বন্যপ্রাণী-
বড় আকারের শিকারি প্রাণীরা এখন অত্যন্ত বিরল কিন্তু মাঝে মাঝে ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে বাঘ এবং চিতাবাঘেরা নেমে আসে, জেলার পূর্ব সীমান্তের গ্রামগুলোতে আক্রমন করে তারা গরু এবং ছাগল ধরে নিয়ে যায়। চিত্রল হরিণ এবং হগ ডিয়ার (Hog Deer) একই এলাকার শস্যক্ষেত্রে ব্যাপক বিচরণ করে।
এই জেলায় টিকে থাকা সত্যিকারের বড় বন্যপ্রাণী হচ্ছে বুনো মহিষ এবং বুনো শুয়োর। বন্য মহিষ এখন কেবলমাত্র চর মীর মোহাম্মদ আলী তে দেখা যায় যা হাতিয়া দ্বীপের সর্বদক্ষিণ প্রান্ত। সেখানে বুনো মহিষের সংখ্যা এতই বেশি যে নতুন করে বসতি স্থাপন করতে যাওয়া মানুষদের জন্য তারা প্রবল উৎপাত হিসেবেই দেখা দেয়। তাদের ধরার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সে চেষ্টা বড়ই বিপদজনক কঠিন এবং কোন সময়ই খুব বেশি বুনো মহিষ ধরা যায়নি। সাধারণত বৃদ্ধ ষাড়গুলো খুবই হিংস্র তবে নারী এবং বাচ্চা মহিষ ধরার পরে যদি প্রথম কয়েক দিনে মারা না যায় তবে সাধারনত পোষ মানে। গৃহপালিত প্রাণীদের সাথেও এদের প্রজনন হয়, যারা সেই একই চরে ঘুরে বেড়ায়। লক্ষীপুর থানার মেঘনার চরে বুনো শুয়োরদের বড় এবং ছোট দলে দেখা যায়, এবং জেলার অন্যান্য স্থানেও।
দাগি-রাজহাঁসের (Bar-headed Goose) ঝাঁককে মাঝে মাঝে মেঘনায় দেখা যায়। বুনোহাঁস বেশ বিরল, তবে শীতকালে ফেনীতে বেশ কাদাখোঁচা পাখি দেখা যায়। গুলিন্দাদের বিশাল ঝাঁক দেখা যায় এবং পানচিল, সারস নানা প্রজাতির মেছো-ঈগল, বাজ, বক এবং অন্যান্য পানির পাখিদের দেখা মেলে। স্যার হান্টারের স্ট্যাটিস্টিকাল অ্যাকাউন্টে এই জেলার সংগ্রাহক মিস্টার Porch-এর দেয়া সকল পাখির তালিকা পাওয়া যায়, সেই তালিকার অনেক পাখি হয়তো এখন অতি বিরল এবং সেই তালিকাটি এত বড় এখানে ফের দেওয়া মুশকিল।
মেঘনায় কুমিরদের ভালোই দেখা যায় বিশেষ করে হাতিয়ার পশ্চিমের বালুচরে। মাঝে মাঝে তারা গবাদিপশু ধরে নিয়ে যায় তবে এই জেলার মানুষেরা যেহেতু বড় নদীতে স্নান করে না বললেই চলে তাই কুমিরের আক্রমণে মানুষের মারা যাওয়ার ঘটনা সহজে ঘটে না।
সন্দ্বীপে প্রায় সর্বত্র সাপের দেখা মেলে এবং অন্তত পাঁচ ধরনের গোখরা এই জেলাতে আছে। অন্যান্য বিষধর সাপের মধ্যে শঙ্খিনী এবং জংলা বোড়া অন্যতম। ১৯০৮ সালে ৫০ জন মানুষ এবং ৮৫ টি গৃহপালিত প্রাণী সাপের কামড়ে মারা যায়। এই সংখ্যাটি উত্তরবঙ্গ বা ঢাকার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম । গুইসাপ এবং রক্তচোষা নামের গিরগিটি সবখানে দেখা যায়। মিস্টার Porch বলেছিলেন এখানে অন্তত আরও তিন ধরনের গিরগিটি দেখা যায় এবং যার একটি প্রায় ১২ ফিট দীর্ঘ হয়েছিল।
মাছ-
এখানে নানা প্রজাতির স্বাদু এবং নোনা পানির মাছ নদীতে পুকুরে এবং খালে মিলে। মাঝে মাঝে মোহনায় করাত মাছ ধরা পড়ে।
গাছপালা-
সুন্দরবনের অনন্য অদ্ভুত অসাধারণ গাছপালা এখানে দেখা যায় কিন্তু অতটা বেশী নয় বরং এখানে মূলত যে গাছগুলো দেখা যায় সেগুলো গঙ্গা অববাহিকার নিচের দিকের সমতলভূমির গাছ।
নানা ধরনের তাল জাতীয় গাছের প্রাচুর্য এখানে সবখানে চোখে পড়ে। জেলার প্রথমদিকে পুরোটা জুড়েই যেন সুপারি সুপারি , আর মেঘনার কাছের লক্ষ্মীপুরে সুপারি যেন বনের মতো করে বড় হয়। সেই সাথে সুপারি সাথেই থাকে মান্দার গাছ, যাক ধরনের কাঁটাযুক্ত গাছ এবং তরুণ সুপারি গাছকে ছায়া দিয়ে বড় করে এবং প্রতিটা গ্রামেই মান্দার গাছের দেখা মেলে। জেলার পশ্চিমে নারকেল গাছে প্রচুর দেখা যায় এবং চরগুলোতেও, এছাড়াও তাল এবং খেজুরকে অধিকাংশ জায়গাতেই দেখা যায়
আম সবখানে এমনি এমনিই হয়, কিন্তু এখানের আম খাবার উপযুক্ত নয়। এছাড়া বাংলার সকল ফলবান এবং ছায়াময় গাছ যেমন বট, পিপুল, নিম ,গাব,জাম, তেতুল, বেল, জলপাই ইত্যাদি দেখা যায়। কাঠ হিসেবে ব্যবহার করার মত মূল্যবান স্থানীয় গাছ সাধারণত ছাগলনাইয়া থানা বাদে আর কোথাও দেখা যায় না, একমাত্র সেখানে কিছু চাপলাস এবং গর্জন গাছ দেখা যায়। সাধারণত সকল নৌকা এবং বাড়ি তৈরির কাঠ আমদানি করতে হয় তবে পথের ধারে লাগানো মেহগনি এবং সেগুন গাছ যথেষ্ট ভাল করছে। এখানে নানা ধরনের বাস প্রচুর পরিমাণে হয়। এছাড়া ছন ঘাস মূল জেলা এবং চরগুলো থেকে পাওয়া যায়।
-জে ই ওয়েবস্টার ( J E Webster)
( ১৯১১ সালে প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম ডিসট্রিক্ট গ্যাজেটিয়র থেকে নেওয়া)
মন্তব্য
সম্পূরক প্রশ্ন:
আমি যতদূর জানি, সুন্দরবনে কখনও নেকড়ে ছিলো না। যদি পুরনো বই বা গ্যাজ়েটিয়ারে সুন্দরবনে নেকড়ের কথা পান, একটু জানাবেন।
সুন্দরবনে নেটিভলি নেকড়ে থাকার প্রমান না থাকলেও বিচ্ছিন্ন ভাবে কিন্তু দেখা গেছে সাম্প্রতিক কালেও। কারও কারও অনুমান এগুলি স্ট্রে নেকড়ে অন্য জায়গা থেকে এসেছে। তবে সবই মনে হয় অনুমান। আপনি হয়তো আগেই দেখেছে্ন, তা সত্ত্বেও লিংক দিলামঃ
[url=এক]https://www.getbengal.com/details/extinct-indian-wolf-sighted-in-sunderbans[/url]
[url=দুই]https://www.downtoearth.org.in/news/wildlife-biodiversity/wolf-snapped-in-the-sundarbans-for-the-first-time-57620#:~:text=The%20closest%20wolf%20population%20from,350%20kilometres%20away%20in%20Purulia.&text=%E2%80%9CThis%20animal%20has%20been%20photographed,into%20the%20mangroves%20to%20scavenge.[/url]
[url=তিন]https://news.mongabay.com/2019/08/the-wolf-of-bangladesh-a-true-story/[/url]
****************************************
খবরগুলো দেখেছিলাম। কিন্তু বহিরাগত নেকড়ে নয়, সুন্দরবনের একান্তদেশিক নেকড়ের অনস্তিত্ব নিয়েই জিজ্ঞাসা।
জানাবো ভাই, বাংলাদেশের হায়েনা ও নেকড়ে প্রাচীন বিচরণ এলাকা নিয়ে তথ্য খুঁজতেছি
facebook
নতুন মন্তব্য করুন