শরতের রাত দীর্ঘ তখন, বাংলাদেশ হলে হেমন্ত বলা যেত, উত্তরের দীর্ঘ সূর্যময় দিন আস্তে আস্তে গেরিলা আক্রমণে দখল করে নিচ্ছে আসন্ন শীতের অন্ধকার। সন্ধ্যা এখন ঝুলে থাকে আলোআধারির আকাশে দীর্ঘক্ষণ, রাত্রি দ্বি-প্রহরেও মৃদু আবছা আলো ফেরারি প্রেতাত্মার মত ঘুরে বেড়ায় ইতস্তত। জার্মান বন্ধু ম্যাথিয়াস গ্যাঞ্জারের সাথে গিয়েছি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে এক ফিনিশ হ্রদে। মাছ ধরায় ও রান্নায় দারুণ দড় ছেলেটা, প্রায়ই বিশাল সব পাইক আর পার্চ মাছ খেলিয়ে তুলে আনে জলের অতল থেকে শিল্পীর দক্ষতায়। কূলকিনারাহীন হ্রদের তীরে পাইন কাঠের ঘাট, যেখানে বসার বেঞ্চিও আছে, তারই একদিকে দুটো ফোল্ডিং চেয়ার পেতে, সোনালি তরলের বোতল খুলে Anna Antti Ahvenia (আনতি হচ্ছে ফিনিশ হ্রদের মাছের দেবতা বা স্পিরিট, যা চাইলে শিকারিদের তুষ্ট করতে পারে মাছ উপহার দিয়ে) বলে দিলাম ছুঁড়ে বড়শি হ্রদের কালো জলে। তখন রাত একটা।
মাছ ধরা পড়েছে টুকটাক, আসলে এমন ট্রিপে আমি সুযোগ পেলেই যেতাম নিসর্গ উপভোগের জন্য, আদিম হ্রদ আর অরণ্যের নিস্তব্ধতার সঙ্গীত শুনতে, মাছ পাওয়া বা না পাওয়ার জন্য না। ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে স্বর্গীয় পরিবেশ, হঠাৎ খেয়াল করে দেখি সারাটা আকাশ যেন কেমন অদ্ভুত নীলাভ হয়ে গেছে, তার সাথে যোগ দিয়েছে সাধারণত কালচে হয়ে থাকা আজকের নীল বন, আকাশের ছায়া পড়ে সমস্ত হ্রদ হয়ে গেছে গাঢ় নীল, আমার বসার চেয়ার, কাঠের ঘাট সবই নীলচে! এবং দারুণ চমকে খেয়াল করে দেখি ম্যাথিয়াসকেও অন্য জগত থেকে আসা নীলমানবের মত দেখাচ্ছে, যার ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি হয়ে গেছে গাঢ় নীল বর্ণের।
তখন রাত তিনটা।
এমন নীল মহাবিশ্ব দেখার অপূর্ব মুহূর্ত আর ঘটে নি কখনো এখন পর্যন্ত।
(আমরা যাইনি মরে আজও –
তবু কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়
অনেক দৃশ্যের সময় ক্যামেরা থাকে না হাতে, অসংখ্য মুহূর্ত কেবল মনের পর্দায় দাগ কেটে যায় কিন্তু অন্যের সাথে ছবি মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় না উপভোগের আনন্দ। ভাবলাম সেই ছবিহীন অপূর্ব সুন্দরকে অল্প কথায় ব্লগে প্রকাশ করি একে একে।
কী বলেন? )
মন্তব্য
অল্প কথার গভীর অনুভূতির বর্ণনার সবটুকুই দারুন উপভগ করলাম। (Y)
সে এক দারুণ দৃশ্য ছিল
facebook
কি আর বলব, বলার কিছু নাই। বরাবরের মত অসাধারণ! (Y)
বিঃদ্রঃ কেউ কি আমাকে বলতে পারেন
এই লেখাটা নীচে যাচ্ছে না কেন? কারণ বার বার আমার মনে হয় নতুন কোন লেখা আসেনি। আর বার বার নীচে গিয়ে খুঁজতে হয়।
ফাহিমা দিলশাদ
লেখাটা স্টিকি করা হয়েছে।
স্টিকি করা হয়েছে পোষ্টটিকে-
facebook
ব্লগবাড়িতে এসে আপনার লেখা প্রথম পড়া। পাশাপাশি সচলেও আমার প্রথম মন্তব্য।
-স্মৃতি কথন ভালো লাগার। দৃশ্যপট চোখের আয়নায় ভাসছে।
আলেখ্যে বন্দীহীন স্মৃতির সাথেই আছি।
নিরন্তর শুভেচ্ছা ভ্রাতা।
শুভেচ্ছা,
প্রথম মন্তব্যে নাম দিলেন না যে?
facebook
১ এর লিঙ্ক থাকবেনা?
দিব?
facebook
"দিলাম ছুঁড়ে বড়শি হ্রদের কালো জলে। তখন রাত একটা।" - :O
লেখায় =DX
মাছ ধরায় :(
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধরি নি কিন্তু !
facebook
-ভয় দেখান কেনু?
ভয় কেন! বিস্ময়-
facebook
জানি না, কেন মনে এল, ফ্রস্টের সেই কবিতা,
হ্যা, অণু ভাই, খুব ভাল চিন্তা! না তোলা ছবিগুলো আপনার অক্ষরেই এভাবে ছবি হয়ে ভেসে উঠুক!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
আমার খুব প্রিয় ফ্রস্ট কবিতা
facebook
আবারো সেই একি কথা বলতে হচ্ছে, দিন দিন জীবনানন্দময় হয়ে উঠছে আপনার গদ্য :) । আর প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে জীবনানন্দ কতটা প্রিয় সেটি আপনার চেয়ে ভলো ক’জনে জানে?
(অফটপিক: আপনাকে তো ফেবুতে পাওয়া যায় না, একখান ডেসলার কিনতে চাইছি। বাজেট ৪০ এর মতো, নিক্কন ডি-৩২০০ নিবো না কেনন ১১০০-ডি/৬০০-ডি ভালো হবে প্রাথমিক পর্যায়ে?)
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
আমি নিক্কন সম্পর্কে জানি না রে ভাই, ক্যানন ব্যবহার করছি যে
facebook
এখানে আর এখানে দেখুন
ব্যক্তিগতভাবে আমি নাইকনের ফ্যান
অ্যাভাটার ম্যাথিয়াস :Dলাফাং ঘ্যাচাং
8)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
:-?
facebook
:S
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অ্যাভাটার ম্যাথিয়াস :D
ছবি দেখে ফেললে নিজের কল্পনার কিছু থাকে না। এটাই ভালো হয়েছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কাকতালীয় কি না জানি না, আপনার এই লেখাটি যেদিন প্রকাশিত হলো, সেদিন সূর্য দু’ দু’বার আকাশে ছিটিয়েছিল সোনালি থুতু। এই যে নীল আলোর অরোরা, তা বুঝি বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে ঐ থুতু ছেটাবারই ফলবিশেষ। লেখা ভালো লেগেছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন