চে আর্নেস্তো গ্যেভারার শাণিত চোখে প্রথমবারের মত আমার চোখ পড়ে সেগুলো তখন নিস্প্রভ হয়ে গেছে, কারণ আমি তাঁর মৃতদেহের ছবি দেখছিলাম। তাঁর চোখ দুটি চেয়ে আছে, সেই দৃষ্টি এক গোলার্ধ থেকে ছুটে আসে অন্য গোলার্ধে, বাংলার খবরের কাগজে ছাপা হওয়া সেই ছবি দেখে মনে হয়েছিল যীশুর মত টলটলে চোখ নিয়ে অভিমান ভরা দৃষ্টি ছুঁড়ে দিচ্ছে কেউ, এটি জীবন্ত চোখ সে মৃত্যু এত দশক পরেও তাড়া করে তাঁর সেই মৃত অভিমান।
সেই থেকে শুরু, জানার চেষ্টা করেছি তাকে নিয়ে, নানা জনের নানা মতের বই পড়েছি, তাঁর নিজের লেখা সব রোজনামচার পাতা উল্টাই এখনো থেকে থেকে, মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছে থাকা সবুজ কবিতা সংগ্রহের কবিতাগুলো পড়ি, বোঝার চেষ্টা করি তাঁর মনন। কিন্তু চে ধরা দেয় না। সবচেয়ে বেশী জানার চেষ্টা করি মাত্র ৩৯ বছর বয়সে কীভাবে একজন মানুষ এত্ত কিছু করতে পারে, যেগুলোর পরিকল্পনা করতেও আমাদের কয়েক দশক লাগবে?
বলিভিয়ায় প্রবেশ করি আমরা আন্দেজের এক আশ্চর্য বর্ষণ মুখর সোনালী গোধূলিতে, প্রাচীন নগরী তিহুয়ানাকোতে যাওয়া হল না ঘিরে আসা আঁধারের কারণে, কিন্তু ড্রাইভার জানালো বিশাল দেশটির যে গ্রামে মানুষ চে-কে স্তব্ধ করে বিপ্লবী চে-কে অমর করে দিয়েছিল ঘাতকের বুলেট, তা আমাদের আয়ত্বের মাঝেই, আমরা কি যাব সেখানে পরদিন? মেক্সিকান ইসাইয়াস সেরণা আমার দিকে বোবা দৃষ্টি মেলে তাকায়, মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা না করে বলি- না, আমি এখনও প্রস্তুত হতে পারি নি, আমার অনবরত দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি প্রস্তত না সে ঘরটি দেখার জন্য যেখান ব্যক্তি চে-কে হত্যার পর তাঁর লাশের প্রদর্শনী করা হয়েছিল আবালবৃদ্ধবণিতার জন্য।
ল্যাতিন আমেরিকায় অবস্থানের পলে পলে চে-কে খুঁজে পাবার চেষ্টা করে সফল হয়েছি অনেকবার, তাঁর চিন্তা –চেতনা, লড়াইয়ের স্পিরিট টের পেয়েছি বাংলাদেশ ঢাকাতেও সমাজের চলমান অবিচার, বৈষম্য দেখে। কিন্তু আমি তখনও প্রস্তত হই নি।
কিউবা সিয়েন ফুয়েগোস শহর থেকে মানতানজাস নগরীতে যাওয়া হবে বাষ্পশক্তিচালিত ট্রেনে চেপে, সবাই-ই জানাল দুই ঘণ্টা ঘুরে সান্তা ক্লারা দেখে যাও, এই সেই শহর যা চে নিজের হাতে যুদ্ধ করে অবমুক্ত করেছিলেন, তাঁর কিউবান স্ত্রী অ্যালাইদা এই শহরেরই মেয়ে, এইখানেই সেই সুবিখ্যাত চে গ্যেভারা মনুমেন্ট অবস্থিত, যার নিচেই তাঁর দুই হাত বিহীন দেহাবশেষ সমাহিত করা হয়েছে বছর কয়েক আগে, দেখা যাও।
সাবেক প্রেমিকা আমার চোখের দিকে তাকায়, সে জানে আমার জীবনে চে-র গুরুত্ব, সমাজতন্ত্র পছন্দ না করলেও মোটরসাইকেল ডায়েরি পড়ে চে-র ভক্ত হয়ে গেছে সেই ইউরোপিয়ান তরুণীও। জানি না আর কোনদিন কিউবা আসা হবে কিনা, চে-র সমাধির সামনে দাঁড়াবার সুযোগ আর আসবে কিনা, কিন্তু আমি বিড়বিড় করে বলি- না না, আমি এখনও প্রস্তুত হতে পারি নি, আমার অনবরত দেরি হয়ে যাচ্ছে।
চে- মৃতদেহের সামনে দাঁড়াবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারি নি এখনো, কিন্তু মানুষটিকে বোঝা চেষ্টা করেই যাচ্ছি নিয়ত, যার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।
( আজ চে-র জন্মদিন, যদি কোনদিন তাকে নিয়ে লেখার শক্তি সঞ্চয় করতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই লিখব, অন্তত তাঁর পথে ল্যাটিন আমেরিকায় ভ্রমণের চেষ্টা করবই, জানার চেষ্টা করব কিসের তাড়ায় রোজারিওর এক তরুণ ডাক্তার চে হয়ে উঠেছিলেন। )
চে-র উপরে পুরনো কিছু লেখা-
চে গ্যেভারার সবচেয়ে বাস্তবঘেঁষা তথ্যবহুল জীবনীগ্রন্থ - এক বৈপ্লবিক জীবন
মন্তব্য
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
শোষণের অবসান ঘটুক।
facebook
"শোষণের অবসান ঘটুক।"
কী করে?
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বড়ই কঠিন ব্যাপার, কিন্তু আশা নিয়েই তো মানুষ বেঁচে থাকে।
facebook
'চে' আসলে যা চাননি, তিনি তাই হয়ে গিয়েছেন। টিশার্টে আর বেসবলক্যাপের উপর চে'র ছবি দেখে দেখেই মানুষ জেনেছে, এই লোকটা 'চে গ্যেভারা' কিছু একটা করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন -এইটুকুই। (আমিও খুব বেশি জানতাম না)। ফ্যাশন আইকন হিসেবেই ওঁকে বেচে থাকতে হচ্ছে একটা প্রজন্মের মাঝে।
facebook
চে'কে নিয়ে আপনার সব পুরোনো লেখাগুলোও আবার পড়ে ফেললাম।
গোঁসাইবাবু
ধন্যবাদ
facebook
আমাদের একজন চে'র বড্ড প্রয়োজন।
চে এর জন্মদিন চলে গেলো আজ!
বিস্ময়ে ভাবি, একজন মানুষ, ঠিক মৃত্যুর আগে কী অসীম সাহসে বলে যায় আততায়ীকে, তুমি শুধু একজন মানুষকেই খুন করবে, তার আদর্শ কে নয়।
ধন্যবাদ, অণুদা, চে র সম্পর্কে জানার ইচ্ছা বহুকাল আগের। কয়েকটা উপকারি বই সাজেস্ট করবেন, উপকৃত হতাম।
ধন্যবাদ, অণুদা। চে র সম্পর্কে জানার ইচ্ছা বহুকাল আগের। কয়েকটা বই সাজেস্ট করলে উপকৃত হতাম।
- রাত্রির ধ্রুবতারা
নতুন মন্তব্য করুন