লাস্ট ডেজ অফ পম্পেই

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বুধ, ১৯/১২/২০১২ - ৯:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

229549_10152178204510497_443837502_n

( পোস্টটি পড়ার আগে ভিসুভিয়াস এবং এরকোলানো নিয়ে পোস্ট দুটি পড়া থাকলে ভাল হয়, একই তথ্য একাধিক পোস্টে প্রসঙ্গক্রমে প্রাসঙ্গিক হলেও বারবার না লিখে কিছুটা উহ্য রেখেছি)

সারি সারি পাথর বসানো রাস্তা চলে গেছে নগরীর বুক চিরে, বেশ বড় বড় পাথর, মসৃণ তার পৃষ্ঠদেশ, কয়েক জায়গায় অগভীর খাজ মত, বোঝা যাচ্ছে কোন বিশেষ বাহনের অবিরাম চলাচলের ফলে কঠিন পাথরের বুক ক্ষয়ে এই চিহ্ন তৈরি হয়েছে চাকার ঘর্ষণে। কারা টানত সেই গাড়ী? হয়ত ঘোড়া, গাধা, গরু, খচ্চর বা মানুষ, মাত্র দুই হাজার বছর আগে! জি, ঠিকই পড়েছেন ২০০০ বছর আগেই এক সমৃদ্ধ রোমান জনপদ ছিল এলাকাটি, ছিল এক রমরমা বাণিজ্যকেন্দ্র! অদূরেই ভূমধ্যসাগর, বণিকেরা ভিড় করে আসত নানা দেশ থেকে, চলত পণ্যের বিকিকিনি, সবার বিনোদনের জন্য শহরে গড়ে তোলা হল রোমান স্টেডিয়াম বা অ্যারেনা, বিশাল সব কাজকারবার।

644137_10152209995330497_1939993477_n

487580_10152182184830497_2036609527_n

শহরটির এক দিকে অল্প দূরেই যেমন সমুদ্র, তেমনি অন্যদিকে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমায় এক সবুজ পাহাড়। অরণ্য, পাহাড়, সমুদ্র মিলিয়ে অনেকটা পুরাণের স্বর্গ স্বর্গ আবহ এলাকার নিসর্গে। কিন্তু একদিন সেই সবুজ পাহাড় জেগে উঠল ভীষণ ক্রোধে, ভিতরে জমে থাকা টন টন পাথর সে উগড়ে দিল চোখের নিমিষে, নিরীহ সবুজ পাহাড় রূপান্তরিত হল ইতিহাসের কুখ্যাততম আগ্নেয়গিরিতে, এই বিশেষ শহরটিসহ পাঁচটি শহর চলে গেলে আগ্নেয়গিরি লাভা, ছাই, বর্জ্যের নিচে, মৃত্যু ঘটল ১৬,০০০ মানুষের। মানব সভ্যতার ইতিহাসে অমরত্ব পেল শহর এবং সেই ফুঁসে ওঠা আগ্নেয়গিরিটি, হয়ে থাকল এক অমোচনীয় কালো অধ্যায়, যুগে যুগে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের মুখে ছড়িয়ে গেল দুর্ভাগা এই নগরীর কথা, নাম যার পম্পেই। আর আগ্নেয়গিরিটির নাম ভিসুভিয়াস।

389418_10152189632830497_1641932056_n

ইতালি কেবলমাত্র একটি দেশ নয়, ইতালি একটি আলাদা গ্রহের মত! এই দেশে দেখার বস্তু এত বেশী আছে, সে হোক প্রাকৃতিক বা ঐতিহাসিক, এত ধরনের মানুষ আছে, যে বলা যায় ইতালি ভাল মত দেখতে উপলব্ধি করতে এক মানব জীবন যথেষ্ট নয়। এত শত শত দর্শনীয় স্থানের মাঝেও কিন্তু গত বছর সবচেয়ে বেশী সংখ্যক পর্যটক কিন্তু এসেছে এই ধ্বংসনগরীতেই, ২৬ লক্ষ! চলুন, আজ ঘুরে আসি বর্তমানের পম্পেই নগরী থেকে, সাথী অক্টোবরের বৃষ্টিহীন মিষ্টি রোদ।

285630_10152238643210497_13397174_n

ন্যাপোলী মহানগরী থেকে খানিক পরপরই ট্রেন ছাড়ে যা ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রায় সবগুলো শহর হয়ে যায়, তবে এদের মাঝে সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত নিঃসন্দেহে পম্পেই, তার পরপরই এরকোলানো। আধুনিক পম্পেই নগরী আবার গড়ে উঠেছে পুরাতন শহরকে ঘিরেই, যদিও অধিবাসীরা ভুলেই থাকেন আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বাস করার বিপদের কথা, কিন্তু মাঝে মাঝে টেলিভিশনে ভিসুভিয়াসের উপরে নির্মিত তথ্যচিত্র দেখলে তাদের মনে শঙ্কা দেখা দেয়- কী হবে যদি পাগলা আবার ক্ষেপে ওঠে? কেউ জানে না সেই প্রশ্নের উত্তর।

ট্রেন ষ্টেশন থেকে বেরোতেই প্রাচীন পম্পেই-এর দিকে যাবার দিক নির্দেশনা চোখে পড়ল, মিনিট দুয়েক হাঁটলেই তার একাধিক প্রধান ফটকগুলির একটা দেখা যায়। সেখানে দিয়ে আরও শত শত পর্যটকদের সাথে শহরপ্রাচীরের ভিতরে ঢুকতেই যেন দুইটি হাজার বছর পিছিয়ে গেলাম এক নিমিষে। সারি সারি স্তম্ভ, পলেস্তারা খসে পড়া দেয়াল, লম্বা পাথরের রাস্তা চলে গেলে শহরের আরেক মাথা পর্যন্ত, দেবদেবীর মন্দির- শুধু মানুষ নেই, মানে সেই প্রাচীন মানুষগুলো নেই, এই সময়ে ট্যুরিস্টরা অবশ্য গমগম করছে সবখানেই, তাদের জ্বালাতে বরং ফাঁকা শহরের ছবি তোলা এক বিশাল ঝক্কি হয়ে দাঁড়াল।

