কুতবেতিন বারান, জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া কুর্দি ভাই আমার

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: রবি, ৩০/১২/২০১২ - ৮:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কুতবেতিন বারানের সাথে আমার প্রথম দেখা ইউনিভার্সিটির ল্যাবে, ২০০৩ সালের বসন্ত তখন। গলায় মোড়ানো লাল-সাদা আরব স্কার্ফ, হাতে ভারী ভারী দুখানা বই, মুখে উচ্ছল হাসি আর চোখে খাঁটি মানুষের সারল্য। দেখেই খুব আপন মনে হয় এমন এক ব্যক্তিত্ব সে, (যদিও আরবদের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা খুব সুবিধার না হওয়ায় সহসা এগোনো হয় না )। জিজ্ঞাসা করলাম নাম কী বড় ভাই( আমার চেয়ে ঢের বড় বয়সে)? বাড়ী কোন দেশে? উত্তর মিলল- নাম বারান, বাড়ী কুর্দিস্তানে।

কুর্দিস্তান! সেটা কোথায়? তখনই বারান বলল এক সময়ের কুর্দিস্তান তো আর নেই, এখন সেটা ছড়িয়ে আছে তুরস্ক, ইরাক, ইরান, সিরিয়া আর আর্মেনিয়ার মাঝে। আমার বাড়ী তুরস্কের কুর্দিস্তানে, দিয়ারবাকির শহরে, যা কুর্দিস্তানের রাজধানী।

ততদিন পর্যন্ত কুর্দি জাতি সম্পর্কে আমার জ্ঞান সাদ্দাম হোসেনের জ্ঞাতি ভাই কেমিক্যাল আলীর ইরাকের কুর্দিদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা আর তালিসমানের নায়ক, ক্রুসেড বিজয়ী বীর সালাদিন যে একজন কুর্দি এটুকু জানার মাঝে সীমাবদ্ধ। কুর্দি জাতির ইতিহাস যে আব্রাহামিক ধর্মগুলোর চেয়েও প্রাচীন, ইসরায়েলে যে কয়েক লক্ষ কুর্দি থাকে – সেই সম্পর্ক জানা ছিল না কিছুই। তবে কুর্দি জাতি সম্পর্কে জানার চাইতে মূলত বারানের বন্ধুবৎসলতা জন্যই মূলত দ্রুত সখ্য গড়ে উঠল আমাদের মাঝে। আমাদের এক ক্লাসমেট ছিল আর্মেনিয়ার, সে যেমন ইয়েরেভেন এবং সেখানের বাংলাদেশ মহল্লার গল্প বলত, আমি বলতাম আরমানিটোলা আর আর্মেনিয়ান গির্জার কথা, দেখি মুখ কালো করে বলেছে- এক তুর্কি ব্যাটাকে দেখলাম মনে হল ক্লাসে! তো? আরে তুর্কিরা আমাদের মানে আর্মেনীয়দের জাত শত্রু, আমাদের দেশ দখল করে রেখেছে, ১৯১৫ সালে পনের লক্ষ আর্মেনীয়কে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে অথচ আজ পর্যন্ত সেই অপরাধ স্বীকারই করে নি, ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক! আগ বাড়িয়েই বললাম, বারান একজন কুর্দি, আর খুবই চমৎকার মনের মানুষ। আর্মেনীয় তরুণীর মুখভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটল দ্রুত, বলল, ও কুর্দি নাকি, আমার দেশেও কুর্দিরা থাকে, কিন্তু তারা নিজেদের ভাষায় লেখাপড়া করতে পারে না।

নিজের ভাষায় লেখাপড়া করতে পারে না? এটা কী ধরনের কথা? বারানকে প্রশ্ন করতেই সে খুব নির্লিপ্ত ভাবে বলল- হ্যাঁ, তুরস্কে কুর্দি ভাষায় লেখা পড়া নিষিদ্ধ।

তাহলে তুমি পড়েছ কোন ভাষায়?

কেন, তুর্কিতে।

আর মায়ের ভাষা?

