বইমেলা, ২০১৫
২- ২৬ ফেব্রুয়ারি
প্রথম দিন বইমেলায় যাওয়া হয় নি অত্যধিক ভিড় আর ধুলো ঝড়ের আশঙ্কায়। পরদিন থেকে প্রত্যহ ২ বার পেট্রলবোমায় ঝলসে যাবার গনগনে আশঙ্কা নিয়ে পাবলিক বাসে বা ম্যাক্সি করে বনানী থেকে যাওয়া হত শাহবাগ, সেখান থেকে হেঁটে, জনতার ভিড়ে মিশে, পচা ফুল ভর্তি দুর্গন্ধ ভরা ডাস্টবিন এড়িয়ে, ফুটপাতের দোকানে বই কিনে বইমেলা। মাঝে মাঝে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ ঘুরে তারপর সোহরাওয়ার্দী, কত চেনা-অচেনা মুখ, বন্ধুত্বের দাবি, টেলিভিশনের সাক্ষাৎকার, নতুন বইয়ের গন্ধ, কিন্তু ফেরার পথে আবারও পেট্রোল বোমা ধোঁয়াময় আতঙ্ক। বেখেয়ালে বাসের জানালা খোলা থাকলে পাশ থেকে কেউ ঘড়ঘড় করে বলে উঠে- জানালা বন্ধ করেন, মারবেন তো মিয়াঁ!হাঁসফাঁস করে উঠি, বন্ধ হয়ে যায় জানালা, আকাশ ভরা সূর্য-তারা নিভিয়ে।
২৬ ফেব্রুয়ারির কালো রাত-
বরাবরের পর বাসায় ফিরছি, মন খুশিতে ভরে আছে প্রথমবারের মত প্রিয় লেখক অভিজিৎ রায় এবং বন্যা আপার সাথে দেখা হওয়ায় এবং এক অসাধারণ কিন্তু স্বল্প সময় কাটানোয়। বন্যা আপু বললেন এই মাসেই আবার দেখা হবে।
বাড়ি ফিরলাম, ফোন আসল, নিজের কানকে অবিশ্বাস করে শুনলাম – তারা হামলার শিকার, আর খানিক পর অভি দা আর নেই। বন্যা আপা পাঞ্জা লড়ছেন বেঁচে থাকার জন্য।
চেনা মহাবিশ্ব ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ভয়াবহ শোকের শকে কেঁপে উঠি। অসহায় হয়ে ভাবি, কী করা যায়?
২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি
একই ভাবে বইমেলায় যাই, বোমার আতঙ্ক আর ধুম্রজালে ঘিরে ধরে না, বরং অচেনা মুখ রাস্তায় আরেহ অণুদা , বললে আনন্দিত হবার বদলে একটু সংকুচিত হয়ে সম্ভাষণকারীর মুখ দেখি, তার হাতে কী আছে দেখি, তার সাথে কারা আছে খেয়াল করি স্নায়ু টানটান করে। আর আঁধারে বোমার চেয়ে বেশি মনে হয় ঘাতকের চাপাতির কথা।
--- বইমেলা শেষ হয়, দগদগে ক্ষত পচতে থাকে, আহত করে প্রতিনিয়ত, জানতে ইচ্ছে করে এর শেষ কোথায়?
মন্তব্য
আমরা তীব্রভাবে বেঁচে উঠলেই এ ক্ষত সেরে উঠতে শুরু করবে। চর্চাই শক্তি।
স্বয়ম
পুরো বইমেলা প্রাঙ্গন নাকি নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা ছিল, সিসি ক্যামেরা ছিল, মেটাল ডিটেক্টর ছিল এবং সর্বোপরি ছিল 'পুলিশ'; এভাবে সব আয়োজন ছিল, সব সরঞ্জাম ছিল, দুষ্কৃতিকারীকে ধরার জন্য যথেষ্ট যন্ত্রপাতি/উপকরন ছিল, শুধু ছিল না হয়ত একজন 'অবিশ্বাসী'কে বাঁচানোর ইচ্ছেটুকু! এজন্যই পুলিশ যন্ত্র কাজে না লাগিয়ে নিজেই যন্ত্রে রূপ নেয় , ঠায় দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে অভিজিৎদার খুলি বেরিয়ে পড়া, আর শুনতে থাকে রক্তাক্ত বন্যাপার আর্তনাদ! তবে এখানেই শেষ নয়, মেলা শেষে একটি বড়সড় 'নিরাপত্তা বিল' ধরিয়ে দেয় হয় জনগনের হাতে!
'নিরাপত্তা' না থাকলেও আমাদের জন্য সবসময়ই থাকে নিরাপত্তার বিশাল একটি চাদর, সেই শতচ্ছিন্ন শতবর্ষী চাদরে এত ফুটো যে, অবলীলায় ঢুকে পড়ে দলে দলে দুষ্কৃতি, শুধু তাই নয়, বিশাল সেই চাদরের নীচে আপন মনে আনাগোনা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও বরাদ্দ থাকে সেই দুষ্কৃতিদের তরে!
তবে একসময় হয়ত আর এই 'নিরাপত্তা চাদর' আর দরকার পড়বে না, কারণ নিরাপত্তা প্রার্থনা করার মত কোন প্রগতিশীল বা 'অবিশ্বাসী' লোকই হয়ত আর বেঁচে থাকবে না তদ্দিনে!!
অন্ধকূপ
..................
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনার এই লেখার জন্য প্রতিক্ষায় ছিলাম। এই দগদগে ঘা শুকানোর নয়।
রাজর্ষি
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বইমেলায় আপনাকে দেখলাম, আপনি আমাকে চেনেন না অবশ্য-চিনবার প্রশ্নই নেই। যাহোক, মেলা শেষের দিনটায় যাবার কথা ছিল শেষবারের মতো; যেতে পারলাম না, মন টানল না কিছুতেই ।
দেবদ্যুতি
সহজে শেষ হওয়ার নয়, দীর্ঘস্থায়ী লড়াই জারি রাখা ছাড়া উপায় নাই।
খুব খারাপ একটা সময় যাচ্ছে আমাদের চারপাশে। একের পর এক অচিন্ত্যনীয় সব ঘটনা ঘটছে, যার জন্য প্রস্তুত নই আমরা কেউই।
মনটা খারাপ হয়ে গেল লেখাটা পড়ে। সব ধাক্কা সামলে ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।
শেষ দেখা পর্যন্ত বাঁচব না আমরা।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হায়রে আমার প্রিয় স্বদেশ!!!!
আমরা কোথায় যাবো?????
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
দেশের সবাই সাবধানে থাকুন, এ ছাড়া বলার আর কিছু নেই
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
কিছু বলার নাই। আইনের উপর ভরসা করতে চাই। কিন্তু আইনের অতিদীর্ঘ প্রক্রিয়া ভরসা করতে দেয় না। সময় যেতে যেতে একসময় মানুষ ভুলে যায়। ততদিনে ঘাতকরা নতুন ঘটনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ফেলে।
অজ্ঞাতবাস
শেষ হবে মানে? সবেতো শুরু।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অভিজিৎ দা হত্যার আগের সাপ্তাহটি আপনার সাথে কত আড্ডাবাজিতে কাটালাম অথচ তার পরের সাপ্তাহে শাহবাগে থেকেও বুকভরা এক ক্ষোভে বই মেলায় যেতে পারি নি। বইমেলায় যাওয়ার ইচ্ছে টাই আমার উবে গেছে।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
নতুন মন্তব্য করুন