টু ডিলিট অর নট টু ডিলিট

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/১২/২০১৩ - ১০:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ মুছে গেলে অসহায় লাগে -

জানি চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়, তারপরও চলে যাওয়া মানে প্রস্থানই। যতই মনে করি জলন্ত স্মৃতিগুলো, ঝরে যাওয়া বন্ধুটি ফিরে আসবে না, মুছে গেছে সে চিরতরে আমাদের জীবনপ্রবাহ থেকে। একদিন তো আমরাও চলে যাব চিরবিদায়ের পথে, খানিক আগে আর পরে, এই-ই যা।

গত কদিনে ফেসবুক তালিকার দুইজন বন্ধু আত্মহত্যা করেছে। পরিচয় গাঢ় ছিল না, একজনের সাথে কোনদিন কথাই হয় নি, অন্যজনের সাথে একদিন এক পলকের দেখা কেবল।

তাদের হোমপেজে থেকে থেকে টহল দিই। কী এমন অব্যক্ত বেদনা, গাঢ় অভিমানে ডুবে ছিল তারা ভেবে শিউরে উঠি। কোনদিন কিছু বলে নি তারা, জীবনের নেশায় মাতাল আমি বুঝিও নি ফেসবুকের হাসি মুখের আড়ালে আরও কত লুক্কায়িত অনুভূতি, যা আমাদের জীবন পরিচালনা করে। ভেতরটা ফাঁকা লাগে, বুকের ভেতর হাওয়া ঘুরে ওঠে। স্মৃতির রঙিন কাঁচের ভেতর দিয়ে অতীতকে যেমন সুন্দর দেখায়, তেমন স্মৃতি তো সবসময়ই বেদনার।

ছোট্টবেলার বন্ধু লেলিন মরে গেল দুর্ঘটনায়, বিনা মেঘে বজ্রপাতের চেয়েও চমক জাগিয়েছিল কঠিন সেই আঘাত, দূর মহাদেশে বাথরুমে বসে ফোঁপাতে ফোঁপাতে লেনিনের হোমপেজের ছবিগুলো দেখি- কী জলজ্যান্ত বড় বড় চোখ ! প্রাণময় মানুষটি প্রাণহীন হয়ে গেল! আর দেখা হবে না বিগত বছরগুলোর মত। দুর্বল চিত্তের মানুষ আমি, সইতে পারি না এই ভার, ডিলিট করে দিই কয়েক মাস পরে লেনিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, সে থাকুক আমার মনের মুকুরে।

সজল খালেদ ভাই এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে স্মৃতি হয়ে গেলেন, হয়ত এখন তার কভার ফটোতে থাকতো সর্বোচ্চ চূড়ায় লাল সবুজ পতাকা হাতের ছবি, কিন্তু জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গৌরবের সেই ছবি সজল ভাই দিয়ে যেতে পারলেন না নিজের ওয়ালে। তার ছেলে সুস্মিতকে দেখি আড়াল থেকে, কতদিন জানবে কি সে কত চমৎকার একজন বাবা ছিলেন সজল ভাই? ওনার স্মৃতির ভার সইতে পারি না।

আর কয়েক দশক পরেই ফেসবুকে কয়েক কোটি মানুষের অ্যাকাউন্ট থাকবে যারা মৃত, কিন্তু সে তো ভবিষ্যতের কথা- এখনো তো আমরা বেঁচে আছি, তাই না? কিন্তু যখন স্মৃতি হয়ে যাব? বন্ধুরা কী আমার ওয়ালে এসে খুঁজে ফিরবে নানা পুরাতন অভিযানের ছবি? স্মৃতিচারণার লিঙ্ক? স্যাম দা বানাবে সচলায়তনের কোন ব্যানার?

কী যায় আসে? যখন আমি থাকব না, সেই স্মৃতি নিয়ে কিচ্ছু যায় আসে না।

আর তাই-তো গাঢ় কষ্টের কুয়াশা ঘিরে ধরে জীবিত আমাদের, মুছে যাওয়া বন্ধুদের জন্য।

ফেসবুক থেকে তাদের ডিলিট করি বা নাই করি, মনের ভিতরের তাদের মুছের ফেলার সামর্থ্য আমাদের নাই।

বন্ধু হারানোর অভিশপ্ত কষ্ট আমাদের সঙ্গী, আমৃত্যু।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

হুমায়ুনের আজাদের একটি কবিতাকে মনে পড়লো লেখাটা পড়ে

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !

মাসুদ সজীব
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা কতজন চলে যাওয়া মানুষকে যে মনে করিয়ে দিলো!! অনেক মুখের আদল মনে পড়ে, সবটুকু আর মনে করতে পারিনা।
ভুলে যাওয়া, চলে যাওয়া চেনা মানুষগুলোর জন্য 'গাঢ় কষ্টের কুয়াশা' আমাকেও ঘিরে ধরেছে এই মুহুর্তে।
কাল আপনার সাথে দেখা হবে আশা করছি।
অন্ততঃ মরে গেলে বলতে পারবেন এই মানুষটার সাথে আপনার একবার পরিচয় হয়েছিলো।
কাল - ৬ই ডিসেম্বর, জাতীয় জাদুঘর, বিকেল ৪ টা।

ভালো থাকবেন অনু।
আপনার জন্য শুভকামনা।
-----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

তারেক অণু এর ছবি

নাহ, এমন কোন টাইম নেই তো !
আগামীকাল, ৭ তারিখ, সকাল ১১টা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনার পোস্ট মানেই উজ্জ্বল রঙ, হাস্যোজ্জ্বল মানুষ, ঝকমকে জীবনের গল্প...
ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম

কি লেখেন এইগুলি?? একবার হাসান একবার কাঁদান? মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি

জীবন তো এমনই।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

জীবনের অপর পিঠ, অনিবার্য বাস্তবতা!

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

'বন্ধু হারানো'- ধ্বক করে লাগলো বুকের ভেতর! চলে যাওয়া নামক বাস্তবতা-টা সবসময়ই অসুন্দর। মন খারাপ

আচ্ছা, জীবনে মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসা ছাড়া কি মানুষের আর কোনো বিষাদ নাই? চলে গেলেও থাকা হয়, থেকেও চলে যাওয়া যায়! তারচেয়ে চলো, যতোটা সময় আছি ভালো লাগা নিয়েই বাঁচি হাসি

- শ্রাবস্তী

তারেক অণু এর ছবি
ফয়সাল ইজা এর ছবি

========================
অনেক অপরিমেয় যুগ কেটে গেল;
মানুষকে স্থির-স্থিরতর হতে দেবে না সময়;
সে কিছু চেয়েছে বলে এত রক্তনদী।
অন্ধকার প্রেরণার মতো মনে হয়
দূর সাগরের শব্দ-শতাব্দীর তীরে এসে ঝরেঃ
কাল কিছু হয়েছিল;-হবে কি শাশ্বতকাল পরে।
========================

তারেক অণু এর ছবি

কাল কিছু হয়েছিল;-হবে কি শাশ্বতকাল পরে।

সৃষ্টিছাড়া  এর ছবি

মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি
মেঘলা মানুষ এর ছবি

মৃত্যু অনেক রূপেই আসে আমদের সামনে।
বন্ধু হারানো খুব কষ্টের।
attempted আত্মহত্যা (ঠিক পরিভাষা মনে আসছে না ) নিয়ে আমার পরিবারে একটা ঘটনা আছে। যারা এটা করেন, তারা ভাবতেও পারবেন না, তাদের অনুপস্থিতি কতটা কষ্টকর তার পরিজনদের জন্য। এরপর, ভেবেছিলাম আত্মহত্যার বিরুদ্ধে একটা লেখা লিখব। সেটা আর হয়ে ওঠেনি।

আগে বই পড়তে গিয়ে জানতাম, লেখক বেঁচে নেই। এখন, অনলাইনেও অনেকের লেখা পড়ি যারা বিদায় নিয়েছেন আমাদের থেকে। কারো কারো লেখায়ও পড়ে সেই ছায়া।

একজন ব্লগারের কথা মনে পড়ল (সে সচলে লিখত না)। তার শেষের দিকে একটা লেখা ছিল ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে। অনেক কথা লেখা ছিল সেখানে। শেষে সেই লোকটা লিখে গিয়েছিল

এত বড় পোস্ট কেন করলাম? কেউত পরবে না? এই পোস্ট অন্য কারো জন্য নয়, নিজের জন্য। আমার খুব কাছের একজন এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত, আমি জানি খুব বেশি দিন নেই তার, তারপরেও তাকে এই মিথ্যাটুকুই সারাদিন বলি 'কিচ্ছু হবে না'

নিজের অসুখের কথা গোপন করে গিয়েছিল লোকটা। তার মৃত্যুর পর সেই পোস্ট ভরে উঠেছিল মন্তব্যে, যদিও জবাব দেবার কেউ ছিল না।

সচলে শ্রদ্ধেয় জুবায়ের ভাই এর লেখা আমি পড়েছি অনেক পরে, ততদিন তিনি আর এই লোকে নেই। অনেকসময় ভাবতাম, এঁরা বেঁচে থাকলে হয়ত অনেক কিছু লিখতেন।

[যদিও আমি জানি না সচলায়তনে অন্য ব্লগ প্লাটফর্মের কারো লেখা নিয়ে আলোচনা নীতিমালার পরিপন্থী কি না।]

তারেক অণু এর ছবি
ফাহিম হাসান এর ছবি

আহারে, মানুষটার কথা অনেক পড়েছি, ফেইসবুকে তার কাজকর্ম হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ত। সামনা-সামনি পরিচয় হল না।

তারেক অণু এর ছবি
স্যাম এর ছবি

মন খারাপ চলুক

তারেক অণু এর ছবি
এক লহমা এর ছবি

কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। ৫ তারা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

হু

ধুসর জলছবি এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।