বনলতা সেনের নাটোর থেকে বাসে চেপেছি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে, শুক্রবার বিধায় জুম্মার নামাজের পরপরই স্থানীয় মৌলবাদীরা ধার্মিক মুসলিমদের আড়ালে অবস্থান নিয়ে জঙ্গি মিছিল বাহির করেছে, শহরের পরিস্থিতি হঠাৎ করেই থমথমে, তাই বাইপাস মোড় থেকে লোকাল বাসে চেপেই যাত্রা করতে হল। কথা ছিল রেশম নগরীতে পৌঁছে রেশম পোকাদের কচকচ করে তুত পাতা খাওয়া এবং রেশম উৎপাদন দেখার জন্য সপুরা রেশম কারখানায় যেতে হবে, কিন্তু সব পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দিল কামিনী!
কামিনী কে?
সে একটি কাক। বাংলাদেশে থাকা লাখো লাখো কাকদেরই একজন।
তার বিশেষত্ব কী?
সে কথা বলতে পারে! অনেকটা মানুষের মত!!
কথা বলা কাক শুনলেই ইউটিউবে দেখা একটা কাকের কথা মনে পড়ে যায়, পরিচিত এক বিকট ধার্মিক সেই কাকের ভিডিওর সন্ধান দিইয়েছিলেন যাতে কাকটি মাঝে মাঝেই আল্লাহু আল্লাহু করত। ( হয়ত ভেবেছিলেন সেই কাকের কথা স্মরণ করে হলেও পরকালের কাজে মন দিব!), তার কয়েক মিনিটের মাঝেই কাকের একই ক্লিপ ফেসবুকে আবিস্কার করে যাতে কাকটি বলছিল – হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ! সে কি দ্বীন- ই- ইলাহী ধর্মের কাক?
এই কাকটিও কি এমন কিছু? তার সন্ধান এনে দিয়েছিলেন রাজশাহীর ফটোসাংবাদিকতার জগতে পরিচিত মানুষ রেজা ভাই, তার আত্মীয়ের বাড়ীতেই কাকটি থাকে গত ৮ বছর ধরে, এবং তার সুবাদেই বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত খবরের কাগজে এবং টেলিভিশন চ্যালেনে কামিনী হয়ে গেছে একটি পরিচিত চরিত্র। রেজা ভাই নিচে ব্যপক মুক্তমনা মানুষ, তার কথাতেই ভরসা করে চললাম কামিনীর দর্শন পেতে, সাথে সচলায়তনের অতন্দ্র প্রহরী, নূপুরের ছন্দ ও যাযাবর ব্যাকপ্যাকার, এবং স্থানীয় ইকবাল ভাই।
রাজশাহী শহর সামান্য ছাড়ালেই নওহাটা কলেজের মোড়, সেখানে অপূর্ব বাগানবিলাসে ছাওয়া গলি দিয়ে ঢুকতেই পাওয়া গেল কাঙ্ক্ষিত বাড়িটি, সেখানে গরু, ছাগল, বিড়াল, খরগোশ, মুরগী ইত্যাদির সাথে আছে কামিনী। গৃহকত্রী ইশারায় জানালেন সে তখন টিনের চালের নিচে, হয়ত এত অতিথি একসাথে দেখে খানিকটা লজ্জা পেয়েছে। যদিও কামিনী কথা বলতে পারে এই খবর মিডিয়াতে যাবার পর থেকেই গত ৩টি বছর হাজার হাজার মানুষ এই বাড়ীতে এসেছে কথা বলা কাকের কথা শুনে চক্ষু-কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করতে। বাড়ীর ছোট মেয়ে ঊষার আহ্বানে কামিনী উড়ে এসে তার হাতে বসল, এবং কথা বলার সংকেত পেয়ে সুরেলা গলায় বলে উঠল কা- মি—নী!
সত্যি কথা বলতে আমি একটা আশা করি নি, ভেবেছিলাম হয়ত কাকেশ্বর কুচকুচে কাকের মতই ক্যা কা করে কিছু একটা বলবে, যেটার মর্মার্থ বুঝতে আমাদের কালো ঘাম ছুটে যাবে। প্রফেসর শঙ্কুর কভার্স পর্যন্ত কথা বলতে পারত না, আর এ তো রাজশাহীর কামিনী! কিন্তু সেই আসলেই কথা বলে, বেশ চমৎকারই বলে শিখিয়ে দেওয়া কিছু শব্দ, এবং ভাঙ্গা বাক্য। যেগুলো বলে আর আপনাদের চমক নষ্ট করছি না, কারণ কামিনীর একটা চমৎকার ভিডিও আপলোড করেছেন যাযাবর ব্যাকপ্যাকার, সেখানে দেখেই বলুন আপনার হতভম্ব হবার অনুভূতি-
এই যে ভিডিও
বাড়ীর অন্যান্যদের সাথে কথা বলে জানা গেল ৮ বছর আগের একটা ঝড়ের রাতের শেষে তারা কামিনীকে কুড়িয়ে পান, তখন থেকে জলখাবার দিয়ে সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন এবং পাখিটি তাদের সাথেই রয়ে যায়, কিন্তু তারা জানতেন না যে এটি কাকের বাচ্চা! পরে একদিন গৃহকত্রী অবাক হয়ে শুনলেন তাকে উদ্দেশ্য করে কেউ বলছে- আম্মা! আম্মা!! হতবাক হয়ে সবাই দেখে সেটি কামিনী ! ব্যস, শুরু হয়ে গেল শোরগোল, রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল কামিনী।
কিছু ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাক্যের সাথে সাথে এক থেকে সাত গুণতে এমনকি অ আ পর্যন্ত বলা শিখে সে। মাঝে মাঝেই অন্য কাকদের সাথে উড়ে বেড়ায়, আবার ফিরে আসে ঝাঁক ছেড়ে মনুষ্যপরিবারে। বছর চারেক আগে ফ্যানের আঘাতে বেশ আহত হয় কামিনী, যেটা তার দিকে তাকালে এখনো বোঝা যায়।
অবশেষে কামিনীকে বিদায় দিয়ে ফিরলাম আমরা। ফিনল্যান্ডে ফেরার পরের দিনই রাজশাহী থেকে বার্তা পেলাম কামিনীর অবস্থা খুবই সঙ্গিন, যে কোন সময় খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্মদিন হিসেবে যে দিনটি পালন করা হত সেই ২১ মার্চই কামিনী ফিরে গেল না ফেরার দেশে।
এই সিরিজের বাকী পর্বগুলো এই খানে-
মন্তব্য
ভিডিওটা দেখে আরো মনটা খারাপ হয়ে গেল কামিনীর জন্য
facebook
সত্যি বলতে, আমিও আশা করিনি একটা কাক এভাবে এত কথা বলতে পারবে। দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেদিন। পরে যখন জানলাম কামিনী মারা গেছে, খারাপ লেগেছিল খুব। প্রকৃতি আসলেই বিস্ময়কর!
প্রকৃতির চেয়ে বিস্ময়কর আর কী আছে!
facebook
এই প্রথম দেখলাম !! কাকও কথা কয় !!
হ
facebook
অদ্ভুত লেগেছে। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আমি তো ভাবলাম অদ্ভুদ!
facebook
লেখাটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো, আশ্চর্য কান্ড! কাক কথা বলে! তাও আবার নিজেই নাকি একদিন কথা বলে উঠেছিল, "আম্মা" বলে ডেকে!
আহ, আপনার সৌভাগ্য এমন একটা ঘটনা স্বচক্ষে দেখে স্বকর্ণে শুনে এলেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেচারা এত তাড়াতাড়ি মারা গেল
facebook
শেষ লাইনটা কয়েকবার পড়লাম, এই আশায় , যে, নিশ্চয়ই আমি ভুল পড়ছি।
আজকাল নিজের কান্ড দেখেও হাসি পেয়ে যায়। মানুষই মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে, আর আমি পাচ্ছি কাকের জন্য দুঃখ।
facebook
ভিডিওটা সত্যি অন্যরকম অনুভূতি দেয়......
প্রথমটা ছবিটা দুরন্ত
ডাকঘর | ছবিঘর
facebook
Lifespan/Longevity: A wild crow was recorded living for over 15 years (banded by Kevin McGowan, Cornell University). A lifespan of 6 to 10 years is the norm since there is a mortality rate of about 50 percent in the first year.
Captive birds may live much longer - one captive crow in New York, named Tata, was recorded to have lived for 59 years!
http://naturemappingfoundation.org/natmap/facts/american_crow_712.html
৫৯ !!!!
facebook
দেখা যাচ্ছে কাকের কথা বলাটা অতটা রেয়ার না।
টেনশনে পড়লাম, যদি দ্রোহীদা কাকের ভাষা শিক্ষার দায়িত্ব নিতে রাজী হয় তাহলে, খবর আছে
facebook
এই লেখাটা অন্য কেউ লিখলে খুলে দেখতাম না। কিন্তু আপনি বলেছেন যে কাক কথা বলছে তাই পড়লাম, তাজ্জব হয়ে গেলাম।
হ, আজব দুনিয়া! সবই তার ইচ্ছা
facebook
কি অদ্ভুত!!! শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। শেষে এসে মনটা খারাপ হল।
facebook
এর কিছু বাচ্চা বানিয়ে রাখা দরকার ছিলো। নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ মিউটেশনে সে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হয়ত
facebook
"সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!!
আমরা সনাতন বায়সবংশীয় দাঁড়িকুলীন, অর্থাৎ দাঁড়কাক। আজকাল নানশ্রেনীর পাতিকাক, হেঁড়েকাক, রামকাক প্রভৃতি নীচ শ্রেনীর কাকেরাও অর্থলোভে নানারূপে ব্যবসা চালাইতেছে। সাবধান! তাহাদের বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হইবেন না।" - শ্রীকাক্কেশ্বর কুচকুচে
ইয়ে প্রফেসর শঙ্কুর কাকটাও বোধহয় ছয়টা কি সাতটা ভাষায় কথা বলতে পারতো (একদম ছোট বেলায় পড়া তাই ভুলে গেছি)।
অতএব, তেনারা কথা বলতে পারতো না, কেবল ক্যাঁ ক্যাঁ করতো - এসব বলে মনে কষ্ট দিবেন না শ্রীমান!
*জোক এপ্যার্ট - শেষের লাইনে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল!
facebook
সত্যিই বিস্ময়কর এ প্রকৃতি আর বিস্ময়কর আপনার জীবন !
facebook
প্রথম ছবি টা দারুন!
কাক কা কা করা বাদ দিয়া কথা বলা স্টার্ট দিলে তো মুশকিল!!!
এমনিতেই যে ডাকাডাকি,শেষে নাম ধরে ডাকা শুরু করবে!!
যাই হোক
সুবোধ অবোধ
facebook
ভিডিওটা আবার দেখলাম। কেমন শান্ত হয়ে ঊষার( মেয়েটির নাম ঊষা তো?) হাতের উপরে বসে ছিল কামিনী! আপনার হাতে তো আসলো না, ভয় পেয়ে পিছিয়ে পিছিয়ে ঊষার কাঁধে গিয়ে উঠে পড়লো। ঐ জায়গাটা দারুণ লাগলো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হা হা,, আমি ভেবেইছিলাম এত তাড়াতাড়ি আসবে না্ হয়ত বেশীক্ষণ থাকলে খাতির হলে আসতেও পারত
facebook
নতুন মন্তব্য করুন