শীতের শুরু হয়েছে শরতের আগুন রূপকে হিমে মুড়ে। পাইন আর স্প্রুস বাদে বাকী সব গাছ ন্যাড়া হয়ে গেছে বেশ কসপ্তাহ আগে, তাদের পাতাহীন ডালে আলতো তুষার জমছে রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে, কিন্তু মণ মণ বরফ এসে তখনও চাপেনি গাছের কাঁধে আর মাটির বুকে। গাড়ী নিয়ে চলেছি শীতের হেলসিংকিতে কাজের ফাঁকে। তখন আঁধারের রাজ্য, বরফশুভ্রতা এসে আলোকিত করার অনেক আগেই পাতালের আঁধার এসে কালিমালিপ্ত করে উত্তরের বিকাল, সন্ধ্যে, রাত, দিন। গাড়ী চালানো অবস্থাতেই পাখি খোজার ও দেখার একটা ইন্দ্রিয় মতো তৈরি হয়ে গেছে বলা চলে অনেক বছরের অভ্যাসে, সেই মতেই মনে হল সরু রাস্তাটির বামের এক গাছে মাঝামাঝি উচ্চতায় জবুথুবু মেরে কিছু একটা বসে আছে। চট করে ব্রেক কষে ভালো মতো তাকাতেই নিশ্চিত হলাম কোন পালকাবৃত নিশাচর বন্ধু জাঁকিয়ে বসেছে শিকার ধরার ফাঁকে বিশ্রামের জন্য। সাথে সাথে গাড়ী কোনমতে একদিকে পার্ক করে আস্তে আস্তে এগোলাম গাছটির দিকে, জীবনে প্রথম বারের মত ইয়া বড় বড় কানওয়ালা পুরুষ শিঙেল প্যাঁচার (Long-eared Owl) দেখা মিলল প্রকৃতির মাঝে, ভাল মত ঠাহর না করলে মনে হয় বিশাল দুটো শিঙ যেন জুড়ে আছে পাখিটি কপাল।
পাতাশুন্য লিকলিক ছড়ানো ডালপালায় তুষারের আলতো অস্তিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ গাছটি, তারই এক ডালে শিঙের মত কান খাড়া করে বিশালদেহী প্যাঁচা ! একেবারে পটে আঁকা ছবির মত দৃশ্য, কিন্তু জাদুমুহূর্তের তখনও বাকী ছিল। গুটি গুটি এগিয়ে যেই না গাছটির উলটো পাশে দাঁড়িয়েছি, আমাকে চমকে দিয়ে, মুগ্ধতার সাগরে ভাসিয়ে, অজস্র চকচকে অনুভূতির তীরে বিদ্ধ করে প্যাঁচার ঠিক পেছনেই যেন ভেসে উঠল এত্ত বড় একটা চাঁদ!
এর চেয়ে সুন্দর, জাদুময়, রহস্যে ঘেরা দৃশ্যপট আর কী হতে পারে ! ( আসলে চাঁদ ছিল পিছনের ভবনের আড়ালে ঢাকা, কিন্তু যেই আমি গাড়ী থেকে বেরিয়ে ফাঁকা জায়গায় গেছি প্যাঁচা দর্শনে, সেটিও সুন্দর করে ঘোমটা থেকে বেরিয়ে জন্ম দিয়েছে সেই অপার্থিব দৃশ্যাবলীর সমন্বয়।)
আমার হাতে তখন ক্যামেরা ছিল না, থাকলেও হয়ত এমন দৃশ্য ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দী করা সম্ভব হত না। তাই ডুবে গেলাম ক্ষণিকের জন্য নির্জন রাস্তায়, প্যাঁচা, চাঁদ, গাছ, জাদুর মাঝে।
(আমরা যাইনি মরে আজও –
তবু কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়
অনেক দৃশ্যের সময় ক্যামেরা থাকে না হাতে, অসংখ্য মুহূর্ত কেবল মনের পর্দায় দাগ কেটে যায় কিন্তু অন্যের সাথে ছবি মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় না উপভোগের আনন্দ। ভাবলাম সেই ছবিহীন অপূর্ব সুন্দরকে অল্প কথায় ব্লগে প্রকাশ করি একে একে।
কী বলেন? )
মন্তব্য
অন্য রকম একটা অনুভূতির কথা বর্ণনা করলেন বেশ চমৎকারভাবে। অনেক সময়ই শুধু দেখতে মন চায় কেবল। আর এই ভাবটা কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই এনে দিতে পারে। কেউ আইফেল টাওয়ার দেখে বলবে না,"আমি শুধু দেখব ছবি তুলব না -আমি বাকরূদ্ধ!" কিন্তু এটা হতে পারে কোন সরোবরের পাশে দাঁড়িয়ে, কোন অসীম বিস্তারী শস্য ক্ষেতে দাঁড়িয়ে, কোন বনফুলের সামনা সামনি পড়ে গিয়ে।
ভালো থাকুন, অণু ভাই।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ। আইফেল যেয়ে আমিও বলেছিলাম ছবি তুলব না, উঠব না ! কোনটাই হয় নি যদিও !
facebook
আপনার লেখাটা পড়েই কয়েকদিন আগে দেখা 'সিক্রেট লাইফ অব ওয়াল্টার মিটি' সিনেমার দুনিয়াখ্যাত ফটোগ্রাফার শন ও'কনরের কথা মনে পড়ল। সে অনেক ঝক্কি পেরিয়ে তুষার চিতা দেখার জন্য পাহাড়ের উপরে উঠে বসে ছিল। চিতা বের হয়ে আসার পর যখন মিটি বলল, "কি ব্যাপার ছবি তুলবেন না?" তখন, শন জবাব দিয়েছিল, "অনেক সময় এত সুন্দর লাগে যে দৃশ্যটা কেবলই দেখি আর সময়টা বয়ে যেতে দেই। ঐ ছবিটাকে আমি আর ধরতে চাই না"
শুভেচ্ছা
সিনেমাটা দেখতে চাই
facebook
দেখে ফেলুন, পস্তাবেন না । যদিও বেন স্টিলারের ছবি শুনে প্রথমে কমেডি মনে হয়,
কিন্তু, ছবিটা আসলেই অন্যরকম। স্টিলার তার জীবনের সেরা অভিনয় করেছে বলে আমার মনে হয়েছে।
দৃশ্যায়ন আর ফটোগ্রাফারের পৃথিবীময় ছোটাছুটিতে ভরা জীবন দুটোই ভাল লেগেছে। ( আপনার কথাও অবশ্য মনে পড়েছিল মুভিটার ফটোগ্রাফার শন ও'কনর-কে দেখে )
একটা মুভি রিভিউ লিখে ফেলারও ইচ্ছা আছে এই মুভিটা নিয়ে।
কাজেই, আমি স্পয়েল করে দেবার আগে দেখে ফেলুন
শুভেচ্ছা
facebook
"অনেক সময় এত সুন্দর লাগে যে দৃশ্যটা কেবলই দেখি আর সময়টা বয়ে যেতে দেই। ঐ ছবিটাকে আমি আর ধরতে চাই না" - আমি এখন বেশীর ভাগ সময় এই ভাবনাতেই থাকি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এটা একটা অসাধারণ সিনেমা। সিনেমাটা দেখার পরে খোমাখাতায় একটা স্ট্যাটাস মারছিলাম, সেইটা এইখানে পাবলিসিটি করার লোভ সামলাইতে পারলাম না।
"'Genug geträumt, jetzt wird erlebt'- অনেক ছোটবেলার একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যাদের দ্বারস্থ হতে হয়েছে, তাদের মূল মটো এটা। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, 'বহুদিন ধরে গড়েছো তুমি স্বপ্নেরই ডালা, হোক শুরু এবার সেই স্বপ্ন পূরণের পালা'।
সিনেমা তো প্রায়ই দেখি, কিন্তু এতোটা তৃপ্তি নিয়ে শেষ কবে একটা সিনেমা দেখে বের হইছি, মনে করতে পারি না। এন্ড ক্রেডিটের একেবারে শেষ লাইনটা পর্যন্ত চেয়ারের সাথে সেঁটে বসেছিলাম এক অদ্ভুত ভালোলাগা নিয়ে। এবং আমি একা ছিলাম না...
বলছিলাম, 'দ্য সিক্রেট লাইফ অফ ওয়ালটার মিটি' সিনেমার কথা।"
এইবার তাড়েকানু তড়পাইতে থাকুক... মুহাহাহা
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জবর বলেছেন
এই সিনেমাটা রাতে দেখে শেষ করেছিলাম, পরের দিন আবার দেখেছি -সাধারণত যেটা আমি করি না।
অনু ভাইয়া অনেক ভালো লিখেছেন । যে ছবিটা আপনি তুলতে পারেননি তা আমি মনের চোখে দেখে নিলাম।
ফাহিমা দিলশাদ
শুভেচ্ছা
facebook
চলুক।
facebook
হ্যা চলুক।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কোতি গো দাদা?
facebook
আর কোতি! বাড়িত
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
১ বছরেও রাজশাহীত দেখলাম না, আবার খুইব বুইলছেন, হ্যা !
facebook
ব্যাটে বলে হছে না খো।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
এই বসলাম গুছিয়ে, চলুক তোমার কথা-চিত্র।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
চলবে তাহলে দাদাভাই
facebook
আমার ছেলে বলে,'বেড়াতে বেরোলে সব সময়ই ছবি তোলার ভাবনা ঠিকনা। এই ছবি তোলার ধান্দায় পড়ে অনেক অপার্থিব মুহূর্ত/দৃশ্য হারিয়ে যায় যা কিনা সারা জীবন মনের মাঝে দারুণ একক ছবি হয়ে থাকতে পারতো।' যাহোক আপনার বর্ণনা থেকেই সেই অনুভূতিটা অনুভব করে নেবার চেষ্টা করছি।
ছবি থাকবে ছবি জায়গায়, দেখা দেখার জায়গায়। লেন্স দিয়েও অনেক উপভোগ করা যায়, কিন্তু ছবি না তুললেই যে জীবন বৃথা- এই চিন্তা ঠিক নয়।
facebook
ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ
facebook
হোক জন্ম আরো দৃশ্যকল্পের
আসিতেছে-
facebook
****************************************
facebook
হে অণু তারেক,
ফাঁকি মারিয়া বছর খানেক
অবশেষে আসিল পোস্ট আরেক।
হে উজবেক,
দৃশ্যকল্প আসুক আরো শ'চারেক।
..................................................................
#Banshibir.
এখন থেকে ঢমাঢম
facebook
ছবির জন্য কিছু আপসোস থাকলেও বর্ণনায় মন ভরে গেছে।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ছবি নেই তো তাতে কি - যে বর্ণনা দিয়েছেন ভাইডি - কল্পনা করে নিতে কোনই অসুবিধে হয়নি - ঠিক যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম!!
অট: আপনার নতুন ক্যামেরা কেনার কদ্দুর?
____________________________
সোমবারের আগেই লাগবে-
facebook
আমারও এরকম একটি ঘটনা আছে। সে প্রায় ছয় সাত বছর আগের ঘটনা। কাজ থেকে ফিরতে আমার মাঝ রা্ত হয়ে যেত। যখনকার কথা বলছি তখন শীতকাল। চারদিকে কোমর সমান বরফ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যেখানে গাড়ি পার্ক করতাম তার পাশেই স্কুলের খেলার মাঠ। মাঠের পাশেই উচু ফ্ল্যাগপোল। আমি যখনই বাসায় ফিরতাম তখনই দেখতাম বিশালকায় এক সাদা প্যাঁচা বসা। আমাকে দেখলেই প্যাঁচাটা হুম হুম করে শব্দ করত। আমার কাছে মনে হত সে অভিযোগ করত-"এই তোমার বাসায় ফিরতে এত দেরী হয় কেন?" আমি কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘরে ঢুকে যাতাম। সেই শীতের পর প্যাচাটাকে আর দেখিনি।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
সাদা প্যাঁচা! মান একই স্নো আউল? কেমন আকৃতির? স্নো আউল নাকি হক আউল একটু জানা দরকার। ছবি আছে?
facebook
সাদা প্যাচাই। স্নোয়ি আউলই হবে। বেশ বড়সর। অনেক উত্তর (আলাস্কা কিংবা কানাডা) থেকে উড়ে চলে আসে। উইকি তে যে ছবি দেখলাম তার সাথে বেশ মিলঃ
স্নোয়ি আউল
ছবি তুলি নাই কখনো। হাড় কাঁপানি শীতের মধ্যে (-১৫°সি/২০°সি) ক্যামেরা নিয়া প্যাচার পেছনে দৌড়ানোর মত বুকের পাটা এখনো হয় নাই
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
বাহ, দারুণ একটা অভিজ্ঞতা
facebook
যত গুড় তত মিঠা! এই আপ্তবাক্যটি এই পোষ্টে অত্যন্ত সফল বলা যায়। তারেকের পোষ্ট মানেই ভাল লাগার মিষ্টি অনুভূতি, ছবি থাকলে বেজায় মিষ্টি, ছবি না থাকলেও স্বাদু মিষ্টি।
একটু তেঁতো মিশিয়ে দিচ্ছি-
facebook
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
facebook
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
facebook
গদ্যময় জীবনানন্দ হয়ে উঠছেন দিনদিন
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
facebook
মিয়া ২ দিন তো গেল, পরের পর্ব কই?
অলস সময়
আরেহ আপনারা পোস্ট দিচ্ছেন না, লেখা সরে না নীড়পাতা থেকে-
facebook
ছবি ছাড়াই তো বেশ কল্পদৃশ্যে দেখা হয়ে গেল!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শুভেচ্ছা
facebook
ক্যামেরার ময়ই আপনি শুধু শব্দ দিয়ে ছবি তোলাতেও পারঙ্গম। এরকম ব্লগ মাঝে মাঝেই পোস্ট করবেন অণু ভাই।
গোঁসাইবাবু
facebook
মাথা নষ্ট করা দৃশ্য। লেখার সাথে অনুভব করেই শিহোরিত।
নতুন মন্তব্য করুন