চামচঠুঁটো বাটান একটি মহাবিপন্ন পাখি, সারা পৃথিবীতে এদের সংখ্যা একশ জোড়ারও কম। সাইবেরিয়ার ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তোলা এই ক্ষুদের বিস্ময়কর পাখিটি শীতকালে পরিযাজন কালে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার সৈকতের কাদাচরে চলে আসে। নামেই বুঝছেন যে এর ঠোঁটটি অতি অনন্য, ছোট্ট একটি চামচের মত, যার মাধ্যমে কাদাচর থেকে খাবার ছেঁকে নেয়। মহাবিপন্ন পাখিটিকে রক্ষার জন্য এখন সচেতন হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ, তাদের বিলুপ্তির হাত থেকে ঠেকানোর জন্য চলছে বিশাল সব কর্মযজ্ঞ।
বাংলাদেশের সৈকতে আন্তর্জাতিক পাখিবিশেষজ্ঞের দল বেশ কটি চামচঠুঁটো বাটান খুঁজে পান ২০০৬ সালে, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে তখন থেকেই বিবেচ্য বিজ্ঞানীদের কাছে। ২০০৯ সালে শুরু হয় বাংলাদেশ চামচঠুঁটো বাটান সংরক্ষণ প্রকল্প তরুণ গবেষক সায়েম ইউ চৌধুরীর নেতৃত্বে, তখন জানা যায় কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ এই অতি বিরল পাখির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন আবাস। তখন থেকে প্রতিবছরই ২০টির মত চামচঠুঁটো বাটানের আগমন ঘটে সোনাদিয়ায়। এই পাখি রক্ষার সারা বিশ্বের প্রধান ব্যক্তিত্ব ক্রিস্তফ জকলার এর মাঝেই একাধিকবার ঘুরে গেছেন বাংলাদেশে, বার বার বলেছেন সোনাদিয়া সংরক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে।
বাংলাদেশ চামচঠুঁটো বাটান সংরক্ষণ প্রকল্পের গবেষক মোহাম্মদ ফয়সাল, আবিদা রহমান চৌধুরী এবং সাকিব আহমদের সাথে আজ ভোরে যাত্রা শুরু করেছিলাম আরামবাগ থেকে গ্রিন লাইন বাসে করে। উদ্দেশ্য আগামি কয়দিন সোনাদিয়া, মহেশখালি এবং কক্সবাজারে চামচঠুঁটো বাটান এবং অন্যান্য জলচর পাখি পর্যবেক্ষণ এবং গোণা। চট্টগ্রামে শহরের বিটকেল জ্যামের কারণে ভ্রমণ বিলম্বিত হতে হতে চকোরিয়ার আরও আটকে কক্সবাজারে পৌছাতেই বেজে গেল রাত নয়টা।
ভ্রমণের ফাঁকে পড়ে শেষ করলাম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের বই নাডা দ্য লিলি, কৈশোরে অ্যালান কোয়াটারমেইন পড়ার পর থেকেই জুলু বীর আমস্লোপোগাস নিয়ে একটা বিশাল কৌতূহল ছিল মনে, আজ সেই তৃষ্ণা কিছুটা মিটল, কাহিনীতে অনেক চমৎকারিত্ব ছিল, আর সেবার ঝরঝরে অনুবাদের মান বজায়ই ছিল। আর সারা সন্ধ্যা আবার খুব ধীরে ধীরে উপভোগ করে পড়া হল পূর্ণেন্দু পত্রীর- কথোপকথন।
তুমি আমার সমুদ্রতীর,
আমি তোমার উড়ন্ত চুল
কথোপকথন পড়তে পড়তেই বেশ অনেকদিন পর প্রবেশ করলাম নোনা দরিয়ার তীরের শহর কক্সবাজারে, পরিবর্তন চোখে লাগে, গাছের চেয়ে হোটেল বেশি মনে হচ্ছে, মানুষের চেয়ে রিক্সাও বেশি। মাছির পর ছেকে ধরে তারা জানালো সাগরতীরের প্রায় সকল হোটেলই ফাঁকা অবরোধের ঠ্যালাতে।
রাত সাড়ে দশটা বাজল, ঝাউবন রেস্তোরাঁ থেকে কয়েক ধরনের ভর্তা আর সামুদ্রিক মাছ দিয়ে উদরপূর্তি করে ফিরলাম কদিনের ডেরায়, তারস্বরে মাইক বাজছে এখনো! আকাশে প্রায় অদৃশ্য চাঁদ, ঝকঝকে তারার দল আছে, হয়ত তাদের সাথে কথা বলার জন্যই রাতে যাব বেলাভূমিতে, সঞ্জীবদার গান ঠোঁটে নিয়ে-
চোখটা এতো পোড়ায় কেন
ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও
সমুদ্র কী তোমার ছেলে
আদর দিয়ে চোখে মাখাও ।।
কাল ভোরে জোয়ারের সময় অনুয়ায়ি রওনা হব মহেশখালির পথে স্পীডবোটে। ফিরে এসে কথা হবে-
মন্তব্য
ফেসবুকে জানতে পেরেই গরম গরম পড়ে ফেললাম। নাডা দ্য লিলির অনুবাদ কি সেবা করেছে? কি নাম?
নাডা দ্য লিলি নামেই !
facebook
এত সুন্দর বর্ণনায় আমাদেরও ভ্রমণ হচ্ছে।।
তুষার রায়
সঙ্গে থাকুন-
facebook
আহ! শান্তি।আপনার লেখা পড়ে কি যে আনন্দ হয় ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না।লেখা চলুক. ।।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা
facebook
পাখি সংরক্ষণ প্রকল্পের কথা জানলাম। তারা আসলে কতোটা ইকুইপড এই ব্যাপারে। শুধু পর্যবেক্ষণ ও গণনা করে পাখি বাঁচানো যাবে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সবার আগে দরকার তথ্য, সেই পাখি কী ধরনের পরিবেশে থাকে, কী খায়, কোন কোন পথে যাতায়াত করে।
এগুলো জানার পর সেগুলো টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা, এবং সেই সাথে পাখির জন্য হুমকি জিনিসগুলোর প্রতি ব্যবস্থা নেওয়া।
সোনাদিয়াতে এই ভাবেই ঠেকানো গেছে পাখি শিকার, এবং বাটানের চরে বেড়ানোর জায়গা, বিস্তারিত লিখবো সোনাদিয়া থেকে ফিরে।
facebook
"চামচঠুঁটো বাটান একটি মহাবিপন্ন পাখি" - তার বিপন্নতা কাটাতে তোমাদের উদ্যোগে মন ভরে যায়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, আরও অনেক অনেক কাজ বাকি।
facebook
পাঁচহাজার মাইল উড়তে এদের কিরম সময় লাগে বড়ভাই?
..................................................................
#Banshibir.
আমি আপনার হাটুর বয়সী, পীরবাবা, আর আমারে ডাকলেন বড় ভাই????? ছি ছি , বুঝছি আপনিও চউ দার শিবিরে যোগ দিছেন!
facebook
আমি আর আমার হাঁটু একই বয়েসি, খামোকা আমার হাঁটুর বয়েস কমাচ্ছেন কেনু হোয়াই? আমি এবং আমার হাঁটু একই সাথে বড় হয়েছি, পোমান রয়েছে।
..................................................................
#Banshibir.
সব বুড়োখোকারা হাঁটু নিয়ে লেগে পড়ল ক্যান?
ইয়ে, চউদার শিবিরে আমিও সাথী হপো
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দেবদ্যুতি
facebook
অট-১: হ, কথোপকথনের জবাব নাই। পত্রী একখান হার্ডকোর অমানুষ।
অট-২: নাডা দ্য লিলি বাসায় থুইয়া আইছি। নিন্দুকেরা কয় অনুবাদের অবস্থা নাকি ভালা না?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গতকাল আপনার এ লেখা পড়ার মুগ্ধতা নিয়ে বিছানায় যাই। আজ অধীর আগ্রহ নিয়ে সোনাদিয়া থেকে আগতব্য লেখা পড়ার জন্য প্রিয় বাক্সটি সচল করি। লেখা না পেয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর আশায় নীচের g’র কাছে যাই। নীচের ‘g‘ হলো google, আর উপরের G হলো God। এ দু‘জনের কাছে নাকি চাইলে সবই পাওয়া যায়। অনুভূতি ঝুঁকি এড়াতে উপরেরটির সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করলাম না তবে নীচেরটির বিষয়ে হাতেনাতে প্রমান হিসেবে চামচঠোঁটু বাটানের বিষয় অনেক কিছুই জানতে পারলাম। জেনে আপনার লেখার পরবর্তী খন্ডের জন্য আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। পুতিনের দেশের সব মানুষ যে তার মত নেতিবাচকতা নিয়ে ব্যস্ত নয়, তা জেনে অর্থাৎ তার দেশের Birds Russia এবং Moscow Zoo ও যে পাখিটি রক্ষা প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত তা জেনে আরও বেশী ভাল লাগলো।
- পামাআলে
পোস্টটা ছোট হইয়া গেল না?
চামচঠুটো বাটন নিয়ে বিস্তারিত জানতে পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
স্বয়ম
বাহ্! ছবি, তথ্য, লেখা সব মিলিয়ে দারুণ!
লেখা ছোট হইছে! ছবিসহ বাকি গল্প আসুক জলদি।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
নতুন মন্তব্য করুন