দানিয়ুব তীরের ব্রাতিস্লাভা এবং পুস্কেল পরিবার

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: রবি, ১৯/০৫/২০১৩ - ১:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কুক্কুরুক্কু –কু- কু- ক্কু

অনেক অনেকদিন পর মোরগের সূর্য উঠানো ডাকে ঘুম ভাঙল, হতজড়িত অবস্থায় শৈশবের সুখস্মৃতির আমেজ ঘিরে রাখল বেশ কিছুক্ষণ, আবছা আরামদায়ক আঁধার ঘরের ভিতরে, জানালার ঘোলাটে কাঁচ দিয়ে অবশ্যম্ভাবী প্রভাতের কিরণ ঠিক ঠাহর হয় না, আসলে নিজেই যে কোথায় আছি বুঝতে পারলাম না, কেমন সব অপরিচিত আসবাবপত্র, অজানা বিছানার গন্ধ। শোয়া থেকে বসা হতে যে মুহূর্তটুকু লাগে তার মাঝে গত রাতের স্মৃতিরা উড়ে এসে বসে গেল খাপে খাপে- আমি আছি স্লোভাকিয়ার গ্যালান্টা শহরে, অনেক বছরের পুরনো বন্ধু মারিয়া পুস্কোলোভার বাড়ীর ড্রয়িংরুমে।

আগের বিকেলে রওনা দিয়েছিলাম চেক দেশের ২য় বৃহত্তম শহর ব্রেনো থেকে, যে শহর ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছে সেখানে গির্জায় কর্মরত এক পাদ্রীর জন্য, যিনি সময় পেলেই উপাসনালয়ের বাগিচায় অন্যরকম এক উপাসনায় মেতে উঠতেন, সে বিষয়ে কথা অন্যদিন হবে, যাজক মহাশয়ের নাম – জোহান গেগ্রর মেন্ডেল, জেনেটিক্সের জনক বলে যাকে অভিহিত করা হয়। রাত আটটা বেজে গেল স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় আসতে আসতেই, সাথে ভ্রমণসঙ্গিনী হিসেবে সাবেক প্রেমিকা। কথা ছিল পূর্বপরিচিত মারিয়া পুস্কোলোভার বাড়ীতে ওঠা হবে, এই দেশেরই তরুণী মারিয়া, ফিনল্যান্ডে লেখাপড়ার সময় বন্ধুত্ব হয়েছিল, তা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে সময়ের মেলবন্ধনে, ভ্রমণের পোকা সে, সেই সুবাদেই আসা। কিন্তু মুঠোফোনে তার বার্তা আসল- ব্রাতিস্লাভা স্টেশন থেকে সোজা গ্যালান্টার ট্রেনে চেপে পড়, আমি স্টেশনে তোমাদের নিতে যাব! গ্যালান্টা? সে কী? খায় না মাথায় দেয়? কী ধ্যাদ্ধেড়ে নামরে বাবা! খোঁজ নিয়ে জানা গেল গ্যালান্টা কাছেরই এই উপশহর ধরনের এলাকার নাম, কিন্তু সেখানে কেন যেতে হবে? কথা ছিল ব্রাতিস্লাভায় থাকার!

4448_201483700496_1613195_n

অনেক অ্যাডভেঞ্চারের পরে যখন রাত সাড়ে দশটার সময় গ্যালান্টার রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে পাগলের মত হাত-পা ছড়িয়ে উদ্বাহু চিৎকার করতে থাকা মারিয়ার সাথে দেখা হল তখন এর রহস্য কিছুটা ভেদ হল, রাজধানী শহরের বাড়িভাড়া সহ অন্যান্য খরচ বেশী হওয়ায় অনেক অধিবাসীই এমন নিকটের জনপদগুলোতে থাকে। বললাম- খুব ক্ষিদে পেয়ে দুইজনেরই, পথের সুযোগ হয় নি পেটপূজার। অভয়মিশ্রিত হাসি দিয়ে সে বলল- মা দারুণ ধরনের গুলাস বানিয়ে বসে আছে, খাওয়া নিয়ে কোন চিন্তা নেই!

4448_201484275496_7297415_n

মা? মানে কি হে? তুমি কি বাবা-মার সাথে থাক?

উত্তর- না, সাথে ছোট বোনও থাকে।

লে হালুয়া! বাবা-মার সাথে থাক, প্রায় মধ্যরাতে দুজন মানুষ নিয়ে যেয়ে তাদের বিরক্ত করার কোন মানে হয়? আমি তো জানতাম একা থাকো!

এই অভিযোগের উত্তর বরাবরের মতই শিশির ভেজা শিউলির স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে মারিয়া জানাল আমি কাউচ সার্ফিং-এর সদস্য, প্রায়ই নানা দেশে বন্ধুরা থাকতে আসে, কোন সমস্যা নেই। এইভাবেই দেখা হল, সখ্য হল পুস্কেল পরিবারের সাথে, হয়ে গেলাম তাদেরই একজন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর কিছু জিনিস নিয়ে সবসময়ই আমার ব্যাপক কৌতূহল কাজ করে – নানা ক্ষেত্রে কী কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা তখন পেয়েছে, বা এখন পেয়ে থাকে। সমাজ জীবনে কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি বা অবনতি ঘটেছে। এমন কিছুই না, স্রেফ জানার আগ্রহ। তাই এমন পরিবারের সংস্পর্শে আসলে যেখানে ছেলে-বুড়ো সবাই-ই উপস্থিত সেখানে জানার সুযোগ একটু বেশী মেলে, একাধিক প্রজন্মের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার সন্ধান পাওয়া যায়।

মারিয়ার বাবা পাভেল পুস্কেল ক্লান্ত হাসি দিয়ে ঘুমানোর জন্য গেলেন, গত ৩৫ বছর ধরে তিনি ভোর সাড়ে চারটায় উঠে পড়েন সকালের মধুর ঘুম ফেলে জীবিকার তাগিদে, সাড়ে পাঁচটার মাঝে পৌঁছে যান কারখানায়- শুরু হয় আরেকটি পুরানো রুটিনে মোড়া নতুন দিন।

সেই রাতে আড্ডা বেশীক্ষণ চলল না পথক্লান্তির জন্য, উদরপূর্তির পরপরই সোজা ঘুমের কোলে, এবং পরদিন ভোরে মোরগের ডাক!

টেবিলে মারিয়া মা দিয়েছেন ঘরে তৈরি সসেজ, রুটি, মুরগীর সদ্য পয়দা করা ডিম আর স্যুপের সুস্বাদু প্রাতরাশ। নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে আলাপ হল অতীত এবং বর্তমানের জীবন নিয়ে, উনার মতে সোভিয়েত আমলে বৃদ্ধদের জন্য সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আরও বেশী ছিল, অন্তত অবসরে যারা যেতেন তাদের ভরসা ছিল রাষ্ট্রযন্ত্র , কিন্তু এখন অবস্থা পালটেছে- নগদ নারায়ণ পকেটে না থাকলে খুব সুবিধের হয় না জীবন, যেহেতু স্লোভাকিয়ার অর্থনীতি এখনও বেশ দুর্বল, উনার বেতন ৪০০ ইউরোর মত প্রতি মাসে এবং জিনিসের দাম বাড়ছে হুহু করে। আবার অন্যদিকে বাহিরের বিনিয়োগ আসছে আগের চেয়ে বেশী, দেশে বিদেশী নাগরিক আসছে বাঁধ ভাঙ্গা জলের মত, আবার স্লোভাকিয়া থেকে প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে নরওয়েসহ ইউরোপের অন্যান্য ধনী দেশগুলোতে। এমনভাবেই দিন চলে যাচ্ছে। নিজেদের বাড়ি আছে, গাড়ী আছে, দুই মেয়েই যথেষ্ট শিক্ষিত তারপরও পৌঢ়ার স্নেহময়ী মুখে অনাগত ভবিষ্যতের শঙ্কা খেলা করে। বোঝা গেল যথেষ্ট সামাজিক আত্নীয়তা এখনও চর্চা করে মধ্য ইউরোপের দেশটির বাসিন্দারা, মাঝে মাঝে বুড়ো মায়ের বাড়ীতে একসাথে হন সব ভাইবোন, চলে স্মৃতিচারণ, সবচেয়ে বড় কথা সন্তানের সাহচর্যে মায়ের আনন্দ লাভের জন্যই এমন পারিবারিক মিলন মেলা আয়োজন করেন তারা।

মারিয়ার ছোট বোন ইয়ুরমিলা জানাল আরেক ধরনের সামাজিক সমস্যার কথা, বর্তমান স্লোভাকিয়াতে হাঙ্গেরিয়ানরা এসেছে হাজারে হাজারে, তাদের ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য আলাদা স্কুল পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে, হাঙ্গেরির প্রাচীন ইতিহাস এবং চেকোস্লোভাকিয়া আমলের চেকদের সব সময়ে সর্ব বিষয়ে প্রাধান্যর জন্য অনেক নবীন স্লোভাকের মনেই নিজের জাতি নিয়ে এক অদ্ভুত উদাসীনতা কাজ করে, ভাবে হয়ত অন্য প্রতিবেশীদের কাছে আমাদের মান খুবই কম, ফলে অনেক স্লোভাকও হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় শিক্ষা লাভ করতে আগ্রহী বর্তমানে।

এর মাঝে আরেক পুরনো বন্ধু সিলভিয়া হুদুচকোভার বার্তা এসে হাজির, সেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে ব্রাতিস্লাভার কেন্দ্রে। আড্ডা মুলতবি রেখে তিনজনে আবার ট্রেন চেপে যাওয়া হল রাজধানীর দিকে। সিলিভিয়া চেক দেশের মেয়ে, লেখাপড়া করে যিলিন শহরের টমাস বাটা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে। আজ্ঞে উনিই সেই বাটা, মানে বাটা জুতার বাটা! এই ব্যাটা বাটা যে চেক দেশের মানুষ তা কে আগে জানত!, জেনেছিলাম বাংলাদেশে থাকার সময়ই চেকের এক বন্ধুর কাছে, সেই টমাস বাটা তার অক্ষয় জুতা এবং নতুন পলিসির কারণে বিস্তর টাকাকড়ি উপার্জন তো করেছিলেনই, তার বেশ কিছু দান করেছিলেন দাতব্য কাজে, তারই মধ্যে একটি টমাস বাটা বিশ্ব-বিদ্যালয়। মারিয়াও আগে সেখানেই পড়ত, চেক এবং স্লোভাক প্রজাতন্ত্রের সীমান্তের খুবই কাছে।

অবশেষে দেখা মিলল ব্রাতিস্লাভার, কিন্তু এই মহানগরী দেখার চেয়েও কোটিগুণ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম আরেক প্রিয়াকে দেখার জন্য, তার নাম পৃথিবীর সবচেয়ে ছন্দময় কোমল নামগুলোর একটি- দানিয়ুব। দানিয়ুব নামের অসাধারণ জলধারা চলে গেছে ব্রাতিস্লাভা শহরের মাঝ দিয়েই, আবার জলযানে চাপলেই তার সাথে যাওয়া যাবে অপূর্ব দুই শহর হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট এবং অস্ট্রিয়ার রাজধানী, তাদের অপেক্ষায় রেখে চললাম মানব সভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম প্রধান নদীটাকে কাছে থেকে ছুয়ে দেখতে। ( সালে ব্রাতিস্লাভা একমাত্র রাজধানী যার সাথে অন্য একাধিক দেশের সীমান্ত আছে! ) ইয়োহান স্ট্রাউস এই নদীকে নিয়ে ব্লু দানিয়ুব শিরোনামের জলতরঙ্গের মত সঙ্গীত রচনা করেছিলেন, হয়ত সেই নদীর প্রবাহ তখন স্বচ্ছ ছিল আকাশের নীলের মত, কিন্তু সোভিয়েত আমলে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা শিল্প কারখানার বর্জ্যে জল দূষিত হয়ে বুড়িগঙ্গার রূপ ধারণ করেছিল, এখন অবস্থা যদিও আগের চেয়ে ভাল, তারপরও সেই স্বচ্ছতোয়া রূপ আর ফিরে আসে নি। চেক ভাষায় দানিয়ুবকে বলে দুনাই, আর স্লোভাক ভাষায় দুনা। সিলভিয়া আর মারিয়ার মাঝে ব্যপক খুনসুটিও চলল এই নিয়ে, যদিও তাদের কথা চলছিল চেকেই, আর কাবাবমে হাড্ডি আমাদের জন্য ইংরেজিতে।

4448_201483735496_2921496_n

নদীর পারেই ব্রাতিস্লাভার প্রতীক দুর্গ, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেখানে তখন সংস্কার চলছিল, তাই তার উঁচু প্রাঙ্গণ থেকে শহর আর নদীর শোভা একসাথে উপভোগ করা ছাড়া অন্য কিছুর উপায় ছিল না।

4448_201483720496_4856751_n

সেইখানেই এক বন্ধু বৎসল স্লোভাক বৃদ্ধের সাথে দেখা হয়ে গেল যিনি নাতিকে নিয়ে এসেছেন কিছুটা সময় কাটানোর জন্য, বিদেশী দেখে কৌতূহলী হয়ে নিজে থেকে অনেক কথা বললেন ইংরেজিতে, জানালেন সোভিয়েত আমলে তাদের অন্যতম ক্ষেদ ছিল যে তারা ভ্রমণ করতে পারতেন না, কোনরকম অনুমতি মিলত না শখের কারণে অন্য দেশ ভ্রমণের, সেই সাথে অন্য সংস্কৃতির মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হত না। এখন চাইলেই যেতে পারেন কিন্তু শরীরে কুলোয় না, তাই নাতিকে নিয়ে বাহির হন নিজের শহরেই।

4448_201483705496_5434694_n

সেখান থেকে যাওয়া হল শহরের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রাতিস্লাভাকে নাৎসি এবং স্থানীয় ফ্যাসিবাদিদের হাত থেকে উদ্ধারে নিহত সোভিয়েত লাল ফৌজের সৈন্যদের সন্মানে নির্মিত ওয়্যার মেমরিয়াল স্লাভিন দেখার জন্য, যদিও বিশালাকার স্থাপত্যটি স্ট্যালিনিয় সোভিয়েত আমলের প্রচ্ছন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, ফলে যে দেশের মাটিতে সে অবস্থিত তার আলাদা কোন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যর দেখা মিলল না।

সেখান থেকে দুপুরের ভোজনপর্ব সারার জন্য যাওয়া হল শহর কেন্দ্রের এক রেস্তরাঁয়, মারিয়া অবশ্য বারবার বলছিল সেটা খুবই ব্যয়বহুল হবে, তারচেয়ে খানিক দূরের কোন হেঁসেলে যেতে। কিন্তু তখন ঠিক দুক্ষুর বেলা, বিলের কথার চেয়ে সময় এবং উদরের ছুঁচোর কেত্তন থামানোই মুখ্য হয়ে গেছিল। রেস্তরাঁয় ঢোকার আগে কেবল জানতে চেয়েছিলাম সেখানে আমার প্রিয় সোনালী তরল জালতি ব্ল্যাজাণ্ট (গোল্ডেন ফেজ্যান্ট) মিলবে কিনা, তার অফুরন্ত উৎসের নিশ্চয়তা পেয়েই অন্দর মহলে সেধোতেই মন ভাল হয়ে গেল, দারুণ নকশা ভেতরের।

4448_201483965496_5716248_n

4448_201483960496_5920811_n

দেয়ালে স্লোভাকিয়ার রবিনহুডের চাচাতো ভাইয়ের ছবি-

4448_201483985496_3350832_n

খাবার আসা শুরু হল , প্রথমেই সোনালী তরলের ঝঙ্কার এবং টঙ্কার, তার পরপরই পেয়েছিলাম এই দুর্দান্ত চিজ- রসুনের স্যুপ।

562146_10151846937995497_1751886433_n

পেয় বস্তুটির চেয়ে সেটা যে পাত্রে পরিবেশন করা হয়েছে তা অনেক অনেক বেশী আকর্ষণীয়- পাত্রটা আসলে একটা রুটি! গরম স্যুপ খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত আপনি পুরা পাত্রটাও খেয়ে ফেলবেন, ঢাকনা সহ! যেমনটি আমরা খেয়েছিলাম। বেশ উমদা,

4448_201483970496_6578490_n

এল সেদেশীয় নানা খাবার, ডেজার্ট, সবার শেষে প্রায় আধা মিটার লম্বা এক বিল।

4448_201483975496_6729303_n

ছয় খানা এক পাইন্টের বিয়ার, চার জনের মেইন ডিশ, ২ জনের রস্যুনের স্যুপ, ৪ জনের ডেজার্ট, এবং সেই সাথে কিছুমিছু টাইপ ছিল সব মিলিয়ের বিল এল-------- মাত্র ২১ ইউরো!!! মানে বাংলাদেশী টাকায় ২১০০ টাকা! তাই নিয়েই মারিয়া বলল, আর বইল না, আগে তরল খুবই সস্তা ছিল, এখন দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে! মনে মনে বলি মনু, ফিনল্যান্ডে এই টাকায় এই খাবারের ১৫%ও মিলবে না, তাও আবার শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই জমজমাট রেস্তোরাঁতে! আর ঢাকাতে, শায়েস্তা খাঁ- তুমি কোথায় হে?

ভরপেটে আসে পাশে হেঁটে বেড়ানো হল, রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ যেমন চোখে পড়ল,

4448_201483995496_5180833_n

তেমন নজরে আসল ভাঙাচোরা বেশ কিছু ঘরদোর।

262551_10150751018595497_4708592_n

অবাক হয়েছিলাম এক প্রায় ধ্বসে পড়া ভবনের জানলায় ভিনসেণ্ট ভ্যান গগের অনেকগুলো চিত্রকর্মের প্রতিকৃতি দেখে।

4448_201484080496_2799488_n

সবচেয়ে মনোরম লেগেছিল সেখানে সুনীল গির্জাটি, তবে বাহিরের দেয়াল যতখানি নীল, ভিতরে ততখানি মনোমুগ্ধকর নয়।

4448_201483930496_3446924_n

4448_201483925496_8220598_n

শহরের নতুন অংশ দেখার প্রতি খুব একটা উৎসাহ ছিল না আমাদের, সিলিভিয়ার আবার সেদিনই ফিরে যাবার তাড়া ছিল চেক দেশে, তাই এই সবুজ পার্কে নিজের মধ্যে আড্ডা দিয়েই খানিকটে সময় পার করে সিলভিকে বিদায় জানিয়ে আবার গালান্টার পথে।

406758_10152347755715497_1487576532_n

( অনেক দিন ধরেই ভাবছি স্লোভাকিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় লেখায় হাত দিব, সময় আর হয় না, এর মাঝে গত সপ্তাহে মারিয়ার সাথে ফোনে কথা বলার সময় সে জানাল তার মা আমার কথা জিজ্ঞাসা করেছেন, জানতে চেয়েছেন এখনও টো টো করছি নাকি বাংলাদেশে আছি। কোন ভিনদেশের একজন মা এই সামান্য অধমের কথা আদর ভরে মনে রেখেছেন ভেবেই বুকটা টনটন করে উঠল, তাই কাজের ফাকেই আজ লিখে ফেললাম তাদের নিয়ে ছোট্ট এই স্মৃতিচারণ==

4448_201484235496_3114819_n

কত অজানারে জানাইলে তুমি
কত ঘরে দিলে ঠাই
দূরকে করলে নিকট বন্ধু
পরকে করলে ভাই।। )


মন্তব্য

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

দূরকে করলে নিকট বন্ধু
পরকে করলে ভাই

হুম!
যথারীতি হিংসা...।
ঢাকনাসহ পুরা পাত্রটা খেতে মন চাইছে।

তারেক অণু এর ছবি

হ, আবার খাইতে ইচ্ছে করে! কিন্তু পার্সেল করা সম্ভব না যে! শয়তানী হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

বান্ধবীদের ছবিতে কিপটেমো করার জন্য জনতার মাইর আসবে কেমন দেখো শুধু

তারেক অণু এর ছবি

ক্যান! আমি কি কারো পাকা ভুট্টা ক্ষেতে নাপাম মারছি?

শামীমা রিমা এর ছবি

আমি কেনু তারেক অণু হইতে পারলুম না ???

তারেক অণু এর ছবি

অ্যাঁ খামোখা !

Ullash এর ছবি

২১০০টাকা তে এতো খাবার। ভাইজান পুরা মাসে কত লাগে ওইখানে চলতে?

তারেক অণু এর ছবি

পরের বার জেনে নেব ! খাইছে

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক
প্রতিবারের মতন - অসাধারণ। অণুদা আবারো ধন্যবাদ নতুন জায়গা দেখানোর জন্য।
অটঃ নীড়পাতায় কুক্কুরুক্কু লেখা দেখে Caetano Veloso এর গান টির কথা মনে পড়ে গেল - খুব প্রিয় গান।

তারেক অণু এর ছবি
জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এই তাহলে হাঙ্গেরিয়ান গুলাস? খাইছে
অণু, লেখা ও ছবি বরারবরের মতই চমৎকার। সোভিয়েত ইউনিইয়ন পরবর্তী সাধারণ মানুষের জীবনের কথা আরো জানতে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে যারা সেই সময়টাকে দেখেছেন, তাদের কথা। আরো লিখুন।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারেক অণু এর ছবি

চেস্টা করব, একবার বাল্টিকের দেশ গুলোতে গেছিলামই এই কারণে।

গুলাশ কিন্তু মধ্য ইউরোপের অনেক দেশেই হয় , নানা ভাবে

তুলিরেখা এর ছবি

চমৎকার!
ঘোরা আর খাওয়া সবই কিছুটা কিছুটা করে হয়ে গেল। হাসি
গোল গোল পুরভরা বড়ার মতন ঐ খাবার আর প্লেটের মাঝে টোমাটোকুচি শশাকুচির সমারোহ দেখে আরো ভালো লাগলো। কী নাম ঐ জিনিসের?

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারেক অণু এর ছবি

ভুলে গেছি খাইছে

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার নতুন লেখা দেখলেই রাগে আমার গা জ্বলে!!!! এই অবিচার মানি না মানবো না!!!!!!!!!!! চমৎকার লেখার জন্য হাততালি লেখা -গুড়- হয়েছে ( আপনার জন্য না কিন্তু)

তারেক অণু এর ছবি

অ্যাঁ আপনে কে !

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভাঙ্গাচোরা বাড়িঘরের ছবি দেখে একটা কথা মনে হলো। আপনার তোলা ছবির সংগ্রহে নানা দেশের গ্রাফিতির ছবি থাকলে সেগুলো নিয়ে এক/একাধিক ছবিব্লগ করুন। একটা দেশের ম্যাঙ্গো পিপলের ভাবনা বুঝতে গ্রাফিতির জুড়ি নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

মানব ইতিহাসে জ্ঞাত সর্বপ্রথম/প্রাচীণতম গ্রাফিতির ছবি দিয়ে গ্রাফিতি-প্রোজেক্টটা চালু করে দিলাম আপনার জন্য। বাকিটা তারেক অণুর দয়াঃ


****************************************

তারেক অণু এর ছবি

আপনিও শুরু করেন না ক্যান!

মন মাঝি এর ছবি

আমি? আমি কোত্থেকে শুরু করব! মোল্লার মত আমার দৌড় হচ্ছে ইন্টারনেট পর্যন্ত। উপ্রের ৪০০০ বছর পুরনো গ্রাফিতির ছবিটাওতো নেট থেকে নেয়া (সূত্র)। আমার মত 'একদেশদর্শী'-র পক্ষে এই কাজ সম্ভব না। আপনার পক্ষেই সম্ভব। ষষ্ঠ পাণ্ডব ভাইয়ের আইডিয়াটা কিন্তু খারাপ না। আমার কাছে তো খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে। ভেবে দেখতে পারেন। আমার দিক থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য এইটুকু যোগ করতে পারি - আধুনিক যুগে আধুনিক রুচিতে গ্রাফিতিকে আমরা অত্যন্ত অপছন্দ করলেও, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ম্যাঙ্গো পিপলের ম্যাঙ্গো শিল্প এই তুচ্ছ গ্রাফিতির হাত ধরেই হয়তো আধুনিক ফোনে্টিক লিখ্য ভাষার উৎপত্তি। নিদেনপক্ষে এটা তাদের সেই সৃষ্টির একটা সাক্ষ্য। সুতরাং এটা একদম ফেলনা জিনিষ না। আধুনিক গ্রাফিতিগুলির সেই মহান অবস্থান আর না থাকলেও, আপনি যদি আজ সেগুলির ছবি তুলে রাখেন - কে জানে এখন থেকে ৪০০০ বছর পরের কোন প্রত্নতত্ত্ববিদ হয়তো তারেক অণুর তোলা সেসব ছবি কালেশন ঘেঁটেই তাদের ভাষার উৎস খুঁজে বেড়াবে, এখন যেমন উপ্রের ছবির মধ্যে বর্তমানের প্রত্নতত্ত্ববিদরা খুঁজছেন ! আপনি তো মিয়াঁ তখন অমর ব্যক্তিত্ত্ব হয়ে যাবেন!!! দেঁতো হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আলতামিরার মতো গুহাচিত্রগুলোকে একেক জন একেক ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ এগুলোকে প্রার্থনা বা ধর্মচিন্তার উন্মেষ হিসাবে দেখেছেন (অস্ত্রবিদ্ধ রক্তাক্ত ষাঁড় মানে ..... এর কৃপায় আজ ষাঁড় শিকারে আমি সফল হবো ইত্যাদি ইত্যাদি), আবার কেউ এটাকে মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম (ভাষা) হিসাবে দেখেছেন (অস্ত্রবিদ্ধ রক্তাক্ত ষাঁড় মানে আজ আমি একটা ষাঁড় শিকারে সফল হয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি)।

আধুনিক কালে যখন কথ্য-লেখ্য ভাষার ও মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ অবারিত তখনো গ্রাফিতি টিকে আছে কোথাও প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে, কোথাও ভাবনা প্রকাশের ভিন্ন মাধ্যম হিসাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

শুধুমাত্র ধনী মানুষের প্রাসাদের অভ্যন্তরের বদলে নগরের দেয়ালে, উপাসনালয়ে, গণস্নানাগারে যারা ফ্রেসকো করা শুরু করেছিলেন তারা শিল্পকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মূক্ত করে দিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে গ্রাফিতি কখনো কারো কুক্ষিগত ছিল না।

সমর্থন করার জন্য মনমাঝিকে ধন্যবাদ। এখন তারেক অণুসহ অন্যান্য টোটোইয়ান ও ফটুরে সচলরা এই ব্যাপারে এগিয়ে আসলে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ প্রস্তাব! সবাই এগিয়ে আসুন

রাত-প্রহরী এর ছবি

নতুন দেশ, মানুষ, খাবার, সাথে তারেক অনু'র লেখা - আর কি চাই? শুধু জানতে চাই, গুলাশ এর প্রধান উপাদান কি?
অনেক ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি
আব্দুল্লাহ এ.এম এর ছবি

আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হবো, তখন আপনাকে বানাবো ভ্রমনমন্ত্রী।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

তারেক অণু এর ছবি

শয়তানী হাসি যদির কথা নদীতে

শুভায়ন এর ছবি

গুরু গুরু লেখাতে আর ছবিতে। তবে যাজক মহাশয়ের নামটি মনে হয় গ্রেগর ‌যোহান মেন্ডেল।

তারেক অণু এর ছবি

হ্যাঁ

পিনাক পাণি এর ছবি

ভাই রসুনের স্যুপ খাইতে মন চায়। রেসিপি আছে আপনার কাছে? চলুক

তারেক অণু এর ছবি

নাহ, আমি শুধু খেতে পারি শয়তানী হাসি

মন মাঝি এর ছবি

চলুক

****************************************

তারেক অণু এর ছবি
তানিম এহসান এর ছবি

দারুণ।

তারেক অণু এর ছবি
Sujan Hossain Khan এর ছবি

বস আমার হিংসা হছ্ছে আপনার লেখা গুলান পইরা ।
মাল্লু নাই কিন্ত হিংসা হই।।।।।।।।।।।।

তারেক অণু এর ছবি
কিষান এর ছবি

সৈয়দ মুজতবা আলীর বই পড়তাম আর ভাবতাম একটা মানুষ ক্যামনে এত দেশের এত সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়, মিশে যায়। মনে হইত এইটা অদ্বিতীয় ব্যাপার, আর কারো পক্ষে সম্ভব না।

আপনারে দেখে মনে হয়, সম্ভব হাসি

তারেক অণু এর ছবি

কার সাথে কী ! অ্যাঁ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।