সেটাতে বাড়ীতে বলা জন্য, আমাদের সেই ভাষার কোন স্বীকৃতি নেই, কোন অধিকার নেই।

প্রবল বই পড়ার নেশা বারানের, কাহলিল জিবরানের পংক্তিমালা দিয়ে অসংখ্য সন্ধ্যা কাটিয়েছি আমরা, নেরুদার উপমা, চে-র রোজনামচা, গোর্কির গল্প, গ্যেটের লেখনী, হাইনের কবিতা সব কিছুই আসত ঘুরে ফিরে। বারান খুব বলত ইয়াসের কামালের কথা, তুরস্কেবাসী এই কুর্দি সাহিত্যিক অনেক অনেক দশক ধরেই নোবেল সাহিত্য পুরষ্কারের দাবীদার (বর্তমানে ৮৯ চলছে বয়স!), কিন্তু বাধ্য হয়ে লিখেছেন তুর্কি ভাষাতেই। যেবার ওরহান পামুক নোবেল পুরস্কার পেলেন সেবার তুর্কি লেখক শুনেই সাহিত্যবোদ্ধারা ভেবেছিল ইয়াশের কামালই পাচ্ছেন সেই বছরের পুরস্কার। প্রিয় লেখক পামুকও যে কুর্দিদের আন্দোলনের প্রতি, আর্মেনিয়ার গণহত্যার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন সে কথা জেনেছিলাম বারানের কাছে থেকেই।

কুর্দি ভাষায় বারান শব্দের মানে বৃষ্টি, কী চমৎকার একটা নাম! কিন্তু এই নাম স্কুলে মায়ের ভাষায় লেখার অধিকার ছিল না শিশু বারানের! কতটা কষ্টময় তাদের শৈশব, কৈশোর! এ যেন বাঙ্গালীর উপরে উর্দু চাপিয়ে দেবার পরে সফলতার ইতিহাস, ১৯৫২ না আসলে কী আমিও বারানের মতই বিজাতীয় ভাষায় লিখতাম?

তুরস্কে ( এবং অন্য দেশগুলোতেও, তবে এদের মধ্যে ইরাকে তাদের অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভাল) তাদের বৈষম্যের শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। অন্য সব কিছু ছেড়ে দিলাম, তুরস্কের অ্যাটাকিং ফুটবলের ভক্ত সারা বিশ্ব, জার্মান জাতীয় দলে পর্যন্ত একাধিক তুর্কি বংশোদ্ভুত খেলোয়াড় আছে বর্তমানে, অথচ আজ পর্যন্ত তুরস্কের জাতীয় দলে কি একজন কুর্দি খেলোয়াড় সুযোগে পেয়েছে? তেমন খেলোয়াড় আছে অনেক, কিন্তু অন্য দমন করে রাখার অসুস্থ গর্বে তুর্কি ফুটবলাররা এবং তাদের নিয়ন্ত্রকরা দলে কোন কুর্দিকে জায়গা দিতে নারাজ, খুব খারাপ লেগেছিল শুনে যে বিশ্বকাপের মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড় হাকান শুকুরসহ অনেকেই ভয়াবহ বিরোধী কুর্দি খেলোয়াড় দলে নেবার বিষয়ে।

সময় পেলেই বারান শোনাত দিয়ারবাকিরের কথা, সেখানে রসময় বিশালাকার তরমুজ আর বিখ্যাত সীমানা প্রাচীরের কথা, যা চীনের প্রাচীরের পরে বিশ্বের ২য় দীর্ঘতম। বুঝতাম খুব হোমসিকনেস ঘিরে ধরেছে তাকে, একদিন প্রশ্ন করলাম- কবে যাচ্ছ দিয়ারবাকির? আমাকে জানিও যাবার আগে। যেন পাঁচ টনি ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়েছে এমন একটা ভঙ্গী করে খুব অস্ফুট ভাবে বারান বলেছিল- কোন দিনই না।

কোন দিনই না মানে?

মানে আমি কোনদিনই সেখানে ফিরতে পারব না।

কেন গ্রীষ্মের ছুটি আছে, তখন কিছুদিন কাজকর্ম করে পয়সা জমিয়ে ঘুরে এস মাসখানেকের জন্য।

অণু, তুমি বুঝছ না, আমি জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলাম, আজকে আমি জার্মানির নাগরিক, সারা বিশ্ব আমার জন্য খোলা এই পাসপোর্টে, কিন্তু সেখানে উল্লেখ আছে যে তুরস্কে আমার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। দিয়ারবাকির আমার যাওয়া হবে না কখনোই।

রাজনৈতিক আশ্রয় কেন চেয়েছিলে?

নানা কারণে অতিষ্ঠ হয়ে কুর্দি মুক্তিকামী গেরিলাদের সাথে যোগ দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে চলে গেছিলাম, তুর্কি পুলিশের সাথে যুদ্ধ করে রাইফেল নিয়ে, পদে পদে তাড়া করেছে মৃত্যু, কত সহযোদ্ধা মারা গেছে, এখনো চলেছে এই যুদ্ধ প্রতিদিন। কুর্দি তরুণেরা প্রতিবাদে, ক্ষোভে, দুঃখে দিন বদলের আশায় চলে যাচ্ছে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে, কিন্তু ভ্রূক্ষেপ নেই বিশ্ব মানবতার তাদের নিয়ে। এক পর্যায়ের মাথায় হুলিয়া নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলাম। দুয়ার খুলে বিশ্ব আমার কাছে এল, কিন্তু ঘরে ফেরার পথ হয়ে গেল চিরতরে রুদ্ধ।

তারপর?

জার্মান ভাষা শিখলাম পড়ালেখার জন্য, এখন ডিগ্রীর শেষ পর্যায়ে। চেষ্টা করি এখান থেকে কিছু একটা সংগঠিত করার। জান, আমি ছোট থাকতে সবসময় মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম, কোরান পড়তাম প্রতিদিন কিন্তু আমার পরিবার ছিল সেক্যুলার, তাদের ধর্ম নিয়ে কোন আলাদা ধরনের মাথাব্যাথা ছিল না, বড় ভাইদের আমি বলতাম- তোমার কম্যুনিস্ট, দুষ্ট লোক, তোমরা আল্লাহ্‌-খোদা মান না। ভাই হাসত, বলত একটু বড় হ, পড়তে শেখ, বুঝতে শেখ- দেখবি তুইও আমার মতই চিন্তা করছিস। তখন তাদের মন্দ বলতাম, কাফের বলতাম, এক সময়ে কিছু বইপত্র পড়লাম, চিন্তা করা শিখলাম, দেখলাম ঈশ্বর নামের কোন বড় বাবু এক জগত চালাচ্ছেন না, বরং তার ধারণা ছাড়াই জীবন অনেক সুখের, যদিও আমাদের কুর্দিদের জীবন সুন্দর না কখনও তুরস্কে। নির্দিষ্ট জায়গার উপরে কখনই উঠতে পারবে না তুমি শুধুমাত্র এই জাতিগত পরিচয়ের কারণে।

আমি থ হয়ে গেছিলাম, একজন মানুষ আর কখনও তার জন্মভূমিতে ফিরতে পারবে না!!! এমনও হয়? যেতে পারছে না সেটা অন্য কথা, ইচ্ছা নেই সেটাও বুঝলাম, কিন্তু নিজের শহরে ফেরা নিষিদ্ধ- কত কষ্ট পায় একজন মানুষ এই পরিস্থিতিতে পড়লে! জীবনের খুব কঠিন একটা অধ্যায় জানলাম বন্ধুর জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে।

সেই বছরই বারানকে দেখতে তার বিশ্ববিদ্যালয় শহর মিটফাইদা গেলাম ( একসময়ের পূর্ব জার্মানিতে, লিপজিগের কাছে) সাথে সাবেক প্রেমিকা, ঘুরলাম অনেকগুলো জনপদ, গাঢ় হলা আমাদের বন্ধুত্ব, দেখলাম জার্মান বন্ধুদের মাঝেও কতখানি জনপ্রিয় সে। যদিও অনেক জায়গাতেই কুর্দিদের নিয়েই সে খুব হতাশা ব্যক্ত করত, বলত- তারা আছেই ইউরোপের পয়সা, পানীয় আর কামজনিত আনন্দ নিয়ে, অথচ শিক্ষার এত সুযোগ সুবিধা স্রেফ পায়ে দলে নষ্ট করে।

সেখানে বেশ কবার তুরস্ক থেকে ফোন এসেছিল বারানের মোবাইলে এক সপ্তাহে, তুরস্কের এক তরুণ কুর্দি পাহাড়ে যেয়ে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, সেখানে তার সাংকেতিক নাম বারান! সেই তরুণ বাবা কোন না কোন মাধ্যম দিয়ে আমাদের কুতবেতিন বারানের ফোন নাম্বার পেয়ে তাকে প্রতিনিয়ত ফোন করে বলে তার ছেলেকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠাতে, বারান যতই বলে এই ব্যাপারে তার কিছুই জানা নেই, সেই নাচার পিতা আরও উদ্যমী হয়ে ফোন করতেই থাকেন।

আসলে সে ভাল মানুষ পছন্দ করত, যে জাতিরই হোক, যে ভাষারই হোক। যার সাথে রুচি- অরুচির মিল থাকবে সেই আমার বন্ধু এই ছিল সাদামাটা ভাবে বারানের বক্তব্য।

তার সাথে কথা বলার সময় সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কুর্দি রমণীর কথা মনে হত আমার, যার ছবি দেখেছিলাম ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে, আদালতে কুর্দি ভাষায় কথা বলে শুরু করলে বিচারক মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেয়, কুর্দি তরুণীও অটল ছিল নিজের ভাষায় কথা বলার ব্যাপারে, নীরব সেই মুখমন্ডলে পাথরের অভিব্যক্তি, সেখানে দুঃখ নয় কেবলই অটল প্রতিজ্ঞার ছোঁয়া।

kurdishwomen_842335636
(ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ছবি)

এমনই ছোঁয়া আছে আমার কুর্দি ভাই বারানের কথায়, আচরণে, জীবন দর্শনে। আরও অনেক বার জার্মানিতে তার বাড়ী গেছি আমি, সে এসেছে ফিনল্যান্ডে, আমার বাবার অকালমৃত্যুতে মোমবাতি জালিয়ে শোক প্রকাশ করেছিল বারান- বিদেশ বিভূঁইতে সেই স্মৃতিটুকু আমাকের ভরসা দিয়েছিল বন্ধুত্বের, একা না থাকার। একাধিকবার ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় যাওয়া মাত্রই বইপ্রেমিক বারান চলে এসেছে বাংলাদেশের ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিতে। নতুন সংসার তার এখন, সেখানে এসেছে ফুটফুটে নতুন অতিথি, আশা করি বাকি জীবনে সুখে কাটবে তার, এমনিতেই অনেক ঝাপটা গেছে জীবনে, আর জন্মভূমির চিরচেনা পরিবেশে ফিরতে না পারার শাস্তি সম্ভবত সবচেয়ে বড় শাস্তি, এটা ভোগের পর খানিকটে সুখ আমার এই ভাইটির নিঃসন্দেহে প্রাপ্য।

69821_10150296988825497_5549976_n

ইস্তাম্বুল ভ্রমণের পর বারানকে বিশাল এক চিঠি লিখলাম, সেও একসময়ে এই তিলোত্তমা নগরীতেই লেখা পড়া করেছে, সেখানে খুব প্রশংসা করেছিলাম ইস্তাম্বুলের অধিবাসীদের, আমাদের তুর্কি বন্ধুদের, বিশেষ করে যে পরিবার আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল তাদের। বারান শুধু প্রশ্ন করল- তোমার তুর্কি বন্ধুরা কি একবার মুখ ফুটে বলেছে কুর্দি সমস্যার কথা? তারা কি একবারও বলেছে যে কুর্দিস্তান গঠন আর কোন দিন সম্ভব না, কুর্দিদের তুরস্ক বা ইরান বা ইরাক না সিরিয়ার নাগরিক হিসেবেই থাকতে হবে, কিন্তু তাড়া অন্তত নিজের দেশ মনে করে যেন নিজের ভাষায় লেখা পড়া করতে পারে, কথা বলতে পারে? বলেছে কি?

না, বলে নি, তুরস্কের অধিকাংশ মানুষের কাছেই আর সরকারের কাছে তো বটেই কুর্দি দমন খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, তাদের আবার কিসের অধিকার! দু-চারটে ঢিল ছোড়ে তাড়া, আমাদের বাহিনী বুলেট ছোড়ে, ব্যস- কেস খতম। আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছে মতই চলতে হবে। তুরস্কে কোন সমস্যা নেই।

কুতবেতিন বারান আমার ক্ষুদ্র জীবনে দেখা শ্রেষ্ঠ (Pure) মানুষদের একজন। আমি গর্বিত এমন একজন মানুষকে ভাই হিসেবে জীবন চলার পথে পেয়ে।


মন্তব্য

রিসালাত বারী এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
মামুন এর ছবি

বারান ভাই কে আমার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাবেন
চলুক

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই, ধন্যবাদ

সাফি এর ছবি

আর আব্দুল্লাহ গুল আসছে মানবাধিকার চোদাতে...

লেখাটা খুব ভাল লাগল অণু ভাই।

তারেক অণু এর ছবি

গুল দিয়েই যাচ্ছে , দিয়েই যাচ্ছে! ব্যাটারে গদাম দেওয়া দরকার

অনিকেত এর ছবি

গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি
পৃথিবী  এর ছবি

পাকিপনার প্রতিশব্দ হিসেবে "তুর্কীপনা" ব্যবহার করা হোক।

তারেক অণু এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। বিশ্বে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না হলে ৯টি দেশে ভাগ হয়ে যাওয়া কুর্দীরা কখনোই নিজেদের দেশ পাবে না। একটা দুঃখজনক সত্য হচ্ছে কুর্দীরা আফগানদের মতো "পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়"* ধরনের জাতি, তাই আফগান ধাঁচের পরিণতি তাদের বরণ করতে হয়েছে। ব্যাপারটি অমানবিক এবং মানা কষ্টকর। (*সৈয়দ সাহেবের কাছ থেকে ধার করা)

২। বাংলাদেশের কেউ যখন আধুনিক তুরস্ক বা মোস্তফা কামাল পাশা (আতাতুর্ক)-এর প্রশংসা করে তখন আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, "আপনি কি জেনে বুঝে প্রশংসা করলেন, নাকি না জেনে? যদি না জেনে করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য করুণা। আর যদি জেনে বুঝে করে থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনার কাছ থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে হবে"।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

২য় কমেন্টে গুল্লি , আপনেই বুঝলেন পান্ডব দা

মনি শামিম এর ছবি

অসাধারণ মর্মস্পর্শী রচনারে অনু। আশা করি জীবনে চলার পথে বারানের মতন বন্ধু আমারও জুটবে কোনও একদিন! একটি তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট করি, যদিও পুরো লেখায় তাঁর প্রভাব সামান্যই। লিখেছিস, তুরস্কের এ্যাটাকিং ফুটবলের ভক্ত সারা বিশ্ব, এর কি কোনও প্রমান আছে কিংবা পাওয়া যায়? আমার তো ধারণা ফুটবলে তুরস্ক তাঁদের নিজেদের দেশ পরিচালনার মতই বিরক্তিকর,এক ঘেঁয়ে এবং প্রাচীনপন্থী।

-মনি শামিম

তারেক অণু এর ছবি

কেন? মাঝে মাঝেই তো ইউরো কাপে দারুণ খেলে, আবার এক বিশ্বকাপেও তো বেশ খেলল যেবার হাকান শুকুর, হাসান সাস, ইলহান মনসিজ, রুস্তু রেকবার ছিল!

