এভনের হোজার ৪৫ বছরের শাসনামলে ৭ লক্ষ কংক্রিটের ব্যাংকার তৈরি হয়েছিল, প্রতি ৪ জন আলবেনিয়ানের জন্য একটি। বলা হয় যে স্থপতি এটি আবিস্কার করেছিল সে দাবী করেছিল কামান দেগেও এগুলো নষ্ট করা যাবে না। পরে তাঁকে এই ব্যাংকারে ভরে ইচ্ছে মত কামান দাগা হয়েছিল হোজার হুকুমে! ব্যাংকার আসলেই অক্ষত ছিল। এখন সেগুলো পড়ে আছে সারা দেশের এখানে সেখানে। সকালে এসেই অ্যামি নেতসুউ ও আরও ৩ বন্ধু নিয়ে নিয়ে গেলে জাতীয় জাদুঘরে যেখানে আলবেনিয়ান জাতীর হাজার হাজার বছরের ইতিহাস এবং জাতীয় নায়ক এসকেন্দার বেগের সাহসিকতার নিদর্শনে ভরা ছিল, যদিও আসলে অনেক অস্ত্র ও রত্ন লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নানা দেশে, বিশেষ করে ভিয়েনায়।
রাষ্ট্রপতির বাসভবন দেখা গেল বটে, কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধানকে নয়।
জাতীয় জাদুঘর থেকে শহরের প্রধান রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পার্কে অবস্থিত ব্যাংকার দেখে
একেবারে থামা হল বিশ্ব-বিদ্যালয় এলাকায়,
যেখানে ছাত্ররা ডাক দিয়েছিলো কম্যুনিজমের আড়ালে চলতে থাকে স্বৈরতন্ত্রের, সেই ঝাঁঝালো বারুদের গন্ধময় উম্মাতাল দিনগুলো এখনো নাড়া দেয় আল বেনিয়ানদের। সেখানে অবস্থিত হোজার আমলে তৈরি এক কৃত্রিম হ্রদের পাড়ে বসে জম্পেশ আড্ডা দিয়ে ফেরা গেল গাড়ীর কাছে। পথে অ্যামি ৫ বছরের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে আলবেনিয়ান এক মাফলার উপহার দিল-
তখনকার গন্তব্য ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন নগরী স্খোদর। সেখানে রুজাফা দুর্গে যাবার পথে কফির জন্য থেমেছিলাম এক ছবির মত পাহাড়ের নিচের রেস্তোরাঁয়, গাড়ী ধোয়ার সময় ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছি দেখে মালিক আর তাঁর স্ত্রী হেসে বলল- আমরা আলবেনিয়ান, নিশ্চিন্তে যেয়ে কফি খাই, কিচ্ছু হারাবে না। হয়ত ১০ বছর পর দুর্গের সফেদ পাথর মনে থাকবে না উজ্জলভাবে, তিরানার রঙিন পথ ঘাট ভুলে যাব কালকেই কিন্তু মানুষের এমন সহৃদয়তা মনে থাকবে। যেমন মনে থাকবে এক মেসোডোনিয়ান দাদুর গাছের ফিগ বিনামুল্যে উপহার দেওয়া, ৯ বছর আগে এক সুইস ক্যাম্প এরিয়া মালিকের জোর করে দেওয়া ফ্রি পেস্ট্রির কথা রাতের হামবুর্গে পথ হারিয়ে এক জার্মান দম্পতির বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ যেমন মনে আছে ঝকঝকে ভাবে মনের আকাশে।
বাংলাদেশে যেমন অনেকের অনেক দুর্ব্যবহার সত্ত্বেও সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে মাঝি দাদু ফোকলা মুখের হাসি, আর তাঁর বলা- আমার দেশে আইছুইন, টেকা লাগবো না।(পথে চলতে হলে এত্ত টলটলে আবেগ নিয়ে চলা উচিত না)
অসাধারণ দুর্গ রুজাফা, একেবারে লর্ড অফ দ্য রিংগস এর পাতা থেকে উঠে আসা। কিংবদন্তী বলে এই দুর্গের নির্মাণ সফল হচ্ছিল না কোনসময়ই,
অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় দুর্গের নির্মাণ কাজের জন্য একজনের প্রাণ উৎসর্গ করতে হবে। সেই হিসেবে রুজাফা নামের এক রমণীকে জীবন্ত একটি পাথরের ঘরে আটকে দেয়াল তুলে দেওয়া হয়। রুজাফার অনেক অনুরোধের পরে পাথুরে দেয়ালে দুটো ফোকর রাখা হয়েছিল যেন তিনি অন্তত তাঁর শিশুকে স্তন্যদান করতে পারেন। এখনো সেই ফোকর থেকে জল গড়িয়ে আসে মনে রুজাফার ভক্তরা মনে করে। আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম দুর্গের নির্মাণশৈলীতে, দূরের পাহাড়ের বিশালত্বে আর বলকানের সবচেয়ে বড় হ্রদ স্খোদরের নীলাভ গভীরতায়! লেকের কিছু অংশ আবার পড়েছে মন্টিনিগ্রোতে।
ফের সীমান্ত পেরোতে হল খানিকটা সময় লাগিয়ে। খুব অন্য ধরনের দেশ মন্টিনিগ্রো। অনেকটা ফ্রেঞ্চ রিভেইরা ধাঁচে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে সারা দেশের সৈকতগুলো। কসোভোর আগে এটিই ছিল বিশ্বের নবতম দেশ। বেশি ঝকঝকে রাস্তা, সাজানো বাড়িঘর, দামি মডেলের গাড়ী, ব্যপক ট্যুরিস্টের আনাগোনা, আর রাস্তার পাশে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর!
সীমান্ত পেরিয়ে ৩০ কিলোমিটার পরে দেখা মিলল বিশ্ব-খ্যাত হোটেল দ্বীপ সেন্ট স্টিভেনের। পুরো এলাকাটা এক চেইন কোম্পানি কিনে স্পেশাল হোটেলে বানিয়েছে, যেখানে অনেক যুগে আগেই আসতেন সোফিয়া লরেন, কদিন আগে বিয়ে করলেন নোভাক জোকোভিচ। চমৎকার জায়গা, কিন্তু টাকার ছড়াছড়ি দেখে বিরক্ত লাগল। আর মূলত এই এলাকা বলা চলে দখল করে নিয়েছে রাশান কোটিপতিরা।
সাগরের সূর্য ডুবিয়ে ছুঁলাম বুঁদভা নগরীকে, পুরনো বন্ধু ইতানা উপস্থিত থেকে গাড়ী পার্ক করিয়ে বলল, তোমাদের হোটেলে যেখানে সেখান পর্যন্ত গাড়ী যাবে না ! হেঁটেই চল!
এ আবার কেমন জায়গা? পুরো শহরের দেয়াল ২০০০ বছরের প্রাচীন, সম্ভবত ফিনিশীয়দের তৈরি। ঠিক তেমনি রাখা হয়েছে বাহির থেকে, কিন্তু ভিতরে নানা আধুনিক ব্যবস্থা চালু করে গড়ে তোলা হয়েছে এক অনন্য শহর!
এমন অসাধারণ জায়গায় রাতে থাকি নি আগে, পাথরের রাস্তা আর দেয়াল দেখতে দেখতে কেবলই মনে হচ্ছে এখন কি ২০১৪ নাকি ১০১৪ নাকি ০০১৪! সেই আমলেই ঘরবাড়ি সব! অনন্য অনুভূতি টাইম ট্রাভেলের।
কোটিপতিদের বিলাসবহুল ইয়টের ভিড়।
তারপাশ দিয়েই ইতানা নিয়ে গেল সাগর তীরের এক রেস্তোরাঁয়, চমৎকার সী ফুডের সাথে মিলল অভিজাত পরিবেশ।
সুস্বাদু সামুদ্রিক মাছ, যেখান মশলার ব্যবহার অতি সামান্য।
রসনা তৃপ্ত করে এখন যাচ্ছি শহর কেন্দ্রে, সেখানে আছে লাইভ মিউজিক-
কাল দেখা হবে অন্য দেশে, কিন্তু কোন দেশে তা জানি না এখনো—
মন্তব্য
চমৎকার এক অনুভূতি নিয়ে ফিরে গেলাম। অনেক ধন্যবাদ।
মোজাম্মেল কবির।
শুভেচ্ছা
facebook
ঘোরাঘুরি উপভোগ করছি
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
সাথে থাকুন
facebook
নতুন মন্তব্য করুন