সৈয়দ মুজতবা আলী : প্রসঙ্গ, অপ্রসঙ্গ

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ১৫/০২/২০১৪ - ১১:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এপ্রিল ২৮, ১৯৭১ পাটোয়ার বাগান লেন

আজ আমার জন্য খুব দুঃখের দিন। সৈয়দ মুজতবা আলী আমাকে তার ৫ নং পার্ল রোডের তেতলার ঘর থেকে বের করে দিলেন।
এই-ই ছিল গোলাম মোস্তাকিম রচিত স্মৃতিকথা সৈয়দ মুজতবা আলী : প্রসঙ্গ, অপ্রসঙ্গ-র প্রথম লাইন! সেই দিনই তাদের প্রথমবারের মত সাক্ষাৎ ঘটে, যার অভিজ্ঞতা সুখকর না হলেও সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনের শেষ কয়েক বছর গোলাম মোস্তাকিম পরিবারের সদস্য বা নিকটতম বন্ধু হিসেবে ছিলেন, অতি অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায়, আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে জেনেছেন অনেক মূল্যবান তথ্য। সেইগুলোই ছাড়া ছাড়া ভাবে উপস্থাপন করেছেন ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত বইটিতে।

কিছু দিন আগেই বইটি মিলল পল্টনের ফুটপাতের বইয়ের দোকানে, লেখনী খুব আহামরি ছন্দময় গোছের নয়, কিন্তু বিষয়ের গুণে তা হয়ে গেছে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাই বেছে বেছে প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর নানা আড্ডায় বলা কথাগুলো ঠিক সেই ভাবেই উপস্থাপন করা হল-

প্রথম পরিচয়ে আলী সাহেব তাকে প্রশ্ন করেছিলেন- কে তুমি? কোত্থেকে আসা হচ্ছে?
লেখক- আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছি।
আলী সাহেব- কেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছ?
লেখক- প্রাণের ভয়ে, পাঞ্জাবী সৈন্যদের ভয়ে আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে এসেছি।
আলী সাহেব- You Coward. Get out. I say, get out. বেরোও বলছি, বেরোও এখান থেকে। বাংলাদেশের লোকজন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পাঞ্জাবী সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর উনি এই সুযোগে কলকাতা দেখতে এসেছেন। ভিসা-পাসপোর্ট লাগেনা তো তাই।
এরপরে মোস্তাকিম সাহেব পালিয়ে বাঁচেন আরও অপমানের হাত থেকে। যদিও কাল পরিক্রমায় দ্রুতই মুজতবা আলীর সাথে সখ্য হয় তাঁর, কিংবদন্তীর লেখকের জুতা পরিষ্কার থেকে শুরু করে পরম স্নেহ ভাজন ছোট ভাই কাম সেক্রেটারির যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন নিজ দায়িত্বে।
এখন থেকে সৈয়দ মুজতবা আলী বা আমাদের আলী সাহেবের লেখা উক্তি গুলোর প্রথমে ∆ চিহ্ন দেওয়া হল বোঝার সুবিধার্থে-

∆‘ তোমাদের তো ধারণা কবিসাহিত্যিকরা তাঁদের কাজ সময় মত করতে পারেন না। কথাটা সব সময় ঠিকনয়। আমি রবি ঠাকুরের কাছে শান্তিনিকেতনে পাঁচ বছর ইংরেজি পড়েছি। তিনি আমাদের শেলী এবংকিটস পড়াতেন। দুপুরের দিকে। পাঁচ বছরে তিনি একদিনের জন্যও লেট করেন নি। ক্লাশ শুরুর ঘণ্টাবাজার সাথে সাথে তিনি ক্লাশ শুরু করতেন এবং ক্লাশ শেষের ঘণ্টার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাশ শেষ করতেন।


আমাদের দেশের লেখকরা কিন্তু বিদেশী লেখকদের চেয়ে প্রতিভার দিক দিয়ে কেউ কম নন। তবে আমাদেরদেশের লেখকরা খাটতে রাজি নন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। আমি তোমনে করি আমাদের রবি ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে পরিশ্রমী লেখক। তোমরা কল্পনাই করতে পারবেনা রবি ঠাকুর কী রকম পরিশ্রম করতেন। রবি ঠাকুর কখনই আকাশের দিকে তাকিয়ে কবিতা লিখেন নি।


দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যুর পর ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় রবি ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়ীতে গেলেন একটাকবিতা আনার জন্য। রবি ঠাকুরকে ব্লাতেই তিনি হেসে বিধান রায়কে বললেন, ওহে ডাক্তার, এটা কিতোমার ডাক্তারী নাকি? বুকে স্টেথেস্কোপ ধরলে আর কলমের ডগা দিয়ে প্রেসক্রিপশন বেরিয়ে আসল। তুমিযখন এসেছো তোমাকে তো আর খালিহাতে ফেরান যাবে না। ঠিক আছে, তুমি বসো, আমি আসছি।

বলেই রবি ঠাকুর দোতলায় চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর একটি কবিতা বিধান রায়ের হাতে দিলেন। ---


রবি ঠাকুর যে জীবনে কি দুঃখকষ্ট পেয়েছেন তা সাধারণ লোক কল্পনাও করতে পারবেন না। সবারই ধারণারবি ঠাকুর জমিদারের পুত্র ছিলেন। তাঁর কোন অভাব ছিল না। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে রবি ঠাকুর শেষ জীবনে তাঁর হাত ঘড়িটা পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। মৃণালিনী দেবী শান্তিনিকেতনে আশ্রম করার জন্য তাঁর সকল গয়না দান করেছিলেন। রবি ঠাকুর নোবেল প্রাইজের পুরো টাকা দিয়েইএকটি কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক খুলেছিলেন, সে টাকা আর কখনই ফেরত পান নি। তবে দুঃখের ব্যাপার এইসকল কথা স্বীকার করতে অনেকেরই খুব কষ্ট হয়।


