মিশন নাগাল্যান্ড, মিশন কামাখ্যা-৬, কোহিমা

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বুধ, ১০/১২/২০১৪ - ১:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

10846408_10154887259550497_1884480727849149874_n

541578_10154887264715497_712890903362050975_n

নাগাল্যান্ডের প্রবেশদ্বার ডিমাপুরে পৌঁছে ধুলি ধূসরিত হয়ে বেশ বিরক্ত হয়ে গেলাম আমরা। পাহাড়ি, পরিচ্ছন্ন শহর শিলং-এর পর প্রতি অলিগলিতে আবর্জনার স্তূপ আর ধুলোর ভাসমান স্রোত যে পরিমাণ ঝামেলা সৃষ্টি করল যে পৌঁছানোর খানিক পরেই যেন ডিমাপুর ছাড়া জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলাম সবাই মনে মনে। সকালে উঠে সেখানের স্থানীয় বাজারে গেলাম এতদিন শুনে আসা নাগাল্যান্ডের অদ্ভুত সব খাদ্য দেখতে। প্রথমেই দেখা গেল স্মোকড মাছ, নানা ধরনের সবজি, তার এক সারি পরেই ইঁদুরের খাঁচা, এরপরে লক্ষ লক্ষ শুয়োপোকা , ভাজা ঘাসফড়িং, নানা জাতের পোকা, প্যাকেট ভর্তি ব্যাঙ, ইত্যাদির পরে দেখা গলে কুকুরের বাজার।

10653606_10154887762475497_6161289475308937583_n

অনেক দুঃখী চেহারার কুকুর বস্তায় পুরে অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে দোকানের মেঝেতে, কেবল মাথাটা বাহির করে তারা অপেক্ষায় আছে বিক্রি হবার। এক পাশে কুকুরের মাংস, কলিজা, মাথা, পা ইত্যাদি আলাদ করে রাখা। সেগুলোর চেয়ে বেশি খারাপ লাগলো জীবিত কুকুরগুলোকে দেখে। তবে কোরবানির আগে গরুর চোখেও জল দেখেছি এমন, বা জবাইয়ের আগে ছাগলের চোখেও। আসলে অভ্যস্ত না বলেই বেশি খারাপ লাগল।

10801743_10154887247760497_7440627442949605029_n

এরপর গাড়ী চেপে সোজা নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমার পথে। চমৎকার পীচ ঢালা পথে কেবলমাত্র একবার থামা হল বাঁশ দিয়ে তৈরি ছাপরু নামের চমৎকার এক রেস্তোরাঁয়, যা এক পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত। সমতলের আসাম থেকে পাহাড়ি নাগাল্যান্ডের এই অঞ্চলে এসে যেমন শীত অনুভূত হচ্ছিল, তেমন উচ্চতা বাড়ার কারণে অনেকেরই মাথা ব্যথা দেখে দিয়েছে এর মাঝেই। চমৎকার স্বাদের কফি আর ছাপরুর কর্মচারীদের হাসি-খুশী ব্যবহার কিছুটা সাহায্য করল অবশ্য সেই ব্যথা কমাতে।

10355747_10154887276150497_4981961908114552680_n

1476038_10154887275995497_3512235688443853422_n

দুপুরের আগেই দেখা হ্লল কোহিমার সাথে, সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে শুয়ে আছে সে।

10409662_10152635215834143_9208803692997671499_n

লাখ খানেক অধিবাসী তার, কিন্তু হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে এখন পর্যটকদের সংখ্যায় শুনলাম দেড় লাখ ছুয়েছে! আমাদের এই শহরের গাইড এক নাগা আদিবাসী রবি, উনি এসেই আমাদের নিয়ে গেলেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের কবরস্থানে, চরম যুদ্ধ হয়েছিল এখানে জাপানীদের সাথে মিত্রশক্তির, এখানেই থমকে গেছিল অপ্রতিরোধ্য জাপানি বাহিনী। মারা গেছিল হাজার হাজার সৈন্য, তাদের অনেকের কবর এই স্থানে, পাহাড়ের মাঝে। সেখানে এক অদ্ভুত বিষণ্ণ শান্তি, লেখা আছে – When you go home tell them for their tomorrow we have sacrificed our today.

অন্য অনেক পরিকল্পনা ছিল আজ, কিন্তু সব বাতিল করে যাওয়া হল এবারের ভ্রমণের মধ্যমণি হর্নবিল ফেস্টিভ্যালে। সেই স্থান কোহিমা থেকে ১২ কিমি দূরে, সেখানে এক বিশাল উৎসবের আমেজ, স্টেডিয়াম মত জায়গায় চলছে এক আদিবাসী জাতির নৃত্য!

10842329_10154887271115497_5315966659094819153_o

আর পুরো এলাকায় স্থাপিত নাগা গ্রামে আছে এখানে অংশ নেওয়া নাগাল্যান্ডের প্রত্যেকটি আদিবাসী জাতির বাড়ীর প্রমাণ আকারের নমুনা, তাদের হেঁশেল, রান্না করা খাবার, আর তাদের পোশাক পরা কিছু মানুষ। কিন্তু পাহাড় ঘেরা জায়গায় হওয়ায় বেলা মাত্র তিনটের মাঝেই সূর্য চলে গেলে পাহাড়ের আড়ালে, নেমে এল কনকনে ঠাণ্ডা। বলা হল পরদিন সকালে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

10476617_10152635199774143_3357254219025495916_n

10690351_10154887778445497_8279432358509699230_n

এই বিশাল যজ্ঞ নিয়ে আলাদাভাবে লিখব বলে এখন আর কিছু জানালাম না, তার উপর কালই মূল দিন।

সন্ধ্যের পরে যাওয়া হল নাইট মার্কেটে, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়, তরুণীদের উপস্থিতিও কম নয়। জাত-বেজাতের দোকান রাস্তায়, দলেবলে খেওয়া হল জিলাপি, পাকোরা, চানা ইত্যাদির সাথে কজন চেষ্টা করলো খুবই সুস্বাদু কিন্তু মশলাদার শামুক।

এই প্রথমবারের মত আমরা আশ্রয় নিয়েছি হোম স্টেডে, স্থানীয় এক বাড়িকে পরিণত করা হয়েছে হোটেলে, আমাদের কক্ষটা তো রীতিমত করা হয়েছে রাজসিক কামরায়, সাথে আবার বালকনি।

1604371_10154887744855497_6079673026398573255_n

সেখানে বসেই মাঝরাতে কোহিমার চাঁদ ঝরা আলোর বন্যায় লিখলাম আজকের সামান্য বিবরণ। কালকেও এই সময় এই কামরাতেই থাকার কথা, সাথে থাকবে হর্নবিল ফেস্টিভ্যালের আসল দিনের গল্প।

আগের লেখা


মন্তব্য

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

ঈয়াসীন এর ছবি

কিছু ছবি বিরাটাকার। রিসাইজ করেন।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

হাসিব এর ছবি

কিন্তু তারা পিঠে ইংরিজিতে লেখে কেন?

দরবেশ এর ছবি

ছিঃ ছিঃ ছিঃ! বেগানা পুরুষের পাছার ছবি তুলছে! ঘুমের থেকে উঠে এগুলা কি দেখলাম!!! মিজান, পিষে ফ্যালো

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

রাসিক রেজা নাহিয়েন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ছবিগুলোর বেশ কয়েকটা বে সাইজের হয়েছে। ঠিক করে দাও।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার মিশনের সব পর্বই পড়ছি, ছবি দেখছি, কিন্তু মন্তব্য করা হচ্ছেনা। যাহোক, মিশন ও লেখা চলুক। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।