409368_10152245861630497_1736474666_n

প্রথমেই ফোরাম নামে ফাঁকা জায়গাটি দেখা হল যেখানে শহরের জনসাধারণের সভা বা এই ধরনের অনুষ্ঠান হত, এখন সেখানে ইতস্তত দাঁড়ানো কিছু স্তম্ভ, আর আশেপাশের ছাদ ছাড়া বাড়ী বাদে এমন কিছু নেই, আর সেখানে দাঁড়ালেই চোখে আটকায় ভীমদর্শন ভিসুভিয়াসে, আসলে কেবল ফোরাম থেকেই না, সমগ্র পম্পেইয়ের সবখান থেকেই বিভীষিকাময় আগ্নেয়গিরিটি নজরে আসে। জানায় হয়ত মানুষদের সাবধানের থাকার আহ্বান।

404157_10152183295315497_1193041911_n

পম্পেই নগরীর অধিকাংশ ঘরেই অবশ্য প্রবেশের অনুমতি নেই, যেহেতু এখনো প্রত্নতত্ত্ববিদরা খোঁড়াখুঁড়ি চালাচ্ছেন, তাই খানিকটা দূরত্ব বজায় দেখেই দেখতে হয় সবকিছু। আবার কিছু কিছু এলাকার কাজ শেষ বিধায় বেশ আরামেই আগপাশতলা ঘুরে দেখার অনুমতি আছে। এমন এক ভবনে দেখা মিলল অপূর্ব রঙে রাঙানো কিছু দেয়াল চিত্র, পাকা রঙ দেখে মনে হচ্ছে যেন গত সপ্তাহেই কেউ তুলির পরশ বুলিয়ে গেছে।

561591_10152189968975497_245669193_n

8815_10152259241060497_1632393511_n

430076_10152181227690497_1521943489_n

ঘুনাক্ষরেও বোঝার উপায় নেই যে দু হাজার বছর আগে রঙ করা এই দেয়াল কয়েক মিটার লাভা আর ছাইয়ের স্তুপের নিচে চাপা পড়ে ছিল শত শত বছর! এমন ধৈর্য্যশীল কাজের জন্য প্রত্ন তাত্ত্বিকদের প্রতি মাঠ আসলেই শ্রদ্ধায় নুইয়ে যায়, কিন্তু বিপরীত চিত্রটিও আছে। জনাব টনি নামে মূর্খ অসভ্য বর্বর এক লোক এই বিশ্ব সম্পদের গায়ে নিজের নাম লিখে রেখেছে দেয়াল আঁচড়ে!

602346_10152192356565497_1900037023_n

এই ভাবে নাম লিখলে কী কেউ অমর হতে পারে? মহাকালের বুকে নিজের নামকে অক্ষয় করে রাখা কি এতই সহজ? একই সাথে ঘৃণা এবং করুণা হল টনির প্রতি। বন্ধুরা, বাংলাদেশের অনেক পুরাকীর্তিতেও একই অবস্থা চোখে পড়েছে অনেক সময়, যদি আপনার সামনে কেউ এমন ক্ষতিকর কাজ করলে বুঝিয়ে বলবেন কেন এই কাজ করা উচিত নয়, বিশেষ করে আপনার শিশুটিকে এমন কাজ যে কত বড় অন্যায় সেটা অবশ্যই শিক্ষা দেবেন।

581418_10152189968490497_964858100_n

শহরের দেবরাজ জুপিটারের মন্দিরের পরে অ্যাপোলোর মন্দিরে যাওয়া হল, অনেকটা একই ধাঁচের সবখানেই, সারিসারি স্তম্ভ, ধসে পড়া ছাদ, ফাঁকা সবুজ জমি।

602346_10152184619315497_1457672560_n

1074_10152203714720497_591297080_n

এর মধ্যে হাউস অফ দ্য ফন নামের বিখ্যাত বাড়ীটির মাঝে ঢুকতেই উদ্যানের সাথে লাগানো ছোট একটি ঝর্ণার সামনে ফনের ভাস্কর্য দেখা গেল, যদিও এককালে কোন ধনী ব্যক্তির বিশাল বাড়ীটির মূল আকর্ষণ একটি অসাদাধারন মোজাইকের কাজ যেখানে সম্রাট আলেকজান্ডারের সাথে ইরানের সম্রাট দারিউসের যুদ্ধ দেখানো হয়েছে, মেঝেতে স্থাপিত বিশাল মোজাইকটির বেশ ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু ঘোড়ার পিঠে অবস্থানরত আলেকজান্ডারের মুখাবয়ব পরিষ্কার বোঝা যায়, শুনলাম ব্যাটল অফ ইসূস নামের এই মোজাইকটি আসলে একটি গ্রীক চিত্রকর্মের নকল, যদিও এর বয়স নেহাত কম নয়!

72083_10152179854265497_1965424750_n

তেমনই হাউজ অফ দ্য ট্র্যাজিক পয়েট বাড়ীর প্রবেশ পথে যেমন মোজাইকে খোদাই করা ভীষণ দর্শন কুকুর চোখে পড়ল, তেমন ভিতরে ছিল গ্রীক পুরাণের নানা চিত্র, কিন্তু নামটা কেন হাউজ অফ দ্য ট্র্যাজিক পয়েট তার অবশ্য সঠিক ব্যাখ্যা মেলে না। ধারণা করা হয় যেহেতু শিল্পকলা, পুরাণ নিয়ে আগ্রহ ছিল তাই হয়ত বাড়ীর মালিক কবি ছিলেন, আর কবি ছিলেন মানেই তার প্রতিভা ছিল, আবেগ ছিল কিন্তু অর্থ ছিল না, তাই ট্র্যাজিক! কী ভয়াবহ ভুল ধারণা সব যুগেই করা হয় কবিদের নিয়ে।

2048_10152189968335497_1412071708_n

চমৎকার রাস্তাগুলো বৃষ্টির জল নেমে যাবার জন্য সামান্য ঢালু করে তৈরি, সাথে ফুটপাতগুলোও। কিন্তু প্রায়ই রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা বিশাল সব পাথর দেখে স্বাভাবিক ভাবেই মনে কৌতূহলের উদয় হল, এগুলো কিসের জন্য?

546830_10152229553145497_622520721_n

197430_10152203714265497_94892006_n

উত্তর পাওয়া গেল চমকপ্রদ! এগুলো রাস্তা পারাপারের জন্য ব্যবহার হত, বিশেষ করে মহিলাদের জুতা বা পরনের কাপড় যেন নষ্ট না হয় তাই তারা এই ফেলে রাখা পাথরের উপরে পা দিয়েই রাস্তা পার হতেন। বৃষ্টির দিনে জল-কাদা মিলিয়ে নিশ্চয়ই অকথ্য অবস্থা হয়ে থাকত তখন, কিন্তু মূল রহস্যের সমাধান এইখানেই নয়, আসল ব্যাপার হচ্ছে পম্পেই নগরীতে স্যুয়েজ বা বর্জ্য নিষ্কাশনের কোন সুব্যবস্থা ছিল না, তাই জনসাধারণ রাস্তার উপরেই ময়লা ফেলে রাখত, তারপর শহর থেকে নিযুক্ত কেউ এসে ময়লা সরিয়ে নিয়ে যেত, কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না ময়লা ফেলার! যে কারণে দিনের বেলা একজনের ফেলা ময়লায় বেখেয়ালে আরেকজনের বেশভূষা নষ্ট হলে জরিমানার বিধান পর্যন্ত ছিল! এই পাথরগুলোর উপর দিয়ে বেড়ালেরাও যাতায়াত করত, এবং ঐতিহাসিকরা মনে করছেন পশুটানা গাড়ীও এর ফাঁক গলে অনায়াসে চলাচল করতে পারত।

602556_10152219160475497_1449033724_n

তবে পম্পেই নগরীতে টো টো করে ঘুরে মনে হল সবচেয়ে বেশী দেখলাম রান্নার ঘর, বেশ চমৎকার মোজাইকের কাজ করা, রান্নার পাত্র রাখার জন্য গোল গোল ছিদ্র, এমন অনেকবারই চোখে পড়ল। আসলে সরগরম এলাকাতে এমনই হবার কথা।

76235_10152189632730497_1389312683_n

485141_10152275513080497_1500725366_n

কিছু দোকানের সামনে তাদের ভাষায় লেখা আছে যে সেখানে কী মিলত, কোথায় বা চিহ্ন দিয়ে বোঝানো আছে যে সেটা কুমোরের দোকান, নাকি কামারের, নাকি শুঁড়িখানা! চোখ বন্ধ করতেই যেন ফিরে গেলাম সেই সময়ে- শাদা কাপড় পড়ে শহরের শাসনকর্তা চলেছে দম্ভ ভরে রাস্তা মাড়িয়ে, পেছেন সভাসদের দল, সাধারণ জনগণ ব্যস্ত হাটবাজার নিয়ে, বণিকের দল তদারকি করছে পণ্যমুল্যের। বলা হয় পম্পেই একমাত্র জনপদ যেটা থেকে আমরা সেই সুপ্রাচীন সময়ের জীবনধারার অধিকাংশই আঁচ করতে পারি।

559440_10152229552600497_1519363863_n

254334_10152207383030497_907484386_n

576381_10152207382780497_907796281_n

183506_10152184619395497_133877447_n

এত কিছু থাকার পরও পর্যটকদের কাছে পম্পেইয়ের মূল আকর্ষণ লাভা খুঁড়ে বাহির করে একটি লুপানার বা গণিকালয়, দেয়ালে নানা কামকলার ছবিসমৃদ্ধ লুপানারটিসহ পম্পেই কামকলার বেশ কিছু ছবি একবার পোস্ট করা হয়েছে বিধায় এযাত্রা এড়িয়ে গেলাম সেই প্রসঙ্গ। দশ হাজার লোকের পম্পেইতে ৩৫টি লুপানার ছিল মানে ৭১ পুরুষ প্রতি একটি লুপানার। বিজ্ঞানীরা কেবল এটুকু জানাতে পারছেন যে যৌনতা প্রাচীন পম্পেই নগরীতে কোন ঢাকগুড়গুড় বিষয় ছিল না। ( তবে ভেবে মজাও পেলাম যে বাইবেল এবং কোরান যারা রচনা করেছে তারা যদি পম্পেই নগরীর এই কামবহুল জীবনযাত্রা এবং ভিসুভিয়াসের আগুনে তাদের ধ্বংস হয়ে যাবার কথা জানত তাহলে ওল্ড টেস্টামেন্টে যেমন সদোম এবং গোমোরাহর কথা এসেছে অবধারিত ভাবে বাইবেল ও কোরানে পম্পেইয়ের কথা আসত এবং সেখানে থাকত মানুষের অসদাচরণ ও দয়ালু ঈশ্বরের ক্রোধের কথা! )

522887_10152234406905497_1798359265_n

দুঃখজনকভাবে পম্পেই নগরীর সবচেয়ে চমৎকার ভাবে সংরক্ষিত চিত্রকর্মগুলো নেপলস পুরাতত্ত্ব জাদুঘরে আছে, তেমন ভাবে এখানে অধিবাসী মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মৃতদেহগুলোর অধিকাংশই একই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। সেখানে যাওয়া হয়েছিল পম্পেই ভ্রমণের একদিন পরেই, কিন্তু সেই সংগ্রহশালা তেই বিশাল যে তার জন্য আলাদা পোস্ট দিলেই সুবিচার করা হবে মনে হচ্ছে। যদিও এখানেই দেখা মিলল কয়েকজন দুর্ভাগা পম্পেইবাসীর, প্রায় সকলেরই মুখ এবং চোখ হাত দিয়ে ঢাকা, মনে করা হয় বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপ থেকে নাক এবং চোখে বাঁচাতেই তারা এই পন্থা অবলম্বন করেছিল এবং এইভাবেই ভয়াল মৃত্যুবরণ করে।

150124_10152181227390497_328559027_n

কিন্তু আধুনিক গবেষণায় মনে করা হচ্ছে আগ্নেয়গিরি লাভা, ছাই, বিষাক্ত গ্যাস এগুলো আসার অনেক অনেক আগেই উত্তাপেই এই মানুষগুলি মারা গিয়েছিল, শহরের তাপমাত্রা তখন প্রায় ৩০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ছোঁয়ার কথা, সেই উত্তাপে মানুষের বাঁচার কথা নয়। হয়ত উত্তাপ থেকে রক্ষা পেতেই তারা চোখ-মুখ ঢাকবার চেষ্টা করেছিল। কেবল একজনের মৃতদেহ দেখলাম যার মুখমণ্ডল পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল।

421335_10152178797090497_1335069908_n

কী করুণ একটা দৃশ্য! আমার মতই একজন মানুষ, দেখে মনে হয় পাথর কুঁদে তৈরি, একটু ঘুমিয়ে পড়েছে, জীয়ন কাঠির ছোঁয়া পেলেই জেগে উঠবে, কিন্তু তার বয়স ২০০০ বছর! অত আগে কী পরিমাণ আতংক এবং আকুতি নিয়ে পরপারে চলে গেছিল বেচারা! হয়ত ঘরে ফিরে এসেছিল বৌ-বাচ্চাকে সাথে নিয়ে যেতে, হয়ত অপেক্ষারত প্রেমিকা ছিল দুয়ারে, হয়ত বা সে ছিল কোন ভিনদেশী বণিক। কোন পরিচয়ই আজ আমাদের কাছে মুখ্য নয়, সে ভিসুভিয়াসের এক নির্মম শিকার, ব্যস, এটুকু জেনেই আমরা চলে যায় পরের দর্শনীয় বস্তুর সামনে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছাই এবং লাভার স্তর থেকে মানবদেহের এক কাস্টগুলো বাহির করা হয়েছে, ধারণা করা হয় উত্তাপে মারা যাবার পর, লাভা এসে পৌঁছানোর অনেক আগেই ছাই এবং বৃষ্টির জলের বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মৃতদেহগুলো অনেকটা শিলীভূত হতে গিয়েছিল, সেখান থেকে পরে আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদরা কাস্টগুলো তৈরি করেছেন।

522956_10152189632630497_1684256476_n

পম্পেই ইট-পাথরের মৃত নগরী হলেও সেখানে কিছু সবুজের ছোঁয়া আছে সবখানেই, বিশেষ করে প্রাচীন আবহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উদ্যানগুলোতে সেই সময়ের গাছরোপণ করেই, এছাড়া বড় গৃহগুলোর ভিতরের এক চিলতে বাগান তো আছেই।

561853_10152189968615497_213106425_n

সুযোগে তালাবদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেনে উকিও দেওয়া হয়ে গেল। সেই সাথে জানা গেল সেই আমলের জলসরবরাহ এবং সেচ ব্যবস্থা নিয়ে। প্রথম নদী থেকে, পড়ে কুয়া খুড়ে এবং শেষের দিকে পাহাড়ি ঝরনা থেকে তারা জলসরবরাহ বজায় রাখার চেষ্টা করত, ধনীদের বাড়ীতে জলসঞ্চয়ের বাহুল্যময় ব্যবস্থা ছিল বটে, কিন্তু সাধারণ জনগণ রাস্তার মোড়ে অবস্থিত কল থেকেই পানীয় এবং ব্যবহারে জল সংগ্রহ করত। তেমন কল থেকে আমরাও তৃষ্ণা নিবারন করলাম, যদিও কলটি একেবারে আধুনিক, কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থা সেই দুই হাজার বছরের পুরনো!

67125_10152189631045497_397054625_n

পম্পেই নগরীর জনসংখ্যা দশ হাজার হলেও ধারণা করা হয় ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুতপাতের সময় এখানে হাজার বিশেক লোক জমায়েত হয়েছিল, কারণ রোমানদের কাছে পম্পেই অবকাশকেন্দ্র হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, গড়ে উঠেছিল রোমান অ্যারেনা, গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ভাষণ সবই চলত এইখানে।

561743_10152302462570497_1516934909_n

483528_10152302462280497_1236777433_n

২৩ আগস্ট ছিল রোমানদের অগ্নিদেবতা ভুলকানালিয়ার উৎসবের দিন, দেবতাকে নৈবদ্য দেবার একদিন পরেই আগুনের রোষেই ধ্বংস হয়ে গেছিল পম্পেই নগরী। অবিশ্বাসে কি অসহায় মানুষগুলো শাপশাপান্ত করেছিল দেবতাদের, নাকি মেনে নিয়েছিল নিয়তির অমোঘ লিখন?

525035_10152182184960497_315004921_n

পরিশেষে বলতেই হয়- পম্পেই দর্শন নিঃসন্দেহে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা, একই সাথে বর্তমান এবং অতীতের অভিজ্ঞতা হয় এখানে গেলে। বিমুগ্ধ হতে হয় প্রাচীন কালের শিল্পকলা, কারিগরিবিদ্যা, জীবনচর্চার নিদর্শন দেখে, একই সাথে দুঃখে মন ভরে ওঠে সেই দুঃখী মানুষগুলোর স্মরণে। বিশাল শহরটির অনেক গলিঘুপচির কথা এযাত্রা বাদ পড়ে গেল, বিশেষ করে নেপলসের জাদুঘরে সংরক্ষিত সেরা শিল্পনিদর্শনগুলোর বর্ণনা অন্য পোস্টে দেবার আশা রাখি।

546886_10152183294940497_447539518_n

( পম্পেইয়ের নাম প্রথম শুনেছিলাম সেবা প্রকাশনী অনুদিত লর্ড লিটনের লাস্ট ডেজ অফ পম্পেই বই থেকে, পোস্টটির নাম সেখান থেকেই ধার নিলাম।

এই পোস্টটি আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ, লেখক ও পর্যটক তানিম এহসান ভাইয়ের জন্য। )


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিগুলো সুন্দর, বর্ণনাও বরাবরের মত চমত্কার। ইটালি যাওয়া হয়েছে, কিন্তু পম্পেই যাওয়া হয়নি। আমি ফটোগ্রাফার ভালোনা, তাই ভ্রমন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়না, আপনার কাছ থেকে শুনেই শান্তি।

উত্তম জাঝা!

''দিবাকর''

তারেক অণু এর ছবি

আরে না, নিজের ভ্রমণের পোস্ট দিন!

শাব্দিক এর ছবি

আসলেই মনে হচ্ছে ইতালি আলাদা কোন গ্রহ। ছবি ও লেখা বরাবরের মতই দারুণ!

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম...
দেখি প্রথম হইতে পারি কিনা হাসি

তারেক অণু এর ছবি

প্রায় প্রথম চাল্লু

savage_mountain এর ছবি

প্রথম ছবিটা ........... nice legs!!!!!!!
চোখ টিপি

তারেক অণু এর ছবি
অবনীল এর ছবি

দারুন অণু! অপূর্ব ছবি এবং ভ্রমন বর্ণন। লেখার বদৌলতে সামান্যভাবে হলেও ঘুরে আসার অনুভূতিটা পেলাম। চালিয়ে যা! হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

তারেক অণু এর ছবি

বেশী ছোট হয়ে গেছে, তারপরও পম্পেই নিয়ে সব লেখা তো আর স্মভবনা।

CannonCarnegy এর ছবি

অসাধারণ লাগলো।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
নেপলসের জাদুঘরের পোষ্ট দিয়ে দেন তাড়াতাড়ি। হাসি

তারেক অণু এর ছবি
রু এর ছবি

Tony = খোকন
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো এত সুন্দর একটা লেখার জন্যে। যারা ধৈর্য আর অক্লান্ত পরিসম করে এই শহরটাকে পুনরুদ্ধার করলো তাদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানাই।

তারেক অণু এর ছবি

এই শহরটাকে পুনরুদ্ধার করলো তাদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানাই। চলুক

সুজন চৌধুরী এর ছবি

দারুণ! ধন্যবাদ তারেক অণু।

তারেক অণু এর ছবি

কার্টুন কোথায়?

স্যাম এর ছবি

পাচঁ তারা -
এ পোস্টের ছবিগুলো তুলনামূলক ঝকঝকে দেখাচ্ছে - ঘটনা কি? কোন নতুন টেকনিক?

তারেক অণু এর ছবি

মনে হয় স্যাম দা ইম্যাক ব্যবহার করছেন আজকাল খাইছে

আজব প্রাণী এর ছবি

আর কত??? তারেক অনুর বিবেকের কাছে প্রশ্ন।

তারেক অণু এর ছবি

কী কত?

বন্দনা এর ছবি

ছবিগুলা দারুণ, কেবলমাত্র মানুষের ছবিগুলা যে আসলেই মানুষের এটা ভাবতেই গা কেমন করে উঠলো।

তারেক অণু এর ছবি

সত্য। খুব অন্য রকমের একটা অভিজ্ঞতা

মনি শামিম এর ছবি

গুল্লি এত সুন্দর লেখা আর এত অনন্য সব ছবি, চোখ জুড়িয়ে যায়। আমি নেপোলি যাচ্ছি এই ২৪ তারিখ। এখন সমানে জায়গা নির্বাচন করে যাচ্ছি যেখানে যেখানে যাবো, একটা লিস্ট বানাচ্ছি। তোর ছবি দেখার পর মনে হচ্ছে পম্পেই আর ভিসুভিয়াস যাবার আর দরকার নেই, দেখা তো হলই, বরং নগর কেন্দ্রের ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবিগুলিই তুলে আসি! সালেরনো নেপোলির কাছেই। ওখান থেকে আমালফি কোস্ট দেখে আসব নাকি তাও ভাবছি, যদিও মনে হচ্ছেনা এ যাত্রায় তা আর সম্ভব হবে! এখন খুঁজছি ঠিক কোন জায়গা থেকে নেপোলি সবচাইতে ভাল দেখা যায়! তুই তো বললি ভিসুভিয়াস, কিন্তু আমার তো আর তোর মতন ৩০০ এম এম নাই। আমার ৩৫ আর ৫০ ই ভরসা। দেখি আরও ঘেঁটে ঘুঁটে।

-মনি শামিম

তারেক অণু এর ছবি

পম্পেই মাস্ট

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, দারুণ সব ছবি আর বর্ণন। চলুক

তারেক অণু এর ছবি
দারুচিনি  এর ছবি

আপনি ভীষণ সাহসী লোক, আমি মৃত দেহ গুলোর ছবি তুলতে পারিনি ! আতঙ্কে ছিলাম, পম্পেই ঘুরে আসার পর পুরো ১ মাস দুঃস্বপ্ন দেখতাম ! গলিত লাভায় কুকড়ে যাচ্ছি !
অসাধারণ তো আপনি লিখেন, তাই একসাথে মাল্টিপ্লিকেশন ফ্যাক্টর যোগ করে দিলাম !! ঘুরতে থাকুন এইভাবে! দেঁতো হাসি
দারুচিনি

তারেক অণু এর ছবি

খুব কষ্টকর ছিল সেই দেহগুলো দেখা-

অমি_বন্যা এর ছবি

অসাধারণ পোস্ট। তবে পাথরের মূর্তির মত হয়ে যাওয়া মৃত মানুষগুলিকে দেখে খারাপ লাগলো।

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

স্পর্শ এর ছবি

চলুক আপনার সঙ্গে পৃথিবীটা ঘুরে ঘুরে দেখছি।

আচ্ছা ছবি তোলার পরে কোনটা কিসের ছবি মনে রাখেন কীভাবে? আমি তো কিছুদিন পরে পুরাতন অ্যালবাম খুলে আর কোনটা কী তুলেছি ঠাওর করতে পারি না! যে কারণে ছবিব্লগ পোস্ট করা হয় না মন খারাপ


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তারেক অণু এর ছবি

সাধারণত জায়গা অনুযায়ী ভাগ করে রাখি আলাদা আলাদা ফোল্ডারে, আর ভুলে গেলেও ছবি দেখেই তো মনে পড়ার কথা খাইছে

কাজি মামুন এর ছবি

ভূগোল বইয়ে পম্পেইয়ের কথা আমরা সবাই পড়েছি। কিন্তু সে তো দু'চার লাইনের ছিটেফোঁটা বিবরণ। এই লেখায় পম্পেইকে সত্যি সত্যি আবিষ্কার করলাম।
তবে দশ হাজার লোক, ৩৫ লুপানার আর ৭১ পুরুষের হিসাবটা ধরতে পারলাম না, অণু ভাই।

কি হবে পাগলা যদি আবার ক্ষেপে উঠে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে দেখছিলাম, ন্যাশনাল ইয়োলোস্টোন পার্কের মত অনেক টুরিস্ট স্পট আছে, যা সুপার-আগ্নেয়গিরির আশংকাযুক্ত।

এভাবে নাম লিখলে কি কেউ অমর হতে পারে?

দারুণ একটা কথা। সবচেয়ে বড় কথা হল, শুধু দেয়ালের লিখন নয়, আমাদের দেশে ইতিহাসের পাতায়ও অশোভন নাম লিখন চলছে, যার মাধ্যমে ঐ পাতাটিকেই শুধু কালিমালিপ্ত করছে, অমরতাপ্রাপ্তি তাতে ঘটছে না মোটেই।

তারেক অণু এর ছবি

দশ হাজার হচ্ছে মোট জনসংখ্যা, আর ৭১ সক্ষম পুরুষ প্রতি একটি লুপানার। নারীদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় নি এখনো

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়েছি আগেই; ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ পিপি দা

মাজহার এর ছবি

অমানবিক।।। গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

এই ভাবে নাম লিখলে কী কেউ অমর হতে পারে? মহাকালের বুকে নিজের নামকে অক্ষয় করে রাখা কি এতই সহজ? একই সাথে ঘৃণা এবং করুণা হল টনির প্রতি।

পারে বৈকি অণু ভাই, এবং শুনতে খারাপ লাগ্লেও -- এমনই সহজ বটে! হা হা হা......... হাসি

টুরিস্ট স্পটে নিজের নাম লিখে রাখার এই বদভ্যাসটা বা 'অমর' হওয়ার বাসনাটা নতুন কোন ব্যাপার না বা 'টনি' সাহেবকে দিয়েও এর শুরু না। মানব ইতিহাসে ট্যুরিজমের জন্মলগ্নের সাথে সাথেই বোধহয় এরও জন্ম। ২-১০ বা ৫০ বছর নয়, আধুনিক কালের টম-ডিক-হ্যারি বা যদু-মধুও না, মরুভূমির বিজন গহীণে মিশরের ফারাওদের ভূগর্ভস্থ সমাধিসৌধপল্লী 'ভ্যালি অফ দ্য কিংস'-এর দেয়ালে সেই প্রায় ৪ স-হ-স্র ব-ছ-র আগে ট্যুরিজম শিল্পের পাইওনিয়াররাও এই একই কাজ করে গেছেন নির্বিকার চিত্তে। নিজেদের নাম উৎকীর্ণ করে গেছেন গ্রীক, লাতিন, ফিনিশীয়, সিপ্রিয়ট, লাইসিয়ান, কপ্টিক সহ আরো বেশ এমন কিছু ভাষায় যার কোন কোনটার সম্ভবত অস্তিত্ত্বই আর নেই এখন। এই মানুষগুলি কিন্তু এখন ঠিক এই কারনেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন - অমর হয়ে গেছেন। নিজেদের নাম তারা ঐ ভাবে লিখে না রাখলে ঐ সব অখ্যাত মানুষগুলির কথা এখন কেউ জানত না, আরও কোটি কোটি নাম না জানা পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ আম মানুষের মতই তারাও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতেন ৪ হাজার বছর আগেই। তারা তো আর ফারাও-টারাও ছিলেন না! কিন্তু এখন তারা প্রত্নতাত্ত্বিক আর নৃতত্ত্ববিদদের গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে গেছেন, ইতিহাসের পাতায় অনন্তকালের জন্য নিজেদের নাম উঠিয়ে ফেলেছেন। তাদের জন্য তাদের কারও কারও মৃত ভাষাগুলিও হয়তো ইতিহাসে বুকে বেঁচে আছে এখন। এই 'মূর্খ অসভ্য বর্বর' ( হাসি ) নাম বা গ্রাফিতিগুলি মুছে ফেলা তো দূরের কথা, এগুলি এখন ওখানকার ফারাওদের মমি বা মহামূল্যবান ধনরত্ন, শিলকর্ম আর প্রত্নসামগ্রী (তুতানখামুনের অতুলনীয় ধনরত্ন এখানেই পাওয়া গেছিল) বা প্রত্ন-নিদর্শনের মতই মনে হয় সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে! এগুলির গুরুত্ব নেহাৎ কম না প্রত্নতত্ত্ববিদ আর ইতিহাসবিদদের কাছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন -- "মহাকালের বুকে নিজের নামকে অক্ষয় করে রাখা এতই সহজ বৈকি !!!" হা হা হা !

এবার ভাবুন তো চার হাজার বছর পরে "টনি" বাবুও হয়তো এমনই 'অমর' হয়ে যাবেন হয়তো, কে জানে! হাসি

যাজ্ঞে, সমালোচনা বা এমনকি দ্বিমতও না, আপনার বক্তব্য বুঝেছি আসলে। একটু ভিন্ন আলোকে মজা করলাম আরকি!

দারুন লেখা হয়েছে! চলুক

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

আপনার অভিজ্ঞতা শুনে ইতালিয়ান অভিযাত্রী এবং মিশর বিশেষজ্ঞ বোলজানোর কথা মনে পড়ছে, সেও এক সমাধিতে ঢোকার আগে নিজের নাম খোদাই করে রেখেছিল।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

দারুন অনুদা। কি সুন্দর সারা পৃথিবী আমাদেরও ফ্রি ফ্রি দেখিয়ে দিচ্ছেন। চোখ টিপি
লাস্ট ডেজ অফ পম্পেই বইটা পড়ে খুব খারাপ লেগেছিল। এখন সত্যি সত্যি মৃত মানুষগুলো দেখতে পেলাম। ভীষণ কষ্টকর।
লেখা আর ছবি বরাবরের মতই ফাটাফাটি। হাততালি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তারেক অণু এর ছবি

এহ, ফ্রি ফ্রি বিশ্ব দেখতে চাচ্ছে, কে রে বাবা?

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অণু, ঠিক করেছি আপনাকে “পায়ের তলায় সর্ষে” ডাকব । খুব ভাল লাগল এবারের পোস্ট...কত পুরানো শহর, কত মানুষের পায়ের চিহ্ন !

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারেক অণু এর ছবি

কতদিন সর্ষে খাই না, আর আমি পায়ের তলায় ঢেলে দিতে চাচ্ছেন! কেন?

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

সর্ষে সচরাচর খাওয়া হয় না...খাওয়া হয় সর্ষের তেল । আর যারা সারাদিন টই টই করে ঘুরে, তাদেরকে বলা হয় “পায়ের তলায় সর্ষে” । এই জাতীয় মানুষদের কাজই হল যাযাবর জীবন যাপন, ছবি তোলা, ব্লগ লেখা আর অন্য মানুষদেরকে ঈর্ষান্বিত করা ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারেক অণু এর ছবি

সর্ষের তেল দিয়ে মাখা আলু ভর্তা, সর্ষে-সজিনা আর সর্ষে ইলিশ খাবার জন্য দেশে ফিরছি দেঁতো হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক
মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তারেক অণু এর ছবি
তুলিরেখা এর ছবি

একটা দেখলে আরেকটা ফ্রী! হাসি
তারেক অণুর পোস্ট পড়লে বিশ্বভ্রমণ ফ্রী। হাসি
সইত্য কইরা কন, আপনে কি ইন্টারগ্যালাক্টিক মেহমান? চিন্তিত

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারেক অণু এর ছবি

মস্করা কইরেন না তো তুলিদি, জীবনের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাহিরেই যেতে পারলাম না আর ইন্টারগ্যালাক্টিক ওঁয়া ওঁয়া

রংতুলি এর ছবি

বাহ! বেশ ঘুরে এলাম পম্পেই থেকে। হাসি

আমার শেষের লেখাটায় কেয়ামতের ভবিষ্যৎবাণী, পম্পেই, ভিসুভিয়াস এসব লিখতে গিয়ে ফেসবুকে দেখা তোমার এই ছবিগুলোর কথাই মনে আসছিলো। এখন বিস্তারিত পোস্ট পেয়ে আরো অনেক কিছু জানা হলো। খারাপ লাগছে হতভাগ্য মানুষগুলোর কথা ভেবে!

মাঝে মাঝে ভাবি তারেক অণু না থাকলে আমাদের কি দশা হত, কত কি যে অদেখা/অজানাই থেকে যেত! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তারেক অণু এর ছবি

এত জেনে কী লাভ হইল, পিথিমি শ্যাষ শুক্কুরবারে খাইছে

বাওয়ানী এর ছবি

হইলো না হইলো না, মায়ান ব্যাটারা ভুয়া। কোরানে আছে কেয়ামত হবে বৃহস্পতিবারে আর তারিখ থাকবে ১০ই মোহরাম না ১লা মোহরাম জানি। কোথায় জানি পড়ছি, রেফারেন্স দিতে পারবো না। মায়ানরা কি কোরানেত্তে বেশি বুঝে? শয়তানী হাসি

তারেক অণু এর ছবি

তা তো বুঝেই! তারা তো পিরামিড, মানমন্দির, ক্যালেন্ডার বানাইছে ৩০০০ বছর আগে শয়তানী হাসি কোরান তখনও সপ্ত আসমানের উপরে

রংতুলি এর ছবি

ঠিককথা! আর সময় নাই, আসো এইবার কান্দি... ওঁয়া ওঁয়া

তারেক অণু এর ছবি

নাহ, নাইট কিলাবে যাবার চিন্তা করছি মন খারাপ মৃত্যু নাচের মাঝে হউক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দারুণ অণুদা!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তারেক অণু এর ছবি
প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

সত্যিই তোমার পোষ্টগুলো থেকে ফ্রিতে কত জায়গাই না ঘুরলাম। গুরু গুরু

প্রথম প্রথম রাগ হত, এখন ভালই লাগে এটা ভেবে যে, নিজে কবে যাওয়া হবে তার তো কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। তবু তোমার অসাধারন ছবি আর লেখার হাত ধরে অনেক জায়গা ঘোরা হয়ে যাচ্ছে।

পাথর মানুষগুলোর ছবি দেখে মন খুব ভারি হয়ে গেল।
২০০০ বছর আগের সেই হতভাগ্য মানুষগুলোর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা

একটা খটকা লাগল শুধু। যাদের এত সুন্দর জল সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল, তাদের আরেকটু উন্নত বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকাটা বাঞ্ছনীয় নয় কি?

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই থাকা উচিত ছিল, আমিও খুব অবাক হয়েছিলাম

ধুসর জলছবি এর ছবি

দারুন জায়গা। যদিও পোস্ট টা পড়ে মানুষগুলোর জন্য খুব কষ্ট হল।

তারেক অণু এর ছবি
রনি এর ছবি

খুবই ভাল লাগলো দাদা। হাসি

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো অনু! চলুক

আসমা খান

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ আপা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি পম্পে না গিয়েও আমার পম্পে ঘোরা হয়ে গেলো । ধন্যবাদ অনুদা হাসি গুরু গুরু

ইয়জা

তারেক অণু এর ছবি

কী বলে !

অতিথি লেখক এর ছবি

# প্রিয় তারেক অণু ভাই, শুভেচ্ছা আপনাকে..খোলা জানালার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে বিশ্বের সব সুন্দর সুন্দর স্থানগুলো ভ্রমন করানোর জন্য...দুর্দান্ত পোস্টটির জন্য রইলো আন্তরিক ধন্যবাদ।

#একটি একটি ছবির মধ্য দিয়ে যখন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল আসলে একদম আমার সামনেই বাস্তব ছবিগুলো দাড়িয়ে আছে। অসম্ভব রকমের সুন্দর..প্রিয় অণু ভাই..একটি কথা কি দেখে মনেই হয়না এতো পূর্বে এতো স্মার্টলি সবকিছুর ব্যবস্থা করা ছিল। আরো কতো কিছু যে লুকিয়ে আছে কতোস্থানে কে জানে!

#আপনি একটি একটি করে পোস্ট দিবেন আর আমরা সকলেই আবারো চলে যাব অনেক অনেক কাল পূর্বে..কোন সুদূরে...
#ভাল থাকুন। উত্তম জাঝা!

আশরাফুল কবীর।

তারেক অণু এর ছবি

এবার ভবিষ্যতে যেতে হবে

অতিথি লেখক এর ছবি

#জো হুকুম- হাসি

আশরাফুল কবীর

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বেঁচে থাকলে একবার ইতালী যাবোই যাবো, তখন এদিকটাতেও একটা ঢুঁ মেরে আসতে হবে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

লীলেন দা বলেছিল ভিসুভিয়াসের আঁচে এক কেটলি চা খাবার ইচ্ছে আছে তার, লন একসাথে হয়ে যাবে সব।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক মুগ্ধতা!


_____________________
Give Her Freedom!

তারেক অণু এর ছবি
সৈয়দ নাঈম গাজী এর ছবি

পাঁচতারা…
লেখাটা পড়তে পড়তে পম্পেই কিছুটা ঘুরা হয় গেল আর বাকিটা বেঁচে থাকলে সশরীরে দেখার ইচ্ছা আছে।
অনুদা আপনার লেখাগুলো পড়ে খুব চিন্তায় আছি আমি কী ভবঘুরে হয়ে যাব…?
মাঝে মাঝে বেড়িয়া পড়তে ইচ্ছে করে… এখন কী করি…?

তারেক অণু এর ছবি

আমিও ভবঘুরে হইতাম চাইইইইই

অরফিয়াস এর ছবি

ওহে, পম্পেই ঘুরেছ ভালো কথা, দেশে এসে কোথায় কোথায় ঘুরবে তার লিস্টি তৈরী তো ? চোখ টিপি

( তবে ভেবে মজাও পেলাম যে বাইবেল এবং কোরান যারা রচনা করেছে তারা যদি পম্পেই নগরীর এই কামবহুল জীবনযাত্রা এবং ভিসুভিয়াসের আগুনে তাদের ধ্বংস হয়ে যাবার কথা জানত তাহলে ওল্ড টেস্টামেন্টে যেমন সদোম এবং গোমোরাহর কথা এসেছে অবধারিত ভাবে বাইবেল ও কোরানে পম্পেইয়ের কথা আসত এবং সেখানে থাকত মানুষের অসদাচরণ ও দয়ালু ঈশ্বরের ক্রোধের কথা! )

শয়তানী হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

স্যাম এর ছবি

বনানী কনফার্মড - তাইনা অণু দা? চোখ টিপি

তারেক অণু এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি

সব পিলানা রেডি জানুয়ারির, ফেবুর প্ল্যান সাক্ষাতে হবে

অতিথি লেখক এর ছবি

এতো সুন্দর ছবি অ্যাঁ

তারেক অণু এর ছবি

জায়গাটাই সুন্দর এবং একইসাথে বিমর্ষ

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন।।।। যদিও অনেক দেরিতে পড়লাম কিন্তু পড়ে মনটা কেমন হারিয়ে গেল, লাস্ট ডেইজ অফ পম্পেই যখন পরেছিলাম তখন মাত্র ক্লাস ৭ এর ছাত্রী কিন্তু মনে আছে কি অস্বাভাবিক এক কষ্ট- ভালবাসার মিশ্র অনুভুতি ছিল কিছুদিন আপনার লেখাটা পড়েও সেইরকম একটা অনুভুতি মনকে নাড়া দিয়ে গেল। শুধু মনে হচ্ছে ইস যদি আমিও কোনদিন এইরকম পৃথিবীটা ঘুরে দেখতে পারতাম!!!!!!!! গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই পারবেন। আহা , অনেক পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন বইটার কথা বলে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।