আমার মনে হয় এইটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনের মূল সুর। চিরজীবন তিনি বহুর ভেতর একের সন্ধানকরেছিলেন। তার সে সাধনা আমি প্রত্যক্ষ দেখেছি। সৌভাগ্যক্রমে প্রায় এক বৎসর শান্তি নিকেতনে আমিছিলুম এক ঘর নিচের তালায়। সেখান থেকে জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালেই দেখতে পেতুম, গুরুদেব তারজানালার পাশে বসে লেখাপড়া করছেন। সকাল চারটের সময় দুই ঘণ্টা উপাসনা করতেন। তার পরছয়টার সময় স্কুলের ছেলেদের মত লেখাপড়া করতেন। সাতটা, আটটা, নয়টা, তারপর দশ মিনিটের ফাঁকেজলখাবার। আবার কাজ- দশটা, এগারোটা, বারোটা। তারপর খেয়েদেয়ে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম। আবার কাজ-লেখাপড়া একটা, দুটো, তিনতে, চারটে, পাঁচটা, কাজ কাজ। পাঁচটা থেকে সাতটা ছেলেমেয়েদের গানশেখাতেন বা দিনুবাবুর আসরে বসে গান শুনতেন, অথবা গল্প-সল্প করতেন। তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরেআবার লেখাপড়া, মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান, আটটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত। কী অমানুষিক কাজ করারক্ষমতা! আর কী অসীম জ্ঞানতৃষ্ণা।


শান্তিনিকেতনে পড়াশুনোর সময় রবি ঠাকুরের অনেক চিঠি আমি কপি করে দিয়েছি। প্রথম প্রথম অনেকেই নিজ থেকে তাঁর চিঠি নিয়ে যেত কপি করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পরে রবি ঠাকুরকে নিজে তাগাদায় বেরুতে হত। অনেকের কাছ থেকেই চিঠিপত্র ফেরত নিতে হয়েছিল। আমার ক্ষেত্রে সে রকম হয় নি। তুমি ভাবতে পারবে না, রবি ঠাকুরের মত লোককে গোরার মত উপন্যাস নিজহাতে তিনবার কপি করতে হয়েছিল। Right upto পূরবী রবি ঠাকুর নিজ হাতে তাঁর সকল বইয়ের প্রুফ দেখতেন।
রবি ঠাকুর সম্পর্কে একটা বহুল প্রচলিত প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন – এসব জেনে তোমার কী হবে? এতে কি রবীন্দ্র সাহিত্য বুঝতে তোমার কোন সুবিধা হবে? যদি তুমি বলো তাহলে আমি তোমাকে বলতে রাজি আছি। আর বলেছিলেন- স্ত্রীকে রবি ঠাকুর খুব ভালবাসতেন। কারণ স্ত্রীর অসুস্থতার সময় রবি ঠাকুর তাঁর যে সেবা করেছেন তা খুবই বিরল।


এ প্রসঙ্গে মুজতবা আলী তাঁর মৃত্যু নামক রম্য রচনায় লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের শিষ্য অজিত চক্রবর্তীর মাতা কবিজায়ার মৃত্যুর কুড়ি বৎসর পর আমাকে বলেন, মৃণালিনী দেবী তাঁর রোগশয্যায় এবং অসুস্থাবস্থায় তাঁর স্বামীর কাছ থেকে যে সেবা পেয়েছিলেন তেমনটি কোন রমণী কোনো কালে তাঁর স্বামীর কাছ থেকে পেয়েছে বলে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, স্ত্রীর মানা অনুরোধ না শুনে তিনি নাকি রাত্রির পর রাত্রি তাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করেছেন।

∆ একদিন লেখক তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, অনেকেই বলেন, রবি ঠাকুর সম্পর্কে আপনি কোন বই লিখলেন না।
আলী সাহেব বললেন, রবি ঠাকুরের লেখা পড়ে যদি লোকে তাঁকে বুঝতে না পারে তাহলে কারও কিছু করার নেই। আর অধিকাংশ রবীন্দ্র-বিশারদকে আমি তাঁর লেখার দাড়ি-কমা বিশেষজ্ঞ মনে করি। হ্যাঁ, রবি ঠাকুরের দর্শন নিয়ে যদি কোন কথা উঠে তাহলে দু,এক কথা বলতে পারি।


আবার তিনিই বলেছিলেন সাহিত্যের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথকে সেন্টার না করে শেক্সপীয়ার বা গ্যাটেকে সেন্টার করতে। বলতেন- দেখেও তুমি বাঙ্গালী। রবি ঠাকুর তুমি অবশ্যই পড়বে। কিন্তু তুমি যদি শুধুমাত্র রবি ঠাকুরে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে ফেলো তাহলে বিশ্বসাহিত্য বুঝতে তোমার অসুবিধা হতে পারে। তাঁর চেয়ে তুমি গ্যাটে শেক্সপীয়ারকে কেন্দ্র করে রবি ঠাকুর পড়ো।


উস্তাদ আলাউদ্দিন খানকে রবি ঠাকুর খুব পছন্দ করতেন। মাইহার থেকে আলাউদ্দিন খান শান্তি নিকেতনে আসতেন। তাঁকে রবি ঠাকুর যে বাড়ীতে থাকতেন তাঁর সবচেয়ে কাছের ঘরে থাকতে দেওয়া হত। উস্তাদ আলাউদ্দিন খান শান্তিনিকেতনে থাকার সময় প্রায় দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা তাঁর ঘরে বসে বাজনা বাজাতেন।

কেউ যদি তাঁকে প্রশ্ন করতেন, খাঁ সাহেব, আপনি দিনরাত বাজাচ্ছেন কেন?

উত্তরে উস্তাদ আলাউদ্দিন খান বলতেন, গুরুদেব ব্যস্ত মানুষ, উনি কখন অবসরে থাকেন তাতো আমি জানি না। তাই আমি দিনরাত বাজিয়ে যাই। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গুরুদেবের যখন অবসর হবে তখনই তিনি আমার বাজনা শুনবেন।

তাহলে দেখো একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীকে কতটা সন্মান করতেন। । আরেকটা কথা জানো তো, উস্তাদ আলাউদ্দিন খান কালী সাধক ছিলেন। বাজনার মাঝেমাঝে মা কালী, মা কালী বলে চেঁচিয়ে উঠতেন। আবার ওদিকে নামাজ রোজাও সব ঠিক ছিল।


একদিন লেখক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন – আপনি কি কখনো আপিস ফাঁকি দিয়েছেন? উত্তর আলী সাহেব বলেছিলেন- মোটেই না। যে কয়দিন আপিস করেছি ঠিক মত করেছি। তবে কখনও এ্যারকন্ডিশন্ড রুম পেলে বদল করে সাধারণ রুমে চলে যেতাম। আর জীবনে চাকরিতে রিজাইন দিয়েছি সতের বারের মত।


আলী সাহেবের পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকন্দার আলী (১৮৬৫ - ১৯৩৯)র অসুস্থতার টেলিগ্রাম পেয়ে তিনি বাড়ী ফিরে পিতাকে গল্প করতে দেখে বলেন- টেলিগ্রাম করা হলো আপনি অসুস্থ বলে।

বাবা- মনে হচ্ছে আমাকে অসুস্থ দেখলেই তুমি খুশী হতে।


আবার আলী সাহেবের বড় ছেলে ফিরোজ কোন দিন বিশ্বাস করে নি যে শিবরাম চক্রবর্তী তাঁর বাবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাঁর ভিল ভাঙ্গাতে একদিন আলী সাহেবে ফিরোজকে নিয়ে শিবরামের আস্তানা মেস বাড়িতে যেয়ে দেখেন ফিরোজের জন্য মিষ্টি, কেক, চকলেট সবকিছুর বিশাল এন্তেজাম। এগুলো করার জন্য মৃদু আপত্তি জানাতেই শিবরাম হেসে বলেছিলেন, ফিরোজ কি আর ফি-রোজ আসে?

মুজতবা আলী নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে কম কথা বলতেন। মনে হতো তাঁর সম্পর্কে কিংবা তাঁর বই সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তিনি স্পষ্টতই বিরক্ত হতেন। ভাষা ও সাহিত্যের পর তাঁর যে বিষয়ে উৎসাহ ছিল তা হচ্ছে পুরাতত্ত্ব। দিল্লীতে থাকার সময় প্রতি রোববার ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়তেন পুরাকীর্তির ছবি তুলতে।


জীবনের প্রথমেই আমি ঠিক করেছিলাম আমি মাস্টারী করব। কারণ দুটো। ছুটি অনেক এবং আমি লেখাপড়ার সুযোগ পাবো। তারপর একটু দুঃখের সাথে বললেন, আজকাল শিক্ষক ও লেখকদের বাসায় সাধারণত তুমি কোন বই পাবে না। কাউকেই দেখবে না যে বসে বসে বই পড়ছে। তবে তাদের কাছে একটা বই তুমি পাবেই। সেটা হল চেক বই।
তারপর বললেন, শোনা যায়, আজকাল ছেলেরা ক্লাসে যায় না। কেন যায় না জানো? কারণ মাস্টাররা নিজেরা পড়েন না, এবং সেই কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারেন না।


আমি বেঁচে থাকতে কেউ আমার সম্পর্কে কিছু লেখুক সেটা আমি চাই না। তবে আমার মৃত্যুর পর যে যা খুশি লিখুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তুমিও আমার সম্পর্কে লিখতে পারো। তবে আমার মুখ দিয়ে এমন কথা বলিও না যা আমি বলি নাই। ।
আমি আমার লেখায় কখনও কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করি নি। মাত্র দুজায়গায় আমি দুটো লোকের বিরুদ্ধে মাত্র দুতিন লাইন লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম।


স্ত্রীর কাছ থেকে টেলিগ্রাম পেলাম – ছেলে হয়েছে। কী নাম রাখা যায়?

ছেলের নাম রাখো ভজুরাম।

- কেন এমন নাম বললেন?

- জানো তো কলকাতায় বিস্তর নেপালী দারোয়ানের নাম ভজুরাম। কাজেই ঐ নামটাই আমি বৌকে পাঠিয়ে কৌশলে জানিয়ে দিলাম যে ভবিষ্যতে আমার ছেলে মেয়ের নাম রাখার জন্য আমাকে যেন অকারণে বিরক্ত না করা হয়।


কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মরহুম আবুল কালাম আজাদ তাকে দিল্লী ডেকে পাঠিয়ে কালচারাল রিলেশন দফতরে মোটা মাইনের চাকরি গছিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কমাস পরেই জোর করে ইস্তফা দিয়ে তিনি কলকাতা ফিরে যান।


জীবনে আমি কয়েকটা ভুল করেছি। প্রথম হলো- বিয়ে করে, দ্বিতীয়ত- বেশী বয়সে বিয়ে করে, তৃতীয়ত- বৌ-ছেলেদের সঙ্গে না থেকে।


নিজের একটা টাই দিয়ে প্যারিসের তিন তরুণীর জাঙিয়া হয়ে যাবে মুজতবা আলী গোপন করেন নি তাঁর অনেক রঙ্গ রসিকতা, ধ্যানধারণা-

যেমন কবি সরোজিনী নাইডুর বিয়ের দিন মুজতবা আলীকে আদর করে জড়িয়ে ধরা নিয়ে বলেছিলেন অতগুলো লোকের মাঝখানে সরোজিনী নাইডু আমাকে জড়িয়ে ধরে দুই গালে চুমো খেলো। আর ওর স্তন দুটো! অতবড় মাই আমি দুনিয়াতে আর কোথায়ও দেখিনি। এই বলেই মুজতবা আলী দুহাত দিয়ে নাইডুর স্তনের আকৃতি দেখালেন।

∆ জানো তো শ্রীকৃষ্ণ ছেলেবেলায় খুব দধি খেতেন। একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কতটুকু দধি দিতে হবে। শ্রীরাধা সামনেই ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ রাধার স্তনের দিকে হাত দিয়ে দেখি বললেন,- অতটুকু দিতে হবে! তা হলেই বোঝো। ঐটুকু বয়সের ছেলের যদি ঐরকম রসবোধ হয় তাহলে বড় হয়ে সে তো প্রেমিক হবেই।


দেখো কলকাতার আজকালকার লেখকরা মদ ও মেয়ে মানুষ নিয়ে অনেক কেলেঙ্কারি কেচ্ছার কথা সরসে এবং সগৌরবে বলে বেড়ায়। আমি মনে মনে ভাবি, ছোকরারা তো এখনও শিশু। তবে জেনে রেখো, আমি হোটেলে গিয়ে মেয়ে মানুষের ন্যাংটো-নাচ দেখি নি। আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই মেয়েরা কক কক করে আমার প্রেমে পড়ে গিয়েছে। তবে আমি মাগীবাজি, না না আমি ভদ্রভাষায় বলছি, আমি কখনই রমণীবাজি করিনি। কারণ, সারাজীবন আমাকে একটু দেখেশুনে চলতে হয়েছে।


বিয়ের ব্যাপারে তোমাকে একটা কথা বলে রাখি। যদি তুমি প্রেম করে বিয়ে করো তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আর যদি দেখেশুনে বিয়ে করো তাহলে দেখবে পাত্রীর স্তন এবং নিতম্ব যেন ভারী হয়। নিতম্ব ভারী হলে penetrationটা deep হয়। তা না হলে বালিশ-টালিশ নিয়ে ঝামেলা করতে হয়। তুমি এখনও ছেলেমানুষ। এখন এসব বুঝবে না। কিন্তু পরে ঠিকই বুঝতে পারবে।


এই যে ছেলে ছোকরারা মদ্যপান নিয়ে অত দাপাদাপি করে, ওরা তো মদ খেতেই পারে না। বাংলায় গত শতাব্দীতে মদ খেতো মাইকেল, তারপর গিরীশ ঘোষ, তারপর শিশির ভাদুড়ী আর এখন খাচ্ছে তোমার এই সৈয়দ মুজতবা আলী।


একবার তাঁর মদ খাওয়া সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুনে রাগত স্বরেই বলেছিলেন- আমি তো নিজের পয়সায় মদ খাই। আর ওনারা যে বোম্বেতে বসে অন্যের পয়সায় মদ খাচ্ছেন তাঁর কি হবে!


If u steal from one book it is plagiarism. But if you steal from ten books it is called research book. আলী সাহেবের বয়ান ছিল এটি। বাইবেলের সাহিত্যরসের বিশেষ ভক্ত ছিলেন তিনি, বিশেষ করে বার বার Song Solomonএর কথা, বলতেন- নারী দেহের বর্ণনায় তোমাদের আধুনিক কবিরা এর কাছে নস্যি।


প্রাচীনকালেও যুবতীদের দিয়ে শরীর চাঙ্গা ও সেবা করার কাজের ব্যবহার করা হত। সেখানেই প্রায়ই দেখা যেত যে, রাজার কোন অসুখ-বিসুখ হলে যুবতী নারীর স্তন দিয়ে তাঁর দেহে চাপ দেওয়া হয়। রাজা সলোমনের এসব ব্যাপারে সবচেয়ে নাম ছিল।


শীতের দেশে যুদ্ধের সময় খবরের কাগজ খুব কাজে লাগে। শুধুমাত্র খবরের কাগজ বিছিয়ে ঘুমানো যায়। আর যদি কেউ শীতে জমে যেতে থাকে তাহলে সিগারেট দিয়ে তাঁকে চাঙ্গা করা যায়। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে যুবতী নারী সবচেয়ে বেশী কাজে লাগে। কিন্তু যুবতী নারী তো আর সবসময় হাতের কাছে পাওয়া যায় না!


কবি নজরুলের করা ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের অনুবাদ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন আলী সাহেব। তাঁর মতে খৈয়ামের যে কটি অনুবাদ বাংলাতে হয়েছে তাঁর মধ্যে কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী। আর একটা ব্যাপারে তিনি মনে মনে খুব গর্ব অনুভব করতেন, কাজী নজরুল ইসলামের বড় ছেলে সব্যসাচী ইসলাম তাঁকে বলেছিলেন- পিছন থেকে আপনাকে বাবার মত মনে হয়।

আলী সাহেবের মতে- I think this is the greatest compliment I have ever received in my life.


ফেরীওয়ালাদের সম্পর্কে তাঁর প্রচণ্ড কৌতূহল ছিল। প্রায়ই দুপুরে বলতেন-বল তো, ফেরিওয়ালাটি কি বলল? যে লোক আমাকে কলকাতায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রত্যেকটা ফেরিওয়ালার ডাক বুঝিয়ে দিতে পারবে তাঁকে আমি একশত টাকা দিব।


আমাদের দেশের কোন কোন কবি-সাহিত্যিকদের অজ্ঞতা ও মূর্খতা নিয়ে তিনি শোক করতেন, বলতেন, দেখো আমাদের দেশে কোন কোন লেখক যে কতটা মূর্খ সেটা ভাবলে সত্যিই দুঃখ হয়। প্রায়ই দেখবে কোন লেখক একটু নাম করে ফেললেই তাঁর আর লেখা বেরুচ্ছে না। কারণ তিনি লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতাবাজী করে বেড়াচ্ছেন। আমি জীবনে খুব কম বক্তৃতা করেছি। কারণ বক্তৃতা করতে গেলে আমার পড়াশুনো হবে না। প্রায়ই না করতাম। কারণ, জানতাম, কোন সভায় গেলেই অন্যদলের লোকেরা এসে বলবে, ওদের সভায় দিয়েছেন, আমাদের সভায় আসবেন না কেন?


চিঠিপত্রের ব্যাপারে বেশ রক্ষণশীল ছিলে আলী সাহেব, বলতেন- আমি মেয়েদের চিঠির উত্তর খুব কম দিয়েছি। কারণ একজন চিঠির উত্তর পেলেই তিনি তাঁর পাড়ার সকল সখীদের সে চিঠি দেখাবেন। এবং তারপর পঞ্চাশখানা চিঠি এসে হাজির হবে। সে সব চিঠিতে একটা লাইন থাকবেই- আপনার চিঠির জন্য পোস্টম্যানের পদধ্বনি শোনার আশায় বসিয়া আছি। ।


আবার উদাসীন আলী সাহেব এও বলেছেন- আমার বই কেমণ বিক্রি হচ্ছে তা হিসাব করার জন্য কখনই তোমার ঐ প্রকাশকদের দোকানে গিয়ে বসে থাকি নি। ওরা আমাকে যখনই যা দিয়েছে তাই নিয়েছি।


বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ আলী সাহেব বলেছিলেন- তোমাকে একটা কথা বলে দিচ্ছি, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পাঁচ বছরের মধ্যে India will be the bitterest enemy of Bangladesh.কারণ হল বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরেই তোমার এই টাটা, বিড়াল, গোয়েংকা, ডালমিয়া বাংলাদেশের উপরে শকুনের মত ঝাঁপিয়ে পরবে। এবং গণ্ডগোলটা শুরু হবে তখন থেকে। বাংলাদেশে লোকজন পাঞ্জাবীদের সহ্য করেনি। তারা এই ভারতীয় কোটিপতিদেরও সহ্য করবে না। তাড়িয়ে ছাড়বে। অবশ্য বাবুরা তা বুঝতে পারছেন না। সব গাড়ল, গাড়ল। এরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চায় না।


বহু ভাষাবিদ মুজতবা আলী সবসময়ই যেই ভাষা সেই দেশের লোকের কাছেই শেখারর পক্ষপাতি ছিলেন। আবার বলতেন- কোন বিদেশী ভাষা শেখার সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে সেই ভাষার গালি শিখতে হবে। বেশ্যাপাড়া হল গালি শেখার সর্বোৎকৃষ্ট স্থান। কারণ এখানে দুনিয়ার নানা ভাষার নানা রকম লোকজন আসে। বাংলাদেশ বিপ্লবী আন্দোলনের সময় অনেক বিপ্লবীই পতিতালয়ে গিয়ে পতিতাদের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে থেকেছেন। এবং বিশ্বাসঘাতকতা করে কোন পতিতা কোন বিপ্লবীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে এমন কোন নজির আমার জানা নেই।


আবার নিজের জীবন নিয়ে বলেছিলেন, - সেদিন গিন্নী আমাকে বললেন আমার ড্রিংক করা দেখে নাকি ছেলেরা এসব শিখবে। আমি তখন তাঁকে বললাম, কেন আমি যে বাইশটা ভাষা জানি সেখান থেকে দু,চারটে ভাষা ওরা শিখুক না? এই জন্যই বলি কোন মূর্খ বিয়ে করে। বিয়ে করার আগে অনন্ত দুবার ভেব।


প্রথম বই দেশে- বিদেশের উৎসর্গপত্রে লেখা আছে, জিন্নতবাসিনী জাহানারার স্মরণে। এই জাহানারা ছিলেন তাঁর বড় ভাই সৈয়দ মোস্তফা আলীর বড় মেয়ে। তাঁর সামনে কোন বাংলা বই নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে কথা বললেই বিদুষী জাহানারা বলতেন- ছোট চাচা যদি এতই জানে তাহলে নিজে একটা বই লিখলেই তো পারে।

১৯৪৬ সালে ব্যাঙ্গালোরে এক বছর অতিবাহিত করার সময় তিনি বইটি লেখে শেষ করেন, সেটি প্রথমে সাগরময় ঘোষের দেশ পত্রিকায় কিস্তিতে ছাপা হত। ১৯৪৯ সালে সব লেখা একত্র করে বই হিসেবে ছাপার সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু তাঁর আগে, ১৯৪৭র শেষের দিকে জাহাজডুবি ঘটে স্বামী-পুত্র-কন্যাসহ জাহানারার সলিল সমাধি ঘটে। সমুদ্রতীরে বসে বইটি লেখার সময় প্রায়ই জাহানারার বলা - ছোট চাচা যদি এতই জানে তাহলে নিজে একটা বই লিখলেই তো পারে- কথাটি আলী সাহেবের কানের বাজত। তাই স্নেহের মায়ার এবং পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে অসাধারণ বইটি জাহানারাকে উৎসর্গ করা হয়।


নিবিড় পাঠক আলী সাহেব লেখককে বলেছিলেন আমি পড়ার সময় তখন খুব দরকার না হলে কাছে আসবে না।


১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আলী সাহেব কলকাতা থেকে ঢাকা চলে আসেন। এরপরে তাঁর ঢাকার জীবনের নানা ঘটনার ছিটেফোঁটা বর্ণনা, ভোজন রসিক আলী সাহেব খাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে বলেছেন- খাওয়াটা কিন্তু একটা বড় ধরনের আর্ট। খাওয়ার সময় মুখ বন্ধ রেখে চিবোলে কোন আজেবাজে শব্দ হয় না। এটা রবি ঠাকুর আমাদের শান্তিনিকেতনে শিখিয়েছিলেন। আজকাল তো কাউকেই এই নিয়মে খেতে দেখি না। সবাই হাপুস-হুপুস করে গিলছে। ইস্তক আমার সুন্দর নাতনীরা পর্যন্ত। দেখে দুঃখ লাগে।


আর লেখকের প্রতি তাঁর অনুরোধ ছিল- যে ভাবেই হোক তুমি আমার জন্য শার্লক হোমসের বই যোগাড় করে রাখবে। আমি কলকাতা থেকে ফিরে এসে শার্লক হোমসের উপর একটা বই লিখতে চাই।


কিন্তু কলকাতা থেকে তিনি ফিরলেন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে, বইটির বাকি দিনলিপি তাই হাসপাতালে , সেখানের বিছানায় শুয়ে তিনি বলতেন-


লেখক হতে হলে তোমার পাঁচটা জিনিস থাকতে হবে
1) Wide Travelling
2) Depth of Travelling
3) Characterisation
4) Sense of Lyricism
5) Imagination

