প্রিয় আলী সাহেব,
আপনার কথা চিন্তা করলেই প্রতিদিন এক জানা কিন্তু অচেনা গাঢ় বিষাদ খানিকটা আক্রান্ত করে, না পারলাম এই জীবনে আপনার মত উপচে পরা লেখনী দিয়ে কোটি ভক্তকুলকে মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে রাখতে, না পারলাম ২২টি ভাষায় কবিতা পড়তে, না পারলাম ১৭ বছর বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথের স্নেহের বটবৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে, না পারলাম আফগানিস্তানের ‘শবনম’-এর চোখে চোখে রেখে ফার্সি বয়েৎ পড়তে, না পারলাম জালাকে কে জালা হুইস্কি পান করে হজম করে ফেলতে, না পারলাম দেশ-বিদেশের বেশুমার মেয়ের দলকে প্রেমের মায়ায় পটাতে।
আবার একই সাথে আপনি সুকারু ভালবাসা এবং রিনরিনে ভাল লাগায় ভাসান প্রতিদিন, আপনার লেখা, ভ্রমণ এবং জীবন যাপনের কিছু অংশ দিয়ে। ১৭ বছরের এক ব্যাদড়া ঘাড়ত্যাড়া কিশোর সম্পূর্ণ নিজের সিদ্ধান্তে সিলেট থেকে সোজা শান্তিনিকেতনে চলে যায় রবি ঠাকুর নামের এক ইন্দ্রজালের মায়ায় এই ভাবনা, এই দুঃসাহস আমাদের আপ্লুত করে। যুদ্ধ চলাকালীন আফগানিস্তানে বাদশাহের বড় ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিয়ে আব্দুর রহমানের রান্না গোস্ত-রুটি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন যে ভেতো বাঙ্গালী তার প্রতি একটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত সমীহ জাগে বইকি! যখন রাইন নদীর তীরে ভবঘুরে ট্র্যাম্প সেজে এই গ্রাম সেই গ্রাম ঘুরে মা-হারা কিশোরীকে যখন রবীন্দ্রনাথের কবিতা শোনান আপনি, কিংবা ডুসেলডরফে কাদায় আছাড় খেয়ে বা পানশালা থেকে ফেরার পথে যখন পুলিশের সাথে এঁড়ে তক্কো বাঁধান, জার্মান কিশোরী লটে যখন জীবনের প্রথমের ভালবাসা বলে ভিনদেশী সৈয়দ-কে স্বামীর সামনে স্বীকৃতি দিতে চায়- এক বিস্ময় কাজ করে আপনার প্রতি! জানতে ইচ্ছে করে চারপাশ নিয়ে কতটা উৎসুক হলে, জীবনের প্রতি কতটা টান থাকলে, অজানার প্রতি কতটা জ্ঞানপিপাসা থাকলে, মানুষের প্রতি কতটা ভালবাসা থাকলে একজন সৈয়দ মুজতবা আলী হয়ে ওঠা যায়!।
জর্মন দেশের কোলোন শহরের রাইন নদীর ধারের বিশাল ক্যাথেড্রালটিতে বসে আপনার লেখা পড়েছি সেই গির্জা নিয়ে, বিটোফেনের জন্মশহর বন-এ বসে অনুভব করতে চেয়েছি আপনার উম্মাতাল ছাত্র জীবন, প্যারিসের জাদুঘরের কানাগলিতে হারিয়ে আপনার পরামর্শ মনে পড়েছে, প্রাগ শহরের সুশীতল বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে ভেবেছি সেখানের দুর্গ নিয়ে আপনি কী বলেছিলেন, ভেনিসের খালাসিদের হৈ-হট্টগোলের মাঝে কানে বেজেছে ঝান্ডুদার চিৎকার ‘ওটা পুছিস নি, সাক্ষী দিবি!’, নয়াদিল্লীর ঘিলু বাষ্প করা রোদে মাঝেও আপনার মতই হ্যাট পরে নানা পুরাকীর্তির ছবি তুলে আপনাকে নকল করার বৃথা চেষ্টা করেছি, জন্মশহর রাজশাহীতে অবস্থানের সময় প্রতিনিয়ত পদ্মার চিকচিকে চর আর জাদুময় ঘোলা জল নিয়ে যে রোজনামচা লিখেছিলেন তা মুগ্ধ চিত্তে পড়ি চরে যাবার আগে এবং পরে অনেক অনুসন্ধানের পর বাহির করি আপনার সমাধি, ঢাকার আজিমপুরে, যার পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলি ‘ আপনার মত কোনদিক দিয়েই হওয়া হলো না আলী সাহেব, কিন্তু আপনাকে নিয়ে প্রচন্ড অহংকার আমার। বাঙালি হয়ে জন্মানোতে আপনার অমর লেখার রস উপভোগ করি সরাসরি- এই পাওয়ায় বা কম কিসে!!’
