শকুন দেখলেই জানান আমাদের (০১৯ ৪১২ ১০৪২২)

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শুক্র, ০১/০৮/২০১৪ - ৯:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_3261

মাত্র ক”দশক আগেই এশিয়াতে ছিল চার কোটি বাংলা শকুন। এখন তাদের সংখ্যা কত জানেন? ভাবছেন নিশ্চয়ই কোটি থেকে এই কয় বছরে আর কতই কমবে? কয়েক হাজার বা লাখ। কিন্তু না, সারা বিশ্বে বাংলা শকুনের বর্তমান সংখ্যা পনের হাজারেরও কম !!

IMG_3156

নব্বইয়ের দশকে শকুনের সংখ্যা এত দ্রুত হ্রাস পেতে থাকলে সবারই টনক নড়ে, যে ভয়ংকর কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে আমাদের অজান্তে। যে বিশাল পাখির সংখ্যা সারা বিশ্বে ছিল সবচেয়ে বেশি, বিস্তৃত ডানা মেলা শকুনের মত্ততা দেখা যেত সকল আকাশে, তাঁরা কোন অজানা কারণে ঠাই নিতে থাকল কেবল অতীতের আলোকচিত্রে।

IMG_2906

IMG_2852

অবশেষে এক মার্কিন পশুচিকিৎসক সমস্ত উপাত্ত ঘেঁটে রায় দিলেন এত দ্রুত গতিতে সংখ্যা নিশ্চিহ্ন হতে থাকলে তার সাথে নিশ্চয়ই কোন না কোন কেমিক্যাল ব্যাপারসাপার আছে। আরও পরে আবিস্কার হয় যে গবাদিপশুর ঔষধ হিসেবে ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা অবস্থায় সেই পশু মারা গেলে শকুন যদি তার মাংস খায়, তাহলে শকুনের কিডনি অতি দ্রুত অকেজো হয়ে পড়ে এবং শকুনটি মারা যায়।

IMG_2847

এটি জানার পরপরই ভারতসহ একাধিক দেশে ডাইক্লোফেনাক-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৬ সালে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের একান্তিক চেষ্টায় সেটি নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশেও এরও ৪ বছর পড়ে ২০১০এর শেষের দিকে। তাহলে কী আমরা ধরে নিব বেঁচে থাকা ১৪,০০০ শকুন এখন নিরাপদ?

IMG_6609

IMG_3362

অবশ্যই না, এখনো বাজারে চালু আছে ভয়ংকর ড্রাগ কিটোপ্রফেন, যা শকুনের দেহে ডাইক্লোফেনাকের মতই ক্ষতিকর। শকুনের মত অতি উপকারি পাখিকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের আরও দ্রুত অনেক অনেক কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
শকুন না থাকায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে-

1.3
(রাজ শকুন, ছবিটি ভারতে তোলা )

1.2
(হিমালয়ের সবচেয়ে বড় পাখি হিমালয়ী গৃধিনী)

অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস শকুন খেলে তার পাকস্থলীতে সেই জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এখন তো আর শকুন নেই তেমন, তাহলে? কাক আর কুকুর ( ক্ষেত্রে বিশেষে অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে মানুষও) মড়া গরুর মাংস খেলেও অ্যানথ্রাক্স জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা তাদের পাকস্থলীর নেই, কাজেই আবার ফিরে আসছে গবাদিপশুর জগতের ভয়াবহ রোগ অ্যানথ্রাক্স! এবং শকুনের অভাবে আরও কী কী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়বে আমাদের পরিবেশে তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। এবং সেই সাথে বুনো পশু বাহিত যে কোন রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে শকুনের অভাবে, কারণ পরিবেশ থেকে মৃতদেহ সরাতে শকুনের কোন বিকল্প নেই।

01-3

শকুন রক্ষায় বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আই ইউ সি এন (IUCN) একটি বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের জানা দরকার দেশের কোথায় কোথায় কতটি শকুন আছে। এবং নিষিদ্ধ ঔষধ ডাইক্লোফেনাক এখন বিক্রি হচ্ছে কিনা। আপনিও সংযুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে, আকাশে উড়ন্ত বা মড়া গরু ভক্ষণরত শকুন দেখলেই জানান এই নম্বরে ০১৯ ৪১২ ১০৪২২।

IMG_3314

আপনার দেয়া তথ্য ভূমিকা রাখতে পারে এই অসাধারণ পাখিটি সংরক্ষণে, ধন্যবাদ।

(পোস্টে ব্যবহৃত সকল ছবি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হকের তোলা এবং তাঁর অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হল। ছবি পুনঃব্যবহার করতে চাইলে উনার অনুমতি লাগবে।

1.1

ছবিতে ৩ ধরনের শকুন দেখানো হলেও মূলত সমস্ত তথ্য ও ছবি দেওয়া হয়েছে White-rumped Vultureএর, যার বৈজ্ঞানিক নাম Gyps bengalensis এবং সেই মোতাবেক বাংলা নাম রাখা হয়েছে বাংলা শকুন। )

IMG_3551

IMG_3442


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

বাঘ ছাড়া আর কোন বন্য প্রানী নিয়ে শুমারি হয় দেশে?

তারেক অণু এর ছবি

অনেক কিছু নিয়েই হয়, পাখি নিয়ে আমরাই করি।

মন মাঝি এর ছবি

চলুক
ওয়েল্কাম ব্যাক! কৈ ছিলেন এদ্দিন? চিন্তিত

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

এই তো। আশে পাশেই চোখ টিপি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, শকুন দেখলামতো। আপনার এই পোস্টের ছবিতে তবে বাস্তবে অনেককাল শকুন দেখার সুযোগ হয়নি।

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

শকুন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম। আমি আমার সারা জীবনে বাস্তবে কোন শকুন দেখিনি। কখনো কোথাও দেখলে আপনাকে জানাব। শকুনের সাথে পরিচয় হয় আমার Kevin Carter এর ছবি দেখে। তাই এই পাখিটাকে আমি কখনো পছন্দ করতাম না। যাক প্রকৃতিতে প্রতিটি প্রাণীই কোন না কোন উপকারের জন্যই সৃষ্টি হয়।

ফাহিমা দিলশাদ

তারেক অণু এর ছবি

প্রতিটি প্রাণীরই নিজের ভূমিকা আছে, ৩৫০ কোটি বছর ধরে প্রাণ তো আর এমনি এমনি বিবর্তিত হচ্ছে না,

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি
গান্ধর্বী এর ছবি

শকুন শুনলেই কেমন ভয় ভয় লাগে। কিন্তু পরিবেশের উপর কত দরকারি ভূমিকা এর!

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

তারেক অণু এর ছবি

ভয় লাগার কারণ আমাদের শুনে আসা ভুল বিশ্বাস আর বাগধারা।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম্বারটা সেভ করে রাখলাম। দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গেই জানাবো।

গোঁসাইবাবু

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই

Sohel Lehos এর ছবি

এক সময় তালগাছে বসে থাকা শকুন দেখেছি। সেই এক সময়টা ছিল আজ থেকে ১৮ বছর আগে। এর পর শকুন দেখেছি কিনা মনে পরেনা।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

তারেক অণু এর ছবি

খুবই কমে গেছে

অতিথি লেখক এর ছবি

কতো অজানারে!
চলুক

-দেব প্রসাদ দেবু

তারেক অণু এর ছবি

হু

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিই দেখলাম। জীবনে আর দেখা হইলোনা শকুন। যে হারে পাখি কমতেছে তাতে কয়দিন পরে কাকের জন্যও বেবি কেয়ার খুলতে হয় কি না কে জানে ইয়ে, মানে...

--------------------------
আশফাক(অধম)

তারেক অণু এর ছবি

হয়ত

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আচ্ছা, গৃধিনী তো হিমালয়ের শকুন। এরা শীতকালে সমতলে আসে, আবার গ্রীষ্মে হিমালয়ে ফিরে যায়। সেই মহাভারতের যুগেই দেখা যায় শকুনি এবং গৃধিনী আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখিত হয়েছে। অত আগেই কি মানুষ জানতে পেরেছিল যে গৃধিনী মুলতঃ পরিযায়ী শকুন? না হলে তো তদেরও শকুনই বলার কথা।

তারেক অণু এর ছবি

গৃধিনী হচ্ছে শকুনের সংস্কৃত নাম !

আমরা এখন হিমালয়ের শকুনের জন্য নামটি ব্যবহার করছি। আগের মানুষেরা সেটা জানলেও কোথাও লিপিবদ্ধ করা নেই সেই তথ্য।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

গৃধিনী হচ্ছে শকুনের সংস্কৃত নাম

তাই কি? মহাভারতে কিন্তু শকুনি এবং গৃধিনী আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখিত হয়েছে।

হিমু এর ছবি

বিবিসির একটা চমৎকার ডকুমেন্টারি আছে শকুনের ওপর। যদিও মূলত আফ্রিকার শকুনের ওপর ফোকাস করা।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

যাক অনেক দিন পর শকুন আপনাকে সচলে টেনে আনল।
চলুক

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

তারেক অণু এর ছবি

নাহ, আমি তো ছিলামই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।