নরকেও মৃত্যু নেই--প্রীতি নেই স্বর্গের ভিতরে;
মর্ত্যে সেই স্বর্গ নরকের প্রতি সৎ অবিশ্বাস
নিস্তেজ প্রতীতি নিয়ে মনীষীরা প্রচারিত করে।
এমন কথা লিখেছেন বলেই তো তিনি জীবনানন্দ, যে কথাগুলো সাথী থাকে আসমুদ্রহিমাচল, উত্তর সাগর থেকে দক্ষিণে দ্বীপে, একটা বিবর্ণ খড়কুটো থেকে গুটিসুটি মেরে থাকা আকাশের চাঁদে।
অন্য এক আকাশের মত চোখ নিয়ে
আমরা হেসেছি,
আমরা খেলেছি;
স্মরনীয় উত্তরাধিকারে কোনো গ্লানি নেই ভেবে
একদিন ভালোবেসে গেছি।
ভালবেসেছি প্রিয় কবি আপনার সৃষ্টি।
কারা কবে কথা বলেছিল,
ভালোবেসে এসেছিল কাছে;
তারা নেই, তাদের প্রতীক হয়ে তবু
কয়েকটি পুরোনো গাছ আছে !
আমরা মধ্যম পথে বিকেলের ছায়ায় রয়েছি
একটি পৃথিবী নষ্ট হ'য়ে গেছে আমাদের আগে,
আরেকটি পৃথিবীর দাবি
স্থির ক'রে নিতে হ'লে লাগে
সে কোন প্রথম ভোরে পৃথিবীতে ছিল যে সন্তান
অঙ্কুরের মতো আজ জেগেছে সে জীবনের বেগে!
আমার দেহের গন্ধ পাই তার শরীরের ঘ্রাণ —
সিন্ধুর ফেনার গন্ধ আমার শরীরে আছে লেগে!
পৃথিবী রয়েছে জেগে চক্ষু মেলে — তার সাথে সেও আছে জেগে!
ভালোবাসিয়াছি আমি অস্তচাঁদ, -ক্লান্ত শেষপ্রহরের শশী!
-অঘোর ঘুমের ঘোরে ঢলে যবে কালো নদী-ঢেউয়ের কলসী,
নিঝ্ঝুম বিছানার পরে
মেঘবৌ’র খোঁপাখসা জোছনাফুল চুপে চুপে ঝরে,-
চেয়ে থাকি চোখ তুলে’-যেন মোর পলাতকা প্রিয়া
মেঘের ঘোমটা তুলে’ প্রেত-চাঁদে সচকিতে ওঠে শিহরিয়া!
শামুক গুগলিগুলো পড়ে আছে শ্যাওলার মলিন সবুজে-
তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-ছাওয়া মাঠে খুঁজে,
ঠেস্ দিয়ে বসে আর থাকি নাকো যদি বুনো চালতার গায়ে,
তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকার মৃত্যুর আহ্বান-
থে পথে — থেমে — থেমে — থেমে
খুঁজিব কি তারে —
এখানের আলোয় আঁধারে
যেইজন বেঁধেছিল বাসা!
মাটির শরীরে তার ছিল যে পিপাসা
আর যেই ব্যথা ছিল — যেই ঠোট চুল
যেই চোখ, যেই হাত, আর যে আঙুল
রক্ত আর মাংসের স্পর্শসুখভরা
যেই দেহ একদিন পৃথিবীর ঘ্রাণের পসরা
পেয়েছিল — আর তার ধানী সুরা করেছিল পান,
একদিন শুনেছে যে জল আর ফসলের গান,
দেখেছে যে ঐ নীল আকাশের ছবি
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ
আর — এক দেশের এক রূপকথা বলিল আর — একজন,
কহিল সে উত্তর — সাগরে
আর নাই কেউ! —
জোছনা আর সাগরের ঢেউ
উচুনিচু পাথরের পরে
হাতে হাত ধরে
সেইখানে; কখন জেগেছে তারা — তারপর ঘুমাল কখন!
ফেনার মতন তারা ঠান্ডা — শাদা
আর তারা ঢেউয়ের মতন
জড়ায়ে জড়ায়ে যায় সাগরের জলে!
