পূর্ব ইউরোপ-১ (পরিকল্পনা)

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: রবি, ১৪/০৯/২০১৪ - ৬:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্লগার ওডিন বলল- অণুদা, যতই ঘোরাঘুরি করেন আপনার বিবেচনায় আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে আর পূর্ব ইউরোপে! জানতে চাইলাম- কেন? উত্তর মিলল, আসলে এই জায়গাগুলোর নাম আমরা সবাইই জানি কিন্তু নিজে যেয়ে দেখার লোক কম। ইউরোপে তো ফি বছর কম মানুষ যায় না, অথবা সেখানে থাকা বাঙ্গালীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়, কিন্তু প্যারিস, লন্ডন ঘুরতে মানুষ যতটা ব্যস্ত বুখারেস্ট বা বেলগ্রেডের ব্যাপারে ততটাই উন্নাসিক। যদিও এখন পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপ বলতে যে ভৌগোলিক এলাকা বোঝানো হয় তার গেছি কেবল সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে জন্ম নেওয়া স্লোভেনিয়া আর ক্রোয়েশিয়ায়। চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডকে পূর্ব ইউরোপ বললে সেখানের বন্ধুরা রাগ করে, বলে এটা মধ্য ইউরোপ ! আর এস্তনিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া তো বাল্টিকের দেশ! তাই পূর্ব ইউরোপের বিশাল এলাকায় পা ফেলা হয় নি আজও, চোখে মেলে দেখা হয় নি দানিয়ুবের বিস্তার, কারপেথিয়ান পর্বত, কৃষ্ণসাগরের জল।

সেই অতৃপ্তি ঘোচাতেই যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামীকাল, সকাল সাড়ে দশটায়।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি থেকে গাড়ী চেপে জাহাজঘাট যেয়ে বিশাল জাহাজের বাল্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে ক্ষুদে দেশ এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিনে পৌঁছে শুরু হবে আসল ভ্রমণ। বাংলাদেশের গত এক বছর থাকার সময় অসাধারণ কিন্তু প্রকৃতি ভ্রমণ হয়েছে- পাহাড়ে, সাগরে, বনে, নদীতে, হাওড়ে। খুব ইচ্ছা করত প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ছোট ছোট ব্লগ লিখব, যাতে সেই সময়ের খাঁটি নির্যাসটুকু পাওয়া যায়, আপনাদের সাথে প্রতিদিনই থাকতে পারি। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূর্ণ না হবার পিছনে মূল কারণ ইন্টারনেটের সমস্যা (যে জায়গাগুলোতে যেতাম সেখানে ফোনের নেটওয়ার্কই পেতাম না আর নেট!), আর দ্বিতীয় কারণ ল্যাপটপে চার্জ দেবার উপায় খুঁজে না পাওয়া! আশা করি আমাদের পূর্ব ইউরোপ ভ্রমণে সেই সমস্যা খুব একটা প্রকট হবে না, তাইই আশা করছি প্রতিদিনই খুব অল্প করে হলেও পথে থেকেই সচলায়তনের মাধ্যমে সবার সাথে যুক্ত থাকার।

ভ্রমণের মূল আয়োজক আমার বড় ভাই তানভীর অপু ( এমনকি এই ভ্রমণে আমার সমস্ত খরচ, পানীয় আর বিমান ভাড়া বাদে, সেই বহন করছে! কাজেই এই প্রথম কোন স্পন্সর পেলাম বলা চলে !), সাথে আছেন ফিনল্যান্ডের বাসিন্দা দুই বড় ভাই রমজান ভাই এবং শাহিন ভাই, যাদের দুইজনের বিশ্বের এই অজানা অঞ্চলে ভ্রমণের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। আর আমি পরিকল্পনাকারী। ব্যস – এইই আমাদের এবারের দল।

আপাত পরিকল্পনা-
কাল দুপুরে তাল্লিন থেকে রওনা দিয়ে বাল্টিক হাইওয়ে ধরে সৈকত নগরী পারনুর উপর দিয়ে গোত্তা মেরে লাটভিয়ার রাজধানী রিগা আর সেই কিউট নদীটাকে টাটা বলে সোজা লিথুয়ানিয়ার কাউনাস শহরে যেয়ে বিখ্যাত ক্যাথেড্রাল দেখে বিশ্রাম নিব।

পরদিন কাউনাস ঘুরে আবারও যাত্রা পথে- এরপরেই বিশাল দেশ পোল্যান্ড, সেখানের রাজধানী ওয়ারশ, আর সবচেয়ে সুন্দর শহর ক্রাকোভ দেখা হবে যাওয়া বা আসার পথে, সেই সাথে নাৎসিদের সবচেয়ে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প অসউইৎজ, যেখানে ১০ লক্ষ ইহুদি যুদ্ধবন্দি গ্যাস চেম্বারে মেরেছিল নাজীরা, আছে দর্শনের তালিকায়। তার পরের পরিকল্পনা নির্ভর করছে জনাব ভ্লাদিমির পুতিনের উপরে। উনি যুদ্ধ বাঁধিয়ে ঝামেলা না করলে বিশাল দেশ ইউক্রেনের ঝলমলে ক্যাথেড্রাল এবং আকশ ছোঁয়া কারপেথিয়ান পর্বতমালা দেখতে দেখতে (কিয়েভ থেকে অনেক দূরে থাকব এবার) সোজা চলে যাব ইউরোপের সবচেয়ে অজানা দেশ মলদোভাতে। সেখানের রাজধানী চিসিনাউতে আছে পুরনো বন্ধু অক্সানা বুখোচি, তারই তত্ত্বাবধানে যাবার কথা কৃষ্ণসাগর তীরে।

তারপর দানিয়ুব ডেল্টা বা বিশ্বখ্যাত দানিয়ুব ব-দ্বীপ, সেখানের গোলকধাঁধাঁয় ঘুরে, লাখো লাখো পেলিক্যান পাখিকে প্যাঁক প্যাক বলে চলে যাব রুমানিয়ার কুখ্যাত কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর স্থান ট্রান্সালভেনিয়ায়, যেখানে ব্রাসভ শহরের কাছেই আছে বিখ্যাত ব্রান দুর্গ, যাকে বিখ্যাত কাউন্ট ড্রাকুলার দুর্গ বলে !

ড্রাকুলার কবল থেকে রক্ষা পেলে আরও দুটো দুর্গ দেখে ইউরোপের সবচেয়ে ফ্যাশন সচেতন নারীরা বাস করে যে রাজধানীতে সেই বুখারেস্টে ফুটবল নিয়ে কথাবার্তা বলে সোজা বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়াতে। বন্ধু ইভো তোপালিলভ চাকরি করে বুলগেরিয়ার ২য় বৃহত্তম শহর প্লবদিভের পুরাতত্ত্ব জাদুঘরে, তাকে এক ঝলক চমক দিয়ে যাচ্ছি পৃথিবী ইতিহাসের দুই গুরুত্বপূর্ণ মানুষ অ্যারিস্টটল এবং তাঁর ছাত্র আলেকজান্ডারের মাতৃভূমি ম্যাসিডোনিয়ায়। সেখানে রাজধানী Skpoje তে( যা আবার মাদার তেরেসার জন্মস্থান) থাকে মডেল বন্ধু আন্না কিয়োরস্কা, যে আমাদের নিয়ে যাবে ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন হ্রদ ওহরিদে। হ্রদটির বয়স ৩০ লক্ষ বছর! উল্লেখ্য যে শেষ হিমযুগের সময় ইউরোপের প্রায় সব হ্রদে নতুন করে জল ভর্তি হয়ে গেছিল, কিন্তু ওহরিদে সেই প্রাচীন জলই আছে !

ম্যাসিডোনিয়া থেকে সোজা গ্রীসের মিতিওরা, যার উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাথায় হাজার বছরের পুরনো ক্যাথেড্রালগুলো দেখলে অন্য জগতের কথায় মনে হয়,এইটাই আমাদের এবারের যাত্রা দক্ষিণতম বিন্দু! সেখানে এক রাত থেকে ভূমধ্যসাগরতীরের আলবানিয়ায়। সেখানের রাজধানী তিরানাতে তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকে, যাদের মধ্যে মীরাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সবুজ চোখে অধিকারিণী বলেই মনে হয়েছে এত দিন, তাদের তত্ত্বাবধানেই ঘোরাঘুরির ফাঁকে অল্প সময়ের জন্য যাওয়া হবে ইউরোপের নবতম দেশ কসোভোতে।

তারপর মন্টিনিগ্রা, বিশেষ করে বুদভা শহরের সন্ধ্যা আর কোঁকড়াচুলো মায়া কাবুলিকোভার হাসির জন্য। ফের প্রবেশ করা হবে বসনিয়া-হার্জেগোবভিনায়, বিশেষ করে সারায়েভোতে। সেখানে থেকে সার্বিয়ায় তিলোত্তমা নগরী বেলগ্রেড, যেখানে থাকবে সেই দেশের বন্ধু ইভা মার্তিনোভা।

এবার ঘরে ফেরার পালা, পথে হাঙ্গেরির বালাতন হ্রদে রবি ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থান দেখে , স্লোভাকিয়ায় ত্রেঞ্চিনে ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং সম্ভবত প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার কাউন্টেস এলিজাবেথ বাথোরির দুর্গে ঢুঁ মেরে, আবার পোল্যান্ড!

তারপর আর জানা নেই আপাতত!!!

মানে কবে ফিরব, কিভাবে ফিরব আপাতত বলা যাচ্ছে না ! পোল্যান্ড থেকে ফেরি করে এস্তোনিয়া ফিরতে হতে পারে, নতুবা ফের বাল্টিকের তিন ক্ষুদে দেশ গাড়ীতে পাড়ি দিয়ে তাল্লিন এসে জাহাজে করে হেলসিংকি ফেরা হবে! যে পরিকল্পনা বললাম এতক্ষণ হয়ত পথে নামার পর এর অনেক কিছু পরিবর্তিত হবে, অনেক নতুন কিছু যোগ হবে, বাদ যাবে একাধিক গন্তব্য।

সেটা জানার জন্য, পূর্ব ইউরোপের অজানা ভূখণ্ডে যতক্ষণ আছি আমরা, সঙ্গী থাকুন! ( আর কোন পরামর্শ থাকলে মন্তব্য জানান)। আগামীকাল আবার দেখা হবে ছবি সহ-

central_eastern_europe


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনু ভাইয়া বাংলাদেশে না হয় ইন্টারনেট আর ল্যাপটপে চার্জ দেবার সমস্যা কিন্তু আপনি ব্যংককে গিয়েও সচলায়তনে কোন পোস্ট দিয়েছেন বলে তো আমার মনে পড়ে না চিন্তিত । যাই হোক একদিন আমিও আপনাকে স্পন্সর করব কিন্তু শর্ত হচ্ছে আমাকেও সাথে নিতে হবে দেঁতো হাসি

ফাহিমা দিলশাদ

তারেক অণু এর ছবি

থাইল্যান্ডে যেখানে ছিলাম সেখানে নেট ছিল না ! কম্বোডিয়াতে নেট ছিল, সময় ছিল না !!! এবার তাই আর ছাড়ব না !!

ঠিক আছে, দেখা যাবে ভবিষ্যতে

সত্যপীর এর ছবি

ইস্পন্সর করনের পয়সা নাই কিন্তু দশ টেকা দিয়া টিশাট কিনা দিব আপনারে ঠিক করছি। টিশাটে লিখা থাকব "পীরের দোয়া"। বনেবাদাড়ে ঘুইরা বেড়ান কামে লাগব। স্যাম্ভাইরে দুইটা কলিজার সিংগারা খাওয়াইলে ডিজাইন কইরে দেয় শুনছি।

..................................................................
#Banshibir.

এক লহমা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

স্যাম্ভাইয়ের কাজ থেকে কাজ আদায়??? পীরের দোয়াতেও হইব না !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কার কলিজা?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সত্যপীর এর ছবি

কলিজার কথা জানিনা মাংসের কথা কইতে পারি। ঢাকার সকল সচলাড্ডায় সবাই "নজু ভাইর মাংস" খায় শুঞ্ছি। কলিজাও তার হইতে পারে।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি
প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দর্শনীয় স্থানের ছবি ও ইতিহাসতো অবশ্যই দিবেন। সমাজতান্ত্রিক জোট ভেঙ্গে যাবার পরে ঐ সব দেশের অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, জনগণের ভাবনা, নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়েও যদি একটু খোঁজখবর নিতে পারেন, লেখায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, সেটাও কিন্তু সময়ের দলিল হয়ে থাকবে! শুভকামনা।

তারেক অণু এর ছবি

চেষ্টা করব-

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

মাথায় ঠাডা পড়ার বদ্দোয়া দিব নাকি আরও একশ বছর ঘুরে বেড়ানুর সামর্থ্য কামনা করিয়া দোয়া, ঠিক কর্তে পারতেছিনা চিন্তিত

আবারও একগাদা জমজমাট তারেক বেড়ানু গপ্পের অপেক্ষায় পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

তারেক অণু এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দুইটা শব্দ পড়ে উদাস হয়ে গেলাম... লিথুয়ানিয়া আর তিরানা...
আগামী তিনদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলবো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

আহেম, কী ব্যাপার ? চিন্তিত
আজ রাতে লিথুয়ানিয়াতে, আপনার স্বাস্থ্য পান করব-- খাইছে

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

পপ্পন লইয়া বইলাম। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

বাংলাদেশের অসাধারণ প্রকৃতি ভ্রমণ ওভেন ফ্রেশ দিতে না পারলেও এখন তো দিতে পারেন? সামনের বই মেলায় বই আসবে নাকি "বাংলাদেশের জলে জঙ্গলে"?

____________________________

তারেক অণু এর ছবি

নাহ

এক লহমা এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি
আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

দারুন! আচ্ছা, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেই তো আপনার বন্ধু-বান্ধবীরা আছেন, তাদের সাথে আপনার মাঝে মধ্যেই দেখা সাক্ষাৎ হয়, এবারও হবে। তো আপনাদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা কি? কিংবা কে কোন ভাষায় বাৎচিত করেন?

তারেক অণু এর ছবি

নির্ভর করে

রায়হান আবীর এর ছবি

‌সাথে না থাকলেও সাথে আছি হাসি

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।