তারাস বুলবা নামের এক হোটেলে এসে উঠেছিলাম গোধূলির একটু আগে! আজ্ঞে হ্যাঁ, তারাস বুলবার লেখক নিকোলাই গোগলের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এই ইউক্রেনেই! সে হিসেবে তাঁর রচিত বেশ কিছু গল্পের নাম ছড়িয়ে আছে আশেপাশেই। শহর ক্যামিনেটস- পদলস্কি এসে পড়েছি বেশ কিছুটা হঠাৎ করেই, ইউক্রেনের সবচেয়ে সুন্দর শহর বলে এর সুনাম আছে নদী, চুনা পাথরের পাহাড়, সবুজ বন, প্রাচীন দুর্গ মিলিয়ে, তবে আমাদের এখানে এযাত্রা আসার মূল কারণ হচ্ছে কাল রওনা হবার কথা ইউরোপের সবচেয়ে অজানা দেশ মলদোভার উদ্দেশ্যে, আর এই শহরে মলদোভার সীমান্তের বেশ কাছে। তাই এখানে আসে, বাকীটা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।
সকাল সকাল যাওয়া হয়েছিল ইউক্রেনের ২য় বৃহত্তম অর্থোডক্স গির্জা পচায়েভা মনেস্ট্রিতে, যদিও দর্শনার্থীরা মনে করেন কিয়েভের বৃহত্তম মনেস্ট্রির চেয়ে এখানের ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য অনেক বেশি, আর ধর্মের ধব্জা ওড়াতে তারা বেশ অক্লান্ত এই সোভিয়েত পরবর্তী দেশে। সরু রাস্তা দিয়ে বেশ কবার পথ হারিয়ে (সব সাইনবোর্ড ইউক্রেনিয়ান আর রাশিয়ানে লেখা!) যখন পচায়েভা ভযালিতে পৌঁছেছি তখনই অনেক দূর থেকে চোখে পড়েছে সোনা মোড়া পেয়াজ-গম্বুজগুলো ঝিকিমিকি। প্রবেশ মুল্য নেই কোন, কিন্তু দর্শনার্থীদের জন্য খোলা মাত্র দুটি উপাসনালয়, এবং সত্যি বলতে আসলেই টুরিস্টের চেয়ে সত্যিকারের পুন্যপ্রাথী অনেক বেশি দেখালাম গির্জা প্রান্তরে, তবে ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ ছিল! কেন, কে জানে!
এর পর ৩০ কিলো দূরের অন্য শহরে যেখানে পাহাড়ের চূড়ায় আছে হাজার বছরের পুরনো এক প্রাচীন দুরগের ধ্বংসাবশেষ, যা কিনা ইউক্রেনের এই অঞ্চলের একমাত্র দুর্গ যেটিকে মঙ্গলরা ১২৪০ সালে দখল করতে পারে নি। সত্যি বলতে দুর্গ বলতে টিকে ছিল মাত্র একটি ফটক ও কিছু দেয়াল। তবে যথেষ্ট ইতিহাসময় রোমাঞ্চ ছিল সেই এলাকার বাতাসে, আর দেখা যাচ্ছিল উপত্যকার সমগ্র শহর।
ফেরার পথে পাহাড়ের মাঝেই এক জায়গায় থামা হল খিচুড়ি আর মুরগি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সারার জন্য। ওমা, খাবারের গন্ধে দকেহি বনে ঠেলে হাজিরে হয়ে গেচজে এক লালু ডগি!
তাকেও সঙ্গী করে খেয়ে দেয়ে, সামান্য জিরিয়ে আবার পাহাড়ি রাস্তা ভেঙ্গে নিজের দিকে নেমে ফের যাত্রা শুরু ইউক্রেনের আদিগন্ত শস্যক্ষেতের মধ্য দিয়ে।
মাইলের পর মাইলে সোনালি শস্যক্ষেতে, মাঝে মাঝে সূর্যমুখীর আবাদ আর মিষ্টিকুমড়ার। ইউক্রেনকে যে সোভিয়েত ইউনিয়নের শস্যভাণ্ডার বলা হতো তা তো আর এমনি নয়। তবে এমন দৃশ্য দেখলেই কেন জানি মনে হয় কিশোর গোর্কি ঢুঁকে যাচ্ছে স্তেপের ঘাসের মাঝে। মাঝে দেড়শ কিলোমিটার ছিল প্রায় চাঁদের রাস্তা, মনে কিনা ইয়া বড় বড় খাবলা ওঠা বাতিল রাস্তা! তাঁর মাঝেই সন্ধ্যার আগেই এই চমৎকার শহরে পৌঁছে যেই না তারাস বুলবা হোটেলে গেছি, কাল পরিচিত হওয়া নতুন বন্ধু ভেরোনিকা জানালো তারই এক বন্ধী অক্সানা আমাদেড় জন্য নামমাত্র মূল্যে একটি বাড়ী ভাড়া দিতে রাজী হয়েছে এক দিনের জন্য যা কিনা শহর কেন্দ্রে আর নদীর খুবই কাছে !! আর কী, সেই বাড়ীতেি অবস্থান করছি সবাই, আর জানিয়ে রাখলাম কাল যাত্রা শুরু হছে মলদোভার উদ্দেশ্য-
মন্তব্য
বাহ! ঘুরে তো ভালোই বেড়াচ্ছেন।
অণুদা, ছবিগুলো একটু বড় সাইজে দিলে, দেখে আরাম পেতাম।
শুভেচ্ছা
বাহ! কত অজানা কিছু জানা হয়ে গেল।
(নীল কথন)
আপনার লেখার সাথে সাথে ঘুরছিলাম বিদেশের রাস্তাঘাটে। এ কথা মনেই ছিল না যে মন টা আপনার সাথে (মাঝে মাঝে আপনার ছবির সুন্দরীদের সাথেও ) থাকলেও আমি পড়ে আছি এ দেশেই। লেখা আপনার যাত্রাপথের মতই ঝরঝরে। মানসিক ভাবে আপনার সঙ্গেই ঘুরছি।
--- সোমনাথ
পুনশ্চ: ব্যাগ বইবার আবেদনপত্র দিয়া রাখছি কিন্তু। ভুইলেন না যেন আবার। ইন্টারভিউ হইলে জানায়েন।
গির্জাটা বাইরে থেকে দেখেই মনে হচ্ছে ভেতরেও অনেক সুন্দর হবে। সোনা দিয়ে মোড়া কোন গির্জার গম্বুজ আমি এই প্রথম দেখলাম। যাই হোক শুভ কামনা পরবর্তী যাত্রার জন্য।
ফাহিমা দিলশাদ
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আচ্ছা, কাল মলডোভায়ই দেখা হবে!
নতুন মন্তব্য করুন