• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শুক্র, ০৭/০৩/২০১৪ - ৭:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী শব্দ তিনটির সাথে প্রথম পরিচয় ধোঁয়াটে শৈশবে, গ্রাম থেকে আগত এক চাচাতো বড় বোন আমার বাবার কাছে অস্ফুট স্বরে বলেছিল এই ক্রিমটি কিনে দিতে, এটা নিয়মিত গায়ে মাখলে নাকি চামড়া ফর্সা হয়।

ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারি নাই, সেই আপুর গায়ের রঙ কালো বা যাকে বলা হয় শ্যামলা, কিন্তু তাঁকে ক্রিম মেখে ফর্সা করতে হবে কেন? কালো হওয়া কী খারাপ? নাকি ফর্সা হলে বেশী ভাল? বেচারিকে দেখতাম প্রায়ই একগাদা কাঁচা হলুদ খেতে, তাতেও নাকি ফর্সা হওয়া যায়। আমার সেই চাচাতো বোনটি বছর কয় আগে একটি সন্তান রেখে মৃত্যু সাগরের অপর পানে চলে গিয়েছেন, গায়ের কালো বর্ণ ফর্সা করার প্রচেষ্টা কী তাঁর মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল? হয়তো, হয়তো না। কিন্তু ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী” নামটা শুনলেই সেই আপার কথা সবার আগে মনের পর্দায় ঘুরে উঠে।

বিচিত্র সব বিজ্ঞাপন দেখি টেলিভিশনে, কোন তরুণীর বিয়ের জন্য বাড়ীতে দেখতে আসবে, হয়ত তাঁর চাকরির সাক্ষাৎকার, সে দুশ্চিন্তার সাগরের ভাসতে থাকে শরীরের কৃষ্ণ বর্ণ নিয়ে, পর্দায় হাজির হয় জাদুর ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী”, সেটা মাখার সাথে সাথেই মেয়েটির ত্বক হয়ে যায় বেশ উজ্জল ফর্সা! ব্যস, মেয়েটিকে পছন্দ হয় ছেলেপক্ষের, তাঁর চাকরি জোটে, জীবনে সাফল্য আসে ইত্যাদি ইত্যাদি।

খুবই স্মার্ট, বুদ্ধিমতী, উচ্চশিক্ষিত একজন তরুণীর জীবন সংগ্রামকে অবলীলায় হার মানিয়ে দিচ্ছে এই ম্যাজিক ক্রিম। আমরা বাচ্চা বেলা থেকেই জানছি, ঐ সমস্ত গুণ পরের স্তরের যোগ্যতা, আসল কথা হচ্ছে মেয়ের চামড়া সাদাটে হতেই হবে। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের প্রতিভাবান গুণবতী মায়াবতী চরিত্ররা বাথরুমের আয়নায় চেহারা দেখে কাঁদে কারণ যতখানি কালো হলে বাংলাদেশের কোন মা তাঁর মেয়েকে শ্যামলা বলে সে তাঁর চেয়েও বেশী কালো, এইটাই তাঁর জীবনের প্রধান দুঃখ! এই জন্যই কী প্রায় একশ ভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানেই বধূদের শরীরে বিশেষ করে মুখমণ্ডল আর হাতে পুরু মেকাপের প্রলেপ লাগিয়ে অবিশ্বাস্য ধরনের সাদাটে করা হয়? সেই সাথে এখন যোগ হয়েছে বিয়ের দিনে ছবি তোলার চল, যেখানে ঘষে মেজে সুপার এডিটিং করে মেয়েটিকে করা হয় ফর্সা থেকে ফর্সাতর। আচ্ছা, আমাদের একটি বারও কি মনে হয় না যে এই সমস্ত আচরণের মাধ্যমে আমরা কী পরিমাণ নিচে নামাচ্ছি সেই মানুষটাকে। বিয়ের মণ্ডপে কিম্ভূত মেকাপে থাকা একজন সফল তরুণী কি বারংবার তাকিয়ে আমাদের সমাজের এই সংকীর্ণতাকে ধিক্কার দেন না তাঁকে সঙ সাজাবার চেষ্টা করার জন্য?

