বাড়ীর ছাদ থেকে শুধু নারকেল গাছ নজরে আসে। আচক্রবাল শুধু ছাড়া ছাড়া ভাবে বাতাসে দুলতে থাকা দৃঢ় নারকেল গাছ, তাদের বিথি বলা চলে না হয়ত, কিন্তু এমন ঘনত্বে সেটা বললেও এমন ভুল কিছু নয় না, যেন সমুদ্র তীরবর্তী কোন নোনা জলবাতাসের জনপদ। যদিও জনপদটির নাম রাজশাহী, সমুদ্র থেকে অনেক অনেক দূরে, পদ্মা নদীর তীরে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। সেদিন ক্যামেরার চোখে বাড়ীর আশেপাশের খানিকটা বার্ড আই ভিউ নেবার ইচ্ছে থেকেই এক ছয় তলা ভবনের ছাদে উঠলাম সিঁড়ি বেয়ে, চিরচেনা নারকেল গাছগুলো মাথার উপর থেকে দেখতে অন্য রকম লাগে, দূরের পদ্মার অলস ঝিকিমিকি অবয়ব চোখের ক্লান্তি জুড়িয়ে দেয়, তেমনি দৃষ্টি বাঁধা পায় নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা দালানে। আর প্রাণ কেঁপে ওঠে এক অন্য রকমের হাহাকারে-
পুকুরগুলো কোথায়?
পাড়া ভর্তি ছিল পুকুরে , এত্ত বেশী ছিল তারা যে নাম পর্যন্ত ছিল না পুকুরগুলোর। বলা হত মঠ পুকুর, গলির পুকুর, মসজিদের পুকুর, মজা পুকুর, পানা পুকুর, স্কুলের পুকুর তস্য তস্য। কোন কোনটার নাম ছিল মালিকের বা পুকুরের বাড়ীর পাশের মানুষের নামে যেমন গেঁদা পুকুর, মাড়োয়ারি তিরুমল শেঠের নামের টিমল পুকুর। এমন আমাদের বাসার সাথেই ছিল ইয়া বড় বড় কচুরিপানায় ছাওয়া বিশাল এক পুকুর, যেখানে বাস করত ডাহুক পাখি, গুইসাপ। গ্রাম থেকে আসা এক চাল্লু গোছের আত্মীয় ফাঁদ পেতে ধরে দেখেয়েছিল সেই রহস্যময় পাখিটি যে নাকি মুখ দিয়ে রক্ত বাহির করে ডিমের উপরে রাখে। কী মায়াময় সাদা-কালো পাখিটি, পুঁতির মত টলটলে চোখ!
মাস ছয় আগে একজন খবর দিল এক ডাহুক দম্পতি বাসা করেছে বিভিন্ন বাড়ীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক পুকুরে, নগরডাহুকদের দর্শন মিলেছিল, ছবিও মিলেছিল, আর মিলেছিল নতুন ধরনের শঙ্কা- টিকে থাকবে তো তাদের এই শেষ আবাস! নিভৃত জলাধারটি।
ফিনল্যান্ড যাবার পর ২০০২এর শেষে বা কোন এক পর্যায়ে গুগলের স্যাটেলাইট ছবিগুলো দিয়ে নিজের বেড়ে ওঠার জায়গা দেখে প্রভূত আনন্দ পেতাম, নিজের বাড়ীর আশেপাশে একগাদা জলাশয় দেখেই বাড়ীর অবস্থান বাড়ীর করেছিলাম মনে পড়ে। কিন্তু তারা আজ নেই, যে পুকুরটাতে এইচ এস সির পর সাঁতার শিখেছিলাম বুনো উদ্দামে হাত পা ছুড়ে, সেখানে আজ সাতমহলা দালান। যে পুকুরগুলোতে দিনময় মাছ ধরে ফিরতাম আমরা, ভয়ার্ত মুগ্ধতায় দেখতাম তীরবেগে ছুটে চলা জলসাপদের, যেখানে পরিচয় হয়েছিল মাছরাঙার পালকের সাথে সেগুলো হারিয়ে গেছে মহাকালের বুকে, আমাদের চাহিদা আর লোভের কারণে, থরে থরে সাজানো সেখানে নানা আকারের পাঁশুটে দালানকোঠা।
এখন আইন করা হয়েছে জলাশয় ভরাট করা যাবে না, ফলে যে দুইটি পুকুর টিকে আছে হয়ত সেগুলো আর ভরাট হবে না আপাতত, কিন্তু এর মাঝেই হয়ে গেছে অমোচনীয় ক্ষতি। পরিবেশের ক্ষতির তো লেখাজোখা নেই, পদ্মাপারের শহরের শিশুরা এখন সাঁতার না জেনেই বড় হবে, আর , আর আমরা আজীবন বয়ে বেড়াব অদ্ভুত এক দগদগে কষ্ট-
আমরা সেই প্রজন্ম যাদের শৈশব বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে চিরতরে।
মন্তব্য
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোন নিয়মই জলাশয় রক্ষা করতে পারবে না।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ , সেটা কী? খায় না মাথায় দেয়?
facebook
মাথায় দেয়।
****************************************
অণুভাই, আমি কি ভুল বলেছি কিছু
না রে ভাই ! বলছিলাম বিষয়টা নিয়ে আমাদের জনগণের উন্নাসিকতার কথা
facebook
শৈশবের স্মৃতি জড়ানো জায়গাগুলোতে বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। তবে ভাবি এখন হয়ত সেসব আর আগের মত নেই, হয়ত মনে হবে সব আচেনা। হারানো দিনগুলোর কোন চিহ্নই হয়ত আর থাকবেনা।
কী সাংঘাতিক দুর্মর কষ্ট, এর চেয়ে অতীতের কাছে না ফেরাও ভাল।
facebook
কিছুই কেমন বুজিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন!!!!
সুবোধ অবোধ
ঘর লাগবে, দালান লাগবে, টাকা লাগবে ,বাহ, আমরা সুখী
facebook
অনেকদিন পর সচলে ফিরে একটা ভালো লেখা দিয়েই শুরু করলাম !
রাসিক রেজা নাহিয়েন
বিষয়বস্ত করুণ অবশ্য
facebook
সেই জলে টলমল পুকুরগুলো আসলেই আর নেই। আমার খুলনাতেও একই অবস্থা।
তাহসিন রেজা
facebook
কিছুদিন আগে আমার কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত একটা জায়গায় গিয়েছিলাম, হারিয়ে যাওয়া কৈশোরকে খুঁজতে। তা সেখানে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে কৈশোরকে খুঁজে পাওয়া দূরের কথা আমি যেন আমার বর্তমানকেও হারিয়ে ফেললাম ! সত্যিই বড্ড বিষাদগ্রস্থ হয়েছিলাম।
হুম, আসলেই ! এমন হলে কষ্ট অনেক বেশী লাগে , আপনার ফ্রস্ট নিয়ে লেখা পড়ার অপেক্ষায় আছি
facebook
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
facebook
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
facebook
কষ্ট হয় ঠিক-ই, তবে শৈশব বলো, আর শৈশবের পুকুর - গরীবের দেশে কোনো কিছুই না বুজে গিয়ে পার পাবে না। পায় না। তারপরে আবার আমাদের যা বোধ-বিবেচনা! তবু খুশীর কথা যে দেরীতে হলেও কিছু কিছু মানুষ অন্যরকম ভাবেন। ফলে একটা-দুটো পুকুর মাঝে মাঝে বেঁচেও যায়! বেঁচে যায় এখানে ওখানে স্বপ্নের টুকরোরা।
ক্রমাগত আমাদের এগিয়ে থাকা পৃথিবীর স্বপ্ন আর আকাঙ্খার শরীক করে রাখার জন্য অনেক ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হুম
facebook
একটা হাইপথিটিক্যাল প্রশ্ন করি? পুকুরগুলো যদি না বুজাতেন, তাহলে সেখানে যে বিল্ডিংগুলো গজিয়েছে, সেই বিল্ডিঙগুলোতে এখন যারা সুখে শান্তিতে বসবাস করে বছরে বছরে সন্তান সন্ততি উৎপাদন করে চলেছেন, তাঁরা সব কোথায় বসবাস করতেন?
ঠিক। প্রতি চার বছরে এক কোটি করে জনসংখ্যা বাড়তে থাকার দেশে আইন করে বা অন্য কোনভাবে এটা ঠেকানো যাবে না। একই কথা বন সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, পরিবেশ বিপর্যয়রোধ এমন অনেকগুলো বিষয়ের সাথে জড়িত।
একটা বিষয় মনে করার চেষ্টা করুন। আশির দশকে এই দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলতো। বোধকরি এই খাতে তখন বিস্তর 'ট্যাকাপয়সা' ছিল। তারপর যখন ট্যাকাপয়সা এই খাত ছেড়ে অন্যসব খাতে বইতে শুরু করে তখন থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আর কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনা।
জনগুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় নিয়ে দেশী-বিদেশী এনজিওদের নানা ধরনের কার্যক্রম একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন সেখানে সমস্যার কার্যকারণ অনুসন্ধান ও তার মূলোৎপাটনের বিষয়টি সযত্মে এড়িয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য এনজিওদের কাছ থেকে এরচেয়ে ভালো কিছু আশা করাটাই বোকামী। তাই আশা করা দরকার জনগণের সরকারের ওপর। কিন্তু জনগণের সরকারও যদি সমস্যার কার্যকারণ অনুসন্ধান ও তার মূলোৎপাটনের বিষয়ে এনজিওদের মতো আচরণ করে তাহলে তারেক অণু বা আমাদের সবাইকে এমন হাজারোটা বিষয় নিয়ে শুধু দীর্ঘনিঃশ্বাসই ফেলতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার মনে হয় পাকিস্তান আমলের শেষ দশকে জন্ম নিয়ন্ত্রনের প্রচারনা বেশী ছিল, স্বাধীনতার পর ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। অবশ্য স্বাধীনতার পর জন্ম নিয়ন্ত্রন সামগ্রীর বহুল বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। যখন ছোট ছিলাম, একটা প্রশ্নে খুব বিব্রত হতাম- "তোমরা কয় ভাইবোন"? তিন ভাইবোন শুনে নানা জন নানা কথা বলতো, একবার এক মোল্লা কিসিমের লোক বললো- তোমার বাপ-মা কি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে না কি? তখন আমার সমবয়সী প্রায় সকল ছেলেমেয়েরা ছিল পাঁচ, সাত, বা দশ বার ভাইবোন। এখন এই প্রবণতা আমার মনে হয় সব পর্যায়েই কমে এসেছে। কেন কমেছে তার হয়তো কারন আছে, আমার মনে হয় একটা মূল কারন হল শিক্ষার প্রসার। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে, ক্ষতিপূরণ কতদিনে হবে কে জানে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ঢাকায় আমাদের বাসার দুই পাশে লাগোয়া দুটি জলাশয়। একটি গ্রেস দিয়ে হয়ত পুকুর বলা যাবে তবে অন্যটি ছিলো নেহায়েত একটি ডোবা। ছাদে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সেখানে মাছ দেখতাম, অনেক ফড়িং আসতো, কোন একটি লাঠির মাথায় মাছরাঙা বসে থাকতো। বাসার পেছনের প্লটটির পরেই ছিলো সত্যিকারের পুকুর। বাঁধাই করা ঘাট। তার পারে নানান গাছ এবং একটি অর্ধসমাপ্ত বাড়ি যেটা দেখতে জাহাজের মত। এটি এটি ১৫ বছর আগের ঢাকার জুরাইনের একটি জায়গার বর্ণনা দিলাম। বিশ্বাস হচ্ছে না? নিচের টুকু পড়লে বিশ্বাস হবে...
একটি পুকুরও এখন নেই। বাসার পেছনের পুকুরটিতে ৬ তলা বাড়ি। আর্জেন্টিনার পতাকার মত রং করা। পাশের পুকুরটি ভরে এখন রিকশার গ্যারেজ এবং মুদি দোকান। আর বাগান বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে। যারা কিনেছে তারা ভাগ করে বাউন্ডারি দিয়ে দশ পনেরোটি ৪/৫ তলা বাড়ি করেছে। কেউ কারো জন্য স্কুটার ঢোকার মত রাস্তার জায়গাও ছাড়েনি!
এর একটিও এখন নেই। বাসার পেছনের পুকুরটিতে ৬ তলা বাড়ি। আর্জেন্টিনার পতাকার মত রং করা। পাশের পুকুরটি ভরে এখন রিকশার গ্যারেজ এবং মুদি দোকান। আর বাগান বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে। যারা কিনেছে তারা ভাগ করে বাউন্ডারি দিয়ে দশ পনেরোটি ৪/৫ তলা বাড়ি করেছে। কেউ কারো জন্য স্কুটার ঢোকার মত রাস্তার জায়গাও ছাড়েনি!
facebook
যে দিন গেছে সেদিন কি আর ফিরে পাওয়া যায় ?
এভাবেই পরিবর্তন হয়, যেটা মেনে নিতে হয়তো আমাদের কষ্ট হয়। আমরা বদলে যাই, বদলে যায় চারপাশ।
তবু স্মৃতি থাকে আগেরি মতো, ভালো থাকুক ফেলে আসা শৈশব স্মৃতির পাতাতে।
মাসুদ সজীব
বড় বেদনার স্মৃতি
facebook
facebook
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম একটা! ভালো থাকুন অণু ভাইয়া, খুব।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
facebook
রাজশাহী শহর মানেই অলিতে গলিতে চলতে পথে, ছোট বড় আঁৎকা পুকুর! সেই ছোটবেলা আর নাই। বুজে যাওয়ার আগেই অবশিষ্ট পুকুরগুলো ডকুমেন্টেড করে ফেলা দরকার। আমি কিছু ছবি তুলেছি, এই ছুটিতে আরও কিছু তোলার ইচ্ছা আছে। সবমিলিয়ে রাজশাহীনামা-য় টুকে রাখার ইচ্ছা আছে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
হ, করে ফেল, কোনদিন এইগুলাও আর থাকবে না
facebook
হ্যাঁ, সেই মঠপুকুর, দাসপুকুর, পানাপুকুর আর নেই!! ক্যান্টনমেন্টের পুকুরটা কচুরিপানায় ভর্তি হয়ে আছে!
____________________________
হ
facebook
নতুন মন্তব্য করুন