ওয়াল্ট হুইটম্যানে উপরে পারিবাহিক আবহের প্রভাব ছিল খুব সামান্য। মা মূলত ধর্মীয় বইপত্র পড়তেন। বাবা ছিলেন পোড় খাওয়া শ্রমিক (!) ও মদে আসক্ত। তাদের ৭ সন্তানের মধ্যে ৩ জনই কোন না কোন মানসিক সমস্যায় ভুগতেন। বিদ্যালয় তাদের কাছে কোন সময়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না, ওয়াল্ট ১১ বছর বয়সেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন, যদিও সুযোগ পেলেই বই ধার করে পড়তে থাকতেন আরব্য রজনী, জেমস ফেনিমোর কুপার আর স্যার ওয়াল্টার স্কটের উপন্যাসগুলো, যা তাকে করতে শিহরিত, উদ্বেলিত।
ওয়াল্টের জীবনে সবচেয়ে বড় ছাপ রেখেছিল প্রতিদিনকার ফেরী যাত্রা, যা ব্রুকলিন আর ম্যানহাটানের মধ্যে চলাচল করত। তাঁর আমলে ফেরিগুলো ফি বছর লক্ষ লক্ষ যাত্রী আনা-নেওয়া করত, ১৯২০ অবধি এই জলযানগুলো চালু ছিল।
ম্যানহাটানের ফেরি ডক থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরেই ফাওলার আর ওয়েলস নামে দু’জন পরিচিত থাকতেন, যারা মানুষের খুলি দেখে তাদের ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আভাস দিতেন। ওয়াল্ট বা তাঁর খুলি সম্পর্কে তাদের সিদ্ধান্ত ছিল বন্ধুত্বময় ও সহানুভূতিপ্রবণ, সেই সাথে কিছুটা অলস ও নিখুঁত হবার তৃপ্তির চেষ্টারত।
শুরুর দিকে স্কুলশিক্ষক ও ছাপাখানার শিক্ষানবিশের চাকরি তাঁর জীবনতৃষ্ণা ধরে রাখার মত দৃঢ় না হওয়ায় ফাওলার আর ওয়েলসের কাছেই ওয়াল্ট এক খবরের কাগজের সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন, লিখতেন অপরাধ, অগ্নিকান্ড, স্থানীয় রাজনীতি ও দাসপ্রথা ( যা তাঁর ভাষায় ছিল এক ভয়াবহ অপরাধ) নিয়ে, সেগুলো কাজের জিনিস হলেও অমরত্ব পাবার মত কিছু ছিল না। ওয়াল্ট বেশ কিছু ছোট গল্প আর ‘ফ্রাংকলিন ইভান্স’ নামের একটা উপন্যাসও লিখেছিলেন। তাঁর প্রথম দিকের কবিতাগুলো নিউইয়র্কের নানা খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল But where, O Nature, where shall be the soul’s abiding place? যেগুলো ছিল বেশ কাঁচা আবেগের ফসল।
বেশ ক’টা খবরের কাগজই তাকে নানা কর্মজনিত বদভ্যাসের কারণে চাকরীচ্যুত করে। এক সহকর্মীর মতে ওয়াল্ট এতটাই অলস ছিল যে তাকে কথা বলানোর জন্য দুইজন ব্যক্তিকে রীতিমত কসরত করতে হত দুই চোয়াল খোলানোর জন্য! আর সেই শ্রমিকদের অবস্থা ও সরকারী দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার থাকাও একটা বড় কারণ। ১৮৪২ থেকে ১৮৪৫ পর্যন্ত এই ৪ বছরেই তাকে নিউইয়র্কের অন্তত ১০টা সংবাদপত্রে কাজ করতে দেখা যায়।
ব্রডওয়ে ছিল নিউইয়র্কের ব্যস্ততম রাস্তা, ফেরীর ডক থেকে টানা ৩ মাইল ১৪ নাম্বার স্ট্রিট অবধি যাওয়া এই পথে ভরে ছিল থিয়েটার, ওপেরা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, তাঁর মতে এই জায়গা দিয়ে যাবার সময় সাগর সাঁতার কাটার মত অনুভূতি হত।
হুইটম্যান প্রায়ই ওপেরায় যেতেন এবং রোসসিনি, বেল্লিনি, মোজার্ট ও ভার্দির রচিত গান গাইতে পছন্দ করতেন। যদিও তাঁর মূল নেশা ছিলো, সেই সব পথিকদের সাথে গল্পে মজে যাওয়া, যাদের কাজের ফাঁকে ফাঁকেও আড্ডার ফুরসৎ ছিল। ব্রডওয়েতে যাবতীয় কোচোয়ান, বুড়ো হাতি আর মোটকা ষাঁড় নামের লোকদের সাথে দিব্যি আড্ডা দিয়ে যেতেন, সেই সাথে ব্রডওয়ের এক প্রান্তে কানাল স্ট্রিটে দমকল অফিসে নিয়মিত যেতেন আলাপের নেশায়।
ইঞ্জিন কোম্পানি ২৪ এবং মি কোম্পানি ৫ এর মাঝামাঝি এক জায়গায় দমকলকর্মীরা অচেনা পথিকদের সাথেও আড্ডায় মেতে উঠত, অন্তত সেই আমলে। আর যেদিন আমি সেখানে গেলাম সেদিন দমকল অফিসের সামনের ফুটপাত ফুল, মোমবাতি, হাতে লেখা শোকবার্তায় ভর্তি ছিল, কারণ আগের সপ্তাহেই দুজন দমকলকর্মী আগুনের সাথে এক মোকাবিলায় নিহত হয় এবং একজন বাজে ভাবে দগ্ধ হন।
ডেভিড স্লেইফার নামের এক দমকলকর্মীর সাথে তাদের রান্না ঘরে যাই, চকচকে ঘরটি দেখে একটি বড়সড় পরিবারের থাকার জায়গা মনে হচ্ছিল, যাদের একটি লম্বা বেশ বড় ডাইনিং টেবিল লাগে। সেই দুর্ঘটনার খবর যখন আসে তখন সে ডিনার সাজাচ্ছিল । ডেভিড আমাকে দুই ইঞ্চি পোড়া রবার দেখালো, যা তার এক মৃত সহকর্মীর বুটের টিকে থাকা শেষাংশ। উত্তাপে প্রায় গলে যাওয়া একটা দুমড়েমুচড়ে যাওয়া হেলমেটও ছিল সেখানে।
তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ সাহসী হওয়া বলতে আসলে কী বোঝায়?’
সে উত্তর দিল ‘সেটাই করা যেটা করার জন্য মানুষ তোমার উপর নির্ভর করছে।‘
বাহিরে, সেই ফুলদের মাঝে কেউ একজন হুইটম্যানের কবিতা রেখে গেছেন,
‘ I understand the large heart of heroes,
The courage of present time and all times;
… I am the man…
… I suffered …
… I was there.”
ব্রডওয়ের জনসমুদ্রে হুইটম্যানের সন্ধানে ফের সাঁতরে ফিরলাম। ছয় ফুট লম্বা। চওড়া ছাতির অধিকারী। বুটের মধ্যে ঢোকানো ব্যাগি ট্রাউজার। চামড়ার জ্যাকেটের পকেটে ঢোকানো হাত। আত্মবিশ্বাসী। পেশীবহুল ঘাড় আর লোমশ বুক দেখাবার জন্য বোতাম খোলা শার্ট। স্থায়ী সাদা দাড়ি। সদ্য ধোয়া মুখ। বড় পাপড়ির চোখ। এই চোখেরাই ছিল তাঁর আড্ডার যোগের চাবিকাঠি। উনি প্রশ্ন করতেন, মানুষে বিস্ময়ে ভেসে উঠে আকাশনীল চোখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনে যেত। সেখানে হাঁটতে হাঁটতে সেই লোকদের প্রতি,যারা সেই রাস্তায় হাঁটার সময় হুইটম্যানের সাথে আড্ডা দিয়েছে, একটা অভূতপূর্ব হিংসা জেগে উঠল।
৩০ বছর বয়সে হুইটম্যান ‘লীভস অফ গ্রাস’ লেখা শুরু করেন সকলের অগোচরেই। আঙ্গুল থেকে ঝরে পরা শব্দপ্রপাতে বাইবেল, ক্ল্যাসিক উপন্যাস, অপেরা, দেশপ্রেম, সাংবাদিক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং নিসর্গপ্রেম সবই মিশে যেতে থাকে অপূর্ব ঝঙ্কারে। অনেক মানুষই দুঃখ আর সংগ্রাম থেকেই লেখার উপাদান পান। কিন্তু হুইটম্যানের দিকরেখা ছিল যেটা তাকে অলীক সুখের সন্ধান দিত, সেই মানুষেরা যাদের তিনি নিজের মত করেই আত্নস্থ করেছিলেন। তাঁর কবিতাগুলো, আসলে যে কোন কিছুর থেকেই ছিল তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথন।
কেন হুইটম্যান হঠাৎ করে নিজের অন্তরের আহ্বান শুনলেন? অধিকাংশ শিল্পীই প্রচুর সংগ্রামের পর ব্যর্থ প্রচেষ্টা উপহার দেন যেখানে ভবিষ্যতের মহত্তর শিল্পের ঝিকিমিকি নজরে আসে। কিন্তু অমরত্বের পথে হুইটম্যানের উত্থান একবারেই অনায়াস অবশ্যম্ভাবী রূপে আসে। তাঁর নিজের কাছেও এর কোন ব্যাখ্যা ছিল না। পরে একবার বলেছিলেন, ‘আমি সেটাই করেছি যেটা করেছি কারণ সেটা আমি করেছি’- এইতাই সম্পূর্ণ রহস্য। ছবি দেখে বোঝা যায় সেই সময়ে তাঁর চোখেরা অনেক আলোকময় , অনেক উষ্ণতাপূর্ণ ছিল।
প্রায় ৫ বছর পর, ১৮৫৫ সালে, হুইটম্যান ‘লীভস অফ গ্রাস’ প্রকাশ করেন। ৮৩ পাতায় ১২টি কবিতা, যার কিছু কিছু তিনি নিজেই টাইপ করেছিলেন। বইতে কোন লেখকের নাম ছিল না, বরং নিজের কোমরে হাত দেওয়া একটা ছোট আলোকচিত্র দেন, উল্লাসে কাঁপা । কবির অনুপস্থিতি হুইটম্যানের সেই উপলব্ধিকেই জোরালো করে যে পাতার কণ্ঠ সবখানেই ছড়িয়ে পরে।
হুইটম্যানের আগে তথাকথিত সিরিয়াস কবিতারা ছন্দের কঠোর নিয়ম, আকারে খাঁচা মেনে ঘুরে ফিরেই দুর্দান্ত , রোমান্স নিয়ে লেখা হতো। লীভস অফ গ্রাস’এর আদি সংস্করণে সেখানে নজর দেয়া হয়েছে জীবিকা অর্জনের নানা পেশার উপরে- কামার, কাঁচপ্রস্ততকারক, নখের কারিগর, তামার কারিগর, টিনের ঘরামি, খড় কাঁটার মজুর, “A song for occupations” । সেই সাথে দেখানো হয় যে আমেরিকান গণতন্ত্র এক নতুন আলোকিত অদম্য শক্তি
‘ Unscrew the locks from the door!
Unscrew the doors themselves from their jambs!
I speak the password primeval
I give the sign of democracy.”
হুইটম্যানের আশা ও সাহসিকতা সমান্তরাল পথেই চলছিল। তিনি চেয়েছিলেন এই গণতন্ত্রের নাগরিকদের, অথাকথিত আমজনতা যেন ‘লীভস অফ গ্রাস’ তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবেই গ্রহণ করে।
যদিও হতাশার খবরগুলো আসলো অতি দ্রুত, তাঁর মা, যার সাথে ওয়াল্ট তখনো বাস করতেন বইটিকে ‘ বেশ এলোমেলো’ হিসেবে গ্রহণ করলেন। এর বিষয়বস্তুর কারণে খুব কম দোকানই বইটি রাখতে রাজি হয়েছিল। হুইটম্যানের মতে দরিদ্ররা ধনীর মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং নারী ও পুরুষ সমান! সবচেয়ে আক্রমণাত্নক ছিল সেই যুগে যখন পিয়ানোর পা পর্যন্ত মুড়িয়ে রাখা হতো, তখন তিনি মানবদেহের প্রশংসায় মাতলেন! এক সমালোচকের মতে তিনি এক বিউটিপার্লারে প্রসাবের পাত্র নিয়ে হাজির হলেন!’
খুলি যে চরিত্র বোঝার বিদ্যা নিয়ে ওয়াল্টের প্রশংসায় খুশী হয়ে ফাওলার ও ওয়েলস তাদের দোকানে বইটি রাখতে রাজি হন। যদিও বিক্রি খুব অল্প হয়েছিল, কিন্তু তা মোটেও হুইটম্যানকে আশাহত করতে পারে নি। তাঁর ভাই জর্জের মতে তিনি ছিলেন ‘একটা ইটের প্রাচীরের চাইতেও বেশি একগুঁয়ে”।
এর মাঝে হুইটম্যান বইটির এক কপি তখন আমেরিকার প্রধান কবি রালফ ওয়াল্ডো এমারসনের কাছে পাঠান। তাদের কোনদিন সাক্ষাতও হয় নি, তাদের কোন পরিচিত বন্ধুও ছিলো না, তাই তাঁর কোন উত্তরের প্রত্যাশা করার কোন কারণ ছিল না।
অথচ এমারসন ম্যাসাচুসেটসের কনকর্ড থেকে হুইটম্যানকে চিঠিতে লিখেন ‘ আমি কিছুক্ষন চোখ রগরে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে চারপাশের জগত কোন ভ্রম নয়! ‘লীভস অফ গ্রাস’ আজ পর্যন্ত আমেরিকায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনলব্ধ জ্ঞান ও তীক্ষ্ণ রসবোধের সংমিশ্রণ।
বিনয়ের তোয়াক্কা না করে হুইটম্যান নিজেই বেনামে নিজের বইয়ের আলোচনা লিখে নানা পত্রিকায় পাথিয়েছিলেন, যার বেশ কিছু ছাপাও হয়েছিল, কোন কোনটাই লেখা হয়েছিল ‘ অবশেষে একজন মার্কিন পুরুষোত্তম , আরেকটাই বলা হয়েছিল আমরা এক মহান দার্শনিকদের আগমনবার্তা শুনতে পাচ্ছি- হয়তো একজন মহান কবিরও। কিন্তু হুইটম্যান এক অপ্রত্যাশিত কারনেও বেশ নাম করেন, তা হচ্ছে তাকে নিয়ে প্যারোডি করা বেশ সহজ ছিল। যেমন ১৮৫৭ সালে লন্ডনের এক্সামিনার তাঁর আদলে একটি কবিতা প্রকাশ করে,
“ চায়ের কেটলী
৫ কফি চামচ, চিনির পাত্র ও ঢাকনা,
৪টা পিরিচ আর ৬টা কাপ।“
যে ‘লীভস অফ গ্রাস’ কে মানুষ উপেক্ষা করে গেছে, ব্যঙ্গ করেছে আজকের দিনে তার প্রতি খন্ডের দাম ৪০ হাজার ডলার। লং আইল্যান্ডের এক ব্যাংকের সুরক্ষিত ভল্টে আমি ওয়াল্ট হুইটম্যান জন্মস্থান সঙ্ঘের ( যারা এই অমূল্য জিনিসগুলো আপাতত এখানে রেখে একটি দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর তৈরি করছে বর্তমানে) প্রধান পরিচালক বারবারা মাজর বার্টের সাথে দাড়িয়ে সেই অমূল্য বইখানা পড়লাম! ‘লীভস অফ গ্রাস’এর প্রথম সংস্করণে ছাপা ৭৯৫টির মধ্যে ১৫০টিরও কম এখনো টিকে আছে, এটি তাদের একটি।
হুইটম্যানের ভূমিকা হাতড়িয়ে মনে হল আমি তাঁর সামগ্রিক দর্শনের একটা সংক্ষিপ্ত রূপ পেলাম “ভালবাসো পৃথিবী, সূর্য ও সকল জীবকে,শুধু ধনীদের নয়, যারা চায় তাদের প্রত্যেককেই দান কর, বোকা এবং উদাসীনদের পক্ষে দাড়াও, দানবদের ঘৃণা করো, ঈশ্বর প্রশ্নে তর্ক করো না, মানুষের ক্ষেত্রে ধৈর্য ও স্বপ্ন রেখো, চেনা-অচেনা যে কোন সংখ্যক মানুষকেই সন্মান দেখিও, নিশ্চিন্ত মনে ক্ষমতাশালী মূর্খ লোকের সাথে, তরুণ দের সাথে, পরিবারের কত্রীদের সাথে যেও,--- স্কুলে যা শিখেছ, গির্জায় যা শুনেছ, যে কোন বইতে যা পড়েছ সেগুলোকে আবারও যাচাই করে দেখ, নিজের চেতনাকে আহত করে এমন সবকিছুকেই ত্যাগ করো, এই সবকিছুর পরে তোমার একান্ত নিজস্ব তুমিই পরিণত হবে এক মহান কবিতায়।‘
ভূমিকায় বইটা পড়ার উপায়ও বর্ণনা করেছেন কবি, খোলা আকাশের নিচে!
সেই রাতে আমি হুইটম্যানের কথা শুনলাম, পড়ার জন্য বেছে নিলাম ‘Song of Myself’। এই যে পাঠক, আপনিও চাইলে বইটি পাশ ফিরিয়ে রেখে আমার সাথে যোগ দিতে পারেন খোলা আকাশের নিচে মুক্তকন্ঠে কবিতা পড়ার জন্য।
‘ I celebrate myself, and sing myself,
And what I assume you shall assume,
For every atom belonging to me as good belongs to you.’
‘I loafe and invite my soul,
I lean and loafe at my ease observing a spear of summer grass.’
‘My tounge, every atom of my blood
form’d from this soil, this air,
Born here of parents the same,
And their parents the same,
I, now thirt seven years old in perfect health begin,
Hoping to cease not till death. ‘
শব্দগুলো বড়ই সুন্দর। নিজস্ব ছন্দে তারা চলে। কিন্তু আমি কী পড়তেছিলাম তা বুঝতেছিলাম না, এবং তা নিজের কাছেই অদ্ভুত লাগছিল। তারপরও কোন এক কুহকের ডাকা আমি পড়েই যাচ্ছিলাম
‘ Creeds and school in abeyance,
Retiring back a while sufficed at what they are, but never forgetten,
I harbor for good or bad, I permit to speak at every hazard,
Nature without check with original energy.’
আমি দুঃখিত, আমি আর জোরে জোরে কবিতা পড়তে পারছি না। এই কবিতায় বাড়ী, সুগন্ধি আর ২৮ তরুণের কথা আছে। এক তরুণী পর্দার আড়াল থেকে তাদের দেখে ও আকর্ষণীয় মনে করে। তারপর? এক অযাচিত দৃশ্যপট রচিত হয়।
যদিও আমি উৎসাহ হারিয় ফেললাম, কিন্তু ১৯৮৭ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী জোসেফ ব্রডস্কি আমাকে বলেছিলেন যে মুক্তকন্ঠে পড়ায় হুইটম্যানকে খুঁজে পাবার সেরা উপায়। তাঁর মতে ‘ কবিতাকে অবশ্যই জোরে জোরে পড়তে হবে।‘ নিঃশব্দে পড়ার চেয়ে জোরে পড়লে অনেক বেশি কবিতার গভীরে যাওয়া যায়। সেখান তুমি কেবল বিষয়বস্তই শুনছ না, শব্দের সকল শ্রুতিমাধুর্যতা শুনতে পারছ। এর সাথে কোন কিছুরই তুলনা হয় না, যদিও তুমি কিন্তু কথা বলে যাচ্ছ নিজের সাথেই।‘
আমি ভেবেছিলাম কবিতা গল্প বা নাটকের মত একটা আবহ তৈরি করবে যা আমার মনোযোগ ধরে রাখবে। কিন্তু ব্রডস্কির মতে, যিনি এখন মাউন্ট হলিইয়োকিতে পড়ান, ‘ কবিতায় সেই জিনিসগুলো আছে যেগুলো আর কোথাওই পাওয়া যায় না, - জমাট দৃশ্য, আবেগ, গল্প, আমাদের চেয়ে বৃহত্তর এক জগতের সন্ধান, একটা বিরতি চিহ্ন যা আমাদের ইঁদুর দৌড়ের ব্যস্ততা থেকে নিরস্ত করে। কবিতা হচ্ছে সেই মানসিক অবস্থার বেগ যদি তুমি এটাকে আয়ত্তে আনতে শিখ তবে এটি শোক দূর করতে পারে, আনন্দ সৃষ্টি করতে পারে।
সেই সাথে ব্রডস্কি এটাও জানান যে মানব জাতির ইতিহাসে কখনোই শতকরা ১ ভাগের বেশি লোক কবিতা পড়ে না, সব জাতিতেই।
আমার প্রশ্ন ছিল, ‘ কবিতা যদি এত কিছুই দিতে পারে, তাহলে কেন কবিতার পাঠকের সংখ্যা এতই কম?’
ব্রডস্কি- কারণ মানুষ আজ বড্ড ব্যস্ত। তাদের মতে অন্য কিছুর সাধনা অনেক অনেক বেশি আনন্দদায়ক। কিন্তু মানুষ নিজের অজান্তেই বিকিয়ে দিয়েছে জীবনকে। তাদের অন্তত কবিতাকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত।‘
উনি এখন চেষ্টা করছেন সেই সমস্ত জায়গায় কবিতাকে পৌঁছে দিতে যেখানে মানুষেরা কালক্ষেপণ করে/ অ্যান্ড্রু ক্যারল নামের ওয়াশিংটন ডিসির এক বাসিন্দা তাঁর সাথে আমেরিকার কাব্য ও সাহিত্য প্রোজেক্টে কাজ করছেন। তারা ইতিমধ্যেই ১০হাজার কবিতার সংগ্রহ আমেরিকার নানা হোটেলের বিছানার পাশে পৌঁছে দিয়েছে, যাদের মধ্যে অবশ্যই আছে হুইটম্যানের বিখ্যাত পংক্তিগুলো। আন্দ্রু জানালো প্রতিদিনই তাদের দেওয়া বই চুরি হয়ে যাচ্ছে, এবং এটা খুবই সুখের খবর যে এভাবে হলেও কবিতা মানুষের জীবনের অংশে পরিণত হচ্ছে।
একজন মহিলা এই বই পাওয়া পর কাছের বনের মধ্যে হেঁটে যেয়ে জোরে জোরে কবিতাগুলো পড়ছিলেন। পরে তিনি জানিয়েছেন যে প্রতিটা কবিতাই তার আত্নার কিছু অংশ দারুণ ভাবে স্পর্শ করে গেছে, যা দীর্ঘকাল স্পর্শহীন ছিল।
ক্যারল চায় আমেরিকার প্রতিটি হোটেল ও হাসপাতাল কক্ষে, কারাগারে, স্কুলে গ্রন্থাগারে ও নার্সিং হোমে কবিতা পৌঁছে দিতে।
( পরের পর্বে সমাপ্য)
মূল লেখা - জোয়েল এল.সোয়ের্ডলো
(১৯৯৪র ডিসেম্বরে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে ছাপা হয়েছিল)
মন্তব্য
কথাটা মনে ধরলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
এত ব্যস্ততা দিয়ে কী হচ্ছে কে জানে!
facebook
লেখাটা ভাল লাগলো। অপেক্ষায় রইলাম।
আসিতেছে
facebook
নতুন মন্তব্য করুন