নাম যেমন মানুষ কর্মসুত্রে পায় না, তেমন পায় না ধর্ম, দেশ, সংস্কৃতি, ভাষা। এর সবই আসে জন্মসুত্রে।
মায়ের নামের সাথে নাম মিলিয়ে আমার নাম রাখা হয়েছে তারেক মাহমুদ অণু, বাবা-মা চাইলেই আমার নাম ডেভিড অ্যাটেনবোরো বা সূর্যশেখর রাখতে পারতেন। আবার নামের আগে পিছে মোহাম্মদ – আহাম্মদ ইবনে খলদুন ইত্যাদি ইত্যাদিও লাগাতে পারতেন। নামের ক্ষেত্রের যে একটা আলাদা ব্যাপার আছে এইটা প্রথম টের পেলাম ইউরোপে এসে- আফগান, তুর্কি থেকে শুরু করে নাইজেরিয়ান, সেনাগালিজরা পর্যন্ত নাম শুনেই খুশী হয়ে বলে- তারিক! ব্রাদার, ইউ আর মুসলিম!
কেন আমার গায়ে লেখা আছে আমি কি?
না না, তারিক তো মুসলিম নাম!
আরে ব্যাটা, এইটা আরবি নাম। সাদ্দাম হোসেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারেক আজিজের নাম শুনছিস, সে কিন্তু ক্যাথলিক খৃস্টান।
তাই নাকি, এতো জানি না। কিন্তু তুমি তো বাংলাদেশের।
তো?
বাংলাদেশের ৯০% লোকই তো মুসলিম।
হতে পারে, কিন্তু বাকী ১০ %?
আরে রাখ ১০ ভাগের কথা।
না না রাখা যাবে না, বাংলাদেশে সম্ভবত ৫২টি আদিবাসী গোত্র আছে, প্রত্যেকের নিজস্ব বিশ্বাস এবং ভাষা আছে, হিন্দু-মুসলিম- বৌদ্ধ- খৃস্টান- ইহুদী- জৈন-পার্সি- শিখ এই ধর্মের মানুষেরা আছে। মানে অন্তত ৬০ ধর্মের লোক আছে বাংলা নামের দেশটিতে। কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য বাকিদের গায়ের জোরে তোমরা মুছে ফেলতে পার না।
কথা শেষ, ধর্মীয় বিশ্বাসে গজিয়ে ওঠা বলিয়ান ভায়েরা বিদায় নিল সেযাত্রা।
ধর্মের বিষবাস্প থেকে অনেকটাই মুক্ত সেক্যুলার একটা দেশ ফিনল্যান্ডে আছি আপাতত, কিন্তু শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত দেশে আজ আমি একজন সংখ্যালঘু। ঐ জন্যই কি আমি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের একজন হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘুদের কষ্ট কিছুটা হলেও বুঝতে পারি? বোঝার চেষ্টা করি কি কেন ৭ম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার এক ক্লাসমেট আরেক ক্লাসমেটকে মালু বলে সম্বোধন করেছিল? কত বেদনা পেলে মানুষ কয়েক প্রজন্মের ভিটা-মাটি ছেড়ে নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়ায়? কেন আমার অতি উচ্চশিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কাকুকে নিজের সহকর্মীদের মুখেই শুনতে হয়- আপনার ভারত? আমি যদি একজন আদিবাসী হয়ে জন্মাতাম তাহলে কি এভাবে চিন্তা করতাম?
গত কদিনের ঘটনায় অক্ষম ক্রোধে শুধু চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, বিষণ্ণতায় ডুবে আছে চেনা জগত। কি করি? কি করতে পারি?
সংখ্যালঘুদের চিন্তা কি এমনই হয়ে থাকে?
নাকি সংখ্যালঘু না হলে অপর সংখ্যালঘুর মত চিন্তা করা যায় না?
