বর্তমান ফরিদপুরের একটা বিশাল অংশকে রেনেলের মানচিত্র অগম্য কাদাময় জলা হিসেবে দেখানো হয়েছে, এবং ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকে নিশ্চিত ভাবে জানা যায় যে জেলার পূর্বদিকে গহন সব বন ছিল যেখানে বাঘ এবং বুনো মহিষেরা থাকতো। ১৭৯২ সালে মাদারীপুরে দশটি বাঘ হত্যার জন্য পুরস্কার দেয়া হয়েছিল, এবং অনেক পরেও এমনকি ১৮৭৫ সালেও স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অফ বেঙ্গলে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় শীতকালে বুনো মহিষদের ভালই দেখা যেত।
চিতাবাঘদের এখনো জেলার উত্তর এবং পশ্চিমের নানা বনে দেখা যায়, এবং মাঝে মাঝে সুন্দরবন থেকে কোনো একটি পথভুলো বাঘ দক্ষিণের জলাভূমিতে আশ্রয় নেয়। বন্য শূকরেরা সংখ্যায় অনেক বেশি এবং ফসলের ক্ষতি সাধন করে বিশেষ করে ফরিদপুর এবং ভুসনা থানাতে। এর মাঝে তাদের দেখা মেলেনি কিন্তু ৫০ বছর আগের রিপোর্টে জানা যায় যে তাদের ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অতি তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক গ্রাম ই ধ্বংস হয়ে জঙ্গলে পরিণত হতো, দূরবর্তী কিছু জমির কৃষি ক্ষেত্র এভাবেই তাদের রাগে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
জলভূমিতে প্রচুর পরিমাণে বুনোহাঁস, রাজহাঁস, তিলি হাঁস, কাদাখোঁচা ইত্যাদির দেখা মেলে।
কুমির এবং ঘড়িয়াল, উভয় প্রজাতিকেই সকল বড় নদীতে দেখা যায়।
এ জেলার বিশাল একটি অংশ পানির নিচে থাকার জন্য মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্য দেখা যায়, মানুষের খাদ্যের একটা বিশাল অংশের যোগান এই মাছ থেকেই আসে, বিশেষ করে মাছের মৌসুমে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র মানুষেরা মাছের উপরে ভরসা করেই বেঁচে থাকে।
এই জেলাতে পাওয়া একমাত্র সামুদ্রিক মাছের নাম ভেটকি, যা কোরাল নামেও পরিচিত, ইউরোপিয়ানদের কাছে এর ব্যাপক চাহিদা। ইউরোপিয়ানদের আর একটা অতি প্রিয় মাছ হচ্ছে ইলিশ, যা মূলত পদ্মায় পাওয়া যায় এবং কলকাতায় রপ্তানির জন্য অন্যতম প্রধান পন্য। এছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় মাছের মধ্যে আছে রুই, কালবাউশ এবং কাতলা। প্রায়ই পরিবারের আরেকটি মাছ মৃগেল যা নদীর ও পুকুরের কাদাময় তলদেশে পাওয়া যায় যার একটু অন্যধরনের গন্ধ আছে।
আঁশ বিহীন মাছ বেশ ভালো পরিমাণে পাওয়া যায় এবং অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা এই মাছের উপরে অনেকটা নির্ভর করে। আঁশ বিহীন মাছের অন্যতম একটি হচ্ছে বোয়াল, খুবই রাক্ষসী ধরনের মাছ যা অন্যান্য ছোট মাছ খেয়ে থাকে বিধায় যে সমস্ত পুকুরে মাছ রাখা হয় সেখান থেকে নিয়মিত বোয়াল সরিয়ে ফেলা হয়। বোয়ালে মাংস স্বাদহীন বরং এরচেয়ে পাবদার স্বাদ অনেক বেশি, পাতে গোটা দেয়ার জন্য একটি খুবই চমৎকার মাছ হিসেবে গণ্য করা হয়। আঁশবিহীন জলার এবং পুকুরের আরেকটি মাছ হচ্ছে মাগুর, সুস্বাদু হিসেবে যার সুনাম আছে। মাগুরের মতোই দেখতে আরো এক ধরনের মাছ পাওয়া যায় যার নাম শিঙি অর্থাৎ শিংওয়ালা মাছ, এবং এই শিং যদি শরীরে বেঁধে তবে তা থেকে অসহ্য বেদনার উৎপত্তি হয়।
কই নামের একটি অদ্ভুত মাছ পাওয়া যায় যা কাটা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে যেন ডাঙ্গার উপর দিয়ে চলতে পারে। এটি স্থির পানিতে পাওয়া যায় এবং এর স্বাদের জন্য খুবই জনপ্রিয় , সাধারণত রোগীর খাবার হিসেবে খুবই বেশি ব্যবহৃত হয়।
ও অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে সকল নদীতে প্রচুর পরিমাণে গলদা চিংড়ি মেলে এবং জলমগ্ন মাঠে বৃষ্টির পরে বিপুল পরিমাণে ধরা হয়। অন্য প্রজাতির সাধারণ চিংড়ি ও প্রচুর মেলে। জলাভূমি থেকে বিপুল পরিমাণ শামুক এবং ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়, যাদের খোলা থেকে চুন বানানো হয়, সাধারণত এদের ধরা পড়ে খালের পাড়ে ফেলে পচানো হয় যাতে শুধুমাত্র খোলা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
-এল এস এস ওম্যালি
(১৯২৫ সালে প্রকাশিত বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার থেকে)
মন্তব্য
ছোটবেলায় দাদুর বাবার মুখে শুনতাম, অমুক অমুক যায়গায় ঘন সব জঙ্গল ছিল। সেখানে বাঘ, ভল্লুক সব ঘুরে বেড়াত। সব রূপকথা হয়ে গেছে এখন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
হ্যাঁ, এখন যা আছে, কয়দিন পড়ে সেগুলোও রূপকথা হবার পথেই।
facebook
ফরিদপুর, চেনা এই জনপদে
১০০ বছর আগে ঘুরে আসতে বেশ লাগলো।।।।
বেশ দেখতে পাচ্ছিলাম, জলে মাটিতে মিশে থাকা সবুজ বনভূমি
যা শুধু ইতিহাসের ছবিতে ডুব দিলেই
ভেসে ওঠে।।।
উঁকি দিচ্ছিলো বুনো শুয়োরের দল,
বাঘের হেঁটে যাওয়া।
আর সব কিছু থেমে গেল
একটা জিজ্ঞাসায়
মাছের ঝাঁকেরা কি বাঘের চিৎকার শুনতে পায়?
এটা জানি না, খবর নিতে হবে
facebook
বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মহকুমা গুলোর নামগুলো বেশ ধর্মসম্মত। প্রখ্যাত সাধক এবং দরবেশ খাজা মাইনউদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর শিষ্য সুফি সাধক শাহ শেখ ফরিদুদ্দিনের নামানুসারে ফরিদপুর, পঞ্চদশ শতাব্দীর সুফি সাধক কুতুব-ই-জাহান হযরত বদিউদ্দীন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদার (রঃ) এর নাম অনুসারে মাদারীপুর, ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামে শরিয়তপুর নামক বর্তমান জেলাগুলির নাম। আরও একটি আছে গোপালগঞ্জ, এর নামকরণ হয়েছে নবগোপাল নামে জনৈক জমিদারের নামানুসারে। ইনি অবশ্য নিজে কোন ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব নন, তবে তিনি গোপাল ঠাকুর অর্থাৎ কিনা শ্রীকৃষ্ণের নাম ধারন করেছিলেন।
বাহ, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
facebook
- জনাব ওম্যালি পাবদার তারিফ করেছে, কিন্তু বোয়াল রান্নার গুণে কী সুস্বাদু হয়ে উঠতে পারে জানতে পারল না।
ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে – বাসার পেছনে পাহাড়ের নীচে এক বড় জলাশয়ে (আমরা ঝিল বলতাম) হঠাৎ হঠাৎ ঘড়িয়ালের মত এবং একই আকারের সরীসৃপ দেখতে পেতাম। অনেক চেষ্টা করেও এর নাম মনে করতে পারলাম না – সেটা কী ঘড়িয়াল ছিল, কিংবা এই গোত্রভুক্ত কোন সরীসৃপ?
বাংলাদেশের অনেক স্থানেই গুইসাপকে ঘড়িয়াল বলে!
facebook
নতুন মন্তব্য করুন