ঢেউয়ের মতন তারা ঢলে।
সেই জলমেয়েদের স্তন
ঠান্ডা, শাদা, বরফের কুঁচির মতন!
তাহাদের মুখ চোখ ভিজে,
ফেনার শেমিজে
তাহাদের শরীর পিছল!
কাচের গুড়ির মতো শিশিরের জল
চাঁদের বুকের থেকে ঝরে
উত্তর সাগরে!
পায়ে — চলা পথ ছেড়ে ভাসে তারা সাগরেরগায়ে —
কাঁকরের রক্ত কই তাহাদের পায়ে!
রূপার মতন চুল তাহাদের ঝিক্মিক্ করে
উত্তর সাগরে
বরফের কুঁচির মতন
সেই জলমেয়েদের স্তন
মুখ বুক ভিজে
ফেনার শেমিজে
শরীর পিছল!
কাচের গুড়ির মতো শিশিরের জল
চাদের বুকের থেকে ঝরে
উত্তর সাগরে!
উত্তর সাগরে!
যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিলো একদিন
পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হ'লে,
তবুও একটি নদী দেখা যেতো শুধু তারপর;
কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে
নদীর রেখার পার লক্ষ্য ক'রে চলে;
সূর্যের সমস্ত গোল সোনার ভিতরে
মানুষের শরীরের স্থিরতর মর্যাদার মতো
তার সেই মূর্তি এসে পড়ে।
নির্জন জলের রঙ তাকায়ে রয়েছে;
স্থানান্তরিত হয়ে দিবসের আলোর ভিতরে
নিজের মুখের ঠান্ডা জলরেখা নিয়ে
পুনরায় শ্যাম পরগাছা সৃষ্টি করে;
মনে হয় প্রাণ এক দূর স্বচ্ছ সাগরের কূলে
জন্ম নিয়েছিলো কবে;
পিছে মৃত্যুহীন জন্মহীন চিহ্নহীন
কুয়াশার যে ইঙ্গিত ছিলো --
সেই সব ধীরে ধীরে ভুলে গিয়ে অন্য এক মানে
পেয়েছিলো এখানে ভূমিষ্ঠ হয়ে -- আলো জল আকাশের টানে;
কেন যেন কাকে ভালোবেসে!
সূর্যের আলো মেটায় খোরাক কার ;
সেই কথা বোঝা ভার।
যে পাতা সবুজ ছিল, তবুও হলুদ হতে হয় —
শীতের হাড়ের হাত আজও তারে যায় নাই ছুঁয়ে —
যে মুখ যুবার ছিল, তবু যার হয়ে যায় ক্ষয়,
হেমন্ত রাতের আগে ঝরে যায় — পড়ে যায় নুয়ে —
কোথাও পাখির শব্দ শুনি;
কোনো দিকে সমুদ্রের সুর;
কোথাও ভোরের বেলা র’য়ে গেছে – তবে।
অগণন মানুষের মৃত্যু হ’লে – অন্ধকারে জীবিত ও মৃতের হৃদয়
বিস্মিতের মতো চেয়ে আছে;
এ কোন সিন্ধুর সুর:
মরণের – জীবনের?
এ কি ভোর?
অনন্ত রাত্রির মতো মনে হয় তবু।
একটি রাত্রির ব্যথা সয়ে -
সময় কি অবশেষে এ-রকম ভোরবেলা হয়ে
আগামী রাতের কালপুরুষের শস্য বুকে ক’রে জেগে ওঠে?
কোথাও ডানার শব্দ শুনি;
কোন দিকে সমুদ্রের সুর -
দক্ষিণের দিকে,
উত্তরের দিকে,
পশ্চিমের পানে?
যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের -
মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
সুপ্রিয় একলহমা এই পোস্টটি তোমার জন্য।
আর পাঠক, দর্শকদের জন্য প্রিয় কবিকে নিয়ে একলহমার লেখা একটি কবিতা --
জীবনানন্দ
তার সাথে সাথে আমাদের বেড়ে ওঠা, পথ চলা,
দেখে নেওয়া - প্রিয়তম মুখ, চাঁদ ডুবে গেলে পর
মরে যাওয়া, ফিরে, ফিরে আসা - অণু পরমাণু হয়ে
আলো হয়ে, শূণ্য হয়ে। জীবনের স্বাদ জিভের ভিতর
নিরন্তর মিশে যায়, অমৃত ফলের মত, ফ্যানে গলা
ভাত, ধোঁয়া ওঠা, শীতের সন্ধ্যায় অনেক ক্ষুধার পর
নিজস্ব মানুষের ঘামে ভেজা মুখ কোলে লয়ে
বাদামী রমণীর স্তন যেই ভাবে ঢেকে ফেলে চরাচর।
রৌদ্রে ও জ্যোৎস্নায়, কাপাসডাঙার বিলে বালিহাঁস
তাহাদের মতো অনায়াসে সাঁতরায়ে নিজের ভাষায়
এই সাধ বুকে - বাংলার নীল জলে আমাদের লাশ
সুবর্ণ গোধূলিতে এইসব ইতিহাস টুপ টুপ ডুবে যায়।
আবার জন্মালে যেন বাংলার মাটি, সবুজ ধানের ভোর
শাপলার ফুল, জীবনানন্দ, জেগে থাকে বুকের ভিতর।।
সিরিজের বাকী পর্বগুলি এইখানে
মন্তব্য
বাহ, দুজনকেই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
বরাবরের মত স্তব্ধ হয়ে দেখলাম। এবার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সকালের আকাশের মত বয়স ছবিটা। স্যামদা তো আসবেই এই পোস্টে, আমার মন্তব্যও দেখবে। ব্যানারের দাবী জানিয়ে রাখলাম।
স্যাম দা একটা অভিশাপ
facebook
চমত্কার পোস্ট। আহা জীবন কবি। কবিতা আর ছবির অসাধারণ মেলবন্ধন। একলহমার কবিতাো ভালো লেগেছে।
'সুবর্ণ গোধূলিতে এইসব ইতিহাস টুপ টুপ ডুবে যায়।'
বাহ
স্বয়ম
facebook
৭ নং ছবিটা [অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ] ব্যানারের জন্য আদর্শ!
অ্যাটেনশন : স্যাম 'ব্যানার্জি'।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ব্যানার্জি আজকাল বেশী ব্যস্ত
facebook
জীবন দা আর অণুদার কম্বিনেশনে মনে মনে কত ব্যানার বানাই - তবে সত্যি কথা হল ব্যানার এর চাইতে বেশি ভাল লাগবে পোস্টার বা বড় দেয়াল জুড়ে কোন ইন্সটলেশনে - এই সিরিজের একটা অডিও/ভিজ্যুয়াল এর জন্য কতদিন থেকে বলে যাচ্ছি - ব্যাটা পাত্তাই দিচ্ছেনা।
এহ
facebook
এহ! এহ বললেই হল? কতদিন থেকে যে কথা বলা হচ্ছে সেটা করে ফেললেই হয়, নাকি? দারুণ হবে।
facebook
একলহমার মন্তব্য পড়ে-ই মনে হয়েছিল তলে তলে ঘটনা আছে, ভুল ভাবি নাই। সিরিজ চলমান থাকুক।
উপরে স্যামদার একটা চমৎকার প্রস্তাবে “এহ” প্রয়োগ এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাইলাম।
পাতার উপর শামুকের ছবিটা অসসসসাধারণ!!!
অবশ্য সবগুলা ছবিই দারুণ!!!
এস্তোনিয়ার এক বনে তোলা, শ্যাওলার উপরে শামুক পেয়ে যাব আশা করি একদিন!
facebook
আমরাও ফুটুক দেখতে পাবো আশা করি...
আমরাও ফুটুক দেখতে পাব আশা করি।
------------------
সুবোধ অবোধ
facebook
দিনরাত-দিবাগত পাপ; ক্ষয় করবার মতো ব্যবহার শুধু!! (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
দিনরাত-দিবাগত পাপ;
facebook
ছবি আর কবিতা একাকার।
facebook
জীবনানন্দ আর কবিতা আর ছবি- এই তিনে মিলে যে সিম্ফনী তৈরী করলেন, অণু ভাইয়া, সেটার কোনো তুলনা নেই!
-এস এম নিয়াজ মাওলা
facebook
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ! তবে-
কবি একলহমা'র কবিতাটার সাথে রাখি-বন্ধনের ছবিটা দেখা যাচ্ছে না কেন !! এজন্য অণুকে
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
facebook
এই র'ম লজর দিলে চলে!
facebook
অণুর এই সিরিজ দারুণ লাগে। যদিও সবগুলো দেখা হয়নি আমার।
অ:ট:
একটা লম্বা সময় ধরে সচলে আসা হয়নি আমার। হুটহাট আসি আর যাই। এর মধ্যে দেখি স্যাম নামের একজনকে সবাই 'প্রিয় ব্যানার্জি' বলে ডাকাডাকি করে। আমি ভাবলাম ওহ! লুক্টার পদবী মনে হয় ব্যানার্জি। এই সেদিন খেতে বসে ধাঁ করে মনে হলো আরে! স্যাম ভাইয়া ব্যানার বানায় তাই তাকে সবাই ব্যানার্জি ডাকে।
বেকুব গাছে ধরে না। সচলেই ঘুরাঘুরি করে
facebook
একটু আগে পর্যন্ত আমিও তো তাই মনে করতেছিলাম! (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অপার্থিব!
এই সিরিজের শ্রেষ্ঠ পর্বের কোন প্রতিযোগিতা হলে এই পোস্ট কঠিন প্রতিদ্বন্দী হবে।
বললেই হল! দেখি একটা ব্যানার! তাপ্পর কথা হবে
facebook
প্রিয় অণুদাদা,
তোমার সমস্ত লেখার-ই আমি মুগ্ধ অনুরাগী। ঘুরে, ঘুরে পড়ে আসি তাদের। কিন্তু তোমার এই সিরিজ-টার আমার কাছে কোন তুলনাই নেই। এই সিরিজের প্রতিটি পোস্ট-ই আমার দুই প্রিয় প্রতিভার অনুপম সৃষ্টির আশ্চর্য সংশ্লেষ।
অণুদাদা, তোমার তুলনা শুধু তুমি-ই।
কিছু কিছু আশ্চর্য সৃষ্টি দেখে আমরা অবাক হয়ে ভাবি
“এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় না কো আর”
যেমন জীবনানন্দ, যেমন তারেক অণু, যেমন সচলায়তন। আমি নিশ্চিত, প্রিয় সচলায়তনের প্রায় সক্কলেই আমার এই কথার সাথে একমত হবে। (যারা হবেন না, হবেন না - আমার কিছু যায় আসে না। )
কিন্তু অণুদাদা, যে ভালবাসা তুমি আজ আমায় দিলে
তার সমাদর করার মত সম্বল আমার কিছু নেই। আছে শুধু অল্প কিছু শব্দ, তারাও সময়মত সাথ দেয় না। কি বলব বলো!
কোনদিন দেখা হলে
সোনালী তরল হাতে
দুই জনে মিলে
বুড়ি চাঁদটার -
দুই হাত ধরে
সাদা জোছনার সাথে
প্রহরে প্রহরে
করে দেবো পার!
- একলহমা
facebook
সবগুলো ছবিই দারুণ। তবে আমার মনে হয় পয়লা ছবিটা অন্যগুলোর চাইতে অনেক ওপরে ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় সবগুলো ছবিতেই 'কোথাও কেউ নেই' রকমের হাহাকার ... এবং এই 'তবু কেন এমন একাকী' প্রশ্নের হৃদয়-বেঁধা হাহাকারই মনে হয় জীবনানন্দ!
ছবিগুলোর সাথে জীবনানন্দ মিলিমিশে গেছে একেবারে। মন-কেমন-করা... তবু দারুণ সুন্দর।
facebook
সবগুলো ছবিই অসাধারন! ফড়িংর ছবিটা, অদ্ভূত আঁধারের ছবিটা, জেলে নৌকার ছবিটা..................
আব্দুল্লাহ এ এম
facebook
হিমশীতল মৃত্যুর মতো কী ভয়ঙ্কর নির্জনতা প্রতিটা ছবি ও পঙক্তির মধ্যে ! বুকটা শিনশিন করে ওঠে---!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
facebook
নতুন মন্তব্য করুন