বেঁচে থাকলে ভবঘুরেমির সাথে সাথে অনেক কথা হবে আপনার সাথে দিকশূন্যপুরে, মুসাফিরের মত দেখা হয়ে যেতেও পারে ভুল দরজায় কড়া নাড়লে অন্যজগতে, ততদিন পর্যন্ত অপার মুগ্ধতা, অশেষ ভালবাসা।
এবং জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
আপনার এক অতি-ভক্ত
মন্তব্য
হ। শবনম কিংবা চাচা কাহিনী কিংবা দেশে বিদেশে কিংবা নিতান্ত অবিশ্বাস্য
আহা, আহা
facebook
প্রথম যে বার বনে যাই সেবার সৈয়দ সাহেবের বাসার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় আসছিলাম। হাতের কাছে ছবিটা থাকলে পোস্ট করা যেত।
ইয়ে, কোলগন না, কোলন। জার্মান ভাষায় ক্যোল্ন।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আলী সাহেব কিভাবে শহরটির নাম লিখেছিল সেইটা মনে আসছিল না, ধন্যবাদ। জর্মন কিছু বন্ধু দেখি বলত- খুহন!
facebook
ভুল শুনতেন হয়তো। কুহন হবার কোন কারণই নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মৌলভীবাজারে সৈয়দ সাহেবের বাড়িতে একবার গিয়া জিগাইছিলাম- এইটা কি মুজতবা আলীর বাড়ি?
এক লোক আমারে দখলদার ভাইবা খ্যাট খ্যাট কইরা তাড়াইয়া দিছিল- মুজতবা টুজতবা কাউরে চিনি না। এইটা আমাগো বাড়ি....
ঠিকানা দ্যান, কাল যাইতে পারি-
facebook
আহ ঝান্ডুদা! কৈশোরের হিরো!
শুভ জন্মদিন আলী সাহেব
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
রসগোল্লার গোলক তুমি এত রস ধরেছিলে কেন হায় !
facebook
তারেক অণুর একখান পরীক্ষা নেই:
(সকল প্রশ্নের উত্তরদান বাধ্যতামূলক)
প্রশ্ন ১: কতটুকু মনোকষ্ট নিয়া সৈয়দ মুজতবা আলী 'বেগুন'কে 'বেগুন' এর পরিবর্তে 'প্রাণনাথ' বলিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন? তাহার এরূপ মনোকষ্টের হেতু কী ছিল? স্থান-কাল-পাত্র ও প্রেক্ষাপটসহ লিখ। পূর্ণমান ১০
প্রশ্ন ২: সিলেটি লোকজনের মুখের গন্ধের সহিত ডক্টর মুজতবা আলীর সম্পর্ক কী? সিলেটিদের মুখের গন্ধ উৎপাদনে আর কোন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি জড়িত ছিলেন? স্থান-কাল-পাত্র ও প্রেক্ষাপটসহ লিখ। পূর্ণমান ১০
২য় প্রশ্নের উত্তরে কী রবি বাবু জড়িত নহে??
১মখানা মনে পড়ছে না গো দাদা, দেরি হয়ে গেল উত্তর দিতে, হাওড়ের মাঝে ছিলুম!! একটু জানান আমাদের-
facebook
প্রিয় লেখক, আপনি 'দেশে বিদেশে' দিয়ে সেই সপ্তম শ্রেনীতে যে মুগ্ধতার সৃষ্টি করিয়াছিলেন, সেটি এখনো বহাল তবিয়তে আছে। আপনার সকল বই এখনো পাঠ করিয়া উঠিতে পারি নাই। কিন্তু যে ডজনখানেক পড়িয়াছি সেগুলোই বারবার পড়িয়াও যেন শেষ হয় না। কিছুকাল পরে আবার পড়িলে মনে হয় এই বুঝি নতুন কিছু পড়িলাম। এই রকম লেখনী রস আমি আর একজনের মধ্যেও পাইনি। শুভ জন্মদিন আলী সাহেব!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সত্য, সত্য, সত্য-
facebook
প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষকে জন্মদিনে সশ্রদ্ধ মুগ্ধতা।
আর, সেটা করায় সাহায্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাইটাকেও।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
facebook
খুব সুন্দর করে লিখে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলীকে। এমন দিন আসুক যেদিন আপনাকেও অন্য কোন 'তারেক অণু' মুগ্ধতা নিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবে।
দিল্লি বহুত দূরররররর--
facebook
শুভ জন্মদিন, আলীসায়েব।
উনি আজিমপুরে ঘুমুচ্ছেন, জানা ছিল না। এবার গেলে দেখা করে আসব।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পুরনো অংশে খুঁজেন-
facebook
আহা------ সেই আনিকি পাসিকিভি, ফন ব্রাখেল, সূয্যি রায়------ সেই কায়রোর কাফেতে বসে স্যুট কেনা, সেই গুল বাহাদুর-মোতি, দাবা খেলা শেষে সুইস পরিবারে দাওয়াত, কোদন্ড মুথহানা, টুনি মেম আরও কত শত মানব-দেশ-ঘটনা-আড্ডা-প্রেম-বন্ধুত্ব।
আহা আহা-
facebook
facebook
সৈয়দ মুজতবা আলী কে নিয়ে গোলাম মুস্তাকিম এর লেখার উপর আপনার লেখার লিংকা টা দেবেন, প্লিজ।
এখন পড়তে পড়তে হারিয়ে যাই , জর্মনি , আফগানিস্তান , খাইবার । নয়তো মিসর । তার হত মোর নিত্য দেশ ভ্রমন ।
একদম
facebook
আচ্ছা, আলী সায়েব কি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন কখনো?
আমি শুনেছি উনি ৪৭-এর দেশবিভাগ সমর্থন করেননি, তবে দেশবিভাগের পর উনি তৎকালীণ পাকিস্তানে চলে আসেন এবং সম্ভবত বগুড়ার কোন কলেযে অধ্যক্ষতা শুরু করেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের ভাষা-নীতি সহ আরও বেশ কিছু নীতির বিরোধিতা করায় সরকার তার প্রতি প্রচণ্ড বৈরী আচরণ শুরু করে এবং সরকারী আনুকুল্যে মুসলিম লীগের পাণ্ডারাও তার পিছনে লেগে যায়। এক পর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়ে ১৯৪৯ সালে ভারতে চলে যান এবং সেখানকার নাগরিকত্ব নেন। এর পরের খবর যা জানি তা হলো, ৭১-এ স্বাধীণতার পর উনি বাংলাদেশে আসেন এবং ৭৪ সালে বাংলাদেশেই মৃত্যুবরণ করেন।
এখন আমার প্রশ্ন হলো, আলী সায়েব কি ৭২ থেকে ৭৪ সালের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন বা তার পাসপোর্ট ছিল? কিম্বা ১৯৪৯-এর পর থেকে ৭১-এর মধ্যে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব আবার নিয়েছিলেন? কেউ কি এ ব্যাপারে রেফারেন্স ছাড়া বা সহ নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন?
****************************************
এনিবডি?
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন