ভুমধ্যসাগরের স্বপ্নের দ্বীপ করফু। এখানেই বর্ণীল শৈশব কাটিয়েছিলেন প্রিয় মানুষ জেরাল্ড ডারেল, সেখানের এক ভিলাতে বসে লিখছি আমি মাঝ রাত্তিরে। সকাল শুরু হয়ে ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদ ওহরিদ দেখে। এই হ্রদের সন্মানে শনি গ্রহের চাঁদ টাইটানের এক হ্রদের নামকরণও করা হয়েছে ওহরিদ! শনি গ্রহের যাওয়া হবে কি জীবদ্দশায়? তার চেয়ে মা বিপুলা বিশ্বের অসাধার হ্রদটির শোভা উপভোগ করলাম ধূমায়িত কফির কাপ হাতে।
আজকের দিনের মূল গন্তব্য ছিল মিতিওরা। গ্রীসের এই অঞ্চলের প্রায় হাজার বছর আগের সুউচ্চ খাড়া খাড়া ২৪টি পর্বতচূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছিল২৪টি মনেস্ট্রি। কালের আবর্তে টিকে আছে মাত্র ৬ টি, আর তাদের কারণেই মিতিওরাকে বলা হয় বিশ্বের ৮ম আশ্চর্য। গ্রীস সীমান্তে যথেষ্ট খাতির পেলাম ফিনল্যান্ড থেকে আসায়, গাড়ী চেক না করেই ছেড়ে দিল। গ্রীস মানেই আমার কাছে উজ্জল কমলা রঙের রোদের দেশ, অগণিত জলপাই, কমলার দেশ, অফুরান আঙ্গুর আর ওয়াইনের দেশ, দর্শনের ভূমি, জ্ঞানের যজ্ঞস্থল, ঈশ্বরহীন বিশ্বের সূচনা। গ্রীসকে আমার খুবই আপনার লাগের সবসময়ই।
গ্রীসে আজ সকালে প্রবেশ করার পর কেবলই পাহাড়ি অঞ্চল, আর বিশাল বিশাল সুড়ঙ্গ। অদূরেই ছিল অলিম্পাস পর্বত, কিছু আজও যাওয়া হল না সেখানে, এক দিন ঠিকই আরোহণ করব যেখানে জিউসের ছেড়ে দেওয়া দুটি ঈগল মিলিত হয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু নির্ধারণ করেছিল এই আশা নিয়েই চললাম মিতিওরার পানে। মিতিওরা হচ্ছে অ্যাভাটার চলচ্চিত্রে হালেলুইয়াহ পর্বত নামে যে শূন্য ভাসমান পরাবাস্তব পর্বতশ্রেনী দেখানো হয়েছে ঠিক তাঁর মর্ত্যীয় রূপ! কুয়াশাময় ভোরে ছবি তুললে এমনি ভাসমান দেখাবে সবগুলি উপাসনালয়।
যখন গ্রীসের অজস্র প্রান্তর এবং দেবতাহীন পর্বতশিখর পাড়ি দিয়ে কালামবাকা জনপদে পৌঁছানো গেল তখন সবাই হতবাক সামনের দৃশ্য দেখে! কারা বানিয়েছে এই অসম্ভব সম্ভবগুলো ! দেবতা না শয়তান? কেউই না, বানিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বোকাপ্রাণী- মানুষ। কী অপূর্ব সেই নির্মাণ শৈলী, টিকে আছে হাজার বছর ধরে। একে একে টিকে থাকা ৬টা মনেস্ট্রিরই উঠানে গেলাম আমরা, উপভোগ করলাম মরণশীল মানুষের কর্মের অমরত্ব।
একটাই সমস্যা- তখন ছিল প্রচণ্ড রোদ! সবকিছু আসছিল কালো কালো! আশা ছিল অন্তত একটি সূর্যাস্ত দেখব এই অপার্থিব পরিবেশে! কিন্তু বিধি বাম, সময় কম বিঁধায় এখানে এবারের মত রাত্রিযাপন করা হল না, মনেস্ট্রির দোরগোড়ায় হানা দিয়েও ভিতরে যাওয়া গেল না কালপ্রিট নাম্বার ওয়ান সময়ের কড়া নাড়াতে! সেখানে ছিল হাজার হাজার বেড়াল! সবগুলো এসেছিল খাতির জমাতে।
যেমন এসেছিল পথে কফিপানের জন্য এক গ্রীক রেস্তোরাঁয় থামার সময় বেলা নামের এক চমৎকার কুকুরী।
অবশেষে সূর্যদেবতা অ্যাপোলোর রথ মিলিয়ে যাবার ঠিক ৫ মিনিট আগে ফেরিঘাটে পৌঁছাতে পেরে চড়া দামে ৮০ ইউরোর টিকেট কেটে জাহাজ চেপে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ২ ঘণ্টা পর দেখা মিলল করফু নামের স্বপ্ন দ্বীপের।
মিলল এক ছবির মত ভিলা। সেখানেই বসে লিখছি আর ভাবছি আসলেই এগুলো কি স্বপ্ন? করফু দ্বীপে আসলেই এসেছি?
মন্তব্য
মুখ দিয়ে আহ! শব্দটা বের হয়ে গেলো
facebook
দীর্ঘশ্বাস !!!!!!!!!!!!!!!! আপনি একটা অমানুষ।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
মোটেও না, আমি আপাতত ইকারুস হবার চেষ্টা করছি
facebook
জবর রে ভাই, জবর
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
ভূমধ্য সাগর কই ??? প্রিয় কবি জীবনানন্দের কবিতায় পড়া 'ভূমধ্যসাগরলীন' উপমা মাথায় জেগে আছে। কত সাধ দেখবো বলে !!!
রাজর্ষি
নতুন মন্তব্য করুন