প্রাণবন্ত শৈশব চলছে তখনও, বাড়ীর বসার ঘরে বাবা নিয়ে আসলেন দুর্দান্ত মনোমুগ্ধকর এক ক্যালেন্ডার, জাপানের মত মাতানো কিছু আলোকচিত্র নিয়ে- না তুষারাবৃত ফুজিয়ামা সেখানে ছিল না, অনুপস্থিত ছিল সাকুরা বা চেরি ফুলও, কিন্তু প্রতিটি ছবিতে ছিল জাপানের শরতের অবিশ্বাস্য অলৌকিক সৌন্দর্যের রঙ ঝলমলে ছবি। কোথাও জাপানী বাগানের কাঠের বেঞ্চি ঢেকে আছে ঝরা ম্যাপল পাতায়, মেঠো পথে ঝরে আছে চলে যাওয়া ড্রাগনের পড়ে থাকা বহুবর্ণা আঁশের মত চকচকে পাতার দল, জলে গাছের প্রতিবিম্ব পড়ায় আগুনরঙা ছোট্ট জলাশয়টি হয়ে উঠেছে অপার্থিব।
এখনো সেই ক্যালেন্ডারটি আছে আমার রাজশাহীর ঘরে, শৈশবের মুগ্ধতা আঁটকে আছে পুরনো বর্ষপঞ্জীতে, যাদের কাছে আমি জেনেছিলাম ম্যাপল পাতা, যাকে কিনা সেঞ্চুরি পাতা নামে চিনতাম, সেই অসাধারণ পত্রটি কেবল কানাডা নয়, জাপানেও পাওয়া যায়, মুগ্ধতার আবীর সেখানে ঝরে প্রতি শরতে।
ফিনল্যান্ডে যখন প্রথমবারের মত পা দিলাম, তখন প্রায় অক্টোবর, বাতাসের মর্মর ধ্বনির বদলে কানে আসে ঝরা পাতার ফিসফিসানি, মনের মধ্যে গান ফেনিয়ে ওঠে- ঝরা পাতা ঝড়কে ডাকে, বলে তুমি নাও আমাকে! কি অপরূপ প্রকৃতি! বইয়ের এবং ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখে আসা সেই অপরূপা দৃশ্যগুলো আমার দৃষ্টিকে ঘিরে রাখে, মোহিত করে, মুগ্ধ করে, আত্মহারার মত একা একা অপরূপ বনাঞ্চলে হাটি প্রিয় কবিকে সাথী করে-
হলদে পাতার মতো আমাদের পথে ওড়াউড়ি! —
কবরের থেকে শুধু আকাঙক্ষার ভূত লয়ে খেলা!
আমরাও ছায়া হয়ে ভূত হয়ে করি ঘোরাঘুরি!
মনের নদীর পার নেমে আসে তাই সন্ধ্যাবেলা
সন্ধ্যার অনেক আগে! — দুপুরেই হয়েছি একেলা!
কখনও বা বন্ধুর বাড়ীর উঠানে আঁকশি দিয়ে পাতা জড়ো করতে করতে মাথায় ভর করেন রবার্ট ফ্রস্ট।
কোটি কোটি বছরের টিকে থাকার যুদ্ধে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য উদ্ভুত প্রাকৃতিক নিয়মে গ্রীষ্মে জন্ম নেওয়া কচি পাতাগুলো যখন উত্তুরে সূর্যের ২৪ ঘণ্টার আলোতে লক লক করে বেড়ে সুদর্শন সবুজ পল্লবে পরিণত হয়, কি দারুণই না লাগে! এরপরে ভ্যান গগের তুলির হলদে রঙের পরশ লাগে বন থেকে বনান্তরে, ফিকে হলুদ, গাঢ় হলুদ, চনমনে হলুদ উঁকি দেয় যত্রতত্র, কয়েক সপ্তাহ গড়ায়, পৃথিবী নামের নীল গ্রহটা আপন অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে সূর্য থেকে ধীর কিন্তু অবশ্যম্ভাবী গতিতে দূরে সরতে থাকে, পাতাগুলো পরিণত হতে থাকে রক্তবর্ণ লালে নাহলে উজ্জল কমলাতে, মনে হয় আগুন লেগে গেছে সারা বিশ্বে, ম্যাপল, বার্চ, ওক, পপলারের ভিড়ে পাইন আর স্প্রুসের সুচের মত খাড়া খাড়া সবুজ হারিয়েই যায় দৃষ্টির আড়ালে। বিশ্বময় তখন জীবনের জয়োল্লাস- গগা, ভ্যান গগ, সেজানের ক্যানভাস চারিদিকে, বিমর্ষতার ঠাই নেই কোনখানে।
এরই আড়ালে সচতুর গেরিলা যোদ্ধার মত আড়ালে আবডালে বইতে থাকে উত্তুরে হাওয়া। গোঁড়া কেঁপে ওঠে কিছু কিছু রঙ ঝিলিমিলি শরতদূতের, আবছা ভাবে হয়ত দুয়েকটা পড়ে যায় গাছের মগডাল থেকে পাক খেতে খেতে, নিচের হিমশীতল মাটিতে শেষ আশ্রয় জোটে এক টুকরো জীবনের, খসে পড়া তারার, কিন্তু সে একা নয়, কুটিল হিম বাতাসের আক্রমণে একের পর এক রঙিন সাথীরা তারই সাথী হয় ধরাশায়ী হয়ে। পুরু স্তুপে পা দেবে যায় পথচারীদের, কিন্তু প্রকৃতিতে অপচয় হয় না কিছুরই, এই ঝরে পড়া পাতার দল পচে গলে মিশে যায় ধরণীতে, মাটি উর্বর হয়, সেখান থেকে প্রাণশক্তি নিয়ে আবার আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা দেখায় কোন মহীরুহ।
জীবনের অবিচ্ছেদ্য চক্রের মত ক্ষণস্থায়ী গ্রীষ্ম বিদায় নেয়, যে কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল আবার আজীবনের প্রিয় তা দিগন্তে আনাগোনা শুরু করে, কিন্তু বদলে যাওয়া আমি আর তার দর্শনে উচ্ছসিত হই না, কারণ কালপুরুষ মানেই এখন শীত আসন্ন! বরফের দঙ্গল আসল বলে, কিন্তু সেই সময়টুকুর ফাঁকে রঙবেরঙের ঝরা পাতা রাঙ্গিয়ে যায় জীবনকে, প্রতিটি মুহূর্ত খামচে ধরতে ইচ্ছে করে, ছুয়ে ছেনে ভালবাসতে ইচ্ছে করে প্রগাঢ় ভাবে, আমার হাতের ম্যাপল পাতাটির মতই—
সবাইকে শরতের ঝরা পাতার শুভেচ্ছা।
মন্তব্য
ঝরা পাতার গল্প ভাল লাগল। আপনাকেও ঝরা পাতার শুভেচ্ছা।
তুহিন সরকার
শুভেচ্ছা
facebook
আপনাকেও শুভেচ্ছা অনু দা।
অমি_বন্যা
শুভেচ্ছা।
facebook
আপনার লেখার ভঙ্গি বেশ মনোমুগ্ধকর।
ঝরা পাতার শুভেচ্ছা।
বাহ, বেশ ছবি তো!
facebook
ছবিটা দারুণ তো !
facebook
হবে কী এদিকের নিউ ইংল্যান্ডের ফলফলিয়াসও দারুণ মনোমুগ্ধকর কিন্তু!
আপনাকেও ধরাপাতার শুভেচ্ছা।
আছেন কি ঐ দিকেই?
facebook
জাপানের শরতে মুগ্ধ ছিলাম পুরোপুরি। পাতার রং থেকে চোখ ফেরানো দায়।
আহা, আসলেই
facebook
কবিতার মত মনে হল। চমৎকার!
..................................................................
#Banshibir.
আমারও---
facebook
কি ব্যাপার পীর বাবা, ৯ টার কথা বলে এখন পর্যন্ত ১টা লেখা মাত্তর!
facebook
এলো পাতা কুড়াবার দিন ঘাসে ঘাসে।
হ, একটু ওম পোহানো যেতে পারে।
facebook
পাতা ঝরতে শুরু করলেই বরফের ভয়ে কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। গত রবিবার বের হয়েছিলাম, তাস খেলতে আরেক বন্ধুর বাসায়। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গাড়ি উঠে দেখি গিয়ার লাগানো কঠিন। শীতের কাপুনীতে হাতপা কাঁপছে। সোমবার কোন মতে কাজ করে এসে মঙ্গবার থেকে বিছানায়। সব চেয়ে বেশী ভয়পাই শীতের শুরুতে এবং শেষে এই সর্দি লাগাটা। কিন্তু প্রকৃতি তো তার নিয়মেই চলবে। শুভেচ্ছা আপনাকেও।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
সব চেয়ে বেশী ভয়পাই শীতের শুরুতে এবং শেষে এই সর্দি লাগাটা। কিন্তু প্রকৃতি তো তার নিয়মেই চলবে।
যা বলেছেন! শুভেচ্ছা -
facebook
আপনার এই ছবিটা দারুণ লাগে আমার।
হ, একমাত্র আপনিই কিউট বলেন
facebook
"...ধানখেতে- মাঠে
জমিছে ধোঁয়াটে
ধারালো কুয়াশা..."
ঠাণ্ডা ইতোমধ্যেই লেগে গেছে... আঅহ...
শুভেচ্ছা রইলো...
"...ধানখেতে- মাঠে
জমিছে ধোঁয়াটে
ধারালো কুয়াশা..."
facebook
'সেঞ্চুরি' নামে বাংলাদেশে একটি পোশাক নির্মাতা কোম্পানী ছিল, যারা লোগো হিসাবে ম্যাপল পাতার ছবি ব্যবহার করতো।
আপনাকে হেমন্তের অভিনন্দন ! ( বাংলাদেশে এখন হেমন্তকাল)।
ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।
মনে আছে, সেই পোশাক কোম্পানির স্যুটের অ্যাড দেখতাম বিটিভিতে
হেমন্তের শুভেচ্ছা
facebook
অনুদা, দেরি হয়ে গেল তো, হলুদ তো আর কোথাও দেখিনা
বিদায়ী হেমন্ত এবং চলমান শীতের শুভেচ্ছা রইল!
লেখায়
হুম, কমে যাচ্ছে হলদে পরশ!
facebook
একটা মজার ব্যাপার হলো আমিও বহুদিন জানতাম এই পাতাটার নাম সেঞ্চুরী পাতা কয়েক মাস আগে ইমন আমার এই কথা শুনে হাসলো খুব, বলছিলো এই একই জিনিস ওরও মনে হতো। অনুদা আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগে অনেক। ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
facebook
কবিতা কবিতা মনে হল। আপনাকেও ঝরা পাতার শুভেচ্ছা।
facebook
তুমি ঝরা পাতা দিলে তো, এই নাও গাছের না-ঝরা সব পাতা তোমাকে দিয়ে দিলাম।
facebook
চমৎকার লেখা
অঃটঃ আপনার কাঁধে প্রায়ই একটা ব্যাগ ঝুলানো থাকে নাকি? দেখি, একটু যোগ করি।
হ ! ব্যাগ ছাড়া ঘুরব ক্যামনে?
facebook
আমি বরং শীতের -র শুভেচ্ছা দেই!শীতের তরকারীতে কি সুন্দর ফ্লেভারটাই না আনে!!
আহা, শীতের ফুলকপি, টম্যাটো খুব মিস করি।
facebook
আপনের না বইমেলার মাসে দেশে আসার কথা?বইমেলা থেকে বের হয়ে একদিন সোজা কারওয়ান বাজার যাইয়েন।আলু পত্রিকার নতুন খামারবাড়ি দেখতে না; ,ফুলকপি আর টম্যাটো কিনতে!
আলোকিতা
facebook
ভালো করে রং লাগার আগেই আমার বাসার সামনের ম্যাপল পাতা স্যান্ডির বাতাশে উড়ে গেল। খুব সুন্দর লেখা। হেমন্ত শেষ, শীতের শুভেচ্ছা জানাই অনুকে।
আসমা খান
শুভেচ্ছা
facebook
facebook
বেশ লিখেছেন। মনটা ঝরঝরে হয়ে গেল পড়ে।
শীতের শুভেচ্ছা আপনাকে!
- বিক্ষিপ্ত মাত্রা
ধন্যবাদ
facebook
****************************************
ওয়াও! একটা ম্যাপল পাতার ইমো দরকার
facebook
নেটে এইটা পাইলাম -
****************************************
মডুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি!
facebook
আশ্চর্য! আমিও এই পাতাটার নাম সেঞ্চুরী হিসেবেই জানতাম অনেকদিন হেমন্তের শুভেচ্ছা আপনাকে।
সচল-পলাশ
শুভেচ্ছা
facebook
আহ! কবিতার মত সুন্দর একটা লেখা! সচলে কি আজকে ঋতুর মেলা, একটু আগে পীরবাবা'র বৃষ্টির কান্না পড়ে এলাম।
কেউ শীত নিয়ে দিলেই নিজে থেকেই নিষ্ক্রান্ত হব!
facebook
জীবনের অবিচ্ছেদ্য চক্রের মত ক্ষণস্থায়ী গ্রীষ্ম বিদায় নেয়, যে কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল আবার আজীবনের প্রিয় তা দিগন্তে আনাগোনা শুরু করে, কিন্তু বদলে যাওয়া আমি আর তার দর্শনে উচ্ছসিত হই না, কারণ কালপুরুষ মানেই এখন শীত আসন্ন! বরফের দঙ্গল আসল বলে, কিন্তু সেই সময়টুকুর ফাঁকে রঙবেরঙের ঝরা পাতা রাঙ্গিয়ে যায় জীবনকে, প্রতিটি মুহূর্ত খামচে ধরতে ইচ্ছে করে, ছুয়ে ছেনে ভালবাসতে ইচ্ছে করে প্রগাঢ় ভাবে, আমার হাতের ম্যাপল পাতাটির মতই—
#ঝরা পাতার গল্প পড়ে কিছুক্ষণ বেশ নড়নচড়নবিহীন অবস্থায় বসে রইলাম, খুব ভালো লেগেছে লেখাটি, শুভেচ্ছা আপনাকে প্রিয় তারেক অণু ভাই।
#লেখার কাব্যিক টোনটি বরাবরের মতো আকঁড়ে ধরলো, অটামের হাসির মতোই হাসছে লেখাট, ভাল থাকুন
আশরাফুল কবীর
অটামের হাসি
facebook
হেহে 'ফল' নিয়ে একটা লেখা লিখব ভাবছিলাম, আপনে লিখে ফেলছেন যখন আলহামদুলিল্লাহ, আমার আর কষ্ট করে লেখা লাগল না
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হৈ মিয়া,, লিখেন লিখেন! কানাডার অটাম আলাদা!
facebook
-অয়ন
facebook
ও ঝরা পাতা,
তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথা
তোমার সাথে আমার দিন কাটানো কথা
facebook
নতুন মন্তব্য করুন