বেলা পড়ে আসে, সূর্যের আলোয় নরম ভাব। যদিও এখনই আমাদের ফিরতে হবে না, কালও তো ছুটি, রবিবার। এখানের পিকনিক স্পটে দেওয়ালহীন কাঠের ছাদওয়ালা ঘরগুলো বেশ, রোদ বৃষ্টি থেকেও বাঁচায় আবার ঘরের ভিতর আছি বলেও মনে হয় না।
বাইরে আলোছায়ার খেলা চলছে আর হাত ধরাধরি করে আমরা দু'জন পরিপার্শ্ববিচ্ছিন্ন হয়ে ফিরে গেছি আমাদের কিশোরীবেলায়। সেই তখন, যখন আমাদের বিশ্বাস ছিলো কাঁচা আর বিশুদ্ধ, যখন আমাদের মনের মোড়কটা কচ্ছপের খোলার মতন হয়ে যায় নি।
ইস্কুলবেলা লিখতে গিয়ে অনেক পাওয়া হলো আমার, কতকালের পুরানো বন্ধুরা উঠে এলো স্মৃতির জলরাশি সরিয়ে। মুখবইয়ে সত্যি করে উঁকি দিলো ছোটোবেলার বন্ধুরা। কাউকে চিনতাম প্রাইমারি স্কুলে, কাউকে পেয়েছিলাম সেকেন্ডারির বছর ছয়েক কাউকে বা এগারো-বারোতে।
আপাদমস্তক উত্তেজিত অবস্থায় ফোনে অন্বেষাকে কনট্যাক্ট করি। কথা বলতে বলতে হাঁপাই, "টেঁপি রে, মারাত্মক কান্ড হয়েছে।"
অন্বেষা কিন্তু ধীরস্থিরই থাকে। ভারিক্কী গলায় বলে, "হয়েছে টা কী? আর, কী কুক্ষণেই যে আমার ডাকনামটা বলেছিলাম তোকে। "
আমাদের স্কুলের এক কিংবদন্তী চরিত্র মণিকুন্তলা মৈত্র। তিনি নাকি বহুকাল আগে ছিলেন প্রধানাশিক্ষিকা। একেবারে শুরুর দিকের কথা সেটা। উনি নাকি স্কুলেই নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তাই নিজের সংসার আর করেন নি। স্কুলই তার সংসার, ছাত্রীরাই তার সন্তান। অতি সামান্য অবস্থা থেকে তারই হাতে নাকি বড়ো হয়ে উঠেছিলো স্কুল, নাম ছড়িয়েছিলো চারদিকে, ভালো ভালো শিক্ষিকারা কাজ করতে এসেছিলেন কাছের ও দূরের শহর থেকে।
" হ্যাঁ রে অন্বেষা, তোর ডাকনাম যে টেঁপি, এটা তো কস্মিনকালেও জানতে পারিনি আমরা কেউ গোটা ইস্কুলবেলায়!"
অন্বেষা হাসে, বলে, " আরে ওটা তো বাড়ীর ডাকনাম, ইস্কুলে তোরা জানবি কীকরে? দেবুস্যর তো মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ী যেতেন, তাই জেনেছিলেন।"
"আরে বলিস কী? উনি তোদের বাড়ী যেতেন? "
"মাঝে মাঝে। উনি বলতেন লোকে নাকি গল্প করতো আমার ঘরে আমি মাবাবাকে পর্যন্ত নাকি ঢুকতে দিই না, বই দিয়ে ঢাকা সেই ঘরের ম ...
দিন চলে গেলো গুণ গুণ করে, চ্যাপ্টারের পর চ্যাপ্টার চলে যেতে যেতে একসময় দেবুস্যর কেন জানি নিরুৎসাহ করতে শুরু করলেন৷ এদেশে নাকি গবেষণা খুব বড়োলোক আর খুব ইনফ্লুয়েনশিয়াল পরিবারের না হলে করা যায় না, তাই একটু ভালো ছাত্রেরা হায়ার সেকেন্ডারিতে প্রাণপণে তৈরী হয় জয়েন্ট পরীক্ষা দেবার জন্য, যাতে ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেলে একটা চান্স কোনোরকমে পেয়ে যায়৷ না পেলে তখন জেনারেল লাইন ...
ইস্কুলে অনেক রুমা দিদিমণি৷ রুমা মুখার্জী, রুমা বসু, রুমা সেন,রুমা দত্ত৷ তাই এঁদের ক্ষেত্রে শুধু প্রথম নামের সঙ্গে দি বা দিদিমণি জুড়ে বোঝা যেতো না কে কোন্ জন৷ এদের নাম ও পদবী দুই লাগতো৷ কেন যেন রুমা মুখার্জীকে ওনার বিয়ের আগের পদবী ধরেই ডাকা হতো রুমা কাঞ্জিলালদি৷ হয়তো সেই পদবীটা আনকমন বলেই এত জনপ্রিয় হয়েছিলো৷
এই রুমা কাঞ্জিলালদি বাংলা পড়াতেন, অগাধ জ্ঞান বাংলায়, প্রচুর ক ...
আমাদের ওখানে প্রথম বইমেলা হলো ঘোর বর্ষায়, তখন আমরা সবে উঠেছি ক্লাস নাইনে। এতদিন শুধু আমরা শুনে এসেছি কলকাতায় বইমেলা হয় শীতের শেষে, সে এক দুর্দান্ত কান্ড, কিন্তু অতি অল্প কয়েকজন ছাড়া সেই বিরাট বিখ্যাত বইমেলা দেখার সৌভাগ্য কারুর হয়নি৷ ইস্কুল থেকে দিদিমণিরা নিয়ে চললেন আমাদের, রাস্তা জলেকাদায় ভর্তি, মেলা-প্রাঙ্গন কাদা প্যাঁচপেঁচে যথারীতি, কাঠের পাটাতন পেতে পেতে চলার জায় ...
মনে পড়ছে সেই দিনটা! স্পষ্ট হয়ে মনে পড়ছে। নাইনের পরীক্ষার সীট পড়েছে দোতলায়, ভীষণ গরম ও লোডশেডিং (লোডশেডিং প্রায় অঙ্গাঙ্গী জড়িত ছিলো গরমের সঙ্গে সেইসব দিনে )৷ সবাই দরদর করে ঘামতে ঘামতে ও আঁচলে মুছতে মুছতে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেদিন ইংরেজী পরীক্ষা৷ কাগজ ও প্রশ্নপত্র পর্যন্ত গরম, গার্ড যিনি দিচ্ছিলেন তিনি বোতলে করে জল এনে টেবিলে রেখেছেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুখে চোখে দেওয়া হবে৷ প ...