তক্ষক ডাকছে।
সেই সাথে আছে ঝিঁঝিঁ পোকার জোরালো ঝিঁঝিঁ ডাক।
এই দুই ছাড়া বিশ্ব চরাচর ডুবে গেছে নির্জনতার মাঝে, জানালা দিয়ে রূপোলী সাঙ্গু নদী দেখা যায়, কাছে গেলে তাঁর কুলু কুলু অস্তিত্বও টের পেতে পারি, পারি তাঁর শরীর ভর্তি স্নিগ্ধতার পরশ পেতে। খানিক আগেই জুম মরিচের মহা ঝাল ঝাল ভর্তা আর মাছ-টম্যাটোর তরকারি রেঁধে দিয়েছিল যে লুসাই ভাইটি, সেও ঘুমিয়ে গেছে। অন্য ভবনে স্বপ্ন রত ভ্রমণসঙ্গী পর্বতারোহী এম এ মুহিত এবং কবি সৈয়দ আখতারুজ্জামান ভাইও। আমি ব্যস্ত জানালার বাহিরে পৃথিবীকে জীবনানন্দের বাদুড়ের ডানার মত নিস্তব্ধতার চোখে দেখতে সেই সাথে মাঝে মাঝে কালো কালো অক্ষরগুলোকে কীবোর্ডের মাধ্যমে প্রাণ দিতে।
গতকাল রাতে যাত্রা শুরু হয়েছিল এক ক্ষয় হতে শুরু হওয়া ভুতুড়ে মরিচারঙ চাদের সাথে। পরিকল্পনা ছিল ঢাকা- বান্দরবান- রুমা - বগালেক - দার্জিলিং পাড়া - কেওক্রাডং - সুনসং পাড়া - থিংদলতে পাড়া - সিলপী পাড়া - চাইক্ষিয়ং পাড়া (বার্মার সীমান্তে, শেষ গন্তব্য) - সিলপী পাড়া - থাইক্ষিয়ং পাড়া - দার্জিলিং পাড়া - সাইকত পাড়া - রুমা বাজার - বান্দরবান - ?? !
সেই মোতাবেক আজ রুমার জায়ং পাড়ার জৌ মি রিসোর্টে আছি, আমাদের বম বন্ধুরা এই পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিনন্দন নিরিবিলি হোটেলটি চালু করছে কিছু দিন আগে।
টানা কদিন পথে থাকলেই ইচ্ছে করে প্রতিদিন অল্প করে লিখে সচলে পোস্ট দিতে কিন্তু উপকূল, হাওরে, নদীতে, বনে, বরেন্দ্র লালভূমিতে যেখানেই যায়, ইন্টারনেট থাকে না, এবং ল্যাপটপ রিচার্জের ব্যবস্থা থাকে না, ফলে টাটকা অনুভূতিগুলো অপ্রকাশিতই থেকে যায়। আজ দুপুর থেকেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক ছিল না, কিন্তু নেট আছে ! ভাবলাম, বাহ, লিখে ফেলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আজকের রঙিন অভিজ্ঞতাগুলো।
দুপুরে চাঁদের গাড়ী চেপে জুমের চাষের জন্য পাহাড়ে লাগিয়ে দেওয়া আগুনের তাপ, অক্লান্ত সূর্যের দাবদাহ আর ধূলাস্নান এই তিনের সমন্বয়ে রিসোর্টে ব্যাকপ্যাক ফেলেই সোজা সাঙ্গু নদীতে যেয়ে জলহস্তীর মত শরীর ডুবিয়ে জলকেলি করলাম ঘণ্টা খানেক, অতি দুঃসাহসী কিছু মাছ আবার ছুঁয়ে যেন ভিসা দিয়ে গেল তাদের রাজ্য অবস্থানের।
ভরপেট খিদা নিয়ে গারো বাবুর্চির দেশী মুরগীর ঝোল, ঘন ডাল, কচি লাউয়ের তরকারির যে কী সোয়াদ তা কি এই মধ্যরাতে আর বর্ণনা করা সম্ভব? করতে গেলে ফের খিদে লেগে যাবে যে! সেই সাথে ছিল বাংলাদেশের সেরা পেঁপে! বিকেলে বগা লেক পাড়া থেকে এসে হাজির হল গাইড রোয়াত বম। বললেন, "ভোরে তোমাদের বাঁশ দেওয়া হবে, মনে রেখ"! মানে মানে হাতে নিয়ে হাঁটার জন্য চিকন বাঁশের লাঠি দেওয়া হবে ! আজ রাতে উনিও রুমাতেই থাকবেন। কাল ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে পদব্রজে ঝিরির পথ ধরে যাত্রা শুরু হবে বগা লেকের দিকে।
