পলিময় ঘোলা জল নিয়ে গিরিরাজ হিমালয় থেকে আগত নদী এসে আঁকড়ে ধরেছে নীল সাগরকে। আলাদা বর্ণের জল স্পষ্ট বোঝা যায় সামান্য সূর্যকিরণেই। সেখানে ঝকঝকে সাদা মিহির বালির এক মনোলোভা সৈকত। আরেকটু এগোলেই দেখা যায় সবুজ ঝাউয়ের সারি, মোটেও কালচে পাথর নয়, যা মনে হচ্ছিল মুহূর্ত কয়েক আগেই। বালুচড়ায় নৌকা ভিড়তেই ঝপাং করে নামতেই মানুষের পদচিহ্ন আকার সাথে সাথেই বেমালুম অদৃশ্য হয়ে যায় এই দ্বীপে আসলে বাসিন্দারা, কোটি কোটি লাল কাঁকড়া!
তারা রগড় করতে করতে ফিরে যায় স্বদাঁড়ায় খোঁড়া আপন গর্তে। তবে বেশীক্ষণের জন্য নয়, যে বোঝা গেল মানুষেরা পা ফেলে ফেলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, সাথে সাথে সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসবে তারা খাদ্য সংগ্রহের তাগিদে। এ এক জানা বৈশিষ্ট্য বিশ্বের সব খানের কাঁকড়ার, সারা সৈকতে বিছিয়ে আছে কাতারে কাতারে, কিন্তু পা ফেলা মাত্রই যে দিক দিয়ে কেউ যাবে সেখানে মন্ত্রবলে অদৃশ্য হয়ে যাবে মুহূর্তের মাঝেই, অনেকটা সিনেমার দেখা মোজেসের নীল নদ ভাগের মত, আবার বেরিয়ে আসবে কয়েক মুহূর্ত পরেই সাংঘাতিক দ্রুত গতির প্রাণীগুলো।
এই বিশেষ দ্বীপটার জন্য আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করি প্রতি বছর। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব কতৃক আয়োজিত উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারির সপ্তাহব্যপী কার্যক্রম শেষে সাধারণত শেষ দিন বা শেষের আগের দিন এই অপূর্ব চরে পৌঁছানো হয়। সেখানে স্নানের জন্য মুখিয়ে থাকা পাখিপ্রেমীরা মনের আনন্দে সাঁতার কেটে নেন ঘণ্টাখানেক ( এই কদিন নোনা দরিয়ায় মুখ ধোঁয়া ব্যতীত অন্য কিছুর সুযোগ মেলা ভার), অনেকেই আবার ছোট ডিঙ্গি নৌকার অপেক্ষা না করে বড় ট্রলার থেকে সোজা ডাইভ মেরে সাঁতরে চলে যান দ্বীপে।
এ যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা কোন পলিনেশিয়ান প্রবাল দ্বীপ, কেবল জলের জীব প্রবালটাই বাদ গেছে, আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় দ্বীপের পাহাড়! এছাড়া নীল ল্যাগুন, সবুজ বন, সাদা সৈকত, পাখির কিচিরমিচির, লাল কাঁকড়া, আর কী লাগে? আর হ্যাঁ , এই দ্বীপের সেরা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে কোন মানববসতি নেই। ভার্জিন আইল্যান্ড!! মানে ধরণীর স্বর্গ।
ঝাউবনের ভিতরে এক ঘণ্টার মাঝেই আপনি প্রায় ৩০ জাতের পাখিবন্ধুদের দর্শন পাবেন ঘণ্টাখানেকের মাঝেই। ধৈর্য ধরে নিঃশব্দে অপেক্ষা করলে দেখা দেবে শেয়াল, ভোঁদড়, কাছিম। জানা নেই আরও কী অজানা সৌন্দর্য আমাদের কাছে থেকে লুকিয়ে রেখেছি দ্বীপটি। নাই বা জানা থাকল। যতদিন মানুষ এসে বসতি না গাড়ছে ততদিন নিরুপ্রদপ জীবন কাটাক না সুমসাম জায়াগটি, তাই না?
গেলবার যেয়ে চরতে থাকা গরু আর মহিষের পালের দেখা পেয়েছি, মানুষই এসে ছেড়ে গেছে সবুজ ঘাসের লোভে। হয়ত আর সব দ্বীপ, দখল হয়ে যাওয়া চরের মতই এখানেও একদিন চিরতরে চলে আসবে ছিন্নমূল মানুষ, যাদের হর্তাকর্তা হবে স্থানীয় কোন কেউকাটা। তখন আমাদের বিস্মৃতির সন্ধানে আদ্র নিঃশ্বাস খানিকটা ভারী করবে উপকূল, লাল কাঁকড়া বদলে সৈকতে চরে বেড়াবে ঘেয়ো বেড়াল- কুকুর, আর মানুষের মলের উপরে ভনভন করা মাছি।
নিশ্চয়ই সবাই পরিকল্পনা করে ফেলেছেন এরই মাঝে দ্বীপটিতে যাবার জন্য, ভাবছেন লেখা শেষ করেই আমাকে ইনবক্স করবেন যাবার ইচ্ছা পোষণ করে, তথ্য জানতে চেয়ে। তাই না?
কিন্তু এই বাংলাদেশের সুন্দরতম দ্বীপটির সন্ধান আমরা গোপনই রাখব, যতদিন পারা যায়। কারণ আমাদের দেশের মানুষ এখনও Mass Tourismএর জন্য প্রস্তত নয়, এরা সেন্ট মার্টিনে যেয়ে চায়ের ব্যাগ ফেলে সমুদ্রের তলদেশ ভরিয়ে ফেলে, লাউয়াছড়ার মত অনন্য বনের পিকনিক পার্টির মাইক তেরটা বাজিয়ে দেয় বুনোপ্রাণীর (বনের যত্রতত্র লুকিয়ে থাকা কনডমের কথা নাই বা বললাম), সুন্দরবনের মত ভয়াল গহীন অরণ্যের কিছু খালেও এসে বাগড়া দেয় বিরিয়ানির গন্ধ, টাকার জন্য কাপ্তাইয়ের বন কেটে তৈরি করা হয় সেগুন, আগরের বন---- তাই থাক সে বিপন্ন বিস্ময় তাঁর মত। যতদিন পারা যায়।
যদিও উটকো দেখানেওয়ালা পর্যটকের চেয়ে পরিবেশের জন্য অনেক অনেক গুণ বেশী হুমকি সংঘবদ্ধ চক্র যারা বন নাশ করে, নদী মেরে ফেলে, পশু-পাখি পাচার করে। আমাদের আশা এই দুই পক্ষের করাল দৃষ্টি থেকেই সুন্দরতম দ্বীপটি আরও অনেক অনেক বছর জনশূন্য থেকে সঙ্গী হবে বাতাস, কাঁকড়া, পাখি, কাছিমের।
মন্তব্য
ভাল থাকুক সুন্দরতম এই দ্বীপ।
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
আশা করি-
facebook
ভালোই বলেছেন। আমরা আসলেই প্রকৃতির ব্যপারে একেবারেই সচেতন নই। থাকুক গুপোনে যতদিন সম্ভব।
হ, আবিস্কার হলেই তো জ্বালাও পোড়াও।
facebook
-সহমত। বাংলাদেশের মানুষ এখনও ঘুরতে গিয়ে প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব পাতানো শেখেনি।
শুভেচ্ছা
শিখবে কত দিনে কে জানে!
facebook
তবে, একইসাথে আশার কথা এই যে, আপনাদের মত মানুষের লেখা পড়ে (এবং ছবি দেখে) -ই মানুষ সচেতন হবে। আমি মনে করি আমাদের দেশের মানুষ যদি ছোটবেলা থেকেই এই ধরণের লেখা পড়ে বড় হয়, তবে তারা যেকোন জায়গায় গেলেই প্রকৃতির স্বাভাবিক বৈচিত্র্যকে শ্রদ্ধা করবে, এমনভাবে একটা জায়গায় বেড়িয়ে আসবে যেন বোঝা না যায় সেখানে কোন মানুষ গিয়েছিল।
শুভেচ্ছা
অফটপিক: আমাদের পাঠ্যক্রমে এখন কোন ভ্রমণকাহিনী অন্তর্ভুক্ত আছে কি?
একেবারে ছোট্টবেলা থেকে পরিবার ও স্কুল একসাথে কাজ করলেই এটা সম্ভব, যেমনটা অনেক দেশে দেখেছি।
এখনকার সিলেবাস সম্পর্কে ভালো জানি না, খবর নেওয়া দরকার।
facebook
পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু এই ব্যাপারে পর্যটকদের আরো সচেতন করতে পারেন। আমি জানি গাইড ট্যুরস বা বেংগলস সুন্দরবনে যে ট্রিপগুলোর আয়োজন করে, সেখানে বেশ গুছিয়ে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
" Take only photographs, leave only footprints" এটাকে একেবারে গেঁথে ফেলতে হবে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হুম করলেই ভাল! অনেকে আছে সারা পথ বোতল, ময়লা সব বস্তায় ভরে তীরে এসে নদীতে উপুর করে দেয়। ইদানীং মেজাজ খারাপ হয় অনেক জায়গায়, ঘুরতে আসে না ভুং ভাং তাই বুঝি না !
facebook
না, ইনবক্সে আর জানতে চাইবোনা বরং এখানেই বলি, জায়গাটা কোথায়?
হ্যাঁ, মনে হয় একটা টাইপো আছে,
নিরুপ্রদপ = নিরুপদ্রব।
ধন্যবাদ, ঠিক করে দিব।
facebook
এইটা কিছু হইল? দাওয়াত দিয়া নিয়া গিয়া কইতাছেন বেশী খাওয়া ভাল না, ডায়েট কন্ট্রোল করেন। আমরা দেখুম না? আপনে খালি একাই দেখবেন? জমিদারী পাইছেন? দিলাম একটা
এত ইচ্ছা থাকলে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ ঘুরেন, ভালো কিছু পাইতেও পারেন
facebook
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া
সবখানেতে তারেক গিয়া(হায়)
facebook
যারে দেখি নাই সে বড় সুন্দরী, যার রান্ধা খাই নাই সে ব্যাপক রাঁধুনি। কইলেন সুন্দরতম দ্বীপ, তারপরে নাম ও নাই ধাম ও নাই, কোন কথা হইল?
নাম দেন। দেইখা আসুমনি একদিন। তারপরে বাকি কথা।
..................................................................
#Banshibir.
আগে দেশে আসেন পীরবাবা
facebook
গরুরপাল নিয়ে যারা আসেন দ্বীপে তাদের মাধ্যমেই দেখবেন একদিন দ্বীপটা জবরদখল হয়ে গেছে
আচ্ছা দ্বীপটার নিশ্চয়ই সুন্দর একটা নাম আছে! না জানতে চাইছিনা নামটা।
ভাবছি নিজের মনেই কী হতে পারে নাম
স্থানীয়রা দেখবেন এর নাম দিয়ে দিয়েছে হাগারচর
এমনই কিছু একটা ! নাহ, হিম্ভাই, আপনার পেট ভর্তি হিংসা!
facebook
প'টাকেট ব্র্যুয়ারির এক্সিকিউটিভ বাথরুম আইল্যান্ড ও হৈতারে বস।
..................................................................
#Banshibir.
বড় হয়ে 'এক্সিকুটিভ' হবো
"হাগারচর" ভালোই বলেছেন।
আমার ছোটবেলার প্রথম চরভ্রমণটাই বিভীষিকায় পরিণত হয়েছিল, এই জিনিসের কারণে। চরম এই জিনিসটার কারণে কোন মানব বসতির চরে তো শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়াই যাই না। তার উপর পা ফেলতে একটু ভুল করলে.... আর কইলাম না!
সেই সাথে রেল লাইনে---
facebook
গরু মহিষ দিয়েই দখল হয় !
facebook
যতদিন গোপন রাখা যায় ততদিন গোপন থাকুক।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
facebook
সবকিছু মানছি, অণু ভাই। তারপরও মানতে পারছি না দ্বীপটার নাম সংগোপন করার বিষয়টা! অগোচরে রাখাই তাহলে দ্বীপ বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা? তাছাড়া কদ্দিন অগোচর থাকবে চিন্তা করছেন?
কিছু পাঠক নিজেদের হতভাগা ভাবতেই পারে, কেউ কেউ প্রতারিত, কেউ প্রলেতারিয়েত!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
কিছু দ্বীপ থাক না "গুপন"?
facebook
"গুপন" মানে কি, হিমু ভাই?
আপনার শব্দ ভান্ডার নিয়ে তো আর নতুন করে বলার কিছু নাই, তাই কইতেছিলাম, আবার গাইল-টাইল দেন নাই তো?
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
গুপন মানে গোপন
facebook
কুনুব্যাপার্না, হুঁহ্! লুক্কাইপেন কৈ! ব্যাক বাইরকৈরালামু!
****************************************
facebook
ভুঁড়ির উপর ছুরি ধরে ছিনতাইকারীরা এরকমটা বলে
থাকুক না বেঁচে প্রকৃতি তার মতো করে অপরুপ রুপ নিয়ে এই বাংলার কোন এক সমুদ্রতীরে।
মাসুদ সজীব
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
facebook
পানিতে দুজন মানুষ!
প্রথমে একবার পড়ে গেছি, তখন খেয়াল করি নাই!
সাঁতার !
facebook
বাংলাদেশে এরকম অনেক সুন্দর দ্বীপই আছে। খুজলে এরকম অসাধারন সৌন্দর্য আরও পাওয়া যাবে। আর এগুলো খুজে বের করতে পারে সত্যিকারের অভিযাত্রিরাই।
ধন্যবাদ তারেক অণুকে, কিছু অসাধারণ ছবি পোস্ট করার জন্য।
নিকঃ শেহজাদ আমান।
শুভেচ্ছা
facebook
চেনা চেনা লাগে
গুপন থাক
আহা !
facebook
এইখানে গিয়েছিলাম একবার একাডেমিক কাজে । গোপনেই রাখবো
তাহসিন রেজা
আচ্ছা !
facebook
খুব সুন্দর! কাঁকড়ারা সারবেধে ছোটাছুটি করে পুরো সৈকতের রঙ লাল বানিয়ে দিচ্ছে- কল্পনা করতেই মন ভরে যাচ্ছে। থাকুক গোপন আরো অনেক দিন। প্রকৃতি অন্তত কিছু জায়গায় নিজের মতো শ্বাস নিক এই অভাগা দেশে।
অঃটঃ ফেসবুকে শেয়ার করা সেই তুমুল আলোচিত সেই ছবিখানা এখানে দিলেন না যে?
(সঙ্কেত- গামছা)
---- মনজুর এলাহী -----
হা হা , আসলেই !
facebook
ঠিক - আমরা এখনো এত অসেচতন!
____________________________
আসলেই
facebook
ছবি আর বর্ণনা শুনে কেন জানি মনে হচ্ছে আগে এই চরে আমি গিয়েছি। সেই সময়ও সেখানে মানব-বসতি ছিল না। তবে ঐখানে যতদূর মনে হয় বন্য শুকরও ছিল মনে হয়।
তাই!
facebook
খুব সুন্দর করে লিখেছেন ভাই। আমাদের দেশের এমন আনাবিল জায়গা গুলুর কথা যদি আমরা আরও দেরি করে জানাতাম তাহলে জায়গাগুলো আরও কিছুদিন ভাল থাকতো। কিছুদিন আগে একটা নিউজ এ চোখ আটকালো, "ছি! আর আসব না খইয়াছড়া" - লেখক খইয়াছড়া ঝর্নায় যাবার রাস্তায় এবং ঝর্নার আশে পাশে যে আবর্জনা দেখেছে তাতেই এমন শিরোনাম দিতে বাধ্য হয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে জলার বন রাতারগুল এ গিয়েও আমি এমনটাই পণ করেছি আর যাবো না। বান্দারবান এর দুর্গম পথে জাদিপাই ঝর্নায় গিয়েও মনটা খারাপ হয়েছিল মানুষের ফেলে আসা আবর্জনা দেখে। খাগড়াছড়ির রিসং ঝর্ণায় গিয়ে দেখলাম ডিজে চলছে আর ছেলে মেয়েরা নাচছে। আমরা কি প্রকৃতিকে ভালোবেসে তার কাছে যাচ্ছি নাকি তাকে ধ্বংস করতে যাচ্ছি তা মনে হয় নিজেরাও যানি না। এখন হয়ত অনেকেই বলবে, কেন তুমি খালি একাই দেখবা নাকি! হুমম দেখবো, কারন আমি জানি প্রকৃতিকে কিভাবে ধ্বংস না করে তাকে উপভোগ করা যায়। আগে প্রকৃতিকে ভালোবাসো তারপর যেওক্ষণ।
নতুন মন্তব্য করুন