একবার বছরের শেষ ভাগের এক বিকেলে ধুম ছোটাছুটির পর সন্ধ্যার দিকে আবিষ্কার করলাম হাঁটতে গেলে দু পায়ের পেছনের রগে হালকা ব্যথা পাচ্ছি। গ্রামে বছরের শেষ সময়টা অদ্ভুত ছিল। ধান উঠে যেতো বলে বিলগুলো ফাঁকা থাকতো, কেটে নেয়া ধান গাছের গোড়ার দিকটা গোছা গোছা রয়ে যেত সেখানে। নরম মাটি। বাতাসে ধানের গন্ধ, মাটির গন্ধ, তুলে নেয়া মটরশুঁটি গাছের গন্ধ। সব মিলিয়ে সবটা বিকেল-সন্ধ্যা সুগন্ধি হয়ে থাকতো। সময়েরও যে সুগন্ধ থাকতে পারে সেই অলৌকিক অনুভুতি বাংলাদেশের গ্রামে ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় বলে আমার জানা নেই। এখন ভাবলে, সেই সময়টটাকে দালির ছবির চাইতেও মহান আর বিমূর্ত মনে হয়!
সেরকম পরাবাস্তব এক বিকেল পায়ের রগে ব্যথা টের পেলাম। মা'কে গিয়ে বললাম, পায়ে টান লাগছে। মা ছাদে গাছশুদ্ধ শুকোতে দেয়া মটরশুঁটির ঝাড় উল্টেপাল্টে দিচ্ছিলেন। আমাকে বললেন, খেলতে গিয়ে বোধহয় উল্টোপাল্টা টান পড়েছে। বিশ্রাম নাও, ঠিক হয়ে যাবে। সেদিন রাতের আর কিছু মনে পড়ে না। মনে পড়ে, পরদিন সকালে উঠেই তারস্বরে মা'কে ডাকতে লাগলাম। অলৌকিক মা ছিলেন আমার। কিছু না হলেও চিল্লিয়ে মা'কে ডাকতাম। মা এসে "সব ঠিক" করে দিতেন। আর সেদিন তো বড় কিছু হয়েছিল। সকালে উঠে আবিষ্কার করেছি আমি আর হাঁটতে পারছি না!