শেষ বিকেলের যায় যায় রোদ, বাদামি গোধূলি নেমে আসছে বিশ্ব চরাচরে, বরিশাল সদরের পাঠাগারটি বন্ধ হবার সময় হয়ে এসেছে, দারোয়ান ইতিমধ্যেই উঁকি দিয়ে গেছে দুইবার, পাঠ কক্ষে দুইজন মাত্র মানুষ কি যেন সব জীর্ণ বইয়ের পাতা উল্টে দেখছে পরম মমতায়। তাদের মাঝে একজন নিজেই লাইব্রেরীয়ান জনাব এয়াকুব আলী সাহেব বলে দারোয়ান বেচারা তাড়াও দিতে পারছে না, কেবল অক্ষম চিন্তা করে যাচ্ছে- স্যারে আগে এইরুম আছেলেননা, এই বুইর্যা ব্যাডা আওনের পরদিয়্যাই না হাঙ্গাডা দিন একছের গপ্প আর গপ্প। কিয়ের এত কতা বউ মাইয়্যা পোলা থুইয়্যা পোকে কাটা, ধূলঅলা বই লইয়্যা জানে কেডা।
তবে সে এইটুকু বুঝতে পারে তার স্যার পায়ে কাদা লেপটানো সেই বুড়ো গ্রাম্য লোকটিকে খুবই কদর করেন, তার সাথে কথা বলে মজা পান এবং প্রায়ই নিজের নামে বই তুলে তাকে দেন। লাইব্রেরীর নিয়ম আছে বরিশাল সদর এলাকার বাসিন্দা না হলে এখানকার বই বাড়ী নিয়ে যাওয়া যাবে না, কিন্তু সেই লোকের বাড়ী জানি কোন এক গণ্ডগ্রামে, বন্ধুত্বের খাতিরে স্যার তাই বই নিজে জামিন হয়ে তাকে দেন। তবে হ্যাঁ, বুড়ো মানুষটি খুবই মিষ্টভাষী, আজ পর্যন্ত কোন কটু কথা বলতে শুনে নি কেউ তাকে, দেখা হলেই মৃদু হেসে কুশল বিনিময় করে পড়ার মাঝে ডুবে যায় আপন মনে, আর বই নিয়ে গেলে পরদিনই অতি যত্ন করে আবার ফেরতও দিয়ে যান নিয়মিত। কিসের এত পড়া এই বয়সে কে জানে?
অবশেষে দরজা বন্ধ হল সেদিনের তরে, সেই চির তরুণ বুড়ো মানুষটি দৃপ্ত পদক্ষেপে লম্বা লম্বা পা ফেলে ছুটতে লাগলেন নৌ ঘাটার দিকে, শেষ নৌকাটি ভরে গেছে যাত্রীতে, কিন্তু মাঝি যেন তারই অপেক্ষায়, জানে এই সময়ই সূর্যের চুরি যাওয়া আলোয় দেখা মিলবে বই হাতে আলোয় নেশায় পাওয়া মানুষটির। একগাল হেসে বলবে- কি মাতুব্বার সায়েব, বই পাইলে ফেরনের দিশ থাহে না!
মাতুব্বর সাব? নৌকার অনেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়- আপনিই আরজ আলী মাতুব্বর, জমি মাপার আমিন? আরজ আলী এক গাল হেসে বলেন, মাঝে মাঝে কেউ সমস্যায় পড়লে জমি পরিমাপের কাজে যায় বটে, কিন্তু আমি তয় আমিন না! প্রশ্নকর্তা আবারো বলে কিন্তু কিন্তু আপ্নের এত নাম হুনি, আপনে আত দেলে নাহি শতশত লোকের পরাণ বাচে! আরজ আলী আবারও হেসে বেলেন, এগুলো ভালবাসার কথা, তারা আমাকে পছন্দ করে বলেই বলে, এমন কিছু না। নৌকায় এক পাশ ঘেঁষে চলমান স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকেন এক নিমিষে, মনে আনন্দের বাণ ডেকে যায় হাতে বইটি পড়ে নতুন কিছু জানবার আকাঙ্খায়। বাড়ী তখনো ১১ কিলোমিটারের পথ, এমনটা প্রায় প্রতিদিনই আসেন তিনি, একসময়ে হেঁটেই আসতেন, কেবল মাত্র জানার আকাঙ্খায়। জোরে হাওয়া বয়, নৌকা দুলে ওঠে, কেউ মাঝিকে গালি দিয়ে ফেলে, কেউ চিৎকার করে বলে- হে মাবুদ, তুমিই ভরসা, রক্ষা কর। আরজ আলী শান্ত ভাবে ঘোলা জল থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকান আকাশের গায়ে আস্তে আস্তে উজ্জল হয়ে উঠতে থাকা জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর দিকে, শুক্র গ্রহ চেনা আছে তার, চিনেন প্রায় সমস্ত মূল নক্ষত্রপুঞ্জ, তাদের নিয়েই মনে মনে বুনতে থাকেন জ্ঞানময় প্রশ্ন।
অনেক কাল আগের কথা এগুলো।
আজ, ২০১২ সালের ৯ আগস্ট, রাত সাড়ে তিনটায় হেলসিংকির আবাসে নিজের লাইব্রেরী ঘরে বসে তারেক অণু তার সংগ্রহের না পড়া বইগুলোর দিকে তাকায়, চারপাশের না-পড়া বইয়ের পাহাড়ের দিকে যখনই চোখ পড়ে আশ্চর্যজনক ভাবে তার মনে আসে আরজ আলী মাতুব্বরের কথা , প্রতিটি বই জোগাড় এবং পড়ার পিছনে তার পরিশ্রমের কথা মনে করে সে লজ্জায় মাথা নত করে, প্রতিদিনই। চমৎকার সব বিষয়ের উপরে কত দুষ্প্রাপ্য বই, কিন্তু সংগ্রহ করাই তো শেষ কথা নয়, জ্ঞান আহরণ করতে হবে এই অমৃত ভাণ্ডার থেকে, তবেই না বই কেনা আপাত সার্থক। অলস বাঙ্গালী সমাজে অন্য সব কিছু বাদ দিয়েও এমন পরিশ্রমী পাঠক থাকতে যে পারেন, যিনি একটি বই পড়ার জন্য ১১ কিলোমিটার হেঁটে গ্রন্থাগারে যেতেন, যিনি নিজের জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে গণগ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন, এমনকি সেই গ্রন্থাগারের মজুর হিসেবে নিজে কাজ করেছেন যাতে সেই অর্থ দিয়ে একটি হলেও বই বেশী ক্রয় করা যায়, এমনটি কেবলই গল্প মনে হয়।
আরজ আলী মাতুব্বরের সময়ে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, আই ফোনের অস্তিত্ব কল্পবিজ্ঞানেও ছিল না, তারা নব লব্ধ জ্ঞানের জন্য অপেক্ষা করতেন বেতারের খবর, খবরের কাগজ এবং ছাপা বইয়ের। অণু খানিক আগেই ফেসবুকে বন্ধুর পাঠানো লিঙ্কে ছোট একটা ক্লিক করে সরাসরি নাসার ওয়েবপেজে ঢুঁকে মঙ্গলগ্রহের সূর্যাস্তের ছবি দেখে, সাইন্স ফিকশনের নয়, বাস্তবের। মঙ্গলে অবতরণকারী নভোযান আজই পাঠিয়েছে। লাল গ্রহের বুকে নামা সেই অপার্থিব সূর্য বিদায় তাকে অনেক বেশী গাঢ় বিষণ্ণতায় আক্রান্ত করে, সে মনে করে আরজ আলী মাতুব্বর এই সুবিধাগুলো পেলেন না। তাতেও সেই দার্শনিকের জ্ঞানচর্চা থেমে থাকে নি, কিন্তু আক্ষেপ ছিল তার, যদি অনেক অনেক বই পেতেন পড়ার জন্য, যদি হাত খুলে লিখতে পারতেন, যদি আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সাম্প্রতিকতম খবরগুলো পেতেন নিয়মিত, যদি আরও ভালো ইংরেজি শিখতেন তাহলে কত কিছু আরও ব্যপক ভাবে হয়ত বুঝতে, শিখতে, জানতে এবং জানাতে পারতেন।
জ্ঞান লাভের কি বিপুল আগ্রহ, কি প্রগাঢ় বাসনা! মানুষ চারপাশের পরিবেশের দোষ দেয়, পরিবারের দোষ দেয়, রাষ্ট্রের দোষ দেয়, আর আরজ আলী অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে সূর্যের মত একা একা এগিয়ে চলেন জ্ঞানের মশাল হাতে, তার তৃপ্তি লাভ হয় না কোনদিনই! না , জীবন নিয়ে তিনি তৃপ্ত, কিন্তু জীবনের রহস্য নিয়ে নন, আরও জানতে চান, বুঝতে চান, সেই জানার আলোকে কেবল নিজেই আলোকিত না থেকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। লিখে যান অবিরাম, সমমনাদের সাথে আড্ডায় বসেন, তার অনুসন্ধিৎসু মনে জেগে ওঠা নিরীহ প্রশ্নের কারণে কেড়ে নেওয়া হয় লেখালেখির স্বাধীনতা, তখন পাকিস্তান আমল, কিন্তু আরজ আলীর মস্তিস্কের কোষে কোষে যে জ্ঞানধারা তা রুখবে কোন সরকার, কোন সমাজ! সে যে সকলের সাধ্যের অতীত।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, আরজ আলীর বই প্রকাশিত হয়, মূর্খরা তার ওপর দৈহিক আক্রমণের সুযোগ খোঁজে, আরজ আলী স্মিত হেসে বলেন, আমি মারা গেলেই তো আমার কথা মিথ্যে হয়ে যায় না! বরং আমার কথা যুক্তি দিয়ে, প্রমান দিয়ে খণ্ডন করেন, তাহলে আমি মেনে নেব আমার কথা ভুল। কিন্তু তার কথা যে ভুল নয়, ধ্রুব সত্য, সত্যের সামনে যে অন্ধবিশ্বাস অচল, শারীরিক অত্যাচার ছাড়া আর কিছুই করার নেই যে মৌলবাদীদের!
কত রটনা তাকে ঘিরে, অনেকেই বলেন চাষাভুষো এক লোক, কিই বা এমন কিছু কথা লিখেছে তাই নিয়ে মাতামাতি! অনেক জ্ঞানপাপী তাকে উল্লেখ করে মধ্যবিত্তের দার্শনিক বলে। কিন্তু তাদের খাজা কাঁঠালের মত নিরেট মস্তিস্কে এই তথ্য ঢোকে না যে কে বলল এইটা কোন সময়ই গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসল কথা হচ্ছে কি বলল! বক্তব্যের বিষয়বস্তু। ভুল কথা ভুল কথাই সেটি যেই বলুক, আর সত্য সত্যই, তা যদি বরিশালের লামচরি গ্রামের এক স্কুল পাস না করা কৃষক বলেন তাতেও সত্যের মহিমার পরিবর্তন ঘটে না। নিজের লব্ধ জ্ঞান এবং প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা থেকে সত্যের সন্ধানে ব্যস্ত সৈনিক প্রশ্ন করেন অবিরত এবং উত্তর দেন, তাই নিয়ে রচিত হয় বাংলা বইয়ের জগতে এক মাইলফলক সত্যের সন্ধান।
চলতে থাকে তার যাত্রা, পড়েন অনেক অনেক বেশি, কিন্তু লিখেন খুবই কম, আফসোস আমাদের জন্য, তারপরও জীবন সৃষ্টির প্রমাণভিত্তিক কাহিনী তিনি লিপিবদ্ধ করেন সৃষ্টিরহস্য বইতে, গল্পচ্ছলে অসাধারণ সব প্রবন্ধ লেখেন অনুমান বইতে, যার মাঝে শয়তানের জবানবন্দি হয়ে থাকে সত্যিকারের ক্ল্যাসিক।
৮০ বছর পেরোনোর পর সারা জীবনের অন্যতম আনন্দময় ঘটনা ঘটে এই মনিষীর জীবনে, নিজ বাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রন্থাগার, তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন- দারিদ্র নিবন্ধন কোনো স্কুল-কলেজে গিয়ে পয়সা দিয়ে বিদ্যা কিনতে পারিনি আমি দেশের অন্যসব ছাত্র-ছাত্রীদের মত। তাই কোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা আমার শিক্ষাপীঠ নয়। আমার শিক্ষাপীঠ হল লাইব্রেরী। আশৈশব আমি লাইব্রেরীকে ভালোবেসে এসেছি এবং এখনো ভালোবাসি। লাইব্রেরীই আমার তীর্থস্থান। আমার মতে- মন্দির, মসজিদ, গির্জা থেকে লাইব্রেরী বহুগুণ শ্রেষ্ঠ।
এই সরল সত্য কথা তো আর কোন তথাকথিত সুধী সমাজের অন্তর্গত আধুনিক প্রফেসরদের ভাষণে পাওয়া যায় না, তারা জ্ঞানের দর্শনের কথা বলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগকারী তাদের মাঝে খুঁজতে হলে আগাছা বাছতে ক্ষেত উজাড় হয়ে যাবে ( ব্যতিক্রম আছে, বিরল, অতি বিরল!), শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পরও মানুষের সেবা করার বাসনায়, বিজ্ঞানের কাজে আসার জন্য নিজের মৃতদেহ মরণোত্তর দান করার অঙ্গীকার করে যান বরিশাল হাসপাতালে। শুনেছি, বিজ্ঞানের সেবায় মরণোত্তর দেহ দান উনিই বাংলাদেশে প্রথম শুরু করেছিলেন। শুধু তাই নয়, স্বশিক্ষিত এই মানুষটি নিজের মৃতদেহ বহনের জন্য ভ্যানভাড়া পর্যন্ত আলাদা রেখে গিয়েছিলেন। অন্য অনেক তথাকথিত মুক্তমনার মত মৃত্যুর সময়ে অন্ধ বিশ্বাস এবং সমাজের কাছে নতি স্বীকার করেন নি বাংলার মাতুব্বর, নিজে জীবনে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখিয়েছেন- জ্ঞানের আলোকে সকল ভয়ই দূরীভূত হয়।
জ্ঞানসাধক আরজ আলী মাতুব্বরের আজীবনের আফসোস ছিল ইংরেজি না জানার দুঃখ, তার ধারণা ছিল এই ভাষাটি আয়ত্ত করতে পারলে সকলে জ্ঞানের আগল খুলে যাবে তার জগতে। সেই সাথে নিজেও ছিলে অতি সত্যবাদী, তাই হয়ত সবাইকেই সত্যবাদী ভাবতেন। যে কারণে বিদেশী ঘটনার বাংলা অনুবাদ পড়ে বা শুনে হয়ত অনেকগুলোকেই সত্য মনে করেছিলেন, বিশেষ করে অনুমান নামের বইতে মেরাজ প্রবন্ধে তিনি অন্য অনেক উদাহরণের মধ্যে জর্জ অ্যাডামস্কির শুক্রগ্রহের বাসিন্দাদের সাথে মোলাকাত এবং ভ্রমণের কাহিনী তুলে ধরেন, সেই সময়ে সারা বিশ্বেই এই নিয়ে ব্যপক হৈ চৈ পড়েছিল, দশকের পর দশক মানুষ এই নিয়ে কথা বলেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে জর্জ অ্যাডামস্কি মিথ্যা কথা বলেছিল, মিডিয়ার লাইম লাইটে এসে টাকা এবং খ্যাতি কামানোর জন্য। অবশ্য সেই দশকে সারা বিশ্বে বিশেষ করে আমেরিকাতে এমন ঘটনা, ভিনগ্রহীদের সাথে সাক্ষাৎ, ভ্রমণ এবং শারীরিক মিলনের কেচ্ছাকাহিনী শোনা যেত হরদম, হলফ করে মানুষ টিভির পর্দায় এসে মিথ্যা বলত অবলীলায়। সত্যবাদী মাতুব্বর এই মিথ্যাটা সম্ভবত ধরতে পারেন নি, যেমনটা অনেক দিন ধরতে পারে নি বাকী পৃথিবীও।
একই বইয়ের আধুনিক দেবতত্ত্ব প্রবন্ধে তিনি রেফারেন্স হিসেবে এরিক ফন দানিকেনের কথা টেনেছেন, দানিকেনচর্চা এক সময়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ভূখণ্ডেই ব্যপক জনপ্রিয়তা পেলেও আজ পর্যন্ত অকাট্য প্রমাণ হিসেবে দানিকেন কোন কিছু হাজির করতে সক্ষম হন না, এক মনগড়া অনুমান ছাড়া। কিন্তু তার দেবতা কি গ্রহান্তরের আগন্তকতত্ত্ব আসলেই একসময় পৃথিবী মাতিয়েছিল, সেই থেকেই হয়ত আরজ আলী মাতুব্বর রেফারেন্সটি উল্লেখ করেছেন। যদিও তার অনুমান করা এখানে ঠিকই ছিল, কিন্তু দানিকেনের ধারণা অকাট্য এমনটা মনে করার প্রয়োজন ছিল না।
অথচ এই হিমালয়সম প্রতিকূলতা নিয়েই এগিয়েছেন তিনি, সকল বাঁধাকে জয় করে, সকল ভয়কে জয় করে উড়িয়েছেন বিজ্ঞানের ঝাণ্ডা, বলেছেন ঘেয়ো সমাজের উদ্দেশ্যে- বিজ্ঞানীরা যখন পদার্থের পরমাণু ভেঙ্গে তার অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছেন, মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছেন এবং প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাবার জন্য, তখনো তপস্বীরা গবেষণা চালাচ্ছেন, 'মার্গ দিয়ে বদবায়ু বেরুলে তাতে ভগবানের আরাধনা চলে কি-না।
আজ আমি মৃত্যুকে ভয় করি না, তার মানে এই না আমি মরতে চাই, আমি আসলে জীবনকে ভালবাসি, তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার চেষ্টা করি এর প্রতিটি মুহূর্ত- সোনাঝরা বিকেল, ধূসর সন্ধ্যা, তারা জ্বলা রাত, শিশিরভেজা সকাল। কিন্তু মৃত্যুর ভয়ে ভীত থাকি না, জেনে গেছি মৃত্যু জীবনের একটি অংশ, মানুষ যতদিন বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জরাকে পরাজিত না করতে পারবে ততদিন আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি হব জীবন সায়াহ্নে। ধর্মীয় বিধানের মনগড়া পারলৌকিক শাস্তির ভয়ে এই সুন্দর একমাত্র জীবনটাকে কেঁচে যেতে দিচ্ছি না আমি এক মুহূর্তের তরেও, কিন্তু এই যাত্রার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ আরজ আলী মাতুব্বরের কাছে, তার লেখনী, তার চিন্তা, তার দর্শন নিশ্চয়ই আমার মত কোটি কোটি মানুষকে দিয়েছে এই সুন্দর জীবনের সন্ধান।
পাড়ার এক ধার্মিক মামার সাথে মাঝে মাঝে জ্ঞান-বিজ্ঞান- দর্শন নিয়ে কথা হত। তিনি একবার বলেছিলেন- ভাগ্নে, পড়ালেখা তো করছ এই জীবনের জন্য, বিদেশ যাবার ভিসার জোগাড়ের চেষ্টা করছ, ভাল কথা কিন্তু পরকালের জন্য কিছু করো! কেবল হেসে বলেছিলাম- মামা, আমার জান্নাতুল ফেরদৌসের ভিসা প্রস্তুত, মারা গেলেই সোজা সেখানে চলে যাব! উনি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন- এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে কেউ বলতে পারে না, সবই আল্লাহর হাতে। আমিও নাছোড়, বললাম- মানুষের কাছে পৃথিবী বেহেস্ত, এর পরে কোন জীবন নেই, এর চেয়ে সুন্দর কিছু কোনদিনই ঘটবে না, এই বলে তাকে আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্রের প্রথম খণ্ড ধার দিই। কদিন পরে ফেরত দেবার সময় মুখখানা বেগুনভাজার মত করে মামা বলেছিলেন, আসলে ভাগ্নে, হয়েছে কি যখন আরজ আলীর মা মারা গিয়েছিলেন, তখন তাকে জানাযা দেওয়া নিয়ে যে করুণ ঘটনার সৃষ্টি হয়ে ছিল তার ফলেই তিনি এই সমস্ত কুফরি চিন্তাভাবনা শুরু করেন, এবং এক দিন এই বইগুলো লিখেন। বুঝলাম, কিন্তু তার কথায়, যুক্তিতে, জ্ঞানে ভুল কোথায়? ফাটল কোথায়? অসাড়তা কোথায়? এর উত্তর না দিয়ে মামা মানে মানে কেটে পড়ে বাঁচলেন সেযাত্রা।
অনেক তথাকথিত শিক্ষিতকেই বলতে শুনি, মাতুব্বরের বই পড়লে ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে, এগুলো পড়া উচিত না ! কেমন ঈমান আপনাদের, যে একটি বই পড়লেই দুর্বল হয়ে যায়! তারচেয়ে বইটি পড়ে সেটি ভুল প্রমাণিত করতে পারলেই ভাল হত না কুসংস্কারাচ্ছন্নদের জন্য!
জ্ঞান তাপস আরজ আলী মাতুব্বর, আপনার দিকে চেয়ে আমাদের বিস্ময়ের সীমা নেই, তেমনই নেই লজ্জার পরিসীমা, এই লজ্জা আপনার জীবনের বিপুল প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে জ্ঞানার্জনের তীব্র পিপাসার জন্য। কিন্তু আপনি আমাদের মনের আকাশে দেদিপ্যমান নক্ষত্র, যার আলোতে আমরা চলি সত্যের সন্ধানে।
( লেখাটি বিশ্বের সমস্ত মুক্তমনাদের জন্য, যারা জানতে আগ্রহী।
এখানে আরজ আলী মাতুব্বরের দর্শন নিয়ে আলোচনা না করে মূলত আলোকপাতের চেষ্টা করেছি তার জ্ঞানার্জনের তীব্র পিপাসা এবং কঠোর পরিশ্রমের উপর, পরে আশা করি তাকে নিয়ে বড় একটি লেখায় হাত দিতে পারব।
ব্যবহৃত স্কেচটি নেট থেকে নেওয়া, শিল্পী শামসুদ্দিনকে ধন্যবাদ।
বরিশালের ভাষায় সাহায্যের জন্য খেয়াদিকে ধন্যবাদ। )
মন্তব্য
আরজ আলীর লেখা অনেক আগেই পড়েছি। আফসোস আরজ আলীর দেশ দিনকে দিন তার মত লোকজনের জন্য আরও অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
****************************************
আজকেই দেখেন না কি সব মন্তব্য আসছে মানুষের বিবর্তন নিয়ে, আরে ব্যাটা না জানলে চুপ থাক, মুখ খোলার কি দরকার!
facebook
অসাধারণ মানুষটিকে নিয়ে অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম ...
ধন্যবাদ ভাই।
facebook
facebook
অসাধারণ!
facebook
চমৎকার লিখেছেন অনুদা। বিশ্বাস নিয়ে অবিশ্বাস আমার বোধয় গোঁড়া থেকেই ছিলো। মাঝপথে এসে আরজ আলীকে পাই। অসাধারণ লিখেছিলেন। সেইসময় হিচেন্স, ডেন ডেনেট, হ্যাঁরিস, ডকিন্স এর লেখাগুলার এক্সেস ছিলোনা। ইংরেজির দৌড় কম ছিল তাই বারট্রেনড রাসেল এর খোঁজও পাইনি । আরজ আলীর লেখা আমার চিন্তার জগতকে এলোমেলো করে দিয়েছিলো। আমি নিশ্চিত এই পোড়ার দেশে তার বই আমার মতো অনেককেই আলোকিত করে দিয়েছে। উনি আমাদের উদাহরন দেবার মতো একজন বেক্তি। একজন আরজ আলীর মূল্য আসলে যে কতো বেশী সেটি বোধয় তার জীবিতাবস্থায় কেউ টের পায়নি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি নিশ্চিত এই পোড়ার দেশে তার বই আমার মতো অনেককেই আলোকিত করে দিয়েছে।
facebook
অনেক ধন্যবাদ অনু'দা পোস্টটার জন্য। এই একটা মানুষের কাছে অশেষ ঋণ। চিরকৃতজ্ঞ থাকব সারাটা জীবন। আরজ আলী অল্প বয়সে কেরোসিন দিয়ে চালিত সিলিং ফ্যান তৈরী করেছিলেন। ঠিকমত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাওয়ার সৌভাগ্য হলে আমাদের দেশে হয়ত মহান একজন বিজ্ঞানীর দেখা মিলত তাঁর মধ্যে। মাতুব্বরের কিছু লেখা পিডিএফ এ পাওয়া যাবে এখানে
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
আসলেই, কত কিছুই জানতেন তিনি, এত সমস্যার মাঝেও
facebook
অণু ভাইয়া , খুব ভাল লাগল আপনার এই লেখাটা। আশা করি সামনে আরজ আলীকে নিয়ে আর লিখবেন।
চেষ্টা করব অবশ্যই, ধন্যবাদ।
facebook
আরজ আলীর মতো প্রতিভাকে জাতীয়ভাবে মর্যাদা দেয়া হলোনা এটাই দুঃখজনক। আমি উনার বন্ধু এবং সহকর্মীর লেখা বইটি পড়েছিলাম, স্মৃতিচারণে অনেক বিষয়ই উঠে এসেছে সেখানে।
মজার বিষয় হচ্ছে, যেই চরমোনাইয়ের পীর এর লোকজন মাতুব্বরের উপর মহাখ্যাপা ছিলো, তারাই জমির মাপজোকের সময় মাতুব্বরকেই ডাকতো। বরিশালে জমির দখল আর মাপ নিয়ে মারামারি নিত্য দিনের ঘটনা ছিলো তখন(এখনও আছে), কিন্তু মাতুব্বর একবার লিখে দিলে আর কেউ কোনো কথা বলতো না। এতটাই ছিলো তার সততা আর জ্ঞানের শক্তি।
আর একবার ধর্ম বিষয়ে তর্ক করার পরে তার পরিচত একজন তত্কালীন পুলিশের কাছে তাকে কম্যুনিস্ট পরিচয় দিয়ে ধরিয়ে দেয়। তিনি মনে দুঃখ পেয়েছিলেন কিন্তু কিছু বলেননি। জেল খেটেছিলেন কিছুদিন, কিন্তু তার জ্ঞানচর্চা বন্ধ ছিলোনা। এছাড়াও তার জীবনের উপরে যথেষ্ট হুমকি ছিলো, তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার চেষ্টাও করা হতো কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
একজন তত্কালীন পুলিশের কাছে তাকে কম্যুনিস্ট পরিচয় দিয়ে ধরিয়ে দেয় আর কি করার আছে ছাগলদের!
facebook
উনার বন্ধু এবং সহকর্মীর লেখা বইটির নাম কি?
সৌরভ কবীর
বাংলা একাডেমীর বইটা কি? নাকি একজন আরজ আলী?
facebook
আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র
সম্পাদনা- আইয়ুব হোসেন
স্মৃতিচারণ করেছেন মুহম্মদ শামসুল হক (জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়) এবং আইয়ুব হোসেন দুজনেই।
প্রকাশক- পাঠক সমাবেশ
প্রকাশকাল- ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কোন খণ্ডের? শামসুল হকেরটা আছে ১ম খণ্ডে।
facebook
১ম খন্ডই।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কাজি গোলাম কাদিরের একটা স্মৃতিচারণ কোথায় জানি পড়েছিলাম
facebook
অসাধারন শ্রদ্ধাঞ্জলী লিখেছিস এই জ্ঞানতাপসের প্রতি। তোকে ধন্যবাদ। আরজ আলী মাতুব্বরের প্রতি শ্রদ্ধা। আরো মানুষ উনার লেখার সাথে পরিচিত হোন এই কামনা করি। উনার লেখাগুলী নেটে একত্র করে প্রচার করতে পারলে, একটা ট্রিবিউট সাইটের মত, দারুন হবে।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
অবশ্যই দারুণ হবে, তুই একটু কষ্ট করে আলসামো ঝেড়ে শুরু করলেই হয়ে যাবে, শুরু করে দে---
facebook
কেবল নিজে জেনে তা নিয়ে বসে না থেকে অপরকে জানাতে যিনি উদগ্রীব তিনিই তো প্রকৃত জ্ঞানী । ১১ মাইল হেঁটে এসে পাঠাগারে বইএর মাঝে ডুবে থাকা, নিজের সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে গ্রন্থাগার স্থাপন করা যাতে মানুষ জ্ঞানের খোঁজ করতে পারে, বই পড়তে পারে । কী অসাধারণ একজন মানুষ- সত্য সন্ধানী । অশেষ শ্রদ্ধা মহান জ্ঞান তাপসের জন্য ।
আপনিও কিন্তু একই কাজ করছেন । আরও অনেকের সাথে-
অশেষ শ্রদ্ধা মহান জ্ঞান তাপসের জন্য ।
facebook
চমৎকার!
facebook
লেখায়
অনেকেই পড়ার পরও দেখি যুক্তি না খন্ডিয়ে আমার
facebook
আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি কলেজ ফার্স্ট ইয়ারে থাকা অবস্থায়। বই পড়ে নয়, প্রবল জীবনবোধ সম্পন্ন একজন মানুষের মুখে। মনোমুগ্ধকর বর্ণনায় আমিও বিমুগ্ধ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সময় নিয়ে উনার সব লেখা একে একে পড়ে ফেলবো। দীর্ঘ প্রায় এক যুগের কাছাকাছি একটা সময় পার করে দিয়েছি, সময়ে অসময়ে চমকিতভাবে সামনে এসে দাডিয়েছে আরজ আলী মাতুব্বর। কিন্তু কেন জানি কখনোই মেলে দেয়া হয়নি এই মানুষটিকে। আপনার পোষ্টটিও অজানা কোন এক কারণে এড়িয়ে গিয়েছি। এক লম্ফে চলে এসেছি মন্তব্য করতে। মন্তব্য করার কোন লোভে নয়, অনুভূতিটুকু শেয়ার করার জন্যই মাত্র।
ধন্যবাদ, এখন পড়ে ফেলুন, তার লেখা কিন্তু খুবই কম, চাইলে একদিনেই সব পড়ে ফেলতে পারবেন।
facebook
"আজ মহাসমুদ্রের বুকে লোক যাতায়াত করে কোন্ বিশ্বাসে? সমুদ্রের গভীর জলের নীচে লোকে সাবমেরিন চালায় কোন্ বিশ্বাসে? মহাকাশ পাড়ি দেয় লোকে কোন্ বিশ্বাসে? যন্ত্রে বিশ্বাস আছে বলিয়াই মানুষ যন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করিতেছে। দ্রব্যগুণে বিশ্বাস আছে বলিয়াই লোকে কলেরা বসন্তের সময় দোয়া-কালামের পরিবর্তে ইনজেক্শন ও টিকা লইতেছে।" (সত্যের সন্ধান, আরজ আলী মাতুব্বর)
পোস্ট ভালো লাগলো অণু ভাই।
..................................................................
#Banshibir.
(গুড়)
facebook
অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে ,মনে করিয়ে দেবার জন্য -এক সত্য সন্ধানী ও জ্ঞান পিপাশুর কথা। আসলে শুধু এইটুকু বিশেষণ ই তার জন্য কোনোভাবে ই যথেষ্ট নয় , কিন্তু তার মাপের একজন মনিষীর জন্য আসলে কোন বিশেষণ এর প্রয়োজন হয় না। তার যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে তা হল , ওই সময়টায় ওই পরিবেশে কিভাবে আসতো তার মাথায় এই ধরনের চিন্তা ও প্রশ্নগুলো। (আমরা বরিশালের লোকেরা এখনো ভালোই গোঁড়া প্রকৃতির এবং বিশাল পরিমানে পীরভক্ত )
আসলে তার পর্যায়ের লোকেরা মনে হয় সমসাময়িকতার উরধে থাকেন।
প্রথম তার লেখা পড়েছিলাম বোধহয় মাদ্রাসায় ক্লাস ৬ এ থাক তে। কিছু বুঝেছি কিছু বুঝিনি, বয়সটা নেহায়েত কম ছিল বলে হয়ত।
বন্ধুরা অনেক সাবধান করত , হোস্টেল এ থাকতাম তো ; ধরা পড়লে খবর ছিল।
পরে আবার পরেছি কলেজ শেষ করে। এবারো উপদেশ কম শুনিনি , প্রধানত ঈমান হালকা হওয়া
বিষয়ক
কে জানে মন্তব্য করতে গিয়ে আরও হালকা করে ফেললাম নাকি !!!
মুহাম্মাদ _আসাদুজ্জামান
facebook
---------------------
আমার ফ্লিকার
facebook
facebook
চমৎকার লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ অণু।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
facebook
_____________________
Give Her Freedom!
facebook
উনার বই প্রথম পাই আমার এক বন্ধু থেকে। ও এইচএসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিল। তখন এই স্ট্যান্ডধারীদের অনুষ্ঠান করে পুরস্কার দেয়াটা পত্রপত্রিকাওয়ালাদের একটা রেওয়াজ ছিল। দৈনিক যুগান্তরের তখন সুসময়। এই পত্রিকার সংবর্ধনাতে গেলে অনেকগুলো বই এর সাথে এই বইটাও পায় উপহার হিসাবে। বইটা পড়ে মাথা ঘুরাচ্ছিল। একজন কৃষক একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে কিভাবে এইসব ভাবল !! তাঁর বইগুলি যদি ভালভাবে অনুবাদ করে আন্তরজাতিকভাবে শক্তিশালী কোন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়, কোন সন্দেহ নেই বেস্ট সেলার হবে। আফসোস ! সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র , চাচা কাহিনীর কথা কোন আফগান কবি জানলনা, ফ্রান্সের বইখেকো ছেলেটার কাছে এখনো অজানা রয়ে গেলো একজন জীবনানন্দ ! আফসোস !
সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র , চাচা কাহিনীর কথা কোন আফগান কবি জানলনা, ফ্রান্সের বইখেকো ছেলেটার কাছে এখনো অজানা রয়ে গেলো একজন জীবনানন্দ ! আফসোস (গুড়)
facebook
কেমন ঈমান আপনাদের, যে একটি বই পড়লেই দুর্বল হয়ে যায়!
facebook
কিতাব পড়া ঈমান তো, তাই...
মোক্ষম বলেছেন
facebook
অণু ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ | আমি এই প্রথম আরজ আলী মাতুব্বরের নাম শুনলাম |আপনাকে আবরো ধন্যবাদ এই মুক্তমনা ব্যাক্তিকে আমার মত অনেক পাঠকের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য| এখন আমার পক্ষে পাঠ্য বই ছাড়া অন্য কোন বই সম্ভব হচ্ছে না, তা না হলে তাঁর লেখা পড়ার চে ষ্টা করতাম |আমি ভর্তিযুদ্ধ নামের ভয়াবহ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি |
পরীক্ষা শেষ হলে অবশ্যই তার বই পড়েন। শুভেচ্ছা-
facebook
ডকিন্স, হিচেন্স পড়ি নাই। মনের জানালা যতটুকু খুলে আলো উপভোগ করছি তার পিছে মাতুব্বর সাবের বিশাল অবদান। তিনি কোন দর্শন বিলান না, কিন্তু ভাবতে শেখান। ক্লাস সেভেন এইটে থাকতে পড়েছিলাম, আবার রিভিশান দিতে মন চাইছে।।।
আজকাল নাস্তিকতা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অনেকেই যেটুকু জানে তা দিয়েই সব কিছু বিচার করে উপসংহারে পৌছাতে ব্যাস্ত। এইখানেই মাতুব্বর সাহেবের কথা বেশি ভালো লাগে, কারন জানার যে শেষ নেই, এই বিশ্বাস থেকে কোন কিছুতেই তিনি উপসংহার টানেন না, কেবল ভাবনার সূত্র ধরিয়ে দেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
তিনি ভাবতে শেখান
facebook
facebook
একজন সত্যিকারের পাঠক ও বইপ্রেমী মানুষ ছিলেন আরজ আলী। শ্রদ্ধা
facebook
চমৎকার!! আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কৃতজ্ঞ উনার কাছে আমার ঈমান শুধু হালকা না ভ্যানিস করে দেবার জন্য। উনার একটা বই পড়েই আমি অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসি।
ছোটকাল থেকে যেই ভয় নিয়ে বড় হচ্ছিলাম তা থেকে মুক্তি মেলে উনার জন্যই। এখন আর একটা ভাত মাটিতে পড়লে ৭০টা ইয়া বড় অগজর আমাকে তাড়া করে না, দোজখে গেলে সূর্যের থেকেও ১০০ গুন তেজী আগুনের গোলা মাথার উপর থেকে আমাকে পুড়িয়ে ফেলে না, চুলের থেকেও চিকন পুলসিরাত পার হবার সময় পা কেটে রক্ত বের হয় না। ধর্মের নামে শিশুদের মনে যেই ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয় ছোটকালেই সেটাই আমরা সারাটা জীবন বয়ে বেরাই।
খুব চমৎকার ভাবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের সমাজের শিশুদের নিষ্পেষিত মানসিক অবস্থাটা তুলে ধরলেন, অনেক ধন্যবাদ। দুঃখের কথা, এই নিয়ে তাদের বাবা-মাও কিছু ভাবে না।
facebook
এই মানুষটির কাছে ঋণের শেষ নেই। প্রথম খন্ডটি পড়ে আমার মনোজগত উলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। তিনিই প্রথম আমাকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছিলেন। তার চিন্তার গভীরতা আর জ্ঞানের সততা মুগ্ধ করেছিল। এরপর বারবার পড়েছি। তাই তিনি সবসময় আমার অনুকরণীয়-অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। উনাকে নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ তারেক অণু ভাই।
আমি অনেককেই সত্যের সন্ধান বইটি পড়তে বলেছি। মোটামুটি দুই-তিন পাতা পড়ার পরই সবার উত্তর ছিল, এটা পড়া যাবে না। ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে। এক বন্ধু ফতোয়া দিয়েছিল, আমি শয়তানের দোসর, তাই এইসব বই পড়তে বলি। এইসব বই পড়া হারাম! অথচ গুপ্ত স্যারের নোট পড়তে তাদের কোন বাধা ছিল না
দুঃখ লাগে, এই লোকটাকে জাতীয় ভাবে পরিচিত করার কোন ব্যবস্থা নাই। আমার মতে আমাদের পাঠ্য বইতে উনার লেখা কিছু নিদেনপক্ষে জীবনী থাকা উচিত। যদি দেশে পড়াশুনা করিয়ে ছাগল না বানাতে চাই, কিছু হলেও মানুষ তৈরি করতে চাই, তাহলে উনি পাঠ্য বইতে থাকা উচিত।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
অবশ্যই পাঠ্য বইতে থাকা উচিত তার রচনা এবং জীবনী।
facebook
প্রবলভাবে আকর্ষিত মানুষটার প্রতি। তার রচনা সমগ্র পড়ে আমার ঈমান দুর্বল হয়েছে(দুর্বলদের কথন)। তাতে ভালো হয়েছে আমার। নিজেকে আবিষ্কার করেছি নতুনভাবে। আর আরজ আলী মাতুব্বরকে আবিষ্কার করেছি মহাবিশ্বয়ের যুক্তির প্রলয় হিসেবে।
অনেক ধন্যবাদ অণু দা দারুণ লিখেছেন।
পাপলু বাঙ্গালী
নিজেকে আবিষ্কার করেছি নতুনভাবে।
facebook
এই লেখাটায় মন্তব্য করার জন্যই লগালাম।
সত্যের সন্ধানে-র ডাউনলোড লিঙ্ক। আর মুক্তমনায় এটা টাইপ করার সিরিজ চলছিল, মাঝপথে থেমে গেছে।
আর একটুখানি বিনোদন - বিশিষ্ট এছলামি চিন্তাবিদ ওরফে 'ছাগু সম্রাট' ফারাবীর 'আরজ আলী মাতুব্বরের যুক্তি খন্ডন' সিরিজ
কিসের খণ্ডন! সে তো লেজেহাগা করে ছেড়েছে! মাথা থাকলেই কি আর হয়, সেটির ব্যবহার জানতে হয়।
facebook
#প্রিয় তারেক অণু ভাই, অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট,উনার নামই শুধু শুনেছি, উনার সম্পর্কে তেমন একটা জানা নেই, আপনার পোষ্টের মাধ্যমে কাছকাছি এগুলাম, আশা রাখি সামনে আরো বিশদ জানতে পারব।
#অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন
রচনা সমগ্রের অন্তত ১ম খণ্ড পড়ে ফেলেন--- জলদি
facebook
আপনার অনুভূতির প্রকাশ দারুণ।
ধন্যবাদ। চেষ্টা করি, লেখা শেষে বিরক্ত হয়, কিন্তু দিয়েই ফেলি !
facebook
অসাধারণ পোস্ট।
জাতি হিসেবে কৃতজ্ঞতার পাহাড় জমে আছে মানুষটার কাছে আমাদের।
জাতি হিসেবে কৃতজ্ঞতার পাহাড় জমে আছে মানুষটার কাছে আমাদের।
facebook
খারাপ লাগে যখন আমরা ওনাকে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হই।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
কিন্তু চেষ্টা করতে পারি আমরা---
facebook
এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আরজ আলী মাতুব্বর। তাঁকে নিয়ে চমৎকার এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ, অণু।
পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
facebook
সত্যের সন্ধান পড়েছিলাম। ক্লাস আট বা নয় হবে বোধহয়। তেমন কিছু ধরতে পারি নাই তখন। তোমার লেখা পড়ে এতোদিন পর আবার পড়তে ইচ্ছা হলো।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
লিঙ্ক আছে উপরে, পড়ে ফেলেন!
facebook
আবার জিগায়
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
পরে জানিয়েন কেমন লাগল এইবার।
facebook
এহহ, যে আমার পড়ার দৌড় তার উপর আবার তোমারে জানাতে যাবো, পাগল পাইছো?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ছি ছি, আপনার পা এমনিতেই যে লম্বা!
facebook
এই মানুষটা আমার চিন্তার জগতকে পাল্টে দিয়েছিলেন। অণুদাকে ধন্যবাদ তাঁকে নিয়ে চমৎকার একটি লেখা উপস্থাপনের জন্য।
facebook
আরজ আলী মাতুব্বরের আসল গুরুত্ব হচ্ছে প্রশ্ন উত্থাপনে। যেখান থেকে যাবতীয় বিজ্ঞানের শুরু। শুধু সত্যের সন্ধানের প্রশ্নগুলিই বহু মানুষকে বদলে দিয়েছে আমার চোখের সামনে।
অজ্ঞাতবাস
শুধু সত্যের সন্ধানের প্রশ্নগুলিই বহু মানুষকে বদলে দিয়েছে আমার চোখের সামনে। ধ্রুব সত্য।
facebook
প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছি দাদা।
তবু তোমার প্রিয় মুখ সিরিজ দেখে আর ছাড়তে পারলাম না।
দারুণ লাগল পড়ে।
সত্যি লাইব্রেরির চেয়ে বড় তীর্থস্থান কিছুই হতে পারে না।
এত চাপে চেপে যেও না ভাইডি!
facebook
ঐটাই তো ভয়।
তবে বিশ্বাস রাখি চাপব না, চাপছি না।
এই চাপা টুকু নেহাতই সাময়িক।
ওয়েক আপ, স্ট্যান্ড আপ=== বব মার্লে
facebook
facebook
এতো দুর্দান্ত একটা লেখা কীভাবে চোখ এড়ালো !
আরজ আলি মাতুব্বরের লেখা আমি পড়েছি তুলনামূলকভাবে বড় বয়সে। ততোদিনে মনের মধ্যে সন্দেহের বীজ চারাগাছের পর্যায় পার করে মোটামুটি মহীরুহ। তবে মুগ্ধ হয়েছি একজন মানুষের পড়াশোনা করার তীব্র আকাঙ্খা দেখে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা না, সত্যিকারের পড়ালেখা। ইন্টারনেটের এই যুগে অবিশ্বাসী হওয়া অনেক সহজ- যদি কারো মনে সত্যিকারের প্রশ্ন থাকে। কিন্তু আজ থেকে এতো বছর আগে, শুধুমাত্র বই পড়ে নিজের যুক্তি দিয়ে ঈশ্বরের ধারণাকে প্রত্যাখান করা বেশ কঠিন হওয়ার কথা।
আপনার বড় সাইজের লেখাটার অপেক্ষায় থাকলাম।
অলমিতি বিস্তারেণ
আরে আপনে ছিলে আগে বেশী ব্যস্ত।
এখন কথা শুনেন- চাইলে নেটের যুগে অন্ধ আরও বেশী করে হবেন- জিন জাতির ইতিহাস পড়বেন, অলৌকিক ঘটনাগুলোতে লাইক, শেয়ার দেবেন- ইত্যাদি ইত্যাদি করে শেষ পর্যন্ত ফেসবুকই ব্যবহার করতে থাকবে, বুঝলেন?
২০১২ তে নেটে মানুষের কাজ কারবার দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়- শালার বুদ্ধিমান প্রাণীর আসল সংজ্ঞা কি?
facebook
লেখাটা পড়ে স্মৃতিকাতর হয়ে গেলাম। তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। প্রথম ঢাকায় এসেছি। প্রথম বইমেলা দর্শন। এত বই একসাথে জীবনেও দেখিনি। লোভ সামলাতে না পেড়ে অনেকগুলো বই কিনে ফেলার পর আরজ আলী সমগ্র চোখে পড়ল। অনেকক্ষন কাঁচুমাচু করে শেষে কিনেই ফেললাম পাঠক সমাবেশ থেকে। ৫২০ টাকা দাম।বাবার সাথে একটা ব্যপারে ঝগড়ার পর অভিমান পর্ব চলছিল তখন। তাই অতিরিক্ত টাকাটা চাইতে ইচ্ছে হয়নি।সেই এক মাস মাছ ,মাংস, চা, রিকসায় চড়া সব বাদ দিয়ে শুধু সবজি,ডাল,ভাত খেয়ে থাকতে হয়েছিল।:-(
আহা কী স্মৃতি!
facebook
অনেক দিনের ইচ্ছাটাকে আবার উস্কে দিলেন ভাই
কোনটা?
facebook
বিচ্ছিন্নভাবে পড়েছি আগে। এবার 'সমগ্র' টা পড়বো।
ইচ্ছেটুকু চাগিয়ে দেবার জন্য -
বেস্টসেলার 'আরজ আলী সমীপে' পড়ে লাইনে আসুন ব্রাদার, জাঝা ইন এডভান্স!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন