১৯৭৫ স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে সামরিক জান্তা, জাতীয়তাবাদী শক্তি, আধা সেকুলার আওয়ামিলীগ, মিলিত জামাতি-জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং হালের সাচ্চা মুসলামানের দল আওয়ামিলীগ ইত্যাদি বিভিন্ন গোষ্ঠির হাতে হাত বদল হওয়া ইতিহাসের শিক্ষার উপর অনেক গুলো লেন্স পড়ে গেছে । গত চার দশকে এদের কেউ আরোপ করেছে ধর্মানুভুতির লেন্স, কেউবা আবার জাতীয় ঐক্যের লেন্স । এতো গুলো লেন্সের ভেতরে দিয়ে আসা গোলাম আজম পরিচয়টি ঝাপসা হতে হতে দেশের অনেকের কাছে এবং সমগ্র বিশ্বের কাছে গোলাম আজম পরিচিত হয় জামাত-এ-ইসলামের নেতা গোলাম আজম হিসেবে । শুভ্র দাড়ি-গোঁফ আর অশতীপর বৃদ্ধ চেহারার আড়ালে ঢেকে যায় খুনী রাজাকার গোলাম আজম পরিচয়
বুড়া শকুন মারা গেছে।
এই বুড়া গোলাম আজম পাকিস্তান আদর্শ রক্ষা তহবিলে চাঁদা উঠিয়েছিল। এই যে কি চমৎকার রশিদ দেখা গেলঃ
চাঁদার টাকা দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদ্যয় ঠেকানোর মতলব ছিল চান্দুর। আহারে বুড়া কদু, সেই বাংলাদেশের যে শুধু অভ্যুদয় হবে তাই না... মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে হাসপাতালে যে তোকে পটল তুলতে হবে এইটা কি আর জানতি রে ময়না? জীবন চোষে বটে।
শিক্ষামন্ত্রী নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন কারাগারের কয়েদীদের যোগ্যতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবেন। নতুন এই নিয়মের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জেলার গুলবদন খাঁ এর জীবন তেজপাতা হয়ে গেল। 'যোগ্যতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা' কথাটির যে কি অর্থ উনি এখন পর্যন্ত বুঝতে পারছেন না। এই যোগ্যতা কে যাচাই করবে? তার তহবিল কে দিবে? শিক্ষা না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়?
গোলাম আজম কি একটা কারণে প্যারোলে বের হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মেজর গুলবদন খাঁ প্যারোলের কাগজ সাইন করে মুখ গোমড়া করে অফিসে বসে আছেন। এমন সময় গেটের ওদিক থেকে ধস্তাধস্তি আর মারপিটের শব্দে তিনি ভয় পেয়ে ছুটে গেলেন।
(গেটের বাইরে)
জেলার বাইরে এসে দেখলেন দুই কারারক্ষী প্রচন্ড জোরে একজন আরেকজনকে কিলঘুষি মারছে।
পিজির ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে শাহবাগ থানায় গোলাম আজম মামলা দায়ের করতে এসেছেন। ওসি কিছুটা বিরক্ত। দুপুরের খাওয়ার পর তিনি পিস্তল পরিষ্কার করছিলেন। এই সময় তিনি উটকো ঝামেলা পছন্দ করেন না।
- আপনি কোন ধারায় মামলা করতে চান?
- আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায়।
- আপনার বাড়ি মগবাজারে। আপনি ওখানে মামলা করেন।
- আমি তো এখন পিজিতে প্রিজন কেবিনে আছি। তার উপর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে শাহবাগ থানা এলাকায়।
গোলাম আজমের মামলা তখন পূর্ণোদ্যমে চলছে। পিজিতো জাতীয় জাদুঘরের কাছেই। অনেকদিন কেবিনে শুয়ে বসে কাটাতে কাটাতে জাদুঘরের প্রভাবে তার মধ্যে শিল্পী সত্ত্বা সৃষ্টি হল। তো সে রংতুলি নিয়ে লেগে পড়ল। তার সৃজনশীলতার বিষয় একাত্তরের বধ্যভূমি। সেসময় তারা বিভিন্ন বধ্যভূমিতে মৃতদেহ ফেলার সময় স্তুপ হওয়ার বিভিন্ন প্যাটার্ন সৃষ্টি হত। সেটির নান্দনিক দিকটিই তার কাজের বিষয়। কিছুদিন পর ছবির হাটে গেল প্রদর্শনী করা নিয়ে কি
১. গোলাম আজমের যাবজ্জীবনের ঠিক পরের সপ্তাহের ঘটনা। উজ্জীবিত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম ঠিক করল বোনাস জীবনকে নতুন করে সাজাবে। পিজির ডাক্তারকে অনুরোধ করে সে বসুন্ধরা গোল্ড জিমে ভর্তি হল। দুই মাসে উচ্চতা বাড়ল দুই ইঞ্চি, বুকের ছাতি তিন ইঞ্চি, কোমর কমল চার ইঞ্চি। ফুরফুরে মন তবুও কখনও কখনও খচ খচ করে। কি যেন নেই, কি যেন নেই! নার্স ইদানীং আড়চোখে তাকায় কিন্তু এখনও কাছে আসে না। ডাক্তার অবশ্য বলে দিল,
কবি বলেছেনঃ
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
পূর্বপুরুষ ভুল করেছে(!) যুদ্ধ জিতে ফেলে,
এখন বড় লজ্জা লাগে- আমরা তাদের ছেলে?
যেই পতাকা আসল তাদের রক্ত ঝরার পরে,
কেমন করে ফসকাল তা থাকতে তারা ঘরে ?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দেওয়া রায়ে সরকারের কোনো হাত নেই, তবুও কেন আওয়ামী লীগের এত সমালোচনা করা হয় -- এই প্রশ্ন লীগ-ঘেঁষা যেকোনো মানুষের। তারা আরও বলে থাকেন, জামায়াতের হাতে নিহত-আহত হয়েছেন শুধুই ছাত্রলীগের কর্মীরা, তাই কোনো আঁতাতের অভিযোগ তাদের কাছে বিস্ময়কর। সবশেষে তারা জানতে চান আওয়ামী লীগকে কেন বিচার শুরু করার জন্য বাহবা দেওয়া হয় না।