বারিকা, আমাদের আজকের গল্পের প্রধান চরিত্র, বয়সের ভারে থুরথুরে কিন্তু মনের বলে বলীয়ান এক ক্রোয়াট দিদিমা তিনি। থাকেন জাগরেব শহরে থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে, নিজের খামারেই কাজ করেন তিনি উদয়াস্ত। উৎপাদিত শাকসবজি পরিবারের জন্য রেখে উদ্বৃত্তটুকুর সাথে মুরগীর ডিম, গরুর দুধ , শরতের মাশরুম ইত্যাদি ঝুড়িতে ভরে সেই ভারী ঝুড়ি মাথায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে যান জাগরেবের সবুজ বাজারে। বিকিকিনি শেষে ফিরতেও হয় হেঁটে হেঁটেই। সেটা মনে হয় ১৬০০ সাল, নাকি ১৪০০? কিচ্ছু যায় আসে না আদতেই, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে এসেছে পরিশ্রমী ক্রোয়েশিয়ান মহিলাদের এই ধারা।
কালক্রমে জাগরেব পরিণত হয়েছে মহানগরীতে, ঠেলাগাড়ী, ঘোড়ার গাড়ীর জায়গা দখল করে নিয়েছে মোটর গাড়ীর ঘড়ঘড়ে আওয়াজ, মেঠোপথের বদলে পীচ ঢালা সড়ক আর ক্রোয়েশিয়ার সবখানে, কিন্তু জাগরেবের সবুজ বাজার আজও জমজমাট।
মুল শহর কেন্দ্রে যে বিশাল চত্বর অবস্থিত তার এক কোনেই থরে থরে সাজানো বহু বর্ণা ফুলের সম্ভার স্বাগতম জানাল আমাদের এই বিখ্যাত গ্রীন মার্কেটে ( খবরদার বুদ্ধিবেশ্যা মাহমুদুরের কথা তুলবেন না এইখানে, এই গ্রীন সেই গ্রীন নহে) , দুর্জনেরা বলে এই ফুলের মূল ক্রেতা অফিস ফেরতা স্বামীরা যারা কিনা ফুটবল নিয়ে পানশালায় ২ ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে এখন বৌ এর মন গলাতে ফুলের তোড়া নিয়ে যাচ্ছে!
সবই যে বাগানে ফোঁটা কাঁটা মুক্ত গোলাপ তা নয়, সাজিয়ে রাখা একাধিক তোড়াতে বুনো ফুলের সুবাসের সাথে সাথে লকলকে সতেজ সবুজ ঘাসের বিলোল উপস্থিতি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল উম্মুক্ত প্রান্তরের বলকানের খামার বাড়ীতে। আজ এই বাজার ৩ ভাগে বিভক্ত, একদিকে শুধুই ফুল নিয়ে বসেন দিদিমারা, খুব একটা দামাদামি চলে না, কারণ সবাই-ই সাহায্য করে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে।
কঠোর পরিশ্রমী কৃষিজীবী কাম ব্যবসায়ী ক্রোয়েশিয়ান মহিলাদের সম্বোধন করা কুমিকা বলে, আর এই কুমিকাদের মাঝে ক্রোয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে খুবই পরিচিত একটি নাম বারিকা। বারিকাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সবুজ বাজারের উপরের অংশে সিঁড়ির সামনে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে,
যাকে সুপ্রভাত বলে ডানে ঘুরতেই দেখবেন তাজা সবজি আর ফলের সমাহার। উজ্জল রঙের তরমুজ, কলা, স্ট্রবেরি থেকে শুরু করে নানা ধরনের বেরি মজুদ সেখানে, মৌসুম বিশেষে ব্যাঙের ছাতাও মেলে এন্তার। আর আগের মতই দুধের সাথে সাথে বিক্রি হয় স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত চীজ।
মুলত এই অংশটিই সবচেয়ে জমজমাট, ক্রেতা হিসেবে দেশী-বিদেশী সবাই হাজির। অনেকে টসটসে রসালো ফলে কামড় বসিয়ে মজা পাবার পর সেখানেই ফলের অস্তিত্ব নাশ করে আবার কিনছে বেশী পরিমাণে। ফল-সবজির বাজারে এককালে দামাদামির মজার প্রতিযোগিতা থাকলেও এখন এক দামের যুগ, তবে অবশ্যই আলতো দামাদামি চলতে পারে দোকান বন্ধের আগে।
সকালে শুরু হবার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা খোলা থাকে এই সবুজ বাজার, যদিও ফুলের অংশটি অনেক সময়ই দুপুরে গড়িয়ে বিকেলেও সুবাস বিতরণ করে। সেই সাথে একটি ছোট্ট অংশে আছে কাপড়, হাতে বোনা টেবিলক্লথ, জানালার পর্দার জগত আর সেই সাথে কিছু ট্যুরিস্ট আইটেম। সবুজ বাজারের এই অংশ আবার ঠিক খোলা আকাশের নিচে নয়, শক্ত পোক্ত ছাদ আছে মাথা উপরে, সেখান আবার জ্যাম জেলিও বিক্রি হয়।
হাতে বেশ তাড়া, জাগরেবের সবচেয়ে উঁচু স্থানে যেয়ে শহরটাকে অন্যরূপে অবলোকনের সময় হয়ে আসছে, তাই সাত তাড়াতাড়ি এক বারিকার কাছ থেকে কিছু রাপসবেরি কিনে কুশল বিনিময় করে রওনা হতে হল শহরের অন্য মাথায়।
মন্তব্য
হৈ হৈ ... ৩০১ নাম্বার
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই গোনাগুণী কেনু!
