অনাকাঙ্খিত নৌ-শ্রমিক ধর্মঘট এবং ব্যপক যানজটে কবলে পড়ে আমাদের উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারির শুরুটা বেশ লেজে-গোবরে হবার উপক্রম হয়েছিল, অবশেষে লঞ্চ যখন লক্ষীপুরের মজু চৌধুরীর ঘাট থেকে ছেড়ে ভোলার ঘাটে পৌঁছল, আগামী কয়েকদিনের আবাস ট্রলারগুলোর দেখা মিলল, মনে হল – কুফা বুঝি কাটা শুরু করেছে। এবার ক্লান্তি দূরের জন্য চায়ের ফরমায়েশ, সেই সাথে টা হিসেবে টোস্ট বিস্কিটের এন্তেজাম। এই সময় সাথের ভ্রমণ সঙ্গী প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং চ্যানেল আই টিমের একজন সদস্য আবিস্কার করলেন ঘাটে অপেক্ষমাণ একটি বাসের ছাদে ছালা মোড়ানো এক চৌকোণা বস্তু থেকে টিয়াপাখির ডাক শোনা যাচ্ছে!
ব্যাপার সন্দেহজনক -- যে কোন ধরনের বুনো পাখি ধরা, বিক্রি করা, মারা বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে বার্ড ক্লাব, বিশেষত ক্লাবের সদস্য এভারেস্ট বিজয়ী স্থানীয় এম এ মুহিতকে স্বাগত জানাতে আসা স্থানীয় সাংবাদিক এবং জনতাকে ব্যাপারটা জানাতেই তাদের সাহায্য নিয়ে বাসের ছাদ থেকে সেই বস্তুখানা নামানো হল, ছালা কাটতেই দেখা মিলল ধাতব একটা খাঁচার, তাতে অজস্র খোপ। তারই তিনটে খোপের মাঝে ভয়ে তারস্বরে চিৎকার করে চলেছে তিনটে সবুজ টিয়া (Rose-ringed Parakeet / Psittacula krameri)। তাদের প্রথম দুটোকে অবমুক্ত করতে যেয়ে দুইজন হাতে টিয়ার নখের খোঁচা খেয়ে রক্ত ঝরালেন, এরপর প্রেক্ষাপটে পাখিপ্রেমী ইনাম আল হক এসে আবির্ভূত হয়ে হাতে কলমে দেখালেন কিভাবে টিয়া পাখি ধরলে পাখিটি কোনরকম ব্যাথা পাবে না, এবং মানুষকেও আঁচড়-কামড় দিতে পারবে না।
প্রকৃতি ও জীবনের উপস্থাপক মুকিত মজুমদার বাবু শেষ সবুজ টিয়াটিকে ফিরিয়ে দিলেন প্রকৃত জীবনে।
ততক্ষণে সন্ধান মিলেছে খাঁচাওয়ালার, সে এসেই বলল- আমি কবুতরের ব্যবসায়ী, বাড়ী চুয়াডাঙ্গা, ভোলাতে এসেছি কবুতর কিনতে।
হুম, তা কবুতরগুলো সবুজ টিয়া হয়ে গেল কেমন করে?
সে নাকি তিনটা টিয়া ৯০০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলে কবুতর না পেয়ে! বোঝাই যাচ্ছে মিথ্যা কথা বলছিল, চাপ দিতেই বলল জীবনে প্রথম সে টিয়া কিনেছে, কোনরকম পাখি শিকারের সাথে জড়িত নয়।
ততক্ষণে সারা ঘাটের মানুষ ভিড় করেছে রগড় দেখতে, এদের মাঝে অত্যুৎসাহী একাধিক জন বাসের ছাদ থেকে আবিস্কার করল সেই লোকের কিছু মালপত্তর, যা খুলতেই পাওয়া গেল বিশাল এক পাখি ধরার জাল!
এবার বেচারার মুখ বন্ধ, শুধু বলে- আমার মাল গুলো তো ছাইড়াই দিলেন, আবার পুলিশের কাছে দিয়েন না! ততক্ষণে বাজারের জনগণ ভিড় করে এসেছে জাল এবং চোরাশিকারি দেখতে, সে দেখাল কী করে জাল পেতে রাখা হয়, পাখি ধরা পড়ে কী করে।
আমাদের ট্রলারের সময় হয়ে যাওয়ায় তাকে কর্তব্যরত স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করে বলা হল সেই জাল পুড়িয়ে ফেলে, এই ব্যবসাতে তার সাথে কারা জড়িত আছে সেই খবর নেবার জন্য।
এই চোরাশিকারি এক নেহাত দরিদ্র মানুষ, এদের ব্যবহার করেই চলছে বিশাল কোন চক্রের বন্য প্রাণী নিধনযজ্ঞ। একজন শিকারিকে জাল কেড়ে নিয়ে বা তিনটে টিয়া অবমুক্ত করে পরিবেশের এমন কোন উপকার হয়ত হবে না, কিন্তু মনে রেখেন এই টিয়া কিন্তু ধরা হয়েছে আপনার-আমার মত শহুরে সৌখিন মানুষদের কাছে বিক্রির জন্যই। আমরা যদি না কিনি তাহলে এই কাজটি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে, সেই সাথে আমাদের চেষ্টা করতে হবে এই জনগোষ্ঠীর বিকল্প কাজের ( বিশ্বের বেশ কিছু দেশে চোরা শিকারীদের বনের গাইড বা প্রকৃতি সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহার করে সুফল পাওয়া গেছে)।
বুনো পাখি পালবেন না, শিকার করবেন না, অন্যকে করতে দেখলে নিরুৎসাহিত করবেন।
মন্তব্য
লেখা ভাল হচ্ছে নীলম, লিখে যান হাত খুলে
facebook
ধন্যবাদ, ভাইয়া!
চমৎকার লিখেছো ভাইয়া (যদিও আমি আগেই শুনেছিলাম ) ভাল আছো?
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
এখন ঢাকাতে, তোমার ফোন বন্ধ!
facebook
সচেতনতাটা জরুরি। তাহলে হয়তো এধরনের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা যাবে। একই সাথে ফাঁদ পেতে ধরার চাহিদাও যাতে তৈরী না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
হক কথা
facebook
facebook
এই কথাগুলো সবচে' জরুরি কথা। হেন করতে হবে, তেন করতে হবে এইসব বড় বড় বানী ছাড়ার সময় আমরা নিজেদের ভূমিকাটুকু ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুলে যাই।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ঠিক,
কালকেই পুরনো বইয়ের খোঁজে যেয়ে আপনার গীতাঞ্জলী আবিস্কার নিয়ে কথা হচ্ছিল
facebook
এতোদিন কুথায় ছিলেন দ্য হোয়্যার?
..................................................................
#Banshibir.
আশেপাশেই!
facebook
কী আচার্য্য ! গতকাল থেকে মনে পড়ছিল ঘণুকে । সেই যে গেল সেটল হইতে...আর কুন খোঁজ খপর নাই
এত দিন কোথায় ছিলেন, ঘণূ ? আরেকটু হলেই “সার্চ দ্য খোঁজ” করতে হইতো । যাক, সেটলের কতদূর ?
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ব্যপক দৌড়ের উপরে আছি, বঙ্গোপসাগর থেকে সুন্দরবন হয়ে মেঘালয়ের প্রান্তে
facebook
ইনার মেসেজটা টাচেবল।। মাগার গেছীলেন কই, খুইজা পাইতাছিলাম না ।।।। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
আছি আছি
facebook
সচলের নীড়পাতাটা অনেকদিন এই হাসিমুখ চেহারার অভাব বোধ করছিল।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আইস্যা গেছি মামুজান
facebook
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
facebook
অনেকদিন পরে, সচলে।
facebook
খুবই কঠিন প্রশ্ন, শুধু বুনো পাখি কেন ? কবুতর কি দোষ করলো ?
আমি একটি টিয়া পালি কিন্তু সেটি দেশী প্রজাতির টিয়া নয় । শুনেছি এই টিয়া খুবই বুদ্ধিমান । এরা নাকি ছাড়া পেয়ে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াতে অনেক সংখায় বৃদ্ধি পেয়েছে । এরা নাকি অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যাকে কমিয়ে আনে নিজেদের সংখা বৃদ্ধি করে ।
সমস্যাটা গোড়া থেকে সমাধান করতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা দরকার। আপনাদের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। ধন্যবাদ।
বিপদে ফালায়া দিলেন। একটা প্যাঁচা মুক্ত অবস্থায় পালা'র ইচ্ছা ছিলো
কিভাবে ?
facebook
বিপদে ফালায়া দিলেন। একটা প্যাঁচা মুক্ত অবস্থায় পালা'র ইচ্ছা ছিলো
অনুদা ইজ ব্যাক।
দারুন লিখেছেন অনুদা। সর্বস্তরে সচেতনতা দরকার। সচেতনতা জেগে উঠুক সবার মধ্যে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
পাখি ছাড়ার ক্ষেত্রে বোধহয় জায়গাটা একটু খিয়াল করতে হবে। মানে ঐ পাখিটা ঐ বাস্তুসংস্থানের মধ্যে টিকতে পারবে কিনা। আমি এইসব বুঝি না। আমার এক জুলজি'র বন্ধু বলছিল জাবি'র এক পাখি উৎসবের সময়।
অজ্ঞাতবাস
একদম হক কথা।
আর এরকম একটা ভাল কাজের জন্যে অভিনন্দন।
অনেক দিন পর লিখলেন অনু দা। দেশে এসেছেন শুনেছি। কেমন যাচ্ছে এখানকার সময়। ভালো থাকুন সেই কামনায় করি।
লেখায়
নতুন মন্তব্য করুন