২০০৫ সালের গ্রীষ্ম, পাখিপ্রেমী ইনাম আল হক ইউরোপ ভ্রমণের এক পর্যায়ে ফিনল্যান্ডে এসেছেন, তাও আবার অজ পাড়া গাঁ , প্রিয়তম শহর ভারকাউসে। উত্তুরে নানা পাখির খোঁজে হ্রদ, বন, জলা, বাদা, দীঘল ঘাসের প্রান্তর, পরিত্যক্ত ভবন কিছুই বাদ রাখছি না আমরা, সর্বতো সহযোগিতায় আছে ভারকাউসের অন্যান্য পাখিপ্রেমীরা, তাদের কেউ ভোর ৬ টায় আমাদের নিয়ে যান লুকিয়ে থাকা গোপন হ্রদে, যার নীলিমায় সাঁতরে বেড়ায় লাল গলা লুন, কেউ আবার স্বর্ণালী সন্ধ্যায় নিয়ে যায় ঘাসবনে, যার শীষে শীষে শোনা যায় পাখির কলতান।
সেই বছরই ফিনল্যান্ডে পাখির পায়ে আংটি পরানোর ১০০ বছর পূর্তি হল, ইনাম ভাই বেশ আফসোস করেই বললেন পাখি জগত নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ দেশ না, কিন্তু তার থেকেও আমরা অন্তত শত বর্ষ পিছিয়ে আছি ! দেখেন যদি পাখির আংটি পরানোর লাইসেন্স পেয়ে যান তাহলে দারুণ একটা কাজ হবে, হয়ত বাংলাদেশে একদিন আমরা শুরু করতে পারব পাখিকে আংটি পরানোর প্রশিক্ষণকেন্দ্র। সেই সাথে ফিনিশ বন্ধুদের জানিয়ে রাখলেন তার অবস্থানের সময়ে কোন আংটি পরানোর ঘটনা ঘটলে অবশ্যই জানাতে-
( তিমোর বাড়ীতে পাখির আংটি পর্যবেক্ষণ করছেন ইনাম ভাই, আমার সাথে সঙ্গী মারকুস মিয়েত্তিনেন)
তার একদিন পরেই বন্ধু তিমো ইম্মোনেনের ফোন, ভারকাউসের এক পরিচিত মহিলা বাসা থেকে পড়ে যাওয়া সোয়ালোর বাচ্চা ( Common Swallow, Swallowর বাংলা আবাবিল হলেও এই পাখিটি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না বিধায় এই লেখাতে সোয়ালো বলেই উল্লেখ করলাম) লালন করছেন কিছু দিনের জন্য, আশা করছেন জলদি পাখিটি ওড়ার ক্ষমতা অর্জন করলেই ছেড়ে দেবেন নীলাকাশে। এখন তিমো যাচ্ছে সেই ক্ষুদে সোয়ালোর পায়ে আংটি পরাতে, চাইলেই আমরা তার সঙ্গী হতে পারি।
( নিজের হাতে আংটি পরানো প্যাঁচাসহ তিমো)
উল্লেখ্য, এর আগের বছরই হান্নু কারক্কিয়াইনেন নামের আমাদের আরেক ফিনিশ বন্ধুর আংটি পরানো সোয়ালো প্রায় সারা বিশ্ব পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে গেছিল, পরে সেখানের পক্ষীবিদরা সেই আংটি দেখে তাতে লেখা সংকেত উদ্ধার করে হান্নুকে জানিয়েছিল।
ব্যস চললাম সেই প্রকৃতিপ্রেমীর বাড়ী সেদিন সন্ধ্যায়ই। কী অপূর্ব একরত্তি প্রাণ হাতের মুঠোয়। এখনই ইতিউতি তাকাচ্ছে, কদিন পরেই ওড়ার উপযুক্ত পালক গজালেই আকাশের বুক চিরে চলে যাবে দূর দিগন্তে। ফি বছরই বাসা থেকে পড়ে কোটি কোটি পাখির ছানা মারা যায় সারা বিশ্বে, এই প্রাণটি সেই একই পরিণতির শিকার হয় নি এক দয়ালু মানুষের জন্যই। এর মাঝেই তার নাম পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে- এপসু!
মহা সমারোহে তার পায়ে আংটি পরানো হল, ইনাম ভাই খুব আগ্রহ নিয়ে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করে রাখলেন, বললেন এটি তার চোখে দেখা প্রথম বার্ড রিংগিং।
এর কদিন পরেই এপসু নামের সোয়ালোটি উড়ে দূর দেশে চলে যায় প্রকৃতির তাগিদে। সেই মহিলা ইমেইলে আমাকে জানিয়েছিলেন আনন্দমোড়া সংবাদটি।
( অবশেষে ইনাম ভাইয়ের স্বপ্নপূরণ হল, ২০১০ সালে সোনাদিয়া দ্বীপে বাংলাদেশের প্রথম বার্ড রিংগিং ক্যাম্প শুরু হয়, বিদেশের খ্যাতনামা পক্ষীবীদদের তত্ত্বাবধানে দেশের পাখিপ্রেমী তরুণ-তরুণীরা এই কাজে অংশ নেয়। পরবর্তীতে টাঙ্গুয়া হাওর, বাইক্কা বিল, লাওয়াছড়া ইত্যাদি স্থানেও পাখির পায়ের আংটি পরানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই বছর দেওয়া হবে রাঙামাটি এবং লাওয়াছড়ায়।
সাধারণত অভিজ্ঞ শিক্ষকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ পাখি রিং করলে ( অনেক সময় কয়েক হাজার, এবং তা প্রজাতির উপর নির্ভর করে) সেই ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে আংটি পরানোর অনুমতি বা লাইসেন্স দেওয়া হয়। খুবই আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যুক্তরাজ্যে বিশেষ ক্যাম্পে অংশ নিয়ে সামিউল এবং ইশরাত নামে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের দুই তরুণ-তরুণী সেই অনুমতি অর্জন করেছেন। আশা করছি বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে)।
মন্তব্য
অনু ভাই,রিং টা কি কোন ধরনের ট্র্যাকার?
এ ব্যাপারে আমি আসলে তেমন কিছু জানিনা।
-ছায়াবৃত্ত
এই নিয়ে আসলে একটা আলাদা পোস্ট দেওয়া দরকার।
খুবই হালকা ধাতব চাকতি, যাতে বিশেষ কোডে ব্যক্তি, স্থান, দেশের নাম থাকে।
এই থেকে সহজেই পাখির পরিযায়ী পথ বোঝা যায়
facebook
কি সুন্দর পাখীটা । আগে কখনো ছবি দেখিনি। না জানি আকাশে উড়লে কি দারুন লাগে দেখতে!
ভালো থাকুক
বাংলাদেশে এর জাতভাইয়েরা আছে, আবাবিল
facebook
নাটোর অঞ্চলে মহাসমারোহে যে পাখির রোষ্ট খাওয়া হয়, সেইটা?
সেটা আলাদা যতদূর মনে হচ্ছে
facebook
সামিউল এবং ইশরাত শুভেচ্ছা এনাম ভাইরে আর শ্রদ্ধা জানায়ে কাজ নাই... শেষ হবেনা... বেহুদা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
মাছদের ক্ষেত্রে ট্যাগ দিয়ে তাদের পরযায়ী বৈশিষ্ট্য,বৃদ্ধি এগুলো দেখা হয় পড়েছিলাম,পাখিদের টা পড়া হয়নি।তাই পাখিদেরটা নিয়ে একটা ই--য়া--- লম্বা পোস্ট পাওয়ার আশা করছি।
মাসুদ সজীব
facebook
যথারীতি লেখা পড়ে দারুণ লাগলো
facebook
কী সুন্দর পাখিটা!
বার্ড রিংগিং নিয়ে আলাদা লেখার জন্য ।
কিছু কিছু জিনিস পড়েছিলাম। মনে নাই।
পাখিটা কী মায়াময় !
facebook
পাখিটা অদ্ভুত সুন্দর!
সামিউল এবং ইশরাতকে অভিনন্দন।
ইনাম ভাইয়ের সেই ভিডিওটি কি ইউটিউবে আছে?
-নিয়াজ
নাহ, এডিটিং ক রার সময় পান নাই
facebook
বার্ড রিংগিং নিয়ে আলাদা পোষ্ট দ্যান।
____________________________
facebook
পাখিটা অদ্ভুত সুন্দর। এনাম আল হক অসাধারন মানুষ, একবারের সাক্ষাতেই বুঝেছিলাম।
বার্ড রিংগিং নিয়ে আলাদা লেখার অপেক্ষায়।
তাহসিন রেজা
নতুন মন্তব্য করুন