facebook
কিছু কথা থাক না গুপন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
facebook
মনে হলো, আমি ঘুরছি সবুজ সেই বাজারে...
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শাহবাগে?
facebook
ধুরু মিয়া। শাহবাগ সবুজ হইলে আমার বাড়ি আমাজান ফরেস্ট। শাহবাগতো গাড়ির গার্বেজ ছাড়া আর কিছুই না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
facebook
একজন পরিশ্রমী মহিলার স্ট্যাচু - কুর্নিশ করি এই ভাবনা, এই কাজকে।
খুব ভাল লাগল, অণু-দাদা, চলো, চলতে থাকো, আমরাও চলি সাথে সাথে, এইভাবেই
- একলহমা
একজন পরিশ্রমী মহিলার স্ট্যাচু - কুর্নিশ করি এই ভাবনা, এই কাজকে।
facebook
আর মাত্র ১৯৯ তারপরেই পার্টিশার্টি
জনপদ আর তার মানুষগুলো নিয়ে আপনার লেখাগুলো আমার বিশেষ প্রিয় - এরকম।
পার্টিশার্টি কুতায় !
facebook
পার্টি এবং খাওয়াদাওয়া।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
facebook
খুব ভালো লাগলো দিদিমাদের কর্মময় জীবন কাহিনি পড়ে
এদিককার ফার্মাস মার্কেটের মত খানিকটা। অবশ্য এখানে ফুলের সমাহার থাকে না।
খুব ভোর ভোর শুরু হয়ে দশটার মধ্যেই চটিবাটি গুটিয়ে চলে যায় সবাই।
সব বিক্রি হয়ে যায় এত্ত তাড়াতাড়ি?
facebook
facebook
ইয়ে, আমার জন্য পাঁচশো গ্রাম টসটসে ষ্ট্রবেরি কিন্যা আইনেন তো।
আব্দুল্লাহ এ এম
ইয়ে, মানে কিনে খেয়ে হজম করে ফেললুম যে
facebook
দামাদামি'র চে বাজে জিনিস আর নাই!
ওমা, লেখাতো শেষ হয়নি! তাপ্পর?
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
হু, কিন্তু অনেকেই সেইটা এঞ্জয় করে !
facebook
খুব ভাল লাগল ! শ্রমের এমন সামাজিক স্বীকৃতির ঐতিহ্য আমাদের এখানে আমরাও কি তৈরি করতে পারি না? বারিকা। বড় সুন্দর ও অর্থবাহী এই নাম। আমার মেয়ে থাকলে তার এই নাম রাখতাম।
সুমিতা সরকার
facebook
আহা, খুব বর্ণিল একটি বাজার !
আসলেই
facebook
কোন জায়গাতে গেলে সেইখানের লোকার বাজার না দেখলে কিছুই দেখা হয় না, কথাটা আসলেই ঠিক।
তিনশো লেখা তো হয়ে গেলো, আর কষ্টমষ্ট করে দুইশটা লেখা লিখে ফেলেন। স্যাম ভাই যা কইলো, পার্টি হবে পার্টি!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
লোকাল?
facebook
বলকানের এই দিদিমারা অনেক রক্তপাত দেখেছে জীবনে, এদের নিয়ে লেখাটা পড়তে ভাল লাগলো, তারা কিছুটা শান্তিতে আছে দেখে আনন্দিত হলাম ........দিদিমার স্টাচুটা চমত্কার!
.....জিপসি
facebook
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন