২০১০এর শীতকাল, জোহান্সবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা, চামড়ার গোলকের জ্বরে আক্রান্ত সারা বিশ্ব। সেবার কোন এক আলোকিত মুহূর্তে লটারিতে একটি দলের সবগুলো খেলা দেখার টিকেট মিলেছিল, দলটি ছিল ব্রাজিল। কাজেই প্রথম রাউন্ড থেকে শুরু করে একেবারে ফাইনাল পর্যন্ত সাত সাত খানা অফুরান সুখের উৎস মানে কিনা খেলার টিকেট ছিল পকেটে, কিন্তু ব্রাজিল যেহেতু কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিল, তাই জয়ী দলকেই অনুসরণ করতে করতে ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া।
এবং পর দিন ভোরেই বিমানযাত্রা, একমাসের ফুটবলভ্রমণ শেষে ফেরার পালা অন্য গোলার্ধে। বাতাসে গুজব ভাসে, নেলসন ম্যান্ডেলা আসবেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। মাঠে থেকে শুভেচ্ছা জানাবেন সারা বিশ্বকে। আবার পর মুহূর্তেই শুনি মাদিবার শরীর খুব বেশী অসুস্থ, তার পক্ষে মাঠে উপস্থিত থাকা সম্ভব না। ফিফা এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন অন্তত পুরষ্কার বিতরণের সময় তাকে নিয়ে আসতে, কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা বেঁকে বসেছেন, তারা মাদিবার শরীর নিয়ে কোন রকম ঝুঁকি নিতে অপারগ।
ঝুঁকি নিতে অপারগ আমি নিজেও, খেলা শেষে পরপরই ট্রাফিক জ্যামে ভর্তি থাকবে রাস্তা, রাত ২টার আগে পৌছাতে হবে বিমানবন্দরে, আগে গেলে আরও ভাল। হাজার হাজার পর্যটক স্টেডিয়াম থেকে সরাসরি বিমান বন্দরে যাবে পুরষ্কার বিতরণী দেখে। কাজেই পান থেকে চুন খসলেও দেখা যাবে ফ্লাইট মিস, এবং তারপর হাজার হাজার ইউরো গচ্চা। একবার চিন্তা করলাম খেলা দেখব না, বরং টেলিভিশনে দেখে ভালই ভালই বিমানের উদ্দেশ্যে চলে যাব, আবার ভাবলাম যদি মাদিবা আসে !
আসলেই, খেলার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মাদিবার দর্শন। অন্য দিকে চিন্তাও হচ্ছিল, মাদিবা আসলে হয়ত গাড়ীতে করে একটু ঘুরবেন, গ্যালারী থেকে কষ্টেসৃষ্টে অল্প হাত নাড়বেন, এই মাদিবাকে কি আমি দেখতে চাই? তার যে বীর মূর্তি মনের মাঝে লালন করি, সংগ্রামী লৌহ কঠিন মুঠি আজ কম্পমান বয়সের ভারে, সেটি দেখতে কি ভাল লাগবে? সারা বিশ্বকে দিক নির্দেশনা দেওয়া মানুষটি আজ শিশুর মত, অন্যের সাহায্য নিয়ে মাঠে আসবেন, সেটি দেখা কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
জানি না, তবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম মাদিবা যদি মাঠে আসেন তাহলে অবশ্যই অবশ্যই খেলা দেখব।
মাদিবার স্মৃতি বিজড়িত গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো অবশ্য ঘুরে এসেছি গত কয়েক সপ্তাহে, এই লেখাতে তার বর্ণনা আছে।
স্টেডিয়ামে যেয়ে শুনি মাদিবা আসবেন না, তাই সাতপাঁচ বিবেচনা করে খেলা না দেখে ফেরার সিদ্ধান্ত হল। রাতে টেলিভিশনে দেখি মাদিবা এবং তার স্ত্রী গাড়ীতে করে অল্পক্ষণের জন্য বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন। মনটা খারাপ হল কি? জানি না ! মাদিবাকে দেখা তো অন্তত হত, আবারও দেখা হলে যে মাদিবাকে দেখতাম তাকে তো এইভাবে দেখতে চাই নি।
আর দেখা হল না, মহানায়ক মাদিবা সেই কল্পনার রূপেই বিরাজমান থেকে যাবেন আজীবন এই অধমের মনে। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে তার প্রতি ভালোবাসা, সন্মান।
(নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে কয়েকটি পুরনো লেখার লিঙ্ক-
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
facebook
এত্তগুলা আসল ক্যাম্নে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
জানি না
facebook
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বার বার শুনি
মৃত্যুর দরজায় করাঘাত করে আসে যুদ্ধ
বিপ্লব আসবেই, আফ্রিকা হাসবেই
অগনিত কালো হাত পৃথিবীকে করবেই সত্য।
ম্যান্ডেলাকে নিয়ে আগে আপনার লেখা পড়েছি বলেই বোধ হয়, তাঁর মৃত্যুতে - আপনার পোস্টের অপেক্ষাতেই ছিলাম। ধন্যবাদ।
খুব বড় করে ঠাসবুনটের একটা লেখা দেবার ইচ্ছে ছিল, দৌড়ের কারণে আপাতত পারলাম না। দেখা যাক-
facebook
সাহসী যোদ্ধারা এক এক করে সবাই হারিয়ে যাচ্ছেন। মাদিবা কে শ্রদ্ধা।
facebook
____________________________
facebook
facebook
নেলসন ম্যান্ডেলাকে আমি দেখেছি ১৯৯৭ এ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উৎসবে।
আমার এই পর্যন্ত জীবনে অতবড় মানুষ দেখা সেই প্রথম এবং শেষ।
আপনার দেখা না দেখার অনুভুতিটুকু ভালো লেগেছে।
ভালো থাকবেন অনু।
েকখা হবে, কথা হবে।
----------------------------
কামরজ্জামান পলাশ
নতুন মন্তব্য করুন