সেই কাঁচা বয়সের কথা, জলকুমারির কথা, অপূর্ব সুন্দর সেই দ্বীপের কথা, পচিশ একর ছায়া সুনিবিড় শান্তি আর নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকতের কথা, স্বর্ণহৃদয় রডরিক আর ল্যাম্পনির কথা। সেই সাথে যোগ দিল লোভ, পাপ এবং মৃত্যু- দুঃস্বপ্নের মত ভয়ংকর!
–
বলছি সেই কাঁচা বয়সের কথায়, সাদা শার্ট- নীল প্যান্ট পরে হাইস্কুলে যাই, পরিচয় ঘটে গেল মাসুদ রানা নামের বাংলাদেশে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাইয়ের সাথে, সেবা প্রকাশনীর পেপারব্যাক বইয়ের মাধ্যমে। গোপন মিশন নিয়ে সে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর সুন্দর এক অন্তর। একা। টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কোথাও অন্যায়- অবিচার-অত্যাচার দেখলে রুখে দাঁড়ায়। পদে-পদে তার বিপদ-শিহরন-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি। ঠিক যেমন জীবন চাইতাম স্বর্ণালী কৈশোরে।
রানা ভক্তদের মুখে শুনলাম রানা অন্যতম শ্রেষ্ঠ বই আই লাভ ইউ, ম্যান, তিন খণ্ডের বই। এ কেমনতর নাম রে বাবা, লোকজনের সামনে জোরে বললেই কেমন ভাবে জানি তাকায়। তারপরও অনেক ঝামেলা করে একে একে তিনটি ইয়া মোটা মোটা প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার বই জোগাড় করে ডুবে গেলাম এক অপূর্ব সাগরে- ভারত মহাসাগরের মুক্তো সেন্ট মেরীতে। যেখানে রানা গড়েছে পচিশ একর ছায়া সুনিবিড় শান্তি, সেখানে তৈরি করেছে চারটে কামরা, চওড়া একটা বারান্দা, বাগান আর লতা-ঝোপের বাউন্ডারী ওয়াল। আম গাছ দিয়ে ঘেরা বাড়িটা থেকে সাদা সৈকত দেখতে পাওয়া যায়। শোনা যায় সাগরের উদাত্ত আহ্বান।
সেই যে বুঁদ হলাম আই লাভ ইউ, ম্যান-এ, আজও রয়েছি একই ভাবে। দেশ পেরিয়ে দেশান্তরে বইটি থাকে ব্যাগের সাইডপকেটে। ২০০২ সালে উত্তুরে ফিনল্যান্ডেও পাড়ি জমায় ক্রান্তীয় রোদের পরশ দেওয়া চির সুখের উৎস।
রাতের লাটভিয়ায় ইয়ুরমালা সৈকতে উথাল-পাথাল বাল্টিক সাগর দেখে মনে হয়েছিল সাগর কিভাবে সম্মোহন করে ডাকে রানাকে নিজেকে আদিমাতা দাবি করে। সে রাতে অনেক কষ্টেই নিজেকে সামলাতে হয়েছিল সাগরের জলের ঝাপিয়ে পড়া থেকে। মনে পড়ে ভেনিজুয়েলার প্রেমিকা আলদানা রিবেইরার সাথে প্রথম দেখাতেই ল্যাম্পের আলো লেগে ঝিক করে উঠল তার চোখের মণি দুটো, সবিস্ময়ে আবিস্কার করলাম ও-দুটো কালো নয়, দুপুরের কড়া রোদ সরাসরি মোজাম্বিক স্রোতে পড়লে তার রঙ যেমন গাঢ় নীল হয়ে ওঠে, চোখের মণি দুটো ঠিক সেই রকম। মনে পড়ে গেল মাসুদ রানা প্রথম প্রেম রাফেলা বার্ডের কথা। যে প্রথম প্রেম নক্ষত্রের চেয়েও আরও কোন নিঃশব্দ আসনে বেঁচে থাকে কোন এক মানুষের মনে, কোন এক মানুষীর তরে।
বারবার পড়েছি বইটা, রানার নিজের সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা প্রায় পরিণত হয়েছিল জীবন দর্শনে – নিজের সম্পর্কে সব সময় উঁচু ধারণা পোষণ করেছি আমি। নিজেকে চিনি, নিজের যোগ্যতার পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখি বলেই সম্ভব হয়েছে এটা। শারীরিক যোগ্যতা এবং চিন্তার স্বচ্ছতা অর্জনের জন্য জ্ঞান হবার পর থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস কারও চেয়ে কম নয়, তার কারণ নিজেকে মনের মত করে গড়ে তোলার কাজে কখনও ফাঁকি দিইনি আমি। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে ভদ্র হওয়া একটা অলঙ্ঘনীয় শর্ত, সে চেষ্টাই করছি। বসুন্ধরা শক্তের ভক্ত, নিজেকে আমি সেভাবেই গড়ে তুলেছি। উচ্চাশা ছাড়া মানুষের উত্তরণ ঘটেনা, তাই আমিও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। হয়ত ভাবতাম এমনটাই হওয়া উচিত জীবনে।
আর বইটা পড়তাম রোমাঞ্চের লোভে, অ্যাডভেঞ্চারে ডুব দেবার জন্য। সুনীল সাগরের অতল জলের আহ্বানে চলেছি হাঙর আর মোরে ইলদের হুমকি উপেক্ষা করে মোঘল সাম্রাজ্যের ভুলে না যাওয়া গুপ্তধন উদ্ধার করতে, যেখানে বাগড়া দিতে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ মানব শত্রুর দল- এই কাহিনীর আবেদন পুরনো হয় না কখনোই। যে জন্যই হয়ত ডাঁসা পেয়ারার মত ফিগারের অধিকারী নার্স সিস্টার মে-র অবুঝ প্রশ্ন ‘মেয়েমানুষের চেয়ে বড় নেশা আর কি হতে পারে, যার জবাবে রানার নির্লিপ্ত উত্তর ছিল- অ্যাডভেঞ্চার’, যা একদম বইটার মূলকথা মনে হয়।
ফিলিপ রডরিকের আই লাভ ইউ ম্যান। আপন ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আমি তোমাকে, সংলাপটা এত্ত বেশি অকপট স্বীকারোক্তি মনে হয়েছিল যে স্কুল জীবনের দুই বন্ধুকে বলেছিলামও। সেই বন্ধুরা হয়ত অতটা আপন নেই আজ, কিন্তু বইটা ঠিকই আছে বিছানার মাথার কাছের বইয়ের তাকে সগৌরবে।
কিন্তু প্রতিবারই পড়ার সময় ল্যাম্পনির মত বন্ধু হারাবার অংশটুকু এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে, না হলে বুকের ভেতরে এক তীব্র হাহাকার ঘুরে উঠে-বালির ওপর পড়ে আছে। ঘুমাচ্ছে। ওর এই ঘুম ভাঙায় সে-সাধ্য নেই কারো। থমকে দাড়িয়ে পড়েছি, তাকিয়ে আছি ল্যাম্পনির দিকে, কিন্তু চোখের সামনে অন্য সব দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি আমি। ল্যাম্পনিকেই দেখছি, কিন্তু এ ল্যাম্পনি বোটের দড়িদড়া ধরে ঝুলছে, আমার ব্যাগ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে রাফেলার হাত থেকে ছোঁ মেরে কেড়ে নিচ্ছে তার ব্যাগ, গ্রেট মুঘল তার দিকে বাড়িয়ে দেয়ায় ভয়ে পেছনে লুকিয়ে ফেলছে মুঠো পাকানো হাত দুটো, শালা বস বলে চেঁচিয়ে উঠছে, আঁটো প্যান্ট পরে হৈ-হুল্লোড় করছে মেয়েদের সাথে লর্ড নেলসনে। কাঁদছি না আমি, কিন্তু অনুভব করছি কাঁদতে পারলে বেঁচে যেতাম।
ঠিক এমনটাই অবস্থা হয়, মনে হয় কাঁদতে পারলে বেঁচে যেতাম, কিন্তু ঠিকই কাঁদতে হয়ত রডরিকের মারা যাবার দৃশ্যে। যখন মনে মনে স্টেনগানের গুলি চালিয়ে তুলা তুলা করে ফেলি হুমায়ূন দাদা নামের বিশালদেহী বদমাশটাকে।
এমনভাবেই জীবন পথের নানা বাঁকে আই লাভ ইউ,ম্যান পাশে এসে দাড়ায় বিপদের মুহূর্তে, দুঃখের মুহূর্তে এমনকি প্রেমে পড়ার বোকা বোকা অথচ তুঙ্গস্পর্শী সুখের মুহূর্তেও। কোন এক অবাক তরুণীর চোখে চোখে রাখার পরপরই মনে হয়েছিল- দেখামাত্র সবটুকু চিনতে পারি এমন মেয়েদের সান্নিধ্য পেতে অভ্যস্ত আমি। যারা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং সূক্ষ সৌন্দর্যের অধিকারিণী তাদের কাছে ঘেঁষার সৌভাগ্য এর আগে কখনও হয়নি আমার। পরিবেশটা আমার অভিজ্ঞতার বাইরে, বুঝতে পেরে নিজের সম্পর্কে একটা অনিশ্চতায় আক্রান্ত হলাম আমি।
তারপরও স্বপ্ন থাকে। একদিন হয়ত তাকে বলাও যাবে চল যাই অন্য কোনখানে, হয়ত না ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ায় যেখানে নীল সাগর আর সাদা বালি, উথাল পাথাল ঢেউয়ের মাথায় চড়ে আমরা, মোটাতাজা ক্রাইফিশ গনগনে কয়লার আগুনে ঝলসানো হচ্ছে, চাঁদ উঠেছে আকাশে, উম্মুক্ত প্রকৃতির কোলে তোমার পাশে হেঁড়ে গলায় গান গাইছি আমি। এই একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তেও রানা এসে দাড়ায় আমাদের পাশে! বলে, মনে রেখো ছোকরা ---আমার সমস্ত জীবনের শিক্ষা আর অভিজ্ঞতা বলে কেউ যখন কাউকে ভালবাসে সেই ভালোবাসার কথা ভুলে থাকা যায় না।
বন্ধুরা আপনারা সবাইই জানেন মাসুদ রানার প্রথম দুইটি বই ধ্বংস পাহাড় এবং ভারত নাট্যম বাদে প্রায় সবগুলোই কোন না কোন বিদেশি বইয়ের রূপান্তর। এবং যাদের অনেকগুলোয় নেওয়া হয়েছে কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রিয় লেখক উইলবার স্মিথের নানা বই থেকে। আই লাভ ইউ,ম্যান আসলে রূপান্তর করা হয়েছে উইলবার স্মিথেরই এক বিখ্যাত বই দ্য আই অফ দ্য টাইগার থেকে।
স্মিথের লেখার খুব ভক্ত বলেই মনে করি নিজেকে বিশেষ করে রিভার গড, সেভেন্থ স্ক্রোল পড়ে মহা মুগ্ধ হয়েছিলাম, তার নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে থাকার সময়ে তক্কে তক্কে ছিলাম যদি দেখা হয়ে যায়, হয় নাই, তাতে অবশ্য আফসোস নেই কোন। কিন্তু কোন আফসোস বাড়াতে চাই না জীবনে, যেই জন্য দ্য আই অফ দ্য টাইগার বইটি কোনদিনই পড়ব না আমি। হয়ত তা আই লাভ ইউ,ম্যান-এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বই, হয়ত বা না, কিন্তু তা জানতে চেয়ে, তুলনা করতে যেয়ে নিখাদ ভাল লাগাকে বিসর্জন দিতে চাই না কোন ভাবেই। নাই বা পড়া থাকল দ্য আই অফ দ্য টাইগার, চির সাথী হয়ে থাকুক আই লাভ ইউ,ম্যান।
(আজ ১৯ জুলাই ছিল মাসুদ রানার জনক কাজীদার জন্মদিন। আবারও শুভ জন্মদিন কাজীদা, অন্তত শতবর্ষী হন সুস্থ শরীরে, চির সবুজ মন নিয়ে।
আই লাভ ইউ,ম্যান- বইটি থেকে নেওয়া লাইনগুলো বোল্ড করে দিলাম )
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গুলি না হে , গোলাপের বড্ড প্রয়োজন এই সমাজে
facebook
‘আই লাভ ইউ, ম্যান’ খুব ভালবাসার মতোই বই, সাথে রাখি না, সংগ্রহে রেখেছি
দেবদ্যুতি
আসলেই
facebook
ধন্যবাদ
facebook
এটা পড়তে পড়তে মনে হলো, সময় হয়েছে রানা রিভিসন দেবার...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
দিয়ে ফেলেন-
facebook
আই লাভ ইউ ম্যান একবারই পড়েছি। এরপর এতটাই কষ্ট লেগেছিল যে আর পড়বার সাহস পাই নি। কাজী দা'র তুলনা একমাত্র কাজী দা'ই।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
সত্য
facebook
অনুদা, টপিকের বাইরে একটা প্রশ্ন ছিল, আপনার জানামতে এমন কি কোনো দেশ আছে যারা তাদের দেশের এক দুই শ বছর আগের বন্যপ্রানিদের কিছু নিয়ম কানুনের প্রয়োগ আর ভালবাসা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে নাকি সময়ের স্বাভাবিক পরিক্রমায় ই এরা হারিয়ে যায় ?
অবশ্যই পেরেছে, এবং ফিরিয়েও এনেছে, ইউরোপেই আছে একাধিক উদাহরণ।
facebook
মনে আছে, মাসুদ রানা পড়তে শুরু করার গোড়ার দিকেই এই বই কিনেছিলাম, নবাবপুর রোডের এক সরু গলির মাথায় এক বৃদ্ধ চাচা সেবা'র পুরনো বই বিক্রি করতেন সেই সময়। তো একদিন যখন বই বাছাই করছিলাম, চাচা নিজেই সেধে আমাকে বইটি দিলেন, বললেন, 'এইডা পইড়া দ্যাখ, খুব ভাল বই!' চাচাকে প্রায়ই তার দোকানে বসে বই পড়তে দেখতাম, তাই চাচার কথায় আস্থা রেখে বইটা কিনে ফেললাম বটে, কিন্তু ভাল রকম অস্বস্তিতে পড়তে হল এরপর। এমনিতেই সবাই জানে, মাসুদ রানা বড়দের বই। তার উপর বইয়ের শিরোনামঃ আই লাভ ইউ, ম্যান! কি না কি জানি আছে বইটাতে! মাসুদ রানা লুকিয়েই পড়তাম বাড়িতে, কিন্তু এই বইটি পড়ার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা বই পড়ার আনন্দ অনেকখানি মাটি করেছিল।
।।।।।।।।।।।।
অনিত্র
facebook
____________________________
শুভেচ্ছা
facebook
'আই লাভ ইউ ম্যান' আমারও প্রিয় বই ছিল। এটা রানা সিরিজে একেবারেই ব্যতিক্রমী একটা বই। তবে অন্যদের মতো আমার কখনো রানা সিরিজের বই পড়তে পারিবারিক বলয়ে কোন সমস্যা হয়নি, কখনো লুকোছাপা করতে হয়নি। ইন ফ্যাক্ট, আমি আব্বার সাথে রীতিমত কম্পিটিশন দিয়ে - কাড়াকাড়ি করে রানার বই পড়তাম। রানা, কুয়াশা, ভয়াল, ওয়েস্টার্ন, সেবা, বণ্ড, চেজ - সবকিছু। আম্মা ছিলেন আমাদের দু'জনের এই পড়াপড়ি-উৎসবের অসহায় দর্শক। আবার মাঝেমধ্যে ইন্ধনদাতাও - কারন মুডে থাকলে, নিজে না পড়লেও দুই-চারটা রানা বা কুয়াশা কিনে এনে আমাদের এই যৌথ-গ্রন্থযজ্ঞের যজ্ঞাগ্নিতে আহুতি দিতে দ্বিধা করতেন না! 'আই লাভ ইউ ম্যান'-ও আমার এভাবেই পড়া। এইসব সোনালি দিনগুলি ভোলার নয়। আমার অন্যকোন লোকে চলে যাওয়া বাবা-মাকে নিয়ে আমার সুন্দর সুখময় স্মৃতিগুলির একটা বড় অংশই এই বই পড়া আর সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলি নিয়ে। কাজি আনোয়ার হোসেনের কাছে আমি এজন্যে সীমাহীণভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি শুধু আমাকে বই-পড়াই অভ্যাস করাননি, ছেলেবেলায় একটা মধুমাখা শৈশব সম্ভব করে তুলেছেন অফুরান মধুর ভাণ্ডার অনবরত উজাড় করে দিতে দিতে। আবার সেই বই পড়ার সুবাদে এই মধ্যবয়সে পেয়েছি হারিয়ে যাওয়া কিছু প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো সুখস্মৃতির অমুল্য মণিমুক্তো।
কৃতজ্ঞতা কাজিদা, শুভ জন্মদিন!
-------------------------------------------------
অঃটঃ রানা-কুয়াশা পড়তে পড়তে আমার সবসময়েই মনে হয়েছে এগুলি নিয়ে যদি কোন ভাল ছবি হতো - তাহলে কি দারুনই না হতো! কিন্তু কখনই তা হয়নি। আমি অবশ্য ঐ উইগ-পরা ভুড়িয়াল নায়কের (সোহেল রানা) অভিনীত হাস্যকর ছবিটাকে এখানে ধর্তব্যে আনছি না। পরে একসময় যখন বুঝতে পারলাম রানা-কুয়াশা নিয়ে ভক্ত-পাঠকদের তৃপ্ত করতে পারে এমন কোন স্মার্ট ছবি এখানে হওয়ার প্রায় কোন সম্ভাবনাই নেই, তখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে খোঁজা শুরু করলাম রানা যেসব বইয়ের ছায়াবলম্বে লেখা - সেই মূল কাহিনিগুলির উপর ভিত্তি করে কোন চলচ্চিত্র হয়েছে কিনা। কিন্তু সেসময় এবিষয়ে খুব একটা তথ্য সংরহ করা সম্ভব হয়নি - হঠাৎ দুয়েকটা বণ্ড বা হ্যাডলি চেজের বই পড়তে গিয়ে মিল আবিষ্কার করা ছাড়া। ছবি / ভিডিওর তো প্রশ্নই উঠে না। তখন তো আর ইন্টারনেট ছিল না। তারপরও নাই-নাই করেও দু'চারটা ছবি দেখা হয়েছে। যেমন মধুমিতায় এ্যালিস্টেয়ার ম্যাকলীনের কাহিনি অবলম্বনে রিচার্ড বার্টন অভিনীত "হোয়্যার ঈগলস্ ডেয়ার" (রানাঃ 'মৃত্যুপ্রহর') আর গ্রেগরি পেক অভিনীত "দ্য গান্স অফ নাভারোন" (রানাঃ 'দুর্গম দুর্গ'), মধুমিতাতেই মনে হয় উইল হেনরির কাহিনি অবলম্বনে আর গ্রেগরি পেক ও ওমর শরীফ অভিনীত "ম্যাকেনাজ গোল্ড" (রানাঃ 'লালপাহাড়'), বলাকায় ম্যাকলীনেরই আরেক কাহিনি অবলম্বনে "ফিয়ার ইজ দ্য কী" (রানাঃ 'শত্রু ভয়ঙ্কর'), বিটিভি-তে মুভি অফ দ্য উইক হিসেবে ম্যাকলীনেরই "ক্যারাভান টু ভ্যাকারেস" (রানাঃ 'জিপসি') আর ফ্রেডারিক ফোরসাইথের "দ্য ডে অফ দ্য জ্যাকাল" (রানাঃ 'সেই উ সেন'), আর স্যাটেলাইট চ্যানেলে এ জে কুইনেলের কাহিনি অবলম্বনে ডেনজেল ওয়াশিংটন অভিনীত "ম্যান অন ফায়ার" (রানাঃ 'অগ্নিপুরুষ') দেখেছি। দেখার ইচ্ছা আছে আমার প্রিয় রানার বইগুলির (মূল কাহিনির) চলচ্চিত্রায়ন, যেমন - 'তুষার যাত্রা' (কোলিন ফোর্বসের 'এভালানশে এক্সপ্রেস'), রানার "মুক্ত বিহঙ্গ" (উইলবার স্মিথের 'ক্রাই উল্ফ'), অন্ধকারে চিতা (উইলবার স্মিথের 'দ্য লেপার্ড হান্টস্ ইন ডার্কনেস'), বিদায় রানা (জেফ্রি জেঙ্কিন্সের 'আ গ্রু অফ আইস আকা দ্য ডিসএ্যাপিয়ারিং আইল্যান্ড'), ইত্যাদি। আই লাভ ইউ ম্যান, অর্থাৎ উইলবার স্মিথের "দ্য আই অফ দ্য টাইগার"-এর বোধহয় চলচ্চিত্রায়ন হয়নি এখনো।
এই মন্তব্যটা লিখতে লিখতে নেটে সার্চ দিয়ে রানার ছায়াসূত্র এইসব মূল কাহিনি-ভিত্তিক বেশ কিছু ছবি ইন্টারনেটেও পেয়ে গেলাম। এর কিছু দেখা, আবার কিছু এখনও অদেখা। আগামীকাল শুক্কুরবার - বসে বসে দেখবো অদেখাগুলি। আমার মত মূল কাহিনি-ভিত্তিক ছবিগুলি দেখে যারা রানার চলচ্চিত্র-রূপ দেখার আশা দুধের স্বাদ ঘোলে হলেও মেটানোর মত করে পূরণ করতে চান - কিম্বা এমনিতেই আগ্রহী - তাদের জন্য ছবিগুলি নীচে এমবেড করে দিলাম (শুধু 'অন্ধচক্র' রানার বই না, এটা বিশু চৌধুরীর লেখা সেবার বই) :--
ক্লিকান: মৃত্যুপ্রহর,
লালপাহাড়,
দুর্গম দুর্গ,
টার্গেট নাইন,
জিপসি,
চারিদিকে শত্রু,
অগ্নিপুরুষ,
কালকূট,
রত্নদ্বীপ,
নীল আতঙ্ক,
অন্ধচক্র।
প্রস্থান!
****************************************
বাহ বাহ !
facebook
স্মৃতির প্রান্তরে বর্তমান উড়ে যায়,
আর আমিও পড়বো না ঐ বই।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন