মাত্র ক”দশক আগেই এশিয়াতে ছিল চার কোটি বাংলা শকুন। এখন তাদের সংখ্যা কত জানেন? ভাবছেন নিশ্চয়ই কোটি থেকে এই কয় বছরে আর কতই কমবে? কয়েক হাজার বা লাখ। কিন্তু না, সারা বিশ্বে বাংলা শকুনের বর্তমান সংখ্যা পনের হাজারেরও কম !!
নব্বইয়ের দশকে শকুনের সংখ্যা এত দ্রুত হ্রাস পেতে থাকলে সবারই টনক নড়ে, যে ভয়ংকর কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে আমাদের অজান্তে। যে বিশাল পাখির সংখ্যা সারা বিশ্বে ছিল সবচেয়ে বেশি, বিস্তৃত ডানা মেলা শকুনের মত্ততা দেখা যেত সকল আকাশে, তাঁরা কোন অজানা কারণে ঠাই নিতে থাকল কেবল অতীতের আলোকচিত্রে।
অবশেষে এক মার্কিন পশুচিকিৎসক সমস্ত উপাত্ত ঘেঁটে রায় দিলেন এত দ্রুত গতিতে সংখ্যা নিশ্চিহ্ন হতে থাকলে তার সাথে নিশ্চয়ই কোন না কোন কেমিক্যাল ব্যাপারসাপার আছে। আরও পরে আবিস্কার হয় যে গবাদিপশুর ঔষধ হিসেবে ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা অবস্থায় সেই পশু মারা গেলে শকুন যদি তার মাংস খায়, তাহলে শকুনের কিডনি অতি দ্রুত অকেজো হয়ে পড়ে এবং শকুনটি মারা যায়।
এটি জানার পরপরই ভারতসহ একাধিক দেশে ডাইক্লোফেনাক-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৬ সালে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের একান্তিক চেষ্টায় সেটি নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশেও এরও ৪ বছর পড়ে ২০১০এর শেষের দিকে। তাহলে কী আমরা ধরে নিব বেঁচে থাকা ১৪,০০০ শকুন এখন নিরাপদ?
অবশ্যই না, এখনো বাজারে চালু আছে ভয়ংকর ড্রাগ কিটোপ্রফেন, যা শকুনের দেহে ডাইক্লোফেনাকের মতই ক্ষতিকর। শকুনের মত অতি উপকারি পাখিকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের আরও দ্রুত অনেক অনেক কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
শকুন না থাকায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে-
(হিমালয়ের সবচেয়ে বড় পাখি হিমালয়ী গৃধিনী)
অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস শকুন খেলে তার পাকস্থলীতে সেই জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এখন তো আর শকুন নেই তেমন, তাহলে? কাক আর কুকুর ( ক্ষেত্রে বিশেষে অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে মানুষও) মড়া গরুর মাংস খেলেও অ্যানথ্রাক্স জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা তাদের পাকস্থলীর নেই, কাজেই আবার ফিরে আসছে গবাদিপশুর জগতের ভয়াবহ রোগ অ্যানথ্রাক্স! এবং শকুনের অভাবে আরও কী কী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়বে আমাদের পরিবেশে তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। এবং সেই সাথে বুনো পশু বাহিত যে কোন রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে শকুনের অভাবে, কারণ পরিবেশ থেকে মৃতদেহ সরাতে শকুনের কোন বিকল্প নেই।
শকুন রক্ষায় বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আই ইউ সি এন (IUCN) একটি বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের জানা দরকার দেশের কোথায় কোথায় কতটি শকুন আছে। এবং নিষিদ্ধ ঔষধ ডাইক্লোফেনাক এখন বিক্রি হচ্ছে কিনা। আপনিও সংযুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে, আকাশে উড়ন্ত বা মড়া গরু ভক্ষণরত শকুন দেখলেই জানান এই নম্বরে ০১৯ ৪১২ ১০৪২২।
আপনার দেয়া তথ্য ভূমিকা রাখতে পারে এই অসাধারণ পাখিটি সংরক্ষণে, ধন্যবাদ।
(পোস্টে ব্যবহৃত সকল ছবি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হকের তোলা এবং তাঁর অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হল। ছবি পুনঃব্যবহার করতে চাইলে উনার অনুমতি লাগবে।
ছবিতে ৩ ধরনের শকুন দেখানো হলেও মূলত সমস্ত তথ্য ও ছবি দেওয়া হয়েছে White-rumped Vultureএর, যার বৈজ্ঞানিক নাম Gyps bengalensis এবং সেই মোতাবেক বাংলা নাম রাখা হয়েছে বাংলা শকুন। )
মন্তব্য
বাঘ ছাড়া আর কোন বন্য প্রানী নিয়ে শুমারি হয় দেশে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অনেক কিছু নিয়েই হয়, পাখি নিয়ে আমরাই করি।
facebook
ওয়েল্কাম ব্যাক! কৈ ছিলেন এদ্দিন?
****************************************
এই তো। আশে পাশেই
facebook
হ্যাঁ, শকুন দেখলামতো। আপনার এই পোস্টের ছবিতে তবে বাস্তবে অনেককাল শকুন দেখার সুযোগ হয়নি।
facebook
শকুন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম। আমি আমার সারা জীবনে বাস্তবে কোন শকুন দেখিনি। কখনো কোথাও দেখলে আপনাকে জানাব। শকুনের সাথে পরিচয় হয় আমার Kevin Carter এর ছবি দেখে। তাই এই পাখিটাকে আমি কখনো পছন্দ করতাম না। যাক প্রকৃতিতে প্রতিটি প্রাণীই কোন না কোন উপকারের জন্যই সৃষ্টি হয়।
ফাহিমা দিলশাদ
প্রতিটি প্রাণীরই নিজের ভূমিকা আছে, ৩৫০ কোটি বছর ধরে প্রাণ তো আর এমনি এমনি বিবর্তিত হচ্ছে না,
facebook
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
facebook
শকুন শুনলেই কেমন ভয় ভয় লাগে। কিন্তু পরিবেশের উপর কত দরকারি ভূমিকা এর!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
ভয় লাগার কারণ আমাদের শুনে আসা ভুল বিশ্বাস আর বাগধারা।
facebook
নাম্বারটা সেভ করে রাখলাম। দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গেই জানাবো।
গোঁসাইবাবু
অবশ্যই
facebook
এক সময় তালগাছে বসে থাকা শকুন দেখেছি। সেই এক সময়টা ছিল আজ থেকে ১৮ বছর আগে। এর পর শকুন দেখেছি কিনা মনে পরেনা।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
খুবই কমে গেছে
facebook
কতো অজানারে!
-দেব প্রসাদ দেবু
হু
facebook
ছবিই দেখলাম। জীবনে আর দেখা হইলোনা শকুন। যে হারে পাখি কমতেছে তাতে কয়দিন পরে কাকের জন্যও বেবি কেয়ার খুলতে হয় কি না কে জানে
--------------------------
আশফাক(অধম)
হয়ত
facebook
আচ্ছা, গৃধিনী তো হিমালয়ের শকুন। এরা শীতকালে সমতলে আসে, আবার গ্রীষ্মে হিমালয়ে ফিরে যায়। সেই মহাভারতের যুগেই দেখা যায় শকুনি এবং গৃধিনী আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখিত হয়েছে। অত আগেই কি মানুষ জানতে পেরেছিল যে গৃধিনী মুলতঃ পরিযায়ী শকুন? না হলে তো তদেরও শকুনই বলার কথা।
গৃধিনী হচ্ছে শকুনের সংস্কৃত নাম !
আমরা এখন হিমালয়ের শকুনের জন্য নামটি ব্যবহার করছি। আগের মানুষেরা সেটা জানলেও কোথাও লিপিবদ্ধ করা নেই সেই তথ্য।
facebook
তাই কি? মহাভারতে কিন্তু শকুনি এবং গৃধিনী আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখিত হয়েছে।
বিবিসির একটা চমৎকার ডকুমেন্টারি আছে শকুনের ওপর। যদিও মূলত আফ্রিকার শকুনের ওপর ফোকাস করা।
ধন্যবাদ
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
যাক অনেক দিন পর শকুন আপনাকে সচলে টেনে আনল।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
নাহ, আমি তো ছিলামই
facebook
নতুন মন্তব্য করুন