রিসালাত বারী এর ছবি

পাণ্ডবদা, বনানীর মূল সড়কটির নাম কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ রাখার পেছনের ইতিহাস কী?

তারেক অণু এর ছবি

সেটা উদ্বোধনের সময় জনাব সুলেমান ডেমিরেল এসেছিল না?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সুলেমান ডেমিরেল না, হালিল তুরগুত ওজাল। ফেণীতে কামাল আতাতুর্ক স্কুল উদ্বোধন, বনানীতে কামাল আতাতুর্ক এভেনিউ উদ্বোধন ইত্যাদি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ তাকে নিয়ে এসেছিল। এরশাদ এভাবে অনেক ভেন্না গাছকে দিয়ে নিজেকে বট গাছ হিসাবে এনডোর্স করার চেষ্টা করেছিল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ পান্ডব দা, ডেমিরেল মনে হয় শিখা চিরন্তন উদ্বোধনের সময় এসেছিল।

আকতার আহমেদ এর ছবি

সরি,
"সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু স্মৃতিবিজড়িত স্থান। একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এখানে জাতির মুক্তির সনদটি ঘোষণা করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর এখানেই পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। তাই এ উদ্যানটিতে 'স্বাধীনতা স্তম্ভ' নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। এই অংশ হিসেবে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ এ শিখা চিরন্তন উদ্বোধন করেন বিশ্বের চার রাষ্ট্রপ্রধান নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত, সুলেমান ডেমিরেল ও বাংলাদেশের তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।"
http://www.kalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=23-12-2010&feature=yes&type=rel_news&pub_no=366&cat_id=3&menu_id=82&news_type_id=1&index=2&main_index=11

তারেক অণু এর ছবি
আকতার আহমেদ এর ছবি

যদ্দুর মনে পড়ে সুলেমান ডেমিরেল এসেছিলেন আমাদের বিজয়ের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে। সেটা ৯৬ এ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর।

তারেক অণু এর ছবি

ঠিক

সাইদ এর ছবি

চলুক
একটা প্রশ্নঃ কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই- এটা কি এই কামালকে নিয়ে রচনা করা হয়েছিল??

তারেক অণু এর ছবি

তাই তো জানি খাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

নৃতাত্বিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ট তুর্কী এবং কুর্দীদের মধ্যে বোধ হয় পার্থক্য তেমন নেই, ধর্মেও পার্থক্য নেই । কিন্তু ভাষা ও সংস্কৃতি গড়ে দিয়েছে বিস্তর ব্যাবধান। কুর্দীরা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের আর্য তথা ইন্দো-ইরানীয় গোত্রের ভাষায় কথা বলে। অপর দিকে তুর্কীরাও যে শুধু ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় কথা বলতো তাই নয়, এই ভাষা অবলম্বন করেই তারা গড়ে তুলেছিল সুপ্রশিদ্ধ হিটাইট সভ্যতা, যার কাছে মানব সভ্যতার যথেষ্ট ঋণী। ইসলামের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত তুরস্কের অধিবাসীরা যে ভাষায় কথা বলতো তা প্রাচীন হিটাইট ভাষা্রই পরিবর্তিত রুপ।
মধ্য এশিয়ার তুর্কীরা মুসলমানী ধর্ম এবং তুর্কী ভাষা সহ আনাতোলীয়া দখল করে হিটাইট সভ্যতার ঝাড় বংশ নিপাত করে দেয়। এখনও তুরস্কের মাত্র দশ শতাংশের মত মানুষ নৃতাত্বিক তুর্কী, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রাচীন হিটাইটদের বংশধর। কুর্দীদের সাথে তাদের পার্থক্য হলো কুর্দীরা শত বিপর্যয় সত্বেও নিজেদের ভাষা আঁকড়ে ধরে আছে প্রানপনে, তুর্কীরা অন্যের ভাষা ধারন করে তার মিথ্যা বড়াই করছে।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

তারেক অণু এর ছবি

ধর্মেও পার্থক্য নেই???? ধর্ম তো তাদের নয় ভাই, তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া, কুর্দি জাতির মাঝে মুসলিম আছে, খ্রিস্টান আছে, ইহুদী আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সংখ্যাগরিষ্ঠ কুর্দীদের ধর্মবিশ্বাসের কথা বিবেচনা করে এ কথা বলা। তা ছাড়া মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসের লোকজন কিছু কিছু ইরাক, ইরান, তুরস্ক সব দেশেই ছিল।

দুর্দান্ত এর ছবি

"তুর্কি বংশোদ্ভূত" দের মধ্যে তো কুর্দিরাও পড়ার কথা। নাকি "তুর্কি" বলে আলাদা একটা জাতিগোষ্ঠী আছে?

***

লুসাই রাষ্ট্রকে আমরা আজকে ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বার্মার চিন-প্রদেশে বিভক্ত করেছি, বাঙ্গালী, চাকমা ও বর্মীদের আগ্রাধিকার দিয়েছি। আরাকানের অবস্থাও মোটামুটি একই। আজকে এই দুটি 'এথনিসিটি'ই সংঘবদ্ধ হচ্ছে, স্বাধীনতা চাইছে। তাদের প্রতি ঢাকার নানাবিধ অনাচারের প্রতি আমার অসমর্থন আছে, কিন্তু আমি চাইনা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে স্বায়ত্বশাসিত লুসাই-মিজো বা রোহিঙ্গা প্রদেশ গড়ে উঠুক। যেটা অস্বীকার করা যায়না, সেটা হল, ব্রিটিশ আমলের আগে আলাদা আরাকান ও আলাদা লুসাই রাষ্ট্র বিদ্যমান ছিল।

কিন্তু অখন্ড "কুর্দিস্তান" বলে কি আসলে কোন কিছু ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায়?

১৮৩৫ সালে দেখতে পাই বর্তমানে যেখানে "কুর্দিস্তান" আবিস্কার করা হচ্ছে, সেখানে ছিল অনেকগুলো স্বাধীন রাজ্য/রাষ্ট্র।

১৯২০ সালে ওস্মানি সম্রাজ্য ভাগবাটোয়ারা করার পরে ছবিটা এরকম হয়।

যেটা পরিস্কার যে ১৯২০ এ পূর্ব তুরস্কের যে অংশ নিজেদের আলাদা করে দেখতে চেয়েছিল, তাদের মোটিভ কিন্তু স্বাধীনতা, ইহজাগতিকতা বা প্রগতি ছিলনা। ঐ সময়ে তুরস্কের ইহজাগতিকতার প্রসারে ভীত হয়েই মূলত সুন্নি/হাম্বলি ইসলামের ঘাটি হিসাবে পরিচিত পূর্ব তুরস্কের মোল্লারা নিজেদের আলাদা করতেই মূলত তুরস্কের ভেতরে আলাদা 'সুন্নি' মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্ট হয়। এখানে ঐ আন্দোলনের সাথে 'পাকিস্তান' আন্দোলনের বেশ মিল আছে। সেভ' এর প্রস্তাবে তুরস্কের পেটের ভতরে কুর্দীদের আলাদা রাখার ব্যাবস্থা রাখা হয়, কিন্তু কুর্দিদের আসল সম্পদ ইরাকী তেলের খনিগুলোকে ব্রিটিশরা নিজেদে হাতে রাখতে প্রচেষ্ট হয়। তুর্কীরা সেভ এর চুক্তিতে সই করেনি। পরে লসান এর প্রস্তাবে আলাদা করে কোন কুর্দি এলাকা তুরস্কের পেটের ভেতরা রাখা হয়নি। জাতিসংঘ এই লসানের চুক্তিকে গ্রহন করেছে।

"ইয়াংটার্ক" সেসময়ে জেনোসাইডের পথ বেছে নিয়েছিল, যা নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ, ঠিক যেরকম ভারত আজকে "মাওবাদ" প্রতিহত করতে ঘটাচ্ছে নতুন জেনোসাইড। তুরস্ক সংঘটিত সেই জেনোসাইডে অনেক নিরীহ মানুষের সাথে মরেছে হাজারে হাজার মোল্লা ওমর, বিন লাদেন ও বাংলা ভাই। সেই মোল্লারা বেঁচে থাকলে আজকে মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন, সোমালিয়া ও পাকিস্তানের মত আরেকটি ইসলামি বেহেশত প্রস্ফুটিত হত।

আপনার ঐ কুর্দি বন্ধুর জায়গায় একজন রোহিঙ্গা কে কল্পনা করুন। কেমন লাগছে?

তারেক অণু এর ছবি

তাদের প্রতি ঢাকার নানাবিধ অনাচারের প্রতি আমার অসমর্থন আছে, কিন্তু আমি চাইনা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে স্বায়ত্বশাসিত লুসাই-মিজো বা রোহিঙ্গা প্রদেশ গড়ে উঠুক। বুঝলাম , কিন্তু নানা আদিবাসী গোষ্ঠী যদি নিজের ভাষায় মতপ্রকাশ করার ইচ্ছে পোষণ করে, মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করতে চায় - সেক্ষেত্রে আপনার মতামত কী?

দুর্দান্ত এর ছবি

নিজের ভাষায় মতপ্রকাশ ও শিক্ষাগ্রহনের অধিকার সবার আছে।

তুরস্কে কিন্তু কুর্দি ভাষায় পত্রপত্রিকা আছে। অধুনা সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কুর্দি ভাষায় পাঠদান শুরু হয়েছে। এতে অবশ্য তুর্কি সরকারে চাইতে সুশিক্ষিত কুর্দিরাই বেশী অবদান রেখেছে। পি কে কের শাবাবেরা শুধু নিজের ভাষায় কথা বলতে আর শিক্ষাগ্রহন করতে আন্দোলন করছে, এটা মনে হয়না।

দিগন্ত এর ছবি

একসময়ে কুর্দিশ ভাষার স্বীকৃতি ছিল না তুরস্কে কিন্তু এখন তো টিভি চ্যানেলও আছে তুরস্কে। কুর্দিশ ভাষাকে তুরস্কে দ্বিতীয় জাতীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তবে রাজনৈতিক সমস্যাটা কিন্তু ভাষা ও জাতিগত স্বীকৃতির সমস্যা থেকেই আসে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কুমার এর ছবি

গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি
জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তারা কি একবারও বলেছে যে কুর্দিস্তান গঠন আর কোন দিন সম্ভব না, কুর্দিদের তুরস্ক বা ইরান বা ইরাক না সিরিয়ার নাগরিক হিসেবেই থাকতে হবে, কিন্তু তাড়া অন্তত নিজের দেশ মনে করে যেন নিজের ভাষায় লেখা পড়া করতে পারে, কথা বলতে পারে? বলেছে কি?

চলুক

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারেক অণু এর ছবি
স্যাম এর ছবি

অনূদা মনে হয় রাস্তায় - বাংলাদেশ এর পথে--- দেঁতো হাসি ?!!!!!!

তারেক অণু এর ছবি

মায়া, সবই মায়া দেঁতো হাসি

নিরীহ মানুষ এর ছবি

গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি
মুদ্রা সংগ্রাহক এর ছবি

কুর্দিরা কিন্তু অলরেডী নিজেদের একটা দেশ পেয়েছে - ইরাকী কুর্দিস্তান যার রাজধানী এরবিল। এখানে যাওয়ার জন্য ভিসাও কুর্দিস্তান দূতাবাস থেকে নিতে হয়, ইরাকী দূতাবাস থেকে নয়।

বারান ( বাংলায় হয়তো বারাণ হবে) তো আমি যতদূর জানতাম ফার্সী শব্দ ফার্সীতেও এর অর্থ বৃষ্টি। মাজিদ মাজিদির খুব চমৎকার মুভি আছে এই নামে - দেখা হয়েছে নিশ্চয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।