নির্ধারিত সময়ে বেশ আগেই এসে পড়েছে ১৮১৯ সালের বসন্ত, পুনরায় জীবনের আবাহন নিয়ে এসেছে শীতে কাতর ইংল্যান্ডে, জবুথুবু প্রকৃতি সারিয়ে উথেছে জীর্ণ পাতার ক্ষত, সূর্যের আলো আকাশে থাকার সময়ের পরিমাণ যেমন বাড়ছে তেমনই বাড়ছে নতুন সবুজ পাতাদের পেলব সজীবতা দিয়ে রুক্ষ ন্যাড়া গাছের ডাল ঢাকার প্রচেষ্টা। ফিরেছে পাখপাখালিরাও, ইতিমধ্যে নীড় গড়ে ডিম ফুটিয়ে ছানাও তুলে ফেলেছে কেউ কেউ, বিশেষ করে গানের রাজা, সুরের সম্রাট নাইটিংগেলরা আছে সবুজ বসন্ত সরগরম করে। লন্ডনের এক কোলে সবুজে ছাওয়া মহল্লা হ্যাম্পস্টেডের এক বাড়ীর গাছে এমন সুরের মূর্ছনায় মাতে একটি নাইটিংগেল পরিবার, সুর বুনে যায় আপন মনে, নিজের অজান্তেই মুগ্ধ করে আশেপাশের সমস্ত মানুষকে। বিশেষ করে সেই বাড়ীরই এক অতিথি যুবককে, নিবিষ্ট মনে ২৪ বছরের তরুণ শুনে যান সেই সুরমূর্ছনা, বসন্ত শেষ হলেই তো এই পাখিরা নীড় ছেড়ে চলে যাবে, সামনের শীতে তাদের দেখা মিলবে না, বছর কয়েকের মধ্য মারাও যাবে নিশ্চয়ই তারা, কিন্তু এই গান, এই সঙ্গীত, এই সুর, এই স্বর্গীয় মূর্ছনা- তার কি মৃত্যু সম্ভব? ভেবে ভেবে উতল হয়ে যান জন কিটস নামের সেই ইংরেজ তরুণ। মনের অজান্তেই মনে হয় এমন সৃষ্টি বিলুপ্ত হতে পারে না, পাখিরা না থাকলেও তাদের সুরমূর্ছনা নির্ঘাত টিকে থাকবে, আর পাখিরা টিকে থাকবে সেই সুরলহরীর মাঝেই। কিন্তু মানবজীবনের কী হবে? নাকি মৃত্যুই শেষ পরিণতি সব কিছুরই? এই ভেবেই কি যেন হয়ে গেল তরুণের মাঝে, নাস্তার টেবিল থেকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে যেয়ে পাতলেন বাগিচার এক পাম গাছের নিচের ঘাসের উপরে, সেখানে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে শুনলেন পাখিদের কলতান, মাঝে মাঝেই হাতের কাগজে দ্রুত গতিতে লিখলেন কিছু শব্দ, অনেকটা সঙ্গীতজ্ঞরা যেমন খসড়া করেন তেমন আলগোছে- ভালবাসা, খাঁটি মুগ্ধতা, জীবনবোধ, অবসন্নতা থেকে জন্ম নিলে বিশ্বের সেরা পংক্তিমালার একটি-
Ode to a Nightingale
My heart aches, and a drowsy numbness pains
My sense, as though of hemlock I had drunk,
Or emptied some dull opiate to the drains
One minute past, and Lethe-wards had sunk:
'Tis not through envy of thy happy lot,
But being too happy in thine happiness, -
That thou, light-winged Dryad of the trees,
In some melodious plot
Of beechen green and shadows numberless,
Singest of summer in full-throated ease.
O, for a draught of vintage! that hath been
Cool'd a long age in the deep-delved earth,
Tasting of Flora and the country green,
Dance, and Provençal song, and sunburnt mirth!
