০১।
তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে আয়োজিত ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'রানওয়ে' মুভিটি দেখার পর আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল এরকমঃ
[i]"বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে ফিল্ম বানানো আম্রিকানদের ব্যাপার-সেপার। আমরা অতো কষ্ট করতে যাবো কেনো? আমরা বানাবো ফর্মুলা ফিল্ম।
০১।
তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীরের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এই দেশ কী হারালো তা প্রতিটি সচেতন মানুষ এক তীব্র আর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে আজ উপলব্ধি করছেন। কিন্তু প্রচন্ড দুঃখবোধের মধ্যে আমার বার বার মনে পড়ছে মাত্র ৭ দিন আগে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রথম সংবাদটি যেখানে জানানো হয়েছে দক্ষতার পরীক্ষা ছাড়াই প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার লোকক
স্কুল-কলেজে পড়ার সময়ে কিছু সার্বজনীন (!) বাংলা সিনেমা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বায়োলজিকাল এনিম্যাল ইনস্টিংক্ট এর কারনে ওইসব সিনেমা থেকেও যে কিছুটা বিনোদন পেয়েছি সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তারপরেও কৌতুহলী মনে কিছু ব্যাপারে প্রশ্ন জাগত। যেমন, “সিনেমাতে দেখায় প্রেমিক-প্রেমিকা হাত ধরে নাচানাচি করছে, আমিতো পার্কে-রাস্তায় অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা দেখেছি, তারা নাচানাচি করে না কেন?”, “সিনেমার শেষে নায়কের যখন
আমরা আবার উত্তেজিত হয়ে উঠেছি । এবার আমরা হারিয়েছি আমাদের এমন দু জন বুদ্ধিজীবী কে যাদের স্থান অপূরণীয় । আমাদের এই উত্তেজনা কিছুদিন চলবে তারপর আমরা আবার ঝিমিয়ে পরবো। আমাদের আসলে কিছুই করার নেই। এমন করে এক একটি ঘটনা ঘটবে আমরা উত্তেজিত হয়ে চেঁচামেচি করবো । তারপর কিছু দিন পর উত্তেজনা প্রশমিত হলে নিজের কাজে বাস্ত হয়ে পরব । আবার কিছু ঘটবে আবার চেঁচাব । আমন করে আবার, আবার বারবার । আমাদের চোখের সামন
তারেক মাসুদ। চলচিত্র নির্মাতা। অথচ তাঁর কোন কমার্শিয়াল ফিল্ম নেই। চাইলেই তিনি বানাতে পারতেন। সুখ্যাতি ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। তাঁর অধিকাংশ ছবির প্রযোজক ছিলেন তাঁরই স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। সুযোগ, যশ এবং খ্যাতিকে ব্যবহার করে কড়ি কড়ি টাকা আয় করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। এক অন্য রকম মানুষ ছিলেন এই তারেক মাসুদ। আজীবন তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল বিকল্প ধারার স্বল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র বানানো। পূর্ব বাংলায় যদি আজ পর্যন্ত কারো মাঝে সত্যজিৎ-এর ছায়া দেখা গিয়ে থাকে, সেটা অবশ্যই তারেক মাসুদ। অত্যন্ত বেদনার্ত হৃদয়ে সেই মানুষটাকে নিয়ে লিখতে বসে সবগুলো “কাল” অতীতে ব্যবহার করতে হচ্ছে। কারণ আজ মানুষটাই অতীত।
“The world suffers a lot. Not because of the violence of bad people, but because of the silence of good people!”
- Napoleon
বলতে পারেন, পৃথিবীর কোন দেশে মানুষের জীবনের মূল্য সবচেয়ে কম?
বলতে পারেন, যুদ্ধকালীন বা সংকটগ্রস্থ অবস্থায় না থাকা সত্ত্বেও কোন দেশটিতে বসবাস করা একটি মাইনফিল্ডে বসবাসের চেয়েও ভয়ংকর?
তারেক মাসুদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, এই খবরটা শোনার পর প্রথম যে কথাটা আমার ভেতর থেকে বের হয়েছিল তা হচ্ছে, “I don’t believe it.
অনেকক্ষণ বসে থেকেও, লেখার মতো উপযুক্ত শব্দ খুঁজে পেলাম না।
মনে হচ্ছে, প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলেছি।
হয়তো আসলেই হারিয়েছি।
আমাদের যেন আর কখনো যুদ্ধে যেতে না হয়, যুদ্ধ শেষে 'মুক্তির গান' বানাবার লোকটি যে আর নেই।
মুক্তমনের মানুষ তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।