ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেব বেশ উঁচুনিচু শহর, সেই সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত অগণিত টিলার মাথায় বসানো জাদুঘরে, গির্জায়, বাগানের ঘুরে যে খিদে পেল তা আর কোন পানশালায় ফাঁকিবাজি ভাজাভুজিতে সারবার নয়, তাই শুরু হল রেস্তোরাঁর সন্ধান। সে নিয়ে অবশ্য চিন্তার কিছু নেই, ক্রোয়াট বন্ধু মণিকা এই ব্যাপারে বেশ জ্ঞান রাখে, তাঁর সাথে যোগ দিয়েছে চাচাত ভাই দ্রাচেক ও তাঁর কিশোর ছেলে। কয়েকটা রেস্তোরাঁ ঘুরে পছন্দ না হওয়ায় বেরিয়ে এসে শহরকেন্দ্রে চোখে পড়ল বিশাল এক বিজ্ঞাপন- ডেভর সুকার ফুটবল একাডেমীর।
ডেভর সুকার, সেই বিখ্যাত ফুটবলার, যে কিনা ১৯৯৮এর বিশ্বকাপ ফুটবলে জিতে নিয়েছিল গোল্ডেন বুট, ক্রোয়েশিয়া উঠে ছিল সেই বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে, সেই সুকার এখন ক্রোয়াট কিশোরদের ফুটবল শেখাতে ব্যস্ত তাঁর একাডেমীর মাধ্যমে, যার আছে একাধিক শাখা। নিবিষ্ট চিত্তে বিজ্ঞাপনটি দেখছি খেয়াল করে মণিকা বলল, ওহ, তুমি তো ফুটবলের পাগল, তাহলে না হয় বোবান রেস্তোরাঁতেই দুপুরের ভোজ সারা যাক।
বোবান রেস্তোরাঁ!
৯৮র বিশ্বকাপে ৩য় স্থান পাওয়া ক্রোয়েশিয়ার ক্যাপ্টেনের নাম ছিল জোভনিমির বোবান, সে-ই নাকি এই রেস্তোরাঁর মালিক! ফুটবলার হিসেবে সাবেক যুগোস্লাভিয়া এবং বর্তমান ক্রোয়েশিয়ায় , ও ক্লাব ফুটবলে এসি মিলানে উজ্জল ক্যারিয়ার কাটানো বোবান এখন ফুটবল বিশ্লেষক হিসেবে ইতালিয়ান ও ক্রোয়াট টিভিতে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্য অনেক কিছুর সাথেও জড়িত এই রেস্তোরাঁ ব্যবসাতেও। দ্রাচেক সাথে সাথে বলে উঠল, এই এলাকাতে এটাই সেরা রেস্তোরাঁ, খুবই স্বাস্থ্যসম্মত, এবং দামও খুব বেশি নয়, কাজেই গন্তব্য ঠিক করা হল সেদিকেই।
ইলশেগুড়ির বৃষ্টির মাঝে যাওয়া হল সেখানে, শহরের পর্যটক এলাকাতেই অবস্থান, প্রধান ফটকে বেশ বড় করে লেখা বোবান, প্রবেশের পরেই বেশ প্রশস্ত কামরা চোখে পড়ে, এক পাশে দারুণ সব কেক-পেস্ট্রির সমাহার, এক ফুট উঁচু রেলিং ঘেরা পাটাতনে চেয়ার-টেবিল।
তাঁর মধ্য দিয়েই আমরা চললাম ভেতরের কামরায় যেখানে গরমাগরম খাবার সার্ভ করা হয়। রুচিশীল পরিবেশ, উৎকট করে কিছু সাজানো নেই, যেমন নেই বোবান বা ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল দলের নানা স্মারকও। সবাই-ই খানিকটা কাক ভেজা দেখে এক কর্মচারী মাথা মুছবার তোয়ালে এবং শরীর গরমের জন্য ওয়াইনের খোলা বোতল এনে চোখ মটকে বললেন, অচিরেই ভাল বোধ করবে!
এই ফাঁকে আমাদের জানা হয়ে গেছে জনাব বোবান আজ এখানে আসেন নি, মানে যে কোন মুহূর্তে আসতেও পারেন। আবার নিজের একটির সাথে আরও চারটি সন্তান দত্তক নেওয়া পাঁচ বাচ্চা নিয়ে বড়ই পেরেশান থাকে বোবান পরিবার, কাজে কাজেই বৃষ্টিবিধুর দিনে কতটা আসার তাদিগ অনুভব করবেন তা বলা মুস্কিল।
যা হোক, বিকেলে এক গাদা পরিকল্পনা করা আছে নতুন জিনিস দেখার, তাই চটজলদি মেন্যু দেখে মণিকা আমার অনুরোধে কিছু ক্রোয়াট খাবারের অর্ডার দিল, পানীয় তো টেবিলেই আছে এন্তার। মাংসের স্যুপে ডোবানো আটা দিয়ে তৈরি ছোট ছোট টুকরোর খাবার আসলো প্রথমে, দেখতে স্বল্প কিন্তু বেশ ভারী খাবার, চিবিয়ে চিবিয়ে গলাধঃকরণ করার পর দুই গ্লাস জল যোগ করে বোঝা গেল কয়েক ঘণ্টার রসদ হয়ে গেল! সাথে ছিল স্থানীয় সস দেয়া রুটি।
মণিকা চেয়েছিল সী ফুড, ক্রোয়েশিয়ার বিশাল সমুদ্রসীমা যেমন ঝকঝকে সাদা বালির সৈকতের জন্য বিখ্যাত, তেমনি তা যোগান দেয় তরতাজা রুপালি ফসল। অক্টোপাসের শুঁড়, স্কুইডের কাটা অংশ, মাছের গুড়ো, কুচো চিংড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশ খেতে।
শেষে ধূমায়িত কফি, আগামী ক-ঘন্টা ঘুম তাড়ানোর জন্য ক্যাফেইনের রসদ। এর মাঝে বোবান বা ক্রোয়াট কোন ফুটবল তারকার দর্শন মিলল না, শুনেছি বোবান প্রায়ই টেনিস খেলে গোরান ইভানোসেভিচের সাথে, তাঁরও টিকিটির দেখা নেই। এদিকে সব কিছু থেমে গেলেও চলছে ঘড়ির কাটা, তাই বোবানের উদ্দেশ্য টোস্ট করে আমরা আবার জাগরেব দর্শনে।
Croatia is the reason I live. I love my country as I love myself. I would die for Croatia.
— Zvonimir Boban
( কদিন আগে ফেসবুকে চালু হয়েছে বাংলায় ক্রীড়া বিষয়ক এক দারুণ পেজ, প্যাভিলিয়ন ।
এই পোস্ট প্যাভিলিয়নের পিছনের কাণ্ডারি সেই তরুণ ক্রীড়াপাগলদের জন্য। )
মন্তব্য
হুম। খিদে পেয়ে গেলো যে!
আমারও
facebook
অণুদা, ছবিগুলো একটু বড় করে এম্বেড করুন না, দয়া করে (মামাবাড়ির আব্দারের ইমো)
পুরোনো ওয়ার্ল্ড কাপের কথা মনে পড়ে গেল।
শুভেচ্ছা
ফ্লিকারের কিছু একটা নতুন কারিকুরি করা হয়েছে, ছবি এমন আসছে !
facebook
ছবি সংযুক্তিতে কিছুটা নতুনত্ব আনা হয়েছে। তবে খুব ছোট হওয়ায় ছবিগুলোর পূর্ণ উদ্ধার সম্ভব হয়নি অনেক ক্ষেত্রে।
ক্রোয়েশিয়ার কথা মনে এলেই সুকারের ছবি ভেসে উঠে চোখের সামনে, সেই '৯৮ এর বিশ্বকাপ হতেই, একজন ফুটবলারও কিভাবে একটি জাতির সমার্থক হয়ে উঠতে পারেন, এ তারই নমুনা!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
ছবির ব্যাপারটা বুঝছি না, এমন হচ্ছে কেন?
facebook
ঐ মিয়া, রাজশাহীতে বসে বসে জাগরেবের পোষ্ট দ্যান - আপনে তো দেখি-----। (খিদা লাগসে ফটুক দেইখা)
____________________________
সামনের মাসে জাগরেব যেয়ে রাজশাহী নিয়ে পোষ্ট দিব, চলবে?
facebook
এমনিতেই খিদে পেয়ে রয়েছে, তাতে আবার এখন পড়লাম এই পোস্ট, কি যে দশা হল আমার!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কিছুমিছু খেয়ে ফেল
facebook
আপনার লেখা বিভিন্ন বিষয় আমাদের জানার পরিধিকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ভ্রমণ কাহিনীগুলো। কারণ আমাদের অনেকেরই পক্ষে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণেের সুযোগ কম। আশা করি আপনার এই চেষ্ঠা অব্বাহত থাকবে। ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন।
-এ এস এম আশিকুর রহমান অমিত
অনেক ধন্যবাদ অমিত ভাই, আপনার পরের লেখার অপেক্ষায় আছি।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন