ড্রাকুলার দুর্গে

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ০৫/০৯/২০১৫ - ২:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_5744 (2)

ট্রান্সেলভেনিয়ায় আঁধার নেমে আসছে সেই দিন, পাহাড়ি অন্ধকার বাদুড়ের মত নিকষ ডানার বিস্তার ঘটিয়ে হটিয়ে দিচ্ছে সূর্যের অস্তিত্বের শেষ চিহ্নকেও, এমনকি দিগন্তে রেখায় যেখানে সূর্যদেবের রথ কয়েক মুহূর্তের জন্য একটু বেশি সময় গোধূলি-আলো ছড়িয়ে ভেসে থাকে তাও যেন আজ কী এক আশঙ্কায় একটু দ্রুতই বিদায় নিল। আমাদেরও তাড়াহুড়ো বাড়ছে, আমরা বলতে পূর্ব-ইউরোপ ভ্রমণে বের হওয়া চার বাঙ্গালী (রমজান ভাই, শাহিন ভাই, বড় ভাই তানভীর অপু এবং আমি), তাড়াহুড়োর মূল কারণ সেই রাতের গন্তব্য যে শহর তা জানি কিন্তু কোন সরাইখানার সাথে পূর্ব-যোগাযোগ করা হয় নি। পাহাড়ি এলাকায় ছড়ানো-ছিটানো ক্ষুদে ক্ষুদে জনপদ, এর মাঝে গ্রীষ্মকাল বিধায় পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম, কাজে কাজেই থাকার জায়গা মিলতে ঝামেলা হতেই পারে, আর এটা আমরা কোন মতেই চাই না, কারণ এটি ট্রান্সেলভেনিয়া।

We are in Transylvania and Transylvania is not England. Our ways are not your ways, and there shall be to you many strange things. -- Dracula (Bram Stoker) ।

IMG_7166

জি ব্রাম স্টোকারের বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ড্রাকুলার নায়কের আবাস এখানেই। তার সাথে দেখা হোক বা না হোক, সেই ফেনিয়ে ওঠা কুয়াশা, প্রেতাত্মার মত ভেসে চলা মেঘ, পাহাড়ের মুখব্যাদান করে থাকা নীরবতা, শীতল বৃষ্টি এমনকি স্থানীয়দের ব্যবহারে উষ্ণতার অতিমাত্রায় অভাব সবই যেন নিজের অজান্তে কোন এক অমঙ্গলের গান গাইছে। তারপরও রোমাঞ্চের আশাতেই হয়ত সাহস করে পথের বাঁকে আবিষ্কার করলাম সেই রাতের গন্তব্য ব্রাসভ শহর। জেকে ধরা আঁধারে চটজলদি সেই ব্যাকপাকারস হোস্টেল সামনে পেলাম সেইখানেই উঠে গেলাম অচেনা অলি-গলিতে কালো ওভারকোট পরা তীক্ষ শ্বদন্তের মালিকের হঠাৎ সাক্ষাৎ এড়াতে।

IMG_7193

সেই হোস্টেলের মালিক দম্পতির প্রিয় শব্দ ছিল ‘না’! গরম পানি আছে? ‘না’! রাতের খানা মিলবে? ‘না’! এক্সট্রা বালিশ আর কম্বল মিলবে? ‘না’! কফি? ‘না’! শুধুই এইটাতেই নয় তাদের এইখানে স্লিপিং ব্যাগ ব্যবহার করলে বিশাল অংকের জরিমানা করা হবে, ব্যাপারটা কি আসল নাকি কৌতুক এইটা জিজ্ঞাসা করলেই পুরো বেলু লুগোসি অভিনীত কাউন্ট ড্রাকুলার মত ভেংচি কেটে জানালেন যে অনেক আগে কোন পর্যটকের ব্যাগ থেকে ছারপোকা বেরিয়ে নাকি তাদের বিশাল অংকের অর্থের ক্ষতিসাধন করেছিল, তারপর থেকেই এই সাবধানতা। যাক, হোটেলের মালিকের ব্যবহার যায়ই হোক, বিছানা-পত্তর বেশ ভালই, সেইখানে ছারপোকাও নেই, ব্যাকপ্যাক সেখানে ফেলে বেরিয়ে পড়লাম সবাই জঠরানল নেভানোর জন্য।

IMG_7228

কেমন যেন মরা একটা শহর, দালান-কোঠা ভালই আছে কিন্তু প্রাণ নেই! ঝিরঝির বৃষ্টিতে স্থানীয় খাবারের খোঁজে বেশি ঘুরাঘুরি না করে হাতের কাছে কে এস সি-তেই প্রবেশ করতে হল। খেতে খেতেই চারিদিকে ট্যুরিস্টের ভিড় দেখে রমজান ভাই দরাজ গলায় হো হো করে হেসে বললেন “দেখছ মানুষের কাজ, ড্রাকুলার মত একটা কল্পনার জিনিস নিয়ে কতই না উৎসাহ আর ভয় ”। জিজ্ঞাসা করলাম ড্রাকুলার কথা কিছু জানা আছে কিনা। জানা গেলে তিন ভ্রমণসঙ্গীর কেউই ড্রাকুলার বই বা সিনেমা কোনটা সম্পর্কেই খুব একটা মাথা ঘামান নি, তাই ভাজা মুরগির ঠ্যাং আর ডানা চিবোতে চিবোতে মিনিট চারেকের মধ্যেই তাদের বললাম ট্রান্সেলভেনিয়ার আতঙ্কের কথা, রক্তচোষা বাদুড় আর উধাও হয়ে যাওয়া রোমানিয়ান রাজার মৃতদেহের কথা! ফলাফল মিলল সেই রাতেই! কেউই আর রাতে একটা টয়লেটেও যেতে চাচ্ছিল না! আর পাকনামো করে খোদ ড্রাকুলার রাজ্যে বসে কৈশোরের রোমাঞ্চ ফিরিয়ের আনার জন্য গা শিরশিরে অনুভূতি নিয়ে পড়ছিলাম সেবা প্রকাশনীর প্রকাশিত ড্রাকুলার অনুবাদ।

IMG_7232

সত্যি বলতে, সেই রাতে জানালার বাহিরে তাকিয়ে হঠাৎ হঠাৎ মনে হয়েছিল যে কিছু একটা ঝুলে আছে কিনা, কেউ জানালা দিয়ে আসতে গলে বেরিয়ে আসবে কিনা!

গরাদশূন্য জানালা গলে আস্তে করে বেরিয়ে এল কাউন্টের মাথাটা। অবাক লাগল। গভীর রাতে এভাবে জানালা গলে বেরিয়ে আসছেন কেন কাউন্ট? কয়েক মুহূর্ত পরেই আমার অবাক ভাবটা গভীর আতঙ্কে পরিণত হল। বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হল হৃৎপিণ্ডের গতি। জানালা গলে বেরিয়ে এসে নব্বই ডিগ্রী খাড়া মসৃণ দেয়াল বেয়ে টিকটিকির মত এদিকেই উঠে আসছেন কাউন্ট। বাতাসে বিশাল বাদুড়ের ডানার মত উড়ছে কালো আলখেল্লার দু’পাশ।

সকালে ঘুম ভাঙ্গল কিছুটা আনন্দের অনুভূতি নিয়েই, নতুন একটা দিনে জীবিত অবস্থায় মুখের উপর রোদের কোমল স্পর্শের আনন্দময় অনুভূতি, পিশাচ ডেরা থেকে বেরিয়ে স্বর্ণকেশী রাজকন্যাকে উদ্ধার করে দুর্গ পানে ফেরার সুখের মত। আমাদের যাত্রা তখন ব্রান দুর্গের পানে।

জি হ্যাঁ, এই ব্রান দুর্গই সারা বিশ্বে ড্রাকুলার দুর্গ বলে পরিচিত। যদিও ড্রাকুলার লেখক ব্রাম স্টোকার আদৌ এই দুর্গ নিয়ে জানতেন কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, এবং খোদ ড্রাকুলার চরিত্র যাকে নিয়ে রচিত সেই ভ্লাদ টেপাস আসলেই এই দুর্গে কত রাত অতিবাহিত করেছেন সেইও প্রশ্নসাপেক্ষ তো বটেই, তারপরও ইতিহাসপ্রেমী এবং ভ্যাম্পায়ার তথা ড্রাকুলামুগ্ধদের কাছে রোমানিয়া মানেই ব্রান দুর্গ।

IMG_5718

IMG_5717

১৪৪৮ সালে ওয়ালিসিয়ার যুবরাজ হিসেবে জন্ম নেওয়া তৃতীয় ভ্লাদ কিভাবে ভ্লাদ টেপাস বা শূলে চরানো ভ্লাদ থেকে ইতিহাসের ধূসর পাতা থেকে পরবর্তীতে কাউন্ট ড্রাকুলা হিসেবে ফিকশনের পাতায় আশ্রয় নিলেন সে এক চমকপ্রদ ঘটনা। তবে রোমানিয়া বা পূর্ব-ইউরোপের চেয়ে বরং পাশ্চাত্যেই ভ্লাদকে এক অতিমাত্রায় নিষ্ঠুর, রক্তপিপাসু শাসক হিসেবে দেখানো হয়েছে। বলা হয়ে থাকে অটোম্যান সম্রাট ২য় মেহমুদ ভ্লাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় ভ্লাদের রাজধানির কাছে এক অঞ্চলে শূলে চরানো ২০,০০০ মৃতদেহ দেখে , নিষ্ঠুরতা চাক্ষুষ করেই অসুস্থ বোধ করেছিলেন।

রোমানিয়ায় ভ্লাদ টেপাসকে একজন দেশপ্রেমী রাজা হিসেবেই দেখা হয় যে কিনা আক্রমণকারি তুর্কি হানাদার এবং অন্যদের থেকে মাতৃভূমি রক্ষা করতেই সারা জীবন যুদ্ধ করে গেছে, যার মৃত্যুর কারণ আজ রহস্যে ঘেরা, এবং যে কবরটি তার কবর হিসেবে ধরা হত পরবর্তীতে সেখানে কোন মৃতদেহ পাওয়া যায় নি বিধায়ই হয়ত অমর ভ্লাদের গল্প ডানা মেলা শুরু করে। ভ্লাদের জন্মের সময় তার রাজা বাবা বিশেষ মিশনে জার্মানিতে ছিলেন এবং সেখানে রোমান সম্রাট সিগিস্মুন্ড কতৃক ড্রাকুল বা অর্ডার অফ ড্রাগন পদবিতে ভূষিত হন, যাদের মূল মিশন ছিল হামলাকারি অটোম্যান এবং অন্যদের থেকে ইউরোপের খ্রিষ্টীয় ধর্ম এবং ভূমিকে রক্ষা করা।

কিন্তু এত কিছুর পরও মাত্র ১৩ বছর বয়সে ভ্লাদ এবং তার ভাইকে তুর্কি সৈন্যরা রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে অটোম্যান সুলতানের কাছে নিয়ে যায়, যেখানে সে তুর্কি ভাষা শেখা, আল কোরআন পড়া, নানা ভাষায় বিদ্যালাভ এবং যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করে। ধারণা করা হয় সেই সময়ে দুঃসহ স্মৃতিগুলোয় তাকে বিষণ্ণ এক অত্যাচারী মানুষ পরিণত করে পরবর্তীতে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ শূলে চরাতে তার যেমন কোন দ্বিধা হয় নি, বরং এইভাবে মানুষ খুন করতে হয়ত উপভোগই করতেন। সম্ভবত ১৪৭৭ সালের প্রথম দিকে ভ্লাদ টেপাস অজ্ঞাত কারণে নিহত হন।

download
(এই ছবিটি নেট থেকে সংগ্রহ করা)

এর কয়েক’শ বছর পরে আইরিশ লেখক ব্রাম স্টোকার ড্রাকুলা উপন্যাস রচনা করেন যার প্রধান চরিত্র রক্তপায়ী কাউন্ট ড্রাকুলাকে, যাকে বাস্তবের ভ্লাদ টেপাসের চরিত্র অবলম্বনে লেখা বলেই মনে করা হয়, আর ড্রাকুলা যে সেই ড্রাকুল বা অর্ডার অফ ড্রাগন উপাধি থেকে নেয়া সে তো বলাইবাহুল্য। সেই থেকে সারা বিশ্বের পিশাচকাহিনী বা ভ্যাম্পায়ার মানেই তাদের চূড়াকুলশিরোমণি ট্রান্সেলভেনিয়ার এই কাউন্ট।

(ড্রাকুলা বইটি প্রসঙ্গে একটি কথা। একবার গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ কিউবা যাবার সময় বরাবরের মতই বেশ কিছু বই নিয়ে গেছেন তার পড়ুয়া বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রোর জন্য। ফিদেল একটি বইয়ে এমন মজেছিলেন যে সারা রাত বইটি পড়ে পরদিন সকালে গ্যাবোকে বলেছিলেন “কোথায় পেলে এই বই? এতদিন পড়ি নাই কেন অসাধারণ এই সাহিত্য!” বইটির নাম ছিল ড্রাকুলা, লেখক ব্রাম স্টোকার। অনেক সাহিত্যবোদ্ধার মতেই ড্রাকুলা পৃথিবীর অন্যতম ভুল বোঝা এবং ভুল কারণে জনপ্রিয় একটা বই। এটি মোটেও ভ্যাম্পায়ার বা ভূতের কাহিনী নয়। এটি কয়েকজনের ডায়েরি বা কাহিনী একই সমান্তরালে চলছে এই স্টাইলে লেখা বিশ্বের প্রথমদিকের উপন্যাসগুলোর একটি। আর ব্রাম যেহেতু আইরিশ ছিলেন, অনেকেই মনে করেন রক্তচোষা অমর ড্রাকুলা আসলে ব্রিটিশ উপনিবেশকতার একটা প্রতিচ্ছবি, যারা বেঁচে থাকে প্রজাদের রক্ত চুষে।

বন্ধুরা, এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে একবার পড়ে দেখতে পারেব ড্রাকুলা, ঠকবেন না! )

ব্রান কে বলা চলে ব্রাসভের একটা উপশহর মত ছোট্ট জনপদ, যেখানে প্রবেশের পরপরই পাহাড় চুড়োয় সবুজ বন ঘেরা লাল ছাদের প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীন মধ্যযুগীয় সুদৃশ্য দুর্গটি চোখে পড়ে। এমন দুর্গ মধ্য ইউরোপে বিরল কিছু নয়, কিন্তু সেই যে পরিবেশের প্রভাব, একে তো দুর্গম ট্রান্সেলভেনিয়া তার উপর আবার খোদ ড্রাকুলার আস্তানা বলে কথা, দেখামাত্রই মনে হল জানালা দিয়ে কেউ উড়ে বেরোল কিনা কানা ডানা ঝাপটে! বেশ লম্বা লাইন সেই সাত সকালেই দুর্গের সামনে।

IMG_5715

শহরের ছোট বাজারটিও মজার, ড্রাকুলাকে বেচা হচ্ছে নানা ভাবে- মুখোশ, কাপ, পোশাক- যে যেভাবে পারে! পুরাণকথার পরাক্রমশালী দানব আজ পয়সার হাতে বন্দী।

IMG_5794

লাইন ধরে ঢুকতেই সামনে চোখে পড়ল গ্রামের কৃষকের বাড়ির মত কাঠের কুঁড়ে, মনোমুগ্ধকর নরম সবুজ শ্যাওলায় ঢাকা ছাদ।

IMG_5722

তার পাশ দিয়েই পাথর বসানো রাস্তা একেবেকে চলে গেছে উপরের দিকে দুর্গের প্রধান ফটক পর্যন্ত। থেমে থেমে বহু আরাধ্য এই গন্তব্য পৌঁছানোর আনন্দ পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ করে যেতে যেতে একটা অতি প্রাচীন ক্রুশও চোখে পড়ল।

IMG_5724

উল্লেখ্য যে ট্রান্সেলভেনিয়ার অধিকাংশ হোটেলেই শুকনো রসুনের মালা রাখা হয়, বিশেষ করে ভিনদেশী শিশুদের জন্য, যাতে তারা রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারদের ভয় থেকে সামান্য হলেও মুক্ত থাকতে পারে, যেহেতু বলা হয় যে রসুন, ক্রুশ এবং ধুনোই পারে ঐ আঁধারের জীবদের দূরে রাখতে। ক্রুশ দেখেই উপরের জানালার দিকে তাকিয়ে পরখ করলাম যে কেউ আমাদের দেখছে কিনা, যদিও লোককথা মতে ড্রাকুলাসহ বিশ্বের সকল ভ্যাম্পায়ের এখন ঘুমোবার কথা, কিন্তু অজানা রোমাঞ্চের আনন্দ পেতে তো আর বাঁধা নেই!

IMG_5776

দুর্গের কাঠের ফটক পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম মধ্যযুগের সরু সরু গলি, সিঁড়ি আর একের পর এক গোছানো কামরাতে, কোথাও কোথাও আছে অস্ত্রের ভান্ডার, কোথাও আছে রোমানিয়ার রানি মারির সংগ্রহের নানা বস্তু।

IMG_5737

IMG_5770

বিশেষ ভাবে নজর কাড়ল রত্নখচিত মুকুট, মনে আছে যে ভ্লাদ টেপাসের ছবিতেও সবসময় এমন একটি মুকুট দেখা যায়!

IMG_5764 (2)

IMG_5763

এর মাঝে দরজার পাশে সিন্দুক দেখেই জনৈক শিশু বলে উঠল এটাই ড্রাকুলার কফিন কিনা, একজন আবার ফিসফিস করে বলল, হুস, ওর ঘুম ভাঙ্গিও না! তবে ঠিক দেখা মিলল এক কামরার যেখানে মধ্যযুগে মানুষকে অত্যাচারের জন্য ব্যবহৃত নানা যন্ত্রের সংগ্রহের, বিশেষ করে চোখা চোখা কাঠের শলাকাসমৃদ্ধ দ্য আয়রন মেইডেনের! পাশে আবার ছবি এঁকে বোঝানো হয়েছে যে কোন যন্ত্র দিয়ে কিভাবে অত্যাচার করা হত!

IMG_5779

IMG_5778

এর পরপরই বেশ ফাঁকা একটু বারান্দা মত যেখানে দাঁড়ালে ড্রাকুলা দুর্গের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, লাল ছাদের টাওয়ার, পাথরের দেয়াল, সামনের উঠোন, কাছের সবুজ বন আর দূরের পাহাড়, কেবল রাতের চাঁদটাই অনুপস্থিত থেকে গেল অসাধারণ এক দৃশ্যপট রচনা থেকে। সেই লাল টালির এক কোণে আবার বেরসিকের মত ফুটে উঠেছে গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তলাল গোলাপ, বড়ই বেমানান যেন কালো জাদুর এই রাজত্বে!

IMG_5749

বারান্দায় দাঁড়িয়ে বেশুমার ছবি তোলা হল, এমনকি সেবা প্রকাশনীর ড্রাকুলা হাতেও। যদিও বাস্তবের ড্রাকুলার ভ্লাদ টেপাস এই দুর্গের সাথে কতখানি সম্পর্কিত ছিলেন তা নিয়ে ব্যপক ধোঁয়াশা আছেই। তবে ভ্লাদ যে এই দুর্গের পাশ দিয়ে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছেন তাতে কোনই সন্দেহ নেই, এবং ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন শত্রুপক্ষের হাতে বন্দী অবস্থায় এই দুর্গেই কয়েকদিন ছিলেন ভ্লাদ।

IMG_5788

দুর্গ প্রাঙ্গণে মিলল এক কুয়ো, যেখানে কিঞ্চিৎ টাকাপয়সাও দেখলাম ফেলছেন দর্শনার্থীরা। সেই পুণ্য সঞ্চয়ে না যেয়ে দুর্গের অন্য রাস্তা দিয়ে আমরা তখন ব্যস্ত সেই দিনের পরিকল্পনায়। ড্রাকুলার দুর্গ দেখার পরে তালিকায় ছিল ট্রান্সেলভানিয়ার জিলাপির প্যাঁচ খ্যাত রাস্তা Transfăgărășan দিয়ে গাড়ি চালিয়ে সূর্য ডোবার আগেই এই ছমছমে এলাকা পরিত্যাগের। সেই পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত আমরা তখন-

IMG_5753

(ভূতের গল্প পড়ে বা হরর মুভি দেখে ভয় পেতে পছন্দ করে অনেকেই, আমি সেই দলের মানুষ নই। ভয় পাওয়ার আনন্দ আমার পোষায় না। আর অজায়গা-কুজায়গায় প্রায়শই একাকী যাওয়া পড়ে বলে এগুলো পড়ে মাথাও ভারি করতে ইচ্ছে করে না। দূর্বা জাহান নামে এক পড়ুয়া বন্ধু আছে যে ঘ্যান ঘ্যান করা রক্ত ঝরা ভুত নেই কিন্তু সূক্ষ ভুতের অস্তিত্ব আছে, সেই সাথে আছে রক্তজমাট করা পরিবেশ- এমন গল্প পড়ে বিস্ময়ে আক্রান্ত হয়ে ভয় পেয়ে মুগ্ধ হতে বড় পছন্দ করে। ড্রাকুলা তেমনই একটি বই। আর ড্রাকুলার দুর্গ নিয়ে লেখা এই পোস্টটি তার জন্য থাকল। )


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

যথারীতি তথ্যবহুল এবং ছবিতে ভরা একটি পোস্ট... ভাল লেগেছে

স্বগবান

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ

হাসিব এর ছবি
  • এই জায়গায় যায় কীভাবে? খাওয়া দাওয়া কেমন?
  • ডিসপ্লের জিনিসপাতি নকল নকল ঠেকে। নতুন করে বানানো নাকি?
তারেক অণু এর ছবি

মুকুট তো আসল বলেছিল! অস্ত্র বলতে পারি না!!

আমরা তো গাড়িতে গেছিলাম, আলাদা ভাবে লেখা হয় নি। সাধারণত বুখারেস্ট থেকে বাস আসে ব্রাসভ পর্যন্ত, একরাত এখানেও থাক্তেও পারেন বা দুর্গ থেকে ফিরতে পারেন।

খাওয়া ভালই, খুব যে আলাদা কিছু না তা, প্রচুর ক্যাপসিকাম দেয়া।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

বুখারেস্ট থেকে প্রতি দু-তিন ঘন্টা অন্তর "গারা দা নর্দ" স্টেশন থেকে ট্রেন যায় ব্রাসভ অব্দি। ট্রেনে ভাড়া এই ৪৫ লেই এর মতো, যেতে লাগে ঘন্টা চারেক। ব্রাসভে রাত টা থেকে পরদিন সকালে ব্রাসভ বাসস্ট্যান্ড (পূর্ব ইউরোপের আর অনেক শহরের মত ব্রাসভের বাস আর ট্রেন স্টেশন কিন্তু পাশপাশি নয়, দুটি শহরের দু দিকে) থেকে ব্রানগামী বাসে যেতে পারেন এই দুর্গে। ব্রাসভ থেকে ব্রাণে যেতে লাগে এক ঘন্টার মতো, প্রায় প্রতি ঘন্টাতেই বাস পাওয়া যায়. বাস একেবারে নামিয়ে দেয় ক্যাসলের দোরগোড়ায়।

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

আইতাছি....

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

ওরে বাবা -

রানা মেহের এর ছবি

আমার ভুত ভয় লাগেনা, ভুতের গল্প আর সিনেমা ভয় লাগে!

এই জায়গায় যাবার প্ল্যান আছে। দেখি পরের বছর।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তারেক অণু এর ছবি

আমার ভুত ভয় লাগেনা, ভুতের গল্প আর সিনেমা ভয় লাগে! দেঁতো হাসি যা বলেছ আপু !!

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

হ্যাঁ, বইটি নেহাতই একটা ভূতের গল্পের বই নয়, কাউন্ট ড্রাকুলাও নেহাতই একটা মামদো ভূত নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। অনেক আগে যখন প্রথম ড্রাকুলা পড়ি, তখন ড্রাকুলার প্রাসাদ আর বাইরের রাস্তার যেরকম কল্পনা করেছিলাম, আসলেও তেমনি মনে হচ্ছে। পোষ্টটি নস্টালজিক এবং মনমুগ্ধকর! ধন্যবাদ!

তারেক অণু এর ছবি

খুন সুন্দর বলেছেন, ধন্যবাদ

কর্ণজয় এর ছবি

ঘুরে আসলাম। আজ রাতের জন্য, আপনার হাতের ঐ বইটা একটু দেবেন?

তারেক অণু এর ছবি

আপনার লেখা মিস করি-

মুস্তাফিজ এর ছবি

ড্রাকুলা ভালো পাই

...........................
Every Picture Tells a Story

তারেক অণু এর ছবি
নির্ঝর অলয় এর ছবি

আহ! ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা! সেবার অনুবাদ। ক্লাস সিক্সে পড়েছিলাম। ছেলেবেলাটা মনে পড়ে গেল অণুদা! ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

সেই, আমাদের কৈশোর মানেই সেবা=

অতিথি লেখক এর ছবি

ড্রাকুলার বই পড়বার পর প্রথমেই যা মনে হয়েছিল "আমিও ড্রাকুলা হমু।" আহ, ড্রাকুলা হলে আকাশে উড়া যায়, ইচ্ছামত যে কোন রূপ ধারণ করা যায়। এমনকি ৭০ বছরের বুড়ো থেকে একলাফে ২০ বছরের তরুণও হওয়া যায়। এমন সব দুর্দান্ত প্যাকেজ আর কোথায় পাব? লেখা বরাবরের মতই ভাল লেগেছে।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

তারেক অণু এর ছবি

হয়ে যান, এখনো সময় আছে-

অতিথি লেখক এর ছবি

আহ ড্রাকুলা। সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া ড্রাকুলা'র অনুবাদ পড়বার পর থেকেই ড্রাকুলা হওয়ার ইচ্ছে ছিল। ড্রাকুলা হলে আকাশে উড়া যায়, ইচ্ছেমত রূপ বদল করা যায়, ৭০ বছরের বৃদ্ধ থেকে একলাফে ২০ বছরের তরুণ হওয়া যায় আরও কত সুবিধা। এত প্যাকেজ একসাথে আর কোথায় পাব? লেখা বরাবরের মতই উপাদেয় হয়েছে। উত্তম জাঝা!

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।