ভোরের সিলেট খুব একটা সুবিধের জায়গা হিসেবে দেখা দিল না আজকে, আঁধারের মাঝে আর কোথায় যাব! শ্যামলী বাস কাউন্টারেই বসে চলে গেল একাধিক ঘণ্টা, এদিক ঘন কুয়াশার কারণে দ্বৈপায়নদার বাস করল দেরি, অবশেষে সকাল আটটার দিকে যাওয়া হল শাবিপ্রবি! এবং পূর্ব নির্ধারিত সময় মোতাবেক দেখা হল দুই অতি প্রিয় মুখ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন ম্যাডামের সাথে! স্যার জানালেন সামনের বই মেলায় খুব অন্য ধরনের এক কিশোর মুক্তিযুদ্ধ উপন্যাস আসবে তাঁর।
সেখান থেকে সরাসরি অতি জঘন্য এবড়ো থেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে অবশেষে তামাবিল এবং সেখানে আটকে দিল পুলিশ এবং কাস্টমস! ৫০০ টাকার ভ্রমণ কর নাকি দিতে হয় ভারত যেতে হলে, যা আবার করা ছিল না কারোরই, ফলে ১০০ টাকা উপরি করে নিয়ে সাথে বোনাস হিসেবে গাড়ি ভাড়া আদায় করে তবেই তারা ছাড়লেন সেই জামাই আদর থেকে!
ভারতীয় সীমানায় আমাদের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন আখতার ভাই, ততক্ষণে বেলা গড়িয়ে দ্বি-প্রহর, পেটের ভিতরে ছুঁচো জুড়েছে কেত্তন! মেঘালয় রাজ্যের প্রথম বাজারেই এক কাঠের তৈরি রেস্তোরায় খাওয়া হল মশলাদার মাছ এবং মুরগী, সাথে সব্জি ভাজি ও ভাত। আখতার ভাই নাকি গত এক সপ্তাহে এই প্রথম ভাত আস্বাদন করলেন! একটা জিনিস প্রথমেই খেয়াল হল যে রেস্তোরাটি খুবই পরিচ্ছন্ন! হতদরিদ্র অবস্থার মাঝেও বেশ রুচিকর একটা পরিষ্কার ভাব আছে তৃপ্তি নিয়ে খাওয়ার জন্য।
তারপর অপূর্ব রাস্তা দিয়ে চললাম নদীর অপর পারে বাংলা মায়ের জাফলং, বিছানাকান্দি ইত্যাদি দেখতে দেখতে প্রবেশ করলাম সবুজ পাহাড়ের রাজ্যে। সুপুরির বাগান আলাদা ভাবে দৃষ্টি কাড়ল, আর বিশাল সব মহীরুহ। পথে এক ভাসমান পাথর দেখার জন্য থামা হল মিনিট দশক,
গন্তব্য পথে হাজির হল এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিনং, তার পথে পথে হাঁটলাম মুগ্ধতা নিয়ে, নানা বাড়ির দাওয়ায় বসে দেখলাম সেখানের বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ, আর দেখলাম প্রতি মোড়ে চমৎকার ভাবে সাজিয়ে রাখা ময়লা ফেলার ঝুড়ি। সেখানে খেলার মাঠও আছে একখানা ফুটবল খেলার! চমৎকার এক কাপ দুধ চা খেয়ে পরিচ্ছন্নতম গ্রামকে বিদায় দিয়ে চললাম দিনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণের সন্ধানে।
গাড়ি রেখে দৈত্যের বাঁধানো পাথুরে পথ বেয়ে নামছি ত নামছিই, একবার শক্তি অর্জনের জন্য পথের ধারের দোকানির কাছ থেকে বাতাবি লেবু খাওয়া হল পাতায় থালায়, জানলাম এই ফলের স্থানীয় নামও হয় বাতাবি না হয় জাম্বুরা!
বেশ খানিকটা হাটার পরে দেখা মিলল স্নিগ্ধ নীল ল্যাগুনের আর অসাধারণ এক বৃক্ষের, যার শিকড় প্রাকৃতিক অদ্ভুত খেয়ালে এক পারাপারের এক সেতু তৈরি করেছে জলধারার উপর দিয়ে!! মানুষ সেখানে মাটি, পাথর বসিয়ে করে ফেলেছে একেবারে আসল সেতু!
অসাধারণ সেই জায়গাটি! মেঘালয় ট্যুরিস্ট বোর্ড এমন একাধিক সেতুর সন্ধান পাওয়ার পরে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তাদের তুলে ধরেছে বিশ্বের সামনে। যদিও এই সেতুটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সুদর্শন।
কেন জানি শুধু মনে করিয়ে দেয় নিচের কবিতাটি-
আমার দেশগাঁয়ের ধুলোমাটির বুক থেকে
নিয়ে গেলো আমাকে ওরা, তখনো শিশু আমি,
এলাম আরাউকানিয়ার বৃষ্টিতে।
সে বাড়ির তক্তাগুলোর থেকে
গন্ধ ভেসে আসে জঙ্গলের,
গহন অরণ্যের।
সেই সময় থেকেই আমার ভালোবাসায়
লেগেছে কাঠের গন্ধ,
যা কিছু আমি ছুঁয়েছি তা-ই পরিণত হয়েছে অরণ্যে।’
... ... ...
মূল হিস্পানি থেকে পলাশ বরন পালের অনুবাদে পাবলো নেরুদার কাব্যগ্রন্থ ‘যেখানে বৃষ্টির জন্ম’।
এদিকে আঁধার হয়ে আসছে চারিদিক, আমরা ফেরার পথে স্থানীয় কজনার সাথে কুশল বিনিময় করে সোজা শিলং-এর পথে! অদ্ভুত কমলা সূর্য তখন গ্রহের অন্যদিকে যাত্রারত, পাহাড়ের মাঝে সোনালি ঘাসে ছাওয়া মালভূমি দিয়ে আমরা চললাম কয়েক মাইল।
যখন মেঘালয় প্রদেশের রাজধানী শিলং-এর জোনাকির মত আলো নজরে আসলো তখন ঘুটঘুটে আঁধার। শহরটির সাথে মেক্সিকান যে কোন শহরের মত, মঙ্গোলয়েড চেহারার সব মানুষ, রঙচঙে কাপড়, কুপির বাতি, এবং হাসি- সবই এক! সরাসরি হোটেলে যেয়ে শোনা গেল রাত আটটার দিকে সব দোকান বন্ধ, এমনকি সোনালি তরলেরও! রেস্তোরাঁয় যেতে হবে তখনি! এদিকে মুশকিল হচ্ছে হোটেলটি যথেষ্ট মানসম্পন্ন হলেও ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের অবস্থা খুবই করুণ ! লিখলাম না হয় কোনমতে, কিন্তু পোস্ট করতে পারব তো!
কাল যাওয়া হচ্ছে বৃষ্টিরাজ্য চেরাপুঞ্জি, সেখান থেকেই কথা হবে নেট পেলে!
মন্তব্য
ভ্রমণ আনন্দের হোক। আমি মাঝে মাঝে ইউটিউবে ভিডিও দেখে ভ্রমণ সারি, মানে মানস ভ্রমণ আরকি। এইভাবে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিও দেখেছি ইউটিউবে।
একটা খুব ইন্টারেস্টিং ভিডিও দেখেছিলাম, শেয়ার করছি এখানে
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ফিরে দেখব, নেটের অবস্থা যাচ্ছেতাই
facebook
এটা শেকড়ের ব্রিজ নিয়ে করা একটা ডকুমেন্টারির অংশ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
..................................................................
#Banshibir.
facebook
দারুণ! গাছের শিকড়ের ব্রিজটা অসাধারণ।
একেবারে
facebook
সত্যিই গাছের শিকড়ের ব্রিজটা অসাধারণ। ছবিতেই কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। সামনে থেকে না জানি কত সুন্দর। ভাল লাগলো পোস্ট আর সেই সাথে প্রিয় কিছু মুখের ছবি বাড়তি পাওয়া।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
দাদা, দারুণ
অদ্ভুত!! কি সুন্দর!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ইশ্ একটুর জন্যই মিস হয়ে গেল। বাঞ্চুদ দুইন্যা। দ্বৈপ দানিয়েল'দার দেখা পেল ওখানে? আহারে এই দুঃখ কই যে রাখি।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
দারুন!
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আহা, দারুণগো, এই ভ্রমণ!
নতুন মন্তব্য করুন