লন্ডনে ধর্মনিরপেক্ষদের আড্ডা এবং রিচার্ড ডকিন্স

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৯/২০১২ - ৯:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

391650_10152138750800497_1580587433_n

আপাত বিলেতবাসী সচল কৌস্তভ দা জরুরী মেইল পাঠালো কয়েক সপ্তাহ আগে, লন্ডনে ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটির এক সারা দিনব্যপী আলোচনা সভায় রিচার্ড ডকিন্স উপস্থিত থাকবেন! গেলবার বিলেতে যেয়ে উনাকেসহ সকল লন্ডনবাসীকে পইপই করে বলে এসেছি ডেভিড অ্যাটেনবোরো এবং রিচার্ড ডকিন্সের সাথে দেখা করবার উপায় থাকলেই যেন সাথে সাথে পত্রপাঠ জানিয়ে রাখে। কৌস্তভ দা জানাল তার কোন বজ্জাত বন্ধু নাকি বলেছে ডেভিডের দেখা পেতে হলে একমাত্র কার্যকরী উপায় হতে পারে গরিলার স্যুট পরে শহরতলীর বনে লম্ফঝম্প করা, তাতেও যদি উনি দয়াপরবেশ হয়ে সাক্ষাৎ দেন ( শুনেই মনে হচ্ছে এই কাজ চউ দা( চরম উদাস)র অথবা তার মত বদবুদ্ধি সম্পন্ন কোন লোকের খুলির মধ্যকার পিচ্ছিল পদার্থ থেকে বাহির হয়েছে!) তবে ডকিন্সের খোঁজ মিলল বেশ শীঘ্রই, এবং সেমিনারটির প্রবেশমূল্য দুপুরের খানাসহ এন্তার চা-কফির পরেও ৩৫ পাউন্ড হলেও ছাত্রদের জন্য মাত্র ১০ পাউন্ড! আর আমার জন্য ফ্রি!

387483_10152146032520497_261703068_n

না, মানে বিনামূল্যে প্রবেশের রহস্য এমন কিছুই না, ডকিন্স আমার খুঁড়োও হন না, তবে কিনা এতদূর থেকে যাচ্ছি তাই কৌস্তভদা নিজেই হনু নাচিয়ে টিকিটের মূল্য নগদপ্রদান ( আসলে কার্ডের মাধ্যমে), আসন বুকিং দেয়া ইত্যাদি ভেজাল কাজসমূহ খুব সুচারু ভাবে করে রাখলেন। কোনরকমে সেই আলোচনা সভায় খেমো দেখানোর জন্য অল্প সময়ের জন্য উড়াল দিলাম ইউরোপের অচ্ছুৎ দ্বীপটার উদ্দেশ্যে।

প্রথমেই ভেবড়ে গেলাম মানুষের ভিড় দেখে, প্রায় ৬০০ শ্রোতা এসেছে, এর মাঝে বেশ একটা জায়গা খুঁজে বাহির করলাম যাতে বক্তার কথাও শোনা যায়, আবার ছবি-ভিডিও চলতে পারে সমান তালে। সময় মত অনুষ্ঠান শুরু হল, ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কেইথ পোর্টেস-উড সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে দিনের পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন।

425894_10152146032635497_1769715566_n

প্রথমেই বক্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন প্রফেসর টেড ক্যান্টল, যিনি Multiculturalism এবং Interculturalism নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, বিশেষ করে পরের শব্দটির জনক সম্ভবত তিনি নিজেই। ক্যান্টল রিপোর্টএর জন্য তিনি বিশেষ পরিচিত লাভ করেছেন।

550460_10152146032685497_1315745047_n

আসলেন ব্রিটেনের সংসদ সদস্য নিয়া গ্রিফিথ, তুখোড় বক্তা। ভদ্রমহিলা মজা করে খাঁটি ব্রিটিশ পরিশালীত ইংরেজি বলে অনুকরণ করলেন তার সহকর্মীদের, যারা কিনা উচ্চশিক্ষিত, সংসদ সদস্য অথচ বিজ্ঞানের কিছুই জানেন না, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, প্রগতির বিরুদ্ধতাকারি। ধর্ম নিয়ে খেলে যে সমস্ত রাজনীতিবিদ জনপ্রিয় হতে চায় তাদের এক চোট নিলেন কড়া ভাষায়। সেক্যুলার সমাজ গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করলেন দৃঢ় ভাবে।

264311_10152146032750497_1318145002_n

এর পরপরই সকালের চা-কফির আয়োজন ছিল সাড়ে এগারটায়, এত বেশী মানুষের ভিড়ে যেন ঠোকাঠুকি না হয় তার জন্য দুই আলাদা ঘরে ব্যবস্থা ছিল, তরলের সাথে সাথে ছিল বিস্কুটের বিপুল সম্ভার। কৌ-দা নিছক নিরামিষ ভাল মানুষ, লাল-সোনালী তরল তো বটেই, চা-কফিও পানে ইচ্ছুক না, ম্যাড়ম্যাড়ে জল আর ফলের রসেই দুগগাঁ বলে ঝুলে পড়লেন, আমি চললাম কফি ধবংসে।

৩০ মিনিটের বিরতি শেষে মঞ্চে আসলেন লেখক নিক কোহেন, অবসারভারের কলামিস্ট। বেশ কিছু উদাহরণ দিলেন ধর্মান্ধতার, ধর্ম নিয়ে রচিত উপন্যাসের কালো দিকগুলোর, বললেন মুক্তমনা হবার পিছনের কারণগুলো। সেই সাথে সেন্সরসিপের উদাহরণ দিলেন প্রাঞ্জল ভাষায়।

643909_10152146032905497_1104070567_n

তার কথার মাঝেই মনে হল আলোচনা কক্ষের বাম দিক থেকে পরিচিত এক মুখ ঢুকে দ্রুত আসন গ্রহণ করে ফেললেন দর্শকদের সারিতে, তাকে দেখেই কৌ-দা হেসে বলল- খুড়ো এসে গেছে! হ্যাঁ, আসলেই তিনি রিচার্ড ডকিন্স! চক্ষু- কর্ণের বিবাদভঞ্জন হল অবশেষে।

পরের বক্তা প্রাজনা প্যাটেল। তিনি Southhall Black Sisters নামে এক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সদস্য, যারা গত ৩০ বছর ধরে গৃহসন্ত্রাসের শিকার মহিলাদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন,অত্যাচারিতদের আইনগত সাহায্য থেকে শুরু করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন যথাযথ অধিকার নিয়ে সমাজে পুনর্বাসনের।

561760_10152146032830497_1682142482_n

তার পরপরই মধ্যাহ্নভোজন, হাতে ১৯৭৮ সালে ছাপা দ্য সেলফিস জিন ছিল একখানা, ইচ্ছা ছিল ডকিন্সকে সেটি দেখিয়ে অবাক করে দিয়ে একখানা সাক্ষর বাগিয়ে নিব, কিন্তু তার আগেই দেখি সে সাথের ট্রলিব্যাগ নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে লম্বা হল, কৌ দা বলে উঠল- সে কি, পালাচ্ছে যে! আর তার পিছনেই যেতে শুরু করল অর্ধেক জনগণ! আসলেই, বিজ্ঞান আর দর্শনের জগতে ডকিন্স যে একজন রকস্টারের মর্যাদা পান তা তো আর এমনি এমনি রটনা নয়!

খাবার টেবিলে স্যান্ডউইচের পাহাড়, নানা ধরনের- চিংড়ির, মুরগীর, সব্জির, হারাম- হালাল সব এক হয়ে মিশে গেছে বিশ্ব মানব দরবারে। ১০ পাউণ্ডে এলাহী কারবার বটে। ডকিন্স দেখলাম একটা পাকা কলা ( কি করে কলা ছিলতে হয় তা জানতে চাইলে চউ দার বর্তমান পোস্ট দেখুন) আর অল্প কিছু ফলপাকুড় নিয়ে আস্তে করে কেটে পড়ল, তার পিছনে পিছনে শদুয়েক উৎসাহী দর্শক, পিছনের এক পক্ককেশ তরুণ মাথা নেড়ে বলল- আহা, বেচারা দুপুরের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানেও এত ভিড়! এই হচ্ছে খ্যাতির মূল্য!

কৌ- দার রংচটা গেঞ্জি এর মাঝেই সুপারহিট, সেখানে মানুষের কল্পনার ফসল কিছু দেবতার ছবির উপরে লেখা আছে ডকিন্সের সেই দুর্দান্ত বানী- We're all atheists about most of the gods that humanity has ever believed in. Some of us just go one god further, একাধিক জন এসে আগ্রহ প্রকাশ করে গেল সেটি নিয়েই। কৌ দা নাকি মৌলবাদী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ জনগণকে খানিকটা জ্ঞানের আলো দেবার জন্য এত বেশী পড়েছে টি-সার্টটা যে আসল রঙ বিলীন হয়ে কেবলমাত্র লেখাটা টিকে আছে। আরেকজনের গায়ের গেঞ্জিতে আবার লেখা WE ARE ALL AFRICANS, ব্যাটা নিজে ধবধবে সাদা!

বিস্তর স্যান্ডউইচ ধ্বংস করে একটু ঝিমানোর জন্য মূল আলোচনা কক্ষে পা যেই না ফেলেছি দেখি সেখানে বিশাল লাইন! কি ব্যাপার? আর কিছুই না ডকিন্স বেচারা কলা খাবার জন্য নির্জনের তালাশে ছিল, জ্ঞানপিপাসু জনগণ সেখানেও ভিড় করেছে মধু লোভী পিঁপড়ের দলের মত, অটোগ্রাফও দিচ্ছেন! আর কি, লাইনে দাড়িয়ে গেলাম। মিনিট কয়েকের মধ্যে কৌ দার সঙ্গে আনা বইতে সাক্ষর দিচ্ছিলেন প্রিয় লেখক, বললাম- পাশে বসে পড়ুন দাদা, বেশ ক্লোজআপ ছবি আসবে! দিলাম ক্লিক ক্লিক করে ফ্রেমে বাধিয়ে রাখার মত দারুণ একটা ছবি তুলে, দেখুন বাড়িয়ে বলছি কি না-

404100_10152146033030497_1962967458_n

তারপর আমার পালা, কৌ দা যে আমাকে আসলে অন্তর থেকে খুব একটা পছন্দ করেন না সেটা বোঝা গেল আমার সাথে ডকিন্সের তোলা ছবি দেখে, দূর থেকে কাঁপা কাঁপা! ব্যাটা ফাজিল, ক্লোজআপে সমস্যা কি ছিল? দেখুন ছবিটা, এটা কি ইনসাফ হইল?

579808_10152136903300497_259478113_n

ডকিন্সের হাতে বইটা দিয়েই বললাম, বেশ পুরনো বইটা কিন্তু! তার ভ্রুক্ষেপই নেই! আবার গলা খাকরি দিয়ে বললাম, হেলসিংকি থেকে এসেছি শুধু আপনার বক্তৃতা শোনার জন্য। এবার প্রফেসর নড়ে চড়ে বসলেন- হেলসিংকি! ও গস! আমি তো গিয়েছি সেখানে!

দারুণ, তা অদুর ভবিষ্যতে আসবেন কি?

তিনি জানালেন এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না, দেখা যাক।

সাহস করে কৌ দা এসে আবার জিজ্ঞেস করে নিল উনি ভারতে গেছেন নাকি? অবশ্যই গেছেন।

খুব ইচ্ছে ছিল তার সাথে কিউবা নিয়ে কিছু প্রশ্ন করার, বিশেষ করে এত ভাল শিক্ষা ব্যবস্থা, বিবর্তন এবং ইকোলজি নিয়ে জনসাধারণের বিস্তর জ্ঞানের পরেও কেন সেখানে রাস্তা দিয়ে মেরী মূর্তি বহন করা হলে লাখো মানুষ ভিড় হয়, বা পোপ গেলে হাভাতের মন হাজার মানুষ কেন ঠাটা রোদে লাইন দিয়ে দাড়ায়? ধর্মীয় কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাসকে মানব মন থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য আমরা বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার কথা বলি কিন্তু সেটা কি আসলেই যথেষ্ট? পিছনের ভিড় আর কিছু মানুষের ভ্রূকুটি দেখে আর কথা বাড়ালাম না।

এই সময় এক রেডিও সাংবাদিক কি কারণে এসে আমাকে আর কৌ দাকে ধরল সাক্ষাৎকার নেবার জন্য! আজব, দিলাম কয়েক মিনিটের কথামালা। বললাম, আমি এসেছি ডকিন্সের বক্তৃতা শুনতে, তবে অন্যদেরও বেশ লাগল। এখন থেকে নিয়মিত জানার চেষ্টা করব সংস্থাটি নিয়ে। তার ঘোড়েল প্রশ্ন- আগে কি সেক্যুলার সোসাইটি নিয়ে জানতে, না কি স্রেফ ডকিন্সের নাম শুনে এসেছ? ব্যাটা কেমন চালু একেবারে হাঁড়ির খবর জানতে চায়! পরে আবার ধরল কৌ দাকে, সে আবার হাভার্ড ফেরত বিজ্ঞানী, এই সেই নিয়ে কথা চলল মিনিট কয়েক। তারপরেই এক মহিলা এসে অনুরোধ করলেন আমি এবং কৌ দা যে দ্য সেলফিশ জিন হাতে নিয়ে দাড়ায়, উনি একটা ছবি তুলে নিবেন! কারণ, উনি কি ঘটক পাখি আন্টি? না, এক গাল হাসি নিয়ে বললেন- You Guys are so Brave. যাচ্চলে, সেলিব্রেটি কি হয়েই গেলাম বিলেতে এসে?

423630_10152146033420497_1240231770_n

হাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় আছে, সেই সুযোগে একই মহল্লায় অবস্থিত পেত্রি জাদুঘর দেখতে বেরুলাম, মিশরীয় পুরাতত্ত্বের ৮০,০০০ নিদর্শন আছে সেখানে, ভাবা যায়! তার পাশেই এক চিলতে সবুজ উদ্যানে শূন্যে এক কাপালিক মুণ্ডু ভেসে থাকতে দেখে এগিয়ে দেখি তার নিচে বাংলায় লেখা রবি ঠাকুরের কবিতা! উনি নাকি এই এলাকাতেই ছিলেন প্রথমবার বিলেতে এসে। কিন্তু এই বিতিকিচ্ছি মুণ্ডুটা কার? দেখি ভাস্কর ব্যাটা, যার ধারণা লম্বা চুল-দাড়ি হলেই রবি হওয়া যায় এমন ভাব নিয়ে বিশ্বকবির আঠারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে, এই নিয়ে লেখা ছবি পরে আসবে।

এবার পা চালিয়ে দ্রুত সম্মেলন কক্ষে ঢুকতেই পিটার থেচেলের ভরাট কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, অসাধারণ বাগ্মী ভদ্রলোক, এই বছরের সেক্যুলারিস্ট পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমান বিশ্ব নিয়ে যার মনকাড়া একটা কথা মাথায় গেথে গেছে - Organised religion is the greatest global threat to human rights।

598921_10152146033290497_348309946_n

উনি ইরান, আফগানিস্তান, ভ্যাটিকান, উত্তর আয়ারল্যান্ড, লিবিয়া, ল্যাতিন দেশগুলো সহ নানা অঞ্চলের ধর্মভিত্তিক সংঘর্ষের নির্মম সব তথ্য দিলেন। বললেন শুধু এক ধর্মের হলেই তো আর শান্তি আসছে না, এরপর আসছে নানা ভাগ, খ্রিস্টান হলে ক্যাথলিক, না অর্থোডক্স, না প্রোটোস্ট্যান্ট , আবার মুসলিম না শিয়া না সুন্নি এই নিয়ে বিবাদ চলে আসছে, হত্যা চলে আসছে শত শত বছর ধরে। সত্যি কথা বলতে মনে মনে ঠিক করে ফেললাম উনার লেখাগুলো পড়ে দেখতে হবে, এত সহজে জটিল কিছু ব্যাপার জলবৎ তরলং করে বুঝিয়ে দিলেন!

564690_10152146033365497_1168162868_n

আবার চা-বিরতি, এর পরপরই মঞ্চে উঠলেন বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, জীববিদ, দার্শনিক, লেখক, শিক্ষক, আজকের মূল বক্তা- প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স । অসম্ভব হিউমার তার কথাতে, খানিক পরপরই শ্রোতারা হল কাপিয়ে হাততালি দিয়েই চলেছে, আর শুনছে মন্ত্রমুগ্ধের মত। প্রথমেই ডকিন্স বললেন, আমাকে যদি কেউ ধর্ম নিয়ে বিশ্বাসের কারণে শারীরিক ভাবে আঘাতের হুমকি দেয়, আমি সরাসরি বলি- আমি তোমাকে ভয় করি! আমি তোমাকে ভয় করি কারণ- তুমি উম্মাদ!! তাই আমি তোমার ভয়ে ভীত, কিন্তু আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করি না, ভুলেও ভয় আর শ্রদ্ধা গুলিয়ে ফেল না।

প্রথম কয়েক মিনিট সেই অসাধারণ বক্তৃতার সম্পূর্ণটাই ভিডিও করার চেষ্টা চালিয়েছিলাম, কিন্তু পিছনের শ্রোতা অভিযোগ করল যে ভিডিও ক্যামেরার কারণে সে নাকি স্পষ্ট দেখতে পারছে না! কি আর করা, ভিডিওর বদলে মাথাতেই রেকর্ড রাখতে হল শেষের অংশ। এখানে প্রথম কয়েক মিনিটের ভিডিও= https://vimeo.com/50295601

(ইউটিউব কাজ করে কি না জানি না, তাই কৌ দার পরামর্শ মত এখানেই দিলাম, কাজ না করলে জানিয়েন )

এরপরে আচ্ছা করে ধুয়ে দিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদীদের একজন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনাব টনি ব্লেয়ারকে, যে কিনা ক্ষমতায় থাকার সময় ধর্ম নিয়ে টানাটানি করে নি, কিন্তু এখন ভাল মানুষ সাজার ভং ধরেছে ব্লেয়ার ফেইথ ফাউনন্ডেশন স্থাপন করে, সেই সংস্থার এক হর্তাকর্তা আবার চিঠি লিখেছিল ডকিন্সের কাছে স্বাগতম জানিয়ে! ডকিন্স সেই চিঠি, সমস্ত ভুলতথ্য সমেত প্রেসে ছাপিয়ে দিয়েছিলেন!

এরপরে ধরলেন আমেরিকানদের, বিশেষ করে রিপাবলিকান দলের মিট রমনিকে নিয়ে, রমনি একজন মরমন, খৃস্টানদের বাইবেল কপি করে চালু করা এক অদ্ভুতুড়ে ধর্ম যার অনুসারীরা মনে করে যীশু ২০০০ বছর আগে আমেরিকা গিয়েছিল! আর সেই ধর্মের মূল হতা ছিল একজন জোসেফ স্মিথ নামের এক প্রতারক, যার কাজ ছিল তার টুপি উল্টো দিকে তলদেশের দিকে তাকিয়ে গুপ্তধন খুজে বাহির করার ভান করা! সেই লোকই সেন্ট জেমসের বাইবেল নকল করে মরমন মতবাদ প্রচার শুরু করে, মিট রমনি সেই মতবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং বিশপ!

জন কেনেডির উক্তি টেনে ডকিন্স বললেন যদিও কেনেডির মতে রাষ্ট্রপতির ধর্ম তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, সেটির সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের সম্পর্ক থাকা উচিত নয়, কিন্তু তুমি যখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির পদে আসীন, তখন অবশ্যই তোমার ব্যক্তিগত পছন্দ- অপছন্দ- মতামত কোটি লোকের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে, তখন তুমি যদি উম্মাদের মত যা ইচ্ছে তাতেই বিশ্বাস কর এবং সেই মতবাদ প্রচার কর, তখন তো বিরাট কেলেঙ্কারি!

বারাক ওবামার ক্ষেত্রে ডকিন্স বললেন গোঁড়া খ্রিস্টান এবং গোঁড়া মরমনদের মাঝে এমন কোন তফাত নেই, তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে ওবামা একজন নাস্তিক, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সে নিজেকে খ্রিস্টান বলে দাবী করে। আবার সে বেশ মুক্তমনা খ্রিস্টান যে কিনা জানে যে বাইবেলের কথাগুলো নানা ধরনের মেটাফোর, কিন্তু আক্ষরিক ভাবে যীশুর পানির উপরে হাটা বা জলকে ওয়াইনে রূপান্তর করাকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু আমেরিকা এখনো প্রস্তত না একজন মুক্তমনা রাষ্ট্রপতির জন্য, তাই তাকে নিজেকে খ্রিস্টান বলেই পরিচয় দিতে হচ্ছে বিশ্বের কাছে।

বললেন ইংল্যান্ডের কুখ্যাত ফেইথ স্কুল বাদ ধর্ম বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করে চালিত স্কুলগুলো বন্ধের জন্য তাদের অবিরাম সংগ্রামের কথা, ধর্ম নিরপেক্ষতায় উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের কথা। এক শ্রোতা প্রশ্ন করল- শিশুদের আমরা একেবারে ছোটকাল থেকেই বিশেষ ধর্ম গোষ্ঠীর দিকে ঠেলে দিই- ইহুদীরা বাচ্চাদের মাথায় তাদের টুপি প্রিয়ে সিনাগোগে নিয়ে যায়, মুসলিমরা টুপি পড়ে মসজিদের যায় কোরআন পড়তে, শিখরা মাথায় পাগড়ি বাঁধে, খ্রিস্টানরা ঝোলায় ক্রস! এভাবেই তো তারা সংকীর্ণ সমাজের বড় হয়ে উঠতে উঠতে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা শুরু করে, যে মুসলিম জীবনে একজন ইহুদিও দেখেনি সেও মনে করে তারা ইসলামের শত্রু, তারা বেড়ে ওঠে নিজেদের গণ্ডির মাঝে, থেকে যায় কূপমণ্ডূক! এখান থেকে আমরা কিভাবে উৎরাতে পারি?

ডকিন্স সরাসরি বললেন সচেতনতা তৈরি করে। আপনার সামনে কেউ যদি বলে এই বাচ্চাটা হিন্দু বা মুসলিম, সাথে সাথে প্রতিবাদ করুন! বলুন সেই বাচ্চাটি হিন্দু বা মুসলিম না, সে হিন্দু বাবা-মা অথবা মুসলিম বাবা-মার সন্তান। ধর্ম বেছে নেবার মত মনন বা পরিপক্কতা তার এখনো আসে নি। আমরা ত কোন শিশুকে বলি না অস্তিত্ববাদী শিশু, কারণ অস্তিত্ববাদী হবার মত জ্ঞান সে অর্জন করে নি এখনো, তবে কেন বলব সে মুসলিম, ইহুদী বা হিন্দু??

আরেকজন প্রশ্ন করল অনেক ধার্মিক মানুষও সমাজের ভালোর জন্য অনেক কিছু করে গেছেন, তারা ধর্মকে ব্যবহার করে লাখো মানুষের উপকার করেছেন যেমন আর্চ বিশপ ডেসমণ্ড টুটু, তাদের ক্ষেত্রে আমরা ধর্ম এবং কর্মকে কিভাবে আলাদা করব? ডকিন্স বললেন, আমি তাদের শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাদের অন্ধবিশ্বাসকে না। তারা আমাদের প্রিয় মানুষ হতেই পারে, কিন্তু তাদের বিশ্বাস আমাদের প্রিয় না।

এমন ভাবেই কেটে গেল অসাধারণ এক সন্ধ্যা। সবার শেষে মঞ্চে এসে সেক্যুলার সোসাইটির সভাপতি এবং সহসভাপতি সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন, আহ্বান জানালেন ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ গড়ার জন্য।

387521_10152146039575497_1776093451_n

শিখলাম, জানলাম, দেখলাম। মনে হল মানবজাতির টিকে থাকার এখনো কিছুটা আশা আছে যতদিন শুভবুদ্ধির কিছু মানুষ এখনো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সত্যিকারের সভ্যতার ওঠে উত্তরণের। ধন্যবাদ রিচার্ড ডকিন্স, ধন্যবাদ ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটি।

( এই পোস্টটি মলা-ঢেলা ব্লগার মুর্শেদ ভাইয়ের জন্য! )


মন্তব্য

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

ভিডিও চলে না।

তারেক অণু এর ছবি

এখন কাজ করছে, আরেকবার দেখুন তো চেষ্টা করে-

স্যাম এর ছবি

ঠিক আছে এখন।

তারেক অণু এর ছবি
দিগন্ত এর ছবি

একটা ইউটিউবেও দিন, ভিমিওটা এখান থেকে খুলছে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তারেক অণু এর ছবি

স্যাম দা যে বলল ঠিকাছে! বাড়ী যেয়ে দিতে হবে, বাহিরে আছি।

দিগন্ত এর ছবি

এখন ঠিকঠাক।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তারেক অণু এর ছবি
অবনীল এর ছবি

সৈয়দ মুজতবা আলীর স্টাইল ধরসস দেখি। পুরাই রম্যরসে ভরা, সেই সাথে গুঢ়তত্ত্বের হালকা উপস্থাপন। ভালৈ। দারুন লাগলো। পোস্টের জন্য থ্যাঙ্কস। কনফারেনসের ছবি দেখ ব্যাপক আগ্রহ জন্মাইসিল। এরকম জায়গায় গেলে মানুষের প্রতি আস্থা বেড়ে যায় শতগুন।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

তারেক অণু এর ছবি

তোর সাহিত্যজ্ঞান যে কত দুর্বল সেটা আমি অনেক বছর ধরেই জানি, যখন তুই মুজতবা আলীর সাথে আমার নাম নিস, ভাগ ব্যাটা গুহামানব

অবনীল এর ছবি

*নুর ব্যাটা, তুলনা করি নাই, প্রভাব উল্লেখ করসি। সাহিত্যজ্ঞান ? হেইডা আবার কি?

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

তারেক অণু এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি

এরকম জায়গায় গেলে মানুষের প্রতি আস্থা বেড়ে যায় শতগুন। উত্তম জাঝা!

ধৈবত এর ছবি

ওরে ওরে এগুলো কি দেখলাম। অণু-কুতুব থুড়ি কৌস্তুভ-ডকিন্স। ফটোশপ না তো?

তারেক অণু এর ছবি

হ , বুঝলেন কেমনে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আজ আর কমেন্ট না করে পারলাম না। অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ অনু ভাই।
বিশেষ করে লাল সবুজের টিশার্ট পড়ে ডকিন্সের পাশে তোলা ছবিটা চোখে লেগে আছে।
ভিমিও তে ভিডিওটা সম্ভবত ডিলিট হয়ে গিয়েছে। একটু চেক করবেন প্লিজ?

--সাদাচোখ
sad_1971এটymailডটকম

তারেক অণু এর ছবি

এখন মনে হয় এসেছে, একবার দেখে জানান

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ভিডিও চলুক

দারুন সময় কাটালেন তো আপনারা।

তারেক অণু এর ছবি

ঠিক

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা। ডকিন্সের পুরো বক্তব্য শুনতে পারলে আরেকটু ভালো হত।

তারেক অণু এর ছবি

ভিডিও ক্যামেরা নিয়েই গেছিলাম, কিন্তু সুযোগ মিলল না।

মাহমুদ.জেনেভা এর ছবি

কেয়ামত শুরু হবে লন্ডন থেকে এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত! দেঁতো হাসি
জিব্রাইল কাকায় এখন লাস ভেগাসে উনি কাজ কাম শেষে একটু জিরাইতে আম স্টার ডাম আসবেন তারপর লন্ডন গিয়ে “পু” করে বাশি ফুক দিবে তারপর টের পাইবেন ঠেলা কারে কয় দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

ঠ্যালা টের পাবার জন্য ভিসুভিয়াস যাচ্ছি, কন্দরের লাভার সামনে দাড়িয়ে শিঙ্গায় ফুঁক দিব ১০ দিন পরে শয়তানী হাসি

চরম উদাস এর ছবি

গেল কৌস্তভ এর পাল্লায় পড়ে আপনার ইহকাল পরকাল দুদুটাই ...

তারেক অণু এর ছবি

এখন কি উপায়! ওঁয়া ওঁয়া

আরিফুর রহমান এর ছবি

অছাম! থাকতে পারলাম না বলে নিদারুন দুষ্কিত।

ভিড্যুর জন্য উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি
ধুসর জলছবি এর ছবি

চলুক চলুক চলুক । ভিডিও দেখা যাচ্ছে না। মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

কি মুশকিল! কেউ দেখতে পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না! কেনু?

সত্যপীর এর ছবি

হাততালি

টেডে ডকিন্সের অনেক পুরান ভিড্যু দেখছিলাম, ভাইজানের চুল তখনো পাকে নাই।

অট ১, ছবিতে ডকিন্সরে কি কৈতেছেন?

অট ২, কৌদাদা তো ব্যাপক লাজুক হাসি দিছে।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

লাজুক হলেও ফালাফালি করচে লজ্জা বিসর্জন দেবার জন্য!

পাকা চুলে কিছু মানুষকে বেশ মানায়, রবি, আইনস্টাইন, ডকিন্স, ডারউইন

সত্যপীর এর ছবি

লাজুক হলেও ফালাফালি করচে লজ্জা বিসর্জন দেবার জন্য!

কস্কি মমিন!

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি
সাত্যকি এর ছবি

দারুণ, দারুণ। ডকিন্স! চমৎকার একটা ছবি+ লেখা।
ভিডিও দেখতে পাচ্ছি না, আপনি কষ্ট করে ইউটিউবেই আপলোড করেন। বলদিয়া সরকার ইউটিউব বন্ধ করলেও প্রক্সি সাইট তো আর বন্ধ করেনি। দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি
পথখোঁজা পথিক  এর ছবি

খুব ভালো লাগলো পোস্টটা। আচ্ছা অনুভাই, বর্তমান সিনেমা-মুসলিম জোক্স নিয়ে কেউ কি কিছু বলেছে?

তারেক অণু এর ছবি

কিছু কিছু, ঠিক মনে পড়ছে না

অরফিয়াস এর ছবি

ডকিন্স খুড়োর পাশে ওরকম সুবোধ চেহারা করে কে হনুদা থুক্কু কৌদা নাকি? দেঁতো হাসি কি লাগছে !! আর ফটুগ্রাফারের গুনে ওরকম নাদুসনুদুস ভুড়িখানা বেমালুম উধাও !! আর ঘনুদা এতো কি কথা খুড়োর সনে ?? ভিডিও দেখা যায়না কেনু? ইউটিউব এর লিঙ্কই দাও।

[ঘোর বিপদ, ছেলেপেলে সব গোল্লায় গেল !! রেগে টং ]

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

কৌ দা, কৌ দা- আমাদের কৌ দা!
দেখ দিকি, আমি তার ভুঁড়ি নাই করে দিলুম, আর সে কিনা আমার কাঁপা কাঁপা ছবি তুলল রেগে টং

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সম্ভবত আপনার জীবনের দারুণ সব দিনগুলোর একটি ছিল এটি! অনেক কিছু জানা হলো।
একটি বিষয়ে বলতে চাই, সেক্যুলার সোসাইটি = ধর্মহীন সমাজ, 'ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ' বাক্যটি ঠিক যায়না বোধহয়।

তারেক অণু এর ছবি

হতে পারে, আক্ষরিক মানে টা জেনে নিশ্চিত করুন, কেউ করলেই সব চেঞ্জ করে দিব, শুভেচ্ছা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

'ধর্মনিরপেক্ষ' অর্থাৎ সেখানে বিভিন্ন ধর্মের উপস্থিতি থাকবে বটে কিন্তু সবার মননে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে। সেক্যুলার সোসাইটিতে কোন ধর্মের উপস্থিতি সিদ্ধ নয়। আমার জানার পরিধি অত্যন্ত সীমিত।
তাই বলবো, এ সম্পর্কে আরও কিছু জানার চেষ্টা করুন।

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

আপনার প্রথম বাক্যটা মনে হয় প্রায় ঠিক আছে। তবে, ২য় বাক্যটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে আমার। আমারও জানা অত্যন্ত সীমিত, তবে আমার ধারণা 'সেক্যুলারিজম' বলতে সমাজ/রাজনীতির আলোচনায় এর আভিধানিক অর্থ 'ওয়ার্ল্ডলি' বা 'টেম্পোরাল'-এর পাশাপাশি সেপারেশন অফ চার্চ এণ্ড স্টেট, অর্থাৎ সরকার ও পাব্লিক প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনা থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় বিবেচনাকে পৃথক করে শুধুমাত্র ইহজাগতিক বিবেচনাকে অনুসরন করাকেই বুঝায়। ঐসব জায়গায় ধর্মবিশ্বাসীর অনুপস্থিতি বা তাদের মননে "ধর্মহীণতা" বুঝায় না। এজন্যেই একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রে যেকোন সরকারি বা পাব্লিক প্রতিষ্ঠানের যে কোন পদে ধর্মবিশ্বাসীদের উপস্থিতি সিদ্ধ এবং পৃথিবী জুড়ে সেকুলার দেশগুলিতে তাদের সেরকম উপস্থিতি দৃশ্যমান। 'সেক্যুলার সোসাইটি' বলতে কি বুঝাবে আমি জানি না, তবে সাধারণ ভাবে একটা সেক্যুলার সমাজ বলতেও মনে হয় এই অর্থটাই বুঝাবে - অর্থাৎ যে সমাজের সদস্যরা পাব্লিক স্ফিয়ারে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র ইহজাগতিক বিবেচনা/নীতি দ্বারাই পরিচালিত হওয়ায় বিশ্বাসী - প্রাইভেট স্ফিয়ারে তাদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যাই হোক না কেন। অর্থাৎ এখানে ধর্ম বা তার অনুসারীদের উপস্থিতি সরাসরি নাকচ বা অসিদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে না। এই অর্থে সেক্যুলারিজম বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কোন এক্সক্লুসিভিটির চর্চা বাধ্যতামূলক করে না, বরং ধর্মবিশ্বাসীরাও তার অংশভাক্‌ হতে পারেন। বস্তুতঃ এ ধরণের যে কোন এক্সক্লুসিভিটি এর মূল স্পিরিটের বিরোধী হবে, এবং প্রায় সব সেক্যুলার দেশের আইন ও সংবিধান বিরোধীও হবে। এই পোস্টের শুরুতে 'ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটির' পোস্টারের ২য় ছবিটাতেও সেরকম মটোই দেখা যাচ্ছে -'challenging religious privilege in public life' - অর্থাৎ লক্ষ্যটা ব্যক্তিজীবন নয়, পাব্লিক লাইফ (এবং তাও সবটা নয়, কেবল "প্রিভিলেজটুকু"!!)। যাহোক, এ জন্যেই মনে হয় এর বাংলা - ইহজাগতিকতাবাদ করে থাকেন অনেকে। নয়তো, সরাসরি 'নাস্তিক্যবাদ' হলেই বরং ঠিক হত। মোদ্দা কথায় এই শব্দটার মাধ্যমে বৃহত্তর কন্টেক্সটে ধর্মীয় বিবেচনার পৃথকীকরণটা 'মননে' নয়, পাব্লিক 'আচরণে'-র কাছে প্রত্যাশা করা হয়। এই পাব্লিক আচরণের জন্য যতটুকু মননশীল হওয়া প্রয়োজন, ততটুকু হলেই চলে। আর যিনি ব্যক্তিগত মনন ও আচরণ - দুক্ষেত্রেই সেক্যুলার, তাঁকে মনে হয় আর সেক্যুলার বলার প্রয়োজন পড়ে না - তিনি সরাসরই নাস্তিক, ধর্মহীন, ধর্মে অবিশ্বাসী, যুক্তিবাদী, ইত্যাদি। 'ধর্মনিরপেক্ষ'-র বেলাতেও প্রায় একই ব্যাপার - তিনি মননে নিরপেক্ষ নন, আচরণে নিরপেক্ষ বা বলা ভাল থিওরিটিকালি - সমদৃষ্টিসম্পন্ন। তবে সেক্যুলারের সাথে তার পার্থক্য হল, তিনি পাব্লিক নীতি/আচরণের ক্ষেত্রে ধর্মের পৃথকীকরণে দায়বদ্ধ নন, বরং সমাজে বিদ্যমান সব ধর্মগুলিকে সম-অধিকারের সাথে ট্রিট করা এবং তাঁদের বিশ্বাসকে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়/সরকারি নীতিতে প্রতিফলিত করা, ইত্যাদি। তবে এটা তত্বকথা, বাস্তবে সম্ভব নয়।

এই হিসাবে আমার মনে হয় "ইহজাগতিক সমাজ'-টাই সঠিক হয়। তবে আমার এককালের প্রিয় সেকুলারিস্ট লেখক শফিকুর রহমানের একটা দুর্দান্ত গ্রন্থের শিরোনামের অনুকরনে বলা যেতে পারে - 'পার্থিব সমাজ'। এটা শুনতে আরও ভাল লাগে। আভিধানিক অর্থও এটাই। [২][/url । [url=http://conservapedia.com/Atheist_vs_Secular]৩]

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

তুরস্ককে সেক্যুলার দেশ বলা হয়, আপনার কথার সাথে সেখানের অনেক কিছুই মিলে গেল।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সেকুলারিজম মানে ইহজাগতিকতাবাদ ঠিকই আছে। এটাই আভিধানিক অনুবাদ। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটার পেছনে কংগ্রেসের রাজনীতি জড়িত। যেটা আওয়ামী লীগ অনুসরণ করে।

তারেক অণু এর ছবি

আরো সংক্ষিপ্ত কোন শব্দ নেই? ইহজাগতিকতাবাদ একটু বড় হয়ে যাচ্ছে।

সজল এর ছবি

মনমাঝি যেমন বললেন "পার্থিবতা" হতে পারে।
(অবশ্য মঙ্গল গ্রহে বসতি গাড়লে শুধু পার্থিব হয়ে পোষাবে না, তখন মাঙ্গলিক হতে হবে দেঁতো হাসি )

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইহজগত গঠিত বস্তু দিয়া। সুতরাং সঠিক অনুবাদ বস্তুবাদ। সমস‌্যা হচ্ছে শব্দটার সাথে জড়িত রাজনীতি।

তারেক অণু এর ছবি
সুমন চৌধুরী এর ছবি

সমস‌্যাটা আমার না। রাজনীতিমুক্ত ছাগুনাস্তিকদের।

তারেক অণু এর ছবি

বুজচি! আচ্ছা, মুক্তমনা দিলে কেমন হয়?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মুক্তমনা কথাটার মধ্যে তথ্য নাই। বিষয়টার মধ্যে ভাবাবেশে ঠাকুর পরমহংস জাতীয় সমস্যা আছে।

ইহজাগতিকতা কথাটা বড় হইলেও বস্তুবাদের রাজনীতি আড়াল করতে আপাতত এইটা ছাড়া আর কোন পর্দা চোখে পড়তেছে না।

রবীন্দ্রনাথও শুনছি ইহজাগতিকতাই অনুবাদ করছিলেন। বৃদ্ধসম্মতি বইলা কথা।

পরমার্থ এর ছবি

সর্বজনীন সমাজ । @ তারেক অনু, আমি আগে থেকেই আপনার ভক্ত, আপনি কিন্তু একটু আবেগপ্রবণ মানুষ ..

তারেক অণু এর ছবি

একটু আবেগপ্রবণ মানুষ হলে কি ভক্ত হওয়া সমস্যা!

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

সেক্যুলারিজম মানে ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় বিষয়সমূহকে ধর্মমুক্ত করা অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় বিষয়সমূহ সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত থাকবে।

নির্ঝর অলয়

নাহিদ আনোয়ার এর ছবি

খুবই ভাল লাগল। শেয়ার দিলাম ফেসবুকে

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, অবশ্যই শেয়ার করবেন।

মেঘা এর ছবি

কমেন্ট দিয়ে আর হবে কি? আমার আগে দুনিয়ার মানুষ কমেন্ট করে সব বলে ফেলেছে। আমি কোনদিন ফার্স্ট হতেই পারলাম না কমেন্টে মন খারাপ

নতুন কিছু কথা নতুন কিছু ধারণা পেলাম। সেই জন্য ধন্যবাদ এতো ভাল পোষ্টের জন্য অণু ভাইয়া হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

তারেক অণু এর ছবি

আরে,কমেন্টের আবার আগে-পরে কি!

মন মাঝি এর ছবি

চলুক

এ ধরণের ইভেন্টে যোগ দেয়ার ভাগ্য আমার কপালে নাই। ইর্ষা ছাড়া আর কীইবা করার আছে!

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

হবে হবে, আমিও কি আর ভেবেছিলুম! সবই তার ইচ্ছা!

স্যাম এর ছবি

সবই তার ইচ্ছা!

? কে? চোখ টিপি - সিরাজুল ভাই রা এইটা কেম্নে ইন্টারপ্রেট করে কে জানে! চিন্তিত

তারেক অণু এর ছবি
যুমার এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
সজল এর ছবি

ডকিন্সরে জ্ঞান দিচ্ছিলেন? ডকিন্স কি আপনার কাছে অটোগ্রাফ চাইছিল?

