হয়তো একদিন স্বপ্ন সোনালী ফসল কুড়াবে। হয়তো একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যাবে বদলে গেছে আকাশ রঙ কিংবা সভ্যতার ইতিহাসের প্রচ্ছদ। হয়তো ততদিন স্বপ্ন দেখতেই হবে। হয়তো একদিন আমিও বদলে যেতে পারি। হয়তো আমিও একদিন অকৃতজ্ঞ হতে পারি। হয়তো একদিন বহির্বিশ্বের খোঁজে নাবিক হতে পারি। হয়তো একদিন কলম্বাসকে থামিয়ে দিতে পারি। হয়তো একদিন চোখের জল শুকিয়ে দিতে পারি। হয়তো একদিন নিউট্রিনোকে শাসন করতে পারি। হয়তো আমিও একদিন
স্কুলে থাকতে শিখিয়েছিলো জড় পদার্থকে ডাকাডাকি করার দরকার হলে নাকি স্ত্রীবাচক শব্দ দিয়ে ডাকতে হয়। জড় পদার্থ যেহেতু, সেহেতু ‘জ্বী স্যার’ বলে সালাম ঠুকে দাঁড়াতে পারবেনা বলেই জানতাম, তাই জিজ্ঞেস করেছিলাম এদের ডাকাডাকি করার দরকারটা কী! বেশী প্রশ্ন করা বাচ্চাদের কেউ দেখতে পারে না, এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নাই, তাই মিনি দাবড়ানির সাথে ‘এটাই নিয়ম’ এই উত্তরেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো তখন! নিয়ম মানবো বলেই হয়তো তখন থেকেই আমি আমার সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিকে স্ত্রীবাচক সম্বোধনের সাথে সাথে ওদের সাথে গল্পগুজব করাও শিখে গেলাম! স্কুল থেকে এসে অবশ্য এর বেশী কিছু করারও থাকতো না। সবাই ব্যস্ত থাকতো আর আমার সারাদিনের স্কুলের কতশত গল্প শোনার সময় কারো হতোইনা! তাই আমার বড় পুতুলটাকে একপাশে বসিয়ে পেন্সিল বক্স থেকে শুরু করে চাইনিজ গল্পের বইগুলোকে পর্যন্ত লাইন ধরে সাজিয়ে গল্প করতাম, গোলমরিচ গুড়ো দিয়ে ডিম সেদ্ধ আর গ্লাস ভর্তি দুধ ভাগাভাগি করে খেতাম সবার সাথেই। আঁকার খাতায় ছবি এঁকে পেনসিলটাকেই বলতাম, ‘দেখেছো, আমি আর তুমি মিলে কতো সুন্দর ছবি আঁকি?’ সেই অভ্যাস আজও আছে।
১
বরবাদটা এখনও ঘুমায়নি তাহলে। কালকে আটটায় ক্লাস সেদিকে হুঁশ আছে? বলতে বলতে মাহিন বালিশের পাশে রাখা ল্যাপটপের স্ক্রিনের উপর ঝুঁকে পড়ে। ফেসবুকে সে তখনও অনলাইন, লগ আউট করা হয়নি। প্রোফাইল অন রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। হাসানের সঙ্গে ঘন্টা দেড়েক আগেই কথা হচ্ছিলো নেটে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে। পরে ঘুম চলে আসায় আস্তে করে গান ছেড়ে দিয়ে হাসানকে “যাইগা দোস্ত্” বলে ঘুমিয়ে পড়ে।
কিছুদিন হলো কিছু লিখতে পারছিনা। হুড়মুড় করে অনেক গুলো কথা আসে মনে আবার সাথে সাথে না লিখলে মিনিট কয়েক বাদেই সব হাপিশ! কী মুশকিলরে বাবা! ভাব দেখে মনে হয় কী যেন এক লেখক হয়েছি যে আমার মহাসমারোহে রাইটার্স ব্লক হচ্ছে! আজ ভাবলাম কী আছে জীবনে একখান আব্জাব আজ লিখেই ছাড়বো! মিনিট বিশেক কিবোর্ড ধরে ধস্তাধস্তির পর আর পারছিনা বাবা! নিজেকে আজকের মতো ক্ষান্তই দিলাম!
[justify]তোমরা কেউ হয়তো জানো না, ক্লান্তির ভারে ন্যুজ্ব ঘোলাটে এই শহরের এককোণে এক বৃদ্ধ গল্পকুহকিনীর বাস ছিলো। কেউ জানতো না, কেউ তাকে কোনোদিন দেখেনি। দেখবে আর জানবে কী করে? দেখা দিলে তো। সে কখনও কাউকে দেখা দিতো না। সে যে কোথায় থাকতো তাও ছিলো অজ্ঞাত। শহরের ছাপোষা মানুষগুলোর কাছে সে ছিলো রূপকথা মাত্র।
[justify]এককালে বাসার বুজুর্গদের বুলি শুনতে শুনতে প্রায় বলি হয়ে গিয়েছিলাম, “লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে। তাই গাড়ি-ঘোড়া চড়তে বেশি বেশি পড়ালেখা করো”। আমি মানি না, মানতাম না। কারণ জলজ্যান্ত চোখের সামনে দেখতাম, আব্বু তো কোনো পড়ালেখাই করে না। তাও দেখি দিব্যি রোজ ভুটভুট করে মটোরসাইকেল গাড়িতে করে অফিসে যায় আর আসে। আর বাসায় এসে শুধু আমার পিঠের চামড়া তোলার পাঁয়তারা খোজে। অবশ্য আব্বুকে কখনও ঘোড়ায় চড়তে দেখিনি আমি। তবে আমাকে মাঝে মাঝেই পড়ার সময় ঘোড়ার ডিম বলতে দেখেছি। তাই তখন মনে হতো আমার সাথে ঘোড়ার ডিম এর কোনো যোগসূত্র আছে বা থাকতে পারে। আর সেই ডিমটা ফুটে বাচ্চা হলেই আব্বু সে বাচ্চা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসবে।
১.
[justify]আমি আস্ত একটা ভীতুর ডিম। ছোট থাকতে অতি তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে আমি ভীত হতাম, শংকিত হয়ে কাঁপতাম। কিন্তু বেজায় লাজুক হওয়ার কারণে আমার ভয় কাউকে বুঝতে দিতাম না। একমাত্র আম্মুর চোখে মাঝে মাঝে ধরা খেয়ে যেতাম। বড় হলে নাকি ভয়-ডর আস্তে আস্তে কমে যায়। কিজানি কী কারণে নিয়মের হেরফেরে আমার হলো এবং হতে থাকলো এর উলটো। উদ্ভট উদ্ভট সব কারণে আমি ভীত হতে থাকলাম।