কদিন আগে এক বিজ্ঞাপনে দেখি সরাসরি বলা হচ্ছে, সুন্দর মানেই ফর্সা গায়ের রঙ, আর তাঁর জন্যই চাই ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী” ! সুন্দর-অসুন্দরের সংজ্ঞা বিশ্বের সব অঞ্চলেই আপেক্ষিক, সত্যিকারের নিগ্রোরা তাদের তেল চকচকে দ্যুতিময় কৃষ্ণবর্ণের চামড়ার জন্য যথেষ্টই অহং বোধ করে , বরং শ্বেতাঙ্গদের ফ্যাকাশে চামড়ার দিকে তারা কিছুটা করুণার দৃষ্টিতেই তাকায়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মানুষ, যারা সবচেয়ে বেশী সাদা হয় তাদের আবার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে রোদে পুড়ে চামড়া ট্যান করে তামাটে বর্ণের করার। সেখান দেখেছি ট্যান করার জন্য নানা ধরনের ক্রিম আছে সূর্য স্নানের সময় ব্যবহার করার জন্য, Solarium নামের কৃত্রিম যন্ত্রও আছে। তাঁর মনে কী ধরে নিব যে চামড়া ফর্সাকারী ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী” আর ট্যান করার ক্রিমের বিজ্ঞাপন একই স্তরের?

আসলে নয়, কোন ভাবেই নয়। ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী” বা এই ধরনের প্রসাধনীর প্রতিটি বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে বলা হয় তোমার যত গুণই থাক, এমনকি তুমি যতই সুদর্শন, মায়াবী, রূপসী যাই-ই হও, ফর্সা না হলে তোমার জীবন বৃথা, অতএব বাজার থেকে নিয়ে এস ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী”। আর হ্যাঁ, সেই সাথে মনে রেখে মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেললে, পর্বতারোহণ শুরু করলে, বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ালে তুমি কালো হয়ে যাবে, তোমাকে পছন্দ করবে না কেউই !

এটা কী নারীত্বের অবমাননা নয়? মানবতার অবমাননা নয়?

আবার আয়নার অপর পিঠের মত চাহিদার বিপরীত দিকও আছে। কদিন আগেই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু যিনি বাংলাদেশের এক প্রথিতযশা হাসপাতালের তরুণী ডাক্তার বললেন, ”আমার সমস্যা কী জানো? সেটা হচ্ছে আমি একজন মেয়ে এবং আমার চামড়া সাদা। অন্য সবার কথা বাদ দিলাম যে রোগীদের বাঁচিয়ে তুলতে প্রাণপাত করছি তারাও অনেকেই বিভিন্ন রসালো ইঙ্গিত দিয়ে misbehave করে সময়ে সময়ে ”। ফর্সা মেয়েদেরই সাধারণত সবচেয়ে বেশী উৎপাতের শিকার হতে হয় রাস্তা-স্কুল- কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু সেই বিশ্লেষণ, সামাজিক কারণ আমরা অন্যদিন অনুসন্ধান করব।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই বর্তমান যুগেও নারীকে বিশেষ প্যাকেটজাত পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের যে বহুবিধ কায়দা আছে তাঁর মধ্যে অন্যতম এই গায়ের রঙ সাদা করার মন্ত্র জপতে থাকা ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী” বা এই ধরনের প্রসাধনী নিয়ে, তা আমরা আর কতকাল অব্যাহত রাখতে দিব? কতকাল এইভাবে আমাদের নিজেদের ছোট করে অপমান করেই যাব ?এবং অন্যদের গ্লানির মধ্যে রাখব?


মন্তব্য

atiur এর ছবি

সত্যি কথা যে বিজ্ঞাপন দেয়ার রকম টা আসলেও অমানবিক, কিন্তু যতদিন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলাবে, ওদের হাজার বকেও social practice গুলো ঠিক করা যাবেনা। চকলেটের বিজ্ঞাপনে বলেনা যে এইটা সাস্থ্যকর, বলে tasty. Fish oil এর ক্ষেত্রে বলেনা tasty, বলে সাস্থ্যকর। সব বিজ্ঞাপনই আমাদের মানসিকতা কে exploit করা হয়। তবে ধীরে ধীরে একটা জাগরণ টের পাই, আগের মত negative কিন্তু আর নাই মানুষ।
-আতিউর

তারেক অণু এর ছবি

আশা করি। আমাদের সচেতনতার তোড়জোরে ভেসে যাক এই সমস্ত অন্যায়

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আতিউর, চমৎকার লাগলো আপনার উপমাটা।
শুভেচ্ছা :)

সাফি এর ছবি

অণু ভাই মাইন্ড খাইয়েন না। আপনার জন্য ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসামও আছে।

নরওয়ে থেকে দেশে ফেরার সময়ে মা খালা বোনদের জন্য বাজারে ক্রিম কিনতে যেয়ে দেখি সব ক্রিম এই ট্যানিং এজেন্ট ফ্রি ফ্রি দেওয়া ছিলো। তখন বুঝছিলাম বাদামী হওয়ার জন্য ওদের কত চেষ্টা।

এইবার অনটপিক কমেন্ট পিতা বুয়েট পাশ বিরাট সরকারী চাকুরে, বড় ছেলে ছোট ছেলে উভয়ই বুয়েটের প্রথম সারির ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক, বোর্ড স্ট্যান্ড করা - পাত্রী দেখার অনুরোধ করেছিল - মেয়েকে শুধু ফরসা আর দেখতে সুন্দর হতে হবে এইটুকুই চাওয়া।

তারেক অণু এর ছবি

:S এই জাতির এগোতে অনেক দেরী আছে !

অফটপিক -- হিমালয়ের ইউ ভিতে পোড়া মানুষ আমি, কিরিম দিয়া কী করুম !

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এটা আমাদের মাথায় ঢুকে বসে গেছে -একে বের করে আনা কঠিন কাজ। মিডিয়াই আমাদের শেখায় তুমি সাদা ফর্সা হলে তোমার অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। আসলে, মিডিয়া বিষের মত করে ভোগবাদিতা আমাদের নিউরনে ঢুকিয়ে দিয়েছে অজান্তেই।

আর বিয়ের আসরে কণেকে সিরামিকের মত সাদা বানিয়ে ফেলার কি কারণ আছে আমার জানা নেই।
বিদেশে যে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হয়, সেই ধাঁচে একটা ক্যাম্পেইন চালানো উচিত:
"আমার গায়ের রং কালো, কিন্তু আমি তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না"

শুভেচ্ছা :)

তারেক অণু এর ছবি

গায়ের রঙ প্রাকৃতিক, তা নিয়ে চিন্তারই দরকার নেই। আদিতে সব মানুষ কুচকুচে কালো ছিল।

মন মাঝি এর ছবি

বিবিসি না কোথায় যেন একটা সাম্প্রতিক গবেষণার খবর দেখলাম, যেখানে বলা হচ্ছে ইউরোপের মানুষ নাকি মাত্র ৮০০০ বছর আগে প্রথম ফর্সা হতে শুরু করে!

****************************************

স্পর্শ এর ছবি

বার্সেলোনাতে গিয়ে এই ব্যাপারটা চোখে পড়েছিলো। বিভিন্ন যায়গায়, গায়ের রং কালো মানে, টানিং করার বিজ্ঞাপন। ওরা অবশ্য, ট্যান না করলে জীবনের সকল অর্জন ব্যর্থ এমন কিছু বলে না। স্রেফ, বেশি সেক্সি লাগবে, ব্যাপারটাকেই ফোকাস করে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আচ্ছা, তাহলে ব্যাপারটা কাছাকাছি একই দাঁড়াচ্ছে: বাইরের চেহারাটাকে সমাজ যে রকম দেখতে পছন্দ করে সেরকমটাই করতে হচ্ছে। সমাজ সাদা চাইলে সাদা, আর সমাজ ট্যান চাইলে ট্যান করতে হবে। ধুর X(

শুভেচ্ছা :)

তারেক অণু এর ছবি

হু, সেটি মন্দ নহে

এক লহমা এর ছবি

"...গায়ের রঙ সাদা করার মন্ত্র জপতে থাকা ”ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী” বা এই ধরনের প্রসাধনী নিয়ে, তা আমরা আর কতকাল অব্যাহত রাখতে দিব?" (Y)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

(Y)

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ফোয়ার এ্যান্ড লাভলী ক্রিমটাই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দেওয়া দরকার।

তারেক অণু এর ছবি

তাহলে ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম ? ;)

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আহা! ঐটা থাক না কিছুদিন। ;)

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ, অসাধারণ এবং অসাধারণ লেখা। ^:)^
আর বডি স্প্রে এর অ্যাডগুলা?? কোন নারীবাদীকেই আজ পর্যন্ত এসব নিয়ে কিছু বলতে শুনলাম না!!!

সুবোধ অবোধ

তারেক অণু এর ছবি

খুব খারাপ

মেঘলা মানুষ এর ছবি

অ্যাক্স এর বিজ্ঞাপন কিন্তু বেশ সমালোচিত। এর দু'একটা নিষিদ্ধও হয়েছে, কখনও কখনও।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এককালে টিভিতে আরেকটা বিজ্ঞাপন ছিল :
"ইয়োকো হাইট ইনক্রিজার"
কোন এক মহিলার (সাজানো) সাক্ষাৎকার, যে কিনা তার মেয়ে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত (বিয়ে কিভাবে হবে টাইপের)। কারণ, মেয়ের উচ্চতা কম।
তখন, জুতার তলায় এই 'ইয়োকো হাইট ইনক্রিজার' রাখায় মেয়ে লম্বা হয়ে গিয়েছিল।
কারও, আগ্রহ থাকলে "ইয়োকো হাইট ইনক্রিজার" এর কার্যপদ্ধতি বর্ণনা করতে পারি :p

শুভেচ্ছা :)

তারেক অণু এর ছবি

জঘন্য !

নীলকমলিনী এর ছবি

আমাদের বাঙ্গালীদের মত বর্ণ বিদ্বেষী খুব কম জাতিই আছে. আমি সুনীল শীর্ষেন্দু সহ বহু নামকরা লেখকের লেখায় মহিলা খুব সুন্দর, গায়ের রং ফর্সা, কিংবা মেয়েটি দেখতে তেমন সুন্দর নয়, গায়ের রং কালো পেয়েছি.
রঙের সাথে সুন্দরের কি সম্পর্ক আমার মাথায় ঢুকে না. অনু, তোমার লেখাটি পরে ভালো লাগলো.

তারেক অণু এর ছবি

বর্ণবিদ্বেষী জাতির ব্যাপারে মন্তব্যের সাথে ১০০% সহমত আপা।

শাব্দিক এর ছবি

এই ব্যপারগুলি মানুষ কবে বুঝবে?

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

তারেক অণু এর ছবি

জানি না, মানুষ অদ্ভুদ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

উপমহাদেশে দুইবার আসা দুইদল প্রভুই ছিল সাদা; পয়লাবার আর্যরা আর দ্বিতীয়বার বৃটিশরা....
সাদা মানে ভালো ধারণাটা সেইখান থেকেই এখনো রয়ে গেছে... যার বর্তমান সবচে বড়ো প্রচারক বোম্বে ফিলম আর হিন্দি সিরিয়াল....

০২
এই ধারাবাহিকতার সবচে তাব্দা লাগানো সংযোজন হলো মহাভারতের কৃষ্ণরেও সিরিয়ালে সাদা মানুষ হিসাবে দেখানো...
বর্তমানে স্টার টিভিতে একখান মহাভারতের সিরিয়াল চলে; যেখানে মূলত কৃষ্ণের ভগবান স্বরূপ উপস্থাপনের চেষ্টাই করা হয়; কিন্তু সবচে তাজ্জব হলো...
এই মহাভারতে ভগবান/যাদব কৃষ্ণ; যার মূল বৈশিষ্ট্যই হলো তার কালোত্ব তিনি একজন সাদা মানুষ...
অর্জুন যার গায়ের রং কালো বলে পাণ্ড তাকে ডাকত কৃষ্ণ- সেও সাদা
দ্রৌপদী; গায়ের রং কালো বলে যার নাম কৃষ্ণা; ইনিও এখানে সাদা
সত্যবতী; গায়ের রংয়ের কারণে যার ডাকনাম কালী; তিনিও সাদা
এবং স্বয়ং কৃষ্ণ দ্বৈপায়নরেও এরা সাদা বানায়ে দিয়েছে...

সম্ভবত এই কারণে যে সাহিত্যে কালাকুলার গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও সোনালি-রুপালি পর্দায় নাই...

নির্ঝর অলয় এর ছবি

লীলেন দা, মজার বিষয় হচ্ছে,

মহাভারতের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম দুই পুরুষ কৃষ্ণ ও অর্জুন- দুজনেই কালো। সবচেয়ে রূপবতী দ্রৌপদী কালো এবং স্বয়ং ব্যাসও কালোই ছিলেন। মনে হয় শ্বেত আর্যদের মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে কালোর চাহিদা ছিল। তাছাড়া জীববিজ্ঞান বলে মিশ্র রক্তের জাতি বেশি সুদর্শন হয়।
(Y)

নির্ঝর অলয় এর ছবি

শুধু কি মেয়েরা? ছেলেদের মধ্যে দেখছি ," ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম" হবার হিড়িক। ঠা ঠা রোদ্দুরে টুপি বা রিকশার হুড ছাড়া ঘুরে অসুস্থ হবে, আর আড়ালে ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম মাখবে! কী বিচিত্র পৌরুষ!

এবার আসল কথায় আসি। ফেয়ারনেস ক্রিমগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো শুধু অকাল বার্ধক্য বা সেবাশাস সিস্টই নয় এমনকি ত্বকের বিভিন্ন ক্যান্সারের জন্যও দায়ী। তারপরও "সোসাইটি অফ ডার্মাটোলজিস্টস" কেন এগুলো অনুমোদন করে বুঝি না! ছেলেদের আফটার শেভ ছাড়া আর কিছুই মাখা স্বাস্থ্যকর নয়, অবশ্য যদি সে তুবরক না হয়! এ বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।

খুবই দরকারী লেখা।

তারেক অণু এর ছবি

(Y)

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমার গল্প লেখার হাত কাঁচা, নইলে চেষ্টা করতাম, কিন্তু আপনি বোধ হয় একটা লিখতে পারেন। সেই গল্পের কাহিনীতে থাকবে কৃষ্ণ, অর্জুন, দ্রৌপাদি, রাম, প্রমুখ প্রথমে কালই ছিল, কিন্তু ঋষিদের আবিষ্কৃত অত্যাশ্চর্য এক আরক ব্যবহারের কারনে তাদের রং ফর্সা হয়। ফেয়ার এন্ড লাভলী তাদের বিজ্ঞাপনে বলবে ঋষিদের আবিষ্কৃত সেই আরক এখন ফেয়ার এন্ড লাভলী/লাভলু ক্রিমে ব্যবহার করা হচ্ছে। কাহিনীটার পেটেন্ট করে রাখবেন।

তারেক অণু এর ছবি

ভালো বলেছেন দাদা, তাইই দেখলাম !

গান্ধর্বী এর ছবি

প্রায় একশ ভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানেই বধূদের শরীরে বিশেষ করে মুখমণ্ডল আর হাতে পুরু মেকাপের প্রলেপ লাগিয়ে অবিশ্বাস্য ধরনের সাদাটে করা হয়? সেই সাথে এখন যোগ হয়েছে বিয়ের দিনে ছবি তোলার চল, যেখানে ঘষে মেজে সুপার এডিটিং করে মেয়েটিকে করা হয় ফর্সা থেকে ফর্সাতর।

পুরো ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর। আরো জঘন্য এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় পাত্রী দেখা পর্বে। নিজের কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয় নি কিন্তু অন্য মেয়ের উপর দিয়ে কেমন ধকল যায় সেটা দেখে রীতিমত আতঙ্কই লেগেছে।

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যাপারটা যে শুধু বাংলাদেশের ঘটনা তাতো না। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, গণচীন (চারটা দেশ মিলিয়ে মনে হয় ৩০০ কোটির বেশি মানুষ হয়) - এই চারটা দেশের বাজারের কথা জানি (পাকিস্তান ছাড়া বাকি তিনটা দেখেছিও), মিডিয়ার কথা জানি (চারটাই দেখেছি) সর্বত্র রঙ ফর্সা করার নানা বস্তুর বিপুল পরিমাণ বিজ্ঞাপন। প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। মূলসূত্রটা এখানেই লুকায়িত। ব্যবসা বানানো এবং টেকানোর জন্য এই ভূয়া মানসিকতাটিকে নানা কায়দায় তাতানো হয়েছে, তেল-পানি দিয়ে বড় করা হচ্ছে। যে কোন দিন বাংলাদেশের দুই ডজন টিভি চ্যানেলের মোট বিজ্ঞাপণের কত ভাগ এই ক্রিমের বিজ্ঞাপণ সেটা হিসেব করলে টাকার খেলার হিসেবটা আঁচ করা যাবে। এই ব্যবসাকে ফোলানো-ফাঁপানোর জন্য গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা-সিরিয়ালে কৌশলে ফর্সা-কালোর নানা রকম গল্প একটু একটু করে আমাদের মাথায় ঢোকানো হয়। এগুলোও বিজ্ঞাপণের অংশ।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বলতে পারবেন মানুষের দেহের বহিঃত্বকের কোষ তিন সপ্তাহ টেকে কিনা। আর টিকলেও রঙ ফর্সাকারী ক্রীম আদৌ সেখানে কোন প্রভাব ফেলতে পারে কিনা। দুইটা গল্প বলে শেষ করছি।

এক, মেজ মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছেন এক বাবা। যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তিনি বর আর কনের লেখাপড়া, পেশা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। জানা গেলো কনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স করে একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কাজ করছেন, কনের বড় বোন সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক এবং ছোট বোন বিলেতে ব্যারিস্টারী পড়ছেন। এমন মেধার তিন কন্যা থাকলে যে কোন পিতার বুক দশ হাত হবার কথা। কিন্তু এই বাবা ঐ গোত্রের নন। দাওয়াতগ্রহীতা কনেকে আগে দেখেছেন, মনে করতে পারছেন না যে ঠিক কোন জনের বিয়ে হচ্ছে। তাই কনের বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনার কোন মেয়েটার বিয়ে, ঐযে লম্বা-সুন্দর মেয়েটা?" মেয়ের বাবা মুখ কালো করে বললেন, "আমার মেয়েদের মধ্যে সুন্দর পেলেন কোথায়? সবই তো কালো!"

দুই, বছর বারো আগে চীনের এক দোকানে গেছি স্ত্রীর জন্য একটা ক্রীম কিনতে। আমি যে ক্রীম চাইছি সেটা তাদের কাছে আছে কিনা সেটা বুঝতে পারছি না। কারণ, কথা চলছে যার যার মাতৃভাষার সাথে ইশারায়। বিক্রেতা মেয়েটি বার বার আমাকে শুধু রঙ ফর্সা করার নানা রকম ক্রীম গছানোর চেষ্টা করছে। সে ভাবছে দাম বেশি বলে আমি কিনতে চাইছিনা, তাই ডিসকাউন্টের অফার, কম দামের জিনিসের অফারও দিচ্ছে। আমি বিরক্ত মুখে বাংলায় বললাম, "আমার বউয়ের রঙ ফর্সা করার ক্রীমের দরকার নাই"! সে কী বুঝলো জানি না, বিরক্ত হয়ে আরেকজন বিক্রয়কর্মীকে আমার দিকে ঠেলে দিয়ে সে তার এক সহকর্মীকে গজগজ করে কী যেন বলতে লাগলো। আমার ধারণা সে বলছিলো, "এই কাউলা ব্যাটার বউও নিশ্চয়ই কাউলা। ব্যাটাকে এতো করে বোঝালাম এই ক্রীম মাখলে ওর বউ ফর্সা হবে তাও সে কথাটা কানে তুললো না"!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চীনাদের ফর্সাকারক ক্রিম ব্যবহারের প্রয়োজন কি? ওরা তো আর কাউলা নয়।

মন মাঝি এর ছবি

হয়তো পশ্চিমাদের চোখে কাউলা, নিদেনপক্ষে 'হইলদ্যা'? :)

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

(ধইন্যা)

আয়নামতি এর ছবি

লীলেনদা, পাণ্ডবদা'র মন্তব্যে সহমত (Y)

এসব বিজ্ঞাপনগুলো যে কতটা ন্যাক্কারজনকভাবে মানুষ হিসেবে আমাদের ছোট করে দিচ্ছে সেটা বুঝবার মত বোধই যেন আমাদের অবশিষ্ট নেই। বিশেষ করে এর পেছনে যারা যুক্ত আছেন। কারণ পুঁজিবাদী অর্থনীতির ফুঁকনিতে এরা ঘোরগ্রস্হ।
তারই ডুগডুগিতে বান্দর নাচ চলছে পৃথিবী জুড়ে(শুধু ফর্সা হবার ক্রিম না আরো নানান জাতের ইতং বিতং পণ্য নিয়ে)। তাই এখানে নারীত্বে অপমান হলো কিনা, মানবতা মার খেলো কিনা এগুলো সেভাবে হালে পানি পাচ্ছে না।

এটা কী নারীত্বের অবমাননা নয়? মানবতার অবমাননা নয়?

অবশ্যই অপমান, কিন্তু যারা নিজেদের সহ মানুষ হিসেবে আমাদের এভাবে অপমান করে যাচ্ছেন, তারা কেন এভাবে বিকিয়ে দিচ্ছেন নিজেদের? প্রশ্নটা তাদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিলাম।
সত্যিই যদি ওভাবে ক্রিম মেখে খোদার দেয়া রং ফর্সা করে যাবতীয় সমস্যার সমাধান এক তুড়িতেই সমাধান করে ফেলা যেত তবে এখনো কেন ঐসব ক্রিম মাখিয়েরা পেছনেই পড়ে রয়েছেন? সমাজটা তো তাহলে উন্নতির চরমে পৌঁছে যাবার কথা।
"আমি আত্মবিশ্বাসী নারী, আমি এই পৃথিবী বদলে দিতে পারি" বলা নারীটি যখন এই সংলাপ আওড়ে ফেয়ার এণ্ড লাভলী মাখতে বসে যান তখন বুঝতে কী খুব কষ্ট হয় আসলে কার ভাগ্য বদলে যাচ্ছে ক্রিমটির বাজার জাতকরণে??? এভাবে রং মেখে ভং ধরে যদি সত্যিই নিখুঁত সুন্দরী হওয়া যেতো তবে এককালের সুপার মডেল সিণ্ডি ক্র্যাফোর্ড আফসোস করেন কেন
"আই উইশ আই লুক্ড লাইক সিণ্ডিক্র্যাফোর্ড"বলে?

আমি নিজেও কালাকুলা বদসুরুত মানুষ। আমার বাবা মা কিংবা আর সব ভাই বোনেরা ফর্সা এবং সুন্দর X( আমার বেলাতেই কেন এমনটা হলু রে! এমন ভাবনা মাঝে মধ্যেই আমাকে খোদার উপর অভিমানী করে। এখনো করে যখন সমাজের কিছু পিঁপড়া মানুষ " তুমিই কেন এমন হইলা দেখতে? বাবা মায়ের চেহারা না পাও রং'টাও যদি পাইতা" বলে কুট্টুশ করে কামড়ে দেয় জায়গা মত তখন রাগে লুকিয়ে বাথরুমে বসে কাঁদি! কতভাবে যে আক্রান্ত হতে হয় একজন কালো কুৎসিত মেয়েকে এই সমাজে সেটা ভুক্তভুগিরাই জানে। কিন্তু তার মলম কখনোই 'ফেয়ার এণ্ড লাভলী' হতে পারে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধর্মীয়পনায় বাড়াবাড়ির কাণ্ডারীরা একদিকে নারীকে বলছে 'ঢেকে রাখো' কারণ নারী তাদের আকাঙ্খার, ভোগের বস্তু। আর পুঁজিবাদ বাজারের কাণ্ডারীরা বলছে 'খুলে ফেলো' কারণ নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্হাপন করে তাদের ফায়দা লুটবার দরকার আছে। এখন নারীকেই ঠিক করতে হবে সে কোন পথে হাঁটবে। ক্ষণস্হায়ী রূপের ডালি নাকি চিরস্হায়ী শিক্ষিত হবার গৌরব? বৃত্ত ভাঙবার কাজটি কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয় কখনোই। আমাদের বোধদয় হোক।

প্রায় একশ ভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানেই বধূদের শরীরে বিশেষ করে মুখমণ্ডল আর হাতে পুরু মেকাপের প্রলেপ লাগিয়ে অবিশ্বাস্য ধরনের সাদাটে করা হয়? সেই সাথে এখন যোগ হয়েছে বিয়ের দিনে ছবি তোলার চল, যেখানে ঘষে মেজে সুপার এডিটিং করে মেয়েটিকে করা হয় ফর্সা থেকে ফর্সাতর।

হিহিহি একটা ছোট্ট মজারু ব্যাপার শেয়ার করে যাই সব শেষে।
ঐরকম সাজানো বউ নিয়ে আসবার পরদিন নাস্তার টেবিলে আসবার আগে ছেলের বউ যখন আমার ফুপাকে সালাম করতে যায় তখন ভাবীর উদ্দেশ্যে ফুপার মন্তব্য ছিল 'তুমি কে মা?'

তারেক অণু এর ছবি

(Y)

নীলকমলিনী এর ছবি

আমি বুঝতে পারলাম না তুমি নিজেকে কালাকুলো বদসুরত মানুষ লিখলে কেন, কালো কুত্সিত মেয়েকে ( বানান ঠিক করতে পারিনি ) কথাটা লিখলে কেন? কালোর সাথে সৌন্দর্যের কোনো বিরোধ নেই. প্রতিটি মানুষই তার নিজের মত করে সুন্দর.

তারেক অণু এর ছবি

(Y) ঠিক

অতিথি লেখক এর ছবি

একবার বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট খেলার সময় স্পন্সর ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওভার শেষ হইলেই খালি রঙ ফর্সা করার গ্যারান্টি দেয়।আমি তখন ব্লগের এক পোস্টে লিখেছিলাম, "ফেয়ার এন্ড লাভলীর সাহস থাকলে ড্যারেন স্যামিকে মডেল বানায় রঙ ফর্সা করার গ্যারান্টি দিক"।

সাদরিল

অতিথি লেখক এর ছবি

কিম্বা অধুনা মডেল ক্রিস গাইলরে

তারেক অণু এর ছবি

যদিও সেই কমেন্টটা পছন্দ করতে পারলাম না

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে। আরো বেশী ভালো লেগেছে আলোচনা।

____________________________

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, আলোচনা চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।