O for a beaker full of the warm South,
Full of the true, the blushful Hippocrene,
With beaded bubbles winking at the brim,
And purple-stained mouth;
That I might drink, and leave the world unseen,
And with thee fade away into the forest dim:
Fade far away, dissolve, and quite forget
What thou among the leaves hast never known,
The weariness, the fever, and the fret
Here, where men sit and hear each other groan;
Where palsy shakes a few, sad, last gray hairs,
Where youth grows pale, and spectre-thin, and dies;
Where but to think is to be full of sorrow
And leaden-eyed despairs,
Where Beauty cannot keep her lustrous eyes,
Or new Love pine at them beyond to-morrow.
Away! away! for I will fly to thee,
Not charioted by Bacchus and his pards,
But on the viewless wings of Poesy,
Though the dull brain perplexes and retards:
Already with thee! tender is the night,
And haply the Queen-Moon is on her throne,
Cluster'd around by all her starry Fays;
But here there is no light,
Save what from heaven is with the breezes blown
Through verdurous glooms and winding mossy ways.
I cannot see what flowers are at my feet,
Nor what soft incense hangs upon the boughs,
But, in embalmed darkness, guess each sweet
Wherewith the seasonable month endows
The grass, the thicket, and the fruit-tree wild;
White hawthorn, and the pastoral eglantine;
Fast fading violets cover'd up in leaves;
And mid-May's eldest child,
The coming musk-rose, full of dewy wine,
The murmurous haunt of flies on summer eves.
Darkling I listen; and, for many a time
I have been half in love with easeful Death,
Call'd him soft names in many a mused rhyme,
To take into the air my quiet breath;
Now more than ever seems it rich to die,
To cease upon the midnight with no pain,
While thou art pouring forth thy soul abroad
In such an ecstasy!
Still wouldst thou sing, and I have ears in vain -
To thy high requiem become a sod.
Thou wast not born for death, immortal Bird!
No hungry generations tread thee down;
The voice I hear this passing night was heard
In ancient days by emperor and clown:
Perhaps the self-same song that found a path
Through the sad heart of Ruth, when, sick for home,
She stood in tears amid the alien corn;
The same that oft-times hath
Charm'd magic casements, opening on the foam
Of perilous seas, in faery lands forlorn.
Forlorn! the very word is like a bell
To toll me back from thee to my sole self!
Adieu! the fancy cannot cheat so well
As she is fam'd to do, deceiving elf.
Adieu! adieu! thy plaintive anthem fades
Past the near meadows, over the still stream,
Up the hill-side; and now 'tis buried deep
In the next valley-glades:
Was it a vision, or a waking dream?
Fled is that music: - Do I wake or sleep?
আসলেই কি এভাবে জন্ম নিয়েছিল বিশ্ব সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতাগুলোর একটির? সম্ভবত! কবি কিটসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চার্লস ব্রাউনের মতে হ্যাম্পস্টেডের ভাড়া বাড়ীতে অবস্থানের সময়ই এই ঘটনাটি ঘটে, যদিও একাধিক কিটস গবেষক মনে করেন এই এলাকারই এক পানশালা, স্প্যানিয়ার্ড ইনে বসে কিটস কবিতাটি রচনা করেন। চলুক আসল সত্যের সন্ধানে নিখুত চুল চেরা সত্য সন্ধান, আমরা কল্পনাবিলাসীরা না হয় ভাবলামই যে এমন রোমান্টিক পরিবেশেই তরুণ কবি পাখির গান শুনতে শুনতেই লিখেছেন জ্বলজ্বলে লাইনগুলি।
কোথায় সেই গাছতলা, কোথায় সেই বাগান যেখানে কিটস পেয়েছিলেন গায়ক পাখি নাইটিংগেলের দর্শন? উত্তর - লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে, যে বাড়ীতে কিছু বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছেন তা আজ পরিণত হয়েছে জাদুঘরে। সেখানে গেলেই কি আজও সোনা যাবে মন হরণ করা পাখির ডাক? যেয়েই দেখি না কেন? প্রথমবার বিলেত যেয়েই যাওয়া হল কিটসের বাসভবন আর বাগান দর্শনে, সাথী বিলেতবাসী বন্ধু মরমী চৌধুরী, হিমু এবং সদ্য লন্ডনে আগত সচল কৌস্তভ।
জন কিটস, বিশ্বসাহিত্যের রূপকথার রাজপুত্র, যিনি লিখেছিলেন
'"Beauty is truth, truth beauty," - that is all
Ye know on earth, and all ye need to know.
কেবলমাত্র সত্য ও সুন্দরকে অনুভব করা সেই কবি ২৫ বছর বয়সে যক্ষা রোগে মারায় গেলেন! সত্য, সুন্দর, প্রেম, অবসন্নতা অনুভবের প্রগাঢ় অনুভুতির সাধারণত যে বয়সে উম্মেষ ঘটে সেই বয়সে চিরতরেই কিটস চলে গেলেন মৃত্যুর হিম শীতল কোলে। আমাদের কাছে কবিদের অন্যগ্রহের মানুষ মনে হয়, তাদের জীবনের প্রতিটি পল সৌন্দর্যের আবীর মাখা মনে হয় কিন্তু আমরা কি জেনেছি তাদের অধিকাংশের জীবনের সাহিত্যসৃষ্টির পিছনের কথা- একজন ফেদোরিকো গার্সিয়া লোরকাকে হত্যা করা হয় বধ্যভূমিতে, একজন পাবলো নেরুদার শেষ বয়সে ঘরে হানা দেয় উদ্যত জলপাই বাহিনী, জীবনানন্দ নামের কবি জীবনের আনন্দ না ছুয়ে ছেনেই লেপ্টে যান ট্রামের ধাতব চাকার সাথে, হতাশা নিয়ে আত্মাহুতি দেন সিলভিয়া প্লাথ, ডিলান টমাস আকণ্ঠ ডুবে থাকেন সোম রসে, কাজী নজরুল ইসলাম জীবনের প্রারম্ভেই হয়ে যান বোধশক্তিহীন, বোদলেয়ার শরীরে নেন বিষের পর বিষ, সুকান্ত নামের কিশোর কবি অসুখে চলে যান বড়ই অকালে, শেলী ডুবে যান অথৈ জলে, বায়রনের কলম থেমে যায় যুদ্ধের প্রকোপে। এই তালিকা শেষ হবার নয়, শেষ হবেও না, এখানের এক কোনে আমাদের বিমর্ষ করে ঢুঁকে পড়েন কবি কিটস, তারুণ্য শুরু হবার আগেই যার শেষ হয়ে গিয়েছিল ক্ষয়রোগের আক্রমণে।
গ্রীষ্মের এক বৃষ্টি ভেজা দিনে ( বিলেতে কোন দিনটা বৃষ্টিস্নাত না সেটা অবশ্য গবেষণার ব্যাপার!) সদল বলে যাওয়া হল কিটসের সেই বিখ্যাত বাড়ীতে যেখানে জীবনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য তিনটি বছর কাটিয়েছিলেন তিনি, রচনা করেছিলেন সেরা কবিতাগুলো। এবং প্রেমে পড়েছিলেন পাশের বাড়ীর তরুণী ফ্যানি ব্রাউনে-এর। বেশ নিরিবিলি মহল্লাটি, অদূরেই বিশাল এক উদ্যান, সাথের জলাতে জলকেলি করে বেড়াচ্ছে নানা জাতের হাঁসেরা, খুব একটা হয়ত বদলায় নি স্থানটি গত দুই শতাব্দীতে! সাইনবোর্ড অনুসরণ করে বাড়ীর সামনে যখন পৌছালাম ততক্ষণে বরুণ দেব খানিকটা কৃপা করেছেন, মেঘের ফাঁকে চুইয়ে চুইয়ে আসা শুরু করেছে সূর্যরশ্মি, শ্যামলী নিসর্গ তখন উদ্ভাসিত আপন সবুজ আলোয়, লতা-পাতা-ঘাস-গাছ ঘেরা সফেদ ভবনটি।
১৮১৫ সালের নির্মিত বাড়ীটি হঠাৎ করে দেখলে বোঝা যায় না যে এটিতে আসলে দুইটি বাসগৃহ আছে, কিন্তু বাহির থেকে দেখলে মন হয় একটাই বাসগৃহ! বাড়ী তৈরি পর থেকেই এখানে ছিলেন চার্লস ব্রাউন, যার সাথে কিটসের ১৮১৭ সালে পরিচয় হয় এবং প্রায় সাথে সাথেই তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হন। তারপর থেকে এই বাড়ীতে প্রায়ই বেড়াতে আসতেন কিটস। কিন্তু ১৮১৮ সালের শেষ দিকে জন কিটসের ভাই টম যক্ষ্মা রোগে মারা গেলে বন্ধুকে সহযোগিতার জন্য তার এই বাড়ীতেই এসে থাকবে আহ্বান জানান চার্লস ব্রাউন। টমের মৃত্যু পর্যন্ত ব্যপক সেবাযত্ন করেছিলেন কিটস, কিন্তু শেষ রক্ষা না হওয়াই ভগ্ন হৃদয়ে বন্ধুর আমন্ত্রণ রক্ষা করেন, এসে এই বাড়ীরই এক কক্ষে উঠেন, জানা যায় তিনি অবস্থানের সময় ভাড়া বাবদ মাসে ৫ পাউন্ড দিতেন এবং অন্যান্য খরচও বহন করতেন।
বাড়ীর সামনের সাইনবোর্ডে লেখা আছে পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে! কি গেরো রে বাবা! গেলাম পিছনের দরজায়, দেখি সেখানেই জাদুঘরের টিকেট অফিস, দোকান এবং প্রবেশ পথ। গত ২০০ বছরে বাড়ীটির কিছু পরিবর্তন তো হয়েছেই, তাই প্রবেশপথ এখন পিছনের দিকে।
টিকেটের দাম ৫ পাউন্ড, কিন্তু ভাল খবর হচ্ছে যা এক বছরের জন্য কার্যকরী! বাহ, বেশ ভাল নিয়মতো! মানে টিকেটটি সংরক্ষণ করে রাখলে বছর খানেকের মধ্যে যদি আবার মাথা ভর্তি হয়ে ওঠে কিটসের কাব্যে তাহলে মুফতে আসা যাবে।
এই বাড়ীতেই ১৮১৮ সালে মা, বোন এবং ভাইয়ের সাথে বাসিন্দা হিসেবে আসেন মিস ফ্যানি ব্রাউনে ( Fanny Brawne) , সম্ভবত নভেম্বরে তার সাথে কিটসের সাক্ষাৎ ঘটে, এবং এর পরের মাসেই টম মারা যায়, ১৯ বছর কিটস তখন ঝড়ের কবলে পড়া গাছের মতো শোকে শতচ্ছিন্ন, ফ্যানির সংস্পর্শ তাকে জুগিয়েছিল সাহস, করাল মৃত্যু থেকে জাগতিক সুন্দরের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিল রোমান্টিক তরুণের। ১৮১৯ সালের ১৮ অক্টোবর কিটস ফ্যানিকে তার জীবনসঙ্গিনী হবার প্রস্তাব দেন, ফ্যানি সাথে সাথেই তাতে সম্মত হলেও জানা ছিল না অদৃষ্ট তাদের কোথায় নিয়ে যাবে।
বরাবরের মত ভিলেন হয়ে দাঁড়ায় ফ্যানির মা, তার মতে কিটসের চিকিৎসক হবার কথা ছিলে সেখানে কবিতা লেখার মত এক অদ্ভুতুড়ে শখের জন্য সে ডাক্তারি বিসর্জন দিয়ে দিল, অথচ কবিতা থেকে কোন পয়সা আসার নাম নেই! ও আমার মেয়েকে কি খাওয়াবে?
কিটস নাচের আসরে পারদর্শী ছিলেন না এবং প্রায়শই এত বেশী অসুস্থ থাকতেন যে ফ্যানি অন্যান্য বন্ধুদের সাথে নানা নাচের আসর ও উৎসবে যোগ দিত, এসব থেকে কবি কিটস অত্যন্ত ব্যথিত, ক্ষুদ্ধ, হয়ে উঠতেন, মাঝে মাঝেই তার মনে হত মহামুদ্রের মত বেগবান এই প্রেম তার কবিতা লেখার অখণ্ড মনোযোগকে ব্যহত করছে, অথচ এই সময়েই তার সাহিত্য জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলো রচিত হয়, বিশেষ করে
Ode on a Grecian Urn
THOU still unravish'd bride of quietness,
Thou foster-child of Silence and slow Time,
Sylvan historian, who canst thus express
A flowery tale more sweetly than our rhyme:
What leaf-fringed legend haunts about thy shape
Of deities or mortals, or of both,
In Tempe or the dales of Arcady?
What men or gods are these? What maidens loth?
What mad pursuit? What struggle to escape?
What pipes and timbrels? What wild ecstasy?
Heard melodies are sweet, but those unheard
Are sweeter; therefore, ye soft pipes, play on;
Not to the sensual ear, but, more endear'd,
Pipe to the spirit ditties of no tone:
Fair youth, beneath the trees, thou canst not leave
Thy song, nor ever can those trees be bare;
Bold Lover, never, never canst thou kiss,
Though winning near the goal—yet, do not grieve;
She cannot fade, though thou hast not thy bliss,
For ever wilt thou love, and she be fair!
Ah, happy, happy boughs! that cannot shed
Your leaves, nor ever bid the Spring adieu;
And, happy melodist, unwearièd,
For ever piping songs for ever new;
More happy love! more happy, happy love!
For ever warm and still to be enjoy'd,
For ever panting, and for ever young;
All breathing human passion far above,
That leaves a heart high-sorrowful and cloy'd,
A burning forehead, and a parching tongue.
Who are these coming to the sacrifice?
To what green altar, O mysterious priest,
Lead'st thou that heifer lowing at the skies,
And all her silken flanks with garlands drest?
What little town by river or sea-shore,
Or mountain-built with peaceful citadel,
Is emptied of its folk, this pious morn?
And, little town, thy streets for evermore
Will silent be; and not a soul, to tell
Why thou art desolate, can e'er return.
O Attic shape! fair attitude! with brede
Of marble men and maidens overwrought,
With forest branches and the trodden weed;
Thou, silent form! dost tease us out of thought
As doth eternity: Cold Pastoral!
When old age shall this generation waste,
Thou shalt remain, in midst of other woe
Than ours, a friend to man, to whom thou say'st,
'Beauty is truth, truth beauty,—that is all
Ye know on earth, and all ye need to know.'
যার শেষের দুই লাইন সম্ভবত কিটসের রচিত সবচেয়ে বিখ্যাত শব্দগুচ্ছ। এই বাড়ীতেই স্বচ্ছ পাহাড়ি ঝর্নার মত বেগবান, আবেগে পরিপূর্ণ সৃষ্টিটি রচিত হয়।
এক পর্যায়ে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি কিটস, যক্ষ্মা ধরা পড়ে তার! ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে ও উৎকণ্ঠা এবং উত্তেজনার ধকল সামলাতে পারবেন কি না তিনি দুর্বল শরীরে এই ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে ফ্যানি এবং কিটসের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ থাকে এক বাড়ীতে থাকলেও, তবে পরস্পরকে লিখতেন তারা সবসময়ই। মাঝে মাঝে ফ্যানি এসে কিটসের জানালার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেন। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে অনেক ধরনের গল্পগাঁথা চালু আছে, BRIGHT STAR নামের এক সিনেমাও নির্মিত হয়েছে সেই দিনগুলোর উপরে।
স্বাস্থ্যগত কারণেই কিটস একাধিক জায়গায় ভ্রমণ করেন, এবং শেষে যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাবেন এই আশায় ইতালি গমন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফ্যানি সবসময়ই কিটসের অপেক্ষায় ছিলেন। শুধু তাই না কিটসের মৃত্যুর পরের ছয় বছর ফ্যানি সবসময়ই শোকগ্রস্তা মহিলার পোশাক পরে থাকতেন। কিটসের বোন ফ্রান্সেসের সাথে তার সখ্যতা এতই বেশী হয় যে তারা এই বাড়ীতেই থাকতেন, দুই নারীই হয়ত পরস্পরকে শোকপ্রকাশের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে ভেবেছিলেন। কিটসের মৃত্যুর এক যুগেরও পরে ফ্যানি অবশেষে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন,অনেক পরে কিটসের জীবনী লিখতে তিনি মূল্যবান তথ্য এবং কাগজ যোগান দেন, বিশেষ করে কবি শেলীর স্ত্রী মেরি শেলির ( ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের রচয়িতা) কিছু চিঠিপত্রে জানায় যায় কিটস জীবনের শেষ দিনগুলোতে উম্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফ্যানির কাছে প্রাপ্ত চিঠি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঘেঁটে এমন কোন ঘটনার হদিশ পাওয়া যায় না।
বাড়ীটির কিছুটা অদলবদল ঘটলেও বেশ কিছু কক্ষ আগের মতই আছে, বিশেষ করে হলওয়ে, ফ্যানি ব্রাউনের কক্ষ, কিটসের পার্লার।
সবই কামরায় অত্যন্ত সুসজ্জিত। দেয়ালে ঝুলছে নানা চিত্রকর্মে যাদের বিষয়বস্তু কিটস। দুঃখজনক ভাবে মৃত্যুর পরেই জীবিত অবস্থার চেয়ে কোটি কোটি গুণ খ্যাতির সুবাস ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে কিটসকে নিয়ে, রোমান্টিক কবিতার প্রতিভু হয়ে ওঠেন অকালেই ঝরে যাওয়া এই কবি।
একাধিক বইতে তার সাক্ষর দেখা গেল, বিশেষ করে শেক্সপীয়ারের সংগ্রহে।
আছে তার সেই আংটি যা দিয়েছিলেন বাগদত্তা ফ্যানিকে।
দুইতলায় দুইটি শোবার কামরা, দুইটিতেই সুসজ্জিত বিছানা, অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরটিতেই কিটস থাকতেন, বড়টি বরাদ্দ ছিল চার্লস ব্রাউনের জন্য। গবেষণায় জানা গেছে কিটসের অবস্থানের সময়ে তার শয়ন কক্ষের দেয়ালের রঙ হালকা গোলাপি বর্ণের ছিল, এখন সেই রঙই ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
হায় নিষ্ঠুর পৃথিবী, যে কবি বেঁচে থাকার সময় কবিতা লেখার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে একা একা, তখন কেউ ফিরেও দেখে নি, আর আজ তার ঘরের রঙ নিয়েও গবেষণা হয় শত বছর পরে। সকালে ঘুম ভেঙ্গে নিশ্চয়ই জানালার পাশে দাড়াতেন কিটস, এখন সেখানে কেবল নীল আকাশ আর সবুজ মহীরুহ দেখা যায়, তখনও কি তাই যেত? কবি কি সকালের রোদ মুখে নিয়ে গায়ক নাইটিংগেলের সন্ধান করতেন?
সেখানে ২৫ বছরে মৃত্যুবরণ করা কবিটির ডেথ মাস্ক রাখা আছে, যে স্বপ্নময় চোখে দুটো দিয়ে বিশ্ব দেখে কেবল সুন্দর দিয়েই জীবনকে ভরাতে চেয়েছিলেন কিটস, সেই পূর্ণ চোখ দুটো বোজা, কিন্তু মৃত্যুর করাল চিহ্নের বদলে একটা সৌম্য ভাবটাতে ছড়িয়ে আছে, নাকি আমরা কবিদের মৃত্যুকে সৌম্যভাবেই দেখতে ইচ্ছুক সবসময়ই?
কেমন বিষণ্ণতা ছড়িয়ে আছে শোবার ঘরটাতে, তাই বেরিয়ে একেবারে নিচের বেসমেন্টে চললাম, ভাড়ার ঘরের সাথেই রান্নাঘর, টেবিলে সাজিয়ে রাখা আছে সেই আমলের নকল নাস্তা,
কড়িকাঠ থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শিকার।
সিঁড়ি বেয়ে ওঠবার পথে দেয়ালে ঝুলতে দেখা গেল কিটস হাউসের বেশ কিছু পেইন্টিং। ১৯৩১ সালে ভবনটি কিটস জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়, যদিও এর আগে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি এই বাড়ীরই বাসিন্দা ছিলেন, কিন্তু আজ আর অন্যদের কথা নয়।
জাদুঘরের কর্মীকে জিজ্ঞাসা করলাম কিটসের দেখা সেই নাইটিংগেল পাখি তো আর নেই, কিন্তু সেই পাম গাছটা নিশ্চয়ই আছে, যার নিচে বসে তিনি কবিতাটি লিখেছিলেন, সেটা কোথায়? একগাল হেসে পোড়ামুখো বলল- সে গুলো সব মরে গেছে, অনেক আগের ব্যাপারতো। এখন যত গাছ দেখছ সবই অনেক পরে লাগানো!
বাড়ীর বাগানে কিছুক্ষণ ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো হল, ভবনটির গায়ে লাল রঙের বিশেষ চিহ্ন চোখে পড়ল যা ১৮৯৫ সালে রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টস কতৃক দেওয়া হয়েছিল, অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে ইংল্যান্ডে হয়ত এমন চিহ্ন খুব বেশী হলে গোটা বিশেক আছে, পরবর্তীতে এমন চিহ্নগুলো নীলবর্ণের করা হয়েছিল, এখনো তাই আছে।
কিটস কী আমাদের মতই এমন ঝকঝকে রোদ উঠলে সবুজ বাগানে পারচারি করতেন বিশুদ্ধ বাতাস বুকে হাঁপরে ভরে? নাকি আলো আঁধারেই শুয়ে থাকতেন চরম অসুস্থ অবস্থায়? জানি না, কোনদিন জানতেও পারব না, কিন্তু জানি তার ছিল অপরিসীম জীবনতৃষ্ণা। মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়েও জীবনকে সাথে নিয়েই শেষ পর্যন্ত কলম নিয়ে সৃষ্টি সুখের উল্লাসেই মেতে ছিলেন। নাকি প্রবল অভিমান হয়েছিল তার অসুস্থতার উপরে, প্রেমিকার উপরে, ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপরে? কেন জানি কিটস হাউসে অবস্থানের শেষ সময়ে ঘুরে ঘুরে সেই পঙক্তিটির কথা মনে আসছে যা কবি নিজের কবরের এপিটাফে লিখতে বলেছিলেন- Here lies One Whose Name was writ in Water । আসলেই কি তাই? কোন কিছুই কি কাল পরিক্রমায় চিরস্থায়ী নয়?
(এই পোস্টটি আমার বিলেতবাসী বন্ধু মরমী চৌধুরীর জন্য, তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ঝমঝম বৃষ্টির মাঝেও গাড়ী ড্রাইভ করে কিটসের বাড়ী এবং আরও অনেক জায়গায় নিয়ে যাবার জন্য।)
মন্তব্য
বাড়িগুলো কি সুন্দর সাজিয়ে রেখেছে। দেশে মিউজিয়ামও এত ভাল দেখভাল হয় না, আর পৈতৃক ভিটা তো ছেড়েই দিতে পারেন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এমন ভাবেই রক্ষণাবেক্ষণ হওয়া উচিত, অতীত এবং বর্তমানকে ভবিষ্যতের কাছে তুলে ধরার জন্য, বর্তমানের তাগিদেই।
facebook
সমসাময়িক অন্যন্য বৃটিশ কবিদের কবিতা সাধারণের অগম্য মনে হতো। কিন্তু কীটসের কবিতাগুলোর খানিকটা হলেও বুঝতাম। মানে যখন এক কালে দু চারটা কবিতা যখন পড়তাম। কেমন আনন্দ বেদনার জড়াজড়ি। বেদনা মধুর লাগতো কীটসের কিছু কবিতা পড়লে। তার ঘরবাড়ি দেখার সুযোগ হলো আপনার কল্যানে। ধন্যবাদ রাখুন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বেদনা মধুর লাগতো কীটসের কিছু কবিতা পড়লে। কি চমৎকার ভাবে মনের ভাবটা প্রকাশ করলেন! ধন্যবাদ
facebook
সেই ক্লাস ফাইভে কি সিক্সে কিটস পড়া...... তারপর আরও কিছু ক্লাসে একটা কি দুটো কবিতা। এর বাইরে কিটসকে ঠিক পড়া হয়নি
০২
অনেক ভালো লাগল অণু। হয়তো আবারও কিটসকে পাঠ্য বই এর বাইরে এনে পড়তে শুরু করতে পারি
ডাকঘর | ছবিঘর
পাঠ্য বইয়ের পড়া তো পরীক্ষার জন্য, আমাদের দরকার পড়ার আনন্দে পড়া।
facebook
আরেকটা অণু স্পেশাল
স্পেশাল ব্যানার করছেন শুনলাম আরেকটা?
facebook
নাহ! মিস হয়ে গেছে - ৪৮ তম বড় গনতন্ত্র নিয়ে ভাবছিলাম!
হুম,
facebook
করে ফেলান ভাই। বড় গনতন্ত্রের গেলমানদের নিয়েও করতে পারেন
facebook
প্রিয় কবি।
Heard melodies are sweet, but those unheard
Are sweeter!
Heard melodies are sweet, but those unheard
Are sweeter!
facebook
facebook
দেশে শিলাইদহ, শাহজাদপুর আর পতিসরের রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য স্থাপনাগুলোর দৈন্য দশার কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
মাঝে মাঝে যাও না সংস্কার করা হয়, তাতে ইতিহাস বিকৃত করে দেবার মত কাজই হয় বেশী, মনে হয় টাকা মারার মোচ্ছবের জন্য। যেমন শিলাইদহ কুঠিবাড়ী কে সাদা রঙ করা।
facebook
প্রিয়তম কবি। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার সুবাদে পরীক্ষা পাশ এবং রসাস্বাদন দুটোর জন্যই প্রিয়তম কবির ওডগুলো পড়তে হয়েছিল। আজ একেবারে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র !! লে বাবা, আমি যে ভাবলাম আপনি ফরাসী ভাষার শিক্ষক!
facebook
facebook
facebook
খুব ভাল লাগলো অণুদা। বিষন্ন হয়ে গেলাম আমিও।
আসলেই, কিটসের লেখা বিষাদময় সত্যে মোড়া।
facebook
ভালো লাগলো, অনেক ভালো, লেখাটা পড়তে পড়তে মনে মনে আপনার সাথে সাথে ঘুরে বেড়ালাম কবির বাড়িঘরে, বাগানে।
একদিন হয়তো সত্যি করেই আমারও দেখা হয়ে যাবে কবির বাড়ী, কী বলেন?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অবশ্যই তুলিদি, সে আর বলতে!
facebook
নাস্তা দেইখা ভুরু কুঁচকাইলাম, ভারি বিশ্রি দেখি। ২০০ বছর পর জন্মায় ভালোই কর্সি।
লেখা ভালু পাইলাম।
..................................................................
#Banshibir.
হে হে, বিলেতি খাবার কোনসময়ই বা জিভে জল আনা ছিল!
facebook
কিটসের জীবনচিত্র খুব চমৎকার করে ফুটে উঠেছে লেখায়। অনেক ভালো একটা পোস্ট ।
অমি_বন্যা
ধন্যবাদ ভাই। কিটসের বেদনা বুঝতে হলে তার কবিতা বুঝতে হবে, খুব একটা বোঝার ক্ষমতা হয় নি তবে হবে একদিন, এই আশাতেই আছি-
facebook
কিটসের সব কবিতাগুলোই এত প্রিয় যে দিনে কবার ওগুলো হাতে নেই তার হিসাব নেই,, আর বিষন্নতাটা আমার অলিগলিতে ঠুকিয়ে দিচ্ছে সবাই, হয়তো তাই বন্ধুদের আড্ডার ফাকফোকরেও মাথাচারা দেয় কবি---
Here, where men sit and hear each other groan;
Where palsy shakes a few, sad, last gray hairs,
Where youth grows pale, and spectre-thin, and dies;
Where but to think is to be full of sorrow
Where but to think is to be full of sorrow
facebook
একটা লাইনও শালা এইটা-----!!!
আসলেই
facebook
দারুন একটা পোষ্ট অণুদা। এতো এতো ভাল লাগলো!
এইভাবে শব্দ যদি কথা বলে আর ছবি দেখার দরকার থাকেনা। কেন এমন একজন কবির ই ২৫ বছরে চলে যেতে হবে?
নিশিতা
জানিনা, কবিরা এমনই --
facebook
লেখার সময়ের মগ্নতাটা পরিষ্কার টের পাওয়া গেলো।
এই পোস্টটার জন্য স্পেশাল থ্যাংকস, বেইবি...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হা হা, ধন্যবাদ!
facebook
দারুন !
facebook
নতুন মন্তব্য করুন