হয়তো বা নিমপেঁচা অন্ধকারে গা’বে তার গান,
নিমপ্যাঁচার নামের সাথে প্রথম পরিচয় জীবনানন্দ দাশের কবিতার মাধ্যমে। শুনেই মনে হয়েছিল প্যাঁচাটি মনে হয় নিম গাছে বসে টপাটপ নিমের তেঁতো ফল খায়। বাড়ীর নিম গাছে অবশ্য অনেক খুঁজেও কোন প্যাঁচা দেখতে পেলাম না, আর জানলাম যে প্যাঁচারা মাংসাশী পাখি, তাঁর ইঁদুর, কীট-পতঙ্গ, মাছ, গিরগিটি ইত্যাদি খায় এবং নিমফল আমার মতই তাদের খাদ্য তালিকায় নেই। অনেক পরে শুনলাম নিম-নিম বলে ডাকে বলেই মানুষ এই লাজুক ক্ষুদে প্যাঁচাটির নাম দিয়েছে নিমপ্যাঁচা।
সজিনার ডালে পেঁচা কাঁদে নিম-নিম নিম কার্তিকের চাঁদে।
পদ্মার তীরে বিশেষ গাছের কাছে গেলে খুড়ুলে প্যাঁচা দেখি, বিশেষ বনে গেলে হুতুম প্যাঁচার সন্ধান মেলে, এমনকি মেছো প্যাঁচারাও দেখিয়ে যায় তাদের অস্তিত্বের প্রমান। কিন্তু নিম প্যাঁচাদের শুধু ডাকই শুনি তাদের দর্শন আর মেলে না। অবশেষে দিন দুই আগে বান্দরবানের দেখা মিলল নিম প্যাঁচার, শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে যে ৩ ধরনের নিমপ্যাঁচা আছে, তাঁর মধ্যে যেটিকে নিয়েই জীবনানন্দ লিখেছিলেন সেই কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা (Collared Scops Owl) দর্শন দিল তাঁর ছানাপোনা সহ।
--- সকালে যে নিম পাখি উড়ে আসে কাতর আবেগে
নীল তেঁতুলের বনে-
যদিও দুর্গ কোটরের একটু কাছে যেতেই সে বিদ্যুৎগতিতে ডানা মেনে নক্ষত্রের পানে যেতে যেতে বসে পড়ল দূরের আম গাছে।
বাসায় উঁকি দিতেই বোঝা গেল কারণ, সেখানে অন্তত তিন তিনটে ক্ষুদে প্যাঁচার ছানা, পুরোপুরি তুলার বলের মত সফেদ, ফুলো ফুলো! চোখ ফুটেছে কিছু দিন আগেই, এখনো এই খোঁড়লে মাস খানেক থাকবে বাবা-মার আলয়ে। মিয়াঁ-বিবি মিলেই বাচ্চাদের দেখভাল করে, যদিও পুরুষ নিমপ্যাঁচার খোজ মিলল না তখন।
বাচ্চাগুলো হয়ত আমাদের শব্দে বা ছায়াতে বাবা-মা খাবার নিয়ে এসেছে মনে করে মুখ হাঁ করে শব্দ করতে লাগল। উল্লেখ্য যে পাখির বাসায় ছানা থাকলে যে কোন সময়ই কাছে না যাওয়ায় ভাল, বিশেষ করে ডিম থেকে সদ্য বেরোনো ছানার ক্ষেত্রে, তখন তারা বাবা-মার শরীর থেকে উষ্ণতা নিয়ে থাকে। আপনাদের ভয়ে অভিভাবক বেশীক্ষণ দূরে সরে থাকলে ঠাণ্ডায় বাচ্চাটির বড় ক্ষতিও হতে পারে।
কী সুন্দর লাজুক পাখিটি! অদূরে গাছের নিচে যেয়ে তাঁর দেখা পেলাম, চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তীব্র কৌতূহল নিয়ে আরামের ঘুম ভাঙ্গানো বজ্জাত মানুষের বাচ্চাগুলোকে সে দেখল নির্বিকার ভাবে, তারপর চেষ্টা করল আরও আড়ালে পাতার মাঝে মিশে যেতে। তাঁর ডাক শোনা গেল না তখন, কিন্তু দর্শনেই অতীব মুগ্ধ হয়ে নিমপ্যাঁচাটির আরও বেশী বিরক্তির কারণ না হয়ে আমরা তখন পাহাড়ের নিচের দিকে।
পউষের শেষ রাতে নিম পেঁচাটির সাথে সে যে আসে ভেসে-
বর্ণনা: কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা / Otus bakkamoena / Collared Scops Owl বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিমপ্যাঁচা (দৈর্ঘ্য ২৪ সেমি, ওজন ১৭০ গ্রাম, ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ২.৫ সেমি, লেজ ৮.২ সেমি)। এর পিঠের দিক ধূসর-বাদামি কিংবা লালচে-বাদামি; দেহের নিচের দিক পীতাভ; ধূসর-বাদামি বা লালচে বাদামি পিঠে সাদাটে তিলা ও ডানা-ঢাকনিতে পীতাভ তিলা; থুতনি ও গলা সাদা অথবা পীতাভ; দেহের নিচের দিকে শেষ প্রান্তেÍ সরু লালচে ঢেউ খেলানো ও কালো দাগ এবং তিলা; ঘাড়ে কালচে বাদামি লাইন আর পীতাভ পট্টি; স্পষ্ট ফিকে কান-ঝুটি ও ফিকে মুখ কালো রেখায় ঘেরা। ঠোঁটের রঙ দু’ধরনের: উপরের ঠোঁট সবুজাভ, গোড়া ফিকে ও আগা কালো; নিচের ঠোঁট কৃষ্ণবর্ণ ও হলুদ; চোখ কমলা বা বাদামি; হলদে-সাদা পদতল, পা ও নখর মাংসল-ধূসর থেকে কৃষ্ণ ও জলপাই রঙের। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা অভিন্ন। উপপ্রজাতি O.o.lettia বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা বন, ফলের বাগান, কুঞ্জবন ও আবাদি জমিতে বিচরণ করে; সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় থাকে। কোন জায়গায় বসে অবস্থান বা ভূমির কিছু উপরে ওড়ে রাতে শিকার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে গুবরে পোকা, ফড়িং ও অন্যান্য পোকা, টিকটিকি, মূষিক ও ছোট পাখি দিনে ঘন পল্লবগুচ্ছ, কাঁটাধারী গাছের ডাল ও গাছের কা-ের গহ্বরে থাকে; দেহ টান করে গাছের সঙ্গে চেপে ধরে এবং যাতে চিনতে না পারে সেজন্য চোখ বন্ধ করে রাখে; ডাকের সাহায্যে চেনা যায় তবে দেখা পাওয়া মুশকিল।সচরাচর একবার ডাকেঃ টুও, হুউক বা প্লিউ; এক বা দু’মিনিট পর পূনঃপূন ডাকে। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসের প্রজনন মৌÍসুমে গাছের কান্ডের প্রাকৃতিক ফোঁকরে কিংবা কাঠঠোকরা ও বসন্তÍ পাখির পরিত্যক্ত বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৫টি, ৩.২ ´ ২.৮ সেমি।
বিস্তৃতি: কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বনে ও গ্রামে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ-এশিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, কোরিয়া ও সাইবেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বিস্তৃত রয়েছে।
অবস্থা: কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ: কণ্ঠী নিমপ্যাঁচার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কানওয়ালা প্যাঁচা (গ্রিক otos = কানওয়ালা প্যাঁচা, সিংহলি bakamuna = লক্ষী প্যাঁচা বা মেছো প্যাঁচা)।
মন্তব্য
হোমপেজ থেকে ছবিটা দেখতেই মন ভরে গেল! কী রাজসিক চেহারা!! দারুণ! দারুণ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
পুরাই প্যাঁচাহিট!
facebook
একটা প্রশ্ন -- প্যাচা কি মানুষের পোষ মানে ?
নিকঃ শেহজাদ আমান
প্রথম কথা হচ্ছে প্যাঁচা বুনো পাখি, সেটিকে পোষ মানাবার চেষ্টা করাই উচিত না।
ছোট থেকে পাললে কিছুটা পোস্ট মানতেও পারে, কিন্তু তাঁর মানে হচ্ছে খাঁচায় বা পায়ে শিকল পরিয়ে রাখতে হবে
facebook
দিনরাত পোস্টাইতে পোস্টাইতে তারেকাণু'র হার্ডডিস্ক গেছে
ভদ্রলোককে রিং পরানোটা দিনকে দিন জরুরি হয়ে পড়ছে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আহহা, পোষ! সেই আঁধারে বসে পোকা তাড়াতে তাড়াতে লেখা।
facebook
হুঁ, আপ্নারে পোষ মানানির একখান মানুষ দরকার যিনি এরাম সময়ে পোকা তাড়ায়ে দেবে... বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম এক্স-বয়ফ্রেন্ড হয়ে আর কদ্দিন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আরেহ, কিসের মাঝে কী !
facebook
ভালৈ লাগলো প্যাঁচার প্যাঁচাল
facebook
বাহ্! ছবিগুলো দারুণ হয়েছে। হ্যাঁ, লেখাও ভাল।
নিম - নিম
facebook
আচ্ছা, একে দেখে কেন যেন আমার কাঠবিড়ালির কথা মনে হল। এর সাথে চেহারায় বেশ মিল আছে বলে মনে হল।
বিশেষ করে, কোটর থেকে উঁকি মারা ছবিটায়।
শুভেচ্ছা
/_ ___ \
/@ \/@ \ \
\__/\___/ /
\_\/______/
/ /\\\\\
| |\\\\\\
\ \\\\\\\
\______/\\\\\
_||_||_
(QvQ)
( )
" "
বাঃ, এই প্যাঁচা দুইটাও তো চমৎকার হয়েছে দেখি!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
প্যাঁচা দুটি ভাল লাগল
facebook
নেট থেকে নেয়া বহুল প্রচলিত ASCII Art এগুলো। আমি কপি পেস্টার মাত্র
প্যাঁচা আমার সব সময়ের প্রিয় পাখি।
বেঁচে থাক আমার প্রিয় প্যাঁচা।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
আমারও
facebook
বাঁশপাতা- মরা ঘাস- আকাশের তারা;
বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা;
ধানখেতে- মাঠে
জমিছে ধোঁয়াটে
ধারালো কুয়াশা;
ঘরে গেছে চাষা;
ঝিমায়েছে এ-পৃথিবী-
তবু পাই টের
কার যেন দুটি চোখে
নাই এ-ঘুমের কোনো সাধ।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
তবু পাই টের
কার যেন দুটি চোখে
নাই এ-ঘুমের কোনো সাধ
facebook
দারুন!
****************************************
বাহ
facebook
ওরে নিমপ্যাঁচার কী ভাব! পুরাই রাজকীয়!
প্যাঁচা ছানাগুলোকে তো দেখি ম্যাঁও ছানার মতোই- তুলতুলে আর ফুলো ফুলো দেখা যায়!
- শ্রাবস্তী
পুরাই, রাজকীয়। ম্যাও দেখলেই লেজে যেয়ে ঠোক দেবে-
facebook
প্যাঁচা ভালো লাগে। ভালো লিখেছেন। সেই সাথে সুন্দর ছবি।
ধন্যবাদ
facebook
কী দারুণ! কী সুন্দর!
কড়িকাঠুরে
খুব সুন্দর পাখি
facebook
প্যাঁচা পছন্দ হইছে, পোস্ট ও
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আরও আসিতেছে
facebook
ভাল লেগেছে নিম প্যাচা কথন
নিম নিম
facebook
ছোটবেলাংয় এর রক্তহীম করা ডাক শুনে কত ভয়ে জমে গেছি!
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আগে অনেক বেশী ছিল
facebook
তুলতুলে বাচ্চাগুলোকে দেখে মনটা ভাল হয়ে গেল। ধন্যবাদ আপনার এই তথ্যবহুল পোস্টটির জন্য!!
_____________
বি_এম_বেনজীর
শুভেচ্ছা
facebook
খুব ভালো লাগলো। ওই সাদা তুলোর বলের মতন প্যাঁচার ছানাগুলো! কী দারুণ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ছানাগুলো এমনই হয়
facebook
ধন্যবাদ, অনুদা এত্তগুলা সুন্দর লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে।
সদস্যনামঃ Jon Rulz
শুভেচ্ছা
facebook
নতুন মন্তব্য করুন