দুই হাজার বছরেরও প্রাচীন বুঁদভা নগরীতে ঘুম ভাঙ্গার পর আবারও অনুভব করলাম যে ইহা বাস্তব, স্বপ্ন নয়! সূর্যের আলো গায়ে মেখে এ-গলি সে-গলি ঘুরে রওনা হলাম মন্টিনিগ্রোর প্রধান আকর্ষণ কোতোর ফিয়ের্ডের উদ্দেশ্যে। ঘন নীল সে সমুদ্র, অনেকটা মাসুদ রানার প্রথম প্রেমিকা রাফেলা বার্ডের চোখের মণির মত। প্রথম দর্শনে অবিশ্বাস্য লাগে, ভোজবাজির ভেলকি মনে হয়। পাহাড়ের মাঝে অতল সমুদ্র, তাতে জোয়ার ভাটা হয়! নরওয়ে ছাড়া আর কোথাও ফিয়র্ড দেখা হয় নি আগে। ছবির মত আঁকা কোতোর আর তার আশেপাশের এলাকা, জলের মাঝে দুটি ক্ষুদের দ্বীপে উপাসনালয় দেখা গেল।
তবে দেশটি কুফা লাগিয়ে দিল, প্রথমেই মার্কেটের মাঝে স্থানিয়ে ওয়াইনের বোতল ভেঙ্গে নাতাল করা রক্ত রাঙা বান ছড়াল। পরে রমজান ভাইয়ের টয়লেটের দরজা আপনা থেকে আটকে ভানুমতির খেল দেখাল মিস্ত্রি এসে দরজা না খোলা পর্যন্ত।
সেখান থেকে আমাদের যাত্রা ক্রোয়েশিয়ার শহর দুবরোভিকের উদ্দেশ্যে , যাকে জর্জ বানার্ড শ বলেছিলেন প্যারাডাইস অন আর্থ। অ্যাড্রিয়াটিক সাগর তীরে অবস্থিত এক অপূর্ব শহর যার গোড়াপত্তন করেছিলে গ্রীকরা ১৩০০ সালে। প্রাচীর ঘেরা এক লাল টালির আর সাদা মেঝের বিস্ময়। এর আগে ক্রোয়েশিয়া আসা হলেও তার শেষ প্রান্ত ছোঁয়া হয় নি। এবার দেখা হলে এই অনন্য অসাধারণ দুর্গ নগরীকে, যাকে বলা হয় অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের দুর্গ! অবাক বিস্ময়ে ঘুরঘুর করছিলাম আইসক্রিম হাতে দুর্গের মাঝে, হঠাৎ দেখা খালিসির বোন মালিশির সাথে!
শুনলাম গেমস অফ থর্ণের শুটিং চলছে এখন! তাই বিশেষ বিশেষ এলাকায় প্রবেশ নিষেধ, বর্ম পরে সব ছবির লোকজন বসে আছে!
দেখলাম, শুনলাম, জানলাম, আবার ভো করে রওনা দিলাম সীমান্তের উদ্দেশ্য পুরো শহর, নতুন এবং পুরাতন দুবরোভিক ঘুরে,
কিন্তু খানিক পরেই বসনিয়া- হার্জেগোভিনায় প্রবেশ করত হল অল্প কয়েক মিনিটের জন্য! ক্রোয়েশিয়ার মাঝে এই অল্প কয়েক মাইলই হচ্ছে বসনিয়ার একমাত্র সমুদ্রসীমা! কয়েক মিনিট যেতেই আবারও ক্রোয়েশিয়া! তারপর আবারও বেশ কয়েক মাইল চলার পর ফের বসনিয়া – হার্জেগোভিনা! আজব সব নিয়ম।
বসনিয়া – হার্জেগোভিনা একই পর্বতের দুই পাশে অবস্থিত দুইটি অঞ্চল। সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার দুই অঞ্চল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নিয়ে দেশটি টিকে আছে এখন পর্যন্ত, একই ভাষা, জাতিগত পরিচয় ও কিছুটা ধর্ম নিয়ে। যে দেশটির নাম এমার ছোট্টকালে গেনেছি কেবলমাত্র যুদ্ধের দেশ হিসেবে , অত্যাচারিতের দেশ হিসেবে। হার্জেগোভিনা অঞ্চলে অবস্থিত মস্টার শহর এই দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত, বিশ্বব্যপী সুপরিচিত স্থান মূলত ের পুরাতন শহর এবং অসাধারণ সেতুটির জন্য, যা ৪০০ বছর আগের নির্মিত হলেও নতুন করে আবার পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে, এবং তা আছে লোনলি প্ল্যানেটের এই অঞ্চলের বইয়ের মলাটে।
এই শহরের কথা আলাদা ভাবে পরে আসবে অন্য পোস্টে। কেবল বলতে চাই বসনিয়া – হার্জেগোভিনা একটি অপূর্ব পাহাড়ি দেশ, সেই সাথে সারাক্ষণের সঙ্গী ছিল সবুজ বর্ণের হিমবাহ থেকে উৎপন্ন অসাধারণ সবুজ বর্ণের জলধারা। পাহাড়ি রাস্তায় ধার ঘনিয়ে আসল জলদিই, এখন আমরা বসনিয়া – হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভোয়।
পথে কেনা হয়েছে পাহাড়ি ঝর্ণার ট্রাউট মাছ। অপু তারই ভাজি চড়িয়েছে, সাথে আছে আলবেনিয়ার সেরা ওয়াইন। অারে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি হবে।
আর হ্যাঁ, কাল দেখা হচ্ছে বেলগ্রেডে।
মন্তব্য
গেম অব থর্নস > গেম অব থ্রোনস।
একদম শেষ ছবিটা যেন পৃথিবীর সব দেশেই ওঠে
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
ওয়াইনের বোতল ভেঙে একসময় জাহাজের কুমারী যাত্রা শুরু করা হত, তা আপনি বোতলটা ভাঙলেন কি মনে করে ?
বোতল ভাঙ্গা আর হৃদয় ভাঙ্গা সমান কষ্টকর... দীর্ঘশ্বাসের ইমো হবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এইরকম বোতল ভাঙ্গে কেউ? (দীর্ঘশ্বাস)
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
সমুদ্রের মাঝে উপাসনালয়! অসাধারণ
ফাহিমা দিলশাদ
ক্রোয়েশিয়া যাইতে হবে।
নতুন মন্তব্য করুন