এই ফাঁকে বাংলাদেশে মিলিটারি এবং পুলিশের কাছে যেয়ে যাত্রার জন্য যাবতীয় কাগজপত্র দাখিল করে আসা হল, ইয়ং বম অ্যাসোসিয়েশনের পুরনো বন্ধুরা এসে বেশ আড্ডাবাজী করলেন। বুনো হরিণের মাংস খাওয়াবার কথা একজন তুলতেই কেন বুনো পশু-পাখির মাংস খাওয়া এবং শিকার উচিত না বলে এমন যুক্তিশেল হেনেছি ত্রিমূর্তি মিলে যে তারা পালাবার দিশা পায় নি।
রাত ১২টা এখন, অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু বেশী ভোরে উঠতে হবে, তারও আগে একটা প্রতিশ্রুত লেখা প্রস্তত করতে হবে, তাই আপাতত বিদায় বন্ধুরা! নেট পেলে কাল আবার দেখা হবে। মাথার মধ্যে যে গানটা গত কদিন ধরে প্রতি মুহূর্তে ঘুরে আসছে সেটাই দিয়েই বিদায় নিচ্ছি --
ওরে নয়নেতে নয়ন দিয়ে রাখবো তারে
চলে গেলে যেতে দেবো না,
না না যেতে দেবো না,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
মন্তব্য
লাল পাহাড়ি দেশে যা
রাঙ্গামটির দেশে যা
ইত্থাক তুকে মানাইছে না রে
ইক্কেবারে মানাইছে না রে।
রাঙ্গামাটি টা বান্দারবান পড়ে নিতে হবে! সিংসা লাগে!
ইত্থাক তুকে মানাইছে না রে
ইক্কেবারে মানাইছে না রে।
facebook
আপনের মত আমারো মনে হয় এক্ষন সব লিখ্যা ফেলাই, যখন যেটা মাথায় আসে লিখতে বসি। বসা হয়না। শুয়ে শুয়ে পকেট প্লেনস খেলি, বা একটা বই পড়তে বসি, বা পিচ্চিটারে দৌড়ানি দেই। মনে মনে ভাবি, আমি বিজি মানুষ আমার টাইম নাই। পরে লেখুমনি। কত লেখা আধা ফিনিশ পড়ে আসে এরকম।
আপনে লেইখাই ছাড়েন। পাহাড়ের উপরে পর্বতের কিনারে নদীর ধারে গাছের আড়ে আপনে ঠিকই লেইখা ফেলেন। যখনেরটা তখনই। সাব্বাস।
..................................................................
#Banshibir.
এইটাই কথা- এই খানেই তারেক অণু ...
কড়িকাঠুরে
ঠিক!
ঘুরতে ঘুরতেই লিখে ফেলার অভ্যাসটা আসলেই ভালো। আমি গুরতে বেরোলে কতকিছু লিখতে মন চায়, ভাবি পরে লিখবো। কিন্তু পরে আর অনুভূতিটা টাটকা থাকে না।
আপনার ঘোরাঘুরি চলুক।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
রুমাবাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত ইট বিছানো চড়াই-উত্রাই পাহাড়ি রাস্তাটা যেটা দিয়ে ল্যাণ্ড্রোভারে অনেকে যায়, সেটা কি এখনো আগের মতই ভাঙাচুরা আছে নাকি কার্পেটিং/রিপেয়ারিং করা হয়েছে?
****************************************
আমিও বান্দরবাান-নীলগিরি গিয়েছি। কিন্তু শারীরিক অসমর্থতার জন্য আপনার লিস্টির অনেক জায়গায়ই যাওয়া হয়নি। অদেখা জায়গাগুলো আপনার মাধ্যমেই নাহয় দেখে নেব। দুধের সাধ....।
[img][/img]
যাক একটা জায়গা অন্তত কমন পড়ল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বলতে যাচ্ছিলাম, দেখি আগেই বলে ফেলেছেন।
সত্যি বলতে কি, অণুভাইয়ের সাথে যে অন্তত একটা কমন ফালাইতে পারছি, তাতেই আমি কৃতার্থ মানতেছি নিজেরে!
অণুভাই, গাইডটি কি বম মানবী ছিল?
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
৫-৬ বছর আগে বগা লেকের পারে বসে আমাদের বম গাইড "লম"-এর কণ্ঠে তার নিজের বাঁধা গান আর তার জীবন কাহিনি শুনতে শুনতে দারুন একটা সন্ধ্যা পার করেছিলাম। আপনার লেখা পড়ে সেই স্মৃতি ঘাটতে গিয়ে হার্ডডিস্কের চিপায় নীচের ছবি দু'টি পেয়ে গেলাম বগা লেকেরঃ
****************************************
সারাদিন জার্নি, দৌড়াদৌড়ি, সাঁতার কাটাকাটি আবার লেখালেখি... কেমনে কি??!!!
সুবোধ অবোধ
দাদা , গানিতিক হিসেব অনূ্যায়ী আমি এবং আপনার দুরত্ব আর মাত্র ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ। আমিও বান্দরবন ঘুরসি ইচ্ছেমতো।যাক শেষ পযন্ত আপনি আমার চেনা জায়গায় গেলেন। বাকি যেসব জায়গায় গেছেন তা না হয় ভুলে গেলেন অন্তত আমি আরো ৯০ ভাগ না আসা প্রযন্ত।
সজল // ইরন
আইজ ক্যামেরায় আপ্নের লগে ফাইট দিলাম। এ যাত্রায় বোধহয় আপনি হেরেই গেলেন। কবে যে হাঁটাহাাঁটিতে ফাইট ফাইট দিমু? তয় আপ্নের মতন ভুড়ি নেই যখন, স্বপ্ন দেখতেই পারি।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
কী দারূণ!!! আপনি তো মশাই আমার বান্দরবন ভ্রমন কাহিনি লেখা বন্ধ করে দিলেন!! আপনার লেখা পড়ে কিছুক্ষন তাবদা মেরে বসে থেকে ভাবলাম মানুষ এত দেখে কী ভাবে আর লেখে কীভাবে!!! তারপর আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। খালি মনে হচ্ছে আপনার লেখার পরের পর্ব কবে আসবে!!!!
____________________________
অনেক বছর আগে রুমা বাজার-বগালেক-কেওক্রাডং ভ্রমণের কথা মনে পড়ে গেল। কী অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়ি এলাকা আর তার মানুষজন। আপনার ঘোরাঘুরি চলুক। লেখালেখিও।
দার্জিলিং পাড়া? ইন্টারেস্টিং নাম, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং নামটাই সবার আগে মনে আসে।
পৃথিবীর পথে পথে তো লিখলেন এখন বাংলার পথে পথে বই লিখুন অণু ভাই।
একাকী মানব
চটজলদি এর চেয়ে সুন্দর লেখা আর কী হতে পারে! তবুও ভ্রমণের যে তীব্র আনন্দ ও বহুমুখী অভিজ্ঞতা সেটা ঠিকঠাক মতো ফুটিয়ে না তুলতে পারার বেদনা পৃথিবীর তাবত ভ্রমণ লেখকদের আমরণ তাড়িয়ে বেড়ায়। আর যখন তখন লিখলে যে নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায় দশমাস পরে লিখলে তার ধারে কাছে পৌঁছনো কঠিন, যদি না আপনি পাবলো নেরুদা বা টলস্টয়ের মতো ডাকসাইটে বর্ণনাবিদ হন। কতকিছু হয়ত আর মনেই থাকে না! বান্দরবনের এই ভ্রমণ নানা কারণে মাইল ফলক হয়ে থাকবে। আশাকরি তারেক অণু যথাসময়ে সেইসব মধুভাণ্ডারের মোড়ক উন্মোচন করবেন।
নতুন মন্তব্য করুন