মার্কিন সরকার ২০০০ সালের দিকে সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশকে বিগত কয়েক দশক ধরে দিয়ে আসা কিছু কিছু খাতের ঋণ তারা আর ফেরত নিবেন না কিন্তু সম্পূর্ণ মওকুফের বদলে একটা শর্ত দেওয়া হ্ল,তা হচ্ছে সেই অর্থ বাংলাদেশের প্রকৃতিকে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করতে হবে, যেটার মনিটর করবে USAID, তারা মার্কিন এবং বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, বাংলাদেশ বন বিভাগের তথ্য মোতাবেক নিসর্গ প্রজেক্ট চালু করল যাদের সেই সময়ে লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে ৫টি নতুন National Park বা জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানো।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বিগত তিন দশক ধরে সাতছড়ির বনে যান পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য, প্রথম থেকেই তাঁর মনে হত উদ্ভিদ ও পাখির প্রাচুর্যে এই বনের সমকক্ষ কোন বন আর বাংলাদেশে টিকে নেই। যদিও বনটি খুবই ছোট, আবার এর ভিতর দিয়েই চলে গেছিল সেই সময়ে ঢাকা-সিলেট সংযোগ সড়ক, ফলে বন্যপ্রাণীরা যথেষ্ট সমস্যা নিয়ে এখানে থাকলেও অন্তত টিকে ছিল। নানা ধরনের গাছের সমাগমের ফলে, তাদের ফুল ও ফলজাত খাদ্যের টানে ভিড় জমায় সেখানে নানা যাতে কীট-পতঙ্গ থেকে শুরু করে পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সকলেই। বাংলাদেশে অল্প কজন পাখি-দর্শকের কাছে তাই সাতছড়ির এক চিলতে বনের আকর্ষণ ছিল অপ্রতিরোধ্য (উল্লেখ্য এত ছোট এলাকাকে বন বা ফরেস্ট না বলে ফরেস্ট বিট বলেই উল্লেখ করা হত সবসময়ই।)
তো USAIDকে বাংলাদেশ বন বিভাগ কয়েকটি সম্ভাব্য বনাঞ্চলের নাম দিয়েছিল যা ভবিষ্যতে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পেতে পারে (যার ভিতরে সাতছড়ির নাম ছিল না), এবং সেগুলো হালহকিকত যাচাই করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষ দলও এসেছিল তিন সদস্যের। সেই দলের পক্ষ থেকে তখন ইনাম আল হককেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাদের সাথে সাথে দেশে কয়েকটি বনে যাবার জন্য। তার আগেই তিনি সাতছড়ির বনটি জাতীয় উদ্যানের তালিকার অন্তর্ভুক্তির জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, দাবী জানিয়েছিলেন এই অনন্য বনটি রক্ষার। আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা সব দেখে শুনে বলে গেলেন যে বাংলাদেশের বনগুলোর অবস্থা খুব বেশি খারাপ এবং তালিকার কয়েকটি বন খুব বেশি ছোট। এমনকি লাওয়াছড়া, রেমা- কালেঙ্গাও আয়তনে এটি ছোট যে ভারতের যে কোন বনের বাফার জোনও (বনের সাথে লোকালয়ের সংযোগ অঞ্চল, যেখানে লোকজন যাতায়াত করে নিয়মিত) এর চেয়ে অনেক গুণ বড় হয়ে থাকে! সেখানে ৪৩ হেক্টরের সাতছড়ি একটি সবুজ বিন্দু ছাড়া আর কিছুই না!
কিন্তু অবাক করে চিঠি এল নিসর্গ থেকে, তারা সেই ৫টি নতুন ঘোষিত ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যানের একটি হিসেবে সাতছড়িকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখন লেখা সাইনবোর্ডে আশেপাশের কিছু অঞ্চল, সাথে পাম বাগান মিলিয়ে মোট আয়তন ২৪৩ হেক্টর লেখা হয়।
দুই দিন আগেই পাখি দেখার মূলত শকুন পর্যবেক্ষণের মানসে সাতছড়িতে অবস্থানের সময় ইনাম ভাই তাঁর সুবিশাল অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে অল্প কিছু অভিজ্ঞতা জানালেন, এইটা ছিল সাতছড়িতে তাঁর ৮৮তম ভ্রমণ। এক ভোরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভিতরে তাঁর সাথে এক ঈগলের খোঁজরত অবস্থায় মনে হল এমন কিছু ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো স্বপ্নগ্রস্ত মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা আরও কিছুদিন কিছুটা বাসযোগ্য, কিছুটা সবুজ থাকবে।
মন্তব্য
চমৎকার লাগল। অরণ্য নিয়ে আপনার প্রতিটি লেখা পড়ি। মনের গহীনে আরণ্যক সৌন্দর্য যার নেই সে তো মানুষই না!
লাউয়াছড়া সুযোগ হলে যাই। কিন্তু বিটকেল পেশার কারণে সুযোগটাই মেলা কঠিন।
লাউয়াছড়া ঠিক আর বন নেই, বনের কঙ্কাল বলা চলে। তারপরও যা টিকে থাকে আমাদের তথাকথিত প্রয়োজন মিটিয়ে তাইই চলনসই এখন-
facebook
আমি অনেক আগে থেকেই উনার ভক্ত, তবে এ ঘটনা জানতাম না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
Kazi Mamun Husain
এমন অনেক ঘটনা আছে, অপেক্ষা লিপিবদ্ধের
facebook
facebook
ফেসবুকে এই ছবিগুলো শেয়ার করলে লাইক দিয়া ভরিয়ে ফেলা হতো ঠিকই ;কিন্তু " অসাম !! ইয়ো ইয়ো"
এগুলো সহ্য করতে হত..........
সবুজ কে নীরবে বাড়তে দিই নাহলে কোলাহলে চুপসে যাবে ওরা।
ট্রোল
আপনার নিক দেখে নরওয়ের ট্রোল সাইনের কথা মনে হল
facebook
প্রথম ছবিতে অনেকগুলো আলোর ফোকাস পড়েছে কেন?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
পড়ে গেলে সক্কালে!
facebook
দেশে রিফরেস্টেশনের কোন প্রজেক্ট আছে নাকি?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সে তো প্রায়ই হয়, এবং ভুল গাছ দিয়েই হয়
facebook
ইনাম ভাই এর জন্য শ্রদ্ধা।
আর টিকেট কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতাটা মস্ত কিউট!
আমার বন্ধু রাশেদ
উনি সাইবেরিয়ার আগন্তক কিনা
facebook
ওটা টুনটুনি পাখি না?!
আমার বন্ধু রাশেদ
নতুন মন্তব্য করুন