তা তার মুখে শুনেছি বলেই তো মনে পড়ে।

ম্যারাডোনা ফুটবল-প্রতিভা হলেও তার মধ্যে মনে হয় এই বুড়ো বয়সেও খানিকটা মানসিক অপরিপক্কতা, বালসুলভতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অভাব, অথচ একই সাথে টাকা আর রেশিয়াল/কালচারাল সুপিরিওরিটির একটা ডেডলি কম্বিনেশন আছে।

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

এটা বলেছে নাকি, তা জানতাম না। যাই হোক, তাকে আমরা চিনি ফুটবলার হিসেবেই, এই হিসেবেই তিনি অমর।

মন মাঝি এর ছবি

নিশ্চয়ই! ফুটবলার হিসেবে তিনি অতুলনীয়। তাছাড়া, তার কিছু এন্টিক্স সত্বেও ম্যারাডোনা অত্যন্ত কালারফুল, ক্যারিশ্‌মাটিক ব্যক্তিত্ব। তার এই অকেশনালি ড্রামাটিক, এমনকি মেলোড্রামাটিক, আবেগী ও মজাদার এন্টিক্স মিশ্রিত (যতক্ষণ না রেইসিজমের মত এনয়িং কিছু হয়) বর্ণিল বা বর্ণাঢ্য জীবনযাত্রাও আমাকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করে। শুধু ফুটবলারই না, উনি একজন পুরোদস্তুর এন্টারটেইনার। আ কমপ্লিট প্যাকেজ! পেলের কথা চিন্তা করুন, বিশাল প্রতিভা, কিন্তু কেমন যেন বোরিং রেগুলার গাই টাইপ না? ম্যারাডোনার ক্ষেত্রে এই ভিন্নতা বা ইউনিকনেসটা - তার মাঠভর্তি ও বিশ্বব্যাপী টিভিদর্শকের সামনে বাচ্চাছেলের মত লাইভ কেঁদেকেটে আকুল হওয়া (এবং বহু মানুষের চোখে সেই কান্না সংক্রমিত করতে পারার অতুলনীয় ক্ষমতা), একটা পুরো ভুয়া দলকে যাদুর মত উজ্জীবিত করে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দিতে পারা আবার তাদের পিঠেই ছুরি মেরে ড্রাগ নিয়ে তাদের শেষ মুহূর্তে ডুবিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মজার অভিযোগ তুলা, ফাউলের খামাখা মেলোড্রামাটিক অভিনয় করা, মাঠে ছেলেমানুষি গড়াগড়ি খাওয়া, হাত দিয়ে গোল দেয়া, দিয়ে আবার 'ইশ্বরের হাত' বলে মজা করা, ইটালিতে ইটালির বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে ইটালির দর্শকদেরই নিজ মাঠে নিজ দেশের সাথে বেইমানি করে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দেয়ার সামনাসামনি স্পর্ধিত আহবান জানানোর বলিহারি সাহস, বিশ্বকাপ দলের কোচ হয়ে স্যুট পরে মুখে দাঁড়ি ও চুরুট লাগিয়ে মাঠের এপাশ-ওপাশ দৌড়ুনো ও খেলোয়াড়দের প্রচণ্ড আবেগপূর্ণ ভাবে মোটিভেট করা, নানারকম নাটকীয় কমেন্ট করা, নানারকম ঝামেলায় জড়ানো, লাইমলাইটে থাকার প্রবল আগ্রহ - বলে শেষ করা যাবে না - সব কিছু, তার সমস্ত প্রতিভা ও পাগলাটেপনা মিলিয়েই তাকে আমার দারুন মজাদার, আকর্ষনীয়, প্রাণবন্ত আর বর্ণাঢ্য একজন এন্টারটেইনার মনে হয়। একটা কমপ্লিট প্যাকেজ, বা প্যাকেজ ডিল! শুধু ফুটবলার না। আমার দারুন লাগে এটা।

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

ড্রামা মেলোড্রামা উল্টাপুল্টা কথাবার্তা অংশটা ড্রাগের সাইড এফেক্ট হইতে পারে। কোকেইন বড় খারাপ জিনিস।

তয় দিনের শেষে বলের সাথে পা দিয়া কথা বলা এই লোকটাই ম্যারাডোনা।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

ড্রাগের সাইড এফেক্ট হোক আর যাই হোক - দ্যাট'স হিজ প্রবলেম। আমার কথা হচ্ছে - আমি এন্টারটেইন্ড। সেটাই বলতে চাচ্ছি! নিন্দা করছি না। বাই দ্য ওয়ে, এখন তো মনে হয় সে ড্রাগ বা কোক নেয় না। বহুদ্দিন হল বোধহয় ছেড়ে দিয়েছে। অথচ এখনও তো সমানে এন্টারটেইনিং!

আসলে আপনি (এবং অন্য আরও অনেকেই ) মনে হয় বিশুদ্ধতাবাদী। আমি না হাসি
'বিশুদ্ধতাবাদী'-দের কাছে আমার দৃষ্টিভঙ্গী ভাল লাগবে না। একটা চটজলদি উদাহরণ দেই। চকলেটের মধ্যে অনেক রকম ফিলার থাকে। বাদাম, ক্রীম, ওয়াইন, ফলমূল -- কতকিছু। এগুলি দারুন জনপ্রিয়ও। আমার কিন্তু এসব একদম পছন্দ না। আমি বিশুদ্ধ, অর্থাৎ কোনরকম ফিলারবিহীণ - স্রেফ চকলেটটুকুই ভালু পাই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে, অর্থাৎ ম্যারাডোনার ক্ষেত্রে, তাকে আমার 'ফিলার' সহই বেশি ভাল লাগে! বুঝাতে পারলাম?

যাজ্ঞে, আপনার হয়তো লাগে না। আমারও ঘনিষ্টতম বন্ধুদের কারওরই লাগে না। না লাগতেই পারে। তাদের কাছে তার ফুটবলার সত্তাটাই আসল ও একমাত্র বিবেচ্য। বাকি সব আপতিক ও অনাকাঙ্খিত। কিন্তু আমার কাছে না।

যাই হোক, আপনার যদি দ্বিমত থাকে, লেট'স এগ্রি টু ডিসএগ্রি! হাসি

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

কোক মাথার তার আউলায় দেয়, অনেকদিন না নিলেও পার্মানেন্ট ড্যামেজ ঠিকই হয়ে যায়।

তবে বলছেন খাঁটি কথা, ড্রাগস ইজ হিজ প্রব্লেম। আমি একটা সম্ভাব্য কারণ দেখতে পাচ্ছিলাম তার আউট অফ দ্য বক্স কার্যক্রমের, সেইটাই বললাম। আপনি আমি ও দুনিয়ার সবাই যে এন্টারটেইন্ড এইটা হইল ফলাফল। ঐটাতে আমার দ্বিমত নাই।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

ভিডিওর জন্য ধন্যবাদ, আচ্ছা ন্যাপোলিতে খেলার সময়কার গোলগুলোর ভিডিও কোথায় পেতে পারি?

সত্যপীর এর ছবি

ইউটিউবে পাইলাম এই দুইটাঃ

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি
কৌস্তুভ এর ছবি

আমার প্রফেসর এখন আবার কলাম্বিয়া গেছে। ব্যাটা ফিরে ফিরে ল্যাটিন আমেরিকায় কলাবরেশনে যায় কিন্তু আমায় সাথে নেয় না মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

ম্যানেজ করে ফেলেন!

শাব্দিক এর ছবি

ধন্যবাদ ফুটবলের যাদুকরের দেশে ঘুরিয়ে আনার জন্য।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

তারেক অণু এর ছবি

ফুটবল দেখতে পারলাম না এই যাত্রা, আরো লেখা আসিতেছে-

শাব্দিক এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

তারেক অণু এর ছবি
যুমার এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
আউটসাইডার এর ছবি

শুধু ইকথিয়ান্ডরের নামের জন্যই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়লাম লেখাটি নিয়ে। বরাবরের মতোই অসাধারন অণুদা। হাসি

আমার অল্প অভিজ্ঞতায় এটুকু বলতে পারি, লাতিন আমেরিকাতে মেক্সিকানরাই সবচে বন্ধুবৎসল জাতি।মুহুর্তেই আপন করে নেয়া মনে হয় এদের মজ্জাগত।

তারেক অণু এর ছবি

একমত, তারা অসাধারণ।

ইমা এর ছবি

আসাধরণ লেখা (বরাবরের মতই)।বিশেষ করে প্রিয় বন্ধুর কথাটা যেভাবে লিখেছেন একেবারে মন ছুয়ে গেছে। ওখানের বাড়িগুলো এত সুন্দর!!! তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করছে। পুরাই ক্লাসিকাল বাড়ি। যতগুলো ব্যপার এই লেখায় উঠে এসেছে সবগুলোই অনেক অনেক বেশি ভাল লাগলো। লেখাটা পড়ে কেমন শান্তি শান্তি লাগছে।

তারেক অণু এর ছবি

ওম শান্তি! তাহলে তো আরো লেখা দিতে হয় এই এলাকা নিয়ে দেঁতো হাসি

ইমা এর ছবি

চলুক দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি
ইমা এর ছবি

আরে আপ্নে পপকর্ন খান কেন?? অ্যাঁ পপকর্ন খাবার কথা তো আমদের। আপ্নে না লিখাবেন।

তারেক অণু এর ছবি

ক্যান! আমার কি পপ্পন চিবাইতে মন চায় না রেগে টং

কর্ণজয় এর ছবি

আপনার লেখাগুলো প্রায় পড়া হয়। পড়তে পড়তে ঘোরা আর কি! মন্তব্য করা হয় না- মুগ্ধতা ছাড়া কিছু বলবার থাকে না দেখে। এখানে মন্তব্যটা করলাম শুধু একটা শব্দ লেখার জন্য। ইকথিয়ান্ডার।

তারেক অণু এর ছবি

ইকথিয়ান্ডার।ইকথিয়ান্ডার।

অতিথি লেখক এর ছবি

"সেই সাথে বলতেই হবে পোশাক এবং সানগ্লাসের দিকে থেকে এই দেশের তাবৎ রমণীকুল অত্যন্ত স্টাইলিশ!" চোখের সামনে আপনার এই কথার প্রমান পেয়ে বারবারই আপনার কথা মনে হচ্ছে। নতুন বন্ধু পেয়েছি আর্জেন্টিনার এক সুন্দরী তরুনী। ওকে যখনই দেখছি তখনই আপনার কথাটা মনে পড়ছে। আজ আপনার কথা ওকে বলেই ফেললাম। সে আপনার সাথে পরিচিত হতে চেয়েছে। চোখ টিপি

ইমা

তারেক অণু এর ছবি

তাহলে আর কি, চলেন পরিচিত হয়ে আসি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি তো পরিচিত হয়েই গেছি। এবার আপনার পালা। চলে আসেন এখানে। পরিচিতও হওয়া হবে ঘোরাও হবে।

তারেক অণু এর ছবি

হ, আসি, তখন আপনি নিজেকে বলবেন- কাবাবমে হাড্ডি!

অতিথি লেখক এর ছবি

বলব না। কথা দিলাম চোখ টিপি

তারেক অণু এর ছবি

রেডি হন তাহলে, কিন্তু মেসেজ দেখি শুধু আপনারই, সেই সিনোরিতা কোথায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

হিহি আমি তো রেডিই। সেনরিতা কে জানিয়ে দিলাম। পরেরটুকু রহস্য থাক। দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।