এ প্রসঙ্গে ১৯৭০ সালের ২৯ এপ্রিল তারই এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে চিঠিতে জানিয়েছিলেন-
কখনো যদি বই লেখ তবে আমার দুটি উপদেশ-
১) লেখা – গোড়াতে ১০/১২ পৃষ্ঠার বইই ভালো, কিন্তু এর কোনো golden rules নেই- শেষ করে সেটা কোনো বাক্সের সর্বনিম্ন স্থলে রেখে দেবে। দু,চারদিন পরে আরেকটা লেখা তৈরি করবে। দ্বিতীয় লেখাটা তোমার যে প্রথম লেখা তোমাকে haunt করেছিল সেটাকে মগজ থেকে দূর করে দেবে। এ লেখাও বাক্সে পূরবে। তারপর অন্য লেখা লিখলে ভাল, না লিখলে নাই। In any case, ক) প্রথম ও দ্বিতীয় লেখা ছমাসের ভিতরে under no circumastances , even to read out to your best friend খুলে দেখবে না, খ) পারতপক্ষে লেখাগুলো কাউকে পড়ে শোনাবে না, especially avoid all litterateurs and critics , ছমাস পরে প্রথম লেখাটা বাক্স থেকে খুলে পড়বে। যদি মনে হয় এটা বেশ চলবে, তবে সামান্য সামান্য পরিবর্তন করে কিংবা rewrite করে (many a good author does it) তোমার পরিচিত কোনো সম্পাদককে- preferably a person who is not wedded to any particular school of writing but has as open mind – পাঠিয়ে দেবে।


১৯৭৪র ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ১১.৫০ মিনিটে সৈয়দ মুজতবা আলী পিজি হাসপাতালের ১২৭ নং কক্ষে পরলোকগমন করেন। বইয়ের শেষ লাইনে ছিল আলী সাহেবেরই একটি কথা – আমি কারও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাই না। কারণ আমি তাঁর অনুষ্ঠানে কেন যাবো? সেতো আর আমার জানাজায় আসতে পারবে না।

অভিমানী আলী সাহেব বলেছিলেন-

আমার মৃত্যুর পর সবাইকে বলবে আলী সাহেব তার best বইটা লেখার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু কীকরবেন, উনার তো প্যারালাইসিস হয়ে ডান হাতটা অবশ হয়ে গেল। হাতটা ভালো থাকলে তিনি দেখিয়ে দিতেন সৈদ মুজতবা আলীর best বই কাকে বলে।

( দেশে- বিদেশের চেয়েও উৎকৃষ্টতর বই কি হতে পারে সেই চিন্তা করে মাথা আউলে যায়, শুধু থাকে আলী সাহেবের লেখনীর প্রতি বিস্ময়, তাঁর জীবনতৃষ্ণার প্রতি ভালবাসা।

তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে লেখাটি পোস্ট করার কথা থাকলেও হাকালুকি হাওরের মাঝে নেট না পাওয়ায় তা করা হয় নি, তাই কদিন দেরী হয়েই গেল)


মন্তব্য

সাকিন উল আলম  এর ছবি

অনেক কিছুই অজানা ছিলো , এক নিশ্বাসে পড়ে নিলাম ।

অনেক ধন্যবাদ অণু ভাইকে গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি

শুভেচ্ছা

katush এর ছবি

উস্তাদ দেখি পুরাই লুল

তারেক অণু এর ছবি

এমন লুল হতে এলেম লাগে, আমি হইতে চাই।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি

লাইনে আসুন --

শেহাব এর ছবি

উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অসাধারণ। এই লেখাটার জন্য আপনাকে স্যালুট অণুদা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তারেক অণু এর ছবি

খুব যত্ন নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পথে থাকার কারণে আলাদা কিছু যোগ করতেই পারলাম না। দেখি, ভবিষ্যতে উনাকে নিয়ে মৌলিক লেখা দিব আশা রাখি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক উত্তম জাঝা!

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তারেক অণু এর ছবি

শীত কিবা?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

শীত নাইক্কা অনুদা। অ্যাঁ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

মন মাঝি এর ছবি

'কিবা' কিতা?

****************************************

মন মাঝি এর ছবি

ভাল কথা মনে করে দিয়েছেন। শীত চলে গেছে, এই মৌসুমের অনেক ফল-ফসলও মনে হয় আর কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে না। এর মধ্যেই সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রিয় (এবং আমারও) একটা খাবার তার মত করেই বানিয়ে খেতে হবে। প্রতি শীত মৌসুমেই করি, এবার ভুলে গেছিলাম। ভাবতেই জিহ্‌বায় পানি চলে আসছে। আলীসায়েব থাকলে ভাল হত - ওনাকে দিয়ে চাখিয়ে ঠিকমত হচ্ছে কিনা টেস্ট করে নিতে পারতাম! হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

একা না, আমরাও আছি-

অনুপম এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ! হাসি

তারেক অণু এর ছবি

শুভেচ্ছা

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

মন্তব্য ঘ্যাচাং

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নির্ঝরা শ্রাবণ এর ছবি

তারেক অণু ভাই,

প্রিয় লেখক সম্পর্কে এত অজানাকে জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

অঃ টঃ তানজানিয়া কবে আসছেন? ফেসবুকে আসার আগে আওয়াজ দিয়েন।

নির্ঝরা শ্রাবণ

তারেক অণু এর ছবি

আপনি এখন কোথায়? জলদি জানান ফেসবুকে-

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম জাঝা!

কড়িকাঠুরে

তারেক অণু এর ছবি
সত্যপীর এর ছবি

হ্যাঁ বইটা খুবই অগোছালো কিন্তু তথ্যে ভরা। মজা পেয়েছিলাম।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

সৈকত চৌধুরী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো চলুক
ইসরাত

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

মাসুদ সজীব

তারেক অণু এর ছবি
স্পর্শ এর ছবি

- জানো তো কলকাতায় বিস্তর নেপালী দারোয়ানের নাম ভজুরাম। কাজেই ঐ নামটাই আমি বৌকে পাঠিয়ে কৌশলে জানিয়ে দিলাম যে ভবিষ্যতে আমার ছেলে মেয়ের নাম রাখার জন্য আমাকে যেন অকারণে বিরক্ত না করা হয়।

ভাগ্যিস সে যুগে মোবাইলফোন ছিলো না। এক টেলিগ্রামেই এত বিরক্তি, ফোন থাকলে স্ত্রী তার কানের পোকা নাড়িয়ে ছাড়তেন নিশ্চিত।

এই পোস্টটা একটা অমূল্য রত্নখনি হয়ে রইলো। একেকটা কোট নিয়েই দীর্ঘ্য আলোচনা হতে পারে। আলীসাহেবের মুখে রবিঠাকুরের পরিশ্রমের বর্ণনা শুনে উজ্জিবিত হলাম।

তবে "বালিশটালিশ নিয়ে ঝামেলা করার" ব্যাপারটা নিয়ে কৌতূহল বোধ করছি। কবি এখানে কী বুঝাতে চাইলেন? কোনো আইডিয়া?


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

"বালিশটালিশ নিয়ে ঝামেলা করার" ব্যাপারটা নিয়ে কৌতূহল বোধ করছি। কবি এখানে কী বুঝাতে চাইলেন?

ব্যাপারটা সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে চাইলে বাৎসায়নের কামসূত্র মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করা আবশ্যক। শাস্ত্রে বর্নিত বিভিন্ন আসন সম্পর্কে সম্যক ধারনা অর্জন করতে পারলে বালিশের বহুমূখি ব্যবহার সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে যাবেন বলে আশা করা যায়। চোখ টিপি

তারেক অণু এর ছবি

কেন ! নিতম্বের নিচে বালিশ দিয়ে সঙ্গম বুঝিয়েছে ! অ্যাঁ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা বেশ সুন্দর । গোছানো ।

তারেক অণু এর ছবি

এইটা কিন্তু গোছানো নয় মোটেও

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বইটি ফুটপাতের বইয়ের দোকানে পেয়েছিলেন? এ জন্যই বোধ হয় বলা হয়- যেখানে দেখিবে ছাই .......................। লেখাটিতে কিছু টাইপো আছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুটি শব্দ একসাথে জুড়ে গিয়েছে, সময় পেলে শুধরে দিয়েন, কারন আমার মত অনেকেই এটা বুকমার্কে রাখবেন নিশ্চিত।
সবগুলো কোটেশন সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। ফেরিওয়ালাদের অবোধ্য ডাক নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষন খুবই তাৎপর্যপূর্ন। আমাদের পাড়ায় দিনমান ওরা হেঁকে হেঁকে কি বলে, আমি তার কিছুই বুঝি না।
সুবিশাল স্তন এবং গুরুভার নিতম্বের প্রতি আকর্ষন দেখি তাঁরও ছিল!

তারেক অণু এর ছবি

কার নেই !
হু, দাম নিয়েছে ৫০ টাকা

এক লহমা এর ছবি

সুযোগ পেলে বইটা পড়তে হবে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সৈয়দ সাহেবের সংসার জীবন নিয়ে কিছুই জানতাম না। সাথে অনেক কিছু জেনে গেলাম।
শুভেচ্ছা হাসি

তারেক অণু এর ছবি

এখন চাইপা যান, উনার সংসার করাই উচিত হয় নাই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সৈয়দ সাহেব লিখেছেন:
জীবনে আমি কয়েকটা ভুল করেছি। প্রথম হলো- বিয়ে করে, দ্বিতীয়ত- বেশী বয়সে বিয়ে করে, তৃতীয়ত- বৌ-ছেলেদের সঙ্গে না থেকে।

ধুগোনং গুরুনং তপঃ গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি

আর আফসোস কইরা লাভ নাইক্যা ! ঠু লেইট --

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সৈয়দ সাহেব লিখেছেন:
এই জন্যই বলি কোন মূর্খ বিয়ে করে। বিয়ে করার আগে অনন্ত দুবার ভেব।

আমি তো গুরুকে কুর্ণিশ করে লাইনে চলে আসছি। কিন্তু আপনার মতিগতি তো সুবিধার ঠেকে না হে পরিব্রাজক! মনে রাইখেন, গুরুর কথা, বিয়া করা একটা ভুল (যেটা আপনে অচিরেই ফান্দে পড়িয়া করবেন বলে আমার ধারণা), বেশি বয়সে বিয়া করা আরেক ভুল (এখন বয়স হইলো রামনাম সৈত্য হওয়ার, এখন টোপর পরলে কেমনে?)। এই দুইটা ভুল যদি করেই ফেলেন, তাইলে তিন নং ভুলটা কৈরেন না। এই লন, এটা সাথে রাইখেন।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

অনেক কষ্ট করে মুজতবা আলীর সম্পূর্ণ সমগ্র যোগাড় করেছিলাম। সমগ্র যোগাড় করতে আমার লেগেছিলো প্রায় দুই বছর, কোন এক বিচিত্র কারণে স্টুডেন্ট ওয়েজের ৭/৮ খণ্ড একসাথে পেতাম না কোথাও। একজনের সেই সমগ্র খোঁজ করা দেখে মাস তিনেকের মাঝে তাকে সেই সমগ্র দূর দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কখনো খুলেও দেখে কিনা জানি না, তবে শুনেছি মুজতবা আলীর লেখা তার অনেক প্রিয়, মুজতবা আলীকে ফলো করে দূর দেশের ধানক্ষেত দেখতে চলে গিয়েছে, (নিজের দেশেরটা নিয়ে সেখানে বসেই আক্ষেপ করে যায়), ইত্যাদি।

নিজের জন্যে আবার যোগাড় করতে হবে, দেখি।

বাই দ্য ওয়ে, এই লেখাটা অনেক ভালো লেগেছে পড়ে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারেক অণু এর ছবি

সেই আরেকজনের ব্যাপারটা বেশ ফিশি !

অবশ্যই নিও, চাইলে আমারটাও ধার নিতে পার, এক শহরেই আছি যখন আপাতত।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

পিছলা... বাইন মাছের থেকেও পিছলা ব্যাপার বলবো আমি।

আর নাহ, আপাতত লাইব্রেরি থেকে এনে পড়ছি। আর এক কপি যোগাড় হয়ে যাবে শিঘ্রী আশা করি।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারেক অণু এর ছবি

পিয়াজ দিয়ে বাইন মাছ ভালু পাই !

হ, তবে উনারে নিয়ে বিয়াপক যত্ন করে লিখতে হবে, আলী সাহেব রক্স

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হ, তবে উনারে নিয়ে বিয়াপক যত্ন করে লিখতে হবে, আলী সাহেব রক্স

আমি বরাবরই লেখকদের ব্যক্তিগত জীবনের থেকে, তাদের লেখা বেশি ভালো পাই। ব্যক্তিজীবনে সবাইই মানুষ, ছোটবড় ভুল-ভ্রান্তিতে ভরা, তাই ঐটা অত আকর্ষণীয় লাগে না, বরং তাদের কাজের মাধ্যমে মনুষ্যজীবনের নানান দিক ফুটে ওঠা বেশি আকর্ষণীয় লাগে। তবে "গোলাম মোস্তাকিম রচিত স্মৃতিকথা সৈয়দ মুজতবা আলী : প্রসঙ্গ, অপ্রসঙ্গ" পড়ার ইচ্ছা জাগলো। পোস্টের কোট করা অংশগুলো পড়ে ব্যক্তি মুজতবা আলী না, বরং জীবনের নানান দিক নিয়ে ফিলোসফিকালি স্যটায়ার করে যাওয়া প্রিয় লেখকের বলা কথা আরেকদফা পড়ার জন্যে। জীবনকে নিয়ে হাস্যরস কয়জন করতে পারে?

আলী সাহেবের লেখার ভক্ত কবে থেকে মনে নাই, হতে পারে নীল নদের তীরের মিশরে যাওয়ার ইচ্ছা আমার ক্লাস সেভেনেই হয়েছিলো, শসার ভেতরে সেই পনিরের পুর ভরা ভাত খেতে না পারলে আমার আফসোস থেকে যাবে চিরকাল। দেশ-বিদেশ বেড়াবার অদম্য ইচ্ছাও সেখান থেকেই এসেছে খানিকটা হলেও, জীবনের ক্ষুদ্র সময়টা শেষ হয়ে যাবার আগেই যদি শখের কাজগুলো জায়গাগুলো দেখা শোনা না হয়, মরে শান্তি পাবো না নিশ্চিত! প্রতিবার যে কোন জায়গায় কাস্টোমস পেরুবার সময়েই আমার অবধারিতভাবে রসগোল্লা ভরা টিনটার কথাও মনে পড়ে যায়। এত প্রাণবন্ত, রসে ভরা স্যাটায়ার লেখক আমি এখনো আমার ক্ষুদ্র পাঠক জীবনের বাংলা ইংরেজী কোন মাধ্যমেই পাইনি।

এই লেখাটাতেই দেখো দুইটা জায়গা কোট করি -

জীবনের প্রথমেই আমি ঠিক করেছিলাম আমি মাস্টারী করব। কারণ দুটো। ছুটি অনেক এবং আমি লেখাপড়ার সুযোগ পাবো। তারপর একটু দুঃখের সাথে বললেন, আজকাল শিক্ষক ও লেখকদের বাসায় সাধারণত তুমি কোন বই পাবে না। কাউকেই দেখবে না যে বসে বসে বই পড়ছে। তবে তাদের কাছে একটা বই তুমি পাবেই। সেটা হল চেক বই।
তারপর বললেন, শোনা যায়, আজকাল ছেলেরা ক্লাসে যায় না। কেন যায় না জানো? কারণ মাস্টাররা নিজেরা পড়েন না, এবং সেই কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারেন না।

প্রায়ই দেখবে কোন লেখক একটু নাম করে ফেললেই তাঁর আর লেখা বেরুচ্ছে না। কারণ তিনি লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতাবাজী করে বেড়াচ্ছেন। আমি জীবনে খুব কম বক্তৃতা করেছি। কারণ বক্তৃতা করতে গেলে আমার পড়াশুনো হবে না। প্রায়ই না করতাম। কারণ, জানতাম, কোন সভায় গেলেই অন্যদলের লোকেরা এসে বলবে, ওদের সভায় দিয়েছেন, আমাদের সভায় আসবেন না কেন?

ব্যক্তি মুজতবা আলী শেষ পর্যন্ত হয়তো দুখী মানুষ, আমাদেরই মতো, বা রিগ্রেটস আছে তার জীবনেও, বা অভিমানী তিনি, কে জানে! -

জীবনে আমি কয়েকটা ভুল করেছি। প্রথম হলো- বিয়ে করে, দ্বিতীয়ত- বেশী বয়সে বিয়ে করে, তৃতীয়ত- বৌ-ছেলেদের সঙ্গে না থেকে।

এই জায়গাটাও রসালো হলেও হয়তো নিজের পরিবারকে সময় না দেয়ার আক্ষেপটাই স্যাটায়ার করে বলেছেন। আসলে ঐ যে, দিনশেষে সবাই খুব সাধারণ মানুষ। তাই ব্যক্তি মানুষের খোলস উম্মোচন না করে প্রিয় লেখকদেরকে তাদেরলেখনীর মাধ্যমে মনে রাখতেই ভালো লাগে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারেক অণু এর ছবি

পুরাই সহমত

সাফি এর ছবি

দারুণ লাগলো অণু ভাই।

তারেক অণু এর ছবি

নিদারুণ হে ঝান্ডু দা !

নির্ঝর অলয় এর ছবি

উমদা হয়েছে অণুদা!
স্ক্যান করে আপলোড করে দিন বইটা!
চাচাকাহিনী আর অবিশ্বাস্য এই একটি লোকেরই লেখা!
রবিঠাকুরের জীবন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ছিল। তার অন্তরঙ্গ হাসিমুখের বিবরণ পাই- মৈত্রেয়ী দেবীর "মংপুতে রবীন্দ্রনাথ"-এ।

তারেক অণু এর ছবি

হু, নাহ হে স্ক্যান করে আবার কোন ফ্যাঁকড়াতে পড়ি!

প্রাকৃতজন এর ছবি

হাততালি

তারেক অণু এর ছবি
ফাহমিদুল হান্নান রূপক  এর ছবি

দারুণ লাগলো অণু'দা চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

মডু একদিন আমাকে সচল করবে, তারপর আমি লগইন করে এই লেখাটা বুকমার্ক করে বুকের পাশে রেখে দেব।
তার আগ পর্যন্ত অনেক ধইন্যা পাতা , আর গুরু গুরু

-সো।

মন মাঝি এর ছবি

সৈয়দ মুজতবা আলীর কণ্ঠস্বর (সম্ভবত বেতার কথিকা জাতীয় কিছু) :--


****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।