২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, শুক্রবার
ল্যাটিচিউড ২১ ডিগ্রী ০১ মিনিট নর্থ, লংগিচিউড ৯১ ডিগ্রী ২০ মিনিট ইস্ট
শীতের সন্ধ্যা ছয়টায় কুচকুচে আঁধারে বিশ্বচরাচর ডুবে থাকার কথা, কিন্তু জানালা দিয়ে মৃদু মন উদাস করা আলো ঢুঁকে কিছুটা হলেও শীতের ভীতিকর আঁধারকে দূরে রেখেছে চারপাশ থেকে। পায়ের নিচে পৃথিবী দুলছে, কাঁপছে আপন উল্লাসে নীল দরিয়া, আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে। বঙ্গোপসাগরের কোন এক কোণে আমাদের জাহাজ, গন্তব্য নেই। আসলেই গন্তব্য নেই, বিরামহীন ভাবে লাবিবা নামের জাহাজখানা চলছে লোনা দরিয়া দিয়ে আগামী ৩০ দিন, রূপোলী ফসল হচ্ছে তার একমাত্র লক্ষ্য, ২০০ টন মাছ আহরণ করে তারপর সে তীরে ফিরবে, ফাঁকতালে আমরা কজনা অতিথি হয়েছি বিশেষ একটু জায়গায় নজর বোলাবার জন্য যা বিখ্যাত সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড নামে।
ভোরে যাত্রা শুরু হয়েছে, একা জাগা দাঁড়কাক আর কুয়াশায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া শালিখের দলের সাথে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে ডিঙ্গি চেপে আশা হয়েছিল আমাদের আগামী এক সপ্তাহের আস্তানা এই জাহাজে, মূলত প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের তিন জন সদস্য ভিডিও তথ্যচিত্র সংগ্রহ এবং গবেষণার কাজের চলেছেন বঙ্গোপসাগরের, তাদের আমন্ত্রণের অতিথি হিসেবে পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের সাথে যোগ দিয়েছি আমিও। কোন অহেতুক ঝুঁকি না নিয়ে ডিঙ্গিতে আরোহণের আগেই বিশেষ ধরনের পানিরোধক ব্যাগে ক্যামেরাগুলো বস্তাবন্দী করে নদীর অল্প অংশটুকু পেরিয়ে সোজা জাহাজে আমরা, ঘন কুয়াশাময় বন্দরে তখন ফ্লাইং ডাচম্যান ধরনের ভুতুড়ে অবয়বের জলযানের ভিড়, সূর্যদেবের দেখা দেবার পাত্তাও নেই মেঘের আস্তরণ ফুঁড়ে, এমনকি জাহাজের ক্যাপ্টেনও হাজির হন নি জাহাজের পাটাতনে। শোনা গেলে কুয়াশাময় ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অপেক্ষা করা হবে পথ কিছুটা দৃশ্যমান হওয়া পর্যন্ত, সেই জন্য দরকার হলে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে !
বেশ বড় ধরনের মাছ ধরার ট্রলার লাবিবা, প্রায় ৪০ জন্য কর্মী এখানে কাজ করবে দিবা-রাত্র। প্রতি চার ঘণ্টা পর পর বিশাল জাল খানা তোলা হবে সমুদ্র থেকে, তাতে অবস্থা ভেদে থাকে এক টন থেকে ৮ টন মাছ থাকে, যখন জাহাজটির হিমাগারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ২০০ টান মাছ ধরা হয়ে যাবে তখন তারা তীরের দিকে ফেরা শুরু করবে। সাধারণত এই কাজে ৩০ দিন সময় লাগে, এবং এই সময়ে ইঞ্জিন সচল থাকবে সর্বদাই।
ক্যাপ্টেন এসে গেছেন, আবহাওয়াও আগের চেয়ে কিছুটা নমনীয়, এমতাবস্থায় শুরু হল আমাদের যাত্রা। এবং বিদায় দিতে হল কাক ও ভুবন চিলের মত ডাঙ্গার সখাদের, গাংচিলের দল এসকর্ট করে নিয়ে চলল জলরাজ্যে গভীর থেকে গভীরে। জাহাজের দল পিছু পড়ে গেল, চলে গেল ন্যাভাল অ্যাকাডেমী, শুধু অসীম জলের বিস্তার, আমরা খুঁজব এখানে পাখি, ডলফিন, তিমিদের আর জাহাজের মানুষেরা খুঁজবেন মাছের ঝাঁক।
তারপর বেশ কঘণ্টা হয়ে গেল, বিস্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা সকলেই সাগরের দুলুনির সাথে অভ্যস্ত হতে , যাতে সী-সিকনেসে আক্রান্ত হয়ে এত চমৎকার ভ্রমণটা শুরুর আগেই শেষ না হয়ে যায়।
( সম্পূর্ণ লেখাটিই জাহাজে বসে লেখা, দুলুনির মাঝে থেকেই, অনেকটা রোজনামচার মত, তাই হয়ত তাল কেটে যেতে পারে, দিক ভুল হতে পারে, কিন্তু আবেগটা ছিল নিখাঁদ- সাগরে ভাসার আনন্দ, নতুন পাখি আবিস্কারের রোমাঞ্চ, নাবিক সাজার মজা, আকাশ ভরা তারা আলোয় ভেজার স্নিগ্ধতা , সবই একসাথে আছর করেছিল যে !)
(মৃত এক জোড়া হাতুড়িমাথা হাঙর )
২৮ ডিসেম্বর, শনিবার
ভোর ৪-১৫
ঘুম ভাঙল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, নাকি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই ঘুম ভাঙল! যেভাবেই হোক, ঘুম ভেঙ্গেছে আজব এক মৃদু দুলুনিতে আর শরীরের বর্জ্য তরলের বাহির হবার তাগিদে , সম্বিত ফিরে পেতেই সেই ঘুটঘুটে আঁধারে বুঝলাম জাহাজেই আছি যখন, জলের দুলুনিতে এমন হতেই পারে ! ঘরের সবাই ঘুমিয়ে, খানিক পরেই নিজেকে আবিস্কার করলাম আঁধার বঙ্গোপসাগরের মাঝে, পায়ের নিচে চলন্ত ফেনিল সাগর কেঁপে কেঁপে উঠছে, মাথার উপরে নক্ষত্রের চাঁদোয়া, মুখে লোনা বাতাসের ঝাঁপটা, কী এক অপূর্ব সুখানুভূতি! যদিও পুরোপুরি একাকী ছিলাম না, আকাশের পানে তাকাতেই জ্বলজ্বলে লুব্ধক নক্ষত্র সাথী হল নৌবিহারের, তাকে অনুসরণ করেই এল কালপুরুষ, তার উল্টো পাশে সপ্তর্ষি। এমন সাগর বিহারে নিয়েই কী জীবনানন্দ লিখেছিলেন- নিশীথের অন্ধকারে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে !
(হাতুড়িমাথা হাঙরের চোখ)
টাটকা বাতাসের পাগলামোতে ঘুম রেশের কেটে দূর দিগন্তে চলে গেল,জাহাজের ক্যাপ্টেনের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জানা গেল পরের বার জাল তোলা হবে ভোর সোয়া পাঁচটায়। বিছানার উষ্ণতায় ফিরে সময় নষ্ট না করে আগের দিন চট্টগ্রামে সংগ্রহ করা লাবণ্য দাশের লেখা মানুষ জীবনানন্দ পড়া শুরু করলাম। শুরু থেকেই কেমন কেঠো ভাষায় লেখা বইটা, একজন অতি সংবেদনশীল মানুষের সাথে বিশটি বছর একত্রে কাটাবার পর এমন স্মৃতিকথা দুঃখ জাগায় বইকি।
জাল তোলার হাঁকডাকে মাস্তুলের কাছে ক্যামেরা বাগিয়ে দাঁড়ালাম, বিশাল জাল, ২৭৫ মিটার লম্বা দড়ির সাথে বাঁধা, সিন্ধু সেঁচে রূপোলী ফসলের গাঁদি তুলে আনছে ক্ষুধার্ত মানুষের আহার এবং বিলাসী মানুষের বিলাসের জোগান দিতে। এ যাত্রা তেমন কিছু মাছ আসে নি, তারপরও ১ টনের উপরে তো বটেই- তার মাঝে আছে বেশ বড় আকারের স্টিং রে, ভেবেছিলাম তাজা প্রাণীটার আপন জগতে ফিরবার একটা ব্যবস্থা করতে পারব, কিন্তু শুনি তার নাকি বেশ চাহিদা ডাঙ্গার বাজারে, তাই প্যাকেটজাত হতেই হবে, আর সব মাছের মতই।
অধিকাংশ মাছই ছিল সার্ডিন জাতীয়, যাকে এখানে জেলেরা বলে কলম্বো, শ্রীলঙ্কার আশপাশ থেকেই নাকি মাছগুলো এদিকে আসে এমন কথা প্রচলিত বিধায় এমন নাম। জেলেভাইরা যেন বিশাল জাল দিয়েই সাগর থেকে তুলে আনলেন প্রকাণ্ড সূর্যটাও, অদৃশ্য সাগর আসতে আসতে দৃশ্যমান হয়ে উঠল রাঙ্গা আবীরে নেয়ে, জাহাজের সামনের ডেকে দাঁড়ানো একাকী নিজেকে কেন যেন লর্ড অফ দ্য রিংসের কোন এক চরিত্রের মত মনে হচ্ছে, চলেছি ল্যান্ড অফ মর্ডরের অজানা রাজ্যে, সঙ্গী কেবল অভিযানের রোমাঞ্চ, নতুন পৃথিবী দেখার পিপাসা।
(সী কই হাতে এক জেলেভাই)
পরের বার জাল টানা হল সকাল ১১টায়, জালের সাথে লাগানো ফাৎনা ধরনের জিনিসগুলো দেখেই স্বয়ং ক্যাপ্টেন বলে উঠলেন- অনেক মাছ মনে হচ্ছে ! সেই একবারেই ১২ টন মাছ উঠল, মাছে মাছে সয়লাব হয়ে গেল ডেক, আর সেই লোভে হাজির হল মাছখেকো পাখির দল। নানা ধরনের মাছের স্তুপ থেকে তাদের আলাদা আলাদা করে, ধুয়ে প্যাকেট করে হিমাগারে রাখতে রাখতেই গেল দেড় ঘণ্টার মত,
যদিও তার আগেই জাহাজের বাবুর্চিসাহেব আমাদের বোনাস নাস্তা হিসেবে নিয়ে আসলেন সদ্য ধরা রূপচাঁদা মাছ ভাজা, কত বছর পর যে টাটকা রূপচাঁদা খেলাম! পুরাই অমৃত, মাখনের মত গলে যাওয়া মাছ মশলা প্রায় কিছুই ছিল না। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে যেই না বলেছি- দুপুরে খাওয়া লাগবে না এমন জম্পেশ প্রায় মধ্যাহ্নভোজনের পরে, ক্যাপ্টেন ঠা ঠা হেসে বললেন- দরিয়ার বাতাসের ক্ষিদে লাগে ঘনঘন, দুপুরের খাবারের এখনো দুই ঘণ্টা বাকি, তার আগেই দেখবেন পেট চুঁইচুঁই করছে।
(স্কুইড ও কাটল ফিশ )
এত মাছ একবারে পাওয়াতে সবাই খুব খুশী হল বটে, কিন্তু মুশকিলও দেখা দিল অন্য দিক থেকে,কারণ সিদ্ধান্ত হল সেখানেই বাকি সারা দিন এবং দিবাগত রাত মাছ মারা হবে! ফলে সোয়াচ যাত্রা পিছালো আরও এক দিন, একই অঞ্চলে ক্রমাগত ঘুরপাক খাবার ফলে নতুন কোন পাখিও মিলল না, সারা দিন সেই ২ ধরনের গাঙচিলের ঝাঁক আর সাঁঝের আগে এক পানচিল। তারপরও উথাল-পাথাল সাগরে অন্যজীবনের স্বাদ সর্বক্ষণই মনে এনে দিচ্ছে রোমাঞ্চ।
ক্ষুদের এক দাগি আবাবিল ( Striated Swallow) এসে আশ্রয় নিল হতক্লান্ত অবস্থায় জাহাজে, সাগরের বাতাসের পালকের পাল তুলে যাবে সে পেরিয়ে মহাদেশ, কিন্তু এখন সময় একটু জিরানোর।
ইনাম ভাই তাকে আবিস্কার করে মহানন্দে আলাপের চেষ্টাও চালালেন, তাকে ছোঁয়া হল, ঘিরে বসল ফটোগ্রাফারের দল, বিরক্ত হয়ে সে অবশ্য অন্য প্রান্তে যেয়ে বসেছিল পরে, দু দন্ড শান্তির আশায়।
২৯ ডিসেম্বর, রবিবার
মধ্যরাত, জাল তোলা হচ্ছে, মহা সমারোহে অপেক্ষা করছি, এযাত্রা দেখেই সটান ঘুম দিব। সমুদ্রের মায়া কাটিয়ে পরাস্ত জাল উপরে উঠাতেই বোঝা গেল মাছ এসেছে খুবই কম, আধা টনও হবে না। কিন্তু চকচকে রূপোলী স্তূপের মাঝে পিচ্ছিল কালো বর্ণের একটা খোলা মত কী যেন দেখা গেল, মুহূর্তের মাঝে যা পরিণত হল বিশ্বের সবচেয়ে আদুরে প্রাণীদের একটিতে- বিশাল এক অলিভ রিডলে কচ্ছপ!
ডাইনোসরদের চেয়েও অনেক প্রাচীন বংশলতিকার নিরীহ প্রাণীটি আটকা পড়েছে। বুড়ো মানুষের মত মাথা নেড়ে মানুষের বোকামোতে ক্ষোভ প্রকাশ করল কিউট প্রাণীটা, উল্লেখ্য মাছের জালের ধরা পড়লে যদি আধা ঘণ্টার মাঝে না তোলা হয়ত তাহলে অনেক কচ্ছপ অক্সিজেনের অভাবে সেখানেই মারা যায়, এভাবেই বিশ্বে এখনো লক্ষ লক্ষ কচ্ছপ মারা যাচ্ছে অপরিকল্পিত মাছ ধরার জন্য।
পিছলে পড়ার শতভাগ সম্ভাবনা নিয়েও তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে নিচের ডেকে ছুটলাম কাছিমটাকে কাছ থেকে দেখে ক্যামেরাবন্দি করার আশায়, কিন্তু দেখি সহযাত্রী ভিডিওগ্রাহক বেলাল ভাই সামুদ্রিক কাছিম ফেলে কী এক মাছ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল, যে কিনা ডেকে তড়পাচ্ছে তিড়িং বিড়িং করে, বেশ বড় আকারের মাছে, সোনালী আঁশ এই আলোতে চকচক করছে । কিন্তু সেটাকে এত গুরুত্ব দেবার আছেটা কী, স্বয়ং কূর্ম অবতারের উপস্থিতি সত্বেও? কারণ মাছটি ছিল- ইলিশ ! জীবন্ত ইলিশ আর আগেও দেখেছি, কিন্তু এত সজীব, স্বর্ণাভ হতে পারে তা জানতাম না, তার প্রতি আঁশে যেন মহাসমুদ্রের নানা প্রান্তরের গল্প প্রতিফলিত হচ্ছে। সেই স্মৃতি নিয়েই ঘুমোতে গেলাম উত্তাল সাগরে।
সকাল আটটায় সহকারী ইঞ্জিনিয়ারের উদ্বাহু চিৎকারে ঘুম ভাঙল - তিমি তিমি! বিছানা থেকে গড়ান দিতেই ক্যামেরা হাতে ছুটলাম সামনের ডেকের রেলিঙয়ে, জানা গেল একটা তিমি জাহাজের খানিক দূরেই ভুস করে তার দর্শন দিয়ে আমাদের যাত্রাকে কৃতার্থ করেছেন। কিন্তু এখন সে লাপাত্তা! কোন জাতের তিমি, কত বড় আকৃতির, কী বর্ণ কিছুই জানা গেল না, শুধু শুনলাম তার সৃষ্ট ফোয়ারার কথা। তবুও অন্তত জানা গেল যে উনি বা উনারা আমাদের উপস্থিতির খবর জানেন, আবারও আশা আছে পুনদর্শনের।
সেদিন সকালের জালের রেকর্ড ১৮ টন মাছ উঠল, এত বেশী মাছ বিধায় মূল জালকে চার বার আলাদা আলাদা পুটুলি করে তুলতে হল, যদিও ক্যাপ্টেন জানালেন তার রেকর্ড আছে ১০ বার আলাদা পুটুলি করে একবারের মাছ উত্তোলন করা।
দুপুর ১২টায় জাল তোলার পরে দূরে ধবধবে সাদা কী যেন একটা ভাসতে দেখে নৌকা ঘুরাতেই এক বিষণ্ণ সাগরের জন্ম হল, যাতে আলগোছে তালে তালে দুলছে একটি মৃত ডলফিন, দেখে মনে হচ্ছে সদ্য মৃত মানুষের লাশ। কোন রাগ নেই, ক্ষোভ নেই, অভিমান নেই, শুধু আছে এক না থাকা অস্তিত্ব। সম্ভবত মাছ ধরার জালে আটকা পরেই সলীল সমাধি হয়েছে অসাধারণ আমুদে প্রাণীটার, জলের নিচে নির্দিষ্ট কয়েক মিনিটের বেশী থাকলে অন্য যে কোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর যা হয়, সেই একই করুণ পরিণতি ঘটেছে তার ক্ষেত্রেও। অনেক সময় জেলেরাও পিটিয়ে মারে ডলফিনদের, অযাচিত আপদ ভেবে। কেন, কে জানে!
সেই দিন সন্ধ্যায় অন্য ধরনের জাল ফেলা হল, যেগুলো সাগর সেঁচে তলদেশের মাছ নিয়ে আসবে। রাত ৮ সেই অন্য জাল তোলা শুরু হতেই প্রথমে আরেকটা কাছিম দেখা গেল, বেঁচে আছে তখনো ।
নানা ধরনের মাছ আসল এবার, যা আগের বারের গুলোতে আসে নাই, মন খারাপ করে দিয়ে উঠে আসল ২টা মৃত হাঙর, ছোট্ট ছোট্ট, হাত খানেকের মত লম্বা। বিশ্বে প্রতি বছর একশ কোটি হাঙর মারা পড়ে মানুষের কারণে, তারই একটা বাস্তবদৃশ্য দেখা গেল চোখের সামনে।
জাল তোলার পরপরই খাবার পালা, সেদিন পাতে বিশেষ আয়োজন ছিল সোনালী ইলিশের ঝোল। অদ্ভুত তৃপ্তিকর সেই স্বাদ, টাটকা মাছের গন্ধের সাথে নোনা বাতাসের কারণে তৈরি ক্ষিদে, একেবারে মানিকজোড়। তরিবৎ করে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া হল সদলবলে। রাতে পড়া শুরু হল টিনটিনের মমির অভিশাপ।
(পোটকা মাছ)
৩০ ডিসেম্বর, সোমবার
সকাল সাড়ে নয়টায় সুনীল সাগরের পিঠ ভেদ করে ছুটে গেল কী এক পোকা ! কয়েক মিটার যেয়ে আবার সাৎ করে সেঁধিয়ে গেল, উল্লাসে চিৎকার উঠলাম – উড়ুক্কু মাছ, ফ্লাইং ফিশ! কিন্তু বার দুই দেখা দিয়েই সে মনে হয় দিক পরিবর্তন করে চলে গেল জাত ভাইদের দলে যোগ দিতে, ফ্রেমবন্দী করার সুযোগ মিলল না , আশা করি আবার দেখা হবে উড়ুক্কু বন্ধুর সাথে।
সকাল ১১ টায় তিমি দেখা গেছে বলে জানাল প্রতিবেশী জাহাজ, সেই মোতাবেক সাগরের ঐ অঞ্চলটাতে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি চলল বটে, যদিও সেই মহাজনের দর্শন তো মিললই না, জালে মাছও উঠল কম। যদিও তাতে আমাদের খানাদানার কোন টান নেই, স্রেফ চিবানোর জন্য নাস্তা আর মধ্যাহ্ন ভোজনের মাঝামাঝি সময়ে মিলল রূপচাঁদা ভাজা, সাথে যোগ দিয়ে ক্যাপ্টেন রেজা তার অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে সাগরের নানা গল্প শোনালেন, বিশেষ করে ঝড়ের পড়ে সমুদ্রে কয়েকদিন ভাসতে থাকা এক কিশোরকে কেমন করে উদ্ধার করে চট্টগ্রামে নিয়ে গেলেন সেই অভিজ্ঞতা মন ছুঁয়ে গেল সবার।
সাগরে গেলে মনটা কেমন যেন হয়ে যায়, ফাঁকা ফাঁকা লাগে, তরঙ্গের সাথে সাথে হৃদয়ে গান আসে, উদ্বাহু সুরে গাইতে থাকি যখন যেটা মনে ভেসে ওঠে সেইটা, বাউলা বাতাসের জাদুতে, আউলা চুলে-
৩১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার
মধ্যদিনে যে জাল তোলা হল তাতে অন্যান্য মাছের সাথে বেশ কিছু মৃত হাঙর, কাটল ফিশ, স্কুইড যোগ দিল। তিন গোয়েন্দার অথৈ সাগর পড়ে জেনেছিলাম স্কুইডের কালি বেশী ঘন হয়, আক্রান্ত হলে এই কালি ছিটিয়ে স্কুইড আত্মরক্ষার কাজ সারে, সেই কালি দিয়ে নাকি এক নাবিক লগ-বুক লিখেছিলেন একবার। এবার বঙ্গোপসাগরে দেখলাম কাটলফিশের কালি, সেও বেশ ঘন, যদিও লেখার সুযোগ না নিয়ে সেটাকে সাগরে ফিরে যেতে সাহায্য করলাম, যতই কালি ছিটাক, এমন রোদ সহ্য করা এই বেচারার নরম থলথলে দেহের কাজ না।
আর কত বিচিত্র ধরনের জেলিফিশ যে দেখা গেল, কতগুলো তো কাঁচের মত স্বচ্ছ ! এপার থেকে ওপার ভেদ করে সব দেখা যায় !
এমনকি তাদের ভিতরে থাকা শিকারও-
দুপুর ৩টায় যাত্রাপথে যুক্ত হল স্মরণীয় মুহূর্ত, জাহাজের পাশ দিয়েই তীর বেগে উড়ে গেল এক কালো পাখি, তার পিছু পিছু ধাওয়া করল আমাদের দৃষ্টি, অবশ্যই দূরবীনের মাধ্যমে। অন্য অনেক মহাসামুদ্রিক পাখির মতই সেও জাহাজের পিছনে জলের ঘূর্ণনের পথটা মাছের সন্ধানে একবার দেখে আবার ফিরে আসল পূর্বনির্ধারিত যাত্রাপথে, পাশের ডেক থেকেই শুনি ইনাম ভাইয়ের উল্লাস ভরা কণ্ঠ Thats the Bird, Thats the Bird ! অবশেষে সাগরের ভাসার এতগুলো দিন পরে দর্শন পেলাম পোমরাইন জেগারের ( Pomorine Skua ), ভীম দর্শন পাখিটি আমাদের প্রাপ্তির আনন্দে মুড়ে আবার উড়াল দিল দূর গন্তব্যে। জীবনে প্রথম দেখা মিলল এই বিরল পাখির, এর আগে বাংলাদেশে এই ছবি ছিল মাত্র দুইজনের।
বিকেল ৪টায় স্পেশাল স্কুইড ভাজা চলে আসল টেবিলে, বেশ ঝাল ঝাল করে রাঁধা। স্কুইডের অনুরোধ করায় হেঁসেলের ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন ভাই যত্ন করে রান্না করেছিলেন, যদিও ঝাল বিধায় মুড়ি দিয়ে মাখিয়ে চিবোতে হল। আমরা তখন সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকায় চলে গেছি।
বছরের শেষ সূর্যাস্ত চলে আসল দেখতে দেখতে, জন্ম হচ্ছে নতুন রাতের। এবারের নববর্ষকে অন্যভাবেই স্বাগত জানাচ্ছি আমরা, বিশেষ কোন আয়োজন ছাড়াই। এই প্রসঙ্গে ক্যাপ্টেন বললেন, কারাগারেও টাকা খরচ করলে অনেক কিছু মেলা সম্ভব, কিন্তু জাহাজে না! কারাগারের চেয়েও খারাপ এই কৃত্রিম দ্বীপ!
১ জানুয়ারি, বুধবার
সকাল ৬ টা নতুন বছরের প্রথম সূর্য দেখার আনন্দে ডেকে আড়মোড়া ভাঙলাম, মনের মধ্যে ভাবনারা তুফান মেলেছে এই বছরের শত শত পরিকল্পনা নিয়ে। কিছু বাস্তবে রূপ নিবে কিছু কল্পনা থেকে যাবে, আবার আসবে নতুন বছর, স্বপ্নবাজরা চষে বেড়াব এই নীল গ্রহ, স্বপ্ন মাখা চোখে।
সকাল ৭ টায় সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত জেগার (স্কুয়া) আবার হাজির মাছ খাবার জন্য, এবার সেই বেশ কিছুক্ষণ সঙ্গী হয়েই থাকলে জাহাজের, এমনকি জলে বসলও ! সেদিন অবশ্য পরে একসাথে ৪ টা পাখিও আমরা দেখেছিলাম, মানে তাদের সংখ্যা বেশ ভালই আছে মানুষের থেকে দূরে এই কূলকিনারাহীন সাগরে।
সকাল ১০টায় জাল তোলা হল, সেই সময়ে ডলফিনের ভিড়, অন্তত ৫টা স্পিনার ডলফিন বেশ জাকিয়ে ঘুরতে থাকল মাছের আশায়।
নাবিকেরা অনেক সময়ই ৫০টার ঝাঁকও দেখে থাকেন এই অঞ্চলে, তারপরও এবারের ভ্রমণে প্রথমবারের মত জীবিত ডলফিনদের লেজের দেখা পেয়ে আমরা যথেষ্ট আহলাদিত, প্রকৃতি ও জীবন দল ডলফিন দলের পানির নিচের ফুটেজ সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল, আর আমরা পানির উপর থেকেই দেখলাম তাদের শিকার, খুনসুটি, আদর। এইটাই এযাত্রা সোয়াচের সবচেয়ে গভীরে অবস্থান আমাদের, এবার ফিরতে অন্য মাছের খোঁজে অন্য দিকে।
দুপুর ২টায় জাল তোলা হল, ২ টা কাছিম, স্কুয়া হাজির, সাথে পানচিল, গাঙচিল, আর বিচিত্র সব প্রাণী ।
বিশেষ করে অন্ধকারের লন্ঠন মাছ, যে মাছটা মুখের সামনে নিজের দেহ থেকে উৎসরিত আলো টোপ হিসেবে ব্যবহার করে অন্য মাছকে আকৃষ্ট করে শিকার করে। সাগরের আঁধার জগতের তলদেশে শুয়ে শুয়ে এভাবেই অন্ন সংস্থান হয় তার।
সত্যিকারের অক্টোপাস, আট শুঁড়ের কী বর্ণীল একটা প্রাণী! যদিও মারা যাবার খানিকক্ষণ পড়েই যে ধূসর বর্ণের হয়ে গিয়েছিল।
উঠে এল একটা বিশেষ মাছ যার শরীরের উপরের এবং নিচের অংশের বর্ণ সম্পূর্ণ আলাদা, আর দাঁত পুরাই সারি সারি ক্ষুর।
(একই মাছের দুই পিঠ)
দুপুরে বিশেষ আয়োজন ছিল ইলিশ খিচুড়ি সাথে টাইগার চিংড়ি। ক্যাপ্টেন হাসতে হাসতে বললেন- বাড়ীতে আসলে তো এই চিংড়ি খাওয়ানোর সামর্থ্য হবে না, এইখানেই খাওয়ায় আপনাদের।
বেজায় খাওয়া-দাওয়া করে একা ডেকের উপরে বেরিয়ে আসছি একটু বাহিরে বসার জন্য, মনে হল অন্য ধরনের এক জোড়া পানচিল মাস্তলের উপর দিয়ে উড়ে যেয়ে আবার দ্রুত ফিরে গেল, মুহূর্তের মাঝেই একটানা ক্লিক করে কে কয়টা ছবি সম্ভব তুলে একটা হাক দিলাম- ইনাম ভাই, ইমারজেন্সি !
ডাক শুনেই ইনাম ভাইয়ের আগে ক্যাপ্টেন দৌড়ে আসলেন কোন দুর্ঘটনা হয়েছে ভেবে, ততক্ষণে পাখিরা লাপাত্তা, ক্যামেরাই তোলা ছবি দেখেই উল্লসিত ইনাম ভাই বললেন- নতুন বছরের জন্য এর চেয়ে ভাল উপহার হতে পারে না, বাংলাদেশের জন্য নতুন পাখি আবিস্কার করেছেন ! (সেটা কী পাখি, তার ছবি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত লেখা পরে আসিতেছে )
ল্যাটিচিউড ২১ ডিগ্রি ১৫মিনিট নর্থ, লংগিচিউড ৮৯ ডিগ্রী ৪৪ মিনিট ইস্ট এই অবস্থানে পেলাম সেই নতুন আগন্তককে।
বিকেলের দিকে জাহাজের সামনের বেশ বড়সড় কিছু মাছকে পানি ফুঁড়ে উঠে লাফাতে দেখলাম অনেক বার, ফ্লাইং ফিশ নয়, বেশ বড় আকৃতির। সহকারী নাবিকেরা দেখে জানাল এক ধরনের টুনা, অপূর্ব সব দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে একের পর এক, মাছগুলো চকচকে শরীর বাতাস ফুঁড়ে চলছে, আবার প্রবেশ করছে বিশাল সব ঢেউয়ের মাঝে, তবে ছবি তোলা দুষ্কর, শত শত তুললেও একটাও মাছ শূন্য ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় না, হয়ত মুড়ো উধাও, না হয় লেজ! অবশেষে একটা মুহূর্ত পাওয়া গেল মন মত-
২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার
এই জাহাজে আজ আমাদের শেষ দিন, সকাল থেকেই সাগরে মাতম শুরু হয়েছে যেন সেই কারণে! বিশাল বিশাল সব ঢেউ, জাহাজ টালমাটাল, একবার উপরে উঠে তো আবার নামে, ডেকের উপরে পর্যন্ত এসে ঝাঁপটা দিচ্ছে লোনা জল। দরিয়ার মাঝে কাঠের তৈরি মাছ ধরা ট্রলারগুলোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে কোন সময় তলিয়ে যাবে খড়কুটোর মত।
(ছুরি মাছ)
সী-সিকনেসে আক্রান্ত হবার মোক্ষম আবহাওয়া, যদিও গত এক সপ্তাহের অভিজ্ঞতায় কিছুটা খাপ খাইয়ে নিয়েছে শরীর, তারপরও এমন আবহাওয়াতে যে কেউই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তবে দুপুরের খানাদানাতে কোন ঘাটতি ফেলতে পারল না উম্মত্ত সাগর। নতুন কোন পাখি যদিও বা আসল না সাগরের বার্তা পৌঁছে দিতে, আসলে গত এক সপ্তাহ সাগরে ভাসার পরেও পাখি দেখেছি আমরা মাত্র ৫ ধরনের, তাদের মাঝে নতুন পাখিটি ছিল মাত্র ২টি, আর সিংহভাগই ছিল পালাসি গাংচিল।
সেদিনও জালে উঠে এল ২ টা কাছিম আর নানা রঙের কাঁকড়া, যারা আমাদের স্পর্শ নিয়ে ফিরে গেল অতলে। অবশেষে রাতে অন্য জাহাজে উঠে চট্টগ্রাম রওনা দেবার সময় সাগরের টানে বার বার মনে হচ্ছিল-
কেন পিরিতি বানাইলি রে বন্ধু, ছাইড়া যাইবা যদি?
(পোস্টটি আমাদের সত্যিকারের ফাইটার বন্ধু শাহেনশাহ সিমনের জন্য)
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ইটা মাইরেন না গো ! পেরেশানিতে আছি!
facebook
হুঁ, এইবার পইড়া আসলাম... 1-G দিয়া ছবি সব কয়টা দেখপার পারিনা... ... সেহ্রির টাইমে দেইখা লমুনে... আর আপ্নে মিয়া আসলেই বদলুক... উদাস'দা মিছা কয়নাই... "অথৈ সাগর" আর "দক্ষিণের দ্বীপ" এর কথা মনে করায়া দিলেন
আর, পেরেশানী ক্যা? মিতার লগে আপনার ও ভিড্যু বাইরাইছে নাকি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
"অথৈ সাগর" আর "দক্ষিণের দ্বীপ" আমারে আউলা বানায়ছে !
মিতা কে?
facebook
ওই মিয়া, ফিনল্যান্ড থাকেন বইলা লন্ডন চিনেন না!
ফাইজলামী করেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নাহ
facebook
খাইছে, এই তারেক দেখি সেই তারেক না!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হ
facebook
পুরা মুখ হাআআআ করে লেখাটা পড়লাম আর ছবিগুলা দেখলাম। মনে হলো যেন আমিই ছিলাম সাগরে।
এতো সুন্দর কেমন করে লিখেন?
রূপচাঁদা মাছ খাবো!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
হাআআআআআ করতে হয় না, মশা অনেক! ঐ, আপনি কুতায়?
facebook
চমৎকার। বঙ্গোপসাগরে যে এই মাছগুলো পাওয়া যায় জানা ছিলো না। কি কি টেকনিক্ অবলম্বন করে সমুদ্রে জাল ফেলে জেলেরা মাছ ধরেন, সেটা খুব জানার ইচ্ছে ছিলো; মনে হচ্ছে সরাসরি গিয়ে দেখাই ভালো।
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
অনেক বিচিত্র জাল, আলাদা আলাদা ধরন।
facebook
আপনে একটা পুরাদমে অভিশাপ!!! আপনের পোস্ট দেখি আর ভাবি, শালার জীবনে কিছুই দেখলাম না!!!
লেখা আর ছবি 'ব্যাসম্ভব সুন্দর'!!!!
সুবোধ অবোধ
না দেখলে সমস্যা নাই, দেখে নিবেন
facebook
আপনার ছবিগুলো দেখে আবারো বুঝলাম স্থলের চেয়ে জলের জীবনে বৈচিত্র্যতা এবং রঙ অনেক অনেক বেশি। অসাধারন সব ছবি, তারচেয়েও অসাধারন বর্ণনা সবকিছু মিলেয়ে নতুন বছরের সেরা উপহারটা দিলেন।
মাসুদ সজীব
ধন্যবাদ, পরের বার আপনার সাথে অনেক বেশী আড্ডা হবে আশা করছি
facebook
ভাইয়া, বিনে পয়সায় সমুদ্র মন্থন দেখানোর জন্য এত্তগুলা
আর স্টিং রে(শাপলাপাতা মাছ)'র এখানে খুব চাহিদা! শীতকালে ঝাল করে খেতে বেশ কিনা!!
facebook
অনুদা, আপনারে আমি সাংঘাতিক হিংসায়
কেন অহেতুক মানুষের মনে এমন দোলা জাগান??? কেনু কেনু কেনু?
লেখায় আর ছবির জন্য
অনেকদিন কোন খবর পাইনা, ভাল আছেন তো?
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
কেমন দোলা ?
facebook
কত যে বিচিত্র প্রাণী।
এভাবেই চলুক আ্যডভেঞ্চার!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
চলুক
facebook
অণু আবারও মুগ্ধ হলাম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হাতে সময় থাকলে খুলনা দিয়ে অল্প সময়ে যেতে পারবেন, ২ দিন মত লাগবে !
facebook
অণু আবারও মুগ্ধ হলাম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কদিন ধরে আপনি নিখোঁজ থাকায় ধরে নিয়েছিলাম বিশেষ কিছু নিয়েই ফিরবেন। এক কথায়-মুগ্ধ।
----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য
হ, অনেক দিন হয়ে গেল না লেখার !
facebook
ওরে কঠিন
ওরে চরম
facebook
..................................................................
#Banshibir.
খিচুড়ি মুর্গীর মাংস পাকাইতে পাকাইতে খানাখাদ্যের উত্তম বর্ণনা পড়লাম, নাইলে কাইন্দা মারা যাইতাম।
ঝাল স্কুইডের বাটির ছবিখান সেইরাম।
..................................................................
#Banshibir.
আসলেই ঝাল ! জাহাজে ভোজন এবং ভজনের উত্তম ব্যবস্থা ছিল, ৫ বেলা মাছে মাছ !
facebook
দারুণ!
কিন্তু কচ্ছপদুটো? তাদের ছেড়ে দিয়েছিলেন তো?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
অবশ্যই, ৭ টা আটকেছিল নেটে, সবগুলো মুক্তি পেয়েছে
facebook
নতুন পাখিদুটো নিয়ে কৌতূহল হচ্ছে।
সোয়াচ যায়গাটা কোথায়? একটা ম্যাপ যোগ করে দেওয়া যায় কী?
বাতিওয়ালা মাছ যে বঙ্গোপসাগরেই আছে জেনে অবাক হলাম।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কন কী ! সোয়াচ নিয়ে আলাদা লিখা দিব দাঁড়ান, আরেকবার ঘুরে আসি
facebook
আমার নেট স্পিড ভালো হওয়া সত্ত্বেও একটা ছবিও আসেনি। কেবল এই লেখা দেখায়ঃ
Secure Connection Failed
An error occurred during a connection to www.flickr.com. Cannot communicate securely with peer: no common encryption algorithm(s). (Error code: ssl_error_no_cypher_overlap)
The page you are trying to view cannot be shown because the authenticity of the received data could not be verified.
Please contact the website owners to inform them of this problem. Alternatively, use the command found in the help menu to report this broken site.
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বুঝলাম না, অনেকেই এই কথা বলেছেন ! কিন্তু আমার এখানে দেখা যাচ্ছে
facebook
অপেক্ষা করছিলাম এই লেখাটার জন্য
পাহাড় পর্বতের পর এবার তারেক অণুর সমুদ্র বিজয়
০২
পাখিটার কথা জানার অপেক্ষা এখন
জানাব দাদা, তিষ্ঠ!
facebook
তারেক অণুর সমুদ্রজয় দেখলে আরেক সমুদ্রজয়ের ক্রেডিট নেয়া লোকজন মাইন্ড খাইব না তো?
____________________________
facebook
একবার মনে হচ্ছে চমৎকার লেখাটার সাথে ছবিগুলো ফাউ, আবার বিপরীত ভাবনাও আসছে, কোনটাকে ছেড়ে কোনটা ধরি! কল্পনার ডানা মেলে আমিও বেড়িয়ে পড়ছি এক সমুদ্র যাত্রায়।
লন যায়-
facebook
বেশ কয়েক বছর আগে অন্য একটা ব্লগে খোঁজ পাই এই সোয়াচ জায়গাটার। সেই ছবিগুলো দেখে ভয়াবহ মুগ্ধ হয়েছিলাম। এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একবার যাবো সেখানে।
আপনি তো আপনি বেলাল পর্যন্ত ঘুরে আসলো এই জায়গা?
আর দেরি করা ঠিক হবে না। আগামী বছর যাবো আশাকরি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সামনের মাসে একটা সুযোগ আছে, কিন্তু আগেই বলে রাখি সী সিকনেসে আক্রান্ত হবার বিস্তর সম্ভাবনা, সাথে রাম রাখলেও কাজে দিবে না
facebook
রামে কামে না দিলে সীতা রাখবো, অসুবিধা কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খাসা কথা -
facebook
ভাই, আমারেও একখান আওয়াজ দিয়েন যাওয়ার আগে !!
____________________________
facebook
আমাদের নিয়েন, নজরুল ভাই, পিলিজ! এই ডিসেম্বরেই যাইতে চাইছিলাম, অবরুদ্ধ হয়ে কিচ্ছু হলো না।
তারকাণু লোক ভালু না, খালি সী সীকনেসের ভয় দেখায়।
ঈর্ষা, ঈর্ষা আর ঈর্ষা!!!
কে বলেছে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষ আয়োজন ছাড়াই? সাগরের মাঝখানে এরকম একটা নববর্ষ কাটানো তো সুপার সুপার বিশেষ আয়োজন!
____________________________
তা বটে , তা বটে
facebook
লেখা উত্তম হইয়াছে…… বারবার পঠন করিয়াও আবার পড়িতে মন চাহে। মৎস্য নিয়া আরেক কিস্তি আসিবে কি?
……জিপসি
ইচ্ছা আছে, বিশেষ করে জেলে ভাইদের নিয়ে
facebook
মনের কথা বলে দিয়েছেন সুবোধ আর অবোধ।
প্রোপাগান্ডা
facebook
অনেক চেষ্টা করেও একটা ছবিও দেখতে পেলাম না
বহুত লাফালাফি করছিলাম এ বছর এই সীজনে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে যাওয়ার জন্য। অবরুদ্ধ হয়ে কিছুই হলো না। লেখা পড়ে যে কি অনুভূতি হল সে আর ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
ছবি নিয়ে আরও কয়েকজন বলেছে এমন, কী মুস্কিল! ফেবুতে অবশ্য আছে-
এই বছরেই যেয়েন-
facebook
এখন দেখতে পাচ্ছি।
facebook
দিস ইজ লাইফ!!!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ডিপেন্ডস ! জেলে ভাইয়ের কাজ দিনে ২৪ ঘণ্টা, বেতন শুরু ২ হাজার থেকে, তারা নিশ্চয়ই বলে- জীবন চোষে !
facebook
হুমম... ক্যাপ্টেইন'স কারেজিয়াস
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
মাছগুলা মারাত্মক!
আরও আসিতেছে
facebook
সমুদ্র দেখি আর ভাবি কতো কিছুই আছে এর নীচে, কতোসব রহস্য! একদিন যদি দেখা যেত! নীচে না হোক সমুদ্রের উপ্রে কি উঠে দেখে নেয়া গেলো তো!
ছবি এবং লেখা চমৎকার। পানির নীল রঙ্গটা যা এসেছে না! টুনা ফিশের ছবিটা অচাম (বিড়ালের প্রিয় খাবার বলে কথা )।
যাইহোক, এতো সব মাছেদের ভীড়ে ছোট্ট বন্ধু দাগি আবাবিলকে দেখে শান্তি শান্তি লাগছে।
- শ্রাবস্তী
আহা, এত সুন্দর মাছ দেখেও মানুষ আর বিড়াল তার কাঁটা খুঁজে! পাষাণী
facebook
বুঝতে পারছি না, সমস্যাটি কোথায়? আমার পিসির দুর্বলতা নাকি ভাইরাস? কিছুদিন আগেও একটি ছবিব্লগ সবাই দেখতে পেলেও আমি পাইনি।
যাহোক, অণু ভাইকে ধন্যবাদ ফিরে আসার জন্য। এত দীর্ঘ বিরতি (অনেকের জন্য স্বল্প হলেও অণু ভাইয়ের জন্য দীর্ঘই প্রযোজ্য) তো অণু ভাই নেন না কখনো! সচলের সবচেয়ে বড় রক্ত সঞ্চালকের অনুপস্থিতিতে সচল যেন কিছুটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
আর বিরতি নিচ্ছি, পরের পর্ব আসিতেছে- মিশন কাপ্তাই
facebook
এতো পুরোই মৎসকুমার কাহিনি! অনেক ভাগ্যবান আপনি, বিরল পাখির দেখা মিললো
পাখিটাকে নিয়ে জলদি লিখে ফেলুন।
হুম জার্নালে ছাপার নিয়ম আগে, হলেই লিখে ফেলব
facebook
অসাধারণ! সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে যাওয়া তো পুরাই সার্থক। কিংবদন্তী লেখা। নতুন পাখির পোষ্টের জন্য প্রতীক্ষায় - নিশিতা
পুরাই, তবে আবার যাব, এক্কেবারে গভীরে
facebook
মানে কি? পাপালো হারকুস নাকি কুমালো? যাই হোক
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দারুণ! যেতে মনে চায়।
একবার একটা কয়লা আনা নেয়া করে এমন একটা জাহাজে করে ঢাকার শাহ সিমেন্ট ঘাট থেকে কর্ণফুলী পোর্টে গিয়েছিলাম। কিছু সময় বঙ্গোপসাগরের ঢেউ এর দোলার ছোঁয়া পেয়েছিলাম। সেটা আমার জীবনের একটি স্মরনীয় ভ্রমন হয়ে আছে। যদিও সেটি আপনার এই অভিজ্ঞতার কাছে নস্যি, তবু সেই সময়ের কথা মনে পড়ল।
অনেকেই ছবি দেখতে পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন। নিচের ছবিটিতে তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো অপশনটিতে ক্লিক করে এইচটিএমএল কোড ব্যাবহার করুন। এখন যেভাবে করেছেন তাতে প্রতিটি ছবির পেছনে বাকি ছবি গুলোও লোড হচ্ছে। তাই পুরো পেইজটি লোড হতে অতিরিক্ত সময় লাগছে।
আমিও কিছু একটা গোলমাল করেছি, কিন্তু কী করেছি ধরতে পারছি না
facebook
আপনের লেখা পড়ি আর ভাবি, জীবনে কিছুই দেখলাম না!!! ।আপনার বই বের হবে কবে?
ইসরাত
এই মাসের শেষ সপ্তাহে, বইমেলায় পাবেন
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দারুণ অনু, দারুণ।
এ্যাতো এ্যাতো মাছ খেয়েছেন, বিশেষ করে তাজা ইলিশ - খুব হিংসে হলো।
ভালো থাকবেন বন্ধু।
--------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
হ ,মাছ একটু বেশীই খেয়েছি-
facebook
অন্যতম সেরা পোস্ট!
হে হে, ৬ বছর পরে হলেও উত্তর এলো
facebook
ইলিশ মাছটার বাড়ি কোন জায়গায়? এত রূপবতী ইলিশ এর আগে দেখি নাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
facebook
সাগরের বেশ গভীরের মাছ শুনলাম !
facebook
আপনাকে এত্তগুলা হিংসা!!
ছবিগুলো অসহ্য সুন্দর!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
এত্তগুলা শুভেচ্ছা
facebook
অণুদা, আপ্নে মহান!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
আমি মরা ঈলিশ খাই। তাজা ঈলিশ মজা না- আমি জানি
টুনাটা সিরাম পোজ দেয়!
আমিও লন্ঠন মাছ দেখছি। 'ফাইন্ডিং নিমো'তে
হিংসায় হিংসায় তিনদিনে পোস্ট পড়লাম। আর বেশি আগাইতে পারলাম না, হিংসারও একটা নিমিট আছে- আপনের নিমিট নাই।
কড়িকাঠুরে
তবুও তো কিছুই লিখি নাই, ঈমানে !
facebook
কেউ সাগরে যাওয়ার বায়না ধরলেই তারে সিকনেস এর ডর দেখান। দেশ কোথায় আপনার, গোপালী? সাগরের নামই মুছে যাবে, বুচ্ছেন?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
উপরে ভুল কইচ্চি, এই তারেকই সেই তারেক
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সব দুষ আমার কইচ্চেন !
facebook
ভাই ইবনে ম্যাগেলান,
আপনার নাম মনে হলে বা লিখা পড়লে গা জ্বালা করে (হিংসায়) , একজন মানুষ দুনিয়া ঘুরে বেড়ায় আর আমরা হতভাগারা সেই কাহিনী পড়ি আর আফসোস করি।
তুলনাহীন হইসে।
ছবি ছাড়া পুরো লেখাটাই অসম্পূর্ন তাই যারা ছবি দেখতে পাননি তারা মিস করেছেনই বেশী।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
ব্যাপার না, আমরা আমরাই তো !
facebook
ছবি দেখে আর লেখা পড়ে মন চাচ্ছে সাগরে ছুট দিতে !!
facebook
নতুন মন্তব্য করুন