মন্তব্য
অণুদা আমার একটা জিনিস ভালো লাগে না যে, মুসলিম পরিবারে জন্মালে আরবি নাম রাখা হয়,খ্রিস্টান পরিবার হলে ইংলিশ নাম রাখা হয় আর হিন্দুদেরও নিজস্ব টাইটেল থাকে।এভাবে কোথাও না কোথাও সবার উপরে একটা অবাঞ্চিত পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া হয়।এখন পর্যন্ত একটা নামও শুনলাম না যা পুরোপুরি বাঙলা
সাদিয়া
নীল উপল অয়ন ঋষি ও বিশুদ্ধ সমীরণ। নাম দুটি আমার ছেলের।
সংখ্যালঘু আমিও আমেরিকায়। এই দেশে আমাকে এয়ারলাইনে ট্রাভেল করার সময় আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। সিকিউরিটি চেকিং এর নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝেমাঝে রাস্তায় হয়ত বাজে কোন রেসিয়াল কমেন্ট শুনতে হয়েছে। কিন্তু এইটুকুই। আমাকে কখনো ভয় পেতে হয়নি যে কেউ এসে আমার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে যাবে...
বস,
এই ত ঘটনা। দুনিয়া-মানুষ-ইতিহাস-পাতিহাস বুঝতে-অনুভব করতে শিখছেন ত মরছেন। নির্দিষ্ট কিছু প্ল্যাটফর্ম ছাড়া এমন মানুষ আর সর্বত্রই 'সংখ্যালঘু'।
তাও হয়ত মেনে নেয়া যেত। কিন্তু টিপ্পনি-হয়রানি-আঘাত-কতল মেনে নেয়া যায় না।
আসলেই ভয়াবহ দু:সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা।
আজকে পোস্টার নিয়ে চার-পাঁচজন দাঁড়িয়ে ছিলাম প্রেসক্লাবের কাছে।
আশ-পাশের মানুষরা উৎসুক দৃষ্টিতে দেখল।
এক মাঝ বয়েসী কায়:দুরস্থ ভদ্রলোক এসে জিগ্ঞেস করল, ঘটনা কি? কেউ মারা গেছে কি-না?
খুলে বললাম সব।
এরপর উনার উত্তর শুনে হাঁ হয়ে রইলাম।
উত্তরটি হল: 'চোদানির পোয়াসাক্কলরে নো মারের ক্যা? কোরআন লইরে তামশা খরিলে তো এ্যান অইবো। অনেরা কি মুসলমানের ফোয়া নো নে?'
(তর্জমা: ***ওদের(বৌদ্ধদের) কাউকে মারেনি কেন? কুরআন নিয়ে ব্যঙ্গ করলে তো এমনই হবে। আপনারা কি মুসলমানের সন্তান না?)।
ভদ্রলোককে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। লাভ হল না। উল্টো উনি আমাদের নালায়েক বলে চলে গেলেন।
দেশের অবস্থাটা এতটাই ভয়াবহ যে, মনে হয়, আগামী কিছুকাল পরে হয়ত, উগ্রপন্থী তালেবান টাইপ মতাদর্শে বিশ্বাসী মুসলমান ছাড়া আর কেউ এই দেশে বসবাস করতে পারবে না।
আজ সকাল হতে একটা কথা মনে আসছিল। কয়েক পুরুষ আগে পাশের রাষ্ট্র থেকে আমার পূর্বপুরুষ রিফিউজি হয়ে এখানে আসেন। বাংলাদেশে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের মনের অবস্থা আমার পূর্বপুরুষের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি। বুকটা ধুক করে উঠে।
আমার ফেসবুক উন্মুক্ত। গতকাল রাতে ফেসবুকে ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে কিছু স্ট্যাটাস দেই, সাথে মুক্তমনায় একটি লেখা। আজ সকালে ফেসবুকে ঢুকে দেখি, আমার 'ফেসবুক মেইলে' 'টেম্পরারি মেইল এড্রেস' থেকে একটা মেইল আসে, 'পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে'।
থানায় যেয়ে সকালে জিডি করে আসি। সাথে আমার বড় ভাই ছিল; বললেন, 'কেন এসব করিস, কিছু একটা হয়ে গেলে?'
আমি ভাবতে থাকি। আজ হোক, কাল হোক, মারা তো যেতে হবে একদিন। মৃত্যুকে ভয় পেয়ে কি লাভ? মূল ব্যাপার হল, কিভাবে মারা যাচ্ছি। বারবার মরার থেকে একবারই মরি।
কিছুই ভালো লাগছে না। গত কয়েকদিন আর এর আগের কয়েক মাসের ঘটনায় আমি ভীত ভবিষ্যত নিয়ে।
আমরা সবাই আসলে সংখ্যালঘু।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
রাজা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মাঠে নেমে প্রতিবাদ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমিও। মাঠে নেমে প্রতিবাদের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ রাজা।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা আর ধন্যবাদ।
-অয়ন
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আমরা মুখে যতই বলিনা কেন, যতখন না নিজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই, ততখন আমরা বুঝতে পারি না সংখ্যালঘুত্বের অনুভূতিটি কী রকম। আমার সে অভিজ্ঞতা হয়েছিল দেশের বাইরে এসে। দেশে থাকতে শুধু এইটুকুই জানা হয় যে কানা কে কানা বলিও না, খোঁড়া কে খোঁড়া বলিওনা, হিন্দু কে মালাউন বলিও না! মনে আছে প্রথম যখন শব্দটা শুনি-- ক্লাশ থ্রি বা ফোর এ পড়ি হয়ত তখন। ঘটনাটা কী ছিল আজ মনে নেই। তবে খুব সম্ভবত বাচ্চাদের মাঝে যেমন অহরহ ঘটেই থাকে--তেমন কোন এক ঝগড়াঝাটি চলছিল। মনে আছে, তর্কে পেরে উঠতে না পেরে একজন আরেকজনকে ঐ শব্দটি বলে সম্বোধন করেছিল। মনে আছে, অন্য শিশুটির থমকে যাওয়া। মনে আছে, এতখন তর্কে অন্যজনকে পর্যুদস্ত করে এনে শেষে একটি শব্দের কাছে হার মেনে যাওয়া শিশুটির কথা। মনে আছে, একটি সংখ্যালঘু শিশুর মাথা নীচু হয়ে যাবার কথা।
তারপর থেকে দেখেছি আমাদের মাঝের সংখ্যালঘুদের হয়রানির দৃশ্য। পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষার কারণেই হোক, অথবা নিজে থেকে সব সময়ে নিজেকে দুর্বলদের দলের একজন ভাবার কারণেই হোক---আমি সব সময়ে সংখ্যালঘুদের দলে। কিন্তু একজন সংখ্যালঘু নিজে কী অনুভব করে---সেইটা বুঝতে হলে সামাজিক ভাবে সংখ্যালঘু হতে হয়। আর সেই 'অনবদ্য' অনুভূতিটির ভাগ দেয়ার জন্যে আমি আজীবন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। ২০০১ এ দুটি বিমানে করে কিছু অন্ধ লোক দুটি দালান ধ্বসিয়ে দিয়ে আমাদের বাকী সবার চোখ খুলে দিয়েছিল। মনে হল যেন একটানে আমাকে বিবস্ত্র করে দেয়া হয়েছে এক মাঠভর্ত্তি লোকের সামনে। মনে আছে আমার চেনা মানুষদের চোখের দৃষ্টিটা পালটে যাওয়া। আমি হাজির হওয়া মাত্র পরিচিতদের গলার স্বর নেমে যাওয়া। দোকানে হাটে বাজারে আমাকে এক 'বিশেষ' দৃষ্টিতে দেখা। মনে আছে, সাইফুল ভাইয়ের অনেক যত্নে বহুদিন ধরে রাখা দাঁড়ি চেঁচে ফেলে ঝাঁকের কই হয়ে যাবার চেষ্টা করতে গিয়ে আরো উলঙ্গ হয়ে যাওয়া।
মনে আছে বিড়বিড় করে নিজেকে বলা, এই তাহলে সংখ্যালঘুর অনুভূতি!
আজ আমি জানি, সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আসলে সংখ্যালঘুরাই। যে সবচেয়ে সংখ্যাগুরুর দলে নিজেকে ভাবে, সেও কোনো না কোন ভাবে এক সংখ্যালঘু। আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানসিক, ভৌগলিক এবং আরো নানান মাত্রায় সংখ্যালঘুত্ব তৈরী হয়। কিন্তু সবচেয়ে বিধ্বংসী সংখ্যালঘুত্ব আসে একটি জিনিস থেকে। আমাদের মানবসভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ব্যধি---ধর্ম থেকে। যার কথা ছিল মানুষ আর মানুষকে মিলিয়ে দেয়ার, যার কথা ছিল পূবের সকাল আর পশ্চিমের সন্ধ্যাটাকে মিলিয়ে দেবার, যার কথা ছিল আমার আক্রান্ত প্রতিবেশির দিকে আমার দানের ত্রাণের দক্ষিন হস্ত প্রসারিত করে দেবার---সেই ধর্ম সবার আগে আমাদের হাতে দাগ কেটে কেটে দেখিয়ে দিল কে ম্লেচ্ছ, কে যবন, কে হিন্দু! ধর্ম দেখিয়ে দিল আমার বন্ধু মানসের আসল পরিচয় মালাউন, তর্কে তার সাথে পেরে উঠতে না পারলে ঐ শব্দটি বলে গাল দিলে আমি পার পেয়ে যাব। ধর্ম ক্লাশ ফোরের ছোট্ট শিশুটিকে জানিয়ে দিল মাদার তেরেসা যতই ভাল কাজ করুণ না কেন, 'বিধর্মী' খেরেষ্টান হবার কারণে তার অন্তিম গতি দোযখেই। আর পাড়ার স্ব-স্বীকৃত লম্পট মাতাল হাসু ভাই ঠিকই যাবেন বেহেশতের ওম পোহাতে।
কত ছোট একটা দেশ আমাদের। কত সীমিত আমাদের সাধ্য। কতই না হীনবল আমরা অন্যদের সামনে। অথচ সেই আমরা চোখ রাঙ্গিয়ে উঠি 'পাহাড়ি'-দের দেখে, নির্দ্বিধায় ধর্ষন-লুন্ঠন করে চলে আমাদের সোনার ছেলেরা পাহাড়ে। আমরা সংখ্যাগুরুরা সেই খবর পাইও না। হয়ত এখনো প্রতিদিনই ১৯৭১ ঘটে চলেছে আমাদের পাহাড়ে পাহাড়ে, সেখানে পাক সেনাদের জায়গায় উদ্যত অস্ত্র হাতে রয়েছেন আমাদের সেনাভাইয়েরা।
সংখ্যালঘুত্বের অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পাবার একটি উপায় হল নিজেকে সংখ্যালঘু বলে ঘোষনা দেয়া, নিজেকে সংখ্যালঘুর দলে টানা। ধর্ম,বর্ণ,কৃষ্টি,জাতীয়তা সবকিছুর উর্ধে উঠে আগে নিজেকে মানুষ বলে দাবী করা।
কারণ আজকের এই পৃথিবীতে মানুষরাই সবচেয়ে সংখ্যালঘু!
এই অভিজ্ঞতা আমারও আছে। কোন এক ছোটবেলার বিকালে ক্রিকেট খেলার ফাঁকে আমার চাইতে অনেক ছোট এক পিচ্চির মুখে
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
_____________________
Give Her Freedom!
_________________
[খোমাখাতা]
সংখ্যালঘু না হলে বোধহয় লঘুত্ব ব্যাপারটা ঠিক অনুভব করা যায় না।
হ্যাটস অফ, প্রিয় তারেক অণু।
রামুর ঘটনায় নিজের দেশের মানুষদের নোংরা, কুৎসিত চেহারা দেখে এতো কষ্ট হচ্ছে। আমরা আসলে কোন দিকে যাচ্ছি? খুব লজ্জিত আর দুঃখিত বললেও খুব কমই নিজের অনুভুতি প্রকাশ করা হবে।
একটা কিছু করা দরকার ----
মানুষ কখনো তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সংখ্যালঘু হয় না, হয় তার চিন্তা চেতনার কারণে।
শুধু সংখ্যা লঘুই নয়, বরং ক্ষমতাও হারিয়ে গেলে তবেই না বোঝা যায়, কষ্টটা কত। আমি ঢাকার চার পুরুষের পুরোনো পরিবারে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের অতি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার ছেলে। ছোট বেলা থেকে অমসুলমান ছেলে-মেয়েদের সাথে সমান ভাবে বড় হয়েছি বলে কখনো নিজের জানের জান পরানের পরান দোস্ত বান্ধবদের বিরুদ্ধে কোনো রাগ জন্মায় নি। তা সে ধর্মীয় হোক না কেন বা সাম্প্রদায়িক হোক।
কিন্তু হ্যাঁ, স্বীকার করবো যে কলেজে উঠবার পর থেকেই সবসময় ঢাকার বাইরের ছেলেমেয়েদের শুধু নগণ্যের চোখেই দেখতাম না। বরং তাদেরকে যেন সবসময় দমিয়ে রাখতে চাইতাম। এখন মনে হয়, এই ভিন দেশ যুক্তরাষ্ট্রে থেকে থেকে যে, কত বড় পাপই না করতাম তখন।
ধর্ম পালনকে আমি গুরুত্বের সহকারে দেখি, কিন্তু ঘৃণা করি ধর্মান্ধতাকে। এবং কখনোই মেনে নিতে পারি না, ধর্মের নামে কোনো না কোনো সম্প্রদায়কে অসি দিয়ে আঘাত করাকে।
সিমপ্যাথি, এমপ্যাথি অনুভব করার লোক দিন দিন কমে যাচ্ছে। সচলায়তনের পরিমণ্ডলে আছি বলেই, তাও মানুষকে নিয়ে কিছুটা আশা হয়।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সংখ্যালঘু শব্দটা ভীষণ কুৎসিত
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
মাঝে মাঝে আজ থেকে অনেক দূরে আলো ফেলতে ইচ্ছে করে, মনে হয় যেখানে কোন ধর্মবৈষম্য নাই, সাম্প্রদায়িকতা নাই!! কিন্তু কতদূরে আলো ফেলতে হবে এটাই ভেবে পাই না!!!
_____________________
Give Her Freedom!
আমি মানুষ হতে চাই। (আকুতি)
সবচেয়ে বড় পরিচয় সবার আগে হবার কথা সে "মানুষ"। আর কোন পরিচয়ের দরকার নেই। আমি নিজের পরিচয়ের দেবার সময় একটা বলি না আর শুনতেও চাই না যে মেঘা একটা মেয়ে মেঘা মুসলিম বাঙালী। আমরা একেকজন একেকভাবে এই সংখ্যালঘুত্বের সাথে পরিচিত। মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণে আমিও সংখ্যালঘু।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
এটাও অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি। মানুষ কবে মানুষকে শুধুই 'মানুষ' পরিচয়ে গ্রহণ করবে...
হ্যাঁ, প্রতিদিন পথে যেতে যেতে এই অনুভূতি হয় আমারও। প্রতিদিন নতুন করে পরিচয় পাই।
মনুষত্বহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কখন যে কে কোথায় ''সংখ্যালঘু'' !!
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে,
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
সংখ্যালখু। মানে সংখ্যায় যারা কম। তাই ওরা ‘মানুষ’ নয় একটা ফিগার মানে সংখ্যা
০২
এরপর অনেকে হন আদিবাসী কিংবা উপজাতি। আদিকাল থেকে বাস করেন তাই আদিবাসী। এখন একটা গালি ও বুলি
আর উপজাতি। মানের সেকেন্ড বা থার্ডক্লাস একটা ফিগার। বাকিরা জাতি মানে সংখ্যাগুরুরা। এরা সবাই মিলে জনজাতি হয়না কখনো
০৩
আর আমি তাপস শর্মা, সংখ্যাগুরুদের পরিভাষায় একজন অশ্লীল বিধর্মী বাস্টার্ড। সানন্দে
সুতরাং
উত্থিত, আরও উত্থিত, সজ্জিত ধর্মীয় প্রোপ্যাগান্ডার খাজুরেপনা দেখতে দেখতে আমার ক্লান্ত লাগে। হালার মুজাহিদিন বেরাদারদের ক্লান্তি নাই। আমি সেরেলাক, হরলিক্স, বনবিটা, মায় কর্ণফ্লেক্স খাইয়া শক্তি পাইনা ক্লান্ত হয়ে যাই। তাহলে এরা এর বাইরে কি খায় যাতে এদের এত জিহাদি জোশ আসে? এরা খায় ঈশ্বরের বীর্য, পীর এর মুত, পিরানীর ইয়ে ধোয়া জল, ধর্মগ্রন্থের মদ, আর ঢুকায় জিহাদের ডান্ডা। তাই এরা এত্ত স্ট্রং এবং ধর্মের শিশ্ন অলওয়েজ উত্থিত
ডাকঘর | ছবিঘর
জিহাদীরা সংখ্যায় বাড়ছে- সংগঠিত হচ্ছে- আক্রমন করছে...
উল্টোদিকে মানুষ কি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে দিনকে দিন... বিচ্ছিন্ন হতে হতে সবাই যার যার মত সংখ্যালঘু...
কড়িকাঠুরে
কয়েক বছর আগে ঢাকায় এক শাড়ীর দোকানে শাড়ী দেখছি, আমার পাশেই আর একজন মহিলাও শাড়ী দেখছিলেন। উনার শাড়ী পছন্দ না হওয়াতে উনি যখন উঠে যাচ্ছিলেন, তখন দোকানদার বলে উঠল মালু ত কিনব কেন? মহিলার মাথায় সিঁদুর ছিল। আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বললাম কি বললেন?
দোকানদার কে বেশ রাগ করে মন্তব্যের জন্য ধমক দিলাম, আর ঐ দোকান থেকে শাড়ী না কিনে চলে আসলাম। আমি এখনও ঐ মহিলার বিব্রত মুখটি দেখতে পাই।
এই আমেরিকাতেও অনেক বাংলাদেশি মুসলিম আছে যারা বেশ সাম্প্রদায়িক। আমরা ওদের এড়িয়ে চলি।
অনু, তোমার লেখাটি পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আমার দুই মেয়ের নাম সুধীন দত্ত আর রবীন্দ্রনাথ আর বুদ্ধদেব থেকে নেয়া। ছোটবেলায় ওরা নাম বললে অনেকে জিজ্ঞেস করত তোমাদের ভাল নাম নেই, মানে আরবি নাম।
ওরা বলত মা, আমাদের নাম কি খারাপ? আমি বলতাম তোমাদের আমরা বাংলা নাম দিয়েছি আমাদের প্রিয় লেখকদের লেখা থেকে।
ওদের নাম তন্বী নন্দিনী
আর প্রমিতি শাশ্বতী।
হিন্দু নাম রাখলাম কেন এমন মন্তব্যও শুনতে হয়েছে।
একমত। আমার নিজের নাম নিয়ে এরকম অনেক কথা শুনতে হয়েছে এবং হয় আমাকে। আফসোস, আমাদের পরিচয়কে আমরা ধর্মের আঁচল ছাড়া ভাবতে পারি না। নজরুলকে খুব মনে পড়ছে
-অয়ন
আমি ভারতে থাকি হিন্দু ,এখানেও মেয়ের নাম আবিরা রাখায় শুনতে হয় মুসলিম নাম রাখছ কেন ?
আপনার লেখা পরে খুব ভাল লাগ ল। দিন দিন মুস্ লিম প্রধান দেশ গুলর মানুশ এরকম পশু হয়ে যাচ্ছে কেন জানতে ইচ্ছা করে। আসলে প্রতিটা দেশ এ সংস্কৃতি , ইতিহাস আর উপনিবেশ পূর্ব ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানতে দেয়া হয় না। এইগুলো নিয়ে কথা বলি দেখে আমার শিক্ষক সমাজে অনেকে আমাকে ঘ্রিনা করে। খুব খারাপ লাগে, জানেন?
দীর্ঘশ্বাস চাপলাম।
আমি নিজে মানব ধর্মে বিশ্বাসী। যদিও পুরোপুরি আস্তিক।
আপনার সংখ্যাতত্ত্বে শ্রদ্ধাবোধ রইলো।
অবিণীতা
Aubineeta
( অফটপিক: বিদেশীনির পোস্টে ৩৭ নম্বর মন্তব্যটা আমার। নাম দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।)
আমরা সবাই কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু! এই 'সংখ্যালঘু' শব্দটাকেই যদি চিরতরে ডিকশনারি থেকে মুছে ফেলা যেত!
খুব অস্থির লাগছে এভাবে নিজেদেরকে পশুর স্তরে নেমে যেতে দেখে। পরিচিত অনেকেই হয়তো বলবে তুমিও এই পাপের অংশিদার। আমার কিছুই বলার থাকবে না কারণ আসলেই তো একজন মানুষ হিসেবে আমিও এই অমানুষিকতার দায় বহন করি।
ইমা
ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে দিল। দেশে তালেবান শাসনের আগে একটা ইসলামাইজেশান প্ল্যাটফর্ম দরকার। সেইটা শুরু হয় মানুষের মন থেকে। প্ল্যাটফর্ম যে পুরোপুরি তৈরি সেইটা এখন বলাই যায়। আমার নাম নিয়েও যথেষ্ট কথা শুনতে হয়েছে। ভাগ্য বশতঃ নামের শেষে রহমান ছিল। তারপর স্কুল কলেজে কম কথা শুনিনি। এয়ারপোর্টে কাস্টমসের পুলিশও দুই কথা শুনিয়ে দেয় এইটা কিরকম নাম বলে।
ফেসবুকে স্বাধীনতার সময়ের ছবি গুলো দেখি, দেখি আজ থেকে ১৫০ বছর আগের ঢাকার মানুষের ছবি। কারো পরনে বোরকা দেখতে পাই না। আর এখন ঢাকার রাস্তা ঘাটে শতকরা ৫০ ভাগ মেয়ে মানুষ বোরকা পরে বের হয়। পিচ্চি পিচ্ছি মেয়ে গুলো মাথায় স্কার্ফ পরে ঘোরাফোরা করে। আর আইডিয়ালের মত জায়গায় ছেলেদের মাথায় টুপি পরা বাধ্যতামূলক। ইমামদের খুতবা শুনলে মাথায় বাজ পড়ে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে খুতবাতে কি থাকত আর আর এখন তাদের বিষয় বস্তু কি!!!!
মানুষের সহনশীলতা কোন পর্যায়ে গেলে ফেসবুকের ছবি নিয়ে এই ধরনের কার্যকলাপ করতে পারে। এটাকে দাঙ্গা বলব না। কারন সেইখানে দুইটা পক্ষ লাগে। রামুতে যা হয়েছে সেটা একপাক্ষিক।
খুব বেশি দিন নাই। বাংলা হবে আফগান বলে ঘোষনা দেয়ার কোন দরকার নাই। মনের দিক থেকে এই দেশ আফগান হয়ে গেসে ইতিমধ্যেই। এখন শুধু ধংসের অপেক্ষা।
সচলে লিখলে আসলে না বোঝা যায় না অবস্থা কতটা ভয়াবহ। একটু কথাবার্তা বললে টের পাওয়া যায়। সচল যে কোনভাবেই বাংলাদেশকে রিপ্রেসেন্ট করে না
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এইটা হইলো আসল ক্যাচ। সচলায়তন বলেন আর ফ্রেন্ড সার্কেল বলেন- ওই খানে আমরা যেই বাংলাদেশ দেখি, আসল বাংলাদেশ তার থিকা অনেক দূরে। আমি, আমার বন্ধুরা সবাই হতবাক, আহত, বিস্মিত- সবার ধারনা বাংলাদেশী লোকজন শান্তিপ্রিয়, অসাম্প্রদায়িক, কিন্তু যেইটা আমরা ভুলে যাই, বাংলাদেশের ৯০ভাগ মানুষ প্রচন্ড রকমের গরীব। যে কোন উস্কানিতে তাদের একটা অংশ আরেকজনেরটা কাইড়া নিবে। তারে মানবতা শিখানো হাস্যকর। আমাদের অবহেলায়, উপেক্ষায় সারা দেশ ভর্তি হয়ে গেছে মাদ্রাসায়। গরিব পোলাপাইনরে ফ্রীতে থাকা-খাওয়া দেয় মাদ্রাসা, একট্রা দেয় বেহেস্তের টিকেট আর বিনিময়ে মাথাটা কিনা নেয়। এই মাদ্রাসা-পাস তালেবুল এলমের না আছে চাকরি, না আছে সামাজিক সম্মান। তারে চাকরি, সম্মান দিয়া কাছে টেনে নেয় ধর্মান্ধারা। তারপর সুযোগমত ব্যবহার করে পটিয়ায়, রামুতে। আর আমরা ফেসবুকে আমাদের প্রতিবাদ জানাই কালো প্রোফাইল পিকচারে, কিংবা প্রেস ক্লাবে।
প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যেই খানে ১০ বছরের নিচে কোন বাচ্চা পড়ে, প্রত্যেক ধর্মের কমপক্ষে একজন শিক্ষক থাকতে হবে আর টাকা থাকলেই বাপের নামে, মা'র নামে মাদ্রাস দেয়া বন্ধ করতে হবে । কিছু টাকা আর বিল্ডিং এর বিনিময়ে দেশের ভবিষ্যত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
নতুন মানুষ নতুন জয়গা নতুন কাজের পিছনে ছুটতে হবে তাহলেই চোখ খুলবে জ্ঞান বাড়বে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। যে সব জাতি উন্নতির সর্নশিখরে
আহরণ করেছে তাদের ইতিহাস এরকমটাই মনে হয়।
লেখাটা পড়লাম, জানায় গেলাম শুধু।
কিছু বলার নাই প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া।
কিছুই বলার নেই।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অদ্ভুত আঁধারে ডুবে যাচ্ছি আমরা,আমাদের দেশটা।তবু আশা রাখতে ইচ্ছা করে আমরা সবাই একদিন মানুষ হব।
আমি অনার্য সঙ্গীত। একজন সংখ্যালঘু।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমিও একজন সংখ্যালঘু; সার্বিক এবং শাব্দিক অর্থেই। ( অসাধারণ লেখা, ইমোশনাল হয়ে গেলাম!)
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
আমি সংখ্যাগুরু নই , লজ্জিত অপমানিত দের একজন ।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমি সঙ্খ্যাগুরু নই, লজ্জিতদের একজন ! !
বিংশ কিংবা একবিংশ শতাব্দির সভ্য মানুষদের সবচেয়ে সভ্য গালি হলো “ সংখ্যালঘু”।
লজ্জায় মাথা নত হওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই, এই শিকল থেকে বোধহয় মানুষের মুক্তি নেই
মাসুদ সজীব
বাঙ্গালী জাতীকে বিভক্ত করার জন্যে এসব সুক্ষ ষড়যন্ত্র সব সময়ই ছিলো। সেগুলোর পেছনে রাজনীতির লোভাতুর চাহনীকেই দায়ী করা যায় আগে। এগুলো মানুষ এখন বুঝলেও ধীরে ধীরে সবই তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চমৎকার লিখেছেন তারেক অণু ভাই।
Shah Waez (শাহ্ ওয়ায়েজ।)
Facebook
..............................................................................................
ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে, মহুয়ার বনে মাতাল হাওয়া খেলে।
এক মুঠো রোদ আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা করা,
মনকে শুধু পাগল করে ফেলে।
নতুন মন্তব্য করুন