সাধারণত আপনারে আমার তেমন হিংসা হয় না। ভাবি, ঠিকাছে, আমিও একদিন যাবনে ঐ যায়গায়। কিন্তু এবার হিংসা না করে পারলাম না।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তারেক অণু এর ছবি

ধুর, হিংসা কিসের! আমরা আমরাই তো !

সাবেকা  এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি

আপনার দেখা নাই!

সাবেকা  এর ছবি

দেখা হয়েই যাবে কোন না কোন দিন হাসি

কড়িকাঠুরে এর ছবি

নিঃসন্দেহে দারুণ অভিজ্ঞতা... চলুক

তারেক অণু এর ছবি

তা আর বলতে!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বেদাতী বেশরীয়তি পোস্ট

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অরফিয়াস এর ছবি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি
অরফিয়াস এর ছবি

ধইরা ঠুয়া দিয়া দিমু...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

অহিংসা পরম ধর্ম! আমি তো শুধু ম্যাও করলাম!

অরফিয়াস এর ছবি

কোলাকুলি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি

ঠিক! ব্যান করেন! তা আপনি কইত থ্যাইক্যা?

ক্ষুদ্র সত্তা এর ছবি

লেখাটা অনেক উপভোগ্য হয়েছে। তবে বার বার মনে হচ্ছিল আমিও যদি যেতে পারতাম।
তবে বানানের ব্যাপারে কিছু অভিযোগ আছে। আশাকরি শুধরে নেবেন। অবশ্য আমারো ভুল হতে পারে, সেক্ষেত্রে আমাকে ধরিয়ে দেবেন।
বিরুদ্ধতাকারি নাকি বিরোধিতাকারী?
পরিশালীত নাকি পরিশীলিত?
বাহির নাকি বের(সাধু চলিত মিশে গেল না? গুরুচণ্ডালী)
দয়াপরবেশ নাকি দয়াপরবশ?
দৃঢ় ভাবে নাকি দৃঢ়ভাবে একসাথে থাকবে?
হতা নাকি হোতা?

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, ওরে বাবা গুরুচণ্ডালী সবসময়ই লেগে আছে! এ থেকে পরিত্রাণের উপায় জানা নেই যে! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা অনেক ভাল হয়েছে উত্তম জাঝা!

ইমা

তারেক অণু এর ছবি

কুফরী লেখা! তাই আবার ভাল আর মন্দ

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তারেক অণু এর ছবি

গজব পড়বে! গজব!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মারইয়াম নামাযে'র বক্তব্য আর ছবি কই? নাকি ঐ সময় দাঁড়িওয়ালা বুড়োর মুণ্ডু দেখতে গিয়েছিলেন?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

হ দাদা, ! ঐটা মিস হয়ে গেছে, কিন্তু কৌ ছিল সেখানে, সে লিখবে আশা করি।

রংতুলি এর ছবি

চলুক

স্বপ্নের সময় কাটালেন তাহলে...

তারেক অণু এর ছবি

বলা চলে----

অতিথি লেখক এর ছবি

আহ অনুদা - কী যে স্বপ্নের সময় কাটালেন দাদা - ঈর্ষায় জ্বলে যাচ্ছি! তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারলাম আপনার লেখা থেকে - অনেক ধন্যবাদ।

-অয়ন

তারেক অণু এর ছবি

আমরাই তো ! কোলাকুলি

 তৌসিক তানভীর  এর ছবি

ভাল লাগল হাসি

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ

দ্রোহী এর ছবি

ডকিন্সের জীবন ধন্য! তারেক অণুর সাথে পোজ দিয়া ছবি তুলতে পারছে!

তারেক অণু এর ছবি
হিমু এর ছবি

কৌস্তুভের সাথে ডকিন্সের ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে কৌস্তুভ ডকিন্সের শুধু বিঘে দুই জমি নিজের নামে জোর করে লিখিয়ে নিয়েছে।

তারেক অণু এর ছবি
অয়ন এর ছবি

নাম হইলো মরিয়ম নামাজী, সে ঘুরে ডকিন্সের সাথে। নাউযুবিল্লাহ।

তারেক অণু এর ছবি

নামের উপরে কারো কি হাত আছে! সবই তার ইচ্ছে- শয়তানী হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঝরঝরে লেখা।
কৌস্তুভ দার তোলা আপনার ছবিটাই বরং বেশি আন্তরিক হয়েছে। মনে হচ্ছে ছাত্র আর প্রোফেসর একান্তে আলোচনা করছে!

এক্ষেত্রে সেক্যুলারিজমের চেয়ে স্কেপ্টিসিজম বেশি উপযোগী নাম।

সংশয়বাদী হওয়া বড় সহজ ব্যাপার নয়। মার্টিন গার্ডনার সাহেব নিজে ডিইস্ট হয়েও স্কেপ্টিক্যাল সোসাইটির একজন বড় সদস্য। যদিও প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিকদের আসলে স্কেপ্টিক্যাল বা ফ্রি থিঙ্কার বলা যায় না। কারণ এরা শেষ পর্যন্ত ওই "গড ইন গ্যাপস" - এ বিশ্বাসী।

অন্ধবিশ্বাস সরাসরি ক্ষতিকর,
অবুঝ বিশ্বাস বোকামি, কখনো কখনো বিপজ্জনক।

নির্ঝর অলয়

তারেক অণু এর ছবি

অন্ধবিশ্বাস সরাসরি ক্ষতিকর

অতিথি লেখক এর ছবি

যথারীতি দৃশ্যকল্প সাজিয়ে দিলেন চোখের সামনে,বিমুগ্ধ নয়নে শুধু দেখে গেলাম কল্পনায়।আর মনে মনে বললাম ইস যদি যেতে পারতাম,যদি কোনদিন দিন থাকতে পারতাম এমন সেমিনারগুলোতে।অন্ধকার ঠেলে পৃথিবীর মানুষ ঠিকি একদিন সত্যটাকে বরন করে নিবে,অন্ধবিশ্বাসে মেতে না থাকে মানবকল্যানে কাজ করে যাবে এই আশা্টাই রেখে যাবো পৃথিবীতে। গুরু গুরু

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।